অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৩৩ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


মাহভিন গুটি গুটি পায়ে এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করছে।পরনে সাদা রঙের ফ্রক,হাতে সোনার ব্রেসলেট।কোকড়ানো চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকানো।কিছুক্ষণ পরপর কেকের সামনে যেয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,ডেকোরেশনে রাখা চকলেটের টুকরো ধরতে গিয়েও ধরেনা।চুমকি,মোমেনা আর মুনা বেশ কয়েকবার বুঝিয়েছে হাত দিলে কেক নষ্ট হয়ে যাবে,ছোট মানুষ তাই নিজেকে আটকে রাখছে।

রুশান বিকেলেই এসে পরেছিলো।আজকে বাসায় জলদি যেতে হবে,অনেকদিন পর রেহানের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছে,এর চেয়েও বড় কথা,ফারুক নিজেদের ছেলেদের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।ঘড়ি যেন উল্টো দিকে ঘুরছে,বয়স বাড়ার সাথে সাথে আবদার বাড়ছে আদেশের পরিবর্তে।

বাসায় এসে যে ব্যাপার চোখে পড়েছে সেটা হলো এই জন্মদিন একেবারে ঘরোয়াভাবে করা হচ্ছে।রুশান ছাড়া বাইরের কেউ নেই।কোনো আত্মীয় স্বজন ও নেই।দত্তক নেয়া বাচ্চা বলেই কি এত সাদামাটা আয়োজন?নাকি অন্য কোনো ঘটনাও এর সাথে সম্পৃক্ত? ইদানিং অনেক প্রশ্ন রুশানের মাথায় ঘুরে।সেদিন রেহানের কথার ছলে বলা বাক্য ভেতরে শক্ত বীজ গেড়ে বসেছে।কেমন ভোতা যন্ত্রণা,সারাজীবন যার জন্য অপেক্ষা করে গেলো,সে যেন অন্য কারো হয়ে গেছে।

রুশান ড্রয়িং রুমে বসে অনেকগুলো বেলুন ফুলালো।এরপর সুন্দর করে ঘর সাজিয়ে দিলো,খুব যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে।

রুশান নিজের আয় করা টাকা দিয়েই খুব সুন্দর পুতুল কিনে এনেছে।চাইলেই অনেক দামী উপহার কিনতে পারতো,কিন্তু নিজের আয় করা টাকা থেকে কাউকে উপহার দেয়ার নির্মল আনন্দের অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হতে চায়নি।পড়শোনার ফাঁকে ফ্রি ল্যান্সিং নিয়েও ঘাটাঘাটি করছে,উদ্দেশ্য একটাই,নিজের পায়ে দ্রুত দাঁড়ানো।এত স্বপ্ন,এত পরিকল্পনা শুধু নিজের জন্য না,এখানে আরেকজন মানুষের ও বিস্তর অধিকার আছে।যেই মানুষটার সামনে পায়ের নিচে শক্ত ভিত নিয়ে দাঁড়ানোই এখন জীবনের সবকিছু রুশানের জন্য।

রুশান খেয়াল করলো মাহভিনের জন্মদিন নিয়ে খুব আগ্রহী থাকলেও ভিনা আসলো সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে।এসেই দশ মিনিটের মধ্যে ঘরে যেয়ে পরিপাটি হয়ে এসে কেক কেটেছে।সোহেলের কোলে মাহভিন,মুনা পাশে দাঁড়ানো।দুইপাশে রুশান আর ভিনা দাঁড়ানো।কেকে কাটার পরই ভিনা মোমেনা কে মুনার পাশে দাঁড় করিয়ে নিজে সড়ে গেলো।যে বোনের জন্য এত টান,সে বোনের প্রথম জন্মদিনে ভিনাকে অসম্ভব রকমের বিষন্ন থাকতে দেখে রুশানের মনে রাজ্যের প্রশ্ন জমা হলো।এই প্রশ্নগুলো চোরাবালির মত টেনে নিয়ে যাচ্ছে মানসিক শান্তি।ভিনাকে যেয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে,কেন মেয়ে কেন এত মন খারাপ তোমার?আমাকে বললে কী হয়?নিজেকে চোরাবালি বানিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছো কেন?কী পাচ্ছো এসব করে?এত এত প্রশ্নের উত্তর পাবো কবে?

•••••••••••••••

-তুমি কি সত্যি বলছো?

-হ্যাঁ,ছেলেটার কষ্ট হচ্ছে।

-যদি রুশান নিজেই কাজ করতে চায়?

-সেটা একান্তই ওর ব্যাপার।কিন্তু আমি নিজের মেয়ের কথা ভেবে অন্যের ছেলের ক্ষতি করতে পারিনা অন্তত।কাদের যখন এসেই পরছে,তাহলে ওর উপর এত বোঝা চাপিয়ে দিয়ে লাভ কী?

-রুশান যদি ভাবে কাদেরের কাজ ওকে দিয়ে করিয়েছি,প্রয়োজন শেষ তাই বিদায় করে দিচ্ছি?অন্যভাবে যদি নেয়?ইনসাল্ট মনে করলে?

-রুশান অনেক সহজ সরল ছেলে,এত কম্পলেক্স ওর মধ্যে নেই।সবচেয়ে বড় কথা ওর বয়স কম,পড়াশোনার সাথে এত কাজের চাপ না নিতে পারলেও তো বলবে না।আমি খেয়াল করেছি ও রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরছে,তার মানে ওর বাসায় এসব নিয়ে কোনো না কোনো সমস্যা হচ্ছে।

-ঠিকাছে,তুমি কথা বলো। 

সোহেল আর মুনা কথা শেষ করে ডাইনিং রুমে আসলো।রুশান রাতের খাবার শেষ করে বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।ভিনা ভেতরের রুমে,আজকের দিনে মন খারাপ থাকা অস্বাভাবিক না।এই দিন ঘিরে ওর স্মৃতিগুলো সুখকর না মোটেও।

-বাবা,কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?

-অবশ্যই আঙ্কেল,বলুন না।

-তোমার কি পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজ করতে খুব বেশি চাপ পরে যায় মনে হয়,কাদের তো এসে পরেছে,তুমি চাইলে এখন মাহভিন'স এর কাজ বাদ দিতে পারো। 

-ভিনা কি এ বিষয়ে কিছু বলেছে আঙ্কেল?

-না,আমি নিজ থেকেই বললাম।আমি যেমন ভিনার পড়াশোনার কথা চিন্তা করেছি,তোমার ক্ষেত্রও তাই ভেবে বলছি।আবার তোমার বাসায় যদি এটা নিয়ে কোনো অবজেকশন থাকে?

-আমার বাবার কোনো সমস্যা নেই,বরং আমি কাজ করছি শুনে অনেক খুশি হয়েছে।ছেলে যদি নিজের পকেট মানির ব্যবস্থা নিজেই কর‍তে পারে,তাহলে কার অবজেকশন থাকবে বলুন।

-আর তোমার মার?

-আমার মার ও কোনো সমস্যা নেই।আমার ফ্যামিলির দিকে কোনোই ঝামেলা নেই আঙ্কেল,বাকীটা আপনার ইচ্ছা।আর যেহেতু কাদের ভাই এসেই পরছে,তাহলে আমার তেমন কাজ ও থাকবে না।সেক্ষেত্রে যদি আপনারা চান,আমি আসবো না।

-দেখো বাবা,আমার একটাই চিন্তা,তোমার পড়াশোনার যেন ক্ষতি না হয়।এর জন্যই এই প্রশ্ন।এখন তুমি বলো তুমি কী চাও?

-আমি মন থেকে চাই মাহভিন'স নিয়ে কাজ করতে।কারণ এই বাসায় আমি কাজ করতে আসি মনে হয়না,আপনারা আমাকে এত আপন করে নিয়েছেন,এটা আমার দ্বিতীয় বাসা হয়ে গেছে।কিন্তু ভিনার সূত্রে যেহেতু এখানে আসা,ভিনা না চাইলে আমি মাহভিন'স নিয়ে কাজ করবো না।

-ভিনার সাথে এটা নিয়ে কথা হয়েছে?কী বলেছে ও?

-তেমন কিছু না আঙ্কেল,বলেছে কাদের ভাই এসেছে,তাই যেন আর প্রেশার না নেই কাজ নিয়ে।

-আচ্ছা...আমি ওর সাথে কথা বলবো।

-জ্বি আঙ্কেল,আমার ধীরে সুস্থে জানান,কোনো সমস্যা নেই।আর মাহভিনের জন্মদিনে আমাকে ডাকার জন্য থ্যাংকস, নিজেকে এ বাড়িরই মনে হচ্ছে আমার।

-তুমি এ বাড়ির সদস্যই বাবা,আমার কোনো ছেলে নেই,তুমি আমার ছেলের মতই।

রুশান এ কথা শুনে মলিনভাবে হাসলো।ভিনার বাবা ওকে ছেলের মতো দেখছে,সমস্যা নেই।কিন্তু এতে ভিনা আর ওর মধ্যে যে অলিখিত সম্পর্ক তৈরি হয় সেটা নিয়ে ঘোর আপত্তি আছে।

আজকে আর রিকশা করে বাসায় ফিরলো না রুশান। জেবার দেয়া নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে,গাড়ি করেই অনেকদিন পর বাসায় যাবে।গাড়িতে উঠার পর ড্রাইভার বললো 

-ছোটভাই,আপনের ভাবি সেই শাড়ি অনেক পসন্দো করসে।

-সত্যি?

-হ ভাই,কিন্তু এত ভালো শাড়ি দেবার গেলেন ক্যা?সুতির দিলেই তো হইত!

-এত ভাবা লাগবে না,ভাবির পছন্দ হলেই হলো।

-আপনেও পারেন!তয় এদ্দিন পর আপনেরে দেইখে আমার খুব ভালো লাগতাসে।যে কদ্দিন গাড়ি ছেলো না,যাতায়াত করসেন ক্যামনে?

-বাসে আর রিকশায়।

-সমস্যা হয় নাই?সাত বছর ধইরা আপনেগো গাড়ি চালাইতেসি,ম্যাডাম তো কোনোদিন গাড়ি ছাড়া কোথাও আপনেরে যাইতে দেয় নাই।হটাৎ যে কী হইলো।

-আমার ভালোই লাগে,রিকশায় সমস্যা হয় না,কিন্তু লোকাল বাসে একটু কষ্টই হয়।

-ছোটভাই কি প্রেম করেন নাকি,কিছু মনে কইরেন না আরকি,এমনেই জিগাইলাম।

-নাহ্!সেই কপাল আমার নেই।

-কী যে কন!আচ্ছা তাইলে ম্যাডাম এত চেতসে ক্যান?

-মার তো আগে থেকেই রাগ একটু বেশি,নতুন কিছুনা।

-কী যে ঝামেলায় পরসিলাম!মেডাম কয় আপনের সব খবর দিতে,সাহেব কয় আমি যেন বেশি কথা না কই।

-আপনি কার পক্ষে গেলেন?

-সাহেবের পক্ষে।আপনের কী খবর দিমু?আপনে তো কিছু করেন না।

রুশান হাসলো।নিজের বাসাকে জেলখানা মনে হচ্ছে নিজেকে মনে হচ্ছে অপরাধী,সবসময় এ বিষয়কে হালকাভাবে নিলেও প্রায়ই এ নিয়ে ভীষণ খারাপ লাগা কাজ করে।এই সময়ে এসে যেখানে ডানা মেলার কথা,সেখানে ওর মা ডানা কাটায় ব্যস্ত।

বাসায় এসেই দেখলো ঘরের রঙ পালটে গেছে।সালাম হাসি মুখে গেট খুলেছে,ভেতরে রেহান আর ফারুকের কথার আর হাসাহাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।রুশান ভেতরে ঢুকে দেখলো ফারুক রান্নাঘরে কাজ করছেন,ঘেমে অস্থির হয়ে আছেন।সালাম এক হাতে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরেক হাতে পোর্টেবল চার্জার ফ্যান ধরে রেখেছে।

-কী হচ্ছে এখানে?বাবা?তুমি রান্নাঘরে কী করছো?(রুশান)

-বাবা আজকে স্টিমড সল্টি ফিশ উইথ লেমন এন্ড পেপার বানাচ্ছে।(রেহান)

-মানে লবন লেবু দিয়ে মাছ সেদ্ধ?(রুশান)

রেহান হাসি আটকে রেখে বললো

-ঐত,ঐরকমই আরকি 

-তোরা বুঝবি না তো।ফাইভ স্টার হোটেল গুলো এসব সেদ্ধ মেদ্ধ দিয়েই চলে।আজকে যদি সত্যি এই মাছ মজা হয়,আমি ফুড চেইন খোলার কথা ভাববো।(ফারুক)

-সাহেব,আরেকটু পানি খান,ঘামায়ে গেসেন।উপরের ফ্যান চালাইয়ে?(সালাম)

-রান্নাঘরে ফ্যান ছাড়লে রান্না কীভাবে হবে?তুই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক। (ফারুক)

রুশান উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে দেখছে একটি সুন্দর প্রায়শ্চিত্তের দৃশ্য।ফারুক কিছুক্ষণ পরপরই রেহান কে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছেন।সবই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন,কিন্তু ছেলের ছেলেবেলায় জমা হয়ে থাকা খুনসুটি পুষিয়ে নিচ্ছেন।রুশান খেয়ে এসেছে,তাই তেমন ক্ষিদা নেই,কিন্তু ফারুক আর রেহান এখনো খায়নি।রুশান চলে আসার আগে ভিনা খাবার দিয়ে দিয়েছে পাঁচ জনের আন্দাজে।কিন্তু রুশান এ সম্পর্কে কিছুই বললো না,বাবা ছেলের এই রান্না করার আগ্রহে বিন্দুমাত্র ইন্টারফেয়ার করার ইচ্ছা নেই।এই দৃশ্য অনেক দূর্লভ,প্রাচুর্যের এই জীবনে এই ধরনের অমূল্য মুহূর্ত আসেনি।আক্ষেপ একটাই জেবা নেই এর মাঝে।অপূর্ণতার মাঝেই সুখ খুঁজে নেয়ার বিষয়টা রুশান ভালোমতো উপলব্ধি করছে।অপূর্ণতায় সুখ...রুশান গভীরভাবে ভাবছে।

রাত এগারোটায় স্টিমড ফিশ আর পটেটো চিপ্স নামের সিদ্ধ ভর্তা হওয়া মাছ আর হালকা পোড়া আলু ভাজা নিয়ে ফারুক ডাইনিং টেবিলে আসলেন।খাবারের দিকে তাকিয়েই বুঝে গেছেন,স্বাদ কেমন হবে।তবুও উৎসাহ নিয়ে খেলেন,খাওয়ার পর তিনি হতাশ হয়ে বসলেন।বাসার সবার পেটেই কড়া ক্ষিদা।তখনি রুশান বললো,খাবার আছে ফ্রিজে।পোলাও,রোস্ট,রেজালা আর ফিরনি।খাবারের বিবরণ শুনে ফারুকের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

-কে দিলো খাবার?

রুশান একটু ইতস্তত করলেও পরে বললো

-ভিনা দিয়েছে।ওর বোনের জন্মদিন ছিলো।

-মেয়েটা অনেক লক্ষ্মী।

রুশান মাথা নিচু করে রাখলো লজ্জায়,তার মানে ফারুক জানেন এই ভিনাই হলো সেই মেয়ে।ছেলেকে সহজ করার জন্য ফারুক অন্য কথায় চলে গেলেন।নানা গল্প করে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো সবাই,এরপর তোষক নিয়ে ছাদে গেলো,আজকে ছাদেই থাকবে সবাই।সালাম ও এলো রুশান রেহানের সাথে।ফারুক নিজের জীবনের অনেক গল্প বললেন।গ্রামের শৈশব,বিয়ে,এরপর শহরে এসে নতুন জীবন।ধীরে ধীরে ব্যবসা দাঁড় করানো,এই ব্যবসা কর‍তে উত্থাত পতন আর বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছে।সব শুনে রুশান আর রেহানের মনে সামান্য যে অভিমান আর আক্ষেপ জমেছিলো,সেদিন রাতেই দূর হয়ে গেলো।এত নিশ্চিন্ত আর প্রাচূর্য্যের জীবনের মূল্য কত অমানুষিক পরিশ্রম আর ত্যাগ তা জানতে পেরে দুইছেলের সাথে ফারুকের দূরত্ব ছিলো,এক রাতের ব্যবধানে ঘুচে গেলো।

••••••••••••••

-কবির,একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো?

-কী ব্যাপার কাকন?

-ফারজানা কেমন যেন হয়ে গেছে।

-মানে?

-কীভাবে বুঝাই....এখন বেশিরভাগ সময়ে রুম বন্ধ করে রাখে,ড্রেস আপ ও যেন কীভাবে করে।ইদানিং আপা ফোন দিলেও নাকি ধরেনা,পরে আপা আমাকে ফোন দেয় কথা বলার জন্য।

-পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে মনে হয়।জানোই তো দুলাভাই খরচ তেমন দেয় না,স্কলারশিপে যতটুকু কুলায় ততটুকুই।মেয়েটা কী করবে বলো।

-ভার্সিটিতে উঠেছে প্রায় বছর হয়ে যাচ্ছে,আগে তো এমন ছিলো না।হটাৎ কেন এমন করছে?সেদিন তিথিকে পড়াতে বললাম,তাও পড়ালো না।

-ফারজানাকে কোনোকিছু নিয়ে প্রেশার দিও না।আপা এমনেই অনেক চিন্তায় থাকে ওকে দূরে রেখে।পারলে একটু আদর স্নেহ দিয়ে রাখো।

কাকন কোনো কথা বাড়ালো না।ইদানিং ব্যাগের টাকার হিসাব মিলে না।যেভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে তাতে অবশ্য হিসাব না মিলারই কথা,কিন্তু আন্দাজ তো সবারই থাকে।কবিরকে এ বিষয় বলতে নিয়েও কিছু বলেনি,কারণ ভাগ্নিকে অনেক স্নেহ করেন কবির,বোনকেও অনেক ভালোবাসেন।হুট করে চুরির অভিযোগ আনা যাবে না কখনোই।বড় কথা হলো কাকন নিজেও দ্বিধায় আছে,কারণ হাজার হোক,ফারজানাকে মেয়ে হিসেবে সবসময়ই ভালো জেনে এসেছে।অনেক্ষণ চিন্তাভাবনা করার পর কাকন সিদ্ধান্ত নিলো নিজের ব্যাগ সামলে রাখার এবং টাকা আলমারিতে তুলে রাখার,হাজার হোক,নিজের আগে সচেতন হওয়া জরুরি।

•••••••••••••

রেহান ফোন হাতে বসে আছে।রুশান উৎসুক চোখে রেহানের দিকে তাকানো।

-এভাবে তাকিয়ে থাকিস দেখেই ভিনা তোকে সহ্য করতে পারেনা।

-ধুর ভাইয়া,একেবারে কলিজায় হার্ট করো।

-আমি প্রেম করতে যাচ্ছিনা,এভাবে তাকানোর মানে নেই।

-আর কতদিন এমন দেবদাস থাকবা?

-আমি কিন্তু ফোন দিবো না,ফাযিল।

-আমি অন্য রুমে যাচ্ছি।তুমি কথা বলো।

-শোন,মাথায় ঢুকায় নে,এইটুকু কথায় ভিনার ব্যাপারে কিছুই জানতে পারবো না।

-জোর করে আসলে কিছুই হয় না ভাইয়া।ভাগ্যে থাকলে এমনিই সব হবে।এখন ভিনা হেল্প চেয়েছে,ওটাতেই ফোকাস করি।

রুশান মন খারাপ আর চোখভর্তি নিরাশা নিয়ে চলে গেলো।রুশানের এই মলিন চেহারা রেহানকে ভাবনায় ফেলে দিলো।এই ভাবনা মাথায় রেখেই প্রিতিকে ফোন দিলো রেহান।

-হ্যালো,প্রিতি বলছেন?

-জ্বি,আপনি নিশ্চয়ই রেহান?

-হ্যাঁ।ফোন দিতে দেরি হয়ে গেলো,আমি ব্যস্ত ছিলাম এই কয়দিন।

-কোনো সমস্যা নেই।

-রুশান বললো আপনি নাকি পড়াশোনা শুরু করতে চাচ্ছেন আবার?

-হ্যাঁ। অনেকদিন গ্যাপ পরে গেছে।

রেহান সরাসরি মেইন কথায় চলে গেলো।প্রায় আধাঘন্টার মতো কথা হলো রেহান আর প্রিতির।কোন ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশনের পড়াশোনার জন্য ভালো হবে,কীভাবে কন্টিনিউ করবে সব জানালো।রেহান আগেরদিন এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছিলো নিজের বন্ধুদের কাছ থেকে।কথার প্রায় শেষ পর্যায়ে প্রিতির কথায় রেহান আশ্চর্য হলো।

-আপনি তো ভিনাকে চিনেন,তাইনা?

-হ্যাঁ, রুশানের ফ্রেন্ড তো।

-রুশান কি আপনাকে সব বলে?

-জ্বি?

-কিছু মনে করবেন না,আমি আসলে জানতে চাচ্ছিলাম,আপনাদের সম্পর্ক কেমন?রুশান কি আপনার সাথে সব শেয়ার করে?

-অনেক ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক আমাদের।

-তাহলে নিশ্চয়ই জানেন,রুশান ভিনাকে পছন্দ করে?

-হ্যাঁ.... জানি।

-রুশানের ভাই হিসেবে না,একজন গ্রোন আপ মানুষ হিসেবে জিজ্ঞেস করছি,আপনার কি মনে হয়?রুশান ভিনাকে সত্যিই ভালোবাসে?

-আপনার কেন মনে হলো আমি যা বলবো সত্যি বলবো?আফটার অল রুশান আমার ভাই।

-বিশ্বাসের মর্যাদা পাওয়ার জন্য আগে বিশ্বাস করতে হয়।নাই যদি করি,বুঝবো কীভাবে সে সত্যি বলবে?আর আমার বয়স তো কম না,আমি মানুষের কথা শুনে বুঝতে পারি,সে সত্যি না মিথ্যা বলছে।

-তার মানে আপনি আমাকে বিশ্বাস করলেন?

-হ্যাঁ,অবশ্যই। অবিশ্বাস করার মতো আপনি কিছুই করেননি।

রেহান প্রিতির কথায় মুগ্ধ হলো।সরল আর কঠোরতার মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করেছে।

-রুশান আর ভিনার ব্যাপারে অনেক কিছু বলার আছে আপনাকে।একদিন সময় দিতে পারবেন?

-ফোনে দিতে পারবো। 

রেহান মুচকি হেসে বললো-

-অবশ্যই।
.
.
.
চলবে.........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp