খাবার টেবিলে নানা পদের খাবার থাকা সত্ত্বেও আফরাজ কেবল দুই পিস ব্রেড তাতে জ্যাম লাগানো, একটা সেদ্ধ ডিম আর এক গ্লাস জুস নিয়ে বসেছে। লতিফ সাহেব খাচ্ছেন কম বড় ছেলের কার্যকলাপ দেখছেন বেশি। ছোট ছেলে ইয়াসিন চঞ্চল প্রকৃতির হলেও বড় ভাইয়ের সামনে সে সব সময় শান্ত। বাবার থেকে ভাইকে বেশি ভয় পায় সে। লতিফ সাহেব সুযোগ বুঝে বাটিতে চামচ দিয়ে আঘাত করলেন। শব্দ শুনে দুইজন মানুষ তার দিকে তাকায়। এক, ছোট ছেলে ইয়াসিন আর দুই, লতিফ সাহেবের বোন জাহানারা বেগম। বোনকে চোখের ইশারায় কি যেন বোঝালেন তিনি। ভাইয়ের ইশারা সহজেই বুঝতে পারলেন জাহানারা। তিনি সামান্য কাশি দিয়ে বললেন,
‘আফরাজ, আজ এতিম খানায় যাওয়ার কথা মনে আছে তো?’
ফুফুর কথায় ফোন থেকে চোখ সরায় আফরাজ। গম্ভীর স্বরেই জবাব দেয়,
‘মনে আছে। দুপুরে একটা মিটিং আছে। মিটিং শেষ করে রওনা দিব আমি। বাবা, তুমি মিটিংয়ে থাকছ তো?’
লতিফ সাহেব স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন,
‘আমি একঘন্টার মধ্যে সুজাপুরের জন্য বের হব।’
‘এত তাড়াতাড়ি যাওয়ার কি খুব প্রয়োজন আছে? মিটিং শেষ করে গেলে ভালো হতো না।’
‘মৃত্যুবার্ষিকী আমার বাবার। তাই আগে আগে আমাকেই যেতে হবে।’
বাবার কথার ধাঁচ ধরতে পেরেছে আফরাজ। কথাটা তাকে খোঁচা মেরে বলা হয়েছে সেটাও সে জানে। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানেই আফরাজ থাকে না। থাকে না বললে ভুল হবে, থাকতে চায় না। সেই এগারো বছর বয়স থেকে সমস্ত চাকচিক্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে সে। অন্যদিকে লতিফ সাহেব গত বিশ বছর যাবত বড় ছেলেকে স্বাভাবিক করতে চেয়েও করতে পারেননি। সেই ব্যর্থতা তাকে রাতে শান্তিতে ঘুমোতে দেয় না। বুঝ হবার পর ফুফুর কাছ থেকে সব শুনে ইয়াসিনও দুঃখ নামক অনুভূতি থেকে নিজেকে দূরেই রাখে। তার জীবনে সেরা তিনজন মানুষ বাবা, ভাই আর ফুফুকে নিয়ে সে বিন্দাস জীবনযাপন করছে। মাঝেমধ্যে ভাইয়ের জন্য কষ্ট হলেও মুখে কিছু বলে না। অতীতে যতবারই বলতে গিয়েছে ফলাফল ভালো হয়নি। কাটা চামচের সাহায্যে ডিমের সাদা অংশ মুখে দিয়ে লতিফ সাহেব বললেন,
‘সাবরিনাকে তুমি অকারণে অফিস ছাড়তে বলেছ কেন?’
‘এত বড় কোম্পানিতে কাজ করার মতো যোগ্যতা তার এখনও হয়নি।’
‘গত চার বছর যাবত সাবরিনা আমাদের অফিসে কাজ করছে আর তুমি বলছ তার যোগ্যতা হয়নি। ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? যাই হোক, আমি সাবরিনাকে বুঝিয়ে বলেছি। সে নিয়মিত অফিসে আসবে।’
কথাটা আফরাজের মোটেও পছন্দ হয়নি। প্লেটের খাবার শেষ না করেই বাড়ির বাইরে চলে যায় সে। জাহানারা বেগম কয়েকবার ডাকলেন কিন্তু আফরাজ আর পেছন ফিরে তাকায়নি। এসব দেখে ইয়াসিন বলল,
‘অফিসের কথা খাবার টেবিলে বলতে গেলে কেন বাবা?’
‘মেয়েটা আমাদের অফিসের পুরোনো স্টাফ। আফরাজ তাকে সামান্য ভুলের জন্য বের করে দিতে পারে না। আর আমি বুঝি না এই ছেলে কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে?’
জাহানারা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘নারী জাতের প্রতি ওর ঘেন্না এতটাই বেড়ে গেছে যে ওর আশেপাশে কোনো মেয়ে থাকুক সেটা ও চায় না।’
‘ফুপি, এক কাজ করো। ভাইয়াকে বিয়ে দিয়ে দাও।’
‘আমাদের সামনে বলেছিস, ভুলেও তোর ভাইয়ের সামনে বলিস না।’
লতিফ সাহেব বিনাবাক্যে খাবার নাড়াচাড়া করছেন। মনে মনে ভাবছেন এবার বড় ছেলেকে বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু ছেলের যা মেজাজ, কোন মেয়ে বিয়ে করবে ওকে? আর মেয়েদের প্রতি ওর যা ঘৃণা, বিয়ের কথা শুনলে সব তছনছ করে ফেলবে, বিয়ে করা তো দূরে থাক।
—————
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে চোখ খুলল নিশাতের। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে খালা জোরে জোরে ডাকছে, এ খালা, খাবার নিয়ে যাও। বালিশের বাম পাশ হাতড়ে ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখে নিশাত। আটটা পঞ্চাশ বাজে। নয়টা বাজল বলে। দরজা খুলে প্লেট হাতে তিনতলায় যায়। চারতলার শেষ মাথায় একটা সিঙ্গেল রুমে থাকে সে। সকালের নাস্তা রুটি আর সবজি। খাবারটা রুমে রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় সে। ফুরফুরে বাতাস এসে শরীরটাকে জুড়িয়ে দেয়। নিশাতের রুমের বারান্দা দিয়ে বেশ সুন্দর বাতাস আসে। নাস্তা খেয়ে বের হতে হবে তাকে। বন্ধু রাকিবুল একজনের ঠিকানা দিয়েছে। সেখানে গিয়ে চাকরির কথা বলবে। একটা চাকরির অনেক প্রয়োজন তার। এইভাবে ঘুরে ঘুরে টিউশনি করতে আর ভালো লাগে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে চাকরির বাজার মন্দা। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অনেককেই। মাস্টার্স শেষ করেও ছেলেমেয়েরা চাকরির জন্য হা হুতাশ করছে সেই জায়গা নিশাত সবেমাত্র গ্রেজুয়েশন শেষ করল। চাকরি কে দিবে তাকে। তবুও গত দেড় মাস ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। ন্যাশনাল ভার্সিটির আন্ডারে পড়াশোনা তার। চার/পাঁচটা টিউশনি করে ঢাকা শহরে ঠিকমতো চলা গেলেও মাস শেষে সেই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর তাছাড়া দিনে এতবার বের হয়ে বাচ্চা পড়ানোতে অনিহা চলে এসেছে। চোখে মুখে পানি দিয়ে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ে সে। একটা টিউশনি শেষ করে সাড়ে এগারোটা নাগাদ টোকিও স্কয়্যারে এসে পৌঁছায় নিশাত। বন্ধুর দেওয়া নাম্বারে ফোন করে দেখাও করল।
‘আমার নাম জুবায়ের। আপনিই তাহলে নিশাত।’
‘জি ভাইয়া।’
‘গ্রেজুয়েশন শেষ তো। তাই না?’
‘জি।’
‘রাকিবুলের সাথেই তাহলে। ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট?’
‘জি।’
‘শুনলাম টিউশনি করেন। সেটাতে সমস্যা কী?’
‘টিউশনি আর করতে চাচ্ছি না। একটা পার্মানেন্ট জব প্রয়োজন আমার।’
‘আপনি বর্তমানে থাকেন কোথায়?’
‘লালমাটিয়ায়। ব্লক এ।’
‘আচ্ছা। দেখুন, ঢাকা শহরে চাকরি পেতে গেলে এবং করতে গেলে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। রাকিবুল সেলস গার্লের চাকরির কথা বলল। কিন্তু সেলস গার্লের চাকরি অনেক প্যারার। বুঝলেন। আপনি কোনো কোম্পানিতে ট্রাই করেছেন?’
‘কয়েক জায়গায় সিভি ড্রপ করেছিলাম। কিন্তু কেউ ডাকেনি।’
‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক্সপিরিয়েন্স চায় ওরা।’
‘এটাই বড় সমস্যা। তার উপর গ্রেজুয়েশন শেষ হলো মাত্র।’
‘আরও এক দেড় বছর পরে ট্রাই করেন। ততদিনে মাস্টার্সও কমপ্লিট হবে আর আরেকটু অভিজ্ঞতাও হবে।’
‘এতদিন অপেক্ষা করতে চাচ্ছি না। আসলে আমার চাকরিটা খুবই প্রয়োজন।’
‘আমার এক মামা আছেন একটা কোম্পানিতে। আপনি এক কাজ করেন আপনার সিভিটা আমাকে দেন। সিভি সাথে আছে?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ। আছে।’
‘দিয়ে যান। আমি মামার সাথে কথা বলে আপনাকে জানাব।’
নিশাত সিভি দিয়ে চলে আসল। আশানুরূপ ফলাফল আসবে না এবারও সে জানে। শুধু শুধুই এত দৌড়ঝাপ। ভাগ্য যার খারাপ হয়, সব দিকেই খারাপ হয়। নিজের কপালকে দুষতে দুষতে কৃষি মার্কেটের ফুটপাত ধরে হাঁটছে নিশাত। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে মাহতাবের নাম্বার ভাসছে। নিশাত বলল,
‘হ্যাঁ বল। কেমন আছিস?’
‘ভালো আছি বুবু। তুমি কেমন আছ?’
‘ভালো। মৌ কেমন আছে, আব্বা কেমন আছে?’
‘সবাই ভালো আছে বুবু।’
‘ফোন করলি হঠাৎ, কোনো দরকার?’
‘সবার কথা জিজ্ঞাসা করলা, আম্মার কথা জিজ্ঞাসা করলা না যে?’
উত্তরটা জানা নেই নিশাতের। সব কিছু মানতে পারলেও এই জায়গাটায় এসে নিশাত থমকে যায়। মাহতাব আবার বলতে শুরু করে,
‘আম্মার প্রতি তোমার রাগটা কবে শেষ হবে বুবু? তুমি আমারে ভালোবাসো, মৌরে ভালোবাসো। খালি আম্মারে ভালোবাসতে পারলা না।’
‘মাহতাব, ফোন রাখি এখন। আমি রাস্তায়। টিউশনিতে যাব৷ ভালো থাক।’
মাহতাবের পরবর্তী কথা শোনার আগেই ফোন রেখে দিল নিশাত। সত্যিই তো, মাহতাব আর মৌ'কে যদি সে ভালোবাসতে পারে তাহলে তাদের মা কী দোষ করেছে? যতবারই ভাবে সব ভুলে যাবে ততবারই নিজের মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। তখনই সব এলোমেলো হয়ে যায়। আসলে নিজের মায়ের জায়গায় অন্য কাউকে বসানো এত সহজ না। মাহতাবের মা নিশাতের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। মাহতাব আর মৌ নিশাতের বাবার দ্বিতীয় ঘরের সন্তান। ভাই বোনদের কখনো সৎ ভাবেনি নিশাত। বরং ছোটবেলায় কোলেপিঠে করেই বড় করেছে ওদের। সব ঠিক থাকলেও বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে মা ভাবতে পারেনি সে। এইচ এস সি'র পরেই বাবাকে বলে ঢাকায় চলে আসে। প্রথম কিছুদিন খালার বাসায় ছিল, পরবর্তীতে হোস্টেলে উঠে যায়। প্রথম দুই বছর সব খরচা বাড়ি থেকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু শেষ দুই/আড়াই বছর এক টাকাও নেয় না নিশাত। টিউশনির টাকায় হোস্টেল খরচ, হাত খরচ হয়ে যায়। নিশাতের বাবা করিম সাহেব বর্তমানে তাদের গ্রামে একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনিও মেয়ের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেননি। দ্বিতীয় বিয়ে করে তিনি এমনিতেই মেয়ের চোখে অপরাধী। সব কিছু থেকে দূরে সরে এসে ভালোই আছে নিশাত। এখন শুধু একটা চাকরি হয়ে গেলেই শান্তি তার।
—————
যোহর নামাজ শেষে মিলাদ পড়ানো হয়। আফরাজ মিলাদের শেষ কয়েক মিনিট আগে এসে পৌঁছায় সুজাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। এতক্ষণ ধরে ছেলের না আসার বিষয়টা লতিফ সাহেবের মনে ব্যথা দিচ্ছিল কিন্তু এখন ছেলেকে দেখে খুশি তিনি। সুঠাম দেহের অধিকারী ছেলের দিক থেকে চোখ সরাতে পারছেন না তিনি। সাদা পাজামা পাঞ্জাবিতে ছেলেকে তার অনেক সুদর্শন লাগছে। ছেলে দুইটাই তার মতো হয়েছে। লম্বা, ফর্সা, সব দিক থেকেই পারফেক্ট। এইজন্যই হয়তো বাবার প্রতি তাদের দুইজনেরই ভালোবাসা বিশাল।
মিলাদ শেষে মসজিদের হুজুরদের সাথে কথা বলে আফরাজ। তারপর বাবার পাশে এসে দাঁড়ায়। বাবার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘সরি বাবা। আরও আগেই আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চেষ্টা করেও পারিনি। মিটিং শেষ হয়েছে বারোটায়।’
‘ইটস ওকে।’
লতিফ সাহেব নিজের বাবার কবর জিয়ারত করেন, পাশে তার দুই ছেলে দাঁড়ানো। ব্যাপারটা তার কাছে গর্বের। কবর জিয়ারত শেষে বাবা ছেলেরা মিলে এতিম খানায় যায়। সেখানে সবার সঙ্গে দেখা করে। এবং সবাইকে খাবার খাওয়ানো হয়। এতিম খানায় দায়িত্বরত হুজুররা লতিফ সাহেব, আফরাজ, ইয়াসিনের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা করেন।
বাদবাকি সমস্ত কাজ শেষ করে সন্ধ্যার পরে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
—————
সপ্তাহ খানেক পর জুবায়েরের ফোন পায় নিশাত। ফোন রিসিভ করতেই একটা সুসংবাদ পায়। জুবায়ের তাকে একটা ঠিকানা এবং একটা মোবাইল নাম্বার দেয়। নিশাত ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে জুবায়েরকে।
‘থ্যাংক ইউ ভাইয়া। থ্যাংক ইউ সো মাচ। আপনি আমার অনেক বড় উপকার করলেন।’
‘এখনই থ্যাংক ইউ বলতে হবে না। আগে যান। কথা বলেন। ইন্টারভিউ দেন৷ হয়ে গেলে তখন থ্যাংক ইউ'র বদলে বিক্রমপুরের মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে মিষ্টি খাওয়াবেন।’
‘হুম।’
ইন্টারভিউ'র দিন সকাল সকাল রেডি হয়ে ধানমন্ডি পাঁচ এর এ'তে যায় নিশাত। ধূসর রঙের একটা সুতি শাড়ি পরেছে আজ সে। প্রাইভেট কোম্পানি বলে কথা, একটু ফর্মাল লুকে না গেলে চোখে লাগবে না। রিক্সা থেকে নেমে ফোন থেকে ঠিকানা বের করে অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে। অফিসের মেইন গেটের দুইজন দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। এদের টপকে ভেতরে যাওয়া যাবে না এটা নিশাত আগে থেকেই জানে। তাই জুবায়েরের দেওয়া নাম্বারে ফোন করে। বয়স চল্লিশ কি পঁয়তাল্লিশ হবে এমন একজন মাঝবয়েসী লোক গেটের কাছে আসেন। এবং নিশাতকে দেখে চিনতে পারেন।
‘আপনি নিশাত?’
‘জি।’
‘আসুন।’
লোকটা নিশাতকে অফিসের ভেতরে নিয়ে যান এবং বললেন,
‘আপনার কথা আমি স্যারকে বলেছি। স্যার দুই/তিনদিন ব্যস্ত থাকায় তেমন কিছু বলেননি। গতকাল আবার বললাম এবং সিভি দেখালাম আপনার। সেইজন্যই আপনাকে সরাসরি ডেকেছে। আমার ডিপার্টমেন্ট তো তিন তলায়। স্যার বসেন ছয় তলায়। আমি ছয়তলার রিসিপশনে বলে দিচ্ছি। আপনি চলে যান।’
‘আপনি যাবেন না?’
‘স্যার আজ অফিসেই আছেন। আশা করি তেমন সমস্যা হবে না। রিসিপশন থেকেই আপনাকে বড় স্যারের রুমে পাঠানো হবে। ভাগ্য ভালো হলে চাকরিটা পেয়েও যেতে পারেন। আমি আমার দিক থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করেছি।’
নিশাত হালকা হেসে ধন্যবাদ জানায়। লোকটা চলে গেলে নিশাত আশেপাশে তাকালে কিছুটা দূরে লিফট দেখতে পায়। লিফটের কাছে এসে অসাবধানতায় এবং বেখেয়ালিতে নিশাত একজনের সঙ্গে বেশ জোরেই ধাক্কা খায়। আচমকা ধাক্কা লাগায় আফরাজের হাতে থাকা ফোনটা মেঝেতে পরে যায়। আর সঙ্গে সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে আফরাজ বলে ওঠে,
‘What the hell are you?’
নিশাত অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। সে মেঝে থেকে ফোনটা তুলে আফরাজের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘I am extremely sorry. আসলে আমি আপনাকে খেয়াল করিনি। Sorry.’
আফরাজ নিশাতের দিকে তাকিয়ে বেশ রাগান্বিত স্বরে বলে,
‘চোখ কোথায় থাকে? একটা কর্পোরেট অফিসে এসে কীভাবে হাঁটতে হয় শিখে আসেননি।’
‘সরি। আসলে আমি খানিকটা অন্যমনস্ক ছিলাম। আমার ভুল হয়েছে। আমাকে আরেকটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’
‘ এদের কে অফিসে ঢুকতে দেয়, যত্তসব আনকালচার।’
নিশাত এবার অনেকটা অবাক হয়। যাকে সে এতবার সরি বলছে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে যার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে, সেই ভদ্রলোক ভদ্র আচরণ করছে না। কথা যাতে না বাড়ে সেজন্য নিশাত আবারও ক্ষমা চেয়ে বলল,
‘আমি সত্যিই সরি। আমি আপনাকে একদমই খেয়াল করিনি।’
কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয়নি। আফরাজ পূর্বের মতোই নিজের রাগ ধরে রেখে এবার নিশাতকে চূড়ান্ত অপমান করতে শুরু করল,
‘কেন খেয়াল করেননি। আপনার খেয়াল করা উচিত ছিল। ধাক্কা মেরে এখন সরি বলছেন। আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন, এটা আপনি জানেন? এখানে সবাই আসতে পারে না। আপনি কীভাবে এসেছেন সেটাই আমি ভাবছি। ফাঁক ফোকর টপকে আপনার মতো ফোর্থ স্ট্যান্ডার্ড পাবলিক এখানে ঢুকতে পারলেও টিকতে পারে না। সো নেক্সট টাইম যখন চলাফেরা করবেন চোখ কান খোলা রেখে চলাফেরা করবেন। যখন তখন পুরুষদের শরীরে হুমড়ি খেয়ে পড়ার শখ নিজের মধ্যে ধরে রাখতে শিখুন।’
আফরাজের বলা প্রথম দিকের কথাগুলো গায়ে না লাগলেও শেষের কথাগুলো শুনে নিশাতের রীতিমতো ঘৃণা লাগছে। একজন অপরিচিত মেয়ের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেই বোধটাই সামনে থাকা লোকটার নেই। এত বাজেভাবে এই প্রথম নিশাতকে এইভাবে অপমানিত হতে হলো। নিশাতও চুপচাপ হজম করার মেয়ে না। সেও সঠিক জবাব দিতে শুরু করল।
‘এক্সকিউজ মি, আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি কোন স্ট্যান্ডার্ডের পাবলিক। আমাকে তো ফোর্থ স্ট্যান্ডার্ড বললেন, আমার তো মনে হচ্ছে আপনার সেই যোগ্যতাও নেই। আমার দ্বারা কারো ক্ষতি হলে আমি সেটা স্বীকার করি। আমি আপনাকে সরি বলেছি। আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। আমি কয়েক দফায় আপনাকে সরি বললাম আর অত্যন্ত ভদ্রভাবেই বলেছি। কিন্তু আপনি তো অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন। একজন অপরিচিত নারীর সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা মনে হয় আপনার পরিবারের কেউ আপনাক্র শেখাইনি। আপনার মতো ক্লাসলেস মানুষ এই অফিসে কী করে, আমিও সেটা ভাবছি এখন। আপনার কথাবার্তায় মনে হচ্ছে এই অফিসটা আপনার বাবার সম্পত্তি। আপনি এই অফিসের মালিক। তাছাড়া আমি যদি বলি আপনি কেন দেখে হাঁটলেন না? আপনারও তো উচিত ছিল চোখ কান খুলে হাঁটা। মেয়ে মানুষের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো বাজে স্বভাব দেখি স্যুট পরা বাবুদেরও আছে।’
নিশাতের বলা কথাগুলো শুনে আফরাজ আরও ক্ষেপে যায়। এই প্রথম কোনো মেয়ে মানুষ তার সঙ্গে এইভাবে কথা বলেছে। এর আগে মেয়ে মানুষ তো দূরে থাক কোনো পুরুষও তার সঙ্গে এইভাবে কথা বলার সাহস পায়নি। আফরাজ অনুভব করতে পারছে তার ভেতরে অস্থিরতা হচ্ছ। তার শরীর কাঁপছে। তার যখন প্রচন্ড রাগ হয় তখন তার শরীর কাঁপে। আফরাজ অফিসে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। আশেপাশে কয়েকবার তাকিয়ে আগুন চোখে নিশাতকে বলে,
‘How dare you?’
নিশাতও রাগান্বিত স্বরেই বলে,
‘There is nothing daring here.’
আফরাজ নিশাতের দিকে দুই কদম এগিয়ে চাপা স্বরে বলে,
‘দোয়া করতে থাকুন এইভেবে যে, আপনার সাথে আমার নেক্সট আর দেখা না হোক। যদি হয়ে যায় তাহলে I will see you.’
লিফটের দরজা খুলতেই আফরাজ ভেতরে যায় এবং ফিফথ ফ্লোরের বাটন সেট করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। নিশাত লিফটে উঠার সময়টাও পায়নি। এতটা নোংরা আচরণ না সে আগে পেয়েছে কারো কাছ থেকে না কখনও আশা করেছে। ইন্টারভিউ দিতে এসে এত বাজেভাবে অপমানিত হবে এটা ভাবেনি সে। অত্যন্ত খারাপ লাগা থেকে চোখের কোণ বেয়ে দুই ফোঁটা পানি বেয়ে পড়ে। আশেপাশে তাকিয়ে চোখের পানি মোছে নিশাত। তার এখন ইচ্ছে করছে এই অফিস থেকে সোজা বের হয়ে যেতে। কিন্তু অন্য কারো জন্য সে কোনভাবেই এই সুযোগ হাত ছাড়া করবে না। সে ইন্টারভিউ দিবে। নিজেকে স্বাভাবিক করে লিফটের দরজা খোলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে সে।
—————
রিসিপশন থেকে নিশাতকে ইন্টারভিউ রুমে পাঠানো হয়। রুমের সামনে এসে পা জোড়া অনেক ভারী হয়ে যায় তার। যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে টেনে ধরে রেখেছে। সামনের দিকে যেতেই দিচ্ছে না। তবুও অনেক সাহস সঞ্চয় করে কেবিনের দরজায় কড়া নেড়ে বলল,
‘May i come in sir?’
লতিফ সাহেব ফাইল থেকে মুখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকান। হালকা হেসে বলেন,
‘Yes, come in.’
নিশাত কম্পিত পায়ে সামনে এসে দাঁড়ালে লতিফ সাহেব তাকে ইশারায় বসতে বলেন। নিশাতও কনফিডেন্সের সহিত লতিফ সাহেবের মুখোমুখি চেয়ারে বসে। লতিফ সাহেব কিছুক্ষণ নিশাতের কাগজপত্র দেখেন। চশমাটা চোখ থেকে খুলে বললেন,
‘একদমই ফ্রেশার। এক্সপিরিয়েন্সও নেই। এদিকে রেজাল্টও খারাপ না। আপনি পারবেন কি-না এটাই ভাবছি আমি।’
‘স্যার, আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন। আমি চেষ্টা করব।’
‘চেষ্টা করলে তো হবে না। কাজের স্পিড থাকতে হবে। আর তাছাড়া এই মুহুর্তে আমাদের ভ্যাকেন্সিও খালি নেই। তারপরও কামরান সাহেব অনুরোধ করলেন। কামরান সাহেব আপনার কী হয়?’
‘আমার বন্ধুর মামা।’
‘I see. চাকরিটা প্রয়োজন কেন?’
‘চাকরি কার না প্রয়োজন স্যার। সবারটা জানি না, তবে আমার প্রয়োজন। অনেক প্রয়োজন।’
নিশাত কথাটা বলে শেষ না করতেই আরেকজন দরজায় কড়া নেড়ে বলে,
‘May i come in?’
লতিফ সাহেব এবারও হেসে জবাব দেন,
‘Yeah, Sure. Come.’
নিশাতকে উদ্দেশ্য করে লতিফ সাহেব বলেন,
‘Miss. Nishat, He is Afraaz Ahmed. Managing Director of our company. And the most important thing is that he is my son.’
এই বাক্যটার জন্য নিশাত একদমই প্রস্তুত ছিল না। এমনিতেই বাঘের ভয় তার উপর অলরেডি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ঘড়িতে যদিও এগারোটা কিন্তু নিশাতের জীবনে এখন সন্ধ্যা। আফরাজের চোখ জোড়া এই মুহুর্তে নিশাতের কাছে একটা ঠান্ডা মাথার খুনি মনে হচ্ছিল। এক আঙ্গুল গালে ঠেকিয়ে বাকি আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে আফরাজ নিশাতের মুখোমুখি বসে তারই দিকে তাকিয়ে আছে। মাথাটা ঝিমিয়ে উঠল নিশাতের। এক ঘন্টা আগে লিফটের সামনে যে মারাত্মক ঘটনাটা ঘটেছে সেটা ভেবেই গা গুলিয়ে উঠছে তার। নিশাত খুব করে চাচ্ছে যাতে এই চাকরিটা তার না হয়। কারণ, চাকরিটা হলে সে মারাত্মক বিপদে পড়বে। লতিফ সাহেব আফরাজকে নিশাতের কাগজপত্র দেখাচ্ছেন। আফরাজের নজর তখনও নিশাতের দিকেই। নিশাত দেখতে পাচ্ছিল এই শান্ত চোখ জোড়া তাকে গিলে খাচ্ছে। শুধু গিলছেই না সাথে কামড়াচ্ছেও। প্রথম দেখায় অপরিচিত একজন মেয়েকে নোংরা কথা বলা মানুষটার চোখে চোখ রাখতে নিশাত সাহস পাচ্ছে না। তার উপর সে নিজেও কম কথা শোনায়নি আফরাজকে। হুট করে আফরাজের তখনকার বলা কথাটা, দোয়া করতে থাকুন এইভেবে যে, আপনার সাথে আমার নেক্সট আর দেখা না হোক। যদি হয়ে যায় তাহলে I will see you.’ মনে পড়ে নিশাতের। নিজের চোখ জোড়া নামিয়ে নেয় সে। খুব বাজে একটা সময় পার করছে। লতিফ সাহেব খানিকক্ষণ পর নিশাতকে বাইরে বসতে বলেন। নিশাতও কেবিন থেকে বের হয়ে ওয়েটিংরুমে গিয়ে বসে। রুমে এসি চলছে, তবুও সে ঘামছে। স্থির থাকতে পারছে না কিছুতেই। চাকরিটা না হলে আফসোস লাগবে আবার চলেও বিপদ। একদিকে মন বলছে এই চাকরিটা না করো। অন্যদিকে মস্তিষ্ক বলছে যদি চাকরিটা হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই করবে। এমন চাকরি কয়জন পায়!
এদিকে আফরাজ নিশাতের কোনো ডকুমেন্টস না দেখেই লতিফ সাহেবকে বলে,
‘এই মেয়েকে এক তারিখ থেকে আমি অফিসে দেখতে চাই বাবা।’
ছেলের কথা শুনে অবাক লতিফ সাহেব। নিশাতই প্রথম ফিমেল স্টাফ যাকে সরাসরি জয়েন করার কথা বলছে আফরাজ। লতিফ সাহেব আরেকটু শিওর হওয়ার জন্য বললেন,
‘Are you sure?’
‘Yes.’
‘মেয়েটার ডকুমেন্টসগুলো দেখে নাও। তোমার নাও পছন্দ হতে পারে।’
‘তুমি দেখেছ তো। আমার দেখা লাগবে না। আমি শুধু এই মেয়েকে এক তারিখ থেকে অফিসে দেখতে চাই। এর অতিরিক্ত আর কোনো কথাই হবে না।’
লতিফ সাহেব জানেন আফরাজ যা বলে তা সে করে দেখায়। যা সে চায় সেটাই সে করে। সাবরিনার বিষয়টা নিয়ে তিনি আফরাজের কথা শোনেননি। তাই এক্ষেত্রে ছেলের চাওয়াটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি। আফরাজকে এখন বের হতে হবে। কিছু কাজ পেন্ডিং আছে তার। সে খুব ভালো করেই জানে তার কথা অনুযায়ী কাজ হবে। বাবা মেয়েটার হাতে জয়েনিং লেটার ধরাবে। এই সুবাদে সে হাজারটা সুযোগ পাবে মেয়েটাকে ভালোভাবে শিক্ষা দেওয়ার। লিফটের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং তখনকার প্রত্যেকটা কথাই আফরাজ মনে রেখেছে। এমন অনেক সুযোগ হবে তার মেয়েটাকে নিজের অবস্থান দেখানোর। আর সে একটা সুযোগও হাত ছাড়া করবে না। এসব ভেবে আফরাজ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায় কেবিন থেকে। ওয়েটিংরুমটা যাওয়ার পথেই পড়ে। আফরাজ চারপাশে তাকিয়ে ওয়েটিংরুমে ঢোকে। নিশাত আফরাজকে দেখে দাঁড়িয়ে যায় সে। নিশাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আফরাজ নিশাতের সামনে খানিক এগিয়ে চাপা স্বরে বলে,
‘Make sure i will destroy you. By the way, welcome to Ahmed Group of industries Miss. Nishat.’
আফরাজ আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ায়নি সেখানে। ইংরেজিতে বলা আফরাজের কথাগুলো শুনে নিশাত ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। ভাবতে থাকে, একটা মানুষ এতটা খারাপ কী করে হতে পারে? ছোট একটা বিষয় যেটালে চাইলেই মিটিয়ে নেওয়া যেত, তা না করে এইভাবে ওপেনলি থ্রেট করে গেছে। মিনিট খানেকের মাথায় পিওন এসে নিশাতকে রিসিপশনে যেতে বলে। নিশাতও পিওনের পিছু পিছু যায়। রিসিপনালিস্ট নিশাতকে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘Congratulations mam, welcome to our company.’
অন্যসময় হলে নিশাত অনেক খুশি হতো। তার চাকরি হয়েছে। সে যেমনটা চেয়েছিল। কিন্তু এখন রীতিমতো ভয় হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে, চাকরিটা না হলেই ভালো হতো। কাঁপা কাঁপা হাতে জয়েনিং লেটারটা নেয় নিশাত। খামটা খুলে দেখে এক তারিখ থেকে জয়েন করতে বলা হয়েছে তাকে। এবং তার ডেস্ক ফিফথ ফ্লোরেই পড়েছে। জয়েনিং লেটার হাতে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যায় নিশাত। দিকবিদিকশুন্য নিশাতের তখন আফরাজের কথাগুলো কানে বাজতে থাকে, ‘Make sure i will destroy you.’ এই কথাটা ভুলতেই পারছে না সে। হঠাৎই একটা গাড়ি বেশ জোরে ব্রেক কষে। আরেকটুর জন্য নিশাতের গায়ে লাগেনি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় নিশাত। গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে কেউ একজন বলে,
‘অগোছালো ভাবে হাঁটলে মরতে হবে। কিন্তু আমি চাচ্ছি না আপনি এত তাড়াতাড়ি মরেন। আর আমার গাড়ির নিচে পড়েন, এটা আমি একদমই চাই না।’
পরিচিত স্বরটা চিনতে পারে নিশাত। পেছন ফিরে তাকাতেই আফরাজকে দেখতে পায়। মনে মনে ভাবতে থাকে, আজকে তো ঘুম থেকে উঠে সবার আগে নিজের চেহারাটাই আয়নায় দেখেছিল। তাহলে এমন অঘটনগুলো কেন ঘটছে তার সাথে। আপদটার নাম নিতে না নিতেই আপদ হাজির। আজ অল্পের জন্য বেঁচে গেছে সে। আফরাজ আগে থেকেই নিশাতকে দেখেছে। ইচ্ছাকৃত ভাবেই সে এইভাবে গাড়ির ব্রেক কষেছে। গাড়ির দরজা বন্ধ করে নিশাতের সামনে এসে দাঁড়ায় সে। বলে,
‘এক তারিখ পর্যন্ত নিজেকে সামলে রাখুন। সাবধানে না চললে চাকরি করার স্বপ্নটা যে নষ্ট হয়ে যাবে। এত তাড়াতাড়ি মরলে তো চলবে না। ধীরে ধীরে কার্যক্রম শুরু হোক। আপাতত এক তারিখ আসুক। এরপর না হয় বোঝা যাবে।’
আফরাজ গাড়ি স্টার্ট দেয়। সাঁই সাঁই বেগে গাড়ি চালিয়ে কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। নিশাত পাশের ফুটপাতেই কপালে হাত দিয়ে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ এখানে বসবে সে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। এমতাবস্থায় হাঁটতে গেলে আবার কিছু একটা ঘটবে। তাই আর রিস্ক নিচ্ছে না।
·
·
·
চলবে.......................................................................