অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৪৩ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-- বাইরে আয় রুশান।এভাবে কয়দিন ঘরে বসে থাকবি?
-- আমার ভালো লাগছে না ভাইয়া।প্লিজ আমাকে ডেকো না।আই বেগ।
-- কাউন্সেলিং লাগলে নে,ঔষধ খা।আমার পরিচিত ভালো সাইকোলজিস্ট আছে।তাও এভাবে থাকিস না।
-- আমি একা ভালো আছি।প্লিজ,লিভ মি এ্যলোন।
-- ভার্সিটিতে অন্তত যা।দুইটা সেমিস্টার ড্রপ দিয়েছিস,এভাবে পিছিয়ে গেলে কীভাবে হবে?
-- আমি পরে ভাববো এ বিষয়ে।
-- ভার্সিটিতে কোনো সমস্যা হয়েছে?কিছু না বললে কীভাবে বুঝবো?অন্য ভার্সিটিতে ভর্তি হবি?
-- না....
-- বাদ দে।স্যাটের প্রিপারেশন নে।বাইরে চলে যা।কাইফের কাছ থেকে জেনে নে।
-- ভাইয়া প্লিজ....

রেহান রুশানের ঘরের দরজা আটকিয়ে বেরিয়ে আসলো।গত পাঁচ মাস ধরে রুশান ঘরে এক রুমে নিজেকে আটকে রেখেছে৷রেহান কোনোভাবেই বের করতে পারেনি রুশান কেন এমন হয়ে গেছে।হাসি খুশি প্রাণোচ্ছল এই ছেলের এমন কষ্টকর পরিবর্তন মেনে নেয়া যায় না।রেহান ফিরে ফারুক সাহেবের ঘরের দিকে আগাতেই জেবার সাথে দেখা হয়ে যায়।রেহান কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না,সুযোগ পেলো না আসলে।জেবা বেশ সাবধানে ছেলেকে এড়িয়ে রুশানের ঘরের দিকে চলে গেলেন।রেহান কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে রইলো।

-- বাবা খুঁজছে তোমাকে।
-- হুম...বাবার কাছেই যাচ্ছিলাম।
-- রুশানের সাথে কথা হয়েছে?কিছু বলেছে তোমাকে?

প্রিতি চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো।উত্তরের আশায় রেহানের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে।

-- না।মার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।ওকে ভালো কোনো সাইকোলজিস্ট এর কাছে দেখানো প্রয়োজন।

প্রিতি মিইয়ে গেলো যেন।নিচু গলায় বললো-

--পরিচিত কারো কাছে নিবে?
-- হ্যাঁ,বলেছিলাম না সাইদের কথা?ওর বোন যে হস্পিটালে বসে সেখানেই একজন রিনোন সাইকোলজিস্ট বসে।সিরিয়াল পাওয়া ঝামেলার যদিও,কিন্তু সাইদের বোন ব্যবস্থা করে দিতে পারতো।

অন্য সাইকোলজিস্টের নাম শুনে প্রিতি সন্তোপর্ণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।রেহান পুরো বিষয়টা ধরতে পেরেছে।কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারলো না 'আমি এখন তোমারই'।কিন্তু শেষে বললো- 
-- নাবিহা সাইকিয়াট্রিস্ট, সাইকোলজিস্ট না।

 গত পাঁচ মাসে সবার জীবন বদলেছে অনেকখানি।সবচেয়ে বেশি বদলেছে রুশানের, সেটার প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ প্রভাব অবশ্য সবার জীবনেই পরেছে।জেবা নিজের ছোট ছেলের করুণ অবস্থায় এতটাই ভেঙ্গে পরেছিলেন যে রেহানের বিয়ের কথা শুনেও উনি বেশি প্রতিক্রিয়া করেননি।তবে কষ্ট পেয়েছেন,রেহানের সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছেন পুরোপুরি এবং প্রিতির সাথে দরকার ছাড়া কথা বলেন না।রেহান এবং প্রিতি দুইজনই ফারুক সাহেবের ঠিক করে দেয়া বাসায় উঠে গিয়ে সংসার শুরু করেছে মাস তিনেক আগেই।সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রিতি রেহানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এসে পরে।যদিও জেবা ভালোভাবে বিষয়টা এখনো নেননি,কিন্তু প্রিতি চেষ্টায় ত্রুটি রাখছেনা।রেহান বর্তমানে একটি ইন্টারন্যাশনাল অটোমোবাইল কোম্পানিতে ভালো পোস্টে চাকরি করছে,প্রিতি পুরোদমে পড়াশোনায় মন দিয়েছে এবং চকো বেরিকে নিয়ে ভালোই আছে।ভিনা বেশিরভাগ সময়ে প্রিতির কাছেই থাকে,মাঝে মাঝে নিজের বাসায় যায়।ব্যস্ততার কারণে ভিনাকে এখন পাওয়াই যায় না।সিক্সথ সেমিস্টার চলছে,সিনিয়র ইয়ার।এদিকে অনলাইন বিজনেসে পুরো কাজ ওর উপর যেয়ে পরেছে।রুশান গত পাঁচ মাস ধরে মাহভিন'স এর সাথে যুক্ত নেই।ভিনার অবশ্য এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথাও নেই।

প্রিতি ধীরে ধীরে রুশানের ঘরের দিকে আগালো,জেবা ছেলের দরজায় নক করেই যাচ্ছেন।একসময় কান্নায় ভেঙে পরলেন,মাটিতে বসে পরার আগেই প্রিতি যেয়ে ধরলো তাকে।

-- রুশানকে একটু দরজা খুলতে বলো প্রিতি,আমি মরে যাবো এভাবে চলতে থাকলে।
-- আপনি ঘরে চলুন মা,আমি রুশানের সাথে কথা বলবো।আপনি ঘরে আসুন আমার সাথে।
-- এমন করছে কেন আমার মানিক?আমার যে সহ্য হচ্ছে না.....সহ্য হচ্ছে না রে প্রিতি....

জেবা আর কথা বলতে পারছেন না,অঝোর কান্নায় নিঃশ্বাস ভারি হয়ে গেছে তার।প্রিতি কোনোমতে রেহানকে ডাক দিয়ে জেবাকে ধরে ঘরে পাঠালো।ফারুক সাহেব জোর করে আধা বাটি স্যুপ খাইয়ে পরে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পারালেন স্ত্রীকে।এরপর ইজি চেয়ারে শরীর ছেড়ে দিয়ে বসলেন।একটার পর একটা ঝড় যাচ্ছেই তার পরিবারে।

প্রিতির দম বন্ধ হয়ে আসছে এই পরিবেশে।কাউকে মন খারাপ দেখলেই এমন লাগে।সবাই হাসি মুখে থাকবে,গল্প করবে,পরিবার তো এমনই হয়।কিন্তু একমাত্র রুশানের জন্য সবার মাঝে বিষন্নতার ছাপ।হুট করেই একদিন রুশান নিজেকে আলাদা করে গৃহবন্দী করে ফেললো।কাউকে কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত দিলো না।প্রিতি যদিও বুঝেছিলো বিষয়টা ভিনার সাথে সম্পর্কিত,কিন্তু কী সেটা ধরতে পারেনি।ভিনাকে অসংখ্য বার প্রশ্ন করে গেলেও ভিনা এড়িয়ে গেছে।ইদানিং ভিনাও কথা বলে না তেমন।

••••••••••••

লোহার বিশাল বড় গেটের বাইরে ভিনা দাঁড়ানো।জায়গাটা সুনসান,পাখির আওয়াজ পাওয়া যায় মাঝে মাঝে।অসংখ্য গাছ থাকায় শান্ত শীতল অনুভূতি হয়।কবরস্থান জায়গায়টাকে আগে ভীষণ ভয় পেলেও এই মুহূর্তে ভিনার সেখানেই নিজের ঠিকানা বানানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা কাজ করছে।মা হারানোর নয় বছরে একবারো ভিনা মায়ের কবর দেখতে আসেনি।জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে এরকম শায়িত অবস্থায় দেখার মানসিক শক্তি কখনো ভেতরে তৈরি হয়নি।এত কাছে থেকেও ছুটে গিয়ে জড়িয়ে না ধরতে পারার কষ্ট বুকে হাহাকার তৈরি করেছে।এখানে আসার আগে নিজের বাবাকে শুধু জিজ্ঞেস করে এসেছিলো এই কবরস্থানের কোথায় কবর দেয়া হয়েছিলো।সোহেল বলেছিলেন স্ত্রীর কবরের উপরে শিউলি গাছ লাগিয়েছিলেন,গেটের ডান দিকে তৃতীয় সাড়ির পঞ্চম কবরই শিউলির।
ভিনা এক দৃষ্টিতে সেই কবরের দিকেই তাকিয়ে আছে অনেক্ষণ ধরে।দাড়োয়ান এসে প্রথমে বলেছিলো ভেতরে ঢোকা যাবে না।ভিনা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়েছিলো। এতক্ষণ ভিনাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুড়ো সেই দাড়োয়ান এগিয়ে আসলো।

-- আপনের কে হয়?
-- মা।
-- ভেতরে যাউ,তয় বেশিক্ষণ থাইক্যো না।কান্দা কাটি কইরা দাপড়াইয়ো না,এমুন করা ভালো না।

ভিনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো-
-- না চাচা।ভেতরে যেতে পারবো না,এত কষ্ট সহ্য করার শক্তি আমার নেই।

সন্ধ্যার দিকে কবরস্থানের আশেপাশের এলাকা আরো নীরব হয়ে গেলো।ভিনা হাঁটা ধরলো বাসার দিকে।জীবনে একা থাকতে হয়েছে বেশিরভাগ সময়।কিন্তু একাকীত্ব কখনো এত ভারী হয়নি।কত কথা জমে আছে, কত কথা বলার আছে কিন্তু কেউ নেই।

পাঁচ মাস আগে একদিন মধ্যরাত তিনটার সময় রুশান ফোন দিয়েছিলো ভিনাকে।ফোন দিয়ে একটা কথাই বলেছিলো-'ছাদে আসো'।

ভিনা যে বিল্ডিং এ থাকে,সেখানকার দাড়োয়ান রুশানকে ভালোমতো চিনে।এছাড়াও রুশানের ভালো ব্যবহারের কারণে সবার সাথেই খুব সহজে খাতির হয়ে যায়।সেদিন তাই বিল্ডিং এ ঢুকতে কোনো সমস্যা হয়নি।ছাদের চাবি সব ফ্ল্যাটেই একটা করে দেয়া থাকে।ভিনা ছাদের চাবি নিয়ে সাবধানে গেট আটকিয়ে চলে এলো।রুশান সিড়িঘরে দাঁড়ানো।চোখমুখ লাল হয়ে আছে।ভিনা বুঝতে পারলো কিছু হয়েছে।ছাদের গেট খুলে উঠতেই রুশান গেট ভিড়িয়ে দিলো।ভিনা মাথা নাড়িয়ে মানা করলো এমন করতে।এমনিই রাতের বেলা এভাবে ইয়াং দুইজন ছেলে মেয়ের ওঠা একদমই উচিৎ হয়নি,এর উপর গেট আটকানো রাখা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।

-- কী হয়েছে?এভাবে এত রাতে ডেকেছিস কেন?

রুশান হাঁপাচ্ছে,ঢোক গিলছে।অনেক কষ্টে নিজের কান্না চেপে রেখেছে,তবুও চোখ টলটল করছে,পানি ঝরে পরবে এখনি।অনেক্ষণ যাওয়ার পর রুশান ভিনার কাঁধে দুই হাত রেখে একদম কাছে এসে বললো-

-- মাহভিন তোমার কে হয় ভিনা?

ভিনা খুবই ধীরে রুশানের হাত ছাড়িয়ে নিলো কাঁধ থেকে।এরপর পিছিয়ে এসে রেলিং এ হেলান দিলো।বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো-

-- মানুষের পার্সোনাল স্পেসে পার্মিশন ছাড়া কেন ঢুকেছো?

রুশানের বুকে যেন কেউ ছুড়ি বসিয়ে দিয়েছে।ভিনার এই ভাবলেশহীন প্রতিক্রিয়াই জানান দিচ্ছে,নিজের এই যন্ত্রণার বিন্দুমাত্র মূল্য তার কাছে।ধৈর্যের বাধ ভেঙে ভিনাকে দুই হাতে টেনে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রুশান চিৎকার করে বললো-

-- এত বড় মিথ্যা কেন বললে আমাকে!!কেন!কেন এভাবে শেষ করে দিলে আমাকে!!উত্তর দাও ভিনা।উত্তর দিতে হবে তোমার!
-- আমি মিথ্যা বলিনি। মাহভিন আমার বোনের পরিচয়ে বড় হচ্ছে,বড় হবে।মাহভিন আমার বোন,এটাই চরম সত্য।এছাড়া আর কোনো সম্পর্ক ওর সাথে আমার নেই,আমি চাইলেও রাখতে পারবো না।সবচেয়ে বড় কথা,এসব ব্যাপার কোনোভাবেই তোমাকে বদার করার কথা না।এসব নিয়ে ভাবার প্রয়োজনও নেই।বাসায় চলে যাও সিন ক্রিয়েট না করে।
-- যাবিরের বাচ্চা তাইনা?ঐ শুয়োরের মেয়ে মাহভিন তাইনা?

ভিনা রুশানকে শরীরের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো,রুশান তাল না সামলে পরে গেলো মাটিতে।

-- একদম চুপ থাকবি তুই!মুখ খুলবি না কোনো।আমার সামনে গালাগালি করার সাহস দেখাবি না। 
-- ইউ হ্যাড সেক্স উইথ হিম!!ইউ বোথ হ্যাড সেক্স!যাবির টাচড ইউ ভিনা!কেন করতে দিলে এমন তুমি?কেন বাঁচিয়ে রাখলে না নিজেকে!তুমি তো এমন ছিলে না!কেন এমন করলে!

রুশান নিজের শ্বাসনালি ছিড়ে যেন চিৎকার করে দাপাচ্ছে।ভিনা অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে।নীরবে এসব দেখা ছাড়া কোনো উত্তর ছিলো না ওর কাছে।

-- চলে যেতে বলছি...ফর গডস সেক,লিভ রুশান।
-- নেভার!এত নিচে কেন নামলে তুমি?যাবিরের মধ্যে এমন কী ছিলো যে নিজেকে দিয়ে দিলে!এত সস্তা করলে কেন? ওকে ফাইন!ইমোশনাল ছিলা হয়ত,কিন্তু যাবিরের বাচ্চাকে কেন রাখলা তুমি?

ভিনা উত্তর দিলো না কোনো।সেই ঘটনার পর নিজেই অপরাধবোধে ভুগছিলো।নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে গিয়েছিলো অনেক।এখনো সেই অবস্থান ফিরে পায়নি,এখনো আয়নায় নিজের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়।কিন্তু এত ছোট,এত নীচ আজ পর্যন্ত ভিনা অনুভব করেনি।নিজেকে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম চরিত্রহীন মানুষ মনে হচ্ছে।

রুশান উঠে দাঁড়ালো কোনোমতে রেলিং ধরে। 

-- মাহভিনকে কেন রাখলে তুমি?কী হতো ওকে জন্ম না দিলে?
-- আমার বাচ্চাকে নিয়ে আর কোনো কথা না রুশান।আর জীবনেও আমার সামনে আসবে না। কখনো না।
চলে যাও এখনি।আমি গেট আটকে দিয়ে বাসায় যাবো।এসব মেলোড্রামার জন্য আমার সময় নেই।
-- আই হেট ইউ ভিনা!
-- চলে যাও।
-- যাবিরকে এখনো ভালোবাসো?তাইনা?ঐ কুত্তার বাচ্চাকেই ভালোবাসো না?

ভিনা আর উত্তর দিলো না।হেঁটে গেটের সামনে চলে আসলো।রুশান নিস্তেজ রোগীর মতো অনেক কষ্টে হেঁটে চলে গেলো নিচে।গেট আটকে ভিনা একদম স্বাভাবিকভাবে বাসায় চলে গেলো।ফিরেও তাকালো না।এটাই ছিলো রুশানের সাথে ভিনার শেষ দেখা।

এরপর থেকেই রুশান নিজেকে গুটিয়ে ফেলে।প্রথমে কেউই গুরুত্ব দেয় না তেমন। আরো শাসন করতে থাকে।জেবা সবকিছুই নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন।বিশেষ করে সায়বার সাথে জটিলতার পর তার সাথে একদমই কথা বলতেন না জেবা।এর মাঝেই একদিন সায়বা আসেন।জেবা জানতে পারেন রেহানের বিয়ের কথা।অবশ্য আগেই আন্দাজ করেছিলেন যে রেহান হয়ত সম্পর্কে আছে।আর হটাৎ করে ঘরে দুটো বিড়াল পালাও তার কাছে অস্বাভাবিক লেগেছিলো।নাবিহার ঘটনার পরে রেহানের সাথে যে দূরত্ব হয়েছিলো,সম্পর্কের সেই শীতলতার জন্যই না রুশানের মানসিকভাবে ভেঙে পরা, যাই হোক না কেন,এই খবরে তেমন বিচলিত হননি।শুধু ভীষণ যন্ত্রণা হয়েছিলো ভেতরে।একি ছাদের নিচে থেকেও ছেলের বিয়ের খবর বোনের কাছে জানতে হলো।জেবার মনে হয়েছিলো একি পরিবারের হলেও,কারো সাথেই উনার সম্পর্ক নেই।নিজের ঘরেই তিনি সম্মানিত অতিথি,এর চেয়ে বেশি কীই বা বলার আছে।
রেহান এর দেড় মাস পর নতুন ফ্ল্যাটে উঠে গেলো।প্রিতি আড়ষ্টতা থাকলেও নিয়মিত শ্বশুরবাড়ি আসা যাওয়া করা শুরু করলো।ভার্সিটি শেষে এখানে এসে সবার খোঁজ খবর নিতো,ফারুক সাহেবের ঔষধ অথবা ফল ও আনতো সাথে।এর কিছুদিন পর রেহানের সাথে কথা বলে প্রিতি ভিনাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।রেহান বিন্দুমাত্র আপত্তি করেনি,কিন্তু ভিনা ঘোর আপত্তি জানিয়েছিলো।রুশানের সাথে যা হয়েছে,এরপর কোনোভাবেই চায়নি রুশানের মুখোমুখি হতে।কিন্তু সেটা না করলে,ভিনাকে মামার কাছে যেতে হতো,অনেক দূরে।এতে করে মাহভিনের কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়া লাগতো।একমাত্র মাহভিনের দিকে তাকিয়েই ভিনা চলে আসে প্রিতির কাছে।যদিও প্রিতি জেবাকে এ ব্যাপারে এখনো কিছুই জানায়নি।আর জেবারও সে বাসায় যাওয়ার প্রশ্ন আসেনা। রুশান প্রথম দিকে একবার রেহানের ফ্ল্যাটে গেলেও,এরপর তিনমাসে ঘর থেকেই বের হয়নি।জেবা ছেলের এই দূরাবস্থায় এতটাই দুশ্চিন্তায় পরলেন যে,প্রিতির বিষয়টা নিয়ে জটিল ভাবে ভাবারই সময় পাননি,বরং প্রিতির দায়িত্বশীলতায় মুগ্ধ হয়েছেন,কারণ সংসারের দিকে তাকানোর সময় পাননি।দিন গড়িয়ে চললো,জেবা বড় ছেলের সাথে দূরত্বের পর রুশান কেন্দ্রিকই হয়ে যাওয়ার কারণে জেবা নিজেও অসুস্থ হয়ে গেলেন।নিরুপায় হয়ে সায়বার কাছেও গিয়েছিলেন,কিন্তু জানতে পারেননি কিছুই।এদিকে রুশান পরপর দুইটা সেমিস্টার ড্রপ দিয়েছে।এত ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড ছেলের এই অবস্থা সবার চোখেই অস্বাভাবিক লেগেছে।কিন্তু রুশান ঘুনাক্ষরেও কাউকে জানতে দেয়নি কিছু।

ভিনা মেইন রোডে এসে পরেছে হাঁটতে হাঁটতে।পেছনের কথাগুলো মনে পরে চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে।যাবির কে ভিনা ভালোবাসে না,কিন্তু অনেক প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ায় অনুভূতি নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব কাজ করে।রুশান আসার পর প্রথমে কোনোভাবেই নিজের জীবনের সাথে জড়াতে চায়নি।কিন্তু রুশান যার যাই হোক,বন্ধু হিসেবে অতুলনীয় ছিলো।ভিনার সব খারাপ সময়ে নিঃস্বার্থভাবে পাশে থেকেছে রুশান।একসময় না চাইতেই নির্ভরতা এসে পরেছে ওর উপর।অতীতের কারণে রুশানের সাথে এই দূরত্ব অন্যরকম শূণ্যতার সৃষ্টি করেছে।এই শূণ্যতার কোনো নাম নেই,একে বিরহ ও বলা যায়না।এটা শুধুই শূণ্যতা,যার কোনো সীমা নেই,তল নেই।
.
.
.
চলবে........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp