লোড হচ্ছে...
আপনি কি গল্প, কাব্য ও কবিতা লেখালেখি করেন? আপনি কি আপনার লেখা এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে চান? তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

হাওয়াই মিঠাই (পর্ব ০১)

পড়ুন মৌরি মরিয়ম'এর লেখা একটি অসাধারণ ধারাবাহিক গল্প হাওয়াই মিঠাই'র প্রথম পর্ব
হাওয়াই মিঠাই
হাওয়াই মিঠাই

অবাক চাঁদের আলােয় দেখাে,
ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী।
আড়াল হতে দেখেছি তােমার,
নিস্পাপ মুখ খানি।
ডুবেছি আমি তােমার চোখের অনন্ত মায়ায়,
বুঝিনি কভু সেই মায়া তাে আমার তরে নয়....।

হেডফোনে গানটা বাজছিল। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ভার্সিটি বাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতেই মীরা জানালা দিয়ে দেখতে পেলাে আকাশ জুড়ে তারাদের মেলা বসেছে। হঠাৎ আনমনে কীসব ভাবতে লাগলাে সে। সেই ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলাে বাস কন্ট্রাকটরের ডাকে,

"মামা ক্যাম্পাসে তাে আইয়া পড়ছি, নামবেন না?"

মীরা বাস্তবে ফিরে এলাে,

"হ্যাঁ মামা নামি, খেয়াল করি নাই।"

মীরা বাস থেকে নেমে প্রীতিলতা হলের দিকে হাঁটছিলাে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলাে।
তন্ময় কল করেছে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শােনা গেল,

"মীরা, তুমি আমাকে ফেসবুকে ব্লক মেরেছাে?"

"জিজ্ঞেস করার কি আছে? বুঝতে পারছাে না?"

"কেন ব্লক করলে?"

"যাতে তােমাকে দেখে গা জ্বালা না করে আমার।"

"এক্ষুনি আনব্লক করাে।"

"ফোন থেকেও ব্লক খেতে চাও?"

"মীরা প্লিজ ফরগিভ মি। একটা বার দেখা করাে। আর কিছু চাইবাে না তােমার কাছে। ব্রেকাপ তাে করেই ফেলেছাে, জাস্ট শেষবারের মত একবার দেখতে চাই।"

মীরা বিরক্ত হয়ে লাইন কেটে তন্ময়ের নাম্বারটা ব্লকলিস্টে ফেলে দিলাে।
রুমে ঢুকতেই মীরার চোখে পড়ল, তাহিয়া কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমুচ্ছে। মেয়েটা ভরসন্ধ্যাবেলায় এভাবে ঘুমুচ্ছে কেন? কাছে গিয়ে কাঁথা সরিয়ে কপালে হাত রাখলাে জ্বর-টর কিছু এলাে কিনা আবার! না জ্বর আসেনি। সাথে সাথেই তাহিয়া চোখ খুলে বলল,

"মীরাপু হালিম খাবাে।"

মীরা হাতটা সরিয়ে নিজের বেডের কাছে গেলাে। ব্যাগটা বেডের উপর রেখে ভেতর থেকে পার্স বের করতে করতে বলল,

"তাে ঘুমাচ্ছিস কেন? ওঠ চল খেয়ে আসি। সুইটি কোথায়?"

"সুইটি আপু তাে ডেটে গেছে, এখনাে ফেরেনি।"

"আচ্ছা চল আমরা দুজনই যাই। সুইটির জন্য পার্সেল আনবাে।"

"আচ্ছা মীরাপু তােমার ইন্টারভিউ কেমন হলাে?"

"ভালই।"

"আমি ভাবছি প্রতিদিন জাহাঙ্গীরনগর থেকে ঢাকা গিয়ে অফিস করবে কিভাবে? তুমি কি জব হলে হল ছেড়ে চলে যাবে আপু?"

"আপাতত না। কিন্তু মাস্টার্সের আর দুই সেমিস্টার আছে। তারপর তাে যেতেই হবে।"

তাহিয়া মন খারাপ করতেই মীরা বলল,

"কিন্তু সাভার ছেড়ে যাচ্ছি না। যেখানেই জব করি, যেখানেই থাকি সাভারেই থাকবাে।"

তাহিয়া হেসে বলল,

"তাহলে আমি হল ছেড়ে গিয়ে তােমার বাসায় উঠবাে। অন্তত তােমার বিয়ের আগে পর্যন্ত।"

মীরা হেসে বলল,

"আমার বিয়ের পর কেন আমার বাসায় থাকতে পারবি না? তুই আমার বােন তাে, কেন থাকতে পারবি না? তাের যতদিন ইচ্ছা থাকবি।"

তাহিয়া মীরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

"ওহ! মীরাপু তুমি কি জোস! ভাগ্যিস জাহাঙ্গীরনগর পড়তে এসেছিলাম নাহলে তােমাকে পেতাম না।"

"কপালে থাকলে আল্লাহ মিলিয়ে দিতাে। কোনভাবে নিশ্চয়ই। আর যদি না থাকতাে তবে তাে তুই জানতেই পারতি না মীরা বলে কেউ আছে, আমিও জানতে পারতাম না তাহিয়া বলে কেউ আছে। যেমন ধর, আমাদের সাথে যাদের পরিচয় নেই তাদের মধ্যেও নিশ্চয়ই জোস টাইপের কেউ আছে। অথচ পরিচয় নেই বলে জানি না।"

তাহিয়া মাথায় হাত দিয়ে বলল,

"শুরু হয়ে গেল তােমার ফিলসফি?"

মীরা হেসে বলল,

"হালিম শেষ হয়ে যাবে, চল।"

হালিম খেতে খেতে তাহিয়া বলল,

"জানাে কলি আপুর সাথে আজকে আমার ঝগড়া লেগেছিলাে।"

"কি নিয়ে ঝগড়া?"

"তােমাকে নিয়ে।"

মীরা হেসে বলল,

"আমাকে নিয়ে কেন?"

"ওই কলির বাচ্চা কলি কুটনি অথৈ এর সাথে তাল মিলিয়ে তােমার নামে আজেবাজে কথা বলছিল। আমিও কথা শুনিয়ে দিয়েছি।"

"আজেবাজে কথা বলতে আমার বয়ফ্রেন্ডদের ব্যাপারে কথা এইতাে?"

"হ্যাঁ। মন টা চাইছিল ওর মুখে জুতা মারি, শুধু সিনিয়র বলে হাত চালাইনি। তােমার যে কয়টা ইচ্ছা প্রেম করবা ওদের কী তাতে? ওদের বাপের সাথে করেছাে?"

মীরা হেসে বলল,

"ওদের বাপের সাথে না হলেও অথৈ এর বয়ফ্রেন্ডের সাথে করেছি।"

"মানে! অথৈ আপুর তাে বয়ফ্রেন্ড নাই। ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের ওই লম্বু ভাইয়াটা নাম কি যেন! ওর উপর না অথৈ ক্রাশড?"

"ওইটাই তাে, নাম সামিন। বয়ফ্রেন্ড না হলেও অথৈ এর সাথে সামিনের সম্পর্ক একদম মাখা মাখি ছিল। এদিকে সামিন আমার পিছনে ঘুরছে। ছেড়ে দেব কেন? কথা বলছি।"

"আপু তুমি বলেছিলে ক্যাম্পাসে প্রেম করবে না। রেপুটেশন খারাপ হবে।"

"হুম কিন্তু সামিনের ব্যাপারটা আলাদা। সামিনের সাথে কিছু করা মানে অথৈ কে একটা শিক্ষা দেয়া। এর চেয়ে বড় শাস্তি অথৈ-এর জন্য আর কিছু হতে পারে না। তাছাড়া প্রেম করব না। জাস্ট ঘুরাব কয়দিন, তারপর ছুঁড়ে ফেলে দিব। যা সামিন করে মেয়েদের সাথে।"

"দেখাে আপু এটা করতে গিয়ে তুমি আবার ফেঁসে যেয়াে না যেন। আমার ভয় লাগে।"

"এই মীরা কয়েক ডজন প্রেম করে ফেলেছে বেবি। কখনাে কোন ছেলের কাছে ফাঁসেনি, আর ফাঁসবেও না। মীরা জানে কোথায় কোন স্টেপ ফেলতে হয়।"

মীরা চোখ মারলাে, তাহিয়া হেসে দিলাে। তারপর বলল,

"তবুও আপু সাবধান।"

হালিম খেয়ে হলে ফেরার সময় তাহিয়া জিজ্ঞেস করলাে,

"আচ্ছা মীরাপু, অথৈ আপুর সাথে তােমার শত্রুতা কি নিয়ে শুরু হয়েছিল?"

"প্রথমে আমরা বন্ধু ছিলাম। তারপর ও আমার নােটস চুরি করেছিল। এটার শােধ নিতে আমি ওকে ফেক একটা কাহিনী বানিয়ে হলের সবার সামনে অপমান করেছিলাম। তারপর এভাবেই চলতে থাকে ব্যাপারগুলাে। ও আমার পিছনে লেগে থাকে, আমিও ওকে ছেড়ে দেই না। এই আরকি।"

"ওহ।"

"আচ্ছা তাহিয়া কালকে বিকালে ফ্রি আছিস?"

"হ্যাঁ আপু, আমার সকালে ক্লাস। কেন?"

"সুইটির সাথেও কথা হয়েছে। কাল আমরা তিনজন বসুন্ধরা সিটি যাব।"

"কেন?"

"মােবাইল কিনতে। দেখিস না আমার মােবাইলের অবস্থা? ভাইয়া টাকা পাঠিয়েছে।"

"মােবাইল তাে সিটি সেন্টার থেকেই কিনতে পারাে, অতদূর যাবাে কেন আপু?"

"না বসুন্ধরা থেকেই কিনব। কারণ মােবাইল কিনে আমরা বাসায় যাব। আম্মু তােদের অনেকদিন দেখে না। নিয়ে যেতে বলেছে।"

"আচ্ছা আপু যাব।"

হলে ঢুকতে না ঢুকতেই তাহিয়ার বাসা থেকে ফোন এলাে। তখনই মীরারও মনে পড়লাে বাসায় ফোন করার কথা। ফোন করতে গিয়ে দেখলাে ফোনে টাকা নেই। আবার বের হলাে রিচার্জ করতে। হঠাৎ করেই কে যেন পেছন থেকে ওর চোখ চেপে ধরলাে। তারপর মুখে রুমাল চেপে ধরে টেনে নিয়ে গেলাে জঙ্গলের ভেতর!

অন্তিম পর্ব ২৯পর্ব ০২

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কুকি সম্মতি
আমরা ট্রাফিক বিশ্লেষণ করতে, আপনার পছন্দগুলি মনে রাখতে এবং আপনার অভিজ্ঞতাকে অপ্টিমাইজ করতে এই সাইটে কুকিজ পরিবেশন করি৷
উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷
আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।