কলরব পুরোটা বিকেল ভাবতে লাগল নিহিনকে কি জানানো উচিত এই লোকটার আসার কথা? নিহিন যা বলতে চেয়েছিল তাও কি জেনে নেয়া উচিত ভবিষ্যতের সুখ শান্তির জন্য? কিন্তু এখন জানতে চাইলে নিহিন ভুল বোঝে যদি? কিন্তু নিহিনের বাচ্চার ব্যাপারে তো ক্লিয়ার হওয়া জরুরি। সে যদি নিহিনের কাছে থাকে তাহলে কল্প কি তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে? নিহিনদের বাসায় সেদিন প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল সেদিন সেখানে দুটো বাচ্চা দেখেছিল। কিন্তু তারা তো মোহনা আপুর বাচ্চা। তাহলে কি বাচ্চা জিকোর কাছে থাকে। ভবিষ্যতে কি কখনো নিহিনের কাছে থাকতে চাইবে। আসলে নিহিনের বাচ্চা থাকলেও সেটা কোনো সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে কল্প সহজেই অন্য বাচ্চাদের সাথে মানিয়ে নিতে পারে না। কি করবে এখন? নিহিনদের বাসায় এত প্রশ্নের তাড়নায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল কলরবের। কিন্তু নিজের অজান্তেই সবকিছু সহজ করে দিলো নিহিন। কলরব বাসায় গিয়ে দেখে নিহিন এসেছে।
নিহিন কলরবের ঘরে রকিং চেয়ারে বসে গল্পের বই পড়ছিল। কলরব ঘরে ঢুকতেই নিহিন ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। এ হাসিটা দেখে কলরবের সারাদিনের ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা সব দূর হয়ে গেল। কলরব হেসে বলল,
“তুমি!”
নিহিন হেসে উত্তর দিলো,
“একজনের আবদার রাখতে এলাম!”
“কার?”
“আমার ছেলের। বিকেলে ফোন করে বলল মা তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। যেদিন থেকে ছেলেটা আমাকে মা বলতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই আমি আর ওর কথা ফেলতে পারি না। মা কি সন্তানের কথা ফেলতে পারে? তাই ক্লাস শেষ করে সোজা এখানে চলে এসেছি।”
কলরব নিহিনের মধ্যে একজন পরিপূর্ণ মাকে দেখছিল। ব্যাগ রেখে স্যুট খুলতে খুলতে কলরব বলল,
“তা তোমার ছেলে কোথায় এখন?”
“পড়তে বসেছে, এই কয়েক মিনিট আগে ওর টিচার এসেছে। আমি তোমার সাথে দেখা করে যাব বলে অপেক্ষা করছিলাম।”
“খুব ভালো করেছ। তাছাড়া আমি থাকতে তুমি একা কেন যাবে?” এ কথা বলে নিহিনের চেয়ারের মুখোমুখি বিছানায় বসলো কলরব। তারপর দুহাতে নিহিনের একটা হাত ধরে বলল,
“পরি আমি কিছুক্ষণ পর তোমাকে ফোন করতাম। ভালো হয়েছে দেখা হয়ে গেল।”
“কী হয়েছে?”
নিহিন সোজা হয়ে বসলো। কলরব বলল,
“তেমন কিছু না। তবে আমার ব্যাপারটা তোমাকে জানানো উচিত।”
“বলো।”
“আজকে জিকো বলে একটা লোক আমার সাথে দেখা করতে অফিসে এসেছিল।”
নিহিনের বুক কেঁপে উঠল। দুদিন ধরে যে ভয় করছিল তাই হলো তাহলে! কলরব বলল,
“লোকটা বলছিল সে তোমার এক্স হাজব্যান্ড।”
“কেন এসেছিল? কী বলেছে সে?”
“তেমন কিছু নয়। তবে মনে হচ্ছে সে আমাদের বিয়ে ভাঙতে চাচ্ছে।”
নিহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমার মনে হচ্ছিল সে তোমার কাছে যাবে। দুদিন ধরে আমাকে অনেক হুমকি ধামকি দিচ্ছিল।”
“কীসের হুমকি? আর তার কথা শুনেই তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন? কী করবে সে?”
“কলরব প্লিজ তুমি বিয়ের আগেই আমার অতীতটা জেনে নাও। নাহলে আমি কিছুতেই শান্তি পাব না। ওই লোকটার কাছ থেকে শোনার থেকে আমার কাছ থেকে শোনা ভালো। কারণ সে যখন বলবে কখনোই পুরোটা বলবে না। উলটো আরো অনেক রঙচঙ মিশিয়ে বলবে!”
“আচ্ছা তুমি এত দুশ্চিন্তা কেন করছো? এসব তো পরেও জানা যাবে তাই না?”
“না প্লিজ। তুমি প্রথমে শুনবে না বলেছিলে আমি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু লোকটা যখন তোমার অফিস পর্যন্ত চলে গেছে এখন তো আমার সবটা তোমাকে জানাতেই হবে। নাহলে এ বিয়ে হবে না।”
কলরব নিহিনের হাতের উলটোপিঠে চুমু দিয়ে বলল,
“এমনভাবে বলো না পরি। অনেক কষ্টের পর তোমাকে পেতে যাচ্ছি।”
নিহিন চুপ, শক্ত হয়ে বসে রইল। কলরব বলল,
“আচ্ছা বলো।”
নিহিন কলরবের দিকে নয়। মেঝের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করল,
“আমার বিয়ে হয়েছিল কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময়। জিকো অনেক বড়লোকের ছেলে ছিল। টাকাপয়সার অভাব ছিল না। কাজকর্ম করতে হতো না। উনি সারাদিন ঘুরে বেড়াত আর নেশা করত। ওই বাড়িতে আমি একরকম বন্দি জীবনযাপন করতাম। বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিল। কলেজে যেতে দিত না। ফোন ব্যবহার করতে দিত না। জিকো ছাড়া বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগেরও আর কোনো মাধ্যম ছিল না আমার। পরীক্ষার সময়গুলোতে বাবা জোর করে আমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসত। পরীক্ষা শেষ হতেই জিকো আবার ওনাদের বাসায় নিয়ে যেত। আমাকে ছাড়া লোকটা পাগল হয়ে যেত। আমার পরীক্ষা কখনোই ভালো হতো না। রেজাল্টও ভালো হতো না। কোনোরকমে পাশ করতাম। এইচএসসি পাশ করার পর ওরা বলল আর পড়াবে না। আসলে জিকোর সাথে আমার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম ছিল, সব স্বামী-স্ত্রীর মতো না। মানে আমি ওনার সাথে সহজ হতে পারতাম না। আপনি আপনি করে বলতাম। প্রথম রাত থেকেই আমি ওনাকে অনেক ভয় পেতাম। এজন্য দূরে দূরে থাকতাম। এটার অবশ্য কারণ ছিল। মানে.. আমি.. আসলে..”
নিহিন আমতা আমতা করছে বলে কলরব বলল,
“তুমি যেসব বলতে অস্বস্তিবোধ করছো সেসব স্কিপ করো না পরি?”
“না এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বলতে হবে।”
কলরব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আচ্ছা বলো।”
নিহিন পাশে রাখা পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে আবার বলতে শুরু করল,
“প্রথম রাত থেকেই সে আমার ওপর খুব জবরদস্তি করেছে। আমি কী চাই কী চাই না, সেসব ভাবার প্রয়োজন মনে করেনি। আর প্রথম রাতেই জলন্ত সিগারেট নিভিয়েছিল আমার শরীরে। ভয়টা তখনই ঢুকে গিয়েছিল!”
“শিট!”
“আমার সারা শরীরে সিগারেটের পোড়া দাগ পাবে। দাগ পাবে আরো অনেক অত্যাচারের।”
“প্রতিবাদ করোনি কখনো?”
“প্রতিবাদ করতে জানতাম না। তুমি তো জানোই আমি কেমন ছিলাম। তুমি চলে যাওয়ার পরের বছরই তো বিয়ে হলো। এক বছরেই তো আমি আর বড় হয়ে যাইনি। আর ওর বাড়িতে যাওয়ার পর বড় হওয়ার সুযোগই মেলেনি আর!”
“আংকেলকে কখনো বলোনি এসব কথা?”
“বাবাকে বলতে লজ্জা লাগত। আর মা তো আমার বিয়ের কয়েক মাস পরেই অসুস্থ্য হয়ে মারা গেলেন। বলার মতো ছিল আর মোহনা আপু। ও তো তখন দুলাভাইয়ের সাথে দেশের বাইরে থাকত। বাবাও কখনো কিছু বুঝতে পারতেন না। আসলে বাবার তো দোষ না। জিকো ওনার সামনে একদম অন্যরকম ভালো মানুষটা সেজে থাকত যে সে আমার সাথে এরকম করত এটা বাবা বললেও বিশ্বাস করতে পারতেন না।”
“অবিশ্বাসের কী আছে? তুমি তোমার শরীরের মারের দাগ দেখাতে পারতে না?”
“বাবাকে দেখবো কী করে?”
“কেন?”
“আমার লজ্জা লাগত। ছোটো ছিলাম তো! আমি খুব কনফিউজড থাকতাম কী করব সে ব্যাপারে।”
কলরব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আচ্ছা লোকটা তোমাকে মারতো কেন?”
“সরাসরি মারত না কখনো। অত্যাচার করত। এই যেমন শরীরের মধ্যে সিগারেট নেভাতো, কামড়াতো, গরম চা ছুড়ে মারতো। জোর করে নেশা করাতো। এরকম আরো অনেক কিছুই।”
“নেশা বলতে?”
“মদ, গাঁজা, ইয়াবা, সিসা, হেরোইন, কোকেন, এলএসডি।”
“এলএসডি পর্যন্ত!”
“হ্যাঁ। প্রথম প্রথম তো আমি এসব সহ্য করতে পারতাম না। কিন্তু ওর সাথে এসব নেশা না করলে ওর অত্যাচারের মাত্রা ভয়ংকরভাবে বেড়ে যেত। পরবর্তীতে আমিও আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।”
“পরে ছাড়লে কীভাবে এসব? নেশা ছাড়া তো অনেক মুশকিলের ব্যাপার।”
“ডিভোর্সের পর রিহ্যাবে ছিলাম কয়েকমাস।”
“আচ্ছা তারপর?”
“যখন আমাদের বিয়ের বয়স একবছর তখন আমি প্রথমবার প্রেগন্যান্ট হলাম। চেকআপের কথা বলে ওনার বন্ধুর ক্লিনিকে নিয়ে অ্যাবরশন করাল। ওনার অত্যাচার, বন্দি জীবন, প্রথম বাচ্চা হারানোর কষ্ট সব মিলিয়ে এরপর আমি এত বেশি ফ্রাস্টেটেড হয়ে গেলাম যে সুইসাইড এটেম্পট নিলাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় বেঁচে গেলাম।”
“ভাগ্য ভালো ছিল পরি। নাহয় আজ আমরা এক হতাম কীভাবে?”
নিহিন হাসল। আর তখনই কলরব খেয়াল করল নিহিন কাঁদছে। কলরব বলল,
“কাঁদছ কেন? আরে পাগল যা গেছে তা তো গেছেই। যা আছে তাই নিয়ে ভাবো না। একটা বাচ্চাকে হারিয়েছ কিন্তু কল্পর মতো আরেকটা বাচ্চার মা তো তুমি হতে পেরেছ!”
নিহিন কান্নায় একদম ভেঙে পড়ল,
“আমি মা হয়েছিলাম! আমার একটা পুতুলের মতো মেয়ে ছিল!” কলরব চুপ করে রইল। কী বলা উচিত এ মুহূর্তে বুঝতে পারছিল না। নিহিন কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“বাচ্চা অ্যাবরশনের পর কিছুদিন আমি উন্মাদের মতো ছিলাম। আবার যখন প্রেগন্যান্ট হলাম তখন আমি বাবার বাসায় চলে আসতে চেয়েছিলাম। জিকো আসতে দেয়নি। হাতে পায়ে ধরে রেখেছে। কথা দিয়েছে এবার আমার বাচ্চার আর কোনো ক্ষতি করবে না। সে কথা রেখেছিল। একটা পুতুল এলো আমার কোলজুড়ে। আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেল। আমার মনে হলো এই বাচ্চাটার জন্য আমি আবার বাঁচব। তখন জিকোর অত্যাচারও আমি ভুলে যেতে পারতাম মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে।”
“তারপর?”
“মেয়েটার যখন ১১ মাস বয়স তখন..”
নিহিন কাঁদতে কাঁদতে আর কথা বলতে পারছিল না। কলরব নিহিনকে ধরে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরল। নিহিন কলরবের বুকে পড়ে খুব কাঁদল। কান্নাটা একটু কমে এলে বলল,
“মেয়েটা নিউমোনিয়া হয়ে মারা যায়। জিকোকে এতবার বলেছি ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। সে শোনেনি। সে নেশার ঘোরে পড়ে থাকত সারাদিন সারারাত! বলত সামান্য ঠাণ্ডা জ্বর এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। আমি নিজেও কিছু চিনতাম না যে একা নিয়ে যাব। শেষে জিকোর ফোন চুরি করে বাবার সাথে যোগাযোগ করলাম। বাবা এসে হসপিটালে নিয়ে গেল। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটা চলেই গেল। এ ঘটনার পর আমি আর জিকোদের বাড়িতে যাইনি। তখনই বাবাকে বললাম আমাকে কোনো রিহ্যাবে পাঠাতে। কারণ আমি তখন পুরোদস্তুর নেশাখোর। বাবা এসব জানতেন না। এ কথা শুনে অনেক অবাক হয়েছিলেন। তবে বাবা ওইসময় আমাকে প্রচণ্ড সাপোর্ট দিয়েছিলেন কারণ এ সবকিছুর জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও সে দায়ী। আমি সুস্থ হওয়ার পর বাবাকে বললাম দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে যাতে জিকো আমাকে আর খুঁজে না পায় কখনো। এটাও জানালাম আমি আবার পড়াশোনা শুরু করতে চাই। এরপর বাবা আমাকে পড়াশোনার জন্য মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিলেন। এর কিছুদিন পর বাবা ডিভোর্সের ব্যবস্থা করেলেন। জিকো আমাকে ডিভোর্স দিতে রাজি ছিল না। বাবাই ম্যানেজ করেছে সব। এরপর অনেক আফসোস হতো লজ্জা না পেয়ে যদি ব্যাপারগুলো বাবার সাথে আরো আগে শেয়ার করতাম তাহলে আরো আগে মুক্তি পেতাম আমি!”
কলরবের এত কষ্ট হচ্ছিল যে এক্ষুনি গিয়ে জিকোকে খুন করে আসতে ইচ্ছে করছিল! কলরব নিহিনের মুখটা ধরে কপালে একটা চুমু দিলো। তারপর চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমার এই ছোট্ট পরিটা এক জীবনে এত কষ্ট করে ফেলেছে আমি ভাবতেই পারছি না।”
নিহিন চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কলরব বলল,
“আমার সত্যিই আরো আগেই সবকিছু শোনা উচিত ছিল পরি। তাহলে আজকে লোকটাকে মেরে ওর চেহারা পালটে ফেলতাম আমি। আরেকবার আসুক ও আমার কাছে।”
নিহিন হেসে ফেলল। ওর কান্না থেমেছে। কলরব ওর চোখ মুছে দিয়ে বলল, “আমার পরির চোখে কান্না মানায় না। আমার পরি শুধুই হাসবে। কারণ তার হাসিতে নিশ্বাস নিতে শুরু করেছে আরো কিছু মানুষ!”
নিহিন আবার হাসল। কলরব বলল,
“দেখো কল্পর মা তো তুমি হয়েই গেছ। আর যদিও তোমার ওই মেয়েটাকে আমি ফিরিয়ে আনতে পারব না। সে ক্ষমতা তো আল্লাহ মানুষকে দেননি তবে আমাদের বিয়ের পর আবার মা হবে তুমি। আমি আল্লাহর কাছে চাইবো তিনি যেন ওই মেয়েটার মত একটা মেয়ে তোমাকে আবার দেন। এই বাবাটা কিন্তু সন্তানের ব্যাপারে অনেক কেয়ারিং।”
নিহিন হাসল শুধু কিছুই বলতে পারল না। জীবনের একটা সময় খুব খারাপ গেলে বোধহয় আরেকটা সময় খুব ভালো যায়। কলরব বলল,
“কিন্তু আমি এটা বুঝলাম না ওই বদ লোকটা আমাদের বিয়ের কথা জানল কীভাবে?”
“সে আমাদের দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হয়। যদিও দূরের কোনো আত্মীয়দের জানানো হয়নি। তবু আত্মীয়দের মাধ্যমেই কথাটা ওনার কানে গেছে। এমনকি আমার যে পুরোনো প্রেমিকের সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটাও জেনে গেছে। ঠেস মেরে কথা বলছিল।”
“আমার কথা আগে থেকে জানত?”
“হ্যাঁ আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিল বিয়ের আগে প্রেম ছিল কি না। আমি তখন তোমার কথা বলেছিলাম।”
“তার রিয়াকশন কী ছিল?”
“তেমন কোনো রিয়াকশন ছিল না। খুব স্বাভাবিক ছিল। ওরও বিয়ের আগে অনেক প্রেম ছিল। সেসব কথাও আমাকে বলত।”
“ও। আচ্ছা লোকটার কি চরিত্রে সমস্যা ছিল? মানে বিয়ের পর কোনো মেয়েঘটিত কোনো সমস্যা দেখেছ?
“না। মেয়েঘটিত সমস্যা ছিল না।”
“তাহলে ব্যাটা সাইকো। নেশা করে করে এ অবস্থা হয়েছে। তবে চান্স পেলে জীবনে ওকে একটা মাইর আমি দিতে চাই।”
নিহিন হেসে বলল,
“হয়েছে এবার ছাড়ো। কল্পর টিচার যাওয়ার সময় হয়েছে। গেলেই কল্প এখানে চলে আসবে।”
“আসুক। বাবা মা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে এ দৃশ্য ছেলে দেখলে ক্ষতি কী? উলটো ওর আরো ভালো লাগবে। ও নির্ভরতা পাবে।”
“ধ্যাত লজ্জা করে না?”
“না।”
“ছাড়ো।”
“তোমায় হৃদমাঝারে রাখব ছেড়ে দেবো না। তোমায় বক্ষমাঝে রাখব ছেড়ে দেবো না…”
কলরব দু লাইন গাইতেই নিহিনের মনটা ভালো লাগায় ভরে গেল। কল্প বাইরে থেকেই বোধহয় গানটা শুনতে পেল কারণ ও বলল,
“পাপ্পা গান গাইছে।”
কলরব তাড়াতাড়ি সরে গেল আর ঠিক তখনই কল্প ঘরে ঢুকে বলল,
“পাপ্পা গান গাইছো! গিটার নাও প্লিজ।”
নিহিন কল্পকে কোলে নিয়ে বসলো। কলরব গিটার নিয়ে গান শুরু করল,
“কত লক্ষ জনম ঘুরে ঘুরে মনরে মনরে
লক্ষ জনম ঘুরে ঘুর,
আমরা পেয়েছি ভাই মানব জনম,
এ জনম চলে গেলে আর পাবো না।
তোমায় হৃদমাঝারে রাখব ছেড়ে দেবো না।
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌড় আর পাবো না
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌড় আর পাবো না
না না না ছেড়ে দেবো না।
তোমায় হৃদমাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না।
তোমায় বক্ষমাঝে রাখবো ছেড়ে দেবো না।”
নিহিন গান শুনছে আর হাসছে। শুধু নিহিনের ঠোঁট নয়, হাসছে নিহিনের চোখ, গাল, চিবুক সবকিছুই। হারিয়ে যাওয়া হাসিগুলো সব ফিরে এসেছে তার জীবনে। হাসি বানানোর কারিগরকে যে ফিরে পেয়েছে।
·
·
·
চলবে...................................................................................