শিকদার সাহেবের দিনলিপি - পর্ব ১২ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


          আজ বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস। আমার জীবনের ২২তম ভাষা দিবস এবং ২২তম জন্মদিন। কিন্তু এই মাতৃভাষাটা আমার বেলায় সবার মতো জন্মদাত্রী মায়ের ভাষা নয়। এই মাতৃভাষাটা আমার দেশ মায়ের ভাষা। মাঝেমাঝে মনে হয় আজও ভাষাটা ঠিকঠাক শিখে উঠতে পারলাম না। তবে চেষ্টা করে চলেছি।

আজকের দিনে গর্ববোধ হয় এই ভেবে যে আমার নিজের এমন একটা শ্রুতিমধুর ভাষা আছে, যার জন্য প্রাণ দিয়েছে কত যুবক, লড়েছে শত যুবক। আবার আফসোস হয় এই ভেবে যে সেই সব যুবকদের মধ্যে আমি ছিলাম না। আমার জন্ম এত দেরিতে কেন হলো?

আহা বাংলা!
আমার সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালোবাসি…

রাফসান শিকদার,

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১০

কৃষক শিকদার সাহেবের তরকারি বিক্রির ব্যবসা লাটে উঠেছে। মা যাওয়ার পর থেকে বাবা আমার হাতে বাজারের টাকা দেন। তা শিকদার সাহেবের তরকারির যা দাম! মায়ের কাছে ১০ টাকার লাউশাক রাখত ৩০ টাকা। এখন মা থাকলে ২০ টাকার ফুলকপি নিশ্চিত ৫০ টাকা রেখে ছাড়ত। মা কীভাবে ম্যানেজ করত মা-ই জানেন। আমার পক্ষে সম্ভব না। সবজি কিনতে বাজারে যাচ্ছিলাম তা দেখে শিকদার সাহেব কিছুটা ছাড় দিলেন। ন্যায্য দামে দিলেন তবেই আমি কিছু শাকসবজি কিনতে পারলাম। এইতো কৃষক শিকদার সাহেব বনাম মায়ের সংসার সামলানো শিকদার সাহেবের গল্প!

রাফসান শিকদার
১৩ মার্চ, ২০১০

আজ মীরা একটি দুঃসাহসিক কাজ করেছে। ফুলার রোডের ফুটপাতে আমার হাত ধরে হেঁটেছে। পাবলিক লাইব্রেরি অডিটরিয়ামে চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছিল। আমরা একটা সিনেমা দেখলাম। এরপর হাঁটতে হাঁটতে টিএসসি গেলাম। সেখান থেকে ফুলার রোড। ফুলার রোডে ঢুকেই ও আমার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করল। শুধু হাতে হাত নয়, আমার হাতটা দু হাতে জড়িয়ে ধরে আমার বাহুতে মাথা রেখে হেলেদুলে হাঁটছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার ভয় করছে না মীরা?

কীসের ভয়?

কেউ তোমার পরিচিত কেউ যদি দেখে ফেলে?

দেখলে দেখুক।

আমি চমকে উঠে ওর দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে চেয়ে বলল,

তুমি পাশে থাকলে কী যেন হয় আজকাল! দুনিয়ার কোনো কিছুকেই ভয় লাগে না! কে দেখবে কী হবে–এসব হিসেবনিকেশও করতে পারি না।

ওর সেই চোখে কি অদম্য ভালোবাসা! এক জীবনে কত পুণ্য করে পেয়েছি ওকে আমি?

মীরা আজ বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছে বলে বেরিয়েছিল। মেয়েটার বুদ্ধি-শুদ্ধি কিন্তু একটু বেড়েছে বল? বাসায় কী বলে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যাবে সেটা আর আমাকে শিখিয়ে দিতে হচ্ছে না। প্রথম প্রথম তো কতকিছুই শেখানো লাগল। দুজনের দিকই আমাকে ভাবতে হচ্ছে। কি জ্বালা! দেখে নিস বকুল এই মেয়েকে আমি এমন ভাবে তৈরি করে নেব যাতে সংসারের কোনো কিছু নিয়ে আমাকে না ভাবতে হয়। প্রেমের সময় যেমন দুদিক একা ভেবেছি তেমনি বিয়ের পর দুদিক ওকে দিয়ে ভাবাব। একা নিজের মাথাটা কেন খাটাব? আমি পোলাপান নিয়ে আমোদ-ফুর্তিতে থাকব। কী বলিস আইডিয়া কেমন?

রাফসান শিকদার
২৭ এপ্রিল, ২০১০

মীরা মুচকি হেসে পাতা উল্টাল। পরের পাতায় অনেক এলোমেলো আঁকিবুকি। যার কোনো অর্থ দাঁড় করাতে পারল না মীরা। আবার পাতা উল্টাল,

আজ ঠিক কী হয়েছিল আমার? কোনো নেশাদ্রব্য তো গ্রহণ করিনি। অসুস্থও না। মানসিকভাবেও সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে? কেন মীরার সঙ্গে অসভ্য কথাগুলো বলতে বলতে প্রায় মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলাম? ভাগ্যিস মীরা আমার সব কথার অর্থ বোঝেনি। না হলে কী যে হতো! আমার দোষ না। সব দোষ বয়সের। বিয়ের বয়স হয়ে গেছে কিন্তু!

রাফসান শিকদার
০৮ মে, ২০১০

মীরা ডায়েরি থেকে চোখ তুলে ভ্রু কুচকে মনে করার চেষ্টা করতে লাগল রাফি কবে তার সঙ্গে অসভ্য কথা বলেছিল? না তো, এরকম তো কিছু মনে পড়ছে না! নাকি বলেছিল কিন্তু সরাসরি বলেনি বলে সে বুঝতে পারেনি?
·
·
·
চলবে....................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp