চিত্রলেখার সংসার - পর্ব ০৯ - ইসরাত তন্বী - ধারাবাহিক গল্প


          অদূর থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। ধরিত্রীর বুকে সাঁঝ নেমেছে। অন্ধকারের রাজত্ব চলছে প্রকৃতির সবখানে। কিছুক্ষণ আগেই মাগরিবের সালাত আদায় করেছে চিত্রলেখা। এখন উঠান জুড়ে হাঁটাহাঁটি করছে। মন, মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত। শান্তি মিলছে না এক দণ্ড। তার উপর নিজের নেওয়া জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটা ওর বুকব্যথাটা ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে। কীভাবে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো? হঠাৎ করেই নিজের মাঝের এই পরিবর্তনে ও নিজেও একটু চিন্তিত। এতটা কঠিন মনের কীভাবে হয়ে গেল? আজ দুইদিন হয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যজনের সাথে দেখা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ওর কান্না পাচ্ছে না। কষ্ট! সেটা হচ্ছে কি? সত্যিই কি হচ্ছে? আচ্ছা কষ্ট পাওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়? হ্যাঁ, স্বাভাবিক তো। বরঞ্চ না পাওয়াটাই অস্বাভাবিক ব্যাপার। বড়ো দোষের কথা। 

ভাগ্য এই কোথায় এনে দাঁড় করাল মেয়েটাকে।? জীবনের উত্থান পতন ক্ষণে ক্ষণে ভাবুক করে তুলছে চিত্রলেখাকে। এই বাড়িতে থাকতে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে অথচ এখানেই ছোট্ট একজীবনের সবটুকু সুখের সন্ধানে এসেছিল। দিনের আলো ফোটার আগেই ও এই বাড়ি থেকে চিরতরে প্রস্থান করবে। আর কখনো এইমুখো হবে না। কিন্তু একা মেয়ে কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? আচ্ছা আব্বার কাছে যেয়ে উঠলে মা কি খুব কথা শোনাবে? ঠাঁই মিলবে না সেখানে? ভাইজান মুখ ফিরিয়ে নিবে কি? পরক্ষণেই ভাবল না, না ও কখনোই নিজের বাড়িতে ফিরবে না। একমুঠো ভাতের জন্য আর লাথি উস্টা খেতে পারবে না। বড্ড ক্লান্ত যে ও। তার থেকে না খেয়ে থাকা শতগুণ শ্রেয়। জীবন ওর। এবার নিজেই নিজের জীবনের দায়িত্বটুকু নিবে। হ্যাঁ, ও নিজেই নিবে। 

চিত্রলেখা যখন ভাবনার অথৈ সায়রে বুঁদ হয়ে হাঁটাহাঁটিতে ব্যস্ত তখন বাড়ির সম্মুখের কাঁচা রাস্তা থেকে ভেসে আসছে ড্রাম বাজানোর শব্দ আর অনেকগুলো মানুষের উচ্চ গলার আওয়াজ। মেয়েটা সেদিকে কান পাতল। শুনতে পেলো জমিদার বাড়ির প্রহরীর উঁচু কণ্ঠে বলা কিছু বাক্য,

"শুইনা যান, শুইনা যান গ্রামবাসী। আগামীকাইল ঠিক সোমবার জমিদার পুত্তুর, আমগোর বড়ো বাবু দীর্ঘ দশ বচ্ছরের অবসান ঘটিয়ে এই গ্রামের মাটিত পা রাখবার চইলাছে। সেই খুশির আমেজ আরও দ্বিগুন করবার লাইগ্যা আগামীকাইল আমগোর জমিদার বাবু হগ্গোলকে খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাইছে। আপনেরা হগ্গলে আমন্ত্রিত। দুপুর নাগাদ চইলা আইবেন জমিদার বাড়িত।"

আস্তে ধীরে শব্দটা মিইয়ে এলো। চলে গেল অনেকটা দূরে। সবটাই গভীর মনোযোগের সহিত শুনল চিত্রলেখা। ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। মস্তিষ্কে তখন কিছু একটার ঝড় বয়ে চলেছে। সময় নিয়ে মনস্থির করল। উপায় ও পেল একটা। হাসল ক্ষীণ। আর দাঁড়াল না উঠানে। চলে গেল নিজের ঘরে। পাশের ঘর থেকে জানালা গলিয়ে রুহানি সবটাই দেখল। রাগ ক্রমশ বাড়ল। সাহিল সেই তক্ষুনি সাক্ষর করে দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে এখনো ফেরেনি। আজ ওই ছেলের একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে রুহানি।

••••••••••

চৈত্রিক কাজ থেকে ফিরেছে মাত্রই। গোসল দিবে এখন‌। শরীর জ্বলে যাচ্ছে। সারাটা দিন সূর্যের ওই অসহনীয় তাপ সয়ে মাঠে খাটা চারটে খানি কথা নয়। ও বাড়িতে ফিরতেই পিছু পিছু ঘুরছে অয়ন্তিকা। সেটা বেশ খেয়াল করছে চৈত্রিক। গামছা কাঁধে তুলে এতক্ষণে ওর দিকে ফিরে চাইল, "কী সমস্যা? কিছু বলবে?"

অয়ন্তিকা সাথে সাথে দুদিকে মাথা নাড়াল। ছোট্ট করে জানতে চাইল, "আপনে এহন পুকুরঘাটে যাইবেন?"

"হ্যাঁ, যাবো।"

"মুই ও যাই আপনের লগে?"

"কেন?"

"এমনিতেই।"

এই পর্যায়ে চৈত্রিকের ভ্রু দুটো গুটিয়ে এলো। দুই পা সামনে এগিয়ে অয়ন্তিকার মুখোমুখি দাঁড়াল। ওকে একবার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পরখ করে নিলো, "কি খিচুড়ি পাকাচ্ছ বলো তো? কোনো প্রকার মিথ্যা শুনতে চাই না।"

চৈত্রিক এতটা কাছে আসাতে অয়ন্তিকা লজ্জায় মাথা নুইয়েছে ততক্ষণে। হাঁসফাঁস করছে মেয়েটা। তবে উত্তরটা না দিলে ওর স্বামী নামক মানুষটা যে রেগে যাবে সেটা ওর অজানা নয়। সম্পর্কে ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না। এমনিতেই ভিত্তিহীন একটা সম্পর্কে দুজন আটকে আছে। ভিত্তিহীন নয়তো কী? যেই সম্পর্কে ভালোবাসা নেই, বিশ্বাস নেই সেই সম্পর্ক তো ভিত্তিহীনই। দুটো দেহের মিলন হলেও আত্মার মিলন এখনো হয়নি ওদের। হবে কীনা তার নিশ্চয়তাও নেই। অয়ন্তিকা নিজের ভাবনায় ইতি টেনে আস্তে করে বলল, "আপনের কিছু মনে লাই?"

"কী মনে থাকবে?"

মনের মাঝে সুক্ষ্ম অভিমান জমল মেয়েটার। চোখদুটো ছলছল করে উঠল। একটা বছরের সংসার জীবনে প্রতিদিনই একটু একটু অভিমান জমতে জমতে তা এখন পাহাড়সম হয়েছে। আগামীকাল বিশেষ একটা দিন ওদের জীবনের। সেটাও মনে রাখেনি মানুষটা? যেখানে মানুষটার কোথাও অয়ন্তিকা নিজেই নেই সেখানে এইসব ভাবা বিলাসীতা। ভাঙা গলায় বলল মেয়েটা, "কিছু না। আপনে গোসল দিয়া আসেন। মুই আপনার লাইগ্যা খাবার বাইড়া দেই।"

কণ্ঠস্বরে ঠিকরে পড়ছে অভিমান। হঠাৎ এমন পরিবর্তনের কারণ কিছুই বুঝল না চৈত্রিক। কপালের ভাঁজ আরও বাড়ল। অয়ন্তিকা ঘর থেকে বেরোতে নিলেই শাড়ির আঁচলে টান অনুভব করল। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু ফিরতেই দেখল চৈত্রিক টেনে ধরেছে। অয়ন্তিকা নিজের চোখের পানি লুকাতে ব্যস্ত। শাড়ির আঁচল ধরে গুটি গুটি পায়ে সামনে এগিয়ে এলো চৈত্রিক। ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াল, "কথা শেষ হয়নি আমার। কোথায় পালাচ্ছ?"

"কুথাও না।" কম্পিত গলায় কোনোরকমে বলল অয়ন্তিকা।

"তাহলে বলো কী মনে রাখার কথা বলছ? আর চোখে পানিই বা কেন? আজ তো খারাপ ব্যবহার করিনি, বকাও দেইনি তোমায়।" চৈত্রিক আঙ্গুল উঠিয়ে গাল ছুঁয়ে দিলো। আলতো করে মুছে দিলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানিটুকু। এত আদরে ফুঁপিয়ে উঠল অয়ন্তিকা। আজ অবধি এত ভালোবাসা পায়নি এই মানুষটার থেকে। পেয়েছে কেবল তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর ঘৃণা। জৈবিক চাহিদা পূরণের টানে রাতের আঁধারে দুটো শরীর এক হলেও দিনের আলো ফুটতেই সেই তিক্ত জীবনেই ফিরে যেত। রাতের সেই প্রেমিক আদুরে চৈত্রিককে কোথাও খুঁজে পেত না অয়ন্তিকা। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতেই আওড়াল, "আগামীকাল আমগোর বিবাহবার্ষিকী। আপনের তো সেইডাও মনে লাই‌। এতডাই ফেলনা মুই? চইলা যামু বাপের বাড়িত।"

"আচ্ছা চলে যাও।"

অয়ন্তিকা অবিশ্বাস্য জলভর্তি চোখে তাকাল। ওর অভিমান একটুও ছুঁতে পারল না ওই অনুভূতিহীন শক্ত মনের মানুষটাকে? কান্না থামিয়ে শান্ত, সিক্ত গলায় প্রত্যুত্তর করল, "সত্যিই কাইল সকালে চইলা যামু।"

মেয়েটার বাচ্চামোতে‌ হেসে ফেলল চৈত্রিক। অবশ্য বাচ্চাই তো। ওর চিত্রলেখা নায়িকার সমবয়সীই হবে। দুজনের মাঝের সবটুকু ব্যবধান ঘুচিয়ে দিলো চৈত্রিক। ছুঁয়ে দিলো অয়ন্তিকার উন্মুক্ত নরম কোমর,

"তো এই উপলক্ষে কী চাও? আমার কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই দেওয়ার মতো। তোমার স্বামী টাকার দিক থেকে গরীব হলেও ভালোবাসার দিক থেকে ধনী আছে।"

অয়ন্তিকার গাল দুটো লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠেছে। শরীর মৃদু কাঁপছে। শিরা উপশিরায় প্রবাহিত হচ্ছে অদ্ভুত এক অনুভূতি। কী ভালোলাগার সবটা! মুখ দিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারল না।চৈত্রিক মুচকি হেসে অধর এগিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে চুমু খেল। স্কন্ধের আঁচল সরিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। গলার প্রতিটা ভাঁজে চলল ওষ্ঠের বিচরণ।অয়ন্তিকার বেসামাল অবস্থা। থেমে গেল চৈত্রিক। ওকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরল, 

"কংক্রিটের তৈরি হৃদয় আমার। অনেক আগেই নরম মনটা মরে গেছে। তোমার এই অভিমান আমার হৃদয় ছুতে পারে না পাগলী। কেন করো এমন অভিমান? যা তোমার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়। রেখো না আমার কাছে কোনো প্রত্যাশা। দিনশেষে ভালো থাকবে। আচ্ছা শোনো, আগামীকাল তৈরি হয়ে থেকো। বিকালে ঘুরতে যাব আমরা। আগামীকাল বিকাল টা তোমার নামে বরাদ্দ করলাম। খুশি তো তুমি?"

খুশিতে অয়ন্তিকার আঁখি জোড়ায় আবারও পানির অস্তিত্বের দেখা মিলেছে। ভালো না বাসুক তবুও মানুষটা যে ওর কথা ভেবেছে এই নিয়ে বোকা অয়ন্তিকার আনন্দের শেষ নেই। দুজন একসাথে ঘুরবে এর থেকে সুখকর অনুভূতি আর কী হতে পারে? অধরে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে জবাব দিলো অয়ন্তিকা, "খুউব খুশি হইয়াছি।"

চৈত্রিক ওকে ছেড়ে দিলো। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। সেভাবেই বলল, "আমি পুকুরঘাট থেকে আসছি। তুমি খাবার গোছাও। বড্ড ক্ষুধা পেয়েছে।"

"আইচ্ছা।"

চলে গেল চৈত্রিক। সন্তর্পণে চোখের পানি মুছে ফেলল অয়ন্তিকা। মুহুর্তেই প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠল মেয়েটা। গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে কাজ করা শুরু করল। বাইরে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখল চৈত্রিক। তাচ্ছিল্য হাসল। ভালোবাসা তবে কি স্থানান্তরিত হয়? হয় বোধহয়। এইযে চৈত্রিক না চাইতেও ওই বোকা মেয়েটার উপর ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। অথচ যাকে কেবল একরাশ ঘৃণা থেকেই বিয়ে করেছিল।‌ মন গহীনে বসবাস ছিলো অন্য কারোর। বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। হাহ্! জীবন। চৈত্রিক ভাবল না আর কিছু। একটা মগ হাতে হনহনিয়ে চলে গেল পুকুরের দিকে। 

••••••••••

রাতের শেষ প্রহর। চিত্রলেখা বোরকার আড়ালে নিজেকে লুকিয়েছে। হাতে কেবল সেই অতিব পরিচিত ছিঁড়ে যাওয়া ব্যাগটা দৃশ্যমান। প্রয়োজনীয় সবকিছু ওটাতেই তুলে নিয়েছে।আলগোছে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল। গন্তব্য অজানা। মুহুর্তেই নিজের কঠিন স্বত্বাটা খুইয়ে বসল। চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল সধারায়। একচিত্তে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল সাহিলের ঘরের দিকে। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কয়েকটা রাতের স্মৃতি ওই ঘরটা। যা এখন বিষের রুপ ধারণ করে বিষিয়ে তুলছে চিত্রলেখার সর্বাঙ্গ। অতঃপর দৃষ্টি ভাসমান হলো বাড়ির চারপাশ জুড়ে। ওর জীবনের রঙিন একটা সময় কেটেছে এই বাড়িতে। বুক চিরে পাঁজর কাঁপানো দীর্ঘশ্বাস নির্গত হলো। একবার উঁকি দিলো ওর আর কাব্যতার স্মৃতি মোড়ানো পুকুরঘাটে। শেষ বারের মতো ওদিকে তাকিয়ে দেখল। মানসপটে ভাসল ওর আর আপার কতশত সুখকর মুহুর্ত। বুকটা যন্ত্রনায় দুমড়ে মুচড়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। অজানা এক যাতনা বুকটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

ও দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে যেয়েও থামল। মনে হলো কেউ ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে সাহস করে কৌতুহল বসত কয়েক পা সামনে এগিয়ে গেল। ওকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে দু'দুটো অবয়ব স্পষ্ট হলো। একপাশ থেকে দেখা যাচ্ছে। আবছা দেখেই ভীষণ পরিচিত মনে হলো ওর। একরাশ আঁধারের ভিড়ে মুখটা অস্পষ্ট। চিত্রলেখা ওদের থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকায় ঠিকভাবে চিনে উঠতে পারল না। হঠাৎ করেই ওখানে আরও বেশ কয়েকজন মানুষ এলো। এই পর্যায়ে চিত্রলেখার শরীর ভার অনুভব হলো‌। মনে হলো এখানে আসাটা ওর ঠিক হয়নি। দ্রুত পায়ে বাড়ির ভেতরে যেতে নিলেই শুনতে পেলো অতি পরিচিত একটা নারী কণ্ঠস্বর, 

"ছোটবাবু ওই মাইয়া পালাইয়া যাইগা ধরুন ওরে।"

চিত্রলেখার বুকটা ধ্বক করে উঠল। মস্তিষ্ক অনুভব করল ওকে এখান থেকে পালাতে হবে। যেভাবেই হোক পালাতে হবে। নাহলে আর মুক্তি মিলবে না। আজীবনের মতোই বন্দি হয়ে যেতে হবে। ও দিকবেদিক হারিয়ে দৌড়িয়ে বাড়ির পাশের বাগানের রাস্তা ধরল। বাঁচার তাগিদে ছুটে চলল। পায়ে থাকা পুরোনো আধছেড়া সেন্ডেল টা এবার পুরোটাই ছিঁড়ে গেল। এতো দৌড়ঝাঁপ সইতে অপারগ। অকস্মাৎ পায়ের নিচে কাঁটা বিঁধে ক্ষতের সৃষ্টি হলো। গলগলিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো। চিত্রলেখা অনুভব করল ওর পিছু আরও কয়েক জোড়া পদযুগল ছুটে চলেছে। ওই ক্ষতবিক্ষত পা নিয়েই দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দিলো মেয়েটা। ওকে এখান থেকে পালাতে হবে। ওর যে এখনো পুরোটা জীবন পড়ে আছে। অভাগী মেয়েটা ফেলে রেখে গেল এক বুক নিয়ে স্বপ্ন বাঁধা ওর ছোট্ট একটা সংসার, ওর শহুরে বাবুকে।‌ চাইলেও আর কখনো ফিরতে পারবে না এই নীড়ে। সবকিছুর থেকে এইযে দুরত্ব বাড়ল তা এই একজীবনে আর কমবে না। দুজন মানুষ বেঁচে থাকবে, তাদের অনুভূতি ও বেঁচে থাকবে। কিন্তু একসাথে, এক ছাদের নিচে বেঁচে থাকাটা আর হবে না। চিত্রলেখা রাখল না আর কোনো পিছুটান। ছুটে চলল নিজের নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে। এবার সবটুকু ভালো হোক। কিন্তু নিয়তি কী চায় কে জানে? নিয়তির লিখন খন্ডানোর সাধ্য যে কারোর নেই।
·
·
·
চলবে………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp