"হেই মিস? ওপেন ইউর আইজ?"
বার কয়েক ডাকাডাকির পরেও তন্ময়ীর কোনো সাড়াশব্দ নেই। অরণ্যের পাশঘেঁষে অবস্থিত সেই মহাসড়কের ডানদিক টাতে জ্ঞান হারিয়ে অবচেতন হয়ে পড়ে আছে। অম্বর ফুঁড়ে তখনো ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষণ থামেনি। আকাশে কালো কাদম্বিনীর ঘনঘটা। আজ যেন একটু বেশিই মন ভার ওদের। প্রকৃতির বুকে বয়ে চলেছে ঝিরিঝিরি শীতল হাওয়া। নিস্তব্ধ নীরবতার মাঝে কেবল তরুর পাতা বেয়ে ঝরে পড়া পানির টপটপ শব্দ শোনা যাচ্ছে। গাছগুলো যেন বৃষ্টির ভারে আরও জড়ো হয়ে এসেছে। সকাল হলেও প্রকৃতির সর্বকোণে তমসা বিরাজমান। হাড়হিম করা থমথমে এক পরিবেশ।
তন্ময়ীকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে রৌহিশের কপালের ভাঁজ দৃঢ় হলো। এতক্ষণে বুঝেছে জ্ঞান নেই মেয়েটার। ডান হাঁটু মুড়ে সেভাবেই বসে রইল।ওর দুই পাশে দাঁড়ানো তিয়াশ আর রায়ান। ওরা দু'জন চোখ দুটো ছোট ছোট করে তন্ময়ীর দিকে তাকিয়ে আছে। একটু কাজে বেরিয়েছিল তিনজন। এই রাস্তা দিয়ে যেতে যেয়ে অমনিই রাস্তার পাশে একটা মানুষের অস্তিত্ব চোখের পর্দায় ভাসমান হয়। গাড়ি থামিয়ে নেমে এসে জায়গাটায় উপস্থিত হতেই বোঝে এটা কোনো মেয়ে। মুখে মাস্ক লাগানো কিন্তু একটু ভালোভাবে খেয়াল করতেই তিনজন'ই খুব সহজেই চিনে ফেলে মেয়েটাকে। কিন্তু এই মেয়ে এখানে কী করছে? তাও এই অবস্থাতে? এটাই সবার মস্তিষ্ক বুঝতে অপারগ।
"গাড়ি থেকে পানি নিয়ে এসো রায়ান।"
স্যারের গম্ভীর কণ্ঠের আদেশ শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাতেই ডানে মাথা নেড়ে দ্রুত গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল রায়ান। এতক্ষণে মুখ খুলল তিয়াশ,
"এই মেয়ের গায়ে কোনো জ্বীন, টিন আছে নাকি রে ব্রো? সবসময় এমন উদ্ভট জায়গায় ওকে পাওয়া যায় কেন?"
"কারণ ও পুরোটাই অদ্ভুত সত্ত্বার তৈরি।"
কথাটা বলেই এক চিলতে হাসল রৌহিশ। তিয়াশ কথাটার অর্থ ঠিক বুঝল না। ভ্রু কুঁচকাল। দৃষ্টিতে প্রশ্ন স্পষ্ট। তবে সেদিকে বিশেষ পাত্তা দিলো না রৌহিশ। ততক্ষণে পানির বোতল নিয়ে হাজির হয়েছে রায়ান। রৌহিশের দিকে এগিয়ে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। স্যার কী করবে সেটাই দেখার অপেক্ষায়।
রৌহিশ বোতলের ছিপি খুলে পানি ঢেলে কোনো প্রকার স্পর্শ ছাড়াই তন্ময়ীর কর্দমাক্ত হাত দুটো ধুয়ে দিলো। কপালটাও একইভাবে পরিষ্কার করে বোতলটা ফিরিয়ে দিলো রায়ানের কাছে। তিয়াশ, রায়ান হতভম্বের শীর্ষে! এটা কী হলো? ওরা তো ভেবেছিল পানি ঢেলে বোধহয় জ্ঞান ফিরিয়ে আনবে। এতো পুরোটাই উল্টো। পেটের মাঝে কথা চেপে রাখতে ব্যর্থ হলো তিয়াশ। হড়বড়িয়ে বলল,
"এত'ই যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ তাহলে কাদায় পড়ে থাকা মেয়ের সাথে পিরিত করতে এসেছিস কেন? এই রৌহিশ তুই এরকম মাইণ্ড নিয়ে বাসর করবি কীভাবে? দেখা যাচ্ছে এক রাতেই ভাবীকে একশবার গোসল করিয়ে ছাড়ছিস। আমার বড়ো চিন্তা হয় রে দোস্ত।" শেষের দিকে কণ্ঠস্বর একটু ভাবুক শোনাল। যেন বেচারা সত্যিই খুব চিন্তিত এই বিষয়ে।
"তোকে লাইভ ব্রডকাস্ট দেখিয়ে দিবো তখন।"
মুহূর্তেই বিষম খেয়ে বসল তিয়াশ। খুক খুক করে কাশতে লাগল। এই মুহূর্তে কী রিয়্যাকশন দেওয়া উচিত ঠিক বুঝতে পারল না। ফ্যালফ্যাল করে চেয়েই রইল। রায়ান ঠোঁট টিপে মিটিমিটি হাসছে। ওদের দিকে আর গুরুত্ব দিলো রৌহিশ। তন্ময়ীর কপালে আলতো করে হাত রাখল। পরপরই বাহুতে মৃদু নাড়া দিয়ে ডাকল,
"মিস তন্ময়ী? শুনছেন?"
কয়েক সেকেণ্ডের ব্যাবধানে তন্ময়ীর চোখের পাতা একটুখানি নড়ল। মিনিট পেরোতেই বন্ধ নেত্রপল্লব ফাঁকা হয়ে এলো। পিটপিট করে আঁখিজোড়া মেলে তাকাতেই ভয় পেয়ে গেল মেয়েটা। ঝাঁপসা চোখে তিনটা ছেলেকে দেখে ওই অবস্থাতেই ছিটকে দূরে সরে গেল। রাস্তার সাথে হাতের কনুইয়ে ঘর্ষণ লাগায় অনেকখানি অংশ ছিলে গেল তৎক্ষণাৎ। অ্যাশ কালারের শার্টের উপরেই রক্তের দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠল। সারা শরীর ব্যথায় জর্জরিত তার উপর আবার এমনটা হওয়ায় ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে সেভাবেই রাস্তার উপরেই মাথাটা রাখল। কিন্তু মাথার নিচে রাস্তার শক্ত পিচ নয় নরম একটা কিছু অনুভব হলো। চোখ দুটো খুলতেই সম্মুখে দৃশ্যমান হলো পরিচিত একটা মুখ। আটকে রাখা শ্বাস টুকু ফেলল তন্ময়ী। শান্ত হলো একটু। এখানে কীভাবে এলো? ও তো সেই গভীর অরণ্যের মাঝে ছিল। সবটা একটু একটু করে মনে করার প্রয়াস চালাল। স্বার্থক ও হলো। বুঝল এটা নিশ্চয় সেই শয়তানের কাজ। ওইদিকে আর ভাবল না। হঠাৎ কিছু একটা খেয়াল করতেই লোচয়দ্বয় দ্বপদ্বপ করে জ্বলে উঠল। ভঙ্গুর গলা অথচ কাঠিন্যতার সাথে বলল,
"দূরে থাকুন আমার থেকে। আমাকে স্পর্শ করার মতো দুঃসাহস করবেন না স্যার।"
মুখের কথা শেষ করেই শরীরের সাথে একপ্রকার জোর করেই উঠে বসল তন্ময়ী। রৌহিশ ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়াল। প্যান্টের পকেটে হাত রেখে শাণিত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। যেন তন্ময়ীর কোনো কথায় শোনেনি কিংবা শুনলেও সেইসব ওর কাছে গুরুত্বহীন। মেয়েটা ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছে। এই মানুষটাকে কেন যেন ওর একটুও সহ্য হয় না।
"সহ্য করে নেও মিস। নসিব বিশ্বাস করো তো? সেটা কখন কীভাবে বদলিয়ে যায় বলা তো যায় না।"
তন্ময়ী ভ্যাবাচ্যাকা খেল। মন পড়তে পারে নাকি এই মানুষটা? কীভাবে যেন মন, মস্তিষ্কের কথা সবটাই বুঝে ফেলে। এ তো মহা মুসিবত। মূল কথাটা ছেড়ে সামান্য একটা বিষয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। প্রশ্ন ছুঁড়ল,
"আপনি মন পড়তে পারেন?"
"জি, শুধু মেয়েদের মন পড়তে পারে ভাবী।"
রৌহিশ জবাব দেওয়ার আগেই ঝড়ের গতিতে চলার মুখটা খুলে ফেলল তিয়াশ। তন্ময়ীর কপালে এবার ভাঁজ বাড়ল। রৌহিশ রক্তচক্ষু দিয়ে তিয়াশের দিকে তাকাতেই আমতা আমতা করল, "ইয়ে মানে, ওই আর কি। সবাইকে ভাবী বলে অভ্যস্ত তো তাই আপনাকেও ভুলবশত বলে ফেলেছি। ডোন্ট মাইণ্ড ভাবী।"
রায়ান এবার কপাল চাপড়াল। এই ছেলের কপালে তো শনি ঘুরছে। তিয়াশের পিঠে চিমটি কেটে মুখটা কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করল, "স্যার, বারবার ভাবী বলা বন্ধ করুন। তাহলে রৌহিশ স্যার আপনাকে মেরে আপনার মাংশ দিয়ে ওনার বিয়েতে ইনভাইটেড সবাইকে খাওয়াবে।"
শুকনো ঢোক গিলল তিয়াশ। রৌহিশের দিকে তাকিয়ে আলাভোলা হাসল। চোখে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বোঝাল ও নির্দোষ। এমনটা করতে চাইনি। ওকে এবারের মতো ক্ষমা করা হোক। রৌহিশ সবটা দেখে নজর ফিরিয়ে নিলো। তন্ময়ীর দিকে দৃষ্টিপাত করল। ও ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। শরীরের পিছনে কাঁদা পানি লেগে অবস্থা খারাপ। চুলের অবস্থাও তেমন ভালো না। কেমন আঠালো হয়ে আছে। যত দ্রুত সম্ভব শাওয়ার নিতে হবে। রৌহিশের দিকে আড়চোখে তাকাতেই দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলল। কিন্তু সবসময়ের মতো আজও মণিজোড়া দেখার সৌভাগ্য হলো না। তা সানগ্লাসের আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে। ও আর একটা কথাও বলল না। উল্টো ঘুরে সামনের দিকে হাঁটা ধরল। আবারও শুনতে পেল তিয়াশের ব্যঙ্গাত্মক কণ্ঠস্বর,
"কারোর থেকে কোনো প্রকার সাহায্য পেলে তাকে কমপক্ষে একটা থ্যাংকস জানাতে হয়।"
"আপনারা সেটা ডিজার্ব করেন না।"
তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো তন্ময়ী। তবে হাঁটা থামাল না। পরপরই গম্ভীর শীতল পুরুষালী স্বরে পাল্টা প্রশ্ন ভেসে এলো,
"উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা একপ্রকার ভদ্রতা, ম্যানার্স। অ্যাম আই রাইট মিস?"
এমন কথায় না চাইতেও তন্ময়ীর পদযুগল থেমে গেল। কোনোভাবে কী ওর পারিবারিক শিক্ষার উপর আঙ্গুল তুলল? পিছু ফিরল ও। মুহূর্তেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল,
"ও সিরিয়াসলি? তো স্যার একটা মেয়েকে স্টক করা কতটা ভদ্রতার মধ্যে পড়ে?"
"প্রমাণ?"
"আপাতত নেই, যেদিন হাতে থাকবে সেদিন আপনি উপযুক্ত শিক্ষা পাবেন।"
সহজ-সরল স্বীকারোক্তি তন্ময়ীর। রৌহিশের অধরপল্লব একপাশে উচু হলো। বাঁকা হাসল,
"ও ইয়ার ওয়াক আপ। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো। তবে এতটুকু শিওরিটি দিতে পারি আমাকে নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি তোমার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।"
"থ্রেট দিচ্ছেন?"
"তোমার ছোট্ট সংকীর্ণ মস্তিষ্ক যেটা বুঝবে সেটাই।"
মুখের কথায় ইতি টেনে প্যান্টের পকেটে হাত রেখেই শিস বাজিয়ে নিজস্ব ভঙ্গিতে হেঁটে গাড়ির দিকে অগ্রসর হলো রৌহিশ। অপরপক্ষকে কিছু বলার সুযোগটুকুও দিলো না। তীব্র অপমানে মুখটা কঠিন হয়ে এলো তন্ময়ীর। জ্বলন্ত আঁখিযুগল নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। তিয়াশ, রায়ান ভেতরে ভেতরে বেশখানিকটা হতাশ হলো। এরকম ইগো নিয়ে ভালোবাসতে এসেছে এই পোলা! আশ্চর্য! তিয়াশ তন্ময়ীকে মানানোর বৃথা চেষ্টা করল,
"আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না। ও একটু এরকমই। স্ট্রেট ফরোয়ার্ড কথা বলতে পছন্দ করে।" পরপরই একটু লাজুক হাসল। আলগোছে মাথা চুলকাল, "আসলে ও বোঝাতে চেয়েছে আপনি ওকে নিয়ে বেশি ভাবলে প্রেমে পড়ে যেতে পারেন।"
কথাগুলো কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার মতো ছিল। তন্ময়ী দাঁতে দাঁত পিষল, "ননসেন্স, আই হেইট লাভ। ফা ক ইট।"
"ভুল বলছেন এবং করছেন। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে হলেও আপনাকে ভালোবাসার কাছে মাথানত করতেই হবে।"
তন্ময়ীর কপালের ভ্রু দ্বয় সমতল হয়ে এলো। শীতলতা খেলে গেল নয়ন জোড়ায়। মনে পড়ে গেল সেদিনের রাতের কথাগুলো। এরকম অদ্ভুত রকমের কথাও সেই রাতে কেউ একজন বলেছিল। এইজন্যই বুঝি এতক্ষণ কণ্ঠস্বরটা পরিচিত মনে হচ্ছিল। ও কিছু বলতে নিবে তার আগেই গাড়ির হর্নের শব্দ শোনা গেল। শব্দটা তিয়াশ, রায়ানকে গাড়িতে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওরা আর দাঁড়াল না। মুচকি হেসে চলে গেল। কিছু সেকেণ্ডের ব্যবধানে পাশ কাটিয়ে ঝড়ের গতিতে গাড়িটা প্রস্থান করল। তন্ময়ী ঘাড় বাঁকিয়ে সেদিকে চাইল। এলোমেলো বড়ো কালো ঘন শিরোজ মুখের অর্ধেকটা ঢেকে রেখেছে।দেখতে ভীষণ ভয়ংকর দেখাল ওকে। এমন রুপে দুটো চোখ নিঃশব্দে হাসল। মেয়েটাকে জ্বালাতে খারাপ লাগে না। বেশ এনজয় করে।
—————
পড়ন্ত বিকেল। একটা লেকের পাড়ে সবুজ ঘাসের উপর বসে আছে ক্লারা এবং মিরা। দু'জনের দৃষ্টি নিবদ্ধ লেকের স্বচ্ছ পানিতে। যেখানে গোধূলি লগ্নের লালচে আভার প্রতিবিম্ব দৃশ্যমান। মিরা দুইদিন আগে হসপিটাল থেকে রিলিজ পেয়েছে। এখন পুরোপুরি সুস্থ। বিগত কয়েকদিন তন্ময়ীর কোনো খোঁজ নেই। কল দিলে পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো সিম চেঞ্জ করেছে। কিছুক্ষণ আগেই তন্ময়ীদের বাড়ি থেকে ফিরেছে ওরা দু'জন। আরাধ্যা শেখের নিকট থেকে সবটা শুনতেই একটু অবাক হয়েছে। ওটা মেয়ে নাকি অন্যকিছু? এতো সাহস ওরে বাবা! মিরা ভেতর থেকে অনেকটা ঘাবড়ে আছে। তন্ময়ী কথা দিয়েছিল ওকে জানোয়ার গুলোকে প্রাপ্ত শাস্তি দিবে। আর আজ সকালেই জঙ্গলের পাশের নদীতে নৃশংস ভাবে খুবলে খাওয়া লাশ মিলেছে ওদের। মিরা লোকমুখে শুনেছে লাশ যারা দেখেছে তারা বলেছে, মৃতদেহ দেখেই মনে হচ্ছে কোনো হিংস্র পশু নিজেদের ক্ষুধা নিবারণ করেছে। শরীরের অর্ধেক অংশ নেই। জায়গায় জায়গায় ছেঁড়াফাটা। এমনকি মাংশও নেই কিছু জায়গায়। এর সাথে কোনোভাবে কি তন্ময়ী জড়িত? নাকি ঘটনা অন্যকিছু? এইসব কাউকে বলতেও পারছে না মিরা। মনের মাঝে ভীষণ অস্থিরতা অনুভব করছে। এখন কী করবে? তন্ময়ীর সাথে কথা বলা ভীষণ প্রয়োজন। কিন্তু কীভাবে যোগাযোগ করবে? ওর মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত, শূন্য হয়ে পড়েছে। কিছুই বুজতে পারছে না।
"তুই কি কোনোকিছু নিয়ে চিন্তিত বেইবি?"
ক্লারার কথায় ধ্যান চ্যুত হলো মিরা। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকাল। ক্লারার বাহুতে মাথা রাখল, "তনুর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে রে।"
"আরে চিইইল, ও যেই কাজে গেছে সেটা সেরেই চলে আসবে।"
মিরার ভ্রু যুগল গুটিয়ে এলো। সরু চোখে ক্লারার দিকে তাকাল, "কাজ বলতে? ও না ঘুরতে গেছে? তোকে কে বলল এই কথা?"
"আরে, আরে কাজ বলতে ওই ঘুরা ঘুরির কথায় বুঝিয়েছি। ওর মনমেজাজ ভালো হলে ঠিক ফিরে আসবে।"
"ও তাই বল।"
"হুঁ।"
"ওকে নিয়ে আজকাল বড়ো চিন্তা হয়। কেমন যেন বদলিয়ে গেছে। মুখটা দেখলেই মায়া লাগে। মনে হয় ও একদণ্ড শান্তি পায় না।"
"আরে আমি আছি না। ওর কখনো কোনো সমস্যা হবে না। গায়ে একটা ফুলের টোকা ও লাগতে দিবো না। চিইল বেইবি।"
"এসেছে আমার মহারানী। তা আপনি কী করবেন বলেন তো? গোপন কোনো পাওয়ার টাওয়ার আছে নাকি ম্যাম?" কথাটা বলেই হেসে ফেলল মিরা। ক্লারাও মুচকি হাসল, "থাকতেও পারে। তোকে বলব নাকি?"
"যা, যা বলিস না। মানুষ হয়ে তুমি স্বপ্ন দেখছ রুপকথার গল্পের নায়িকাদের মতো পাওয়ার আছে তোমার।"
মিরা হাসছে তখনো। ক্লারা ওর হাসির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইস! কতদিন পরে মেয়েটা হাসছে। এতো বিষাদের মাঝে মনটা ভালো লাগছে এখন। বিড়বিড় করে আওড়াল, "এই জন্যই তোকে সবাই বোকা বলে। চোখের সামনে সবটা থেকেও তুই বরাবরের মতোই উপলব্ধি করতে ব্যর্থ।"
গলার আওয়াজটা এতটাই নিচু ছিল যে কথাগুলো মিরার কান অবধি পৌঁছাল না। সে একবার হাসতে শুরু করলে আর থামাথামির নাম থাকে না। আজ আর ক্লারা ওকে থামাল না। মনখুলে একটু হাসুক মেয়েটা। এতে যে ওর মনখারাপ ও আস্তে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
·
·
·
চলবে.........................................................................