উন্মুক্ত দেহে ভোরের প্রথম প্রহরের আলো এসে যখন পড়ল তখন রানি কামিনীর ধ্যান চ্যুত হলো। তিনি তৈলচিত্রটি ঢেকে ফেললেন ব্যস্ত হাতে। যেন এই বিরাট পৃথিবী থেকে নিজের একান্তই ভাঙা টুকরোগুলোকে লুকিয়ে ফেলতে চাইলেন। কিছু ক্ষত যে একান্তই ব্যক্তিগত। সেসব ক্ষতের কথা লোকে জেনে ফেললেই বিপদ। জ্বালা বাড়ানো বৈ কোনো উপকারই হবে না।
৩৩.....
মহলে আড়ম্বরপূর্ণ সাজসজ্জা। রাজ সভায় উপস্থিত সকলে। রানি আজ জরুরি আলোচনা করবেন। তাই মন্ত্রীসহ, সেনাপতি, গ্রহাচার্য, বৈদ্য এবং বিশ্বস্ত কয়েকজন উপস্থিত। প্রত্যেকেই বসে আছেন রানির অপেক্ষায়। রানি তখনো উপস্থিত হননি।
ধৈর্যহারা হয়ে মন্ত্রীমশাই বললেন,
"সেনাপতি, রানি বিশেষ কিছু কি বলবেন আজ? কোন সম্পর্কে বলবেন?"
সেনাপতি হ্যাব্রো দাঁড়িয়ে ছিলেন। মুখ-চোখ তার সবসময়ের মতনই স্থবির। উত্তর দিলেন, "আমাকে বিশেষ কিছু জানাননি।"
"বিশেষ কিছু জানাননি মানে? আপনি তার একনিষ্ঠ অনুচর। আপনি জানবেন না, তা হয় নাকি?"
"মহামান্য মন্ত্রীমহোদয়, আমি রানির বিশেষ অনুচর হই বা না হই, আপনি কিন্তু বিশিষ্ট পদেই আছেন। মন্ত্রী আসনে। তাই রানি কী সম্পর্কে বলবেন তা তো আপনার জানার কথা, তাই না?"
"আপনার বড়ো কথার তেজ জানেন তো, সেনাপতি?"
মন্ত্রীর কথায় বিনা বাক্যে কেবল হাসলো হ্যাব্রো। এই তর্ক-বিতর্কের দোলাচালেই আজ রানি সখী হারা। নতুন করে আর কেউ হারিয়ে যাক সেটা সে মোটেও চাচ্ছে না।
তন্মধ্যেই বাহির থেকে হাঁক ছেড়ে প্রহরী বলল, "মহারানি হাজির হচ্ছেন।"
কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলো সকলে। তখনই রানির প্রবেশ ঘটল বৃহত্তর শৃঙ্গের মতন।
সকলে তার আগমনকে কুর্নিশ জানালো। রানি গিয়ে বসলেন তার আসনে। বাকিদের বসার অনুমতি দিতেই বাকিরা বসল।
রানি তার রাজকার্য শুরু করলেন রাশভারি কণ্ঠস্বরে,
"রাজ বৈদ্য, শুনলাম রাজ্যে না-কি নতুন ব্যাধির উৎপত্তি ঘটেছে? তা সম্বন্ধে আপনার কী গতিবিধি?"
রাজ বৈদ্য উঠে দাঁড়ালেন। রাজ বৈদ্য মধ্য বয়স্ক। রানির চেয়ে বয়সে বেশ বড়োই। তবুও তিনি মাথা নাড়িয়ে দু'হাত সমান রেখে সস্মানের সাথে বললেন,
"আমি অনুসন্ধান করার চেষ্টা করছি, রানি। তবে ব্যাধি নির্ধারণ করা কষ্টকর হচ্ছে।"
"আচ্ছা। এতে আপনার কী কী সাহায্য প্রয়োজন? বলুন।"
"কয়েকজন বিভিন্ন রাজ্যের রাজ বৈদ্য প্রয়োজন বিশেষ খ্যাতিনামা। তাদের সাথে যদি আলোচনা করা যায় নিশ্চয় সমাধান মিলবে।"
"আপনি কাকে কাকে চাচ্ছেন তার একটি তালিকা করে মন্ত্রীর কাছে দিয়ে দিবেন। ব্যবস্থা করা হবে। তবুও আমার প্রজারা যেন কষ্ট না পায়।"
"অবশ্যই, রানি।"
এবার রানি গ্রহাচার্যের দিকে তাকালেন। তাকে শুধালেন,
"রাজ গ্রহাচার্য, গ্রহের প্রকোপ কী দেখছেন? কিছুর সম্ভাবনা আছে কি?"
রাজ গ্রহাচার্য এবার দাঁড়ালেন। বয়স্ক মানুষটি রানিকে বেশ পছন্দ করেন। স্নেহের দৃষ্টিতে দেখেন। বললেন,
"রানি মা, রাজ্যে রাহুর ছায়া দেখা যাচ্ছে। শনি দ্বাদশ ঘরে অবস্থান করছে। রাজ্যে রোগ, শোক আসার সম্ভাবনা প্রকোপ।"
"এর থেকে বাহির হওয়ার উপায়?"
"আমি একটি হোম করতে চাই। দেবতাদের সন্তুষ্ট লাভের জন্য। তাতে ফল পেতে পারি।"
"তাহলে তারই আয়োজন করুন।"
কথার ভেতর ফোঁড়ন কাটলেন মন্ত্রী। হেয় করা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বললেন,
"রানি কামিনীকাঞ্চন সব থেকে আলাদা এই কথা আমরা সকলেই অবগত। তবে এই একটি দিক দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে রানির মিল রয়েছে। সাধারণ মানুষ যেমন সবকিছুতেই সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন, তেমন রানিও বিশ্বাস করেন। এই বিষয়টা একটু কেমন না!"
রানি মন্ত্রীর দিকে তাকালেন। কোন মানুষ কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে কী বুঝাতে চান তা রানি খুব ভালো করেই অনুধাবন করতে পারেন। সেজন্যই তো তিনি রানি!
তিনি মন্ত্রীর কথার ইঙ্গিতও বুঝলেন। তাই মুচকি হেসে উত্তর দিলেন,
"বিষয়টা মোটেও কেমন নয়। বরং স্বাভাবিক। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যিনি সৃষ্টি করেছেন তাকে বাদ দিয়ে আদৌ কিছু ভাবা যায়? তাছাড়া সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করাটা ভীষণ লাভের। যখন আপনি পারিপার্শ্বিক অবস্থায় খুব ক্লান্ত হয়ে যাবেন, জীবন অবসন্ন লাগবে, মনে হবে আর আপনি পারছেন না তখন ঐ একজনের কাছে গিয়েই নিজেকে ভেঙেচুরে মেলে ধরতে পারবেন। মানুষ আপনার দুর্বলতায় কখনো প্রলেপ লাগাবে না। বরং ক্ষত বাড়াবে। কিন্তু আপনার সৃষ্টিকর্তা সবসময় সঙ্গ দিবেন। আপনার মন স্থির ও শান্ত করবেন তিনিই। যার কেউ নেই তার সৃষ্টিকর্তা আছেন। সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করা ও ভালোবাসার এই এক লাভ। বুকের ভেতর একটা জোর থাকে। মনে হয়, সৃষ্টিকর্তা তো আছেন। তিনি সব দেখছেন। তিনি ভালো করবেন। তার আশায় একটি জীবন ছেড়ে দেওয়া যায়। এইজন্য আমি সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি। আপনি মন্ত্রীমশাই এই রাজ দরবার থেকে বের হলেই ভাববেন কীভাবে রানির পিঠে ছুরি মারা যায় কিন্তু আমার সৃষ্টিকর্তা সেটা করেন না। বুঝেছেন কি?"
রানির উত্তরে মন্ত্রীমশাই চুপ করে গেলেন। মাথা নাড়িয়ে কেবল সম্মতি দিলেন যে তিনি বুঝেছেন।
রানি আবার রাজকার্যে মনযোগ দিলেন। বুক টান টান করে, শক্ত কণ্ঠে বললেন,
"বিভিন্ন রাজ্যের রাজাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে আমাদের রাজ্যে সকলে সে সম্পর্কে নিশ্চয় অবগত? আমি চাই তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে। যেহেতু রাজকোষ শক্তিশালী করতে হবে সেহেতু সকল বড়ো বড়ো রাজ্যের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক করা বাঞ্ছনীয়। এতে রাজকোষেরও উন্নতি হবে এবং আমরা আরও শক্তিধর রাজ্য হবো।"
"কিন্তু রানি, বেশির ভাগ রাজা তো সুসম্পর্ক বলতে আপনাকে পাওয়ার সম্ভাবনাকেই বুঝবে!"
অর্থমন্ত্রী এহেন কথায় মাথা মৃদু মৃদু নাড়ালেন রানি। ঠোঁটে তার বিধ্বংসী হাসিটি স্থায়ী।
"সম্ভাবনা যে 'সম্ভব না' হয়েই থাকবে, সেটা তো আমি এবং আপনারা জানি তাই নয় কি?"
"হ্যাঁ।"
"তাহলে আর কীসের চিন্তা?"
"কিন্তু রানি, আপনাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যখন উনাদের মনে তীব্রতর হবে তখন উনারা যদি আশাহত হন তাহলে উনারা হিংস্র হয়ে যাবেন না-কি?" প্রশ্নটি করলেন মন্ত্রী।
"ঐ যে বললাম, রাজকোষ শক্তিশালী করতে হবে। যে রাজ্যের রাজকোষ শক্তিশালী সে রাজ্যে সহজে হিংস্রতার প্রভাব পড়বে না। উনাদের অর্থ দিয়েই সংকট দূর করবো আমরা। এবং উনাদের অর্থই উনাদের বিরুদ্ধে আমার ঢাল হবে। বুঝতে পেরেছেন কি?"
রাজ সভায় উপস্থিত সকলে মাথা নাড়ালেন। ভেতর ভেতর সকলেই রানির এমন কূটনৈতিক চিন্তার জন্য প্রশংসাও করলেন।
একটি নারী কীভাবে রাজনীতিতে এমন পাকা খেলোয়াড় হতে পারেন তা ভেবেই পান না উনারা।
রাজ সভা সমাপ্ত করে রানি বেরিয়ে যান। তখনই সকলের ভেতর জয় জয়কার পড়ে। রানি হয়তো একটু বেপরোয়া স্বভাবের, চালচলনে নারীত্বের লাজ প্রকাশ করেন না কিন্তু বুদ্ধিতে তিনি অসম্ভব পটু। নয়তো একজন নারী এত শত্রু সামলেও এতটা নির্ভার থাকতে পারতেন?
৩৪.....
রাজপ্রাসাদে টান টান উত্তেজনা। আজও বাঈজীর আসর বসেছে প্রাসাদে। সুরেলা কণ্ঠে গান চলছে, বাজছে বাদ্য-বাজনা। ঘুঙুরের ছন্দময় শব্দ মহল জুড়ে মোহনীয় সুর ছড়িয়ে যাচ্ছে।
রানি তৈরি হচ্ছেন নীরবেই। অন্যদিন হলে তার এই সাজগোছে সবচেয়ে হাসাহাসি করত সখী। তার গর্ব ছিলো রানির রূপ, লাবণ্য। তাই সে রানির সাজসজ্জার মুহূর্তটা বেশ উপভোগ করতো।
ফ্রেয়া রানিকে বিভিন্ন জিনিস এগিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা কথা বলে না তেমন। বলবেও বা কার সাথে? রানিকে কিছু বলার মতন যোগ্যতা কি আর আছে আদতে!
রানি সুগন্ধি মাখতে মাখতে ফ্রেয়ার দিকে তাকালেন। ফ্রেয়া তখন রানির অলঙ্কার গুছচ্ছে।
"তুমি এত নীরব কেন থাকো, ফ্রেয়া?"
রানির প্রশ্নে ফ্রেয়া চোখ তুলে তাকালো রানির দিকে। এই সামান্যতম প্রশ্নটিরও কী জবাব দিবে তা বুঝে উঠল না। কোন উত্তরে রানির মন পরিতৃপ্ত হবে তা বোধগম্য নয় যে তার!
"তুমি কি আমাকে অপছন্দ করো কোনো কারণে?"
এবার ফ্রেয়া চমকে উঠল। যে রানিকে সে এত শ্রদ্ধা করে তাকে আদৌ অপছন্দ করা যায়? সে তড়িঘড়ি উত্তর দিলো, "এ কী বলছেন! এমন কথা আমি কল্পনাতেও ভাবি না।"
রানি হাসলেন, "চমকানোর কী আছে? সব মানুষকে সবাই পছন্দ করবে না সেটাই স্বাভাবিক। তুমি আমাকে অপছন্দ করলেও তাতে আমি একটুও কিছু মনে করবো না।"
"না না, রানি। আপনাকে অপছন্দ করবো কেন!"
"করবে না-ই বা কেন? আমি যে অপছন্দের মতনই মানুষ!"
ফ্রেয়ার বলতে ইচ্ছে করে যে, সে রানিকে ভীষণ পছন্দ করে। এত নরম মন যেই মানুষটার, এত ব্যথা যেই মানুষটার তাকে অপছন্দ করা যায় কখনো?
কিন্তু বলা হয়ে উঠে না। জড়তা কাজ করে।
"তুমিও সাজগোজ করে নাও, ফ্রেয়া। তুমি আমার খাসদাসী। রানি কামিনীর খাসদাসীর ঝলক দেখেও যেন মানুষ বুঝে, রানি খারাপ হলেও কৃপণ নয়।"
"আমার সাজসজ্জা পছন্দ নয় যে। তাই আরকি..."
"পছন্দ নয়? কিন্তু কেন?"
ফ্রেয়ার কণ্ঠ জড়তায় ম্লান হয়। মাথা নত করে বলে, "আমার গায়ের রঙ যে কালো!"
রানি তাকিয়ে থাকেন মেয়েটার দিকে।
প্রথম প্রথম তার বড়ো সন্দেহ হতো এই মেয়েটাকে নিয়ে। মেয়েটা বড়ো চুপচাপ স্বভাবের। চুপচাপ, নীরবতা এগুলো ভয়ঙ্কর জিনিস। যে যত বেশি নীরব, তার আঘাত দেওয়ার ক্ষমতা ততই বেশি। তাই রানি চোখে চোখে রেখেছেন ক'দিন এই মেয়েটিকে। সন্দেহজনক কিছু পাননি বলে এখন তিনি মেয়েটিকে স্নেহ করেন। কারণ মেয়েটি যে স্নেহেরই যোগ্য! রানির স্নেহ সকলে পায় না। আর যে বা যারা পায় তাদেরকে রানি সর্বস্ব আনন্দ এনে দিতে চান।
রানি ভ্রু কুঁচকালেন ফ্রেয়ার এহেন কথায়।
আগ্রহী কণ্ঠে বললেন, "তো? কালো হয়েছো তো কী হয়েছে? সাজতে কেউ বারণ করেছে কি?"
ফ্রেয়া পায়ের আঙুল দিয়ে মেঝেতে ঘষতে থাকে। এরপর কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলে,
"আমাকে সাজলে সুন্দর দেখায় না। বিদঘুটে লাগে।"
"কে বলেছে একথা?"
ফ্রেয়া আর উত্তর দেয় না। হয়তো যে বলেছে সে বড্ড আপন। সেই আপনের এমন কুৎসিত আচরণের কথা হয়তো তার কণ্ঠস্বর দিয়ে বের হয় না।
রানি অন্যান্য দাসীদের বাহির থেকে ডেকে পাঠান। এবং হুকুম জারি করেন যে, ফ্রেয়াকে যেন অত্যাধিক সুন্দর করে সাজানো হয়।
রানির এই পদক্ষেপে বিস্মিত হয় ফ্রেয়া। কিন্তু কিছু বলে না। এই মানুষটাকে হয়তো পুরোপুরি জানা তার পক্ষে সম্ভবপর নয়!
••••••••••
বাঈজী ঘরে জমে উঠে আলোচনা। পাশা খেলায় ব্যস্ত হয়ে উঠেন রানি পুরুষদের সাথে। সাথে মদ্যরসে ব্যস্ত হয় ঠোঁট।
খেলতে খেলতে রাজা কৃশর বলেন,
"পাশা খেলায় রানি বুঝি জিততে মরিয়া!"
রানি হাসেন প্রতিত্তোরে। ক্রুর চোখে তাকায় খানিক। মৃদু স্বরে জবাব দেন,
"জীবনের সব খেলাতেই রানি জয়লাভ করবেন, এটা ভবিতব্য!"
"সে করুন না-হয়। আমার আর কী? আমার তো কেবল লক্ষ্য আপনার মতন একটি সুন্দর নারীর সঙ্গ প্রাপ্ত হওয়া। রাজ্যে রানি করে নেওয়া।"
কথা শেষ করেই রাজা হো হো করে হাসেন। সেখানে অবস্থানরত থাকা রাজা আনন্দ কুমার কথায় ফোড়ন কাটেন। নেশায় জড়িয়ে আসা কণ্ঠে বলেন,
"তাহলে আমরা কী করবো? চুপচাপ দেখবো? রানি কামিনীকাঞ্চনকে জয় করতে হলে আমিও পিছিয়ে থাকবো না! আমিও তো তার স্বপ্নে বিভোর থাকি!"
রানি নীরবেই প্রত্যক্ষ করেন সেসব কথা। মনে মনে হাসেন৷
তাকে পাওয়ার জন্য সকলের যে আকুতি তা কি কেবলই মন পাওয়ার বাসনা? সঙ্গ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা? মোটেও নয়। এসবই সুন্দরী নারী দেহের প্রতি লোভ, কাম। একটি দেহ ভোগ করার উদ্বেগ। তাছাড়া এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারী এভাবে দাপিয়ে বেড়াবে সেটাও কি চাইবে মানবজাতি? তাই সেই নারীকে হাতের মুঠোয় টেনে নিতে চায়। সমাজকে দেখাতে চায়, যে নারী সকলের উপরে আধিপত্য বিস্তার করেছে সে নারী তার বিছানার সঙ্গী। প্রতি রাতে সেই নারীকে সে ভোগ করছে। এই বুক উঁচিয়ে গর্ব করার লোভের জন্যও তো এই রাজারা তাকে চায়।
রানি সবই বুঝেন। কিন্তু তবুও চুপ থাকেন। কখনো কখনো বড়ো জয়ের জন্য ছোটো ছোটো পরাজয় স্বীকার করতেই হয়।
রানি আরও মদ্যরস পান করেন। মানবজাতির এই ঘৃণিত মনোভাব ভুলে গিয়ে নেশায় বুঁদ হতে চান।
তা নিয়ে কানাকানি চলে রাজপ্রাসাদ জুড়ে। মেয়েলোকের এমন অসভ্যতামি পৃথিবীতে বিরল বলে কথা! কোনো নারী এতটা নির্লজ্জ হতে পারে আদৌ?
এমন নানান কথার চর্চায় মুখরিত হয়ে উঠে দাসীদের কামরা। কেউ কেউ তো ঘৃণায় নিক্ষেপ করে এক দলা থুতু।
রাত বাড়ে। বাঈজী ঘরের নৃত্য থামে। প্রাসাদ জুড়ে ঘুরে বেড়ানো ঘুঙুরের ছন্দ থেমে যায় ক্লান্তিতে।
রানির কক্ষ থেকে তখন পাষবিক শব্দ আসে। চাবুকের শব্দ। রানি আজও নিজেকে আঘাত করছেন। আঘাতে আঘাতে হয়তো জর্জরিত করে ফেলছেন শরীরটা। কক্ষের বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে সবটাই শোনো হ্যাব্রো, ফ্রেয়া বাকি দাসদাসী ও প্রহরীরা। ফ্রেয়ার চোখ টলমল করে উঠে। তার মনে হয় ছুটে গিয়ে আটকে দিতে রানির এই নিজের প্রতি করা অমানবিকতাকে৷ কিন্তু পারে না। সবার যে একটি সীমাবদ্ধতা থাকে। চাইলেও সেই গণ্ডীর বাহিরে পা রাখা সম্ভব হয় না।
বড়ো বড়ো দীর্ঘশ্বাস ফেলে হ্যাব্রো। সে জানে প্রতিবার রানির রূপ নিয়ে প্রচণ্ড চর্চা এবং বাক্যালাপ হওয়ায় পর রানি নিজেকে এভাবে আঘাত করেন। হয়তো নিজের দেহের উপর তার প্রচণ্ড ঘৃণা। রূপের উপর ধিক্কার জানান এভাবেই। হয়তো এই রূপই রানিকে এমন বেপরোয়া করে ফেলেছেন।
কে জানে কত সুখী গল্পের ভেতর আত্মারা মৃত!
·
·
·
চলবে....................................................................................