স্টে উইথ মি - পর্ব ০২ - নুসরাত জাহান বৃষ্টি - ধারাবাহিক গল্প


          মেহুলের ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল সাড়ে তিনটে বেজে যায়। সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই চোখ পড়ে নানাভাই আতাউর মির্জার দিকে। তিনি লিভিং রুমের সোফায় বসে আছেন, হাতে একটা পেপার। নাতনিকে দেখতে পেয়ে তিনি খবরের কাগজটা নামিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দু’হাত মেলে নাতনীকে নিজের কাছে ডাকেন। মেহুল তা দেখে ম্লান হেসে এগিয়ে নানা ভাইকে জড়িয়ে ধরে। আতাউর মির্জা নাতনীর শুকনো মুখটা দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "কি হয়েছে আমার মেহুল নানা ভাইয়ের? মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?"

মেহুল নিজেকে সরিয়ে আনলো। তখনই তার নজর পড়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা শাহানা বেগমের দিকে। তার তীক্ষ্ণ চোখের চাহনি দেখে মেহুল নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে শুকনো ঢোক গিলল। মেহুল দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে ঠোঁটের কোণে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বলল, "কিছু হয় নি নানাভাই।"

আতাউর মির্জার কপালে ভাঁজ পড়ে। তিনি আবারও বললেন, "তাহলে মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?"

মেহুল মাথা নিচু করে ধীর কণ্ঠে বলল, "সারাদিন ভার্সিটিতে ছিলাম তাই একটু ক্লান্ত দেখাচ্ছে হয়তো।"

আতাউর মির্জা আর কিছু বললেন না। তিনি খুব ভালো করেই জানেন, বাড়িতে তিনি না থাকলে শাহানা বেগম কীভাবে মেহুলের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। নাতনির প্রতিটা না বলা কথা আর মুখের প্রতিটা মিথ্যা অভিব্যক্তি তিনি পড়তে পারেন। এমনি এমনি তো আর তার চুল পাকে নি। এই‌ জগতের আশেপাশের মানুষদের তিনি কম বেশি ভালোই বুঝেন চিনেন। কিন্তু মেহুল কখনো কোনো অভিযোগ তোলে না। সবকিছু ঢেকে রাখতে গিয়ে নিজের কষ্টগুলোকে চেপে রেখে দেয় বুকের গহীনে। আর সেই জন্যই তিনি শাহানা বেগমের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলতেও পারেন না। আতাউর মির্জা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

"ঠিক আছে ফ্রেশ হও গিয়ে।"

মেহুল মাথা নেড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায় নিজের ঘরে।

—————

মেহুল ঘরে ঢুকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। বাইরে বাইরে যতোই নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করুক না কেন?ভেতরে ভেতরে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ব্যাগটা বিছানার উপরে রেখে সোজা ওয়াশরুমে ঢোকে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আয়নায় পড়া নিজের প্রতিফলিত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো এক ধ্যানে। চিন্তা আর ক্লান্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে চেহারাটা মলিন হয়ে আছে মেহুলের। নিজের চেহারা দেখে খানিকটা বিরক্ত হলো মেহুল। নিজ মনেই বিড়বিড় করে উঠলো মেহুল।

"কী পেয়েছি আমি এই জীবনে? কি পেয়েছি কিচ্ছু না?" 

মেহুল ধীরে ধীরে চশমাটা খুলে বেসিনের উপর রেখে মুখে পানির ঝাপ্টা দিলো। মুখে ঠান্ডা পানি পেয়ে যেন কিছুটা শান্তি পেলো। কিন্তু মনের গভীরে জমে থাকা ক্ষতগুলা মুছতে এই পানি যথেষ্ট নয়। শাহানা বেগমের আজকের তীক্ষ্ণ চাহনিটা বারবার মেহুলের মনের কোণে কাঁটার মতো বিঁধছে। শাহানা বেগমের কথাগুলো বার বার মস্তিষ্কে নেড়ে উঠছে ভয়ানক ভাবে। মেহুল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আরো কয়েকবার পানির ঝাপ্টা দিয়ে চোখে চশমাটা পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে ইফা বসে আছে বিছানার উপরে। মেহুল কিছুটা চমকে উঠলো ইফাকে দেখে। ইফা বসা থেকে উঠে বলল।

"চল।"

মেহুল কিছুটা অবাক হলো, "কোথায় যাবো আপু?"

"কোথায় যাবি মানে নিচে যাবি খাওয়ার জন্য।"

"আপু আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।"

ইফা কপট রেগে বলল, "একটা চড় দিবো চুপচাপ খেতে চল।"

"আচ্ছা আচ্ছা তুমি যাও আমি ড্রেসটা চেঞ্জ করে আসছি।"

"তাড়াতাড়ি আয়।"

—————
 
রাতের আঁধার নেমে এসেছে ধরনী জুড়ে। তবে সোডিয়াম লাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে পিচঢালা কালো রাস্তাটা। মাঝে মাঝে নিশাচর প্রাণীর ডাক ভেসে আসছে দূর থেকে। ঘড়ির কাঁটা এখন এগারোটা পঞ্চাশের ঘরে। পুরো শহর গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। কোথাও কোনো কৃত্রিম শব্দ নেই, এমনকি বাতাসেও একটা স্তব্ধতা বিরাজ করছে। 

মেহুলের ঘর অন্ধকারে ডুবে আছে। ঘুমের রাজ্যে ডুবে আছে মেয়েটা সারাদিনের ক্লান্তির কারণে। হঠাৎ তিন জোড়া পা ধীরে ধীরে মেহুলের ঘরে প্রবেশ করলো। কোনো শব্দ না করেই একজন এগিয়ে গিয়ে সুইচবোর্ডে টিপ দিলো আস্তে ধীরে। মুহূর্তে আলোয় ভরে উঠল পুরো ঘর।

তিন জোড়া পায়ের মালিকেরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো অতঃপর চোখের ইশারায় কিছু একটা বোঝালো। ঘড়িতে এখন এগারোটা পঁচান্ন বাজে আর কিছুক্ষণ পরেই বারোটা বাজবে। তিন জোড়া পা মেহুলের বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো পা টিপে টিপে চোরের মতো। কিন্তু মেহুলের ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে যেন কেউ যেন তার আশেপাশে আছে। ঘুমের মধ্যেই মেয়েটার কপালে ভাঁজ পড়লো। আর তখনই এক মৃদু, গভীর মাদকতাময় কণ্ঠস্বর তার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, “শুভ জন্মদিন, জান।”

মেহুল ঘুমন্ত অবস্থায়ই কথাটা শোনার সাথে সাথে শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসে আতঙ্ক নিয়ে বলল, "কে?"

ঠিক তখনই, একটা পার্টি পপার বুম করে ফেটে গেল। আকস্মিক এমনটা হওয়াতে মেহুল ভয়ে চমকে উঠে। আশপাশ রঙিন কাগজে ভরে উঠলো। বিস্মিত মেহুল বালিশের পাশ থেকে চশমা নিয়ে চোখে পড়ে সামনে তাকিয়ে দেখে ইফা আপু, মামা ইহসান মির্জা, আর নানা ভাই আতাউর মির্জা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। একসাথে তিনটি কণ্ঠ বলে উঠল, “শুভ জন্মদিন!”

মেহুল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। আজ তার জন্মদিন আর‌‌ তার সেটা মনেই নেই। মেহুল অবাক হয়ে বলল, "তোমরা।"

 ইফা এসে মেহুলের পাশে বসল। কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বলল, "তুই কী ভেবেছিস? আমরা তোর জন্মদিন ভুলে যাবো? আমাদের মনে আছে তোর জন্মদিনের কথা বুঝলি।"

মেহুল ম্লান হাসলো। এভাবে কাঁচ ঘুমটা ভাঙতে একটু অস্বস্তি লাগছে। ইহসান মির্জা একটা কেক নিয়ে এগিয়ে এসে মেহুলের সামনে রেখে বললেন, "নেও, এবার কেকটা কাটো তো।"

মেহুল‌ের চোখ ভিজে উঠেছে, আজকে মামির কাছ থেকে যেই‌ আঘাতটা পেয়েছে‌ সেই আঘাতটা মুছে দিতে এই‌ ভালোবাসাটুকু যথেষ্ট।‌ আতাউর মির্জা নাতনীর চোখের কোণে জল দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, "কী হয়েছে নানাভাই? চোখে পানি কেন?"

মেহুল তাড়াতাড়ি করে চোখের জলটা মুছে বলল, "এই ভাবে কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেছে তো তাই চোখটা জ্বলছে।"

কিন্তু বোন, মামা, নানাভাই বোঝলো এটা হঠাৎ করে ঘুম ভাঙানোর জল না এটা কষ্টের মধ্যেও খুশির জল। ইফা পরিস্থিতি ঘুরাতে বলল, "আচ্ছা, আচ্ছা! অনেক হয়েছে। এবার কেক কাট।"

মেহুল হাসিমুখে কেক কাটলো। প্রথমে এক টুকরো কেক নানাভাইয়ের মুখে দিলো, তারপর মামা আর শেষে ইফাকে। ইহসান মির্জা একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে এসে ভাগ্নির হাতে তুলে দিয়ে বলেন, "এটা তোমার জন্মদিনের উপহার।"

মেহুল ব্যাগ খুলে দেখলো একটা সুন্দর, দামি ড্রেস। সে অবাক হয়ে বলল, "মামা, আমার তো অনেক ড্রেস আছে তাও কেন শুধু শুধু।"

ইহসান মির্জা কপট রেগে বললেন, "একটা কথাও বলবে না আর! মামা ভালোবেসে দিয়েছে, চুপচাপ নিবে সেটা।"

মেহুল হাসলো। আতাউর মির্জা একটা রঙিন কাগজে মোড়ানো বক্স নাতনীর দিকে বাড়িয়ে দিলেন। মেহুল বক্স খুলতেই চমকে উঠল—একটা দামি স্মার্টফোন! আতাউর মির্জা মুচকি হেসে বললেন, "পছন্দ হয়েছে?"

মেহুল বিস্মিত হয়ে বলল, "কিন্তু, নানাভাই, আমার তো ফোন আছে!"

আতাউর মির্জা স্নেহভরা কণ্ঠে বলেন, "পুরোনোটা রেখে দেও। এখন থেকে এটা ব্যবহার করবে।" 

মেহুল ম্লান হেসে ইফার দিয়ে তাকায় ইফা তৎক্ষণাৎ বলে উঠে, "আমার কাছ থেকে কোনো উপহার আশা করো না আমি শুধু ভালোবাসা দিতে পারবো।"

জড়িয়ে ধরলো মেহুলকে ইফা। আরো কিছুক্ষণ সবাই একসাথে আড্ডা দিয়ে চলে গেছে। মেহুল একা রুমে বসে রইল। তার মস্তিষ্কে এখনো সেই অদ্ভুত স্বপ্নের কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে। কানে বাজচ্ছে এখনো "শুভ জন্মদিন জান" কথাটা। কে ছিল সেই গভীর কণ্ঠস্বরের মালিক? একবার যদি তার মুখটা দেখতে পারতো।

—————

ফ্রান্স! ইউরোপের একটি সমৃদ্ধ ও ইতিহাসের দেশ। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস, যা আইফেল টাওয়ার ও ল্যুভর মিউজিয়ামের জন্য বিখ্যাত। প্যারিস, আলো আর প্রেমের শহর, সাইন নদীর তীরে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা আইফেল টাওয়ার রাতের বেলায় হাজারো আলোয় ঝলমল করে, যা ভালোবাসার প্রতীক।

প্যারিস শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হোটেল “কস্টেস” যা বিলাসিতা ও সুরের মিশ্রণ। ঝাড়বাতির আলো আর ফরাসি সজ্জা হোটেলটিকে রাজকীয় পরিবেশ দেয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় লাইভ মিউজিক ও ডিজে পারফরম্যান্স, যা অতিথিদের মুগ্ধ করে। ফ্রান্সের ঘড়ির সময় অনুযায়ী এখন সন্ধ্যে সাতটা বাজে যা বাংলাদেশের সময়ে বারোটা।  

হোটেলের আভিজাত্য আর রাজকীয় পরিবেশের মাঝে, এক কোণায় বসে আছে এক রহস্যময় যুবক। পুরো পরিবেশের ব্যস্ততা যেন তাকে ছুঁতে পারছে না। তার সুঠাম দেহ কালো পোশাকের আভরণে আচ্ছাদিত। কালো শার্ট, কালো ব্লেজার আর কালো প্যান্টে মোড়া যুবকটি যেন অন্ধকারের মধ্যেও আলাদা করে নজর কাড়ছে। তার বাম হাতে থাকা সোনালি রঙের ঘড়িটা মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে শার্টের কালো‌ হাতা ভেদ করে। তার ডান হাতে ড্রিংকের গ্লাস— যা সম্পূর্ণ নন-অ্যালকোহলিক আর যা ক্ষণে ক্ষণে ঠোঁটে ছুঁইয়ে পান করছে তৃপ্তি করে। টেবিলের উপর রাখা কাঁচের অ্যাশট্রেতে সিগারেট রাখা, কিন্তু যুবকটি সেটি স্পর্শ করে নি। 

চওড়া কাঁধ, শক্ত চোয়াল এবং মেদহীন দেহ জানান দিচ্ছে যে নিয়মিত শরীরচর্চা করে সে। গভীর কালো চোখ দুটো সবসময় ভাবনায় মগ্ন, যেন তার মনে লুকিয়ে আছে অজস্র ভাবনা। ঘন কালো চুলগুলো এলোমেলোভাবে আঁচড়ানো। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে রহস্যময় হাসি লেগে থাকে, যা তাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। কিন্তু আপাতত যুবকটির চোখে মুখে মুগ্ধতা ফুটে আছে, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি যেন মনের গহীনে কোথাও একটা সুখ সুখ অনুভব করছে। বাম হাতের তর্জনী ব্যস্ত কাঁচযুক্ত টেবিলের উপর রাখা স্মার্টফোনের স্ক্রিনে, যেখানে একের পর এক ভেসে উঠছে এক কন্যার ছবি। সে এক চিত্তে ছবিগুলো দেখছে আর মাঝে মাঝে আলতো হাতে ছবিগুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে। আশপাশের কোনো কিছুর দিকে তার নজর নেই। তার মনোযোগ শুধু তার ফোনের স্ক্রিনে থাকা চোখে চশমা পড়া কন্যার দিকে। কন্যার হাসি খুশি মুখখানা, অভিমানি মুখখানা দেখে যেন সুখ সুখ অনুভব করছে হৃদয়ে। একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে কন্যার মুখখানা কিন্তু নিষ্ঠুর কন্যা যে বহু দূর তার থেকে তবে এই দূরত্ব সে শীঘ্রই ঘুচাবে শীঘ্রই। 

আকস্মিক এক জোড়া হাত তার গলা জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে। যবুকটি ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরে তাকিয়ে যাকে দেখলো তাতে যেন বিরক্ত হলো। যবুকটির গলা জড়িয়ে রাখা যুবতি মেয়েটার ঠোঁটের কোণে প্রশস্ত হাসি, কাঁধ ছুঁয়ে নামা ডার্ক ব্রাউন চুলগুলা ঝুলে আছে‌ এক পাশে।‌ যবুকটি নিজের গলা থেকে হাত জোড়া সরাতে সরাতে ভারী গম্ভীর কন্ঠে বিরক্তি মিশিয়ে বলল।

"স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি এনা।" 

এনার মুখে তাৎক্ষণিক একপ্রকার‌ বিরক্তি ফুটে উঠলো তাও সে সেটা প্রকাশ করল না। বরং আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে শরীর বাঁকিয়ে যুবকটির পাশে বসে পড়ল। এনা যবুকটির ফোনে কারো ছবি দেখে কৌতুহলী হলো, ছবিটা ভালো করে দেখার জন্য ফোনটা হাতে নিলে যবুকটি এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করেই দ্রুত ছুঁ মেরে ফোনটি নিয়ে নিজের ব্লেজারের বুক পকেটে রেখে দিল।

এনার মুখ লজ্জায় ও অপমানে তপ্ত হয়ে উঠল, তবে সে নিজের মেজাজ ধরে রাখল। মুচকি হেসে বলল, "কার ছবি দেখছিলে তুমি, শের বেবি?"

যুবকটি দাঁতে দাঁত চেপে রাগ না দেখিয়ে বলল, "তোমাকে আগেও বলেছি, এখনও বলছি এনা—আমার বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করবে না‌। আমি এগুলো একদম পছন্দ করি না।"

এনা কথাটা হজম করল, মুখে হাসি ধরে রেখে বলল, "ঠিক আছে, ইন্টারফেয়ার করব না। কিন্তু চলো, একটু ডান্স করি। সবাই দেখো কি সুন্দর ডান্স করছে!"

যবুকটি এক নজর সে দিকে তাকালো প্রত্যেকটা ছেলে মেয়ে মাতাল হয়ে মাতলামীতে মেতে উঠেছে যেন। যবুকটি স্টান উঠে দাঁড়ায় সাথে এনাও উঠে দাঁড়ায়। মাতাল হয়ে ছেলেমেয়েরা ডান্স ফ্লোরে চরম অশৃঙ্খল অবস্থায় নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে একে অন্যের সাথে। তার মুখের অভিব্যক্তি কঠোর হলো। সে ধীর অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলল।

"তোমার যদি এতই ইচ্ছে হয় ডান্স করার তাহলে তুমি নিজে গিয়ে ডান্স করো আমার এসবে রুচি আসে না।"

এটা বলে সে ওভারকোর্টটা হাতে তুলে নিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে যায় দরজার দিকে। এনার চোখের সামনে যেন পৃথিবীটা থমকে গেছে। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে রেখে সোফায় লাথি মেরে, সোফায় বসে পড়ল। এনার ফর্সা মুখটা রাগে লাল হয়ে উঠেছে। নিজের মনকে নিজেই প্রশ্ন করল সে? এই‌ ছেলে তাকে এতো ইগনোর করে কেন? কি নেই তার মাঝে? কত ছেলেকে তার পেছনে পাগলের মতো ঘুরিয়েছে। অথচ এই‌ ছেলে! এ যেন একেবারে ভিন্ন ধাঁচের তৈরি। এর জায়গা অন্য কোনো ছেলে থাকলে এতো দিনে তার প্রেমে হাবুডুবু খেতো। যতোবার কাছে আসতে চেয়েছে, ততবার দূরে সরে গেছে। মনে হয় যেন তার শরীরের ছোঁয়াচে রোগ আছে। এসব ভাবনার মাঝেই এনার কানের কাছে এক গাঢ়, মোলায়েম কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

"কী? পারছো না শেরাজকে পটাতে?"

এনা চমকে উঠে পাশ ফিরে তাকায়। রাহীবের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। এনা চোখ ফিরিয়ে নিল। রাহীব সোফায় বসে গা এলিয়ে দিয়ে বলল, "কষ্ট পেয়ো না। দুনিয়ায় ছেলের অভাব নেই। শেরাজ পটছে না তো কী হয়েছে, আশেপাশে তাকাও। হাজার জন তো দাঁড়িয়ে আছে তোমার সমানে।"

এনা দৃঢ় কণ্ঠে বলল, "কিন্তু আমি শেরাজকে চাই।"

রাহীব মুখে একচিলতে মৃদু হাসি নিয়ে বলল, "চাইলেই কি সব পাওয়া যায় নাকি? সবকিছুর একটা সীমা থাকে।"

এনা ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল, "আমি যা চাই, সেটাই‌ পাই। শেরাজও আমার হবে।"

রাহীব এবার সোজা হয়ে বসলো। একটি চিপস মুখে নিয়ে বলল, "চলো, তাহলে একটা বাজি ধরি।"

এনা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলল, "বাজি? আমি নিজের সঙ্গে বাজি ধরেছি। তোমার সঙ্গে বাজি ধরার প্রয়োজন নেই।"

এনা উঠে চলে যেতে চাইলে রাহীব একটু থেমে বলল, "তুমি কি জানো, শেরাজ কেন তোমার কাছে ধরা দিচ্ছে না?"

এনা এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। ঘুরে তাকিয়ে বলল, "কেন?"

রাহীব দাঁড়িয়ে ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল, "বলার মুড নেই আপাতত নিজের কাছেই কথাটা রেখে দিলাম।"

এনা বুঝলো তার বলা কথাটা তাকে‌ ফিরিয়ে দিয়েছে রাহীব। এনা খুব ভালো করেই জানে রাহীবকে হাজার বার বললেও এখন বলবে না কথাটা। রাহীব হেলেদুলে চলে যায়। শেরাজ কেন তাকে ইগনোর করছে সেটা সে জেনেই ছাড়বে যে করেই হোক। কেউ কি আছে শেরাজের জীবনে‌ নাকি এমনি সে তার কাছে ধরা দিচ্ছে না।
·
·
·
চলবে...................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp