চিত্রলেখার সংসার - পর্ব ০২ - ইসরাত তন্বী - ধারাবাহিক গল্প


          চিত্রলেখা উঠানে পদ যুগল রাখতেই লাঠি হাতে তেড়ে আসলেন জাবেদা বেগম। শাসিয়ে উঠলেন, 

"ওই মাগির লগে তোর কী কপালপুড়ি? কইছিলাম না উর থেইক্যা চৌইদ্দ হাত দূরে রবি। শুনিছ লাই ক্যান? এই লাটি এক্কান ভাইংগ্যা দেই তোর পিঠডাই তখন বুঝবি। উর লগে মিইছা পাইক্কা যাইতাচছ দেহি।"

চিত্রলেখা চোখ নামিয়েছে অনেক আগেই। মা বেঁচে থাকতে সবসময় বলতেন বড়োদের সম্মান করবি চিত্রলেখা। সমীহ করে চলবি তাদের। প্রয়োজনে একটা দুইটা মাইর খাবি তবুও তর্কে জড়াবি না কখনো। মায়ের বলা সব কথা চিত্রলেখা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। মায়ের হাতে সযত্নে তৈরি একটা নিষ্পাপ সত্ত্বা চিত্রলেখা। মেয়েটা ভেবেছিল শাশুড়ি নামক মানুষটা সত্যিই ওর গায়ে হাত তুলবে। কিন্তু ওকে ভুল প্রমাণিত করে তুলল না। তবে ওটার হাতেখড়ি কয়েক মাস আগেই হয়েছে। বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে না পারায় কপালে জুটেছিল কাঠের বাড়ি। এই কথা চিত্রলেখা আর জাবেদা বেগম ব্যতীত কেউ জানে না। শুধু বদ্ধ ঘরের একটা কলস এবং একটা গ্লাস ওটার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিল।

মৃত্তিকার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে চিত্রলেখা। বুকটা অজানা এক ভয়ে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। কী বলবে এখন? পাছে এই কথা যদি কাব্য আপার কানে চলে যায়। বড়ো কষ্ট পাবে আপা। বেঁচে থাকতে এতো বড়ো পাপ চিত্রলেখা কখনোই করতে পারবে না। বুকভার হলো মেয়েটার। ওকে কিছু বলতে না দেখে জাবেদা বেগম ফের বললেন,

"আর যদি উর লগে তোরে দেখি মা গি তোর ফাডা কপালে দুক্কু আছে। যা এহন রান্না বসা গিয়ে।"

"আইচ্ছা আম্মা।"

নরম কণ্ঠে চিত্রলেখা জবাব দিলো। কিছুক্ষণ চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে হাতের লাঠি খানা শব্দ করে মাটিতে ফেলে ঘরের ভেতরে চলে গেলেন জাবেদা বেগম। চিত্রলেখা এতক্ষণে চোখ তুলে চাইল। আঁখি জোড়া জলে পরিপূর্ণ। ফুঁপিয়ে উঠল মেয়েটা। এমন ভাগ্য কেন হলো ওর? পোড়া কপাল আজীবন কি এমনই রয়ে যাবে? শহুরে বাবু কি সত্যিই ফিরবে না? ওকে নিজের সাথে নিয়ে যাবে না? কথা দিয়েছিল তো। ভীষণ কান্না পেল চিত্রলেখার তবে কাঁদল না। নিজেকে সামলিয়ে নিলো। ঘর্মাক্ত কপালের ঘাম মুছে রান্না ঘরের দিকে অগ্রসর হলো।

••••••••••

ভ্যাপসা গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। আল্লাহর আকাশে বৃষ্টি নেই মাস খানেক হতে চলল। সূর্যের অসহনীয় তাপে মানুষ সহ প্রাণী, গাছপালা সব নেতিয়ে এসেছে। এরকম চলতে থাকলে এই মাসে নির্ঘাত খরা হবে। ইতোমধ্যে মাটি ফেটে চৌচির, পুকুরের পানির স্তর ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। এই দুর্ভিক্ষ কাটিয়ে ওঠা গ্রামবাসীর জন্য বড়ো কষ্টের হয়ে দাঁড়াবে। জমিদার পরিবারে বাদে প্রায় সবারই নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা।

সূর্যের অবস্থান মাথার উপরে। বেলা গড়িয়ে এখন দুপুর। চিত্রলেখা এখনো উনুনের পাশেই আছে। সকালের রান্না শেষ করে এখন দুপুরের রান্না চলছে। বাড়ির সবাই খেয়েছে। আরামের ঘুম দিচ্ছে এখন। অথচ ওর পেটে একটা দানাও পড়েনি এখনো। দুপুরে খাবে সবার শেষে। ওই না খাওয়ার মতোই। এই পরিবারে শ্বশুর নামক মানুষটাই ওকে যা একটু স্নেহ করে তবে হিসাব যখন টাকাতে ঠেকে তখন সেও অমানুষেই পরিণত হয়। শ্বশুর আব্বাস উদ্দিন গেছেন শহরে ব্যবসার সূত্রে। দুই একদিনের মধ্যেই চলে আসবেন। 

চুলোয় ডিম, আলুর তরকারি চাপিয়েছে চিত্রলেখা। মাথাটা ভীষণ ভার হয়ে আছে। শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। হাতের কাজ এগোচ্ছে না। একটু শুতে পারলে হতো ভালো। কিন্তু সেই সুযোগ কোথায়? চুলোয় একটা কাঠের টুকরা দিতেই ওখানে উপস্থিত হলো চিত্রলেখার ননদ তারা। বয়স ওই পনেরো হবে হয়ত। হাতে একটা গ্লাস দৃশ্যমান। আলগোছে সেটা চিত্রলেখার পাশে রেখে দিলো। ফিসফিস করে বলল, 

"ভাবী এইডা তুমি খাইয়া লও। লেবুর শরবত। শরীরডা ভালা লাগবিনে। দেইখ্যা মনে হইতাছে জ্বর আসিছে তুমার। আর হ্যাঁ এইসব ভুলেও আম্মারে কইয়োনা। আমি যাই গা।"

আজ চিত্রলেখা একটু অবাক হলো বৈকি! একটু না অনেক বেশি অবাক হয়েছে ও। যার থেকে কখনো কটু কথা ছাড়া আজ অবধি একটা ভালো কথা শোনেনি সে ওর খেয়াল রাখছে! কৃতজ্ঞতায় চোখজোড়া ছলছল করে উঠল চিত্রলেখার। মলিন মুখে হেসে মাথা নাড়ল, "আইচ্ছা।" 

তারাও মুচকি হেসে প্রস্থান করল। এই জগৎ সংসারের মারপ্যাঁচ বোঝা বড্ড দুষ্কর। সেখানে ছোট্ট বোকা চিত্রলেখা আর কী বুঝবে! যার মনটাই মাটির মতো নরম। কারোর কাছে একটু ভালোবাসা পেলেই তার নিকট পৃথিবী সুন্দর মনে হয়। ভুলে যায় নিজের জীবনের সবটুকু কষ্ট। নিজের মনগহীনের সবটুকু ভালোবাসা, যত্ন ঢেলে দেয় অপরপক্ষকে। হাসিমুখেই শরবত টুকু খেয়ে নিলো চিত্রলেখা। সকাল থেকে কিছু না খাওয়ার দরুন পেটের মধ্যে কেমন গুলিয়ে এলো সবটা। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইল। ও যে এখনো না খেয়ে আছে এটাই তো ভুলতে বসেছিল। 

••••••••••

ধরিত্রীর বুকে আঁধার নেমেছে। দিনের আলো ফুরিয়েছে ঘন্টা তিনেক হতে চলল। চাঁদের অমাবস্যা চলছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজ করছে প্রকৃতি জুড়ে। গ্রামের পরিবেশ থমথমে। কোথাও কোনো শব্দের আনাগোনা নেই। কেবল বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাটি ও খড়ের তৈরি বাড়িগুলো। নিজের ঘরের মাটিতে বিছানো মাদুরে শুয়ে আছে চিত্রলেখা। মাগরিবের নামাজ আদায় করেই শুয়েছে। কখন যে এশার আজান হয়ে গেছে টেরই পায়নি। পাশেই নিভু আলোয় জ্বলছে একটা হারিকেন। জীর্ণ শীর্ণ কায়া দিয়ে তাপ ছুটছে। জ্বরের ঘোরে গুঙ্গিয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। স্বপ্ন দেখছে ভয়ংকর ধরণের। যা ওকে ওর বিষাক্ত অতীত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ভয়ে শরীর কাঁপতে মৃদু। অকস্মাৎ চিত্রলেখার মনে হলো ঘরের দরজা খুলে কেউ একজন ভেতরে প্রবেশ করল। পরক্ষণেই অনুভব করল কিছু অবাধ্য স্পর্শ। যা ছুঁয়ে যাচ্ছে স্পর্শকাতর জায়গা গুলো। আরও জড়োসড়ো হয়ে শুলো চিত্রলেখা। ব্যথায় অস্ফুট স্বরে আওড়াল, "মোরে এভাবে ছুঁবেন না আ...."

"তোর এই কাইল্লা শইর আবার কে ছুবো রে কপালপুড়ি?"

হঠাৎ জাবেদা বেগমের কণ্ঠে ঘোর ভাঙল চিত্রলেখার। তবে সাথে সাথে চোখ খুলে তাকাতে পারল না। অনেক কষ্টে অসহনীয় মাথা যন্ত্রণা নিয়ে আঁখি জোড়া মেলে তাকাল। মুখটা রক্তশূন্য ফ্যাকাসে আর চোখ দুটো ঘোলাটে দেখাচ্ছে। আনন জুড়ে মায়া একটা ভাব ছড়িয়েছে।চিত্রলেখার আতঙ্কিত দৃষ্টি ঘরজুড়ে ভাসমান হলো। কিন্তু জাবেদা বেগম ব্যতীত কোথাও কেউ নেই। তাহলে ওটা কি মনের ভ্রম ছিল? জ্বরের ঘোরে ভুলভাল ভাবছে বলেই কি এমনটা মনে হলো? হতেও পারে। এই বলেই মনকে স্বান্তনা দিলো চিত্রলেখা। তাছাড়া প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই তো কোনো। ভাবনার মাঝেই শুনতে পেলো জাবেদা বেগমের গলা, 

"উঠ দিকিনি চিত্রা। একডু খাইয়া ল। তোর শইরডা দেইখ্যা ভালা লাগতাছে লাই। জ্বর আইছে বোধহয়। ভাত খাইয়া ওষুদ খা একডু।"

চিত্রলেখা চকিতে হতভম্ব হয়ে জাবেদা বেগমের দিকে তাকাল। কিয়ৎসময় তাকিয়েই রইল।পরক্ষণেই কী যেন ভেবে তাচ্ছিল্য হাসল। শ্বাশুড়ির মতিগতি সবটাই বুঝল। কোনো কথা ছাড়াই ব্যথায় জর্জরিত শরীর টেনে তুলে উঠে বসল। জাবেদা বেগম ভাত মেখে এক লোকমা ওর মুখের সামনে ধরল। চিত্রলেখা মুখে নিলো। ঝাল মাখা আর ভাত। জ্বরের মুখে বেশ লাগছে খেতে। কয়েকবার খাবার মুখে নিতেই জাবেদা বেগম হাসলেন। ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে শুরু করলেন, 

"কাল সক্কাল কইরা তোর আব্বার গেরামে যাবি চিত্রা। দুইডা হাজার টেকা লইয়া আইবি। ঘরের চালা ছারতে হইব। খড়গুনো খারাপ হইয়া গেছে গা। তারার ও নাকি একটা ড্রেস লাগব। খোকা তো এহনো টেকা পাঠাই লাই। তোর শউর ও শহুর থেইক্যা কবে আইব মুই জানি না। সংছারডা তো চালাইতে হইব মোরে।"

"যেই হাত দিয়া ভাত তুইলা মোর মুখে দিতাছেন ওই হাত দিয়া মোর গলাডা টিইপ্পা দেন আম্মা। সব ঝামেলা চুকে যাক। মোর আব্বা সারাডাদিন শুয়ে বইসা দিন কাটায়। অসুস্থ শরীরডা লইয়া কাম করবার পারে লাই। মা ওই মাটে খাইট্টা, লোকের বাড়িত কাজ কইরা কুনু রকমে সংসারডা চালায়। তাগের কাছে মুই এত্ত গুলো টেকা কীভাবে চাইবার পারি আম্মা?" 

অস্পষ্ট স্বরে এই প্রথম মুখের উপর পাল্টা জবাব দিলো চিত্রলেখা। মাত্রাতিরিক্ত জ্বরের জন্য কথা বেঁধে যাচ্ছে বারংবার। অন্য সময় হলে জাবেদা বেগম হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়ে দিতেন। কিন্তু এখন তেমন কিছুই করলেন না। সবটা মুখ বুজে সহ্য করে নিলেন। এমনকি উল্টো হাসলেন,

"ক্যান তুর ওইযে একডা ভাই আছে না? উরে কবি গিয়ে।"

"ভাইয়া আব্বাদেরই দেখবার পারে না আর মোরে কী দেখব আম্মা?"

"মোর খুকার সংছারডা কইরতে চাইছ তো চিত্রা?"

হাসতে হাসতে জায়গা মতো সুক্ষ্ম তীর ছুঁড়ে দিলেন জাবেদা বেগম। চিত্রলেখার বুকটা ধ্বক করে উঠল। ও বেঁচে আছেই তো শহুরে বাবুর সাথে একটা সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখে। ওদের ছোট্ট সুন্দর একটা সংসার হবে। যেখানে কেবল থাকবে সুখ আর সুখ। রবে না কোনো বিষাদ, দুঃখ। কে জানত সেই স্বপ্ন পূরণ করতে এতো কিছু পোহাতে হবে ওকে। তবে দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ ঠিক প্রচেষ্টা চালাবে চিত্রলেখা। এত সহজে হাল ছাড়বে না। ভাবীর থেকে শুনেছিল তালাকপ্রাপ্ত মেয়েদের কোনো দাম নেই এই সমাজে। অন্যের লাত্থি উস্টা খেয়ে আমৃত্যু বাঁচতে হয় তাদের। কেউ বিয়েও করতে চায় না। আর করলেও মোটা অংকের যৌতুক দিতে হয় পাত্রপক্ষকে। এতকিছু ভাবতে যেয়ে আরও একবার কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হলো চিত্রলেখা। দারিদ্রতা স্মরণ করিয়ে দিলো ওকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে তখন। না পাবে একুল আর না পাবে ওকুল। মাথা যন্ত্রণা কয়েকগুণ বাড়ল। তার থেকে ঢের ভালো শ্বশুর, শাশুড়ির গাল মন্দ খেয়ে এখানে পড়ে থাকা। একটা আশ্রয় তো পাচ্ছে। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে ছোট্ট করে প্রত্যুত্তর করল, "আইচ্ছা মুই যাব আম্মা।"

জাবেদা বেগম বিজয়ের হাসি হাসলেন। পরম যত্নে বাকি খাবার টুকু খাইয়ে দিলেন। সাথে ঔষধ ও‌। অতঃপর নিজের ঘর থেকে একটা কাঁথা এনে চিত্রার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে চলে গেলেন। চিত্রলেখা এতক্ষণে ডুকরে কেঁদে উঠল। অস্ফুট কন্ঠে আওড়াল, 

"আল্লাহ মোর এতো আত্মত্যাগ বৃথা যাইতে দিও লাই।"

••••••••••

সকাল হতেই নিজেকে পরিপাটি করে অসুস্থ শরীর নিয়েই নিজের গ্রামের উদ্দেশ্যে ছুটেছে চিত্রলেখা। জ্বর এখনো আছে‌ তবে সহনীয় পর্যায়ে। গায়ে জড়ানো পুরোনো ছেঁড়া রঙচটা কালো একটা বোরকা এবং নিকাব। হাতে একটা আধছেড়া ব্যাগ। আজ আর ফিরতে পারবে না। আগামীকাল সকাল হতেই ওখান থেকে রওনা দিবে। পথিমধ্যে দেখা হলো কাব্যতার সাথে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুজন। চিত্রলেখা ম্লান চোখে সামনে তাকিয়ে আছে। কাব্যতা ওকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত। অধরপল্লবে দেখা মিলল এক টুকরো তাচ্ছিল্যের হাসি,

"ওই শাকচুন্নীডা আবারও তোরে টেকা আইনতে পাঠাইছে কোকিলা?"

চিত্রলেখা সত্য বলতে নিয়েও বলল না। মিথ্যার আশ্রয় নিলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, "না আপা।"

"আবারও মিথ্যে কইছিস? কীসের টানে, কার জন্যি এতডা করতাছিস তুই? কেবল একডা সংসারের জন্যিই কী?"

চিত্রলেখা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। পর মুহূর্তেই নরম কণ্ঠে জানতে চাইল, "ভালাবাইসা একডা সংসারের স্বপ্ন দেইখ্যা বাঁচা কী পাপ আপা?"

"উঁহু, মোটেও পাপ লয় কোকিলা। তবে চোখ, কান, মুখ বন্ধ কইরা মরিচিকার পিছনে ছুইট্টা চলা বোকামি রে কোকিলা।"

"শহুরে বাবু ঠিক ফিরবে আপা তুমি দেইখ্যা লইয়ো।"

কাব্যতা এই পর্যায়ে মৃদু শব্দ তুলে হেসে ফেলল, 
"আব্বা কয় মাইয়াগো আত্মসম্মানের উপরে কিচ্ছু লাই। মাইয়া হইবো দুর্বার স্ফুলিঙ্গের মতোই তেজস্বী। ওগোরে পোড়াইতে আইলে সে নিজেই ঝলছে যাইবোগা। কার সাধ্যি আছে ওগোরে নিয়ে খেলবার? সেই সুযোগ যদি মাইয়া নিজে না দেয়।"

একটু থামল কাব‌্যতা। কিছু একটা ভেবে পুনরায় বলল, "যেই সম্পর্ক টেকার উপরে বাঁইচা আছে সেইহানে বিশ্বাস শব্দডা বড়োই ঠুনকোরে কোকিলা। বড়ো কুনো আঘাত সইহ্য করবার মতো মনডা শক্ত করিস রে মোর বোন। আইচ্ছা মুই যাই এহন। হাতে বহুত কাজ পইড়া আছে। সাবধানে যাস তুই। তা ফিরবি তো কাইলকেই?"

চিত্রলেখা ডানে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাল। কাব্যতা হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। চিত্রলেখা এক পাও নড়ল না। মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরনে বিদ্যুৎ গতিতে বয়ে চলেছে কাব্য আপার বলা প্রতিটা কথা। আপা যে ভীষণ বুদ্ধিমতি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ওকে যা ইঙ্গিত দিচ্ছে বারে বারে তা যদি সত্য হয় চিত্রলেখা যে বাঁচার সকল রাস্তা খুইয়ে বসবে। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু ফিরে একপলক দেখল। হাতের সাহায্যে বেনুনী নাচিয়ে হেলে দুলে হেঁটে চলেছে শাড়ি পরিহিত কাব্যতা। চিত্রলেখার এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো ইস ও যদি কাব্যতা হয়ে জন্মাতো তাহলে কতই না ভালো হতো! সুন্দর একটা জীবন পেত। কিন্তু সত্য এটাই মানুষ তার কল্পনা ব্যতীত কখনোই পুরোপুরি সুখী হয় না। আমাদের চোখের দেখা, জানার আড়ালেও রয়ে যায় কত শত অজানা তীক্ততায় মোড়ানো গল্প। 
·
·
·
চলবে………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp