অবশেষে উৎকন্ঠিত দীর্ঘ সাতটি মাস পর আমি ডেনমার্কের ভিসা পেলাম। ভিসা পাওয়ার পর দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেল। জানি না কেন! দুরুদুরু মন নিয়ে এতটা পথ পাড়ি দিলাম। তারপর সকাল সকাল ল্যান্ড করে এয়ারপোর্টে যখন আদনানকে দেখতে পেলাম আমার দিন দুনিয়ার কোনো হুশ রইলো না। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আমি পাগলের মত কান্না করছিলাম আর ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। কতটা সময় এভাবে কেটে গেল আমি জানি না। ওই মুহূর্তটা বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই। ওই মুহূর্তটা ঐশ্বরিক!
আদনান আমাকে আগেই জিজ্ঞেস করে রেখেছিল, কোপেনহেগেনে ল্যান্ড করে সাথে সাথেই রোমো যেতে পারব নাকি হোটেলে রেস্ট নেব। কারণ প্রায় ৪ ঘন্টার ড্রাইভ। আমি বলেছিলাম, একেবারে বাসায় যেতে চাই। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আদনান আবার জিজ্ঞেস করল,
"তিন্নি তুমি আরেকবার ভেবে দেখ। ১৩ ঘন্টা জার্নি করে এসেছো। এখন আবার ৪ ঘন্টার ড্রাইভ। সামলাতে পারবে তো? পরে আবার অসুস্থ না হয়ে যাও।"
"আমি ঠিক আছি। ক্লান্ত লাগছে কিন্তু এখানে রেস্ট নিতে গেলে শান্তি পাব না। মনে হবে আরো জার্নি বাকি আছে। তারচেয়ে একবারে সব জার্নি শেষ করি।"
আমরা একসাথে সকালের নাস্তা করলাম। আদনানের ফোন থেকে বাবাকে ফোন করে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে ঠিক ভাবে পৌঁছানোর সংবাদ দিলাম। তারপর রোমোর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, আমি গাড়িতে উঠে দু মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম! আমি কিন্তু ঘুমকাতুরে নই। তবে ঘুম ভেঙে আমার মনে হচ্ছিল গত ৭ মাসের ঘুম আমি এই ৪ ঘন্টায় ঘুমিয়েছি। যখন ঘুম ভাঙলো তখন আমরা ফেরিতে। আদনান আমাকে বলল,
"কাজের কাজ করেছো ঘুমিয়ে। নাহয় এতটা পথ আসতে কষ্ট হতো।"
"তোমার তো কষ্ট হলো।"
"সারারাত ঘুমিয়ে ৪ ঘন্টা ড্রাইভ করতে আমার কষ্ট হবে কেন?"
"বোর হয়েছো না?"
"আমি একাও কখনো বোর হই না। আর এখন তো তুমি ছিলে পাশে।"
"ছিলাম তো ঘুমিয়ে। তোমাকে সঙ্গ দিতে পারিনি।"
আদনান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
"সঙ্গ দেয়ার জন্য সবসময় কথা বলার প্রয়োজন হয় না। তোমার নিশ্বাস ওঠানামার শব্দ আর শরীরের ঘ্রাণ সঙ্গ দিয়েছে আমাকে।"
আমি একটু লজ্জা পেয়ে হেসে দিলাম। ও কিন্তু হাসলো না। কেবল চেয়ে রইলো। আমি প্রসঙ্গ পালটে বললাম,
"আমাদের আর কতক্ষণ লাগবে? এই যে পাড় দেখা যাচ্ছে এখানেই কী নামব আমরা?"
আদনান আমাকে আঙুলের ইশারায় দেখালো,
"ওই যে সাদা বাড়িটা দেখতে পাচ্ছ ওটা তোমার বাড়ি।"
"ইশ! আমার বাড়ি বুঝি!"
"তোমারই তো। শুধু তোমার হাজবেন্ডের বাড়ি বলে নয়। এই বাড়িতে তোমারও অবদান রয়েছে। এক হাজার টাকার অবদান।"
আমি হেসে বললাম,
"ইশ যেন লাখ লাখ টাকা! ড্যানিশ কারেন্সিতে মাত্র ৭৫ ক্রোন।"
"ওই ৭৫ ক্রোন যে ওই মুহূর্তে কেউ দিচ্ছিল না! ওটা তখন না পেলে পুরো ইনভেস্টমেন্ট জলে যেত।"
"যাই হোক টাকাটা তো আবার ফেরত দিয়েই দিয়েছো।"
"দিলেও তো তুমি ভাঙোনি। সাথে করে ডেনমার্ক পর্যন্ত নিয়ে এসেছো।"
চমকে উঠলাম আমি। বললাম,
"তুমি কী করে জানলে? আমি তো কাউকে বলিনি।"
আদনান হেসে বলল,
"তোমাকে পড়া হয়ে গেছে আমার।"
আমার খুশিও লাগলো মন খারাপও হয়ে গেল। কারণ ও আমাকে পড়তে পারলেও আমি ওকে পড়তে পারি না। জিজ্ঞেস করলাম,
"কেমন পড়া হয়েছে মুখস্ত হয়েছে?"
আদনান হেসে বলল,
"আমার যে মুখস্তবিদ্যা নেই। তবে অন্তরস্থ হয়েছে।"
"আচ্ছা আগেও নোটিস করেছি আমার বাবা, মা, দাদাজান, চাচ্চুকে কেমন তা তুমি প্রথম দেখায় বুঝে ফেলেছিলে। এসব কীভাবে বুঝে ফেলো? তুমি তো এত মানুষের সাথেও মেশো না।"
"কে কেমন তা বোঝার জন্য খুব বেশি মানুষের সাথে মেশার প্রয়োজন নেই। অবজারভেশন পাওয়ার হাই থাকলেই বোঝা যায়।"
"তোমার অবজারভেশন পাওয়ারকে ১০ এ কত দেবে তুমি?"
"৯।"
"১০ এ ১০ কেন না?"
"এত পারফেক্ট মানুষ হয় না।"
"আমার অবজারভেশন পাওয়ার ০।"
আদনান হেসে বলল,
"জানি।"
আমি একটা হাই তুললাম। আদনান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ভীষণ ভালো লাগলো ব্যাপারটা। কয়েক মিনিট দুজনেই চুপচাপ। এরপর হঠাৎ মনে পড়ায় আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
"আচ্ছা আদনান তুমি এক হাজার টাকা ধার চাওয়ার সময়ে বলেছিলে, তোমার দু মাসের স্যালারি আটকে ছিল। পরের মাসে তিন মাসের স্যালারি একসাথে পাওয়ার কথা ছিল। ওটা পেয়েছিলে?"
"না আরও এক মাস পার হয়ে গেলেও যখন দেয়নি তখন আমি জব চেঞ্জ করি। পরের জবটা আরও ভালো। স্যালারিও বেশি। আসলে যা হয় ভালোর জন্যই হয়।"
"ওরা ওই ৩ মাসের স্যালারি দেয়ইনি?"
"দিয়েছে আরও দুই মাস পর।"
"ইশ! তোমার তো তখন তাহলে অনেক বড় বিপদ গেছে। কিভাবে কেটেছে সেই ভয়াবহ দিনগুলো?"
আদনান হেসে বলল,
"সমুদ্রে সাঁতরে বেড়ানো প্রাণী কখনো নদীতে পড়ে ভয় পায় না।"
বিকেল তিনটায় আমরা বাড়ি পৌঁছলাম। কি সুন্দর সমুদ্রের পাড়ে ছবির মত বাড়ি! আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে এ কারণে যে, আমি এখন সেই বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে। যে বাড়িটার ছবি আদনান আমাকে দিয়েছিল! ছোট কিন্তু সুন্দর একটা বাড়ি। আদানান লক খুলে ভেতরে ঢুকে বলল,
"ওয়েলকাম হোম।"
ও সরে দাঁড়াতেই আমি অবাক হয়ে দেখি ঘরে লাল রঙের কোনো এক ফুল দিয়ে লাল গালিচার মত করে রাস্তা বানানো। ফুলটা যদিও চিনলাম না। আমি হেসে দিলাম।
আদনান এসে বলল,
"এসো।"
আমি সেই ফুলের লাল গালিচায় পা দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। ফুলের গালিচা ধরে হেঁটে এগোতে লাগলাম। ফুলগুলো বেডরুমে গিয়ে শেষ হলো। আমি রুমে ঢোকার পরপরই আদনান আমার লাগেজগুলো ঢোকালো। বলল,
"প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবার গরম করি।"
আমি গোসল করে বের হয়ে দেখি আদনানের খাবার গরম করা শেষ। টেবিলে বসে অবাক হয়ে দেখলাম আমার পছন্দের খাসির মাংস ভুনা। সাথে শুকনা মরিচের আলুভর্তা আর পাতলা ডাল আর গরম ধোয়া ওঠা ভাত। ওকে বলেছিলাম এগুলো আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার। বললাম,
"ওগুলো কে রান্না করেছে?"
"তোমার হাজবেন্ড ছাড়া আর কে?"
"তুমি এগুলো আমার জন্য শিখেছো নাকি আগে থেকে পারতে?"
"আমি এধরনের কমন রান্নাগুলো আগে থেকেই পারি। এখন এত কথা না বলে খাও তো। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সব।"
মুখে দিয়ে বুঝলাম আমার চেয়ে অনেক ভালো রান্না করে আদনান। খুশি হব নাকি দুঃখ পাব বুঝতে পারছিলাম না। আমি বললাম,
"জানো আমি তোমার পছন্দের জিনিস নিয়ে এসেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বলে। উলটো তুমিই আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিলে!"
"কী এনেছো?"
"কচুর লতি। ভেবেছিলাম রান্না করে সারপ্রাইজ দেব। কিন্তু বের করলে তো দেখেই ফেলবে।"
"সর্বনাশ! করেছোটা কী? আপা বলেছে?"
"তাছাড়া আর কে?"
"কীভাবে এনেছো?"
আদনানের চোখে মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। আমি বললাম,
"কেটে প্যাকেট করে লাগেজে ভরে এনেছি।"
"সাবাস।"
"বেশি করে এনেছি। ফ্রিজে রেখে বেশ কিছুদিন খাওয়া যাবে।"
"৯ বছর ধরে কচুর লতি খাই না। স্বাদ ভুলে গেছি।"
"আগে জানলে ঢাকায় থাকতে খাওয়াতে পারতাম। তুমি তো বলোনি।"
"আমাকে বলতে হবে আদনান। না বললে কিছুই বুঝতে পারি না।"
"বলার যে অভ্যাস নেই। তারপরেও চেষ্টা করব। তবে সবকিছু বোঝার দরকারও নেই। একসাথে থাকতে থাকতে দেখবে না বুঝতে পারলেও অনেক কিছু টের পেয়ে যাচ্ছো, জেনে যাচ্ছো।"
ওর কথাটা আমার পছন্দ হলো। খাওয়াদাওয়া শেষ করে আদনান আমাদের দুজনের জন্য চা বানালো। চায়ের কাপ হাতে দুজনে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। কথায় কথায় এক সময় বললাম,
"আমরা স্বামী-স্ত্রী তাই না? অবাক লাগে ভাবলে!"
আদনান বলল,
"আমার তো এখনো বিশ্বাস হয় না। মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। এক্ষুণি ঘুম ভেঙে দেখব তিন্নির সব সোস্যাল একাউন্ট বন্ধ। কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারছি না!"
"আদনান একটা কনফেস করব?"
"তোমার ইচ্ছা।"
"আমি বলতে চাই।"
"তাহলে বলো।"
"আমি তোমাকে বিশ্বাস করি কিন্তু তবুও আমার মধ্যে একটা ভয় কাজ করতো। সবসময় মনে হত তুমি ডেনমার্কে এসে আমার সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না। যখন সেসব ঠিকঠাক চলছিল তখন মনে হতে লাগলো ডেনমার্কে এসে তোমাকে আর পাব না আমি। তুমি হয়তো এয়ারপোর্টে থাকবে না। আমি হয়তো একা বাসা চিনে আসতে পারব না। পারলেও এসে তোমাকে পাব না।"
"আর এ কারণেই বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও তুমি আমার থেকে ফিজিক্যাল ডিস্টেন্স মেইনটেইন করেছো। সিদ্ধান্তটা তোমার ফ্যামিলির না বরং তোমার।"
আমি চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম। এ কথা শুনে এবার চমকে উঠলাম। হাতটা কেঁপে গেল। কাপ থেকে চা ছলকে পড়লো আমার জামাতে। আদনান দ্রুত হাতে চায়ের কাপটা রেখে পকেট থেকে টিস্যু বের করে আমার জামাটা মুছে দিল। বলল,
"ইটস ওকে, রিল্যাক্স।"
"তুমি বুঝতে পেরেও এত স্বাভাবিক থেকেছো? রাগ হয়নি তোমার?"
আদনান চায়ের কাপটা আবার তুলে নিল। চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
"রাগ কেন হব? তোমার বিশ্বাস অবিশ্বাসকে কি আমার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত?"
"আমি যে তোমার বিয়ে করা বউ?"
"হোয়াটেভার হু আর ইউ। আমরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা মানুষ।"
"মন খারাপও হয়নি?"
"বিয়ের রাতে একটু মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু সেই মন খারাপটা পরদিন সকালেই চলে গেছে।"
"কীভাবে বুঝলে সেই সিদ্ধান্তটা আমার ছিল?"
"তোমার ফ্যামিলির সিদ্ধান্ত হলে তারা ব্যাপারটা আগে জানাতো। বিয়ের পর হুট করেই বলত না। তাছাড়া সিদ্ধান্তটা তাদের হলে তোমারও মন খারাপ হত। এত নির্বিকার থাকতে পারতে না। সারারাত আফসোস করতে।"
আমি মুখ কালো করে বললাম,
"আমি কি খারাপ বউ?"
আদনান চায়ের কাপটা রেখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
"একদমই না। তোমার এইযে ভয় কিংবা আতঙ্ক কাজ করতো, তুমি বুঝতে পারতে যে এগুলো তোমার অযৌক্তিক ভয়, তবুও ভয় করত তাই না?"
"হ্যাঁ একদম তাই।"
আদনান এবার আমার একটা হাত ধরলো। তারপর বলতে লাগলো,
"তোমার এইযে আতঙ্কটা এটা একটা মানসিক সমস্যা। একে বলে ওসিডি মানে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার। এটা যার হয় তার মনে এক একটি বিশেষ বস্তু বা অবস্থাকে কেন্দ্র করে মারাত্মক ভয় ও আতঙ্কগ্রস্ত ভাব দেখা যায়। তোমার ক্ষেত্রে এই বিশেষ বস্তু ছিলাম আমি। ওসিডি হলে দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগের মাত্রা এত বেশি হয়ে যায় যে সেটার ওপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং সে এ সমস্যা থেকে মুক্ত হতেও পারে না। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে যে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই তবুও নিজের মস্তিস্ককে কন্ট্রোল করার মানসিক শক্তি তার থাকে না। এ কারণে সে নিজের উপর নিজে বিরক্ত হয়ে পড়ে। এই সবকিছুকেই তার আশেপাশের অনেকে ঢঙ বলে আখ্যায়িত করে। কিন্তু এটা যার হয় কেবল সেই বোঝে এটা কতবড় একটা যন্ত্রণা।"
বিশ্বাস করুন এবার আমার পুরো পৃথিবীটা ঘুরতে লাগলো। আমি বললাম,
"আমি কি মানসিক রোগী আদনান? আমি কি পাগল হয়ে গেছি?"
"আহারে বোকা মেয়ে! মানসিক সমস্যা আর মানসিক রোগ এক নয়। পাগল তো বহুদূরের কথা। তোমার জ্বর হয় না? পেট খারাপ হয় না? মাথা ব্যথা হয় না?"
"সবই হয়।"
"শরীরে সমস্যা বা রোগ হতে পারলে মনে সমস্যা বা রোগ হতে পারবে না কেন?"
"জানি না। এভাবে কখনো ভেবে দেখিনি।"
"এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কিছুই নেই তিন্নি। পৃথিবীতে প্রতি ১০০ মানুষের মধ্যে ১ জনের ওসিডি হয়। তাহলে ভাবো তো কত মানুষ এই সমস্যা নিয়ে আছে! তোমার সমস্যাটা যেহেতু আমাকে নিয়ে, আমার কাছে যখন চলে এসেছো এই সমস্যা তোমার আর হবে না। আর প্রতিদিন সকালে এখানে বসে ইয়োগা করবে। মেডিটেশন করবে তাহলে আর কখনোই এসব সমস্যা ফেস করবে না। তারপরেও যদি তোমার কনফিউশন থাকে তো মাকে আমি ডাক্তা রের কাছে নিয়ে যাব।"
আমি এবার একটু নিশ্চিন্ত হলাম। তবে পুরোপুরি না। মুখে বললাম,
"আচ্ছা।"
আদনান আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
"তাছাড়া আমি তো আছি। আমি তোমার সব বুঝতে পারি তিন্নি। নিশ্চিন্তে থাকো। তোমার সব সমস্যা আমি ঠিক করে দেব। এখন ঘুমাও। তোমার ক্লান্তি কাটেনি এখনো।"
ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথাতেও যতটা না নিশ্চিত হলাম তারচেয়ে বেশি নিশ্চিন্ত হলাম আদনানের এই কথাটায়। সত্যিই এই মানুষটা আমার জন্য এক বিস্ময়কর জাদু। সেই যে বিকেলবেলা ঘুমোলাম, ঘুম ভাঙলো রাত ৯ টায়। ঘুম থেকে উঠে দেখি আদনান বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি বললাম,
"কোথায় যাচ্ছ?"
"কয়েকটা জেলে নৌকা মাছ ধরে এসেছে দেখলাম। দেখি ভালো কোনো মাছ থাকলে কিনব। ভালো হয়েছে উঠেছো, লক করে যেতে হচ্ছে না।"
"আমিও যাব।"
"সত্যি যাবে?"
"হ্যাঁ।"
"আচ্ছা চলো।"
আমরা দুজন কিছু মাছ কিনে বিচের পাড় ধরে কিছুক্ষণ হাঁটলাম। আদনান আমাকে দেখালো কোথায় বসে আমার সাথে কথা বলেছে। জোয়ারের সময় পানি কোন পর্যন্ত আসে। গ্রসারি লাগলে কোন দিকে যেতে হবে। আরও কত কি! বাসায় ফিরে আদনান মাছগুলো ফ্রিজে রেখে দিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
"এই মাছগুলো একটাও আমি চিনি না। কীভাবে কাটব কীভাবে রান্না করব কিছুই জানি না।"
"তোমাকে করতে হবে না। আমি করে দেব। এখানে গ্রসারি শপে সব মাছ মাংস পরিস্কার করা অবস্থাতেই পাওয়া যায়। তবু এমন তাজা মাছ পেলে মাঝে মধ্যে কিনি। পরিস্কার করা একটু কষ্ট বটে, তবে স্বাদে আকাশ পাতাল পার্থক্য।"
"আহা আমি কি ভাগ্যবতী এসে থেকে হাজবেন্ডের রান্না খাচ্ছি।"
"এই সাত দিন তোমাকে কিছুই করতে হবে না। জাস্ট রেস্ট নাও। এরপর হয়তো তোমার কিছু করা লাগতে পারে। আবার যখন ক্লাস শুরু হয়ে যাবেবা চাকরিতে ঢুকবে, তখন দুজন মিলে ভাগাভাগি করে করব সব।"
"এই ৭ দিন কী?"
"এই ৭ দিন ছুটি নিয়েছি। বউ আসবে আর ছুটি নেব না তাই কী হয়?"
"সত্যি!"
আমার চোখেমুখে খুশি ঝড়ে পড়ছিল। আদনান বলল,
"তিন সত্যি।"
"আরে তুমিও তিন সত্যি বলো? আমরাও খুব বলি।"
আদনান হেসে দিল। তারপর আচমকা বলল,
"আজকে থেকে কি আমার সাথে ঘুমাবে নাকি পাশের ঘরে ব্যবস্থা করব? এ বাড়িতে দুটো ঘর। সমস্যা হবে না।"
আমি পেছনে ঘুরে ওর দিকে তাকালাম। ও বলল,
"চাইলে আলাদা থাকতেই পারো। যতদিন তুমি চাও।"
আমি ছুটে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর বললাম,
"আর এক মুহূর্তও চাই না।"
.
.
.
সমাপ্ত.......................................................................