গল্পটা আমাদের - পর্ব ০৫ - আফরোজা আক্তার - ধারাবাহিক গল্প


          আজও প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। ইদানীং বৃষ্টির দিকবিক থাকছে না। যখন তখনই শুরু হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন ভালো থেকে রাত নয়টার পর এইযে শুরু হয়েছে থামার নাম নেই। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। রাত একটা বাজে। নিশাত বারান্দার গ্রীলে মাথা ঠেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির পানি এসে শরীরে পড়ছে। ভিজিয়ে দিচ্ছে মুখমণ্ডল। বাম হাতের কব্জির উপরের অংশে ব্যান্ডেজ করা। নিশাত চোখ বন্ধ করে বিকেলে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি মনে করছে। 

আফরাজকে যখন দ্বিতীয়বারের মতো ধাক্কা দিয়ে নিশাত দরজার লক খোলার চেষ্টা করছিল আফরাজ তখন ঝড়ের বেগে এসে নিশাতের বাম হাতের কাটা স্থানে চাপ দিয়ে ধরে। নিশাত মুখ দিয়ে শব্দ করার আগেই তাকে টানতে টানতে আফরাজের স্টাডি রুমের ভেতরে থাকা আরেকটা রুমে নিয়ে যায়। সেখানে এক পাশে ডাবল বেডের বিছানায় নিশাতকে ফেলে। ওই মুহুর্তে নিশাতের কী হয়েছিল সেটা সে নিজেও বুঝতে পারেনি। প্রচন্ড রাগে বিছানা থেকে উঠে এসে আফরাজকে চড় মারার জন্য হাতটা তুলে নিলেও সে ব্যর্থ হয়। কারণ আফরাজ তার হাতটা ধরে নেয়। ওই হাতটাই মুচড়ে ধরে নিশাতের খুব কাছে এসে আফরাজ নিশাতকে বলে,  

‘এত সাহস তোমার। এত সাহস! আমার গায়ে হাত তুলতে আসো তুমি।’ 

আফরাজের মুখে নিজের জন্য তুমি শব্দটা শোনার পর নিশাত কাঁদতে কাঁদতে বলে, 

‘আপনার সমস্যা কী? আপনি আমার সাথে এমন করেন কেন? আমি আপনার কী ক্ষতি করেছি, বলুন তো? সেই প্রথম দিন থেকে দেখছি আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেই যাচ্ছেন। সামান্য একটা ভুলের জন্য এত এত কথা আপনিই আমাকে শুনিয়েছেন। চাকরির প্রথম দিন থেকে আমাকে সবার শেষে অফিস থেকে বের হতে দিয়েছেন। সেদিন রাস্তায় যা কিছু খারাপ আমার সঙ্গে ঘটেছে তার জন্যেও আপনিই দায়ী। কী ভেবেছেন আপনি, না খেতে পেরে চাকরি করার জন্য পড়ে আছি এখানে। করলাম না আপনাদের অফিসে চাকরি। ভাতে মরে যাব না আমি। আমাকে ছাড়ুন আপনি। এই রুমে কেন নিয়ে আসছেন আপনি? দরজাটাও লক করে রেখেছেন। আপনার বাসার ওই ছেলেটা কী ভাববে? আমাকে বদনাম করার জন্য এসব করছেন, তাই না? ছেড়ে দিন আমাকে। আমি কালকেই resignation letter জমা দিয়ে চলে যাব। ছাড়ুন আমাকে।’ 

ককথাগুলো বলে নিশাত কাঁদছিল। আফরাজের রাগ খানিক কমে এলো। কেন কমল তার সঠিক উত্তর তখন খোঁজার সময়ও ছিল না। নিশাতের বাম হাতটায় বিশ্রী ভাবে ক্ষত হয়েছে। রক্তগুলো ততক্ষণে জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। আফরাজ চোখ তুলে নিশাতের দিকে তাকায়। এত অল্পতেই নিশাত ঘেমে জবজব হয়ে গেছে। চোখের পানির সঙ্গে নাকের নিচের অংশেও পানি জমেছে। খুব ক্লান্ত লাগছিল নিশাতকে। লাগবে না-ই বা কেন, মেয়েটা এত ধস্তাধস্তি করছিল হাতটা ছাড়ানোর জন্য। আফরাজ নিশাতের এই ছটফট করা বন্ধ করার জন্য ওই মুহুর্তে কী করবে ভাবছিল। আশেপাশে বার কয়েক তাকিয়ে সে নিশাতকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নেয়। তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা ছিল না তাদের মধ্যে। এসব দেখে নিশাত আরও ঘাবড়ে যায়। এবার সে আফরাজের টি-শার্টের গলার কাছের কাপড়টা এক হাতে খামচি দিয়ে ধরে বলে,

‘আপনি আমাকে ছাড়বেন নাকি আমি চিৎকার করব?’ 

আফরাজ আর এক মিনিট সময় ব্যয় না করে নিশাতের চোখের পানিতে ভিজে যাওয়া ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠোঁট জোড়া বসিয়ে দেয়। নিশাত নিজের সর্বস্ব দিয়ে আফরাজকে নিজের কাছ থেকে দূর করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। কারণ আফরাজের এক হাত তখন নিশাতের দুই হাতকে আটকে রেখেছে। অন্য হাতটা নিশাতের গলার একাংশ ধরে আছে। কয়েক মিনিট পর নিশাতের ছটফটানি বন্ধ হয়ে যায়। সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তার জ্ঞান থাকলেও শরীর আর চলছিল না। সে শরীরের সমস্ত শক্তি আলগা করে দেয়। মেঝেতে পড়ে যেতে নিলে আফরাজই তাকে শক্ত করে ধরে উঠায়। আফরাজ নিশাতকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। কয়েক মিনিটের ঝড় নিমিষেই ঠান্ডা হয়ে যায়। পুরো ঘর জুড়ে নীরবতা। কোথাও কোনো শব্দ নেই। জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় আফরাজ। নিজের প্রতি নিজেরই ক্ষোভ হচ্ছে। এই মুহুর্তে পশু মনে হচ্ছে নিজেকে। যে আফরাজ নারী জাতটাকে এত ঘৃণা করে, সে আফরাজ একজন নারীর সামনে কী করে দুর্বল হতে পারে? আফরাজ ঘাড় ঘুরিয়ে নিশাতকে দেখে। মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে বিছানার একটা কোণায়। এই পরিস্থিতিতে নিজের অসহায়ত্ব কবুল করে নিয়েছে মেয়েটা। সে খুব ভালো মতোই জানে এইখান থেকে সে চাইলেও বের হতে পারবে না একমাত্র আফরাজ যদি বের হওয়ার অনুমতি না দেয়। কারণ সে যেখানে এখন আছে এই জায়গাটা পুরোটাই আফরাজের রাজত্ব। পায়ের আঙ্গুলগুলো সংকুচিত করে বসে আছে নিশাত। আফরাজ নিশাতের পা থেকে মাথার চুল অবধি খেয়াল করছে। এই অবস্থায় ওকে এখান থেকে বের করা মানে নিজের মান সম্মানকে কবর দেওয়া। রাগের বশে করে ফেলা কাজের জন্য অনুতাপ হচ্ছে ভীষণ। আফরাজ এসি বাড়িয়ে দেয়। ফার্স্ট এইড কিট বক্স এনে নিশাতের পাশে বসে। সেভলন দিয়ে কাটা অংশটা পরিষ্কার করে সেখানে ব্যান্ডেজ করে দেয়। এসবে নিশাতের কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। সে যেন বরফ হয়ে আছে। মেঝে থেকে ওড়নাটা তুলে নিশাতের বুকের অংশটা ঢেকে দেয় আফরাজ। তারপর গম্ভীর স্বরেই বলে, 

‘ওইপাশে ওয়াশরুম আছে। প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে ভেতরে। ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসো।’ 

কথাটা নিশাতের কানে লাগতেই সে আফরাজের দিকে তাকায়। কিন্তু আফরাজ ততক্ষণে স্টাডি রুমে চলে যায়। নিশাতের শরীরটা ভার হয়ে আছে। শরীরে ক্লান্তিরা ভর করেছে। তার উঠতে মন চাইছে না। মন চাইছে এইখানেই শুয়ে পড়তে। দুচোখে রাজ্যের ঘুম। তার ঘুমোতে ইচ্ছে করছে। দেওয়ালে টাঙানো বিশাল ঘড়িতে নজর দেয় নিশাত। সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। তাকে অফিসে যেতে হবে। ফাইলগুলো জমা করতে হবে। নিশাত ওড়নাটা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে যায়। বেসিনের কল ছেড়ে চোখে-মুখে পানি দেয়। ঠোঁটটা ফুলে আছে। লালও হয়ে আছে অনেকটা। লিপস্টিকের ছিঁটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। ভাগ্যিস আজ কাজল পড়েনি। নয়তো সব লেপ্টে একাকার হতো। এখানে আসার আগে বাম চোখটা লাফাচ্ছিল। খারাপ কিছু হবে ভেবে বুকের ভেতরটাও ঢিপঢিপ করছিল। কিন্তু এখানে আসার পর যা হলো, তা কি আদৌ খারাপ নাকি ভালো কিছুই জানে না নিশাত। আফরাজ চাইলে আরও অনেক কিছুই করতে পারত। কিন্তু সে নিজের সীমা লঙ্ঘন করেনি। 

রুম থেকে বের হয়ে দেখে আফরাজ নেই। সে চুপচাপ ব্যাগটা হাতে নেয় আর ফাইলগুলো নিয়ে বের হয়ে যায়। গাড়িতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। গাড়ি চলছে। মাঝ রাস্তায় মাগরিবের আজান পড়ে গেছে। নিশাতের চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কাল সকালে অফিসে গিয়ে resignation letter জমা দিয়ে কিছুদিনের জন্য গ্রামে যাবে। এই অফিসে আর না। আফরাজ নামক লোকটার সামনে আর যেতে চায় না সে। 

ফোনের শব্দে চোখ খুলে নিশাত। রুমে এসে ফোনে হাত দিতেই দেখে সাবরিনা ফোন করেছে। এত রাতে ওর ফোন পেয়ে অবাক হয় নিশাত। সে ফোন রিসিভ করে কানে নেয়। 

‘হ্যালো সাবরিনা, কী ব্যাপার এত রাতে?’ 

‘পরশু আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। তোমাকে এটা জানানোর জন্যই ফোন করলাম। আমাদের অফিস থেকে সাত জনের একটা টিম যাবে কক্সবাজার। তার মধ্যে তুমিও আছ ম্যাডাম। আমি কিছুক্ষণ আগেই মেইল পেলাম।’ 

নিশাত ভাবছে কাল থেকেই সে আর এই অফিসের সঙ্গে জড়িত থাকবে না। পরশু দিন তাকে ছাড়াই সাবরিনাদের টিম কক্সবাজার যাবে। নিশাত কথা দীর্ঘ না করে ফোন রেখে দেয়। অন্ধকার রুমটা আলোকিত হয়েছে লাইট জ্বালানোর পর। নিশাত আয়নায় নিজেকে দেখছে। ঠোঁট জোড়ায় হাত লাগিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করল। আফরাজের তখনকার চুমু খাওয়ার দৃশ্যটা বন্ধ চোখে ভেসে উঠতেই নিশাত চোখ জোড়া খুলে ফেলল। পুরুষ মানুষের চুমুতে এত শক্তি! যে শক্তি একজন নারীকে মুহুর্তেই কাবু করে ফেলার জন্য যথেষ্ট। চুমুর একটা পর্যায়ে নিশাত নিজের উপরের ঠোঁটে ব্যথা অনুভব করেছিল। আফরাজের একটা হাত তখনও তার গলা ধরে রেখেছে। পুরো শরীরটা আফরাজের শরীরের সঙ্গে লেপ্টে ছিল। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি! শরীরের লোমকূপের ভেতরে যেন এই স্পর্শ অনুভব হচ্ছে এখনও। নিশাত ভাবছে, আচ্ছা, সে-ও কি এখন এইসবই ভাবছে? 

সিগারেট টানতে টানতে আফরাজ নাকে মুখে ধোঁয়া ছাড়ছে। অন্যান্য দিন এই সময় সে ঘুমে থাকে। অথচ আজ চোখই বন্ধ করতে পারছে না। বার বার নিশাতের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। নিশাতের ঠোঁট জোড়া ভেসে উঠছে। নিশাতের চোখ জোড়া ভেসে উঠছে। নিশাতের কান্না মিশ্রিত কথাগুলো কানে বাজছে। শেষবার যখন সে নিশাতের দিকে তাকায় তখনও নিশাতের ঠোঁট জোড়া ফুলেছিল। শরীরী চাহিদা, পুরুষালি আবেগ যাকে কখনও ছুঁতে পারেনি সেই আফরাজ এক নারীর সঙ্গে এমনভাবে লেপ্টে ছিল যেন সেই নারী তার খুব কাছের কেউ। কিন্তু এই স্পর্শে কোথাও ছিল না ভালোবাসা। কোথাও ছিল না কোনো মায়া। শুধু ছিল ঘৃণা। মন বার বার নিশাতকেই ভাবছে। শরীর বার বার নিশাতকেই টানছে। আফরাজ নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে যায়। শাওয়ার ছেড়ে কনকনে ঠান্ডা পানির নিচে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রাখে। সে চায় না কোনো মেয়ে তাকে চরিত্রহীন ভাবুক। 

—————

সকাল বেলা যথারীতি নিশাত অফিসে এসে সোজা আফরাজের কেবিনে যায়। আফরাজ তখনও অফিসে আসেনি। নিশাত টেবিলের উপর একটা খাম রেখে চলে আসে। তারপর কাউকে কিছু না বলে হুট করে অফিস থেকে বের হয়ে যায়। 

বেলা এগারোটা নাগাদ আফরাজ অফিসে ঢোকে। নিশাতের ডেস্কটা খালি দেখে তার কেমন যেন সন্দেহ হয়। সে নিজের কেবিনে যায়। চেয়ারে বসতে না বসতেই তার চোখ যায় টেবিলে রাখা খামের দিকে। সে খামটা খোলে। তার সন্দেহটাই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। নিশাত চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এইভাবে তাকে চাকরি ছাড়তে দিবে না আফরাজ। আফরাজ গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে সোজা বের হয়ে যায়। গন্তব্যস্থল নিশাতের হোস্টেল। আফরাজ নিশাতের হোস্টেল চিনে। সেদিন রাতে সে নিশাতকে হোস্টেলের সামনেই নামিয়ে দিয়েছিল। 

হোস্টেলের সামনে এসে আফরাজ নিশাতকে ফোন দেয়। আন-নোন নাম্বার দেখে নিশাত ফোন রিসিভ করেনি। কিন্তু এতেও শান্তি নেই। লাগাতার ফোন বাজছে। সে ফোন রিসিভ করে বিরক্ত গলায় বলল, 

‘কে বলছেন? দেখছেন ফোন রিসিভ হচ্ছে না। তারপরও ফোন দিয়ে যাচ্ছেন। কে বলছেন?’ 

আফরাজ চাপা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, 

‘আর একটাও কথা না বলে চুপচাপ নিচে আসো।’

নিশাত আফরাজের গলা চিনতে পেরে শোয়া থেকে উঠে বসে। তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। আফরাজের কালো গাড়িটা নিচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। 

‘আপনি আমার হোস্টেলের নিচে এসেছেন কেন?’ 

‘অফিসে না গিয়ে বাসায় বসে আছ কেন?’ 

‘আমি অফিসে গিয়ে আপনার টেবিলের উপর খাম রেখে এসেছি। দেখেননি আপনি?’

‘নিচে নামবে নাকি আমি উপরে আসব।’ 

‘আসুন না আসুন। ঠ্যাং ভেঙে রেখে দিবে দারোয়ান চাচা।’ 

‘তুমি আমাকে এখনও চ্যালেঞ্জ করো। এত কিছুর পরেও। ওয়েট করো। তোমার আসতে হবে না আমিই আসছি। তুমি কোন ফ্লোরে থাকো, কত নাম্বার রুম সব জেনেই আমি তোমার রুমে আসছি। দেখি তোমার কোন দারোয়ান চাচা আমার ঠ্যাং ভাঙে। তবে হ্যাঁ, ভেবে দেখ একবার, আমি চলে যাওয়ার পরে তুমি এই হোস্টেলে থাকতে পারবে কি-না।’ 

নিশাত জানে, আফরাজ যা বলেছে তা সে করবেই। এসব হলে তার এই হোস্টেলে থাকা বিপজ্জনক হয়ে যাবে। তাই সে নিজেই বলে, 

‘ঠিকাছে। আমি আসছি। আপনি গাড়িটা আরও সামনে নিন। মানে গেটের কাছে রাখবেন না। দারোয়ান চাচা যেন গাড়ি না দেখে। আমি আসছি।’ 

নিশাত গায়ে ওড়না জড়িয়ে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসে। গেট থেকে বের হয়ে পরের ব্লকে হেঁটে যায়। নিশাতকে দেখে আফরাজ গাড়ির দরজা খুলে দেয়। নিশাত গাড়িতে না উঠেই প্রশ্ন করে, 

‘আপনি এখানে কেন এসেছেন?’ 

‘অফিসে যাওনি কেন?’

‘গিয়েছি। কাজ শেষ করে চলে আসছি।’

‘তোমাকে চাকরি ছাড়ার অনুমতি কে দিল?’

‘চাকরি ছাড়ার অনুমতি কারো কাছ থেকে নিতে হয় না।’

‘নিতে হয়। আমার কাছ থেকে নিতে হয়।’ 

‘এত কিছু করেও আপনার মন ভরেনি। আপনি কী চান বলুন তো। কেন এমন করছেন?’ 

আফরাজ নিশাতের সামনে খাম সমেত চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলে। তারপর বলে, 

‘সাবরিনা নিশ্চয়ই জানিয়েছে আজ রাতে সাত জনের একটা টিম কক্সবাজার যাবে। নেপাল থেকে কিছু ক্লায়েন্ট আসবে। তাদের সঙ্গে মিটিংটা কক্সবাজারে হবে। সারাদিন রেস্ট করো। রাত নয়টায় রেডি থাকবে। তোমাকে নেওয়ার জন্য গাড়ি আসবে।’ 

‘আমি যাব না। আমি যেখানে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি সেখানে আমি কেন অফিসের কাজে বাইরে যাব।’

‘চাকরি ছেড়েছ কোনো প্রমাণ আছে? উল্টো আমি চাইলে তোমাকে না বলে অফিস কামাইয়ের জন্য জরিমানা করতে পারি।’

‘বললেই হলো।’

‘আমাকে এখনও সিরিয়াসলি নিচ্ছ না তুমি। আমি চাইলে কী কী করতে পারি, এসব নিয়ে ভাবতে থাকো তুমি। কেমন? গুডবাই।’ 

আফরাজ আর কিছু বলল না। কিছু শুনলও না। সে সোজা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। এদিকে নিশাতের বেহাল অবস্থা। সে কোনোভাবেই চাচ্ছে না আফরাজের আশেপাশে থাকতে। কিন্তু সেটাও পারছে না। তাকে জরিমানা করার সম্পূর্ণ পাওয়ার আফরাজের আছে। এখন জরিমানা করলে সে নিজেই বিপদে পড়বে। তার উপর চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলেছে লোকটা। কোনো প্রমাণও দিতে পারবে না সে। তাকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। চিঠিটা সরাসরি লতিফ সাহেবকে মেইল করলেই ভালো হতো। নিশাতের ভালো লাগছে না। সে শান্তি চায়। কিন্তু মনে হচ্ছে না এই লোক তাকে শান্তি দিবে। 

নিশাত হোস্টেলে ফিরে আসে। শিলাকে ডেকে নিজের রুমে আনে। ওকে নিয়ে বের হবে। কিছু কেনাকাটা করতে হবে। দুইদিনের জন্য কক্সবাজার যেতে হলে কিছু ভালো কাপড়চোপড় তো লাগবেই। সাবরিনা বলেছিল ওয়েস্টার্ন পরার জন্য। নিশাত ওয়েস্টার্ন পরবে না। তবে ওয়েস্টার্ন রিলেটেড কিছু জামাকাপড় কিনবে ভাবছে। শিলাকে বলাতে শিলা জানালো, চলো নিউমার্কেট চলে যাই। বেছে বেছে মন মতো কিনতে পারব। নিশাত রেডি হয়ে শিলাকে নিয়ে বের হয়ে গেল। সারা রাস্তা নিশাত শুধু একটা কথাই ভাবছে, আফরাজ নামক এই সাপ যে কবে তার পিছু ছাড়বে। আর কবেই বা নিশাত নিজেকে এই সাপ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে। 
·
·
·
চলবে................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp