মাই মিস্টিরিয়াস প্রিন্স - পর্ব ২৫ - মৌমিতা মৌ - ধারাবাহিক গল্প


"সন্ধ্যা ব্রো! আপনি কী আমাকে খুঁজছিলেন? এখানে কি করছিলেন আপনি?"

নিক নিজের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে হাঁটছে। নোহারার হাত অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে সে। নোহারাও আর কিছু বলেনি। তার পাশে ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছে। হাত ছেড়ে দেওয়ার ফলে ভয়টা কমে গেছে নোহারার। আশেপাশে মানুষজন ও তরতর করে হেঁটে চলে যাচ্ছে। এই পরিবেশে নিশ্চয়ই লোকটা কিছু করতে পারবে না?

গাঢ় নীল আকাশে তারারা যেন মুক্তোর মতো ঝলমল করছে। তবে শহরের ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সেই আকাশ খুব কমই চোখে পড়ে। আকাশটাকে দেখতে হলে মাথা উঁচু করে তাকাতে হয়, কিন্তু দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু উঁচু বিল্ডিং যেন সেই সুযোগও কেড়ে নেয়। বিল্ডিংগুলোর কাঁচের জানালাগুলো রাতের আলোর প্রতিফলনে আকাশের নীলাভ ছায়া গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে আছে।

রাস্তার বাতিগুলো হলদে আলো ছড়িয়ে মৃদু উষ্ণতা তৈরি করেছে। মানুষের কোলাহল, গাড়ির শোঁ শোঁ শব্দ, আর হালকা ঠাণ্ডা বাতাস মিলিয়ে একটা অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

নিক সেই আকাশে দৃষ্টি স্থির রেখে হাঁটছে। নোহারার প্রশ্নের উত্তরে শুধু একটা শব্দ উচ্চারণ করলো,
"হুম!"

নোহারা বিস্ময়ে জমে গেল। লোকটার অস্বাভাবিক ভাবুক দৃষ্টি আর শান্ত মুখ নোহারাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিলো। মনে হলো উনি কোনো গভীর চিন্তার সমুদ্রে ডুবে আছেন।হঠাৎ, রাস্তার দিক থেকে তীব্র হর্নের শব্দ ভেসে এলো। এক দ্রুতগামী গাড়ি নিকের দিকে ছুটে আসছিল। নিক তখনো মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে, উদাসীনভাবে চারপাশের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন।

"উফফ, আপনি কি করছেন!" বলে চিৎকার করলো নোহারা।

সে এক ঝটকায় নিকের বাহু চেপে ধরলো, আর জোরে টান দিয়ে তাকে রাস্তার পাশে নিয়ে এলো। তৎক্ষণাৎ নিকের ভারসাম্য হারিয়ে দুই হাত নোহারার কাঁধে এসে পড়ল। মুহূর্তটা এতটাই দ্রুত আর আকস্মিক ছিল যে নোহারার শ্বাস আটকে গেল।

মাথা তুলে রাগে ফেটে পড়ল নোহারা,
"কি করছেন আপনি? মাঝ রাস্তায় হাঁটছেন কেনো? দেখে চলা যায় না!"

নিক হেসে বললো,
"ধন্যবাদ।"

নোহারা নিজের কাঁধ থেকে নিকের হাত ছাড়িয়ে নিলো। হাত ভাঁজ করে বললো,
"বুঝেছি আপনার রক্ত পিপাসা পেয়েছে এজন্যই এমন করছেন?"

"হতে পারে। শিকার খুঁজতেই বেরিয়ে ছিলাম। কিন্তু আজকে ভালো লাগছিল না।"

"ওহ হো! আচ্ছা আপনি যে মানুষের রক্ত নিয়ে যান। তারপর সে মানুষের কি হয়?"

নিক কিছুটা কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,
"মা/রা যায়!"

নোহারা চিৎকার করে দূরে সরে গেলো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো নিকের দিকে। নিক মৃদু হাসলো। সে আরো যোগ করলো,
"যদি রক্ত কম শোষণ করা হয় তাহলে বেঁচেও যেতে পারে তবে অনেকটা সময় হসপিটালে থাকতে‌ হতে পারে।"

নোহারা বিরবির করে বললো,
"হুম, এজন্যই হাসপাতালে রক্তশূন্যতার রোগী বেশি দেখা যায়।"

অযৌক্তিক কথা বললো নিক,
"রাতে হাঁটতে ভালোই লাগে। সবকিছু অন্ধকার। অন্ধকারের মাঝে সবাই বাসায় চলে যেতে চায়। কেউ আমার দিকে নজর দেয় না। আমি ভিনদেশী বলে কেউ প্রশ্ন তুলে না। রাতে সব আকাম কুকাম করা সহজ। "

"আমি শুনেছি সূর্যে আপনাদের প্রব্লেম হয়।"
নোহারা সামনে এগিয়ে গেলো। নিক ও পেছনে হাঁটতে লাগলো। উত্তরে বললো,
"হুম হয়। শরীর ঝলসে যায়। তবে বিশেষ পোশাক পড়তে হয় যাতে সূর্যের আলো শরীরের কোনো অঙ্গে প্রবেশ না করতে পারে। সেগুলো পড়লে সমস্যা হয় না। তবে আমি বের হই না। প্রায়শই রাতে আমাকে দেখা যায়।"

নোহারা মাথা নাড়লো। হাঁটতে হাঁটতে নোহারা নিজেদের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে পড়েছে। কিন্তু নিককে বুঝতে না দিয়ে বললো,
"আচ্ছা, আপনি চলে যান। বাকিটা পথ আমিই যেতে পারবো।"

"হুমম! তো এটাই তোমার বাসা!"

চমকে উঠলো নোহারা। নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নিক হেসে নোহারার দিকে তাকিয়ে বললো,
"হয়েছে, লিটিল গার্ল। আর অবাক হতে হবে না। কয় তলায় থাকো?"

"পাঁচ!"

"ওকে। মাঝেমধ্যে এসে থেকে যাবো।"

"শেয়ারে থাকি। তাছাড়া মেয়েদের বাসায় পুরুষ আসতে দেখলে সবাই খারাপ বলবে," শান্ত গলায় বলল নোহারা।

নিক কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপর বলল,
"ওহ, তাহলে তো সমস্যা হয়ে গেলো।"

নোহারা গভীর শ্বাস নিয়ে ভয়টা একপাশে ঠেলে দিয়ে সোজাসাপ্টা বলল,
"আচ্ছা শুনুন। আমি আপনাকে পছন্দ করি না। তাই আর কখনো এভাবে রাস্তায় আটকাবেন না।"

নিকের ঠোঁটে একচিলতে হাসি ফুটল। চোখে একটু রহস্যময় ছায়া নিয়ে সে বলল,
"পছন্দ করার কথা কোথা থেকে আসছে? শোনো, লিটিল গার্ল! আমি চাইলে সেদিনই তোমার জীবন শেষ করে দিতে পারতাম। কিন্তু কিছুই করিনি। কেন জানো? কারণ তুমি ছোট! লিটিল গার্ল তুমি! আর যেহেতু ছেড়ে দিয়েছি, তোমার দায়িত্ব এখন আমার কথা মেনে চলা। আমাকে ভালো রাখা!"

নোহারা হতভম্ব হয়ে গেল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
"কিহ? কী যা তা বলছেন!"

"হুম! তোমার জীবনের পরিবর্তে এতটুকু তো চাইতেই পারি, তাই না?"

নোহারা ঠোঁট কামড়ে, রাগী চোখে তাকাল। নিক তার ভঙ্গিতে কিচ্ছু বিচলিত হলো না। বরং হেসে ফেলল। নোহারার কাঁধে হালকা চাপড় দিয়ে বলল,
"যাও! বাসায় যাও। বারান্দা দিয়ে দুই জন মেয়ে আমাদেরকে দেখছে।"

চমকে নোহারা দ্রুত উপরের দিকে তাকাল। সত্যিই পাঁচতলার বারান্দায় তার দুই রুমমেট ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মাথায় হাত দিয়ে উল্টো ঘুরে লজ্জায় দেয়ালে মাথা ঠুকতে লাগল নোহারা।

নিজেকে সামলে নিকের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
"সন্ধ্যা ব্রো! ইউ আর আ ব্যাড বয়। বাই! নট টু সি ইউ এগেইন!"

নোহারা দৌড়ে চলে গেল। নিক হাসিমুখে মেয়েটার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলল,
"গুড বাই, লিটিল গার্ল। আবারো দেখা হবে!"

••••••••••••••

পৃথিবী, এক বিস্ময়কর গ্রহ। এখানে অসংখ্য রহস্য লুকিয়ে আছে, যা আমরা এখনো পুরোপুরি জানতে পারিনি। এই গ্রহে এমন কিছু জীবের অস্তিত্ব আছে যা আমাদের চোখে ধরা দেয় না, তবু তারা আছে এখানেই, আমাদেরই চারপাশে। আপনি হয়তো এখন আরামের বিছানায় বসে আছেন, কিন্তু জানেন কি, সেই বিছানার চাদরের মাঝেই অগণিত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব অবস্থান করছে? আপনার চাদরে, বালিশে, এমনকি আপনার শরীরেও তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ তাদের উপস্থিতি আমরা টের পাই না। কারণ, তারা এত ক্ষুদ্র যে আমাদের চোখ তাদের ধরতে পারে না।

কিন্তু এখানেই কি শেষ? না। মানবজাতির মাঝেও রয়েছে এমন কিছু বিশেষ প্রজাতি, যারা মানুষের মতো দেখতে, কিন্তু আদতে মানুষ নয়। তাদের ভেতরে এমন কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা বাইরে থেকে সহজে বোঝা যায় না। তারা আমাদের মতো কথা বলে, আমাদের মতোই হাসে, কিন্তু তাদের চরিত্র, ক্ষমতা এবং উদ্দেশ্য সবই আলাদা। তাদের উপস্থিতি এত নিখুঁতভাবে মিশে থাকে যে আমরা ভাবতেও পারি না, আমাদের চারপাশে এমন কেউ থাকতে পারে।তাদের নিয়ে অনেক কাহিনি, অনেক গুজব শোনা যায়। কেউ কেউ বলে, তারা মানুষের সাথে মিশে থাকে, আমাদের জীবনযাপনকে পর্যবেক্ষণ করে। আবার কেউ বলে, তারা শুধু বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণ করতেই নিজেকে প্রকাশ করে। 

অনেকেই প্রশ্ন করে বসবেন, আসলেই কি এমন প্রজাতি আছে। আপনি কী দেখেছেন? উত্তরে বলবো, না। আমি দেখিনি। কারণ তারা আমার সামনে নিজেকে কখনো প্রকাশ করেনি। তাদের চরিত্রের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, তারা উদ্দেশ্যহীনভাবে কিছু করে না। তারা যদি কখনো কারো সামনে আসে, তবে তা কোনো গভীর কারণেই আসে। তারা রহস্যময়, নিঃশব্দ আর অদৃশ্য ঠিক যেমন পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম জীবগুলো আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়, তেমনি তারা নিজেদের অস্তিত্বের গোপনীয়তা রক্ষা করে চলে।

অনন্যা বই বন্ধ করে মাথা চেপে ধরলো। কৌশিক স্যারের সম্পর্কে ভাবতে ভাবতে তার মাথাটা উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। রাত থেকে সকাল হয়ে গেছে। ঘরের জানালার বাইরে সূর্যের প্রথম আলোয় চারপাশ ধুয়ে গেছে, কিন্তু অনন্যার মনের জটিলতা একটুও কমেনি। মাথার ভেতর সবকিছু উলটপালট হয়ে আছে।

নোটপ্যাডে স্যারকে নিয়ে কয়েকটা শব্দ লিখেছে সে,
আকাশি মণি, নীল মণি,
মন মেজাজের ধরণ -
নরম, গম্ভীর, কঠোর, শান্ত, এগ্রেসিভ, পাগল,
(মাঝেমধ্যে কি করে স্যার হয়তো নিজেও বুঝে না তার সাথে সাথে আমিও বুঝি না)
বাংলা নাম - ইশতেহার কৌশিক 
ইংরেজি নাম - কা দিয়ে কিছু একটা ( আরেকবার বললে মনে পড়ে যেত)
প্রিন্সেস আরিসা 
প্রিন্স 

এই কয়েকটা শব্দই মাথায় এসেছে অনন্যার। অনন্যা আরো গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। নিজের ভেতরে এক অদ্ভুত জেদ অনুভব করল। এভাবে দমে গেলে হবে না! মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, কৌশিক স্যারকে সরাসরি ফেস করতে হবে। মুখের উপর স্পষ্ট কথা বলতে হবে। নাহলে লোকটা তাকে প্রতিনিয়ত পেয়ে বসবে।

কয়েকদিন ধরে যা খুশি তাই করছে স্যার! আর কত সহ্য করা যায়? অনন্যা চুপচাপ বসে থাকার মেয়ে নয়। এমনকি তার ভেতরের সমস্ত ভয়, অস্বস্তি যেন ধীরে ধীরে ঝরে পড়ছে। বিছানা থেকে নেমে অনন্যা আয়নার সামনে চলে গেলো। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে কঠিন চোখে আয়নার দিকে তাকাল সে। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল এক তীক্ষ্ণ, আত্মবিশ্বাসী হাসি।

••••••••••••••••

কৌশিক রাতভর কাজে ডুবে ছিল। কাজের চাপ তার মাথা ভারী করে তুলেছিল, তবু সে মনোযোগ ধরে রেখেছিল। তবে গভীর রাতের এক অদ্ভুত সময়ে সবকিছু বদলে যেতে শুরু করল। হঠাৎ করেই তার মন অস্বস্তিতে ভরে উঠল। মনে হলো, কেউ যেন তাকে ডাকছে কিন্তু সেই ডাক স্পষ্ট নয়, যেন দূর থেকে ভেসে আসা কোনো শব্দ। কৌশিক থমকে গেল। প্রথমে ভ্রু কুঁচকে চারপাশে তাকাল, কিন্তু কিছু দেখতে পেল না। নিজের মনকেই বোকা বানানোর চেষ্টা করল সে, ভাবল, ক্লান্তি! এর চেয়ে বেশি কিছু নয়! নিজেকে এই বলে আবার কাজে মন দিতে চেষ্টা করল।

হঠাৎ হঠাৎ ডাকটা শুনতে পাচ্ছিল কৌশিক। কখনো স্পষ্ট, কখনো মৃদু। তারপর দীর্ঘক্ষণ নীরবতা। যেন কেউ ইচ্ছা করে তাকে বিভ্রান্ত করছে। সে চেষ্টা করছিল স্বাভাবিক থাকতে। কিন্তু যতবার সে কাজে মনোযোগ দিত, ঠিক ততবারই সেই অদ্ভুত ডাক আবার ফিরে আসত। মাথার ভেতর প্রতিধ্বনির মতো বাজছিল সেই অদৃশ্য কণ্ঠস্বর। যেন কারো চাপা স্বর, যা সরাসরি তার মস্তিষ্কে আঘাত করছিল। কৌশিকের শরীর ধীরে ধীরে আরো হিমশীতল হয়ে উঠতে লাগলো। তার হাত থেকে কলম ছিটকে পড়ে গেল মেঝেতে। 

পাশাপাশি দুই রুমে বসবাসকৃত মানব-মানবী একে অপরের চিন্তায় মত্ত। কিন্তু কেউই বুঝতে পারছে না সেটা। পাশের ঘরে অনন্যা নিজের অজান্তেই কৌশিককে ভাবতে ভাবতে ডেকে চলেছে, আর সেই ডাক যেন কৌশিকের হৃদয়ে ভারী হয়ে বাজছে। সে আরো উতলা হয়ে পড়ছে। বুকের পাশটা ব্যাথা করছে‌। নিজেকে সামলানোর জন্য পানি খেতে চেয়েছিল কৌশিক, কিন্তু গ্লাস ধরতে গিয়েই হাত ফসকে মাটিতে ফেলে দিল। কাঁচের ভাঙা শব্দ চারপাশের নীরবতাকে ভেঙে দিলেও তার অস্থিরতা কমল না। হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি আর মাথার ভেতরের প্রতিধ্বনি থামানোর চেষ্টা করতে করতে সারা রাত কেটে গেল কৌশিকের।

সকালটা গাঢ় হলে নিজের রুমের দরজায় করাঘাত শুনতে পেলো কৌশিক। ভ্রু কুঞ্চিত করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। অনন্যা ডাকছে 'স্যার স্যার' করে। কৌশিক পাত্তা দিলো না। উল্টো ঘুরে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।

কিন্তু অনন্যার কথা শুনে আবারো থেমে গেলো কৌশিক। অনন্যা বলছে,
"স্যার! দরজা খুলুন নাহলে হাতুড়ি দিয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে যাবো।"

কৌশিক দরজার সামনে এগিয়ে গিয়ে হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো। দেখতে চাইছে মেয়েটা আর কি কি বলতে পারে! অনন্যা কতক্ষণ 'স্যার স্যার' করেই যাচ্ছে। এক সময় বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে বললো,
"ওই ইঁদুর দরজা খোল। তোর কিন্তু বাচ্চা হবে না। সারাদিন চো চো করবি, কেউ দেখতে আসবে না।সাইকো একটা! তোর মগজ আলাদা করে রিডোকে খাওয়ালেও তো পারিস! বাঘটা শরীরে পুষ্টি তো পেতো! এমনভাবে রুমের মধ্যে দুয়ার লাগিয়ে বসে থাকে যেন তাকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে সবাই! হাহ! একদিন এই শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিবো আমি। তারপর রাস্তায় দাঁড় করিয়ে সবাইকে দেখাবো হুহ!"

অনন্যার রাগান্বিত কথাবার্তা শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে কৌশিকের। সে দরজা খুলে প্রথমেই প্রশ্ন করলো,
"কী দেখে আমাকে এই নাম দিয়েছো? আমি দেখতে কী ইঁদুরের সাইজের?"

অনন্যা ভড়কে গেলো। চোখ ছোট ছোট করে ফেললো। কত কিছু তৈরি করে এসেছিল কিন্তু বলতে পারছে না । সামনাসামনি এই লোকটাকে দেখলে একদম চুপসে যায় সে। তাও অনন্যা সাহস জুগিয়ে বললো,
"হ্যাঁ মানে না। ইঁদুরের সাইজ না কিন্তু মস্তিষ্কটা ইঁদুরের মতো।"

"কিহ?"

অনন্যা হাসার চেষ্টা করলো। কৌশিক বললো,
"হ্যাঁ তো ম্যাডাম! আপনি হাঁসের মতো প্যাকপ্যাক কেনো করছিলেন?"

"হাঁসের মতো প্যাক প্যাক! কখন করলাম?"
অনন্যা হতবাক নয়নে তাকিয়ে রইল।

কৌশিক একটু সামনে এসে মুচকি হেসে বলল,
"করেছো! একটু আগেই করেছো! ‘স্যার স্যার স্যার!’ এটা আমার কানে প্যাক প্যাক প্যাক শোনাচ্ছিল। সো তুমি একটা হাঁস! হাঁসের রাণী প্যাকপাকানি!"

অনন্যার রাগে চোখ রাঙিয়ে উঠল। স্যারের গলার দিকের শার্টের কলার ধরে বলল,
"আর আপনি যে সারাদিন মেজাজ দেখান? চো চো করেন ওইটা? আপনি একটা ইঁদুর!"

কৌশিক অনন্যার হাত সরানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
"না আমি এতো ছোট না। টাইগার বললেও বুঝতাম কিন্তু তুমি আমাকে ইঁদুর বানিয়ে দিয়েছো। এতো ছোট একটা প্রাণী? এটাতো মানা যাচ্ছে না।"

অনন্যা নাক ফুলিয়ে কৌশিকের আরেকটু কাছে এসে বললো,
"না, মানা যাচ্ছে না বললে হবে না। মানতে হবে। আপনি একটু ইঁদুর। "

তাদের দুরত্ব সামান্য হয়ে গেছে, একে অপরের নিঃশ্বাস দুজনের মুখে এসে লাগছে, বুকের ওঠানামা, লাব ডাব শব্দটা শোনা যাচ্ছে তীব্রভাবে। অনন্যা বিষয়টা খেয়াল করে অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলো হঠাৎ। সে বুঝতে পারছিলো না কখন তারা কথা বলতে বলতে এত কাছে এসে পৌঁছেছে। অনন্যা সরে যেতে লাগলো, স্যারের পোশাক ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে লাগলো। কিন্তু তার আগেই একটা নিষিদ্ধ কাজ হয়ে গেলো কৌশিকের দ্বারা। কৌশিক কিছুক্ষণ ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল অনন্যার দিকে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে নিচুতে ঝুঁকে অনন্যার ওষ্ঠে ওষ্ঠ চেপে ধরলো আলতো করে। অনন্যা চোখ বড় করে ফেললো। কিয়ৎক্ষণ সময় পার হতেই অনন্যা ধাক্কা দিয়ে কৌশিককে সরিয়ে দিয়ে বললো,
"আপনি এতো অসভ্য কেনো?"

কৌশিক কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়ালো , সম্বিত ফিরতেই মাথা নিচু করে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো। চুলগুলোয় হাত চালিয়ে অনন্যাকে পাশ কাটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সে। অনন্যা বিরক্ত চোখে তাকালো স্যারের দিকে। লোকটা এমন এমন কাজ করে বসে অনন্যা সত্যিই বুঝতে পারে না।
.
.
.
চলবে.......................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp