স্টে উইথ মি - পর্ব ০৮ - নুসরাত জাহান বৃষ্টি - ধারাবাহিক গল্প


          মেহুল ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল। বুকের ভেতরের হৃদযন্ত্রটা ধুকপুক করছে যেন প্রতি পায়ের ধাপ ফেলছে আর হৃদস্পন্দন ক্রমশ বাড়ছে। করিডোরে এসে ওয়াটার বোতলটা রেলিংয়ের ওপর রেখে চোখের চশমাটা ঠেলে দিল নাকের ওপর। ঢোক গিলে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিল একবার। শেরাজ ভাইয়ের সামনে যেতে কেন জানি ভীষণ ভয় করছে। কিন্তু অন্যদিকে আবার নিজের ভীত মনকে এটা বুঝিয়ে শান্ত করছে, শেরাজ কি বাঘ নাকি ভালুক যে তাকে খেয়ে ফেলবে? সে ঘরে যাবে কফির মগটা টেবিলে রেখে দ্রুত বেরিয়ে আসবে। ব্যস এতটুকুই!

মেহুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে নিল। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল দরজার দিকে। পাক্কা পাঁচ বছর পর এই ঘরে পা রাখবে আজ সে। দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে ভেসে এলো শেরাজের গম্ভীর কণ্ঠস্বর, “আসো।”

মেহুল আস্তে ধীরে ভেতরে ঢুকল। চোখ সরাসরি গিয়ে পড়ল শেরাজের ওপর। সে সোফায় বসে আছে। ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে। ভ্রু কুঁচকানো, চেহারায় কঠিন অভিব্যক্তি। মেহুল ঢোক গিলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। কোমর বাঁকিয়ে কফির মগটা টেবিলে রাখার মুহূর্তে শেরাজ চোখ তুলে তাকাল তার দিকে। শেরাজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে যেন মুহূর্তেই থমকে গেল মেহুল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।

“তোমার কফি... মামি দিতে বললেন।”

বলেই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যেতে চাইল কিন্তু পেছন থেকে ভেসে এলো শেরাজের ভারী কণ্ঠ, “দাঁড়া!”

শেরাজের গম্ভীর কণ্ঠে উচ্চারিত “দাঁড়া” শব্দটা শুনে মেহুলের শরীর শিরশির করে উঠল। পায়ের গতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেমে গেল কিন্তু সে পেছন ফিরল না। চোখ বন্ধ করে নিজের মনকে শক্ত করতে লাগল। যেন নিজের ভীতু মনটাকে বোঝাচ্ছে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

পেছন থেকে শেরাজ গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “কফিটা নিয়ে যা আমি খাব না।”

মেহুল চোখ মেলে তাকাল। কফি খাবে না মানে? সে কফি নিয়ে আসায় কি শেরাজ ভাই কফি খাবে না? এত রাগ, এত অভিমান তার ওপর?

মেহুল শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করল। সেই আগের মেহুলকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনল যে মেহুল শেরাজের চোখে চোখ রেখে কথা বলত, যে মেহুল শেরাজের মুখে মুখে তর্ক করত। মেহুল শেরাজের দিকে ফিরে অবলীলায় প্রশ্ন করল, “কেন? খাবে না কেন?”

শেরাজ ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল মেহুলের দিকে। মেহুল নিজের মনকে শক্ত করতে পারলেও শেরাজের চাহনি তাকে দুর্বল করে দিল। সে দ্রুত নজর সরিয়ে নিল। শেরাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

“তোকে কি এখন তার কৈফিয়ত দিতে হবে আমি কফি খাব না কেন?”

মেহুল অন্য দিকে চেয়ে ধীর কণ্ঠে বলল, “আমি সেটা বলিনি।”

শেরাজ চোখ সরু করে বলল, “তাহলে ঠিক কী বলতে চেয়েছিস?”

মেহুল চুপ করে রইল। তার মৌনতা যেন শেরাজের ধৈর্য আরও কমিয়ে দিল। হঠাৎ করেই সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এক ধমকে বলে উঠল, “কী হলো? চুপ করে আছিস কেন? উত্তর দে।”

মেহুল কেঁপে উঠল। আকস্মিক শেরাজ প্রশ্ন করে উঠল, “তুই এই বাড়ির কে? কী হোস তুই এই বাড়ির?”

মেহুল অবাক চোখে তাকাল শেরাজের দিকে। এ বাড়ির কে মানে? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন? শেরাজ এবার কণ্ঠ আরও ভারী করে বলল, “কে বলেছে তোকে আমার জন্য কফি নিয়ে আসতে?”

মেহুল আধো আধো কণ্ঠে বলল, “মামি বলল।”

শেরাজ ঠান্ডা গলায় বলল, “কেন? তুই কি এই বাড়ির কাজের মেয়ে যে মা বললেই তোকে কাজটা করতে হবে?”

মেহুল আস্তে বলল, “এখানে কাজের মেয়ে আর বাড়ির মেয়ের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?”

শেরাজ চোখ বন্ধ করে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল যেন রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে। চোয়াল শক্ত করে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে কফির মগটার দিকে তাকিয়ে বলল, “নিয়ে যা কফি খাব না‌ আমি।”

মেহুল আস্তে ধীরে বলল, “এনেছি যখন খেয়ে নাও।”

মেহুলের কণ্ঠে ছিল একধরনের অসহায়ত্ব কিন্তু শেরাজ তাতে যেন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। হঠাৎ করেই সেন্টার টেবিলের ওপরে রাখা কাঁচের ফুলদানিটা হাতে তুলে নিয়ে প্রচণ্ড শক্তিতে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে হুংকার দিয়ে বলল।

“বলছি নিয়ে যাওয়ার জন্য! তা না করে এত কথা বলতে কে বলছে তোকে?”

শেরাজের গর্জনে পুরো ঘর কেঁপে উঠল। মেহুল ভয়ে চিৎকার করে উঠে। মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে পড়ল। একটা ধারালো টুকরো গিয়ে বিঁধল মেহুলের পায়ে। মুহূর্তের মধ্যে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগল। ব্যথার তীব্রতা প্রথমে বুঝতে পারে নি মেহুল। কিন্তু যখন কাঁচের টুকরাটা বের করবে তখন হয়তো এর যন্ত্রণা কতটুকু তা অনুভব করতে পারবে।

মেহুল নিঃশব্দে কেঁদে উঠল চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোঁটা নোনা জল। শেরাজ ভাই আসতে না আসতেই তাকে আঘাত দেওয়া শুরু করে দিয়েছে এই আঘাতের পরিমাণ ভবিষ্যতে কতটুকু হবে? এদিকে কোমরে হাত রেখে অন্য পাশে ফিরে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে শেরাজ। কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনে পাশের রুমে থাকা ইফা দৌঁড়ে এল ভাইয়ের রুমে। রুমের এই অবস্থা দেখে আতকে উঠে বলল।

“এ কী! রুমের এই অবস্থা কেন?”

মেহুল পেছন ফিরে তাকাল। ইফার নজর পড়ল মেহুলের পায়ের উপর রক্তে লাল হয়ে গেছে পায়ের নিচ। ইফা এ বিষয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই মেহুল হাত উঁচু করে বলল।

“আমি ঠিক আছি ইফা আপু।”

মেহুল পা টেনে টেনে এগিয়ে গিয়ে কফির মগটা নিয়ে এসে ইফার হাতে দিয়ে দুর্বল কণ্ঠে বলল, “তুমি খেয়ে নিও কফিটা আপু।”

মেহুল নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে রেলিং এর উপরে রাখা ওয়াটার বোতলটা নিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল। ইফা ভাইকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই শেরাজ থমথমে কণ্ঠে বলে উঠল।

“রুমটা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা কর।”

কথাটা বলে এক দমে বলে বেলকনির দিকে চলে গেল যেন নিজের মনের ভেতরের ঝড় থেকে পালানোর প্রচেষ্টা করলো।

—————

শাহানা বেগম নিচ থেকে সব শুনেছেন‌ কিন্তু শুনেও কেমন নিরব থেকে কাজ করে যাচ্ছেন যেন কোনো কিছুই হচ্ছে না বাড়িতে। আকলিমা ওপরে আসতে চাইলে তিনি ধমক দিয়ে কাজ করতে বলেন। ছেলে তাহলে মেহুলের প্রতি ভীষণ ক্ষেপে আছে। এটাই তো চান তিনি। শেরাজ যেন এই মেয়ের থেকে সবসময় দূরে দূরে থাকে। শেরাজের রাগ যত বেশি হবে মেহুলের সঙ্গে তার দূরত্ব তত বাড়বে। এই মেয়েকে যে করেই হোক এই বাড়ি থেকে তাড়াবেন তিনি। শেরাজ আর মেহুলের দূরত্ব আরও বাড়ানোর জন্য যা যা করা দরকার তিনি তাই তাই করবেন। পাঁচ বছর আগে যা হওয়ার হয়েছে কিন্তু এখন তিনি যা চাইবেন সেটাই হবে। এর বাইরে কিছু হতে দিবেন না।

ইফা করিডোরে এসে আকলিমাকে ডাকল ঘরটা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য। আকলিমা শাহানা বেগমের দিকে তাকালে তিনি “যা” বলে আবার কাজে মন দিলেন।

—————

মেহুল রক্তাক্ত পা নিয়ে ওয়াশরুমে এসে ধীরে ধীরে পানি দিয়ে পা ধুতে শুরু করল। ঠান্ডা পানির ছোঁয়া লাগতেই মনে হলো যেন কেউ ক্ষত স্থানটায় জ্বলন্ত আগুনের কয়লা চেপে ধরেছে। ব্যথায়, জ্বালায় মুখ বিকৃত করে নেয় মেহুল। কিন্তু কোনো শব্দ করল না ঠোঁট চেপে ধরে কষ্ট সহ্য করা ছাড়া তার কিছুই করার নেই।

মেহুল পা ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে পা টেনে টেনে বিছানার এক‌ কোণায় এসে বসল। বিছানার উপরে পা তুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ক্ষতটার দিকে। কাঁচের টুকরোটা বিচ্ছিরি ভাবে চামড়ার ভেতর গেঁথে আছে। কাঁপতে থাকা হাতটা বাড়িয়ে কাঁচের টুকরোটা বের করার চেষ্টা করল মেহুল, কিন্তু ব্যথায় শিউরে উঠল। মেহুলের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতর চাপা একটা যন্ত্রণা জমে উঠেছে যেন। তার ইনহেলারটা কোথায়? সে দ্রুত বেডসাইড টেবিলের দিকে হাত বাড়াল। হাতে ধরা ইনহেলারটাকে ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিল কয়েকবার। এবার একটু স্বস্তি পেল যেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ডুকরে কেঁদে উঠল। কান্না করতে করতে বলতে লাগল। 

“মা-বাবা কেন তোমরা আমাকে একা করে চলে গেলে? দেখো না তোমাদের মেয়েটাকে আজ কত কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে! এতটুকু বয়সে আমি আর কত সহ্য করব? আর পারছি না এই কষ্ট সইতে। হয়তো মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়েও মানসিক যন্ত্রণা অনেক বেশি কষ্টের। আমাকে তোমাদের কাছে নিয়ে নাও। আমি তোমাদের কোলে মাথা রেখে একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই শুধু একটু।”

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। মেহুল দ্রুত চোখের জল মুছে ভাঙা গলায় বলল, “কে?”

বাইরে থেকে ইফার কণ্ঠ ভেসে এলো, “দরজা খোল মেহুল।”

মেহুল গলা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল, “আপু আমি ঠিক আছি।”

ইফা ধমকের সুরে বলল, “তুই ঠিক আছিস নাকি ঠিক নেই সেটা আমি জানতে চাই নি! দরজাটা খুলতে বলছি দরজটা খুল।”

মেহুল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল। ইফা ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে রুমে ঢুকে মেহুলের হাত ধরে বলল, “চল।”

মেহুলকে বিছানায় এনে বসাল ইফা। নিজেও বসে তার আহত পা'টা তুলে নিয়ে নিজের হাঁটুর ওপরে রাখে। ক্ষতটা দেখে মুখ কুঁচকে বলল, “ইশ! কি অবস্থা পা'টার খুব যন্ত্রণা করছে না?”

মেহুল ঠোঁটের কোণে ম্লান হাসি এনে বলল, “না না এতটাও যন্ত্রণা করছে না।”

ইফা ধমকের সুরে বলল, “বাজে কথা বলিস না তো।”

ইফা আর কোনো কথা না বলে সাবধানে পায়ের ক্ষতস্থানটা পরীক্ষা করল। রক্ত জমে গেছে চারপাশে। ইফা নরম গলায় বলল, “কাঁচটা বের করতে হবে। একটু কষ্টটা সহ্য করিস ঠিক আছে?”

ইফা আস্তে ধীরে মেহুলের পা থেকে কাঁচের টুকরোটা বের করল। মেহুল চোয়াল শক্ত করে ব্যথাটা সহ্য করল। ইফা যত্ন করে ক্ষতস্থানটা পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। পা তো ব্যান্ডেজ করা হলো‌ কিন্তু দুজনেই চুপচাপ বসে রইল। কারও মুখে কোনো কথা নেই। কিছুটা সময় নিরবতায় কেটে গেল। নীরবতা ভেঙে ইফা বলল।

“মেহুল তুই ঠিক আছিস?”

মেহুল ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,“হুম ঠিক আছি।”

কিন্তু ইফা খুব ভালো করেই জানে মেয়েটা ঠিক নেই। একদম ঠিক নেই। ঠিক থাকতে পারছে না। ভাইয়া কেন এমন ব্যবহার করল মেহুলের সঙ্গে? পাঁচ বছর আগের সেই ঘটনার জন্য দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল বলেই কি ভাইয়া মনের ভেতর রাগ পুষে রেখেছে? আর সেই রাগটাই কি এখন মেহুলের ওপর মিটাচ্ছে?

—————

আতাউর মির্জা ঠিক রাত আটটা বেজে বারো মিনিটে মির্জা বাড়িতে পা রাখলেন। এসেই তিনি নাতিকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠালেন। আপাতত দাদা-নাতি বসে আছে বদ্ধ ঘরে। দুজনেই যেন নীরবতা পালন করছে। ঘরটা নিস্তব্ধ। বদ্ধ এই কক্ষে যেন একটা অদৃশ্য চাপা উত্তেজনা ভাসছে। শেরাজ সোফায় বসে আছে দুই হাতের পাঁচ আঙুল একটার সঙ্গে আরেকটা চেপে ধরে। আতাউর মির্জা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নাতির দিকে।শেরাজের এভাবে বসে থাকতে বিরক্ত লাগছে এবার। দাদা কি এভাবে চুপ করে বসে থাকার জন্য তাকে এই ঘরে ডেকেছেন? শেরাজ দাঁড়িয়ে পড়ে বলল।
 
“দাদা ভাই তুমি কি আদৌ কিছু বলবে নাকি এভাবে বসিয়ে রাখার জন্য ডেকেছো আমাকে?”

আতাউর মির্জা শান্ত গলায় বললেন, “বসো।”

শেরাজ এক দফা গভীর দৃষ্টিতে তাকালো দাদা ভাইয়ের দিকে তারপর ধীরগতিতে বসল। আতাউর মির্জা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, “তা কি মনে করে বাংলাদেশে ফিরে এলে?”

শেরাজ কিছুটা অবাক হয়ে তাকাল, “মানে?”

“তোমার তো এত দ্রুত ফেরার কথা ছিল না।”

শেরাজ হতাশ কন্ঠে বলল, “পাঁচ পাঁচটা বছর তোমার কাছে দ্রুত মনে হচ্ছে দাদা ভাই? কতটা নিঃসঙ্গ ছিলাম আমি প্যারিসে তুমি জানো সেটা?”

আতাউর মির্জা নিস্পৃহ গলায় বললেন, “নিজেই তুমি সেই পথ বেছে নিয়েছিলে।”

শেরাজের কণ্ঠ হঠাৎ ভারী হয়ে উঠল, “তুমি বাধ্য করেছিলে আমাকে আমি তো চাই নি দেশ ছাড়তে।”

“তোমার ভালোর জন্য করেছিলাম।”

শেরাজ ক্ষিপ্ত স্বরে বলল, “এতটা ভালো না করলেও পারতে। তুমি আমার জীবন থেকে পাঁচটা বছর কেড়ে নিয়েছ দাদা ভাই!”

আতাউর মির্জা এবার আদেশের স্বরে বললেন, “বাংলাদেশে এসেছ ভালো কথা, কিন্তু মেহুলের থেকে দূরে থাকবে।”

শেরাজ এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো উত্তর দিলো না । নাতিকে নীরব দেখে আতাউর মির্জা বললেন, “কি হলো কথা বলছো না কেন?”

শেরাজ এবার ধীর স্থিরভাবে উঠে দাঁড়াল। চোখেমুখে কঠিন একটা অভিব্যক্তি রেখে বলল, “দূরে থাকবো কি না সেটা না হয় আমার ওপর ছেড়ে দাও।”

বলেই দরজার দিকে পা বাড়াল। আতাউর মির্জার কঠোর কণ্ঠ পেছন থেকে ধেয়ে এলো, “রাজ বেশি বাড়াবাড়ি কোরো না। বাড়াবাড়ির ফল না আবার তোমাকে প্যারিসে যেতে বাধ্য করে।”

শেরাজ থামল না। রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজাটা সজোরে আটকে দিল। দু কদম এগিয়ে গিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে দুই হাত কোমরে রেখে জোরে জোরে শ্বাস টানতে টানতে বলল, “পাঁচ বছর আগে তোমার কথায় সবটা হয়েছিল দাদা ভাই। কিন্তু এবার যা হবে সব আমার মতে, আমার কথায়।”

বলেই আলমারির কাছে গিয়ে আলমারিটা খুলল। হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা শার্ট-ব্লেজার সরাতেই ভেসে উঠল মেহুলের হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা। শেরাজ এক নজর তাকিয়ে দেখল। তারপর থমথমে কণ্ঠে বলল, “দাদার নাতনি নিজেকে তৈরি করে রাখ এই শেরাজের শিকলে বন্দি হওয়ার জন্য।”
·
·
·
চলবে...................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp