সকালবেলা নাস্তা শেষে চা খেতে খেতে আতিকুর রহমান স্ত্রীর সাথে লগ্নর বউভাতে যাওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন। আগামীকালই বউভাত, হাতে সময় বেশি নেই। এমন সময় লাবণ্য এলো ছুটতে ছুটতে। আতিকুর রহমান তাকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হলো তোর?’
লাবণ্য কাঁদোকাঁদো গলায় বলল, ‘বাবা, লগ্ন ফোন ধরছে না।’
বিলকিস বেগম বললেন, তাতে হয়েছে কী? কাল যে ধকল গেল। হয়তো এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। উঠলে কলব্যাক করবে।’
‘না মা, অনেকবার কল করেছি ধরছে না। তারপর একটু চিন্তা হচ্ছিল বলেই ইফতিকে ফোন করি। ওর ফোন বন্ধ। এরপর দাদিকে ফোন দিই, সেও ধরে না।’
এবার সকলেই চিন্তায় পড়ে গেল। আতিকুর রহমান প্রথমে লগ্নকে ফোন করল। সেও ফোন না ধরায় মা, ভাইপো সবাইকেই কল করল। কেউই ফোন ধরল না। এরপর ফোন করল ইফতি ও তার পরিবারের লোকদের। তাদের সবার ফোন বন্ধ। তৎক্ষণাৎ আতিকুর রহমান ভাইদের সঙ্গে নিয়ে ঠাকুরগাঁও রওনা হলেন। লাবণ্য ও তার স্বামীও সঙ্গে চলল। ঘটককে ফোন করে ডেকে পথে তাকেও গাড়িতে তুলে নিল।
—————
লগ্নর যা ধারণা হচ্ছে তা সে বিশ্বাস করতে চাইছে না। মনে অনেক জোর নিয়ে সে বাবাকে ফোন করল। ঠিক তখনই কলিংবেল বেজে উঠল। ফোন হাতেই সে দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলে দেখে বাবা এসেছেন।
আতিকুর রহমান ধরা গলায় বললেন, ‘মা, তুই ঠিক আছিস?’
লগ্ন বলল, ‘হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। কিন্তু এবাড়িতে কিছু একটা ঠিক নেই বাবা।’
সারাবাড়িতে কাউকে খুঁজে না পেয়ে নিকটস্থ থানায় খবর দিলো আতিকুর রহমান। লাবণ্য দাদি ও চাচাতো ভাইদের ডেকে তুলল। তারা এখনো ঘুমে কাতর।
পুলিশ এসে সারাবাড়ি তল্লাশি করে উদ্ধার করল ইফতি ও তার পরিবার লগ্নর সোনার গয়না চুরি করে পালিয়েছে। ৩০ ভরি গয়না দিয়েছিল লগ্নর বাবা। তারা যা দিয়েছিল, সেসবও নিয়ে গেছে। এমনকি গত রাতে পরিশোধ করা দেনমোহরের পাঁচ লাখ টাকাও নিয়ে গেছে। এই বাড়িও তাদের নয়। তারা ভাড়া নিয়েছিল। বাড়ির মালিক বিদেশে থাকে, তাকে পাওয়া গেল না। তবে কেয়ারটেকার ও ঘটককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেল। বিয়েতে তোলা তাদের ছবি, কাবিনের সময় দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি-সবকিছু পরবর্তী তদন্তের জন্য পুলিশ নিয়ে গেল।
পুলিশ চলে যাওয়ার পর সবাই লগ্নকে স্বান্তনা দিচ্ছিল।’ শুধু আতিকুর রহমান বাদে। তিনি বললেন, ‘মাগো, আমাকে তুই মাফ করে দে। তুই বিয়ে করতে না চাওয়া সত্ত্বেও তোকে জোর করেছি।’
লগ্ন কিছু বলতে পারল না। পুলিশের কথা শোনার পর থেকে আর কারো কোনো কথাই তার কর্ণপাত হচ্ছে না। রাতের খাবারের সাথে মিশিয়ে সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিল ওরা। সেই ঘুমের ঘোর কাটতে না কাটতেই এতবড় ধাক্কা। মাথা ঝিমঝিম করছে, সমস্ত শরীর কাঁপছে। অন্যকিছুই ভাবছে না সে, শুধু একটা কথাই ভাবছে; মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলেছিল সে। যদি ধোঁকা দেওয়াই ইফতির উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে ভালোবাসার জাল ফেলার কী দরকার ছিল? বিয়ে তো ঠিক হয়েই গিয়েছিল। যেটা ভালোবাসা ছাড়াও হতে পারত!
·
·
·
চলবে........................................................................