অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৩৫ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-তার মানে...আমি কাজ করছি?

-বাবা যখন বলেছে,তাহলে অবশ্যই। কিন্তু আগের মতো চাপ নিতে হবে না।সপ্তাহে দুই তিনদিন সময় দিলেই হবে।পড়াশোনায় আগে মনোযোগ দিস।

লেকের পাশে হাঁটছে ভিনা,ভিনার পাশে রুশান।খুব শান্ত পরিবেশ আশেপাশে,ভিনার মধ্যে গতদিন যে অস্থিরতা আর অস্বস্তি ছিলো,সেটা এখন নেই।গত সেমিস্টারের রেজাল্ট দিয়েছে কয়দিন আগেই।এখন তেমন চাপ ও নেই পড়াশোনার। 

-একটা প্রশ্ন করি?

-কর...

-জন্মদিনে এত মনমরা লাগছিলো কেন তোমাকে?

-এমনিই,ছোটবেলার কথা মনে পরছিলো।মাকে অনেক মিস করছিলাম।

-তোমার কি নিজেকে অনেক আলাদা মনে হয় এই পরিবার থেকে?

ভিনা রুশানের দিকে খানিকটা বিভ্রান্ত দৃষ্টিতেই তাকালো।এমন প্রশ্ন রুশানের কাছ থেকে শোনার কথা ছিলো না।

-না তো।তোর হটাৎ এটা মনে হলো কেন?

-কারণ তোমার বাবা মা আর মাহভিনের আলাদা সংসারে নিজের একা ফিল হতেই পারে।শুনলাম তোমার মার সাথে অনেক বেশি এটাচড ছিলে।

ভিনার নম্র চেহারায় মুহুর্তেই রুক্ষতা এসে পরলো।রাগ চেপে রাখলেও গলার স্বরে সেটা লুকাতে পারলো না।

-বাবা তোমাকে এসব বলে?

-না মানে...এমনি কথায় কথায় আসছে।

-আর কী বলেছে?

-কে?কী বলেছে?

-দেখ রুশান,বাবা তোকে কী বলেছে চুপচাপ বল।

-খারাপ কিছু বলেনি।তোমাদের ফ্যামিলি,তোমার চাইল্ডহুড,আঙ্কেল আর শিউলি আন্টির পরিচয় এসবই।

-এত পার্সোনাল কথা তোমাকে বলেছে কী কারণে?

রুশানের বুকে যেয়ে কথাটা লাগলো।এক বাক্যের মাধ্যমেই ভিনা বুঝিয়ে দিলো,রুশানের অবস্থান একজন অপরিচিতর মতই।রুশান কাঁদতে চায়না,ছেলেদের এত ফ্যাচফ্যাচ কর‍তে নেই,বিশেষ করে কোনো মেয়ের সামনে তো নাই ই।সময় নিয়ে তাই উত্তর দিলো-

-আমাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে,তাই।

ভিনা আর কোনো কথা বললো না।লেকের একদম ধার ঘেষে হাঁটতে লাগলো,দ্রুত।রুশান নিজের হাঁটার গতি ইচ্ছা করেই কমিয়ে দিলো,কেন যেন মনে হলো,ভিনা একটা থাকতে চায়।

•••••••••••••••

-আমার বোনের এমন করেন কেন দুলাভাই?এত বছর সংসার করে এই বুড়া বয়সে এসব মানায়?

ফারুক নিজের শ্যালক মেজবার গুরুগম্ভীর উপদেশ শুনছে।তার এই শ্যালকের বিশেষ গুণ সবাইকে নানাবিষয়ে উপদেশ দিয়ে বেড়ানো যার সিকিভাগ ও সে নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে না।দাম্পত্য জীবনের সুখী থাকার নানা টোটকা তার কাছে থাকলেও এটা তার দ্বিতীয় বিয়ে এবং সেই বউ ও বাপের বাড়িতেই থাকে বছরের সাত-আট মাস।

-সংসারে ঝগড়ার আমার নির্দিষ্ট বয়স আছে নাকি?বুড়ো হলেই যে ঝগড়া করা যাবে না,এমন কোনো নিয়ম কানুন তো শুনিনি।

-এহহে দুলাভাই!আপনিও সোজা কথা বুঝেন না।দুইদিন পর আপনার ছেলেরা বিয়ে করে বউ ঘরে তুলবে,এখনও যদি আপনাদের মধ্যে খিটমিট থাকে,কথা ডিভোর্স পর্যন্ত যায়,এগুলা কী মানায়?

-ডিভোর্সের কথা কখন আসলো?

-আপা আসছে কেন আমাদের ঘরে তাহলে?আপনি নাকি আলাদা হতে চান?

জেবা পাশেই বসে ছিলেন।ভাইয়ের বোকামি দেখে মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে।ছাগল বুঝেও না কথার কথা কী।কেমন সুরসুর করে কথা বলে যাচ্ছে।

ফারুক একবার জেবার দিকে তাকালেন,কিন্তু কিছু বললেন না।চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাই বোনের ড্রয়িং রুম ড্রামা উপভোগ করছেন।

কথার মাঝখানে মেজবা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

-আমার বড়বোন দুলাভাই অনেক কষ্ট করেছে জীবনে।আমাদের ভাই বোনদের দেখে রেখেছে।এত নরম মনের মানুষের মনে আঘাত করবেন না প্লিজ।

-করবো না।

-আর ছেলেদের মানুষ করতে গেলে মায়ের হাতে শাসন একটু রাখাই লাগে,এটা খারাপ কিছুনা।ছেলেরা কি মায়ের কাছে কখনো বড় হয়?আপনার ছেলে যেন আপনার মতই হয়,এর জন্যই আপা একটু শাসন করে।আপনার জন্যই তো দুলাভাই।

-আমার মতো বানাতে চায় ছেলেদের?আমার মা তো সাত বছর বয়সেই আমাকে একা চলা শিখিয়েছে,কখনো আঁচলে বেঁধে রাখেনি।

মেজবা চুপসে গেলো।সামনে রাখা নাস্তা গোগ্রাসে খেতে লাগলো,এবং পুরো ঘরে চোখ বুলাতে লাগলো।
ফারুক জানেন পরবর্তী কথা কী হবে।

-আল্লাহ তো অনেক দিলো আপনাকে দুলাভাই,মাশাল্লাহ।তা..কোথায় কী প্রোজেক্ট করছেন এখন?

-আপাতত উত্তরায় পাঁচ কাঠার একটা প্লট নিয়ে কাজ হচ্ছে।

-হায় হায়!আগে একসাথে কত কাজে হাত দিতেন!

-বয়স হয়ে গেছে।এখন বেশি কাজ নেইনা।

-আমার একটা বন্ধু আছে বুঝলেন,খুব ভালো মানুষ,আর ব্যবসা যে কী ভালো বুঝে!আপনি চাইলে তাকে বলতে পারেন।

-না।কম আয় আসলে কম খাবো।কিন্তু এখন নতুন কাউকে নিবো না আমি।

-আপনার ইচ্ছা,আমি তো আপনার কাজ সহজ করতে চাই।যাক গে,রেহান তো আসলো বিদেশ থেকে,চাকরিতে ঢুকবে না?

-ওর টা ঐ ভালো বুঝবে।যথেষ্ট বড় হয়েছে,কখন চাকরি করবে না করবে এটা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।

-চাকরিতে ঢুকলে না একটা বিয়ের ব্যবস্থা করা যেতো। 

-ছেলে বড় হয়েছে,ও ওর মতো বিয়ে করুক।

-ছেলে কি আর ভালো মেয়ে চিনবে?হুট করে তো ফাবিহা নাকি নাবিহা কাকে যেন বিয়ে করতে নিলো,ভাগ্যিস আপা মাথা খাটিয়েছিলো।নাহলে কপাল পুড়তো।

-মেয়েটার কপাল পুড়তো।সেই মেয়ে এখন দেশের বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট।এই সংসারে আসলে অশান্তিতে কিছুই হতো না ওর।

জেবা রাগে ঠাস করে চায়ের কাপ টেবিলে রেখে উঠে চলে গেলো।ফারুক নির্লিপ্ত থাকলেন।কারণ মেজবাকে উনি জেবার চেয়েও ভালো চিনেন।প্রায় বারো লাখ টাকা ধার নিয়ে মেজবা এখনো সেটা ফেরৎ দেয়নি।জেবা নিজেও এই খবর জানে না।আর জেবার থেকেও যে নিয়মিত টাকা নেয় উনার শ্যালক,এটাও ফারুকের অজানা নয়।বর্তমানে রেহানের বিয়ে নিয়ে তোড়জোড়ের কারণ একটাই,মেজবার বড় মেয়ে সুরাইয়াকে এ বাড়িতে ঢুকানো।অন্য যেকোনো মেয়ে রেহান বিয়ে করলেও সুরাইয়াকে নিয়ে ঘোর আপত্তি আছে ফারুকের,কারণ এই মেয়ের ব্যাপারে উনি জানেন ভালোমতো।

-আপনি সুযোগ বুঝে কথা বলেন না দুলাভাই।এইত আপা রেগে গেলো।

-মেয়েদের স্বভাব আছে রাগ করার,আমি সময়মতো ওর রাগ ভাঙাবো।

-আপনাদের বিষয়,আমি আর নাক না গলাই।এমনিও মানুষের বিষয়ে আমি বেশি কথা বলিনা।বাদ দেন এসব,রেহান কোথায়?

-জানি না।হয়ত সায়বার বাসায় গেছে।

-ছেলের খবর রাখা জরুরি তো।আপনাদের যদি এসময় বুঝাতে হয়...

ফারুক মেজবার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকালেন।মেজবা এতে ভয় পেলো কিছুটা।বিদায় নিয়ে উঠে যাওয়ার সময় ফারুক ডেকে বললেন-

-সায়বার বাসায় যেয়ো না এখন,ওরা বাইরে ঘুর‍তে যেতে পারে।

মেজবা থতমত খেয়ে গেলো,আসলেই সে সায়বার বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো,রেহানের সাথে দেখা করার জন্য,মেয়েকে এই বাড়িতে গছাতে হলে মেয়ের জামাইয়ের সাথে ভাব বাড়ানো প্রয়োজন ছিলো।কিছু না করতে পেরে তাই বিরস গলায় না বলে চলে গেলো।

মেজবা চলে যাওয়ার পর নিজের ঘরে আসলেন ফারুক।জেবা রাগে আগুন হয়ে আছেন।

-এত রাগ করছো কেন?সন্তান তো আমাদেরই।আমি তো অন্য কারো হয়ে তোমার সাথে যুদ্ধ করিনি।

জেবা একবার ফারুকের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।

-তোমার ভাইয়ের কাছে যে বললে ডিভোর্সের কথা,এটা সে সব জায়গায় চাউর করে বেড়াবে,সেটা কি জানো?

-আমার ভাইয়ের ব্যাপারে এসব বলার রাইট তোমার নেই।তাই আমাকে এসব বলবা না।

-ফাইন।কিন্তু একটা ব্যাপার মনে রেখো,যে ভাইয়ের জন্য এত দরদ দেখাচ্ছো,সে কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি তোমাকে নিজে কাছে রাখেনি।অনেক ভ্যালিড রিজন দেখাতে পারে,যেটা তুমি বিশ্বাস ও করেছো,কিন্তু সে রাখেনি। শেষে তোমার ঘরেই তো ফিরতে হলো।তাহলে নিজের ঘরের মধ্যে এসব যুদ্ধ যুদ্ধ না করলে কি হয় না?

জেবার মনে হলো উনি অনেক বড় কোনো ভুল করে এসেছেন পুরো জীবন।এই ভুলকে তিনি দুইদিকে নিতে পারেন,হয় প্রায়শ্চিত্ত করবেন,নয়ত এই ভুল আরো টেনে নিয়ে যেতে থাকবেন।

••••••••••••••

-আপনি ভার্সিটিতে যাওয়া কবে শুরু করবেন?

-বিড়ালগুলোর ব্যবস্থা করে।

-মানে?ঠিক বুঝলাম না।

-আমি আর ভিনা বিড়াল পালি দুইটা,চকো আর ব্ল্যাকবেরি।আমি ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করলে ঘর পুরো ফাঁকা থাকবে।তাই একটা ব্যবস্থা করা জরুরি।

-আমি কখনো বিড়াল নিয়ে কাউকে এত কনসার্ন হতে দেখিনি।

-আপনিও বিড়াল পালা শুরু করেন,দেখবেন এমনিই মায়া জন্মাবে,সহজে ছাড়তে পারবেন না।

-আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ে ছিলো।ঐ মেয়ের ফস্টার হোম আছে বিড়ালের।নাবিহাও একবার বিড়াল দিয়েছিলো ওর কাছে,কারণ ওর বাসায় রাখতে দেয় না।

কথাটুকু বলেই রেহান একদম চুপ হয়ে গেলো।হটাৎ ই বিষন্নতা জেঁকে বসলো।

-আমি একটু ব্যস্ত আপনাকে পরে ফোন দেই?

-ঠিকাছে।

প্রিতি ইচ্ছা করেই ফোন রেখে দিলো,কারণ যে করেই হোক বুঝতে পেরেছে,নাবিহা নামের সাথে রেহানের কোনো সম্পর্ক আছে।কী সম্পর্ক আছে,সেটা সময়ের সাথে হয়ত জানা যাবে।সব চিন্তা পাশে রেখে দুই হাতে চকো আর ব্ল্যাকবেরিকে গোসল করাতে নিয়ে গেলো।

গোসল করিয়ে ওদের খাবার দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।ভিনার জন্য বাটিতে মুরগির রানের সাথে বড় আলু এবং দুই পিস পটল ভাজা তুলে রেখেছে।প্রিতি নিজে পটল একদম অপছন্দ করলেও ভিনার খুবই পছন্দ এটা।তাই প্রায়ই দিনই এটা রাখার চেষ্টা করে।
দেরি করে দুপুরের খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকায়,বিকেল হয়ে গেছে।সুন্দর এই বিকেলে বারান্দায় টুলে বসে আশেপাশে দেখতে লাগলো প্রিতি।বারান্দায় আগে প্রায়ই বসে থাকার অভ্যাস থাকলেও আশেপাশে দেখা হতো না কখনোই।মনোযোগ দিয়ে বাইরে দেখার সময় রেহানের ফোন আসলো।প্রিতি বেশ অবাক হলো ফোন পেয়ে,এই সময়ে ফোন দেয়ার কথা না রেহানের।

-হ্যালো?

-হ্যালো,ব্যস্ত আপনি?

-না,সব কাজ শেষ করে বারান্দায় আসলাম।

-একটা প্রশ্ন করি?

-অবশ্যই। 

-আপনি কি সত্যিই ব্যস্ততার জন্য তখন ফোন রেখেছিলেন?

-না

-আমারো তাই মনে হয়েছে।কেন রেখেছিলেন তাহলে?

-আমার মনে হলো নাবিহার কথা বলতে গিয়ে আপনি ইমোশনাল হয়ে গেছেন।তাই কথা বাড়াইনি।

-আসলে নাবিহা আমার প্রাক্তন প্রেমিকা।

-আমি বুঝতে পেরেছি।এসব কথা থাকুক।মানসিক চাপ পরে এসব নিয়ে ভাবলে।

-কিন্তু নাবিহা আমার সাথে কোনো প্রতারণা করেনি।

-আমি কখনোই বলিনি সে প্রতারণা করেছে আপনার সাথে।কিন্তু যেহেতু প্রাক্তন শব্দটা ব্যবহার হচ্ছে তার ক্ষেত্রে,তার মানে নিশ্চয়ই কোনো বিষয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে আপনাদের।নাহলে অবশ্যই সে আপনার সাথে থাকতো।ভালোবাসার মানুষকে মনে করলে কষ্ট লাগে না,তার সাথে বিচ্ছেদের ঘটনা মনে করলে কষ্ট হয়।দরকার কি সেটা মনে করার?

-আপনার সাথে আমার বেশিদিনের পরিচয় হয়নি।কিন্তু এই অল্প সময়ে যে কার্টেসি আপনি দেখিয়েছেন,সেটা আমি আমার কোনো বন্ধুর কাছে পাইনি।

-না পেয়ে থাকলে তারা আপনার বন্ধুই না।

-হয়ত।

-বাদ দিন এসব।ফোন দিয়েছেন কেন?কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু?

-আসলে,ভিনার ব্যাপারে কথা ছিলো।ভিনা কি কোনোকিছু নিয়ে আপসেট? ওর কি কোনো পাস্ট আছে?

-আপনি তো ভিনাকে চিনেন না।আপনি জানলেন কীভাবে?

-রুশানের কাছ থেকে।

-তাহলে রুশানকে বলুন সেই কারণ খুঁজে বের করতে।এতে ওরই লাভ হবে,কারণ খুঁজতে গিয়েই ও ভিনাকে জানতে পারবে ভালোমতো।আমি বলে দিলে কী লাভ বলুন?

রেহান বিস্মিত হলো।এত সুন্দর উত্তর পাবে,ধারণা ছিলো না।প্রিতি এক কথার মাধ্যমেই ভিনার ব্যাক্তিগত জীবনের গোপনীয়তাও রেখেছে আবার রুশানের জন্য ও ভালো উপদেশ দিয়েছে।

-ঠিক বলেছেন।আমি সহমত আপনার সাথে।

-থ্যাংক্স

-একটা অনুরোধ রাখবেন?তুমি করে কি বলা যাবে আপনাকে?

প্রিতি কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো,

-হ্যাঁ, কেন যাবে না।

••••••••••••••

ফারজানা কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে।আজকে রেজাল্ট দিয়েছে। হোসনে আরার কোর্সে ফেইল শো করেছে,যার কারণে রিটেক নেয়া লাগবে।এই এক কোর্সের জন্য পুরো সিজিপিএ ফল করেছে।এর অর্থ,পরের সেমিস্টারে পুরো টাকা দিতে হবে।এতটাকা ফারজানার বাবা কখনোই দিবে না।এসব কিছু হয়েছে ভিনার জন্য।

পুরো রাত কান্নাকাটির পর অনেক্ষণ ভাবলো।এরপর রুশানের কাছে ফোন দিলো।রুশান রাত জেগে পড়ে,যার কারণে সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করলো।

ফারজানা ফুঁপিয়ে বললো-

-আমাকে ক্ষমা করে দাও রুশান।আমি গত কয়দিন ধরে অনুশোচনায় ঘুমাতে পারছিনা।আমি সত্যি ভিনাকে অনেক ভুল বুঝেছি।সেটার ফল ও সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিয়েছে।

মধ্যরাতে হুট করে ফারজানার ফোন পেয়ে এবং এরকম কান্নাভরা কন্ঠ শুনে রুশান চিন্তায় পরে গেলো।গলার স্বর শান্ত রেখে বললো

-কী হয়েছে?

-আমাকে ক্ষমা করে দাও!আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি!

-ঠিকাছে। আর কী হয়েছে?

-আমার ফেইল এসেছে এক কোর্সে।মিস রুদমিলা আমাকে ফেইল করিয়ে দিয়েছেন। 

-সমস্যা নেই।রিটেক নাও।রিটেকের সিজিই কাউন্ট হয়,আগেরটা হবে না।

-আমার সেমিস্টার ফি বাবা দিবে না।নরমাল ফি ই দেয় না,রিটেকের টা দেয়ার প্রশ্নই নেই।

-এখন কী করবে তাহলে?

-আমার হেল্প দরকার রুশান।নাহলে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে।বাড়িতে চলে যেতে হবে।আমার পুরো জীবন থেমে যাবে!আমাকে কিছু টাকা লোন দাও,আমি তোমাকে যেভাবেই হোক ফেরত দিয়ে দিবো।

রুশান ঢোক গিললো।নিজের সেমিস্টার ফি নিয়েই বাসায় অপমানিত হয়েছে,এখন ফারাজানার টা কীভাবে দিবে?কিন্তু মুখের উপর না করাও সম্ভব না।পুরোটা না দিলেও,কিছুটা সাহায্য করা উচিৎ ই।আর এই টাকা দেয়ার পর যদি ফারজানা রুশানের কথা শুনতে বাধ্য থাকবে,সেক্ষেত্রে ভিনার ব্যাপারে বাজে কথা বলার সাহস পাবে না।সব ভেবে রুশান জানালো-

-ঠিকাছে,আমি আগামী সপ্তাহে তোমাকে যতটুকু পারি দিবো।

-থ্যাংক্স!আমি এই ঋণ কখনো ভুলবো না।

ফারজানা ফোন রেখে বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো।শুধু যে সেমিস্টার ফি দেয়া যাবে তা না,এই টাকা শুধু এক কারণে নেয়নি।এর সাথে আরো বড় পরিকল্পনা আছে।
.
.
.
চলবে.........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp