ধরাতল সিক্ত। অম্বরে দলে দলে ভেসে চলেছে কালো কুচকুচে নীরদ। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে সকাল থেকেই। একটা লেকের পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা রাস্তার উপর দুটো অবয়ব দৃশ্যমান। পিছনে থাকা দুটো বাইক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মুছে চকচক করছে। কমপক্ষে বিশ মিনিট ধরে এভাবেই নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে তারা। জনমানবশূন্য জায়গাটা। থেকে থেকে কিছু উদ্ভট আওয়াজ এবং সুউচ্চ গাছ বেয়ে লেকের পানিতে চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির পানির টুপটাপ শব্দ ব্যতীত কোনো শব্দের আনাগোনা নেই। অদ্ভুত রহস্যময় মনোরম একটা পরিবেশ। দুজনের শরীরেই রেইন কোর্ট জড়ানো তবে হুডি টাইপের। নিচে নেমেছে হাঁটু অবধি। আচ্ছাদিত করা সম্পূর্ণ শরীর। বেলা গড়িয়ে এখন বিকেল অথচ প্রকৃতির মন ভার দেখে মনে হচ্ছে মধ্যনিশীথ। চারপাশে চাপ ধরে আছে অদৃশ্য এক কালো শক্তি। অন্ধকারের মাঝে খুইয়ে বসেছে নারী মন। দৃষ্টি নিবদ্ধ আঁধার গলিয়ে লেকের ওপারে। যেখানে বহু গাছের মেলবন্ধন ব্যতীত কিছুই নেই। সুনসান নীরবতায় মোড়ানো জায়গাটাতে অকস্মাৎ বজ্রপাতের ন্যায় আঘাত হানল নারীমুখ থেকে নিঃসৃত একটা বাক্য,
"মিস্টার ডুবইস রৌহিশ রৌনক ভেঙে দিন এই বিয়ে।"
দূরকাশে নিবিষ্ট সানগ্লাসের আড়ালে ঢাকা থাকা চোখদুটো ঘুরল পাশে দাঁড়ানো নারী অবয়বের দিকে। কিছুক্ষণ নীরবে চোখের তীক্ষ্ণ চাহনিতে পরখ করল সাহসী চিত্তের মেয়েটাকে। অধরপল্লব কিঞ্চিত উঁচু হলো। সবসময়ের মতো প্রকৃতির গম্ভীরতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে ভেসে এলো পুরুষালী শীতল কণ্ঠের ত্যাড়া জবাব,
"যদি না ভাঙি মিস তন্ময়ী? কী করবে?"
এটা ঠিক জবাব ছিল না। পাল্টা প্রশ্ন ছিল। তন্ময়ী দৃষ্টি সরাল না। এমন উত্তরই ও আশা করেছিল। লেকের ওপারেই তাকিয়ে রইল। কিছু মিনিট চুপ থেকে রৌহিশের মতো করেই বলল,
"তাহলে ছোট্ট একজীবনে আমার কাছ থেকে ঘৃণা ব্যতীত কিছুই পাবেন না।"
"আমি কখন বললাম ভালোবাসা চাই আমি?"
"তাহলে আমাকে বিয়ে করার কারণ কী?"
"তুমি বিয়েতে রাজি কেন হলে?"
"আমি মনের বিরুদ্ধে যেয়ে রাজি হয়েছি। রহস্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে চাই আমি। এবং একটু শান্তি চাই। কিন্তু এভাবে কিছুই হবে না।" কঠিন গলাটা শেষের দিকে কেমন যেন মিইয়ে এলো। রৌহিশ এই উত্তরের বিপরীতে মৌনতা বেছে নিলো। কেন যেন কিছুই বলতে ইচ্ছে হলো না। অপরপক্ষকে চুপ থাকতে দেখে তন্ময়ী সেভাবেই মুখ খুলল,
"আপনার প্রকৃত পরিচয় কী?
"ডুবইস রৌহিশ রৌনক।"
তৎক্ষণাৎ গুরুগম্ভীর জবাব এলো রৌহিশের কাছ থেকে। তন্ময়ী মৃদু শব্দ তুলে হাসল, "এতো বড়ো মিথ্যে সইবে না।"
"তুমি সয়ে নিও।"
"ইচ্ছা নেই।"
"তাহলে আমি সইয়ে দিবো, নো প্রবলেম।"
"তবুও এই বিয়ে ভাঙবেন না?"
"নেভার।"
"আমাদের কখনো একটা সংসার হবে না রৌহিশ রৌনক।"
"সবটা সময় বলে দিবে।"
"আমি সময়ের বিপরীতে চলা এক নারী।"
"অসম্ভব বলে কোনো শব্দ পৃথিবীতে নেই।"
এই পর্যায়ে তন্ময়ীর বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। মানসপটে ভাসল মিরার নিষ্পাপ মুখখানি। মেয়েটা এতক্ষণে এই সংবাদ নিশ্চয় শুনেছে। কী জবাব দিবে ওকে? কোন মুখে দাঁড়াবে ওর সামনে? যাদের জন্য ও নতুন করে বাঁচতে শিখেছে, যাদের ছায়ায় ও প্রাণভরে শ্বাস নেয় তাদের কীভাবে ঠকাবে? কেমন যেন মস্তিষ্ক শূন্য অনুভূত হলো। তৎক্ষণাৎ বলে বসল,
"মিরা আপনাকে খুব ভালোবাসে। ওর ভালোবাসা গ্রহণ করুন। আমি মিরাকে ঠকাতে পারব না। আমি অভিশপ্ত। তন্ময়ীরা কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারে না। ওদের একটা সংসার হয় না।"
"তুমি চাইলেই হবে।"
রৌহিশের গম্ভীর কণ্ঠস্বর অধিকতর গম্ভীর শোনাল। এমনভাবে প্রত্যুত্তর করল যেন আগের কিছুই শোনেনি। তন্ময়ীর ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুন এবার স্ফুলিঙ্গের ন্যায় বাইরে বেরিয়ে এলো,
"আপনার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই আমার জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। আপনি আমার জন্য অভিশাপ।"
"মাত্রই তো বললে তুমিও অভিশপ্ত। তাহলে? অভিশাপে জর্জরিত দুটো মানব এক হতেই পারে।"
"যেই সম্পর্কে কোনো ভালোবাসা নেই, কোনো ভবিষ্যৎ নেই, কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেই সম্পর্কে আমাকে বাধতে চাইছেন কেন?"
"সব প্রশ্নের উত্তর হয় না, কিংবা জানতে নেই।"
"আমি জানতে চাই।"
"অহেতুক জেদ ছেড়ে দাও।"
"আপনার ব্যবহার অদ্ভুত! আপনি মানুষ কি-না আমার বড়ো সন্দেহ হয়।"
"তুমি মানুষ সেটার নিশ্চয়তা কোথায়?"
আরও কিছু বলতে নিচ্ছিল তন্ময়ী কিন্তু বলতে পারল না। গলায় কাঁটার মতো আটকে গেল। এতক্ষণে দৃষ্টি চ্যুত হলো মেয়েটা। পাশে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে তৎক্ষণাৎ তাকাল। দৃষ্টিতে উঁকি দিচ্ছে কয়েকশ প্রশ্ন। অথচ ওর দিকে তাকানোর প্রয়োজনবোধ টুকু করল না রৌহিশ। বাইকে উঠে বসল। স্টার্ট দিতে নিলেই শুনতে পেল তন্ময়ীর করা আরও একটা প্রশ্ন,
"আমি কে? আমার সম্পর্কে কতটুকু অবগত আপনি? আমার পরিচয় কী?"
এই প্রশ্নের উত্তরস্বরুপ ঘাড়টা কটমট শব্দ তুলে পিছু ঘুরল। অধরে লেপ্টে আছে রহস্যময় কুটিল হাসি। প্রসঙ্গ পাল্টে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
"ডু ইউ ওয়ানা গো অন আ লং ড্রাইভ উইদ মি, মিস তন্ময়ী?"
পরপরই ভ্রু তুলে ইশারায় বাইকের পিছনের সিটটা দেখাল। কথা ঘোরানোতে ভীষণ বিরক্ত হলো তন্ময়ী। তার উপর এমন প্রশ্ন! রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে বিড়বিড় করল, "বিচ!"
"উঁহু, ইউর উডবি।"
পরক্ষণেই চোখের পলকে বাইকের অস্তিত্ব চোখের সামনে থেকে হারিয়ে গেল। ঝড়ের গতিতে তীব্র আওয়াজে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করল। কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে থেকে তন্ময়ী নিজের বাইকটার সাথে হেলান দিয়ে দাড়াল। দুপুরে বাবার থেকেই রৌহিশের নম্বরটা নিয়েছিল তন্ময়ী। তারপরেই একটু নীরবে নিভৃতে কথা বলতে চেয়েছিল। অতঃপর এখানে আসা। মেয়েটা প্রথম থেকেই সবকিছুর হিসাব মেলানোর চেষ্টা করল। একটু বুঝল তো একটু রহস্য বাড়ল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবা কেন লুকোচুরি বেছে নিলো সেটাই বুঝতে অপারগ তন্ময়ী। অসুস্থ বাবাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই না ও। পাছে যদি আবার খারাপ কিছু ঘটে যায়? ওর কিছু প্রয়োজন নেই। বাবা পাশে থাকলে কয়েক জনম এমন মানসিক অশান্তি নিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারবে। কারণ দিন শেষে ওর শান্তির জায়গা ওর বাবাকে কাছে তো পাবে! ওর বিশ্বাস সময় হলে বাবা নিজে থেকেই সবটা ঠিক বলবে।
এইসব ভাবতে ভাবতেই ভীষণ ক্লান্ত অনুভব করল মেয়েটা। চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে। এই প্রথম নিজের নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে ও দোটানায় ভুগছে। মনে হচ্ছে বিয়েটা ওর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে। ওর চোখের আড়ালে সবাই মিলে দাবার আসর বসিয়েছে। যার মেইন গুটি কেবল তন্ময়ী। কিন্তু কে কে এতে সংযুক্ত ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝেই বাবার বলা একটা কথা স্মরণ হলো,
"জীবন হলো যুদ্ধক্ষেত্র আম্মা। একজন মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে ঠিক ততদিনই নিজেকে ভালো রাখতে যুদ্ধ করতে হয়। ভালো রাখার সবটুকু প্রয়াস চালাতে হয় আম্মা। প্রয়োজনে নিজেকে ভালো রাখতে পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে নীরব যুদ্ধে নামবে। জয় তোমারই হবে। স্বার্থপর পৃথিবীতে নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব কেবল নিজেকেই নিতে হয়। তুমি ঠিক নিজেকে ভালো রাখতে পারবে আম্মা।"
তন্ময়ী আঁখি জোড়া বুঁজে নিলো। মাথায় থাকা হুডির টুপিটা ফেলে দিলো। আসমান ফুঁড়ে ঝরে পড়া বিন্দু বিন্দু পানির কণা আনন ভিজিয়ে দিলো মুহুর্তেই। বিড়বিড় করে আওড়াল,
"আমাকে ভালো থাকতে হবে। আমি পারতেই হবে। এর শেষ আমি দেখে ছাড়ব।"
তৎক্ষণাৎ ফোন ম্যাসেজের শব্দে তন্ময়ী বন্ধ নেত্র দুটো মেলে তাকাল। বৃষ্টি থেকে একটু আড়াল করে ফোনটা বের করল। যদিও ওয়াটার প্রুফ তবুও নিজের সাবধানতা ওই আর কি। ফোনটা অন করতেই স্ক্রিনে অর্ধপরিচিত একটা নম্বর ভাসল। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এসেছে। নেট অন ছিল বিধায় নোটিফিকেশন পেয়েছে। নোটিফিকেশনে চাপ দিতেই চোখের পর্দায় ভাসল ছোট্ট কয়েক লাইনের লেখা একটা মেসেজ,
"আগামী সপ্তাহে বিয়ের ডেট ফিক্সড হচ্ছে। হাইপার হবে না। টেক ইউর টাইম মিস। অনেক সময় পাচ্ছ।"
অনেক সময়? আজ বুধবার, একটা সপ্তাহ সময় ও হাতে নেই। তন্ময়ীর মন চাইল ফোনটা আছড়ে ভাঙতে। কিন্তু ভাঙল না। রাগে থরথর করে কাঁপছে কায়া। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিয়ে তো তন্ময়ী করবে তবে সেটা ঠিক বিয়ে না। অপরপক্ষের মতোই নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে!
—————
তন্ময়ী যখন পার্কিং এরিয়াতে বাইক রেখে এসে হসপিটালের আঙ্গিনায় পদযুগল রাখল তখন ঘড়ির কাঁটা আটটার ঘরে। বৃষ্টি থামেনি। সেভাবেই চলমান। হঠাৎ করেই হীম শীতল এক দমকা হাওয়া শরীর ছুঁয়ে গেল। থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল ও। শাণিত দৃষ্টি চারপাশে ভাসমান হলো। কিন্তু তেমন কিছুই চোখে পড়ল না। এতো অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও মনের ভুল ভেবে নিলো মেয়েটা। আবারও সামনে অগ্রসর হতে যেয়েও কী ভেবে যেন কিছু দূরের সুউচ্চ একটা গাছের দিকে তাকাল। মনে হলো গাছের পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ও সেদিকে এগোতে নিলেই হঠাৎ কোথায় থেকে ছুটে এসে সামনে দাড়াল মিরা। ওর মলিন মুখটা চোখের পর্দায় ভাসতেই তময়ীর চোখ দুটোতে শীতলতা খেলে গেল। যা ভেবেছিল ঠিক তাই। মিরার রক্তাভ ফুলো লোচন জোড়া তন্ময়ীর দিকেই নিবদ্ধ। মেয়েটা যে খুব কেঁদেছে সেটার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ওই নিষ্পাপ চোখ দুটো। তন্ময়ীর বক্ষ পিঞ্জর তীব্র যন্ত্রণার কবলে পড়ল। যন্ত্রনাগুলো বিষের ন্যায় প্রবাহিত হলো প্রতিটা শিরা উপশিরায়। কোনো কথা ছাড়াই ওকে জড়িয়ে ধরল মিরা। তন্ময়ীকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে বলল,
"কনগ্রেটস সোনা।"
তন্ময়ী ঈষৎ চমকাল। তবে মিরাকে বুঝতে দিলো না। জিজ্ঞাসা করল, "শুধু এটা জানাতেই এই তীব্র বর্ষণ মাথায় করে ভিজে এখানে এসেছিস?"
"হুঁ, নিউজটা শুনে খুব খুশি হয়েছি আমি। তোর থেকে পাওয়া বেস্ট সারপ্রাইজ ছিল এটা।"
"কতটুকু খুশি হয়েছিস?"
"অনেক।"
"তোর ভালোবাসার মানুষটা তো আমার হচ্ছে মিরু। আমি কেড়ে নিচ্ছি তোর থেকে। আমাকে অভিশাপ দিবি না?"
তন্ময়ীর গলাটা কাঁপছে। মিরা ওকে ছেড়ে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হেসে ফেলল,
"ধূর বোকা মেয়ে! তোকে অভিশাপ কেন দিবো আমি? তুই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। তোর জন্য এমন শত ভালোবাসা হাসিমুখে ত্যাগ করতে পারি আমি। আমাদের বন্ধুত্বের কাছে এইসব ঠুনকো সোনা।"
তন্ময়ী এবার অবাক হলো বৈকি! বলল, "এটা তোর মনের কথা না। আমাকে ভুলভাল বোঝানোর মতো পাগলামী করিস না।"
এবার মিরাকে একটু ভাবুক দেখাল। কিয়ৎসময় পেরোল। রয়ে সয়ে কম্পিত গলায় বলল, "যেখানে নিজের অধিকার নেই সেখানে আশা রাখা উচিত না তনু।"
"তুই চাইলে আমাকে শাস্তি দিতে পারিস। আমি মাথা পেতে নেবো।"
"তার আগে আমার মৃত্যু হোক। তুই আর ক্লারা এই আমিটা ভালো থাকার কারণ। তোদের আঘাত করার আগে আমিই ম রে যাব।"
তন্ময়ী কথা ঘোরাল," অনেক ভিজেছিস মিরু। হসপিটালের ভেতরে চল। ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো। তখন সমস্যা হবে।"
"এখন না। মা বাসায় একা আছে। আমাকে এখন যেতে হবে। আচ্ছা থাক তুই।" কথাটা বলেই সামনে এগোল মিরা।
"একা যেতে পারবি? সমস্যা হবে না? দাড়া আমি আসছি সাথে।"
তন্ময়ী সামনে এগোতে নিলেই মিরা তৎক্ষণাৎ বলল, "প্রয়োজন নেই তনু। নিঃসঙ্গ জীবনে আর কারোর সঙ্গ চাই না আমি। এখন থেকে তো একাই বাঁচতে হবে। একা চলার অভ্যাস গড়ে তুলি। এটাই উত্তম আমার জন্য।"
"মনের ভার কমাতে এসেছিলিস অথচ সেটা তো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিলাম মিরু। আমাকে ক্ষমা করিস।"
তন্ময়ী কথাটা বলেই উল্টো ঘুরে হাঁটা ধরল। মিরা এইবার থামল। ঘাড় ঘুরিয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকাল। চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল, "তোকে সুখী দেখতে চাই আমি। তোর জন্য সব কষ্ট সয়ে নিবো তবুও তুই ভালো থাক।"
পরপরই ফুঁপিয়ে উঠল। এতগুলো বছর ধরে করা নিজের পাগলামীর কথা স্মরণ হলো। কীভাবে ফেবু, ইন্সটা সহ সব জায়গায় মানুষটাকে স্টক করে গেছে পাগলের মতো। যখন পাওয়ার একটা আশা দেখল তখনই একটা দমকা ঝড়ো হাওয়ায় সবটা এলোমেলো হয়ে গেল। ভুলটা ওর নিজেরই। ম্লান হাসল,
"এক জীবনে আমি তন্ময়ী হয়ে জন্মাব। তখন ঠিক আপনাকে নিজের করে পাবো রৌহিশ রৌনক। ততদিন আপনি আমার বুকের বাম পাশের সুক্ষ্ম ব্যথা হয়ে রয়ে যাবেন।"
মুখের কথা শেষ করে শ্লথ গতিতে হেটে হসপিটাল এরিয়া ছেড়ে আসে মিরা। রাস্তায় উঠে হেঁটে কিছুদূর যেতেই পিছন থেকে মুখের উপর পাঁচ আঙুলের চাপ অনুভব করে মেয়েটা। অস্ফুট স্বরে গুঙিয়ে ওঠে। নিজেকে বাঁচাতে ধস্তাধস্তি শুরু করে। কিন্তু আফসোস! কিছু বুঝে ওঠার আগেই যা ঘটার ঘটে যায়। হারিয়ে যায় মিরার অস্তিত্ব। রাস্তার একপাশে অযত্নে পড়ে রয় কেবল হাতে থাকা ঘড়ি খানা। যেটা তন্ময়ী নিজে কিনে দিয়েছিল ওকে। তবে কি একটা সুন্দর, নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সমাপ্তি এখানেই ঘটল? পশুর হিংস্রতার কাছে মায়া, ভালোবাসা বড়ো তুচ্ছ!
·
·
·
চলবে.................................................................................