তুমি আমার বসন্ত - পর্ব ০৮ - আমেনা আক্তার আখি - ধারাবাহিক গল্প

          বিকেলের পর মুহুর্তেই সন্ধ্যার আকাশ আজকে কেমন লালচে রং ধারণ করেছে৷ তাবাসসুম বেলকনিতে বসে আকাশ দেখছে। হাতে তার আইসক্রিমের বাটি৷ চোখ আকাশে থাকলেও, মন তার এখনো রুশানের সেই হাসিকেই ভাবছে। তাবাসসুম সহসা ঠোঁট এলিয় হাসল৷

পরমুহূর্তেই মাথা ঝাকালো সে। কি ভাবছে সে? ওই ঝগড়াটে কচুর কথা কেন ভাবছে? প্রথমদিন থেকেই কেমন ঝগড়া করে যাচ্ছে। আজ নেহাৎ তার দোষ ছিলনা, সে ভুল ভেবেছে বলে তার ভুল ভাঙাতে এসেছিল। তাই বলে ওই ঝগড়াটে লোকটার কথা তার ভাবতে হবে? উহু। 

তাবাসসুম আইসক্রিমের বাটি নিয়ে ভেতরে চলে আসলো। চারপাশ আঁধার হচ্ছে ধীরে ধীরে। তাবাসসুম রুমে ঢুকে পড়ার টেবিলের সামনে বসল। অর্ধ খাওয়া আইসক্রিমের বাটিটা টেবিলে রেখে, চেয়ারে গা এলিয়ে বাটিটার দিকে চোখ রাখল। তখনো মস্তিষ্ক জুড়ে রুশানের চিন্তা। সেই প্রথমদিন রুশানকে লুঙ্গি পড়া অবস্থায় দেখেছিল সে। সেদিনের রুশানের অবস্থা মনে হতেই ফিক করে হেসে দিল তাবাসসুম। পাগল লোকটা!

তাবাসসুমের হাসির মাঝে টেবিলের উপর রাখা তার ফোন বেজে উঠল। তাবাসসুম হাসি থামিয়ে, ফোনটা হাতে নিল। দেখল, শাফানের ফোন। শাফান নামটা দেখেই, শাফানের বিয়ের কথা মনে পড়ল। তাবাসসুম অভিমানে ফোন ধরলো না। এমনিতে ভাই হিসেবে খোঁজখবর নেন শাফান ভাই। অথচ তিনি বিয়ে করছেন, একটাবারও তাকে বলল না। এখনও নিশ্চয়ই বলবেন না। অভিমান আর ক্ষীণ রাগের দরুণ তাবাসসুম ফোন ধরল না। 

এদিকে শাফানও থামার ছেলে নয়। সে ফোন দিয়েই যাচ্ছে। তাবাসসুম শেষে নবম বারের বার ফোন ধরল৷ ফোন ধরেই মিনমিন কন্ঠে সালাম দিল। তবে ওপাশ থেকে ধমকের শব্দ আসল।

“ফোন ধরতে এত সময় লাগে তোর? কোথায় থাকিস?”

তাবাসসুম মিনমিন করেই বলল—

“ফোনের কাছেই ছিলাম।”

শাফান ধমকেই বলল—

“তাহলে ধরছিলি না কেন?”

“আপনি ধমকাচ্ছেন কেন?”

শাফান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল—

“ফোন ধরছিলি না। তাই একটু রাগ হচ্ছিল। ফোন ধরছিলি না কেন?”

তাবাসসুম অভিমানী কন্ঠে বলল—

“আপনার বিয়ে শাফান ভাই?”

শাফান কিছুক্ষণ নিরব রইল। জিজ্ঞেস করল—

“তোকে কে বলল?”

“তনু বলেছে। আপনি বিয়ে করছেন অথচ আমাকে বললেন না শাফান ভাই। মেয়েটা কে সেটাও বললেন না। আমি আপনার বউকে দেখলে কি আপনার বউ কমে যেত?”

শাফাল হাসল। চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল—

“তোর কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?”

“কেমন?”

“তোর কি মন খারাপ?”

তাবাসসুম এবার মন খারাপ করেই বলল—

“তো মন খারাপ হবে না? আপনি বিয়ে করছেন অথচ ফুফুও আমাকে বলল না একবারও।”

শাফান হাসল। কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে মৃদু হেসে বলল—

“আমার বউকে আমি তোকেই প্রথম দেখাবো। প্রমিস করলাম।”

“সত্যি?”

“হ্যাঁ।”

তাবাসসুম কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল—

“মেয়েটা কেমন দেখতে শাফান ভাই?”

“সেটার বর্ণনা তো আমি দিতে পারব না।”

“কেন?”

“যতই বলি কম হয়ে যাবে।”

“অনেক সুন্দর তাইনা?”

“অন্যের কাছে কেমন জানিনা। তবে আমার চোখে সে সবচেয়ে সুন্দর রমণী৷”

তাবাসসুম চোখ ছোট ছোট করে বলল—

“শাফান ভাই, আপনি প্রেম করেন। অথচ আমি আপনাদের বাড়ি থেকে কোনোদিন আপনাকে দেখলাম না কারো সাথে কথা বলতে।”

শাফান মৃদু ধমকে বলল—

“আমি কি তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে প্রেম করবো? গর্দভ!”

তাবাসসুম মৃদু চমকে উঠল। অপ্রস্তুত ধমকের জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। তাই চুপ রইল৷ শাফান হঠাৎ জিজ্ঞেস করে উঠল—

“ওই ছেলেটার সাথে তোর আরও কথা হয়েছে?”

“কার সাথে শাফান ভাই?”

“তোদের বাড়িতে যে ভাড়া থাকে!”

“ওই ঝগড়াটের কথা বলছেন? হ্যাঁ, আজকেও কথা হয়েছিল। জানেন,,”

শাফান তাবাসসুমের সম্পূর্ণ কথা শুনল না। তার আগেই রাগী কন্ঠে বলে উঠল—

“তোকে বলেছি না ওই ছেলেটার সাথে কোনো কথা না বলতে। ওই ছেলেটাকে সুবিধার মনে হয়না আমার।”

“কিন্তু শাফান ভাই। উনি তো ওতটাও খারাপ নন। শুধু একটু বেশি ঝগড়াই করেন।”

রুশান কঠোর কন্ঠে শুধাল—

“তোকে বলেছি মানে তুই মিশবি না। বুঝেছিস?”

তাবাসসুম কিছুক্ষণ নিরব থেকে, ছোট্ট করে বলল—

“জ্বী।”

“রাখছি এখন। সাবধানে থাকবি।”

“হুম।”

শাফান ফোন কেটে দিল৷ তাবাসসুম ফোন রেখে শাফানকে মুখ ভেঙাল। চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। সঙ্গে সঙ্গে রুশানের সেই হাস্যজ্বল মুখশ্রী ভেসে উঠল। তাবাসসুম চোখ খুলল সঙ্গে সঙ্গে। বিরক্তির শব্দ করে বলল—

“ঝগড়াটের সাথে আপনি প্রচন্ড বিরক্তিকর। ধ্যাত!”

—————

পরদিন সকালে,
সময় তখন সকাল সাতটা। তাবাসসুম হাঁটার উদ্দেশ্যে নিচে নেমেছিল। তাদের বাড়ির চারদিকে দেয়াল করা। তাবাসসুম পুরো বাড়ি গোল একবার চক্কর দিল। সে কেন চক্কর দিচ্ছে জানেনা। কিন্তু বহুদিনের রেকর্ড ভেঙে সে আজকে সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেছে। ঘুম থেকে উঠে নিচে নেমে পুরো বাড়ি চক্কর কাটছে। সে যে রুশানকে দেখার ইচ্ছা পোষণ করে নিচে নেমেছে তা মানতে নারাজ সে।

দ্বিতীয়বারে চক্কর দিয়ে গেটের কাছে আসতে, রুশানকে চোখে পড়ল তাবাসসুমের। কানে ফোন চেপে কারো সাথে কথা বলতে বলতে রুশান বের হচ্ছে। গেট থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়, রুশান বামে বাগানের দিকে একবার তাকালো। তাবাসসুমকে দেখল দাঁড়িয়ে থাকতে। তাবাসসুমকে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল সে। মুখে তার তখনো হাসি বিদ্যমান। 

তাবাসসুম রুশানের হেসে হেসে কথা বলার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। পরমুহূর্তেই বিনক্ত কন্ঠে বলে উঠল—

“ছেলেদের হাসি এত সুন্দর হবে কেন? হুয়াই? কই আমার হাসি তো এত সুন্দর না?”
·
·
·
চলবে……………………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp