শাহানা বেগমের আহাজারিতে পুরো বাড়ি গুমরে উঠেছে। পাঁচ বছরের বেশি সময় পর ছেলে ফিরে এসেছে তাতে যেন বুকের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। শেরাজ মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। শাহানা বেগম একমাত্র ছেলেকে পাঁচ বছর পর চোখের সামনে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। শেরাজ কাঠকাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুধু এক হাতে মায়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরেছে। শাহানা বেগম ছেলের বুক ভাসিয়ে দিচ্ছেন চোখের নোনা জলে। এতদিন পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে যেন বুকের শূন্যতা একটু হলেও পূর্ণ হয়েছে।
দূর থেকে ইফা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাই আর মায়ের এই আবেগঘন মুহূর্তটা দেখছে। ভাই যে হুট করে দেশে ফিরে এসে সবাইকে এভাবে চমকে দেবে এটা সে একদমই আশা করেনি। তবে ভাই ফিরে আসায় যেন বুকের ভেতরটা খুশিতে ভরে উঠেছে তার।
আতাউর মির্জা আর ইহসান মির্জা বাড়িতে আসেন নি। বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার পরপরই তাদের একটা জরুরি কাজ পড়ে যায়। যার দরুণ বিয়ে বাড়ি থেকেই সোজা ওখানে চলে যেতে হয়েছে। শুধু এতটুকু জেনেছেন বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে। কিন্তু আতাউর মির্জা নাতির বাংলাদেশে হুট করে আসার খবরটা শুনে চিন্তায় পড়ে যান। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা ওনার অজানা। তবে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন শেরাজকে মেহুলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার। কিন্তু সেটা আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিশ্চিত নন তিনি। নাতি যে ওনার বড্ড একরোখা আর প্রচণ্ড জেদি স্বভাবের যেটা শেরাজ পাঁচ বছর আগেই প্রকাশ করে ফেলেছে।
—————
শেরাজ মাকে শান্ত কণ্ঠে বলল, "মা প্লিজ এবার তো থামো।"
শাহানা বেগম ছেলের বুক থেকে মুখ তুলে ভাঙা কণ্ঠে বলেন, "তুই যে আসবি সেটা তো বলিস নি!"
শেরাজ হালকা হেসে বলল, "বলে আসলে কি এভাবে চমকে উঠতে?"
শাহানা বেগম ছেলের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "তুই অনেক শুকিয়ে গিয়েছিস রাজঙ আগে কত মোটা ছিলি!"
শেরাজ নীরবে হেসে বলল, "প্রত্যেক মায়ের এক ডায়লগ!"
শাহানা বেগম চোখের জল মুছে দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, "এখন যাই হয়ে যাক না কেন, তোকে আমি আর আমার চোখের আড়াল হতে দেব না। পাঁচ বছর আগে তোকে কাছ ছাড়া করেছিলাম আর ছাড়ছি না সে দুনিয়া উল্টে যাক গিয়ে।"
শেরাজ এবার গলার স্বর রুক্ষ করে বলল, "তুমি কি যেতে দিবে না আমাকে, আমি আর বাংলাদেশ থেকে যাবো না। তবে যদি আমাকে যেতে হয় একজনকে সাথে করেই নিয়ে যাবো।"
শাহানা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন, "কাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবি?"
শেরাজ প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, "কী মা আজ পাঁচ বছর পর এলাম কোথায় তোমার হাতের রান্না করা মজার মজার খাবার খাব তা না করে তুমি কান্না করায় আর প্রশ্ন করায় লেগে গেছো!"
শাহানা বেগম উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, "ও হ্যাঁ হ্যাঁ! আমি এক্ষুনি যাচ্ছি আজকে আমার রাজের সব পছন্দের খাবার রান্না করব।"
বলেই নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে আকলিমাকে সব রেডি করতে বললেন।
শেরাজের নজর পড়ল অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা বোনের দিকে। ইফা ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে এগিয়ে এসে ভাইকে বলল, "কেমন আছো ভাইয়া?"
শেরাজ প্যান্টের পকেটে দু’হাত গুঁজে জোরে শ্বাস টেনে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, "উমম... ভালো।"
ইফা ম্লান কণ্ঠে বলল, "তুমি অনেক পাল্টে গেছো ভাইয়া।"
শেরাজ দু ভ্রু উঁচিয়ে বলল, "যেমন?"
ইফা একটু ভেবে বলল, "ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না কিন্তু কেমন যেন বদলে গেছো!"
শেরাজ পকেট থেকে হাত বের করে বোনের খোলা চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল, "আর আমার বুড়িটাও এই পাঁচ বছরে আরও বুড়ি হয়ে গেছে।"
ইফার নাক ফুলে উঠল। পাঁচ বছর আগের সময়গুলোতে শেরাজ এমনটা করলে রাগে ফায়ার হয়ে যেত। কিন্তু এখন পাল্টে গেছে সেই আগের মুহূর্তটা। পাঁচ বছর পর ভাইয়ের মুখে আবার বুড়ি ডাকটা শুনতে পেল সে। এই ডাকটা যেন ইফাকে আরো গলিয়ে দিলো ভেতর থেকে। এই পাঁচ বছরে প্রথম ছয় মাস ভাই বাড়িতে ফোন না করলেও পরে যখন কথা হতো তখন এতটাও কথা হতো না তাদের সাথে। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে শেরাজ ফোন করা কমিয়ে দিল পরিবারের সবার সঙ্গে কথাবার্তা কমে গেল আর শেষে যেন একেবারেই দূরে সরে গেল। আজ এত বছর পর ভাইকে সামনে দেখে ইফার চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পড়ছে। শেরাজ আদরের বোনের চোখে জল দেখে বলল।
"একি আমার বুড়িটা দেখি কান্না করছে? তুই কবে থেকে কান্না করা শিখলি বুড়ি? আগে তো অন্য জনকে কাঁদাতি ছলচাতুরি করে?"
ইফা নাক ফোলাছে তবে সেটা এবার কান্নার জন্য নয় বরং রাগের জন্য। ইফা কর্কশ কন্ঠে বলল, "কি আমি ছলচাতুরি করি?"
শেরাজ আফসোস স্বরে বলল, "কেন তুই জানিস না? সবাই তো জানে কথাটা।"
ইফা হাত উঁচু করে ভাইয়ের বাহুতে "ভাইয়া" বলে মারতে যাবে তৎক্ষণাৎ শেরাজ দৌড় মারে। শেরাজ দৌড়াচ্ছে আর তার পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে ইফা। এ যেন সেই আগের পাঁচ বছরের মির্জা বাড়ি।
—————
মেহুল দরজায় খিল এঁটে বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে। সে রুম থেকে বের হবে না। শেরাজ ভাইয়ের সামনে কিছুতেই পড়বে না। কিন্তু কতদিন এভাবে নিজেকে ঘর বন্দি করে রাখবে? আর শেরাজ ভাই কবে যাবে প্যারিসে? নাকি এক্কেবারের জন্য চলে এসেছে বাংলাদেশে? মেহুল ঠোঁট কামড়ে ধরে চিন্তা করতে থাকে।
নিচ থেকে ভেসে আসছে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ। আর চিৎকার করার মালিকটা কে মেহুল বুঝতে পারছে। তার মানে সবাই চলে এসেছে বাড়িতে। মেহুল নিজ মনে বলে উঠল, "এভাবে চিৎকার করছে কেন ইফা আপু? কী হয়েছে?"
মেহুল দরজা খুলে করিডোরে এসে দাঁড়ায়। ড্রয়িং রুমের দিকে চোখ যেতেই দেখে ইফা আর শেরাজ দৌড়াদৌড়ি করছে। যেন ছোটবেলার সেই দিনগুলো ফিরে এসেছে। মেহুলের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ঠিক আগের শেরাজ ভাই তার সামনে। হাসিখুশি প্রাণোজ্জ্বল একজন মানুষ। কিন্তু হঠাৎ শেরাজ থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভাইকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে ইফাও থেমে যায়। শেরাজের মুখের অভিব্যক্তি মুহূর্তেই বদলে যায়। মুখে হাসির জায়গায় গম্ভীরতা এসে ভিড় করলো। মেহুল অবাক হলো শেরাজকে এভাবে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে। এমন কি শেরাজ নড়ছেও না একটু। এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। কি হলো হঠাৎ? শেরাজ ঢোক গিলে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ তুলে করিডোরের দিকে তাকায়। দুজনের দৃষ্টি এক হলো। মেহুল নড়ে উঠল। শেরাজের তীক্ষ্ণ চোখের চাউনি দেখে মেহুলের বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। এক মুহূর্তও দেরি না করে সে দ্রুত রুমে ফিরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বিড়বিড়িয়ে উঠল।
"শেরাজ ভাই বুঝলো কি করে আমি যে করিডোরে এসে দাঁড়িয়েছি।"
—————
ইফা ভাইয়ের কাছে এসে বলল, "কি হয়েছে ভাইয়া?"
শেরাজ ছোট্ট করে উত্তর দিলো, "কিছু না।"
বলেই সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হয়। সিঁড়ি বেয়ে করিডোরে আসতেই পা জোড়া থেমে যায়। দৃষ্টি পড়ে মেহুলের বন্ধ কাঠের দরজার উপর। শেরাজ নৈঃশব্দে হেসে মনে মনে আওড়ালো, "নিশ্চয়ই ভাবছিস আমি বুঝলাম কি করে তুই যে করিডোরে আছিস?"
শেরাজ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়ে পুনরায় নিজ মনে আওড়ালো, "তুই যখন আমার আশেপাশে থাকিস তখন আমার পুরো অস্তিত্ব তা টের পায়। হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দন বলে দেয় তুই এখানেই আছিস একদম আমার কাছাকাছি।"
—————
সূর্য তার নিত্যদিনের মতো জনমানবকে আলো দিয়ে এবার বিদায় নিয়েছে। ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে দিগন্তের ওপারে। আকাশজুড়ে নেমে এসেছে অন্ধকার। চারপাশে জ্বলে উঠেছে কৃত্রিম আলো। শহরের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি আর বিলবোর্ডগুলো যেন নতুন এক সৌন্দর্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক আলোয় যেমন দিনের পরিবেশ অন্য রূপ ধারণ করে। তেমনি কৃত্রিম আলোতেও রাতের পরিবেশ এক রহস্যময় সৌন্দর্যের রূপ ধারণ করে।
মেহুল পড়ার টেবিলে বসে আছে। কিন্তু বইয়ের পাতায় তার মন নেই। কেমন যেন দম বন্ধ লাগছে। কেন এমন লাগছে? কারণটা কি শেরাজ ভাই? কিন্তু শেরাজ ভাই তো তাকে কিছু বলেও নি। তাহলে এমন অনুভূতি কেন হচ্ছে? হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। মেহুল চমকে উঠে। কে এলো? মেহুল ঠোঁট ভিজিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কে?"
বাইরে থেকে ভেসে এলো ইফার কণ্ঠ, "মেহু আমি দরজাটা খুল। আর কত এই চার দেয়ালের মাঝে নিজেকে বন্দি করে রাখবি?"
মেহুল দরজা খুলে দেয়। ইফা একটা ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢোকে। মেহুল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "ব্যাগে কী আছে?"
ইফা হাসিমুখে ব্যাগ উপুড় করে ব্যাগে থাকা সব জিনিস বিছানায় ফেলে বলল, "ভাইয়া প্যারিস থেকে এনেছে এগুলো আমার জন্য!"
বিছানায় ছড়িয়ে আছে অনেক রকমের চকলেট, স্কার্ফ, নামী ব্র্যান্ডের পারফিউম আর বিভিন্ন অ্যাক্সেসরিজ। ইফা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে, "দেখ তো কোনগুলো সুন্দর?"
মেহুল ম্লান হেসে বলে, "সবগুলোই সুন্দর।"
কিন্তু তার মনের ভেতর অন্য এক প্রশ্ন জাগলো তার জন্য কি শেরাজ ভাই কিছু আনে নি? হয়তো আনে নি? একবার বলতে ইচ্ছে করল ইফাকে। কিন্তু মনের কথাগুলো মনের মধ্যেই রেখে দিল মেহুল। ইফা একটা নেকলসের বক্স মেহুলের দিকে এগিয়ে বলল, "এটা তোর।"
মেহুল নাকচ কাজ করে বলল, "না না ইফা আপু আমার লাগবে না।"
ইফা চোখ পাকিয়ে বলল, "বড়ো বোন কিছু দিলে নিতে হয়। চুপচাপ নে।"
মেহুল নিলো। ইফা বেশির ভাগ চকলেটেই মেহুলকে দিয়ে গেলো। মেহুল নিতে চায় নি কিন্তু জোর করে সে দিয়ে গেছে।
—————
মেহুল রুম থেকে বের হলো হাতে তার ওয়াটার বোতল। উদ্দেশ্য কিচেন থেকে পানি আনা। রুমের দরজাটা ঠেলে মাথাটা বের করে আশপাশ দেখে নেয় শেরাজ আশে পাশে আছে কিনা। না শেরাজ নেই বরং তার রুম থেকে হাঁটাচলার আওয়াজ ভেসে আসছে। তার মানে শেরাজ রুমে আছে। এই সুযোগে ওয়াটার বোতলটা পানি দিয়ে ভরে সোজা রুমে চলে আসতে হবে।
বাড়িতে এখনো ফিরে নি আতাউর মির্জা আর ইহসান মির্জা। মেহুল কিচেনে আসলো। রান্না বান্নার আয়োজন চলছে সব শেরাজের পছন্দের খাবার। শাহানা বেগম মেহুলের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালেন। মেহুল নজর সরিয়ে নেয়। শাহানা বেগম ছেলের জন্য ব্ল্যাক কফি বানাচ্ছেন। মেহুল চুপচাপ বোতলে পানি ভরে চলে যেতে নিবে তৎক্ষণাৎ শাহানা বেগম ডেকে উঠলেন।
"দাঁড়া।"
মামির ডাক শুনে মেহুল তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে মামির দিকে ফিরে ভয়ে ভয়ে বলল, "কিছু বলবেন মামি?"
শাহানা বেগম কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলেন, "যা রাজকে দিয়ে আয় কফিটা। ছেলেটা কখন থেকে অপেক্ষা করছে কফির জন্য।"
মেহুল কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, "আ... আমি?"
শাহানা বেগম রূঢ় স্বরে বললেন, "কেন তুই কোন দেশের মহা রাণী যে তোকে দিয়ে কোনো কাজ করানো যাবে না?"
মেহুল দ্রুত বলল, "না না আমি সেটা বলি নি।"
শাহানা বেগম পুনরায় বলেন, "তাহলে কি বলেছিস?"
মেহুল নত হয়ে বলল, "মগটা দেন আমায় আমি দিয়ে আসছি।"
মেহুল এক হাতে কফির মগ আর অন্য হাতে ওয়াটার বোতল নিয়ে উপরে চলল।
শাহানা বেগমের ঠোঁটে ফুটে উঠে কুটিল হাসি। পাঁচ বছর পর শেরাজের মনে ঠিক কি আছে মেহুলের জন্য সেটা তিনি দেখতে চান। শেরাজকে এই পাঁচটা বছর পরিবার ছেড়ে শুধু মাত্র এই মেয়েটার জন্য দূর দেশ থাকতে হয়েছে। যেই মেয়েটার জন্য শেরাজকে বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয়েছিলো বাংলাদেশ ছেড়ে সেই মেয়েটাই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এই মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটা শেরাজের মনে অভিমান জমিয়ে তোলে মেহুলের জন্য। সেই অভিমানটাই রাগে পরিণত হয়েছে এতটুকু নিশ্চিত ওনি। আর এখন দেখতে চান ছেলে মেহুলকে নিজের ঘরে দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়?
·
·
·
চলবে...................................................................................