"এক বিকট আওয়াজে বাড়ীর সবাই হন্তদন্ত হয়ে জিসানের রুমের দিকে ছুটে এলো।কারণ শব্দটা ওই রুম থেকেই আসছে তাই।
রুমের যতোই কাছে আসছে আওয়াজ ততোই যেনো বাড়ছে।রাবেয়া ও তানজিলা তাই অনেকটা দৌঁড়েই রুমে প্রবেশ করলো।আর এসে যা দেখলো তাতে তারা মোটেও শোকড নয়।কারন গতো তিন মাসে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে এসবে।"
---তিশা বিছানার চাদরসহ বালিশগুলো একে একে সব ফ্লোরে ফেলে দিয়েছে।হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে ফেলছে।পুরো ঘরটা কেমন লণ্ডভণ্ড করে ফেলেছে।
তানজিলা ও রাবেয়া কেউ সামনে যাওয়ার সাহস পেলো না।
কারণ এর আগে যতোবার তিশা ভাইলেন্ট হয়েছে,তিশার সামনে যেই যেতো তাকেও আঘাত করতো।
একমাত্র জিসানই পারে ওকে একদম শান্ত করতে। তাই রাবেয়া তানজিলাকে ইশারা করলো জিসানকে খবর দিতে।
'-খবর পেয়েই জিসান বাসায় এসে পড়লো।হাতের কোর্টটা ড্রয়িংরুমের শোফায় কোন রকম ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটে গেলো।
দরজার সামনেই মা আর ভাবীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বুঝে গেলো রুমে এখন টর্নেডো চলছে নিশ্চয়ই ।জিসান মনে মনে ভাবছে আজ আবার কেনো তিশা এতো ভাইলেন্ট হলো।
---টেবিলে রাখা একটা ফুলদানি হাতে নিয়ে ছুড়ে মারতে গেলে জিসানের ডাকে থেমে যায় তিশা।তাকিয়ে দেখে জিসান দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।জিসানকে দেখে রাগটা যেনো আরো একটু বেড়ে গেলো তিশার।
"জিসান দরজার সামনে দাঁড়িয়েই,' জান কি হয়েছে'।আজ আবার কে কি করলো।বল আমায়।"
---তিশা জিসানের দিকে ত্যারে আসতে নিলে,জিসান তিশাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেয়।
"স্টোপ জান।ফ্লোরে অনেক কাচের টুকরো পরে আছে,তাই যেখানে আছিস সেখানেই থাক আমি আসছি তোর কাছে।"
---এই একদম আসবেন না আমার কাছে,তিশা জিসানকে থামিয়ে দিয়ে।আপনি একটা খারাপ মানুষ।
"আমি!আমি আবার কি করলাম এখন।জিসান কিছুটা অসহায় মুখ করে।"
'-আপনিই তো ম্যান কালপিট। আপনি ঘরে বউ রেখে বাহিরে পরকিয়া করে বেড়ান।আর আমাকে বলেন কাজে ব্যস্ত থাকি।আমাকে এখন আর ভালো লাগে না,তাই না বলেই ফুলদানি টা জোড়ে আছার মারলো তিশা।আর একটু হলেই জিসানের গায়ে পড়তো।
'তিশা ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।আমাকে আগের মতো ভালোও বাসেন না আপনি,
কাছেও আসেন না।কিছু বললে বলেন আমি অসুস্থ।
আপনার মতলোব আমি এতোদিন না বুঝলেও এখন সব বুঝতে পারছি। আপনি নতুন কাউকে খুঁজে পেয়েছেন তাইনা জিসান।
এই সত্যি করে বলেন তো,আপনি কাকে পছন্দ করেন এখন।কাকে আমার সতিন বানানোর প্লানিং করছেন।'
---জিসান শোকড!তিশার কথা শুনে।এ কোন রেকর্ড শুরু হলো আমার বউয়ের আবার। এই রেকর্ড এখন কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজবে কানের কাছে।এবার ওকে শান্ত করতে আল্লাহই জানে কি কি করতে হবে আমায়।
'-হঠাৎ তিশা ডুকরে কাঁদতে লাগলো,আমাকে আপনি ছেড়ে দিবেন তাই না জিসান।বের করে দিবেন বাড়ী থেকে।কিন্তু আমি কোথাও যাবো না বলে দিলাম।আর আমার রুমেও কাউকে ডুকতে দেবো না বলে দিলাম।খুন করে ফেলবো সবাইকে আমি।'
---জান এসব কি বলছিস।আমি কেনো তোকে বের করে দিবো।তুই তো আমার লক্ষী সোনা বউ।আর এতো লক্ষী সুন্দর বউকে রেখে কি কেউ বাহিরে প্রেম করতে পারে।
আমি শুধু তোকে ভালোবাসি জান।আমার আর তোর মাঝে কেউ আসতে পারবে না।আমি আসতেই দিবো না কাউকে।প্রমিজ জান।
'না আপনি মিথ্যা বলছেন।'
---না জান, আমি কেনো মিথ্যা বলবো।
'-পাশের বাসার আন্টি বলছে,সব স্বামীরাই নাকি বউয়ের প্রেগনেন্সির সময় পরকিয়া করে বেড়ায়।আর বউকে এভোয়েড করে।তাহলে আপনিও নিশ্চয়ই আমার এ অবস্থায় এসব করে বেড়ান বাহিরে গিয়ে।তাইতো এখন আর আমাকে ভালো লাগে না আপনার।'
-জিসান যা বুঝার বুঝে গিয়েছে, রাগে কটমট করে মায়ের দিকে তাকালো।
রাবেয়া বেগম ছেলের রাগ উঠছে বুঝতে পেরেই ওখান থেকে পালালো।ব্যাচারী রাবেয়া ভাবতেই পারেনি তিশা এভাবে রিয়েক্ট করবে ওসব কথায়।
কিছুক্ষণ আগের কথা___
"তিশার রুমে একা একা ভালো লাগছিলো না দ্বিধায় নিচে নেমে তারিনকে খুঁজতে লাগলো।আজকাল তিশার তারিনকে নিয়েই সময় কাটে।কারণ বাড়ীর কোনও কাজ তিশাকে কেউ করতে দেয়না।
তিশা কয়েকদিন জোর করে করতে গিয়েছিলো,কিন্তু একদিন হঠাৎ অসচেতনায় ছুড়ি দিয়ে সবজি কাটতে গিয়ে,আঙ্গুলের কিছু অংশ কেটে যায়।অনেক রক্তও বের হয়।
জিসান সেদিন পুরো বাড়ী মাথায় উঠিয়ে ফেলে,কে তিশাকে রান্না ঘরে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছে।
সেদিন তিশা সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো, সামান্য একটু কাটায় জিসান এমন রিয়েক্ট করবে তিশা ভাবতেও পারেনি।
এরপর থেকে তিশার জন্য কার্ফু জারি করা হয়েছে।পাকের ঘরের ত্রিসীমানায় জাতে তিশাকে না দেখে জিসান।
ম্যান কথা হচ্ছে জিসান তিশা আর ওর বেবিকে নিয়ে আর কোনও রিস্ক নিতে চায়না।"
---তিশা ড্রয়িংরুমে এসে দেখে পাশের বাড়ীর আন্টি আর তার সাথে অল্প বয়সের একটা মেয়ে বসে রাবেয়া বেগম ও তানজিলার সাথে কথা বলছিলো।সম্ভবত তারা সম্পর্কে মা মেয়ে হবে।
তিশাও গিয়ে তাদের সাথে জয়েন হলে,রাবেয়া পরিচয় করিয়ে দেয় সবার সাথে তিশাকে।
'তাদের গল্প ভালোই চলছিলো,তিশারও খুব ভালো লাগছিলো এতোদিন পর একটু গল্প করতে পেরে।আর তখনি মালিহা নামের মেয়েটি প্রশ্ন করলো ভাবী কয়মাস আপনার।
-তিশা একটু লজ্জা মুখে বললো,সারে চারমাস চলছে।
'ও ভালোই,নিজের দিকে একটু খেয়াল রাইখেন।বাচ্চা হবার সুখে আবার মুটিয়ে যাইয়েন না।তা না হলে আবার স্বামীকে হারাতে হবে।সব দিক দিয়েই ম্যান্টেইন করে চইলেন।'
-মানে!তিশা একটু কৌতুহল হয়ে।
"মালিহার মা মরিয়োম বেগম কথাটা কাটানোর জন্য রাবেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
আর বইলেন না আপা। আমার এক ভাগ্নির কয়েকমাস আগে তালাক হয়ে গিয়েছে।তাই হয়তো মালিহা এমন বলছে আপনার ছেলের বউকে, কিছু মনে কইরেন না আপনি আবার ।"
-আরে না কিছু মনে করিনি।কিন্তু কেনো তালাক হলো!মানে কোনও সমস্যা হয়েছিলো।(রাবেয়া)
"সমস্যা বলতে, ভাগ্নি আমার প্রেগন্যান্ট ছিলো। আর তখন থেকেই নাকি ওর জামাইয়ের কারো সাথে পরকিয়া চলছিলো।জানেন তো আজকালকের ছেলেরা বিয়ের পর বেশির ভাগই প্রেমে পড়ে,বউয়ের অন্তঃস্বত্বার সময়।
আমার ভাগ্নির বেলায়ও এমন হয়েছে।পরনারীর চক্করে পড়ে গিয়েছে জামাই।পরে এই প্রেম অনেক গভীর হয়ে গিয়েছে।
তার উপর ভাগ্নি আমার বাচ্চা হবার পর কেমন জানি একটু অগোছালো হয়ে পড়েছে। নিজের একটু যত্নও নিতো না।তাতে করে ওর হাসবেন্ড এর মন পুরোপুরি উঠে গিয়েছে ওর উপর থেকে।
একদিন তো বলেই দিলো মুখ ফুটে তালাকের কথা।অনেক বুঝিয়েছি জানেন কিন্তু অবশেষে তালাকটা আটকাতে পাড়লো না কেউ।বাচ্চাটার কথাও চিন্তা করলো না।"
---আন্টি কিছু মনে করবেন না,এসব ছেলেরা আগের থেকেই ক্যারেক্টারলেস হয়।এদের চরিত্রের দোষ থাকে বলেই এরা এমন করে।তা না হলে বউয়ের প্রেগনেন্সির সময় বউয়ের সেবা না করে যে ছেলে বাহিরে গিয়ে সুখ খুঁজে,তাদের অন্তত আমি পুরুষ বলবো না।
এতোই যদি ধৈর্য না থাকে তাহলে বউকে পেগনেন্ট কেনো করছে।নাকি বাচ্চাটা আসমান থেকে টুপ করে পড়ছে।
আর এসব পুরুষ থেকেও জগন্য হচ্ছে ওসব নারীরা। যারা বিবাহিত যেনেও এসব পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়ায়।অন্যের ঘর ভেঙ্গে সেই জায়গায় যদি তাজমহলও বানানো হয় থাকার জন্য।তাহলেও কোনও দিন সুখ আসবে না সেই ঘড়ে।
আরেকটা কথা,আমাদের জিসান মোটেও এমন না।ও তিশাকে খুব ভালোবাসে।তিশা ছাড়া কোনও মেয়ের কথা কল্পনাও করে না।তাই তিশাকে অন্তত এসব নিয়ে চিন্তিত হতে হবে না।তিশার দিকে তাকিয়ে,বুঝলে তিশা।(তানজিলা)
'-যাই বলেন ভাবী, পুরুষের মন পাল্টাতে সময় লাগে না।তাই আরকি একটু সাবধান করলাম ভাবীকে।বাকী তার হাসবেন্ড কেমন সেই ভালো জানে।আশা করি ভাবীর সব ঠিক থাকুক আমরা তাই দোয়া করি।'
---অবুঝ তিশা তানজিলার কথাগুলোর কিছু শুনছে কিনা কে জানে।কিন্তু তখন থেকে তার মনে একটা কথাই বাজছে।বউয়ের প্রেগনেন্সির সময় স্বামী অন্য নারীর প্রেমে পড়ে যায়।
আর এসব চিন্তা করেই তিশা ভাইলেন্ট হয়ে যায়।নিশ্চয়ই জিসানের আজকাল ওর থেকে দূরে থাকার কারণ এটাই হবে।
____________
"হঠাৎ জিসান তিশাকে কোলে তুলে নেয়।তিশা খেয়ালি করেনি কখন জিসান ওর এতো কাছে এসে পড়ছে।জিসান তিশাকে কোলে করে বারান্দায় চলে গেলো।আর যাওয়ার আগে কাজের লোকদের রুমটা পুরো পরিষ্কার করে ফেলতে বললো দ্রুতো।"
---বালকানির কাউচে জিসানের বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে তিশা।জিসানও পরম যত্নে তিশাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
'আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন নাতো জিসান।'
---জিসান হেসে দেয় তিশার কথায়,কোথায় যাবো আমি বল,আমার শেষ ঠিকানা তো তুই।তাই যেখানে যাই না, বেলা শেষে আমি তোর কাছেই ফিরে আসবো।আমার নিশ্বাসে বিশ্বাসে মিশে আছিস তুই।তোকে ছাড়া বাঁচবো কি করে পাগলী আমি।আর এখনতো তুই একাও না,দু'জন একসাথে তোরা।আর তোদের দু'জনের মধ্যে আমার প্রাণ পাখিটি বিরাজ করছে।ছেড়ে গেলে মরে যাবো।
'সত্যি আমাকে এখনো ভালোবাসেন।'
---কেনো বিশ্বাস হয়না।
'তিশা মাথা নেড়ে না বলে।'
---জিসান ভ্রুটা কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে বললো,সন্দেহ করিস আমার ভালোবাসার।
তিশা নিশ্চুপ।
---জিসান একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে তিশাকে নিজের সাথে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে, কি করলে ম্যাডামের সন্দেহ কমবে,শুনি।
'আদর করলে।'
---জিসান তিশার কপালে একটা চুমো দিয়ে বললো,এতো আমার জানকে আদর করে দিলাম।
'তিশা রাগি একটা লুক নিয়ে জিসানের দিকে তাকিয়ে,
আমি কি ছোট বাচ্চা,যে আমাকে এখানে আদর করলেন।'
--জিসান এবার পুরো হেসে দিলো,তুইতো বাচ্চা না,আমার বাচ্চার মা।
"থাক লাগবে না আমার আপনার আদর।আর আমি থাকবোও না আপনার কাছে।কালই চলে যাবো বাবার বাসায়,তখন দেখবোনি আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকেন।"
---জিসান তিশাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বললো,এই বাড়ী কেনো এই রুম থেকে বের হতেও তোর আমার পারমিশন লাগবে।তাই এসব বলে লাভ নেই জান।এসব হুমকি অন্য কারো জন্য রাখিস কাজে লাগবে তোর।
'-দেখছেন আমি ঠিক বলেছিলাম,আপনি আমাকে আগের মতো ভালোবাসেন না।বাসলে এসব বলতেন না,বরং আমাকে আদর করতেন।'
--জিসান বুঝে গিয়েছে,ওর বউয়ের সন্দেহ দূর না করা পর্যন্ত ওকে নিস্তার দেবে না।তাই আপাততো তিশাকে শান্ত করতে,
ওকে আদর লাগবে তো ঠিক আছে।রাতে দেবো অনেক আদর এখন চুপচাপ লক্ষী বাচ্চাদের মতো ঘুমা।তা না হলে এই সপ্তাহও তোর কপালে আমার আদর ঝুটবে না বলে দিলাম।
'সত্যি রাতে দিবেন।'
---তিন সত্যি।
'তিশা আবার শুয়ে পড়লো জিসানের বুকে।আর জিসান তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।'
--কিছুক্ষণ পর তিশা,শুনেন না।
"হুম বল।"
---একটা গান শুনাবেন প্লিজ।
তুমি আমার এমনই একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন
এক জনমের ভালোবাসা
এক জনমের কাছে আসা
একটি চোখের পলক
পড়তে লাগে যতক্ষণ
ভালোবাসার সাগর তুমি
বুকে অথৈ জল
তবু পিপাসাতে আঁখি
হয়রে ছলছল
তোমার মিলনে বুঝি গো জীবন
বিরহে মরন বিরহে মরন
প্রাণের প্রদীপ হয়ে তুমি
জ্বলছ নিশি দিন
কোন মোহরে শোধ
হবে গো এত বড় ঋণ
এত বড় ঋণ
আমার ভালোবাসার ফুলে
তোমার ভরাব চরণ
তুমি আমার এমনই একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন ।
"গান শুনতে শুনতে তিশা ঘুমিয়ে পড়েছে।তাই জিসান তিশাকে আবার কোলে করে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো।জিসান কিছুক্ষণ একপলকে তিশার দিকে তাকিয়ে রইলো,
কতো শান্ত লাগছে এখন।এই মেয়ে কিছুদিন পর নাকি বাচ্চার মা হবে।ওকে তো এখনো আমাকেই সামলাতে হয়,তাহলে বাচ্চা সামলাবে কি করে ও আল্লাহই জানে।
একটু টেনশন মাথায় ভর করলো জিসানের।আজকাল তিশা অল্পতেই ভাইলেন্ট হয়ে যায়।কখন কোন বিষয় ওর রাগ উঠে বুঝাই যায়না।"
---জিসান ফোনটা হাতে নিয়ে বালকানিতে এসে তিশার ডাক্তারের কাছে ফোন দিলো।ডাক্তারকে তিশার নতুন সমস্যাগুলোর কথা জানালো।
সব শুনে ডাক্তার আশ্বাস দিলো এটা কোনও ব্যাপার না।এসব মুড সুইং এর কারণে হচ্ছে।আর প্রেগনেন্সিতে মুড সইং একটা কোমন জিনিস।মুড সুইং এর কারনেই আগের থেকে একটু বেশি রিয়েক্ট করছে তিশা।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।মেডিসিন গুলো নিয়মিত দিতে বললো ডাক্তার।
আর জিসানকে এটাও বলে দিলো তিশা শারীরিক ভাবে স্ট্যাবেল তাই ওদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কেও কোন সমস্যা হবে না,তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
জিসান ডাক্তারের সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোনটা কেটে দিলো।
'-বালকানিতে দাঁড়িয়ে তিশার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে জিসান কিছু একটা ভাবছে।কিছুটা টেনশনে আছে আজ।
তবে এই টেনশনের কারণ তিশা না।তিশা যতোই পাগলামি করুক,আর যাই করুক।জিসানের তাতে কোনও সমস্যা নেই।তিশা শুধু ওর সাথে থাকলেই চলবে।
ওর সব পাগলামি গুলো সহ্য করে নিবো,কিন্তু ওর না থাকাটা মানতে পারবো না।দরকার হলে সারা জীবন আগলে রাখবো,তবুও কোথাও জেতে দিতে দিবো না।'
____________
জিসানের টেনশনের কারণ,
---জিসান অফিসে কিছু ক্লাইনদের সাথে মিটিং করছিলো।আর তখনই সোম কেবিনে প্রবেশ করে।জিসানকে মিটিং এ ব্যস্ত দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে মিটিং শেষ হবার।
"মিটিং শেষ হলে ক্লাইনদের বিদায় দিয়ে,জিসান নিজেই সোমকে জিঙ্গেস করলো,কি সমস্যা আবার।
এরপর সোম যা বললো,তা শুনতে জিসান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
লাবণি আত্মহত্যা করেছে জেলে।কিন্তু কেনো?"
'-যতোটুকু আমি জানি ও এধরনের স্টেপ নেওয়ার মতো মেয়ে না।এছাড়া লাবণির পিতা আকাশপাতাল এক করে দিচ্ছিলো লাবণিকে ছুটানোর জন্য।
কয়েকবার জিসানের কাছেও এসেছিলো লাবণিকে মাপ করে দিতে কিন্তু জিসান কিছুতেই লাবণিকে মাপ করতে রাজি হয়নি।
এছাড়া জিসান যদি মাপ করে কেস উঠিয়েও নিতো,তাহলেও কোনও লাভ হতো না।কারণ অর্কের মৃত্যুর দায়ীও লাবণির উপর পড়েছে।'
---কিন্তু জিসানের সিক্সথ সেন্স বলছে এই খুন লাবণি করেনি তাহলে প্রশ্ন উঠে করেছে কে?
আর যদি কেউ থেকেই থাকে তাহলে লাবণি তার নাম নিলো না কেনো পুলিশের সামনে।লাবণির মৃত্যু কি আসলেই আত্মহত্যা নাকি হত্যা।
"বৃত্তকারের মতো আবার একই জায়গায় ফিরে আসতে হলো জিসানকে।
জিসানের সিক্সথ সেন্স বলছে সবচেয়ে বড় শত্রু হয়তো এখনো হাতের ধরাছোঁয়ার বাহিরে আছে।
কিন্তু আবার সবথেকে বড় প্রশ্ন থেকে যায় কে সে? আর কি বা চায় আমাদের কাছে।
নিজেকে সম্পূর্ণ আড়াল করে রেখেছে।সন্দেহজনক কোনও কাজ সে করে না।এতো গোপনতা কিভাবে ম্যান্টেইন করছে।আর আজ এতোদিন হলো তবুও সে একবার সামনে এসে আঘাত করছে না।তার মানে এবার খুব বড় প্লানিং করে মাঠে নামবে সে।"
---এখন অপেক্ষার পালা সেটা কি?শত্রু সামনে থাকলে তার সাথে লাড়াই করা যায়।কিন্তু শত্রু অদৃশ্যমান থাকলে তাকে কিভাবে প্রতিহত করবে তা জিসানের জানা নেই।তার উদ্দেশ্য জানলেও কিছু একটা ব্যবস্থা করা যেতো।"
'-তার উপর অর্কও বেঁচে নেই।বেঁচে থাকলে সব ধোঁয়াশা পরিস্কার হয়ে যেতো।অর্কের মৃত্যুও কিছুটা রহস্য ময়। ওর লাশ পাওয়া গিয়েছে লাবণির বাড়ীতে।এমনকি ওকে যে পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়েছে তাও লাবণির লাইসেন্স করা পিস্তল।
কিন্তু রিমান্ড রুমে লাবণি সব কবুল করলেও অর্কের মার্ডারটা ও অস্বীকার করেছে বারাবার।কিন্তু সব প্রমাণ আর যুক্তি লাবণির দিকে ইশারা করছিলো।
অর্ক জিসানকে লাবণির প্লানিং (তিশার কিডন্যাপ) এর কথা জানিয়ে দিয়েছে বলে রাগের মাথায় লাবণি অর্ককে মার্ডার করে দেশ ছেড়ে পালাতে নিলে পুলিশ তাকে এয়ার্পোট থেকেই গ্রেপতার করে।
---জিসান চেয়ারে বসে টেবিলের উপর ভর দিয়ে নিজের মাথার দু'পাশ হালকা চেপে ধরলো।ওর টেনশন হচ্ছে তিশাকে নিয়ে।তিশার মানসিক অবস্থা তেমন ভালো না।আর এখন কোনও অঘটন ঘটলে তিশা মানসিক চাপে এমনেই শেষ হয়ে যাবে।
ওকে ছুড়ি,বা অন্য কিছু দিয়ে মারতে হবে না।তাই জিসান চায় তিশাকে সব ধরনের ঝামেলা থেকে দূরে রাখতে এখন।
'হঠাৎ সোমের ডাকে জিসান সম্বিৎ ফিরে পায়।'
--স্যার আপনার ফোন বাজছে ।
'জিসান ফোনে বড় ভাবী নামটা দেখেই সাথে সাথে পিক করলো।তিশা আবার পাগলামো করছে শুনে জিসান তখনই বাসার দিকে রওনা দিলো।'
____________
তিনমাস আগে---
"তিশাকে সেদিন লাবনি কিডন্যাপ করে শহর থেকে একটু দূরে পুরানো একটা ফ্যাক্টরির গোডাউনে নিয়ে গিয়েছিলো বেহুশ করে।
তিশা কিডন্যাপ হয়েছে জিসান বুঝতে পেরে যখন খুঁজতে লাগলো চারদিকে।তখনি জিসানের ফোনে একটা মেসেজ আছে।মেসেজটি ওপেন করলে দেখে অর্ক পাঠিয়েছে।
তিশা যেখানে আছে সেখানকার ঠিকানা, আর কে করেছে তার নামটি সহ।
-অর্কের এমন মেসেজ পেয়ে জিসানের খটকা লাগলেও তিশার কথা ভেবে ওই ঠিকানায় চলে গেলো সাথে সাথে।
জিসানকে এভাবে যেতে দেখে রায়হান ও নিলয়ও পিছনে পিছনে ছুটলো গাড়ী নিয়ে।আর ওরা যাওয়ার সময় পুলিশকেও ফোন করে দিলো। "
---জিসান যখন আসে তখন,ফ্যাক্টরির গোডাউনে তিশার নিথর দেহটা পড়ে ছিলো।রক্ত দিয়ে পুরো ফ্লোরটা ভরে গিয়েছিলো।জিসান তিশাকে দেখেই ছুটে গেলো।
রক্ত গড়িয়ে পড়া,তিশার নিথর শরীরটাকে জিসান জড়িয়ে বুকের সাথে চেপে ধরলো।কিছু মুহুর্তের জন্য নিজের হিতহিত জ্ঞান যেনো হারিয়ে ফেলেছিলো জিসান তিশাকে এমন অবস্থায় দেখে।
'রায়হান আর নিলয় মিলে জিসানকে টেনে গাড়ীতে উঠালো হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।জিসানের কোলে তখনও তিশা ছিলো।জিসান দু'হাত দিয়ে তিশাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বসে আছে চুপচাপ।মুখ দিয়ে একটা কথাও জিসান তখন বলেনি।'
"-এরপর তিশাকে প্রায় চার সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো।কারণ তিশাকে চব্বিশঘণ্টা ডাক্তারের আন্ডারে রেখেছে জিসান।তিশার মাথার আঘাতটা সারতে টাইম লাগবে,ডাক্তার আগেই বলে দিয়েছিলো।তাই জিসানও আর কোনও রিস্ক নেয়নি।"
---তিশা যখন মোটামুটি সুস্থ অনুভোব করলো,মাথার যন্ত্রনাটাও কম হতে লাগলো তখনই জিসান তিশাকে বাড়ীতে আনলো।
এই একমাস জিসানও তিশার সাথে হাসপাতালে ছিলো।কখনো একা ছাড়েনি।কিন্তু যেদিন অফিসে যাওয়াটা খুব বেশি জরুলি ছিলো।সেদিনও তিশাকে একা ছাড়েনি। তিশার কাছে নিশি,ঝর্না আর রায়হানকে রেখে গিয়েছিলো।
'জিসানের এমন পাগলামো দেখে হাসপাতালের কেউ কেউ হাসাহাসি করেছে আবার কেউবা মুগ্ধ হয়েছে।
সত্যি কথা বলতে--
আমাদের সমাজে স্ত্রী স্বামীর সেবা করলে যতেটা খুশি হয়,তার থেকেও বেশি নারায হয় এটা যেনে স্বামী স্ত্রীর সেবা করেছে।
স্ত্রীর সেবায় নিয়োজিত ছেলেদের একধরনের বিশেষ নাম দেওয়া হয় এই সমাজে।তাইতো বেশির ভাগ ছেলেরাই মন থেকে চাইলেও স্ত্রীর কাজে সাহায্য করতে পারেনা।স্ত্রীর অসুস্থতায় তাকে সেবা করতে পারেনা।'
"মনে রাখবেন সব ছেলেরা জিসান হয় না,আর সব মেয়েদের কপাল তিশার মতো হয় না।"
______________
"পার্কের একপাশে বাগানের মতো একটা জায়গায় কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে আছে নিলয় আর ঝর্না।অনেকক্ষণ হলো,করো মুখে কোনও কথা নেই।শুধু বাগানের চারপাশ থেকে ভেসে আসা নাম না জানা হাজার ফুলের সুবাস নাকে শুড়শুড়ি দিয়ে যাচ্ছে।"
---না চাওয়া সত্যেও ঝর্ণা একটু পর পর নিলয়ের দিকে তাকাচ্ছে।নিলয়ের গম্ভীর মুখখানিই বলে দিচ্ছে কতোটুকু বিরক্তি হয়েছে এখানে এসে সে।
'এসব দেখেই ঝর্নার চোখ দু'টো ছলছল হয়ে উঠলো।মন থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসলে।
'আমার মতো একজন গ্রামের মেয়েকে নিলয়ের মতো ছেলে কেনোই বা পছন্দ করবে,ভালোবাসবে! ভালোবাসার মতো কি আধো এমন কিছু আছে আমার।আমিই হয়তো ভুল করেছি---বামন হয়ে চাঁদকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।'
"ঝর্না কিছু বলছে না দেখে নিলয়ই বললো,
কেনো ডেকেছো আমায়।কিছু বলার থাকলে একটু তারাতারি বলো।আমার আবার একটা মিটিং আছে।"
---আপনি নাকি চলে যাচ্ছেন।
"হুম"
---কবে।
"শীঘ্রই, হাতের কিছু কাজ আছে,সেগুলো শেষ হলেই।
---আবার কবে আসবেন।
"আসার মতো যদি তেমন কিছু ঘটে তাহলে,নয়তো কোনো দিনও না।"
---নিলয়ের কথা শুনে ঝর্ণার ভীষণ কান্না পেলো।তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিলো।
আপনি আমার উপর রাগ তাই না।
নিলয় নিশ্চুপ।
---হুম, আমি জানি।যেদিন থেকে আপনি জেনেছেন আমি আপনাকে ভালোবাসি,সেদিন থেকেই আপনি আমাকে এভোয়েড করে চলছেন।
"তেমন কিছুই না।আর তুমি খুব ভালো করেই জানো সব।আমার মনে তোমার জন্য কোনও অনুভূতি নেই।"
---হুম,জানি।কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না।
আমার কাছে ভালোবাসা মানে,এ নয় হাতে হাত রেখে একসাথে চলা।
"ভালোবাসা মানে আপনি যেখানে থাকেন,যার সাথেই থাকেন সুখে থাকেন এ কামনা করা।"
---ভালোবাসা মানে এ নয় চোখে চোখ রেখে নিজের অনুভূতি গুলো জানিয়ে দেওয়া।
"ভালোবাসা মানে তো,পাই বা না পাই আপনাকে, তবুও আমার দোয়ায় আপনার জন্য সুখ চাওয়া।"
----ভালোবাসা মানে,এ নয় আমাকে আপনার ভালোবাসতেই হবে।
"ভালোবাসা মানে,আমি আমার মতো করে না হয় ভালোবেসে যাবো আপনাকে।"
'-আপনার হাতটা ধরার স্বপ্ন হয়তো দেখেছি,কিন্তু আমি এটাও জানি এটা অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার।
আমি আসা করিনি,আপনাকে ভালোবাসার বদলে আপনিও আমাকে ভালোবাসবেন।আমিতো কেবল আমার মনের কথা শুনেছি।
তাই আপনাকে মনের কথা বলে দিয়েছি।আমি জানি এসব কথা মুল্যহীন আপনার কাছে।হয়তো কিছুটা বিরক্তিকর।
কিন্তু কি করবো বলেন,এটাই হয়তো আমাদের শেষ দেখা।'
---শেষ দেখা কথাটা শুনে নিলয় একটু চমকে গেলো।আর সাথে সাথে ঝর্নার দিকে তাকালে।কেনো জানি চোখ দু'টো আটকে গেলো আজ।অপলকভাবে একবার তাকিয়ে ঝর্ণাকে পুরো স্ক্যানিং করে ফেললো নিলয়।
'সাদা রং এর সালোয়ারকামিজ পড়া।চেহারায় নেই কোনও কৃতিম মেকআপের ছোঁয়া।তবুও কেনো এই মেয়েটিকে আজ এতো সুন্দর লাগছে নিলয় বুঝতে পারছে না।নাকি অনেকদিন পর ঝর্নাকে দেখছে বলে এমন মনে হচ্ছে।
এতো মায়া কেনো এই চেহারায়।আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে নির্গাত আজ মেয়েটির প্রেমে পড়ে যেতো।
একমিনিট আমার জায়গায় অন্যকেউ কেনো থাকবে।এসব কি ভাবছি আমি।উফ নিলয়!
'আপনি ঠিক আছেন।'
---নিলয় এবার ঝর্নার দিকে না তাকিয়েই বললো হুম।আম অল রাইট।বাট তুমি কি বলছিলে।শেষ দেখা মানে।
" হঠাৎ ঝর্না তার ব্যাগটা কাধে নিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,হুম শেষ দেখা।
আপনি তো কিছুুদিন পর চলে যাবেন।কিন্তু আমি পরশুই চলে যাচ্ছি ঢাকা ছেড়ে।"
---কোথায়!নিলয় অবাক হয়ে।
"কোথায় আবার আমার বাসায়।বাবা মার কাছে।তাই হয়তো আপনার যাওয়ার সময় আর দেখা হবে না।তাই ভাবলাম একটু শেষবার আপনাকে দেখে যাই।
আমি জানি এবার গেলে আপনি আর দেশে ফিরবেন না।
আচ্ছা এখন আমি আসি।ভালো থাকবেন।
ঝর্না চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ নিলয়ের ডাকে পিছনে ফিরে তাকায়।"
---কিছু বলবেন।
'আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি চলো।'
ঝর্না একটু মলিন হাসি দিয়ে,তা আর দরকার নেই।আমি ম্যানেজ করে নিবো।এমনেই বাকিটা পথ তো একাই পার করতে হবে।
এসব বলেই ঝর্না চলে গেলো।
---নিলয় ঝর্নার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মনটা কেনো জানি হঠাৎ বিষণ্ণতায় ভরে গেলো।বুকের ভেতর একটা ভারী কিছু আটকে গেলো।নিশ্বাস নিতেও কস্ট হচ্ছে আজ নিলয়ের।কিন্তু কেনো?
.
.
.
চলবে…...............................................................