-" আমাকে স্টোর রুমে কেন আঁটকে রেখেছিলে মা? ঐন্দ্রী কই? ওর বিয়ে গেছে জায়িনের সাথে? বলো? "
তাহিনা কিয়ৎক্ষণ মেয়ের পানে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আচানক চড় মেরে বসলেন তূর্ণার বাম গালে। গালে চড় পড়তেই তূর্ণা চমকে মায়ের পানে তাকাল।
-" মাথার বুদ্ধি কি হাঁটুতে নেমে গেছিল তোর? কি করতে যাচ্ছিলি হ্যা? তুই কি মনে করেছিলি জায়িন তোর যৌবনভরা দেহ দেখে ঐন্দ্রীকে বিয়ে করা বাদ দিয়ে তোকে বিয়ে করতো? কখনোই না! ঐ জায়িন উসমানকে চেনস না তুই। তোর মতো মেয়েরা ওর পায়ের জুতোর ধুলোর মতো রাস্তায় পড়ে থাকে ও ফিরেও তাকায় না। তোর বেহায়াপনা দেখে আমার আর তোর বাপের মান ইজ্জত সব শেষ! ছি! ছি! "
মা'কে রণমুর্তি ধারন করতে দেখে তূর্ণা চুপসে গেল। আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
-" ঐন্দ্রীর জন্য ভাইয়ের আজ করুণ অবস্থা মা। সেই ঐন্দ্রীর আজ এতো ভালো ঘরে বিয়ে হচ্ছে। এতো ভালো ঘর পাচ্ছে। এতো ধন - দৌলত, সুদর্শন স্বামী! এসব তো ও ডিজার্ভ করে না। " আসল কথা চেপে গেল তূর্ণা।
তাহিনা নাক সিটঁকে বললেন, " তোর ভাই যা ডিজার্ভ করে তাই পেয়েছে। আর ঐন্দ্রী কি ডিজার্ভ করে, করেনা তা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা। তোর কি মনেহয়? ও এসব ডিজার্ভ করছে ওর ভাগ্যে ছিল বলে?না, ওকে এসব আমি দান করেছি আমার সুবিধার জন্য, আমার লাভের জন্য। বেশি বুঝতে যাবিনা তুই। "
-" ভাইকে নিয়ে তুমিও এমনটা বললে মা। ও তো তোমার ছেলে। "
তাহিনার ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। ছেলের মুখটা খুব করে মনের মানসপটে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলেন। তৎক্ষনাৎ তার সৃতিপটে ভেসে উঠলো এক রক্তাক্ত মুখোশ্রী। যতই অপকর্ম করুক ছেলেটা তো তার নাড়িছেঁড়া ধন। তার প্রথম সন্তান। ঘামতে শুরু করলো তাহিনা। তূর্ণাকে কিছু না বলে সেখান থেকে দ্রুত প্রস্থান করলেন।
তূর্ণা ছুটল ড্রইংরুমে। কক্ষটি জনশূন্য! খুব বেশি মানুষ তো ছিল না, তার বাবা - মা, ত্রপা আর বাবার কয়েকজন কাছের লোক, ব্যাস! জায়িনের পক্ষ থেকে এসেছিল শুদ্ধ, তার পিএ, মা সহ আরো দু'জন। ও ছুটল ঐন্দ্রীর রুমে। মেয়েটা নেই সেখানে! তার মানে বিয়েটা হয়েই গেছে! মর্মাহত হয়ে ও সোফার হাতল চেপে ধরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। চোখ দু'টো বন্ধ করতেই মনে করতে চাইল জায়িনকে। ব্ল্যাক আউটফিটে বড্ড চমৎকার দেখাচ্ছিল লোকটাকে। ব্ল্যাক স্যুট, টাই, ওয়েস্টকোর্ট সঙ্গে সাদা শার্ট সাথে ফর্মাল কালো প্যান্ট। বাম হাতে পরিহিত টিসো পিআরএক্স ঘড়িটা তার চোখের সামনে ভাসছে এখনো। সে এতোবার বিভিন্ন ছুতোঁয় লোকটার আশপাশে গেল কিন্তু সুন্দর বাদামি বর্ণের চোখজোড়া একবারও তার প্রতি দৃষ্টি ফেলেনি ভুলেও। একবারও চোখটা তুলে খেয়াল করে দেখেনি তার দিকে কেও একজন কামুক, আবেদনময়ী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সে ছেলেকে কোলে নিয়ে সটান হয়ে বসেছিল। চেহারায় লেপ্টে ছিল দৃঢ়তা, গাম্ভীর্যতা এবং আত্মবিশ্বাসের জৌলুশ। দীর্ঘশ্বাস ফেলল তূর্ণা। তার ভেতরটা হিংসার অনলে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে এই মুহূর্তে!
-" এই তূর্ণা, ঐন্দ্রী কইরে? বিয়ে হয়ে গেছে? বিয়ে করে ফেলল ঐ বুড়াকে?"
উচ্চস্বরে বলল ত্রপা। তূর্ণা ধরফরিয়ে উঠলো। ত্রপাকে দেখল ক্ষুব্ধ চাহনিতে। চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-" হ্যা, হয়ে গেছে! তোর ঐন্দ্রী তোকে ফেলেই বিয়ে করেছে। শশুরবাড়ীতে গিয়ে দেখে আয় বাসরও শুরু করে দিয়েছে হতো। "
ত্রপা ধমকে উঠল, " মুখে লাগাম দে তূর্ণা। বড় বোন হই তোর বন্ধু না। "
-" ধমকা - ধমকি তো আমার সাথেই করবি। কাজের কাজ তো কিচ্ছু পারবিনা। এসে এতো হম্বিতম্বি করলি কই বিয়েটা তো ঠেকাতে পারলিনা। "
ত্রপা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাল। তূর্ণা এতো উদগ্রীব কেন? এতো চটে আছে কেন ঐন্দ্রীর বিয়ে ঐ বুড়োটার সাথে হওয়াতে। স্বভাবনুযায়ী তো ওর এতোক্ষণে আনন্দে হইচই করার কথা।
-" তুই এতো রেগে আছিস কেন? তোর তো খুশি হওয়ার কথা তাই না! ঐন্দ্রীর বিয়ে হয়েছে বয়স্ক, ডিভোর্সী লোকের সাথে। আর তুই আমাকে মিথ্যা বললি কেন? ওনার বউ তো মরেনি, ওনাকে চিট করেছে। "
তূর্ণা আমতা আমতা করে বলল, " আশ্চর্য আমি জানি নাকি এতোকিছু। যা শুনেছি, তাই বলেছি। রাবিনা খালা বলেছিল আমাকে। ওনার তো বানিয়ে বলার স্বভাব। "
কথা ভুল নয়! রাবিনা খালা তাদের বাড়িতে কাজ করেন। তিনি এমনসব কথাবার্তা বলে বেড়ান যা কখনো বাস্তবে ঘটেইনি। তবে তূর্ণার মতিগতি তার ভালো ঠেকছেনা। মেয়েটা যে ঐন্দ্রীর বিয়েতে অখুশি তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট! কিন্তু ঐন্দ্রী এমন বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে, ডিভোর্সী, বাচ্চা আছে, দেখতে খারাপ! এতো এতো ত্রুটিযুক্ত পুরুষের সাথে বিয়ে হলে তূর্ণার থেকে খুশি আর কেও হতো না। ও ভারী সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-" আচ্ছা, ঐন্দ্রীর বিয়ে হয়েছে কার সাথে? নাম কি তার? "
-" জানিনা। " তূর্ণা মুখ ঝামটা মেরে চলে গেল। ত্রপাকে বলবেনা ও। তাহলে বোনের উচ্ছ্বসিত মুখটা দেখতে পাবে। ত্রপাকে খুশি দেখলে ওর দুঃখে আরো একপ্রস্তর দুঃখ পড়বে। নাহ্! এখন জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে ত্রপা হয়ত জেনেই যাবে কিন্তু তার আগেই তূর্ণা নিজেকে সামলে নেবে যাতে করে বোনের খোঁচা গায়ে না লাগে।
—————
রাতের তৃতীয় প্রহর। নরম, তুলতুলে বিছানায় ঐন্দ্রী গুটিশুটি হয়ে বসে। তার পাশেই বালিশে মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে শুদ্ধ। বাচ্চাটা তার শাড়ীর আঁচল আষ্ঠেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে গভীর ঘুমে মত্ত। শুদ্ধকে তার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করেও কাজ হয়নি। ঐন্দ্রী এবং জায়িনের জন্য আজকের রাতটা স্পেশাল! উম... ঐন্দ্রী এবং জায়িন? নাহ্, শুধু ঐন্দ্রীর জন্যই বোধকরি। কারণ জায়িনের স্রেফ দায়িত্ব ছিলো ' কবুল ' বলা। এরপরই বান্দা উধাও! গাড়িতে ঐন্দ্রী এসেছে একপাশে শুদ্ধ এবং আরেকপাশে শাশুড়ীকে সঙ্গে করে। জায়িনের অনুপস্থিতির জন্য তার শাশুড়ী স্বর্ণা বড়ই অনুতপ্ত, অপরাধী গলায় দুঃখ প্রকাশ করছিলেন। ভদ্রমহিলার অপরাধী চেহারা দেখে ঐন্দ্রীর ভীষণ করে তাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল,
-" আপনি অনুতপ্ত বোধ করবেন না আন্টি। আপনার ছেলে অনুপস্থিত থাকাতেই আমি ভীষণ স্বস্তি অনুভব করছি। "
ঐন্দ্রী শুদ্ধের পানে দৃষ্টিপাত করলো। ছোটখাটো আদুরে চেহারার অতিরিক্ত ফর্সা একটা ছেলে। ঠোঁট দু'টো টকটকে লাল যেন রক্ত জমে আছে। চুলগুলো সিল্কি। হাত বুলিয়ে দিলে কি যে আরাম, আরাম লাগে! এই ছোট্ট বাচ্চাটা তার জন্য পাগল! ঐন্দ্রী ভেবে পায়না কেন? কি পেয়েছে এই আদুরে ছানাটা তার মাঝে? মাত্র দু'বার দেখা হয়েছে তাদের। এই অল্প সময়ে এই নিষ্পাপ বাচ্চাটা তার জন্য এতো ব্যাকুলপ্রায়!
বাড়ি ফেরার সময় পুরোটা সময় তার পাশ ঘেঁষে ছিলো। এমনকি বাড়িতে ফেরার পরও ওকে ঐন্দ্রীর আচল ছাড়া করে কার সাধ্যি। স্বর্ণা তাকে নিয়ে ওপরে এলো। বাড়িটা ট্রিপ্লেক্স। তাকে নিয়ে আসা হয় দোতলা উঠে একদম সামনের ঘরটায়। বিশাল বড় কামড়া। আভিজাত্যে, আধুনিকতায় মোড়ানো রুম। স্বর্ণা জানাল, এটা জায়িন উসমান ওরফে তার স্বামীর রুম।
ঐন্দ্রীকে রুমে রেখে শুদ্ধকে নিয়ে বেরোতে চাইলেই বাঁধে বিপত্তি! শুদ্ধ কিছুতেই ঐন্দ্রী বাদে কারো কাছে যাবেনা। না দাদু, না ফুপি আর না ন্যানি। শেষমেশ তাকে ঐন্দ্রীর কাছে রেখেই চলে আসে তারা। ঐন্দ্রী ফ্রেশ হওয়ার সুযোগটুকুও পায়নি। তবে এতে তার সমস্যা ছিলনা। আদুরে ছানাটার সাথে গল্পগুজব করতে করতে সে দিন - দুনিয়া ভুলে বসে। ভুলে বসে কোথায় ও, কার রুমে, কার বিছানায়! বিপত্তি বাঁধে তখন যখন শুদ্ধটা ঘুমিয়ে যায়। না আঁচল ছাড়িয়ে উঠতে পারছে আর না নিজের ভারী পোশাক আর গয়না নিয়ে টিকতে পারছে। পাছে ভয় হয়, আচলটা ছাড়িয়ে উঠলেই যদি শুদ্ধ কেঁদে উঠে? ওর কান্না থামাবে কি করে ও? বাচ্চাকাচ্চার ধারেকাছেও কখনো যায়নি অতএব শুদ্ধের কান্না থামানো তার জন্য অসম্ভব!
অসহায় বোধ করা ঐন্দ্রীকে সাহায্য করতে হাত বাড়িয়ে দিলেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। রুমের বাহিরে পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এদিকটায় কেবল এই একটাই রুম। তার মানে যার পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে সেই ব্যাক্তি নিশ্চয়ই এই রুমটাতেই আসছে। স্বর্ণা আসছে ভেবে ঐন্দ্রী নিজেকে মোটামুটি প্রস্তুত করে নিলো। ওর মাথা থেকে বেমালুম বেড়িয়ে গেল এই ব্যাক্তিটি জায়িনও হতে পারে!
দরজায় নব ঘুরিয়ে প্রবেশ করলো কেও। সঙ্গে সঙ্গে ডিওর সোভাজ এলিক্সি পারফিউমের সম্মোহনী ঘ্রাণ রুমজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল। ঐন্দ্রী মাথা তুলল। অমনি বুকের ভেতর মুচড়ে উঠলো তার। অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে দেখামাত্র বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল। যেই ব্যাক্তিটির অস্তিত্ব প্রায় ভুলেই বসেছিল এখন সেই ব্যাক্তিটি সাক্ষাৎ বাস্তব হয়ে তার সামনে দাঁড়ানো। শুষ্ক ঢোক গিলল ঐন্দ্রী। যার জন্য তার অবস্থা বেহাল সেই ব্যাক্তি অবশ্য নিজের কাজে ব্যাস্ত। আসার পর বেডে দৃষ্টি ফেলে ছেলেকে একপলক দেখে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। ঐন্দ্রীর পানে ফিরেও তাকায়নি। একটাবার দৃষ্টি তুলে দেখেনি তার উপস্থিতিতে একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষ যান্ত্রিক মানবীতে রূপান্তরিত হয়েছে। জায়িন ব্যাস্ত হাতে ঘড়ি খুলল। প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগ এবং সামনের পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করে সবকিছু একত্রে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখল। গা থেকে কোর্ট খুলতেই নজরে এলো তার সুঠাম, বলশালী দেহ। সাদা শার্টটা বলিষ্ঠ দেহের সাথে আঁটসাঁট হয়ে মিশে আছে। শার্টের হাতার ওপর দিয়ে সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে হাতের সুগঠিত বাইসেপ্স। দু'হাতের স্লিভ কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে জগ থেকে পানি ঢেলে তিন চুমুকে গ্লাসের পানিটা শেষ করল। এরপর সোফায় পিঠ এলিয়ে দিয়ে দু'চোখ বন্ধ করে নিল ধীরেসুস্থে।
রুমে নেমে এলো পিনপতন নীরবতা। জায়িনের কাজ গুলো দেখে ঐন্দ্রীর মনে সন্দেহ জাগল। লোকটা দেখেছে তো তাকে? দেখলে এহেন স্বাভাবিক কার্যক্রম? জায়িনের কর্মকান্ড দেখে মনে হলো রুমে জায়িন এবং ঘুমন্ত শুদ্ধ বাদে আর কারোরই উপস্থিতি নেই।
-" এখনো ফ্রেশ হওনি কেন? " জায়িনের শীতল গলা।
গলার স্বর শুনতেই ঐন্দ্রীর মানসপটে ভেসে উঠলো পুরোনো সৃতি। এই হীমশীতল কন্ঠেই লোকটা ওকে অপদস্ত করেছিল। তাকে বিশ্রীভাবে অপদস্ত করা লোকটা আজ থেকে তার স্বামী। এটা মাথায় আসতেই আঁধার নেমে এলো ঐন্দ্রীর চেহারার।
-" শুদ্ধ আমার শাড়ীর আঁচল আঁকড়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। "
জায়িন উঠে এলো ঐন্দ্রীর নিকট। ঐন্দ্রীর বলা কথার সত্যতা যাচাই করতে ও খানিকটা ঝুঁকল। অতঃপর দেখল তার ছেলে মায়ের আঁচলের সাথে একদম আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। ও উবু হতেই ঐন্দ্রী উল্টোদিকে কাত হলো তবুও শেষ রক্ষা হলো না তার। জায়িন একদম তার বাহু ঘেঁষে শুদ্ধের থেকে আঁচল ছাড়িয়ে নিল। ঐন্দ্রী দম বন্ধ করে বসে আছে।তবুও লোকটার কড়া পারফিউমের সুঘ্রাণ তার নাকে তরতর করে ঢুকে যাচ্ছে। অস্বস্তি হচ্ছে ঐন্দ্রীর। দম আঁটকে আসতে চাইছে। কি করছে এতক্ষণ এই লোক? সরছেনা কেন?
জায়িন শুদ্ধকে ঠিকঠাক ভাবে শুইয়ে দিয়ে আবারও ঐন্দ্রীর বাহু ঘেঁষে উঠে এলো। তার ফোন এসেছে। ফোনটা হাতে করে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলে গেল,
-" ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নাও। "
জায়িন ব্যাস্ত পায়ে বেড়িয়ে গেল। এদিকে ঐন্দ্রীর যে মনে হাজারটা প্রশ্ন জমা! থম মেরে বসে রইল ও। এতক্ষণ পোশাক বদলানোর জন্য মন আকুপাকু করলেও এখন আর কিচ্ছু করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। লোকটার উপস্থিতি তার পুরো গায়ে কেমন বিরক্তিভাব ধরিয়ে দিয়ে গেছে। ও মাথার দোপাট্টা, গায়ের গয়না খুলে বেডসাইড টেবিলে রেখে শুয়ে পড়ল। ঘরজুড়ে ল্যাম্পশেডের মৃদুমন্দ আলো। ফ্যাব্রিজ এয়ারের লিনেন এন্ড স্কাই এয়ারফ্রেশনারের ঘ্রাণ ঘরজুড়ে শোভা পাচ্ছে। রুমটা বেশ সুন্দর, গোছানো। ইন্টেরিয়র ডিজাইনটা বেশ চমৎকার লাগছে! তবে বাসরঘর সাজানো হয়নি। স্বর্ণা তাকে অনুতপ্তবোধ নিয়ে বলেছিলেন, জায়িন তাকে নিষেধ করেছে এসব করতে। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসেনা ঐন্দ্রীর। সে মাথার ভেতর হাজারটা প্রশ্নের বোঝা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
রাত গড়ালো। গভীর ঘুমে থাকা ঐন্দ্রীর হটাৎ করে ঘুম হালকা হয়ে এলো। মৃদু ঘুমের রেশ নিয়ে সে স্পষ্টত টের পাচ্ছে তার পেটের ওপর কিছু একটা ধপ করে পড়ল। ঝটপট চোখ তুলে তাকাল ও। পেটের ওপর দৃষ্টি ফেলতেই দেখল শুদ্ধ তার পা তুলে দিয়েছে। সে আলগোছে শুদ্ধের পা নামিয়ে রাখল। একটু খেয়াল করতেই দেখল শুদ্ধের অপর পাশে শুয়ে থাকা জায়িনকে যে কিনা কপালে এক হাত রেখে বিছানার একদম কিনারায় শুয়ে আছে। ভূত দেখার মতো করে চমকাল ঐন্দ্রী।লোকটা নিজের পোশাকটাও পরিবর্তন করেনি। ঐন্দ্রী চোখ পিটপিট করল। এপাশ - ওপাশ ফিরে ঘুমাতো চেষ্টা করল। ঘুম পাচ্ছেনা তার। কেমন এক গুমোট অস্বস্তি চেপে ধরেছে। আজ রাতে যে তার চোখে দুদণ্ড ঘুম নামবেনা তা সে বেশ বুঝতে পারল। চোখ দু'টো বুঁজে ও স্বরণ করার চেষ্টা করলো জায়িনের অতীতের করা কৃতকর্মগুলো।
·
·
·
চলবে……………………………………………………