তুমি আমার বসন্ত - পর্ব ১১ - আমেনা আক্তার আখি - ধারাবাহিক গল্প

          মাঝখানে কেটে গেছে দিন পাঁচেক। তাবাসসুমের ভার্সিটি খোলা। আজকে চলে যাবে সে। মুনায়া বেগম সকাল থেকে মুখ ভার করে রেখেছেন। গতকাল স্বামী কর্মের জন্য চলে গেছেন। আজকে মেয়েও চলে যাবে। তিনি মুখ ভার করে রান্না করছেন। আজকে তাবাসসুমের সব পছন্দের খাবার রান্না হচ্ছে।

তাবাসসুম সোফায় বসে থেকে মায়ের ভার মুখে দেখে রান্নাঘরে চলে এলো। মুনায়া বেগমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বলল—

“মা?”

“কি?”

“ও মা?”

“কি বলবে?”

“শোনোনা মা?”

মুনায়া বেগম এবার ক্ষীণ আওয়াজ তুলে বললেন—

“মা, মা কেন করছো? কি বলবে বলো।”

তাবাসসুম হেসে বলল—

“কি করছো রান্না করছো মা?“

“চিংড়ির মালাইকারি।”

তাবাসসুম রান্না ঘ্রাণ নিয়ে বলল—

“আজকের রান্না বোধহয় একটু বেশিই সুস্বাদু হবে। বুঝলে মা?”

মুনায়া বেগম কিছু বললেন না। মুখ ভার করে কড়াইয়ে চামচ নাড়াচাড়া করলেন৷ তাবাসসুম পুনরায় বলল—

“এভাবে মন ভার করে রেখেছো কেন মা? তুমি এভাবে মুখ ভার করে থাকলে আমি কিন্তু আর যাবোনা৷ তখন কিন্তু আমার ভার্সিটি করতে কষ্ট হবে।”

“আমি কি তোকে যেতে না করেছি?”

“তোমার মুখ না করছে। তোমার মুখ আমাকে স্পষ্ট বলছে তাবাসসুম তুই যাস না।”

“ফালতু কথা বন্ধ করো। টেবিলে যাও। বোনকে ডাকো। আমি খাবার দিচ্ছি।”

“তাহলে একটু হাসো।”

মুনায়া বেগম হাসলেন ক্ষীণ। তাবাসসুমও হাসলো। মায়ের গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে আসলো রান্নাঘর থেকে। তনুকে ডেকে এনে ড্রাইনিং টেবিলে বসালো৷ বেচারা কেবলই ঘুম থেকে উঠেছিল। তাবাসসুম তাকে শান্তিমত ব্রাশটাো করতে দেয়নি। টেনে নিয়ে এসেছে। তনু তাবাসসুমের পানে চেয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে বলল—

“এভাবে নিয়ে এলে কেন? আমি ব্রাশটাও ঠিক মতো করতে পারলাম না।”

“আজকে আমি চলে যাবো তাই, আমার সাথে খেতে হবে।”

“তাই বলে ব্রাশ না করে?”

“করলি তো ব্রাশ।”

“ওটাকে ব্রাশ করা বলেনা আপু। জাস্ট শো-অফ ছিলো ওটা। আমি তো কেবল ব্রাশটা মুখে নিয়েছিলাম।”

“সে যাই হোক। একদিন ব্রাশ না করলে কিছুই হবেনা।”

“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি ইচ্ছে করলে ব্রাশ না করেও খেয়ে ফেলতে পারো? রুশান ভাইয়া কিন্তু নোংরা পছন্দ করেনা আপু।”

তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে বলল—

“তোর রুশান ভাই নোংরা পছন্দ করেনা, তো আমি কি করবো?”

“আনফরচুনেটলি, তুমি যদি ভাইয়ার বউ,,”

তনুকে শেষ করতে দিলনা কথা। তাবাসসুম ক্ষেপে উঠে বলল—

“ফালতু পেঁচাল পারবি না। খেতে ডাকছি, খেয়ে চলে যা। কাম খাতাম।”

তনু মুখ বাকালো। তাবাসসুমকে মুখ ভেঙিয়ে খেতে শুরু করল। 

—————

মুনায়া বেগম মেয়ের ব্যাগ গুছাচ্ছেন। তাবাসসুম বসে বসে দেখছে মায়ের কর্মকান্ড। মনে করে করে তিনি মেয়ের ব্যাগে সব ভরে দিচ্ছেন। তাবাসসুম গালে হাত দিয়ে বলল—

“মা, কাপড় দিতে হবেনা। দু সেটরজাসা দিয়ে দাও।”

“দু সেট মানে? দু-সেট জামা তুই কয়দিন পড়বি?”

“আমার কি মনে হচ্ছে জানো মা?”

“কি?”

“এবার আমি ফুফুর বাড়ি গিয়ে থাকতে পারবো না। দু'দিন পরেই চলে আসবো। তোমার মুখের যে অবস্থা!”

মুনায়া বেগম ভ্রু কুচকে বললেন—

“আমার মুখের অবস্থা কোনোরকমই হয়নি। তোমার আসতে হবেনা। এমনিতে ফুফুর বাড়ি তো তোমায় কোনো কাজ করতে হয়না। মহারাণী হয়ে থাকো।”

তাবাসসুম হেসে বলল—

“আর এখানে রাজকন্যা হয়ে থাকি।”

মুনায়া বেগম মুখ বাকিয়ে বললেন—

“আমি তো তোকে দিয়ে কাজ করাই। এত নাটক করতে হবেনা। দেখ সব ঠিক আছে কি না?”

“তুমি গুছিয়েছ মানে সব ঠিক আছে। এবার আমার কাছে এসে একটু বসো তো।”

মুনায়া বেগম মেয়ের কাছে এসে বসলেন। তাবসসুম মায়ের কোলে মাথা রাখলো। চোখ বুজে বলল—

“সত্যি এবার আর আমি বেশিদিন থাকবো না৷ দেখো।”

মুনায়া বেগম মেয়ের চুলে বিলি কেটে বললেন—

“থাকবি না কেন?”

“মন বলছে।”

“তোর মনের আবার কি হলো? এতদিন তো ফুফুর বাসা থেকে আসতেই চাইতি না।”

“কি জানি?”

তাবাসসুম আরও কিছুক্ষণ পড়ে রইল মায়ের কোলে। মুনায়া বেগম পরম যত্নে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন৷

—————

তাবাসসুম তখন রেডি হয়ে ছাদে এসেছে। প্রতিদিন এই টাইমটায় ও যখন ছাদে আসে, তার একটু পর রুশানও আসে। কেন আসে সে জানেনা। তবে প্রতিদিন রুশানের হাতে চায়ের কাপ দেখা যায়। আজকে আসবে কি নানকে জানে? তাবাসসুমের রেডি হয়ে ছাদে আসা, শুধুমাত্র রুমানের জন্যই। না চাইতেও মন কেন জানি একবার রুশানকে দেকতে চাইছে৷ এতে মুনকে তাবাসসুম বেশ শাসিয়েছে। কিন্তু মন কি আর মুখের কথা শোনে? তাই মনের কথায় স্বায় দিয়ে ছাদে চলে এসেছে।

শাফান ভাই আসবে আজকে তাকে নিয়ে যেতে। তার আসতে এখনো আধঘন্টার মতো দেরি আছে। আধঘন্টায় যদি রুশান আসে তাহলে দেখা হবে, নাহয় হবেনা। দেখা হবেনা ভাবতেই তাবাসসুমের মন হঠাৎ খারাপ হলো। আকাশপানে তাকালো সে। তখনি পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজ পেল তাবাসসুম।

“চলে যাচ্ছেন?”
·
·
·
চলবে……………………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp