যেই দরজাটায় ধাক্কা দিতে নিবে, ঠিক তখনই আচমকা থমকে যায় শোয়েব! স্থির হয়ে যায় চোখ! দুর্দম্য চমকে স্থবির হয় মন। চোখের সামনে আর কেউ নয়, বরং দাঁড়িয়ে আছে দাদী। দরজার রূপোলি নবটা ধরে সাদা ভ্রুঁ দুটো ঈষৎ কুঁচকে চেয়ে আছেন। গলায় আধো কৌতুহল, আধো দ্বিধা মিশিয়ে বললেন,
- কী ব্যাপার অফিসার সাহেব? আপনি এদিকে? ভুল করে এদিকে চলে এসেছেন?
মুখের হতচকিত ভাব সেকেণ্ডের মধ্যে আড়াল করল শোয়েব। বুঝতে দিল না সে যে ভারী বিষম খেয়েছে। তার বিক্ষিপ্ত মন সত্যিই ভুলে গিয়েছিল নিজের ঘরটা এখন অন্যের দখলে। দাদীর ভ্রুঁ কোঁচকানো দৃষ্টি দুটোয় চোখ মিলিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল সে,
- মেয়েটার শারীরিক অবস্থা জানতে এসেছিলাম। কেমন আছে, কী খবর এটুকুই। মাত্র নক করতে যাব, তার আগেই দেখছি দরজা খুলে দিয়েছ।
কথাগুলো অকপট, নির্ভেজাল, স্থৈর্য কণ্ঠে বলল শোয়েব। একটা পরিষ্কার নির্বিকারত্ব ফুটে ওঠল চোখে, কাটালো চোয়ালে, এক শীতলস্পর্শী মুখে। দাদীর চোখদুটোর চাহনি অতিমাত্রায় ছোট ছোট হয়ে গেছে। তিনি কী একটা গভীর আশঙ্কা পর্যবেক্ষণ করে ভীষণ চিন্তিত হয়ে গেলেন। নবটা ছেড়ে এক কদম বাইরে এসে প্রচণ্ড দ্বিধাপূর্ণ দৃষ্টিতে বললেন,
- তুমি ডাক্তারের কাছে যাওনি? তোমার কাঁধের পেশিটা আরো ফুলে উঠেছে! এগুলো কেমন ধরণের কাজ করেছ? ডাক্তারকে আসতে বলো ফারশাদ। এরকম হেলাফেলা একদম বরদাস্ত করব না!
উচ্চকণ্ঠে কথাগুলো শুনতেই ডানহাতটা উপরে উঠাল শোয়েব। নিজের বাঁ কাঁধে হাতটা রাখতেই বুঝল, অজান্তেই কখন জানি বাঁ কাঁধটা প্রচণ্ড ফুলে উঠেছে। ব্যথাটা খুব একটা কাবু করতে পারেনি; দুপুরে একসঙ্গে দুটো হাই ডোজের পেইনকিলার খেয়ে ফেলায় ব্যথাটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে সংকেত পৌঁছাচ্ছে না। কিন্তু যার চোখে ব্যাপারটা খাপে খাপ ধরা পড়ল, তিনি তো এখন ক্ষান্ত দিবেন না। ডাক্তার না ডেকে বসবেন না একচুল। শোয়েব ফোলা কাঁধটা ডানহাতে ছুঁয়ে নির্বিকার চিত্তে সুস্থির কণ্ঠে বলল,
- আমার কাঁধে ব্যথা নেই। ফোলাটা বাইরে থেকে বেশি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে শার্ট ভিজে আছে। এই ভেজা শার্টের কারণে এরকমটা মনে হচ্ছে। দুপুরে পেইনকিলার খেয়েছি দুটো। বতর্মানে ব্যথার ছিঁটেফোঁটাও নেই। ডাক্তার ডেকো না দয়াকরে। প্রয়োজন বোধ করলে আমি ব্যাপারটা দেখে নিব। টেনশনের কোনো কারণ নেই।
- সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যে কথা পরিবেশন করছ কেন? আমি তো দেখতে পাচ্ছি, কাঁধের ওখানটায় রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। এরকম অবস্থায় নিজের মতো ঔষুধ খাওয়াটা ঠিক?
শোয়েবের নির্ভীক সোজা কণ্ঠ,
- তুমি আমার জন্য হটব্যাগের ব্যবস্থা করে দাও। চাইলে নিজে এসে এই জায়গাটা দেখে দিতে পারো। আমি এখন আর বাইরে যাব না। একটু পর গুলজার সাহেব তার দুজন লোক নিয়ে আসবেন। তাদের যথাসাধ্য অতিথি আপ্যয়ন করো।
কথাটা বলতেই আরো এক পা এগিয়ে গেল শোয়েব। বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজে থাকায় সাদা শার্টটা সম্পূর্ণ গা সাঁটানো। স্বচ্ছ সাদা কাপড়ের অতলে ঢাকা পড়ে আছে, এক ঘাম ঝরানো কঠোর দেহশ্রী। যে দেহের ভেতরে লুকিয়ে আছে এক দুর্গম, অজানা দূর্গ। সেই দূর্গের ধারালো খাঁজ, পেশির মাপ, নিখুঁত বলিষ্ঠতা প্রচণ্ড শ্বাসরুদ্ধকর! সেখানে একবার তাকালে পাঁজরা ভেতরটা ঝিমঝিম করে ওঠে! এদিকে ফাতিমা নাজ তখনো জানতেন না, উনার পেছনে থাকা নারীটি ভীষণ আশ্চর্যে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধ-কোমল মুখের উপর ভয়াতুর কৌতুহল। ওর চোখ তখন আঁটকে আছে দরজার বাইরে, দুটো আশ্চর্য বিধুর চাহনিতে। লোকটার ওই বিশাল দূর্গের মতো বুকটার মাঝে ওটা কীসের চিহ্ন? স্থির, খাটো, ছোট দৃষ্টিতে শাওলিন গভীররূপে দেখতে চাইল। কিন্তু গলার কাছে নিঃশ্বাস যেন আঁটকে আসছে, বুকের মধ্যে হৃৎপিণ্ডটা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, এক অদ্ভুত অস্থিরতায় চোখ নামাল ও। শুধু এটুকু বুঝতে পারল ওটা সার্জারির দাগ। ওরকম একটা সার্জারির চিহ্ন বইয়ের পাতায় পড়েছে। বহুবার বহু জায়গায় ছবিটা দেখেছে। কিন্তু লোকটার ওই স্থানে কেন ওরকম চিহ্ন? ঠিক ওই বিশেষ স্থানটাতে? এদিকে দরজার বাইরে তখনো দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন ফাতিমা। তিনি কথা বলতে বলতে রূপোলি নবটা টেনে দরজাটা ভেজিয়ে দেন। চোখের সামনে ওইটুকু দৃশ্যপট আস্তে আস্তে বন্ধ দরজায় ঢাকা পড়ে গেল। কানে শুধু অস্ফুটে এটুকু শুনতে পেল,
- ওকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের কাঁধটাকে জখম করেছ। সারারাত ব্যথা নিয়ে ঘুমোতে পেরেছ? তার উপর হাতের এই জায়গাটা . . হয়েছে অজুহাত বন্ধ করো ফারশাদ। এক ঘা শুকাতে না শুকাতে আরেক ঘা বসিয়ে এনেছ। আসো, মিথিলাকে ডেকে ব্যবস্থা করি। হটব্যাগ দিয়ে . . .
এরপর আর কিছু শুনতে পেল না ও। দরজার আড়ালে কথাগুলো চাপা পরে গেল। আবছা অন্ধকার ঘরটার ভেতর এখনো বাতি দেয়নি শাওলিন। জানালাগুলো দিয়ে যতটুকু বাইরের আলো এসে পরছিল, তাতেই সুইচবোর্ডটা খুঁজে খুঁজে বাতিটা জ্বালিয়ে দেয় ও। মুহূর্তেই বিশাল বড়ো ঘরটার মাঝে আলোর বন্যা যেন বয়ে গেল। দেয়ালে দেয়ালে আলোর বিচ্ছুরণ, প্রকৃতির বৃষ্টিমুখর ছন্দ, ঘরে একটা শান্ত শীতল বাতাস সবকিছুই কেমন হৃদয় জুড়োনো। শাওলিন চর্তুদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে ঠোঁটে এক টুকরো মিষ্টি হাসিতে উদ্ভাসিত হল। কী সুন্দর শৈল্পিক মন, মার্জিত চোখ, ঘরের আনাচে কানাচে একজন রুচিশীল মানুষের চমৎকার ছাপ! আসবাব থেকে শুরু করে পায়ের তলায় থাকা লাল মখমলি কার্পেট, জানালায় গ্রিলহীন থাইগ্লাস, বারান্দায় কাঁচের স্লাইডিং ডোর, দেয়ালে ঝুলতে থাকা গ্রাম বাংলার চিত্রপট! সবই কেমন যেন শান্তি ছোঁয়ানো। যেন এ ঘরটায় কেউ পা দিলে, সে রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক সুখ মাখানো আরাম অনুভব করবে। এক অব্যক্ত সুখ, শান্তিময় নিবিড় সুখ। শাওলিন চুলে তোয়ালে ঘষতে ঘষতে আয়নার কাছে এসে থামল। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের অবয়ব দেখতে পেয়ে সহসা হাতদুটো থমকাল ওর। এক দুর্দমনীয় কৌতুহলে নিজের প্রতিবিম্বটা দেখতে লাগল। কার বাড়ি? কার ঘর? কার শাড়ি? কার আশ্রয়? কোনোকিছুই ওর নয়, অথচ সবকিছুই কেমন যেন নাগালে পৌঁছুনো। এই পৌঁছে দেবার কাজটা সৃষ্টিকর্তা কেন করছেন? কীসের ইঙ্গিতে করছেন? কোন পরিকল্পনায় সাজাচ্ছেন? কোনোকিছুরই উত্তর খুঁজে পেল না শাওলিন। গম্ভীর, শুকনো, হাসিহীন মুখটার মাঝে কোনো উত্তর এসে ভিড়ল না।
—————
ঘড়িতে ঠিক ক'টা বাজে খেয়াল নেই। সদ্য গোসল শেষে কোমরে টাওয়েল প্যাঁচানো দীর্ঘ উচ্চতার লোকটা ঘরে প্রবেশ করেছে। তার চওড়া দৃঢ় কপালের ওপর একছাঁট সারিবদ্ধ চুল। চুলের অগ্রভাগ চোখের ওপর লুকোচুরি খেলছে, কখনো ছুঁয়ে দিচ্ছে চোখের লম্বা সুন্দর পাপড়িগুলো। দুটো নীল স্বচ্ছ মণি দৃষ্টিবদ্ধ হয়ে আছে ফোনের দিকে। ডানহাতের বুড়ো আঙুলটা টাইপের স্পিডে কিছু একটা লিখে যাচ্ছে। অন্যদিকে চোখ বুলাচ্ছে ঘরের দেয়ালঘড়িতে। রাত আটটা বিশ। ইতোমধ্যে গুলজার আজিজ এবং তার সহযোগী দুজনের এসে পরবার কথা। নিচে তারা এসেছে কিনা তা সে জানে না। আলমারি থেকে ডার্ক গ্রিন টিশার্ট, একটা আমেরিকা ব্রাণ্ডের ট্রাউজার বের করে নিল। যতটুকু খেয়াল আছে, আজ এমন কিছু আলোচনা হবে না, যার দরুন মাথাটা বিগড়ে যেতে পারে। খুব ঠাণ্ডা, খুব শান্ত, খুব স্থির থাকতে হবে। ঝটপট গায়ে পোশাকগুলো জড়িয়ে ঘর থেকে বেরোল শোয়েব। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতেই বুঝতে পারছিল হলঘরে মেহমান উপস্থিত। কিছু একটা নিয়ে হাসিমুখর গল্প বিরাজমান। শোয়েব সেখানে উপস্থিত হতেই গল্পের মোড় অন্যদিকে ঘুরল। ঘটনা কোনদিকে যেতে চলেছে তা বুঝতে একটুও দেরি হল না। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গুলজার আজিজ বলে উঠলেন,
- বন বিভাগের চাকরি কেমন যাচ্ছে? প্রশাসনিক কাজ, বৈদেশিক সেমিনার সব মিলিয়ে অবস্থা কেমন?
শোয়েব শান্তমুখে শান্তকণ্ঠে জানাল,
- বেশ ভালো। ব্যস্ততা, অবসর, সেমিনার সব মিলিয়ে ভালো যাচ্ছে। সময়টা উপভোগ্য।
- তাহলে পরবর্তী ধাপ নিয়ে কী ভেবেছ?
শোয়েব কথাটা শুনে এমন ভাব করল, যেন সে ব্যাপারটা বুঝতেই পারেনি। একটা ইচ্ছাকৃত সরল অভিব্যক্তি ফুটিয়ে বলল,
- পরবর্তী ধাপ বলতে ডি. এফ. ও থেকে প্রোমোটেট?
কথাটা শুনে খলখল করে হেসে উঠেন গুলজার। উনার ঘর কাঁপানো হাসিতে সমস্ত হলঘর ভরে উঠল। তিনি যেন এমন মজার কথা ইহজন্মেও শোনেননি। উনার হাসিতে একমাত্র শোয়েব ব্যতীত হলঘরে সকলেই বিব্রত। রাফান মুখটাকে প্যাঁচা বানিয়ে তাকিয়ে ছিল। পারলে এক্ষুণি এক হাঁড়ি গরম ফুটন্ত পানি এনে রাখে, তারপর শোয়েব স্যারকে যখন ইলহাম নামটা জানাবে, তখন ওই হাঁড়ি ভর্তি ফুটন্ত পানিটা ছুঁড়ে মারবে। এদিকে পার্থ ওই সঙ্গী লোকদুটোর দিকে চেয়ে ছিল। লোক দুটো সুবিধাজনক না। দুজন গুলজার সাহেবের স্বজন। কিন্তু কেমন স্বজন তা এখনো খোলশা হয়নি। অন্যদিকে ফাতিমা নাজ খুব ধীরস্থির, গম্ভীর। তিনি অতো সহজে বিচলিত বোধ করেন না। যে ব্যাপারটির জন্য এতোদিন বিচলিত ছিলেন, চিন্তায় ছিলেন, সেটি নিয়ে সমস্ত উদ্বেগ নির্ভার হয়ে গেছে। তিনি এখন চক্ষুস্থির করে শোয়েবের জবাবটা শোনার জন্য মুখিয়ে আছেন। শোয়েব দুটো গভীর দমটা ছেড়ে অকাট জবাবটা রাখল,
- কর্ণেল, কিছু বিষয় খোলাখুলি আলোচনায় আসুক। আপনি আমারটা শুনবেন। আমি আপনারটা শুনব।
এটুকু বলতেই শোয়েব পায়ের উপর পা তুলে বসল। অর্থাৎ, বলার ফাঁকে এখন কোনো অর্থহীন কথা নয়। যা আলোচনা হবে, সব মাপা, সব ছক করা, সব হিসেব মতো। শোয়েব চোখে চোখ বিদ্ধ করে বলা শুরু করল,
- কর্ণেল, আমি সম্মান করি আপনাকে। সম্মানটা স্বার্থহীন, শর্ত ছাড়া। এখানে চাকরি করছি সাড়ে চার বছরের মতো হতে চলল। আপনার সঙ্গেও সম্পর্কের বয়সটা সাড়ে চার বছর। আমাদের মাঝে একটা সম্পর্ক থাকুক। একটার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়টা না। আপনি রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার, আমি রানিং ফরেস্ট অফিসার। সম্পর্ক এটা চলুক, একটা।
কথাগুলো এমন চাতুর্যে বলল, যেখানে পরোক্ষ ইঙ্গিত সব বোঝানো। একজন বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ বুঝে যাবে এখানে বিয়ের প্রস্তাব না রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কেননা, প্রস্তাব রাখলে মুখের উপর 'না' শুনতে হবে। এটা নিয়ে মন কষাকষি হবে। পরবর্তীতে সম্পর্ক মলিন হবার আশঙ্কা আছে। ভদ্রলোক এমন উত্তরটা পাবার পর কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন। তিনি হয়ত ভাবতে পারেননি, শোয়েব যে উনার আসার উদ্দেশ্যটা এভাবে ধরে ফেলবে। কিন্তু পরিবেশটা ধাতস্থ বানাতে ফাতিমা নাজ নিজের বুদ্ধিমত্তায় সবটা সামাল দিলেন। নাতবউ দুজনকে ডেকে রাতের খাবারে হইচই উঠালেন একটা। থমথমে গুমোট পরিস্থিতিটা চোখের পলকে কিছুটা শান্ত করলেন তিনি। কিন্তু তখনো উনি জানতেন না, কোন ভয়ংকর জায়গায় ভুলটা করেছেন। শ্রেষ্ঠা সহ বাকিরা টেবিল জুড়ে বসেছে। গুলজার ওদের সম্পূর্ণ পরিচয় শুনলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে চিনে যান, এরাই হচ্ছে সেই নিষিদ্ধ জোনে গাড়ি ঢোকানো দল। হাসিতে পুরো পরিবেশটা জমে উঠলে সবাই খাওয়া শুরু করল। এমন সময় তাহিয়ার মনে হল, ওদের সাতজনের ভেতর একজন তো নিচে আসেনি! শাওলিন! ধ্যাত্তরি, ওকে তো ডাকাই হয়নি! তড়িৎ গতিতে অধরার কানে খবর পৌঁছায় তাহিয়া। অধরা নিজের ভুলোমনা রোগের জন্য জিভ কামড়ে মাথায় হাত! সামনে রোকেয়াকে দেখে যেই ডাকতে নিবে, ঠিক তখনই পেছন থেকে প্রশ্ন ছিঁটকে এলো,
- এখানে নেটওয়ার্ক নেই? বৃষ্টির কারণে কী নেটওয়ার্ক সমস্যা?
খাবারের প্রথম লোকমাটা মুখে নিতেই আকস্মিকভাবে হাত থামিয়ে ফেলে শ্রেষ্ঠা। অদূরে চোখ বড় বড় করে চাইতেই আপাদমস্তক দৃষ্টি ছুঁড়ে থমকে যায়। হাতের লোকমা যে কখন ছেড়ে দিয়েছে টের পায়নি ও। অন্যদিকে জিদান মাছের কাঁটা দুপাটির দাঁতের ভেতর চেপে ধরে আচানক স্থির হয়ে গেল। প্রত্যেকের মুখ জড়বৎ স্থির। কথা পর্যন্ত বলতে পারল না। শোয়েব তার ব্যস্ত দৃষ্টিযুগল যেই প্রশ্নকারীর দিকে ঘুরাল, ঠিক তখনই বাইরে আকাশ কাঁপিয়ে প্রবল বজ্রপাত পড়ল। সমস্ত শরীর যেন ঝিমঝিম করে উঠল তার! বৈদ্যুতিক স্পর্শ লাগার মতো কেঁপে উঠল ডানহাত! ধারালো চোয়ালের উপর কঠোর হলো পেশি। চোখটা ঘুরিয়ে দাদীর দিকে চাইল শোয়েব। হাত মুষ্টি পাকিয়ে আসছে। ওদিকে সোনালি ফ্রেমের আড়ালে দুটো প্রবীণ চোখ হাসছে। সঙ্গে হাসছে ছোট ভাবী অধরা। দুজনের কেউই জানে না, কী সাংঘাতিক অকর্ম ঘটিয়ে ফেলেছে! অন্যদিকে এসবের কিছুই জানে না শাওলিন! হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিত একটা কাণ্ড ঘটল যে, সিঁড়িতে দাঁড়ানো শাওলিন ভয়ংকর ভাবে শিউরে উঠল!
.
.
.
চলবে.........................................................................