অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ২০ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


জেবা মুখ অন্ধকার করে বসে আছেন লনে।তার ছোটবোন সায়বা কিছু যে লুকাচ্ছে,উনি ভালোমতো বুঝতে পারেন।বেশি জোর দেয়ায় ইদানিং সায়বা কথাও বলে না উনার সাথে।রুশানের ফুরফুরে মেজাজ আর উড়াউড়া স্বভাব উনার মনে বিচিত্র ভয় সৃষ্টি করেছে।দুই ছেলেকে অনেক কঠোর শাসনে বড় করেছেন।রেহান ছিলো মা ভক্ত ছেলে,রুশানের থেকেও জেবার প্রতি রেহানের টান বেশি ছিলো।সেই ছেলে হুট করে ভার্সিটিতে উঠেই কেমন যেন বদলে গেলো।তার প্রাইভেসি লাগবে,ইন্ডিপেন্ডেন্স লাগবে,স্পেস লাগবে আরো কত কী।জেবা চিন্তিত হলেও ভেবেছেন বড় হয়েছে,নতুন জায়গায় বন্ধু বান্ধবের প্রভাব এসব।এর জন্য ছেলেকে 'সুপথে' রাখতে নিজের শাসনের রশি আরো শক্ত করে টেনে ধরলেন।প্রফেসরি বাদ দিয়ে শুরু করলেন ছেলের ভার্সিটি যাওয়া।এরপর ছেলের ফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ সহ বন্ধুদের সাথে মেশাও বন্ধ করলেন।ধীরে ধীরে উনার এই প্রচেষ্টা সফল ও হলো।রেহান বন্ধু বান্ধব থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো।ছেলের একাকীত্ব কে উনি 'সুমতি' হিসেবে গণ্য করে প্রায় বছর খানেক পর আবার নিজের কলেজে ফিরে এলেন।রেহান সবসময়ই চুপচাপ এবং শান্তি প্রিয় মানুষ ছিলো।তার প্রতিবাদের ভাষাও খুবই শান্ত।রেহান মায়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো।জেবার খারাপ লাগলেও উনি আমলে নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি।ছেলের সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং উজ্জ্বল ক্যারিয়ারই তার প্রথম প্রায়োরিটি।এসব আবেগের ধার ধারেন না তিনি।মা এবং সন্তানের এই দূরত্বকে কখনো গ্রাহ্যই করেননি।তবে অধিকারের বেলায় শতভাগ অধিকার ফলিয়েছেন।

হটাৎ করে জেবার এই সুপুত্র রেহান, ভয়াবহ এক কান্ড করে বসলো।থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় নাবিহা নামের এক মেয়েকে বাসায় এনে বললো-

-মা,আমি ওকে বিয়ে করবো দুইদিনের মধ্যে। নাবিহার মা ভাইরা ওকে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছে,আমি ওকে নিয়ে এসেছি তাই।আমিই নিয়ে এসেছি,ও আসতে চায়নি।

কোনো রকম ভয় এবং ইতস্ততা ছাড়া রেহান এগুলো বলে নিজের ঘরে চলে যায়,যাওয়ার আগে কাজের লোককে গেস্ট রুম গুছিয়ে দিতে বলে।সুতির সালোয়ার কামিজ পড়া ছোট খাটো উজ্জ্বল শ্যামলা একটা মেয়ে।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে লজ্জা এবং আতঙ্কে। জেবা একনজর দেখেই বুঝে গেলেন মেয়েদের আর্থিক অবস্থা কেমন হতে পারে।উনি একটা শব্দ ও ব্যায় না করে চলে এলেন ঘরে।এরপর ফোন দিলেন ছোট বোন সায়বা কে।সায়বা জেবার বাসায় এসে সব শুনে থ হয়ে যান।

-কী করবো এখন আপা?মেয়ে তো শান্ত শিষ্টই মনে হয়।তোমার কথা শুনবে,বেশি মাতবর হবে না।

জেবা আগুন চোখে সায়বার দিকে তাকালেন।সায়বা বুঝে গেলো তার এই যুক্তির কোনো মূল্য নেই তার উচ্চশিক্ষিত বোন জেবার কাছে। জেবা সায়বা কে দায়িত্ব দিলেন,যেভাবে হোক,বিয়ে এক সপ্তাহ পেছাতে আর মেয়ের সাথে কথা সব জানতে।সায়বা প্রথমে ভেবেছিলো জেবা মনে হয় এক্ষনি বলবে,ভালো জায়গা দেখে মেয়ের থাকার ব্যবস্থা করতে।বোনের এমন অদ্ভুত আচরণে কিছুটা হলেও তার মনে আশার সঞ্চার হলো।সায়বা নরম মনের মানুষ।অপরিচিত এই মেয়ের জন্য তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।সায়বা গেস্ট রুমে যেয়ে দেখলেন নাবিহা মুখ চেপে কান্না করছে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পাশে বসে এরপর ধীরে ধীরে সব জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন,মেয়েটা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে,সাইকোলজিতে।ওর পরিবার ফেনিতে থাকে।বাবা নেই,বড় দুই ভাই আর মা আছে।তারাই নাবিহার বিয়ে ঠিক করেছে প্রতিবেশি ধনীর এক বখাটে ছেলের সাথে।রেহানের সাথে ওর পরিচয় দুই বছরের।রেহান ওকে কথা দিয়েছে,বিয়ে করার।

সায়বা সব শুনে মনে মনে হিসাব কষলেন।উত্তর বলেছিলো জেবা এই সম্পর্ক মানবে না কোনোভাবে।

সায়বা নাবিহার হাত ধরে বসে খুব নরম করে বোঝালেন,রেহানের সাথে যেন আগামী দুই সপ্তাহ বিয়ে পিছিয়ে দেয়।সায়বার মনে মনে ইচ্ছা ছিলো,গতি করে উনি নিজেই বিয়ে দিবেন রেহান আর নাবিহার।সব শুনে নাবিহা খুব বিস্মিত হয়ে বলেছিলো,

-বিয়ে না করলে আমি কীভাবে থাকবো এই কয়দিন?
 
নাবিহার কথায় সায়বার হুশ ফিরলো,আসলেই তো এই অবিবাহিত মেয়ে কীভাবে এই বাসায় থাকবে।উনি সিদ্ধান্ত নিলেন,নাবিহাকে নিজের বাসায় নিবেন।

জেবাকে পুরো বিষয় জানানোর পর শীতল গলায় বললেন-

-ও এ বাড়িতেই থাকবে।কোথাও যাবেনা।

জেবার এই কথায় সায়বার মনে হলো,এইবার মিরাকেল হতে যাচ্ছে কোনো।জেবা নিজের ইগো,সেল্ফরেস্পেক্ট আর সোশ্যাল স্ট্যাটাসের কথা না ভেবে,ছেলের ভালোবাসাকে মূল্য দিবেন।আশ্বস্ত হয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যাওয়ার চারদিনের মাঝে সায়বা শুনলেন,নাবিহাকে ওর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন জেবা।শুনে তার মনে হলো,জীবনে তিনি অনিচ্ছাকৃত এমন পাপ করে ফেলেছেন,যার কোনো প্রায়শ্চিত্ত নেই।

জেবা এই চারদিনেই ভয়াবহ নোংরা খেলা খেলেছিলেন।তিনি প্রথমে নাবিহার সাথে নির্ভরতার সম্পর্ক তৈরি করে আশ্বস্ত করে ওর পরিবারকে এই বাসায় আসতে বলেন।কথা দেন,দুই পরিবারের উপস্থিতিতেই উনি বিয়ে করাবেন নিজের ছেলের।নাবিহা তার কথা শুনে খুশিতে কান্না করে ফেলেছিলো,সরল ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরেছিলো জেবাকে।কিন্তু জেবার কোনো করুণা হলো না।উনি উচিৎ সময়ে রেহানকে পাঠান সায়বার কাছে,সায়বা ছাড়া নাকি বিয়ে হবে না।রেহান ফিরে এসে দেখলো নাবিহা নেই,ওর পরিবারের কাছে 'দায়িত্বশীল' মানুষের মত বুঝিয়ে দিয়েছেন জেবা,শুধু তাই নয়,নিজের ছেলেকে সবার কাছে প্রতারক ও প্রমাণ করেছেন তিনি।এছাড়াও সেই পরিবারকে 'উপদেশ' দেন জলদি করে মেয়েকে বিয়ে দিতে।নাহলে সে ভুল করতেই থাকবে। সবে তেইশে পা দেয়া রেহানের পক্ষে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ে কোনোভাবেই আটকানো সম্ভব হয়নি।মাত্র দুইদিনের মাথায় নাবিহার মত সহজ,সরল আর মেধাবী মেয়েটার বিয়ে এক চরিত্রহীন,বখাটে,স্বল্পশিক্ষিত,বিকৃত মানসিকতার 'বড়লোকের' ছেলের সাথে হয়ে যায়।

বিয়ের সাত মাসের সময় ছেলের ও তার পরিবারের কাছে মানসিক,শারীরিক ও বিশ্রীরকমের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে নাবিহা হাসপাতালে ভর্তি হয়। সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহায়তায় ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে নিজের পরিবারের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসে ঢাকায়।রেহান এ সময়ে নাবিহাকে বিয়ে করতে চাইলেও,নাবিহা ফিরিয়ে দেয় রেহানকে,কারণ নিজের এই দুঃসহ যন্ত্রণার জন্য জেবা দায়ী। জেবা সেদিন এমনিই নাবিহাকে ফিরিয়ে দিলেও এত ক্ষতি হতো না যতনা ওর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার পর এই বিয়ের কারণে হয়েছে।রেহান শত চেষ্টা করেও,ফিরতে পারেনি নাবিহার ক্ষত বিক্ষত জীবনে।এই ঘটনার তিন বছর পর,এক স্বনামধন্য ডাক্তারকে বিয়ে করে নাবিহা।সেই ঘরে সাত মাসের মেয়েও রয়েছে।

নাবিহা এগিয়ে গেলেও,রেহানের জীবন থেমে যায়।মায়ের সাথে সম্পর্ক শেষ করে,দুঃসহ মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে দেশের বাইরে চলে যায় রেহান।জেবাই নিজের অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপে রেহানের জীবন সবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছেলেকে একা করে দেন।একা সেই জীবনে নাবিহাই ছিলো তার একমাত্র আশ্রয়।নাবিহার মাঝেই বন্ধুত্ব আর প্রেম দুটোই খুঁজে পেয়েছিলো রেহান।একবুক কষ্ট নিয়ে রেহান যে চলে যায়, আর ফিরে আসে না দেশে,আদৌ আসবে নাকি,জেবা জানেন না।ঘটনার প্রথমদিকে রেহানের এই অভিমানকে গুরুত্ব না দিলেও,বছর পেরোতেই বুঝলেন,তার ছেলে তার মতই জেদি।তিনি নিজের ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছেন।

জেবার মতে নাবিহার পরিবারের আর্থিক অবস্থা এবং নাবিহার শিক্ষাগত যোগ্যতা তার ছেলের বউ হওয়ার জন্য অনেকই অপ্রতুল ছিলো।এই ঘৃণ্য খেলার কয়েক বছর পর এক পত্রিকার সাক্ষাৎকারে নাবিহার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা আর অদম্য সাহসের গল্প দেখে মনঃক্ষুণ্ন হলেও,পরবর্তীতে ওর সাফল্যের পেছনে নিজের দায়িত্বশীলতাকেই ক্রেডিট দেন।

এক ছেলেকে হারিয়ে,জেবার অনুশোচনা হলোনা,এর পরিবর্তে আরো ভয় হলো।এবার উনি রুশানের চিন্তায় পাগল হলেন।রেহানকে হারিয়ে রুশানই তার শেষ ভরসা,অতএব এই ছেলেকে উনি যেভাবেই হোক,ভালোবাসা নামের কোনো রোগে আক্রান্ত হতে দিবেন না।তার বোন সায়বাকে সবসময়ই নিজের ছেলেদের স্পাই হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন,সায়বা প্রথমে না বুঝলেও,নাবিহার ঘটনা হওয়ার পর বোনের সাথে খুবই সুক্ষ্ম একটা দূরত্ব বজায় রাখেন।তবে সায়বার পক্ষে জেবার কথা ফেলা প্রায় অসম্ভব।এই বোনকে তিনি শ্রদ্ধা করেন,তার চেয়েও বেশি ভয় পান।

••••••••••

রেহান টি ইউ বার্লিনে পড়াশোনা শেষ করে ওখানেই থাকছে। দেশের জন্য মন টানলেও ফেরার কথা ভাবতেই মনে শূণ্যতা জেকে বসে।নিজের একাউন্ট থেকে নাবিহার প্রোফাইল প্রতিদিনই স্টক করা হয়।এছাড়াও নাবিহার বান্ধবী রাইসার কাছ থেকে নিয়মিত খোঁজ ও নেয়।জীবন এখনো সেই আট বছর পুরোনো নাবিহাতেই সীমাবদ্ধ। জীবনে আপন গতিতে এগিয়ে যাওয়া নাবিহাকে দেখে যাওয়া,রেহানের মানসিক শান্তির উৎস।

রেহান দীর্ঘশ্বাস ফেললো আজকের মত প্রোফাইল স্টক করে।মেয়েকে নিয়ে কভার ফটো আপলোড করেছে নাবিহা।মা মেয়েকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।বার্লিনের এই একাকী শহরের অসংখ্য সুন্দর মানুষের ভীড়ে রেহান সবচেয়ে একা।পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষকে সে হারিয়ে ফেলেছে।একাকীত্বের অদৃশ্য দেয়ালে আটকে গেছে,প্রতিনিয়ত এই দেয়ালের পুরুত্ব বাড়ছে।দীর্ঘ ঈর্ষণীয় শিক্ষাজীবনে রেহান এটাই শিখেছে যে,একাকীত্বের চেয়ে বড় কষ্ট কোথাও নেই।পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ নীরবে একাকীত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।কেউ অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত,কেউ রক্ত পানি করে পড়াশোনা করছে,কেউ বিখ্যাত হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যাচ্ছে।কারণ?সবাই চিনবে,প্রশংসা করবে,ভালোবাসবে।সবাইটা কে?সবাই হলো মানুষ।মানুষ মৃত্যুকে এত ভয় পায় কেন?তার একটা অন্যতম কারণ একাকীত্ব।

••••••••

রুশান সপ্তাহে চারদিনের পরিবর্তে ছয়দিন ক্লাস নিয়েছে শুধুমাত্র ভিনার ছুটির পর ভিনার সাথে থাকার জন্য।প্রতিদিনের মত আজকেও ব্যতিক্রম হলো না।দুই কাপ গরম কফি নিয়ে রুশান বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।ভিনা ক্লাস থেকে বের হয়ে রুশানের হাত থেকে কফি নিয়ে হাঁটা ধরলো।

-এই ভিনা,তুমি কিন্তু কথা দিয়েছো আমার সাথে নরমাল ফ্রেন্ডের মত থাকবে।তাহলে?কথা বলছো না কেন?

ভিনা কফি শেষ করে লাইব্রেরিতে ঢুকলো।রুশান ও ভিনার সাথেই আসলো।লকারে ব্যাগ রাখার সময় ভিনার ঠিক পাশের লকারটাই নিলো।

ইংলিশ নিউজপেপার নিয়ে ভিনা বসলো কর্ণারের টেবিলে।রুশান মুখোমুখি বসতেই পেপার এগিয়ে দিয়ে দিলো।

-এটা চুপচাপ পড়বি।কথা বলিস না।আমার মেজাজ ভালো নেই।

রুশান প্রায় দশ মিনিটের জন্য চুপ থাকলেও,আর পারলো না।

-আমাকে বলো ভিনা,কী হয়েছে?

-কাদের ভাই আসতে পারবে না অনেকদিন।

-কাদের কে?

ভিনা চমকে গেলো।এতটাই চিন্তায় ডুবে ছিলো যে ভূমিকা না বলেই সরাসরি সমস্যায় চলে গেছে।ভিনা বড় করে দম নিয়ে কথা শুরু করলো-

-আমাদের আগের বাসায় একজন দাড়োয়ান চাচা ছিলেন,উনার নাম সিদ্দিক।উনি প্রায় বারো বছর ছিলেন ওখানে।ঐ বাসা ছেড়ে আসার এক বছর আগে উনি স্ট্রোক করেন,এরপর বেড রিডেন হয়ে যান।আমি আর আমার মা মিলে যে নতুন অনলাইন বিজনেস শুরু করেছি,সেখানে সিদ্দিক চাচার ছেলে কাদের ভাই,আমাদের অনেক হেল্প করতো।উনি কাস্টমস থেকে প্রোডাক্ট কালেক্ট করা থেকে শুরু করে ডেলিভারি অফিস পর্যন্ত সব কাজ করতো।গতকাল সিদ্দিক চাচার অবস্থা হটাৎ খারাপ হয়ে গেছে।এই কারণে কাদের ভাই গ্রামে চলে গেছে।আমার পক্ষে প্রিতি আপুর কাছে থেকে ঐ বাসায় যেয়ে সব সামলিয়ে পড়াশোনা করা খুব সমস্যা হয়ে যাবে।আর বাবাও চাচ্ছেনা আমি ঐ বাসায় থেকে সব কাজ করি।এখন বাবা সব কাজ নিজের উপর নিয়েছে।মাহভিন,তার বিজনেস,আবার এসব!বাবার উপর খুব চাপ পরে যাচ্ছে।আমাদের সেভেন্টি পার্সেন্ট প্রোডাক্টই প্রি অর্ডার বেজড।টাইমলি কাস্টমারের কাছে না পৌঁছালে ভীষন ঝামেলা হয়ে যাবে।আমি জানিনা কী করবো।

এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলে থামলো ভিনা।রুশান সব শুনে নিজেও চিন্তায় পরে গেলো।এত সব কথার মাঝেও রুশান লক্ষ্য করলো ভিনা মানুষকে খুব সম্মান দিয়ে কথা বলে।সিদ্দিক কে চাচা,কাদেরকে ভাই হিসেবে সম্বোধন করেছে প্রতিবার।এই ছোট ছোট ব্যাপারই রুশানকে মুগ্ধ করে।

বাস্তবে ফিরে এসে কিছুক্ষণ ভেবে রুশান প্রশ্ন করলো-

-ঐ বাসা ছেড়েছিলে কেন?

ভিনা রুশানের দিকে চোখ গরম করে তাকালো।ভাবেওনি এতকিছু শোনার পর রুশান এই প্রশ্ন করবে।

-চুপ...চাপ...নিউজপেপার পড়।হাইলাইটার লাগবে?এই নে।কিন্তু কোনো কথা বলবি না তুই।

-স্যরি ভিনা।আই ডিডন্ট মিন দ্যাট।এত বছর যে বাসায় থাকলে,সেটা কেন ছেড়েছো,এটাই জানতে চেয়েছি।কিন্তু আসলেই,তোমার সমস্যা বেশ বড়। 

ভিনা উত্তর দিলো না।ইকোনোমিকস ডিপার্টমেন্টে নতুন প্রফেসর এসেছে।উনার নাম রুদমিলা চ্যাটার্জি।ক্লাসে শুনলো প্রফেসর রুদমিলা খুবই স্ট্রিক্ট এবং রাফ।সিজি ৩.৫ এর কম থাকলেই উনি নাকি স্টুডেন্ট ডাকান,প্রয়োজনে গার্জিয়ান ও কল করেন।সব শুনে ভিনার আত্মা শুকিয়ে গেছে।এদিকে সিলেবাস নিয়ে ফারজানার সাথে আলোচনা করতে গেলে ও মুখে আঠা লাগিয়ে বসেছিলো।ফারজানা খুবই সিরিয়াস স্টুডেন্ট,তাই ভিনা চেয়েছিলো ওর সাথে বসে স্টাডি করবে।ইদানিং ফারজানার এই অদ্ভুত আচরণ ও অসহ্য লাগে।এত শত চিন্তায় মাথা ভার হয়ে যাওয়ায় ভিনা হেড ডাউন করলো। ঐ সময়েই রুশান ভিনার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বললো-

-ইফ ইউ ওয়ান্ট,আই ক্যান হেল্প ইউ!
.
.
.
চলবে......................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp