"হাসপাতালের করিডোরে মাথাটা নিচু করে বসে আছে জিসান।সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত লাগছে ওকে।সাদা শার্টটির জায়গায় জায়গায় এখনো ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে।কেউ ভয়েও জিসানের সামনে যেতে পারছে না।
-তিশার এমন অবস্থা দেখেও জিসান একফোটা কাঁদেনি বরং নিজেকে খুব শক্ত করে রেখেছে সবার সামনে।কেউ বুঝতেই পারছে না জিসানের মনে কি চলছে এখন।
---হাসপাতালে তিশাকে ভর্তি করার সময়ও ডাক্তারকে খুব শান্ত মাথায় ওয়ার্নিং দিয়েছিলো জিসান।তিশার কিছু হলে একটাকেও বাঁচতে দিবে না।
সব ডাক্তারকে জেন্ত পুতে ফেলবো একসাথে।পুরো হাসপাতালে আগুন লাগিয়ে দিবো।
'ডাক্তারাও ভয় পেয়ে ছিলো জিসানের এমন ঠান্ডা মাথার ওয়ার্নিং শুনে।এরপর জিসানকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বললো-
'-রিলেক্স মিস্টার জিসান!আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেস্টা করবো।কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন বাঁচা মরণ সব উপরওয়ালার হাতে।তাই আল্লাহকে বেশি করে ডাকুন।'
---রাবেয়া বেগম এসে জিসানের কাঁধে হাত রাখলো।আজই জেনেছে তাওহিদের কাছে সব।আর শুনেই এক মুহুর্তেও দেরি না করে হাসপাতালে চলে এসেছে ছেলের কাছে।ছেলেকে আবার ফিরে পাওয়ার ক্ষনিকের সুখ পেলেও,ছেলেকে হারাবার ভয় আবার ভর করছে তার মনে ।
"মায়ের হাতের স্পর্শ পেয়ে জিসান নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।মাকে জড়িয়ে ধরে জিসান ডুকরে কেঁদে দিলো।
জিসানকে আগে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখেনি কেউ,তাই সবাই স্থদ্ধ হয়ে গেলো জিসানের এমন রুপ দেখে।
'-ভালাবাসা কি অদ্ভুত একটা জিনিস তাই না,পাথরের বুকেও ফুল ফোটাতে বাধ্য করে।সকল বিধি-নিশেধ,ধর্ম- কর্ম সব যেনো এই চারটি অক্ষরের কাছে খুবই অসহায় হয়ে পড়ে নিমিষেই।'
---মা আমার তিশাকে এনে দেও,আমি ওকে ছাড়া বেঁচেও মরে যাবো মা।এই দিন দেখার জন্য কি আমি বেঁচে এসেছি।তার থেকে ভালো হতো আল্লাহ আমাকে নিয়েই যেতো।
আমি পাড়বো না মা ওকে ছাড়া থাকতে।ও আমার জীবনের সাথে এমন ভাবে মিশে আছে যে ওকে ছাড়া বেঁচে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারিনা।
মা আমি মরে যাবো এবার, সত্যি বলছি,মরে যাবো।
তিশাকে বলো না মা, আমার কাছে ফিরে আসতে।ও এভাবে আমাকে একা ফেলে স্বার্থপরের মতো কিভাবে যেতে পারে মা।আমিতো পারি নি।
"শুনেছি পৃথীতে মায়ের দোয়া নাকি সবার আগে কবুল হয়,মা বলোনা আল্লাহকে আমার নিশ্বাসটা ফিরিয়ে দিতে,বলোনা মা।বলোনা!
জিসান বলেই কাঁদতে থাকে।"
---হাজার বিপদেও জিসানকে কখনো এতোটা ভাঙ্গতে দেখেনি কেউ।আজ সবাই তিশার থেকে বেশি জিসানের কষ্ট দেখে কষ্ট পাচ্ছে।কতোটা ভালোবাসা থাকলে এমন কঠিন মানুষটিকে ভেঙ্গে চূরমার করতে পারে।
'-শান্ত হো জিসান,দেখিস আল্লাহ সব ঠিক করে দেবে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ বাবা।এভাবে ভেঙ্গে পড়লে কিভাবে হবে।
রাবেয়া বেগম নিজেও ভীষণ ভয়ে আছে,আল্লাহর কাছে বারবার সাহায্য চাইছে।
---'হে আল্লাহ তুমি আমার সন্তানকে তো আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছো,কিন্তু এখন এই মেয়েটির কিছু হয়ে গেলে আমার ছেলেটি নিজেকে তিলেতিলে শেষ করে দিবে।আমি মা হয়ে এসব দেখতে পাড়বো না,তার থেকে ভালোছিলো তুমি ওকে নিয়েই যেতে নিজের কাছে।কমপক্ষে এমন মানসিক যন্ত্রনা থেকে তো বাঁচতো আমার ছেলেটা।
নিজের চোখের সামনে ছেলেকে ধুকেধুকে মরতে দেখতে পাড়বো না আল্লাহ।আমার ছেলেটি এই মেয়েটিকে খুব ভালোবাসে।
আল্লাহ তোমার কাছে ভিক্ষে যাইছি এই মেয়েটির জীবনটা ভিক্ষে দিয়ে দেও।'
'- হাসপাতালে সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে,তিশার বাবা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।তাই তাকেও পাশের কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।বাকি সবার অবস্থায়ও তেমন ভালো না।
জিসান এখন চুপচাপ বসে আছে।কারো সাথে কোনও কথা বলছে না আর।'
"অপরেশন থিয়েটারের লাল লাইটটা বন্ধ হয়ে গেলো।দীর্গ কয়েক ঘন্টার অপরেশনের পর তাওহিদ বের হলো কয়েকজন নিউরো সার্জনদের সাথে নিয়ে।
দেশের সবথেকে বেস্ট সার্জেনরা এসে পরেছিলো তাওহিদের একটা ফোনকলে।তাই তাদের সবাইকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছে তাওহিদ নিজে।"
---জিসান ভাইয়ের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে জানার চেষ্টা করছে,সব ঠিক আছে কিনা।
তাওহিদ জিসানের কাধে হাত রেখে ওকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে বললো,এতো চিন্তা করিস কেনো।উপরওয়ালা এতো নিষ্ঠুর না,দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
'সব ঠিক হয়ে যাবে মানে!
আমার ত ততিশা ঠিক আ আছে তো ভাইয়া।
জিসানের গলাটা ধরে গেলো।খুব কষ্ট হচ্ছিলো কথাটা বলতে।'
---দেখ ভাই,তোকে মিথ্যা বলবো না,আপাততো ঠিক আছে।মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।কিন্তু তিশা আঘাত পাওয়ার পর অনেকক্ষণ যাবৎ অচেতন ছিলো,এটাই ওর জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে।
আপাততো উপর দিয়ে সব ঠিকই লাগছে কিন্তু ভেতরে কতোটুকু ক্ষতি হয়েছে তা তিশার জ্ঞান ফিরলে বুঝা যাবে।আশা করি তারাতারি ওর জ্ঞান ফিরে আসুক।তা না হলে...
"-তা না হলে কি?"(জিসান)
---তিশা কোমায় চলে যেতে পারে বা প্যারালাইজডও হয়ে যেতে পারে অথবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে।তখন ওকে ফিরে পাওয়ার চান্স অনেকটা কমে যাবে।
এসবই নির্ভর করছে ওর জ্ঞান ফিরার উপর।যতো দ্রুতো ওর জ্ঞান ফিরবে অতোই ভালো ওর জন্য।
'জিসান নিশ্চুপ '।
---আল্লাহর কাছে দোয়া কর ভাই।তিশা জাতে নিজের সাথে নিজে লড়াই করতে পারে।ওর বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছাই ওদের দু'জনকে সেভ করতে পারবে।
'জিসান আর কিছু শোনার মতো অবস্থায় ছিলো না,তাই ভাইয়ের লাস্ট কথাটাও ওর কানেই যায়নি।'
-'কিন্তু রায়হান তৎক্ষানিক প্রশ্ন করলো তাওহিদ কে,
দু'জন মানে!
'রায়হানের প্রশ্ন শুনে জিসানও তাওহিদের দিকে তাকালো।'
"তাওহিদ শান্ত হয়ে জিসানের দু'কাঁধে হাত রেখে বললো,তিশা পেগনেন্ট।
সিটিস্ক্যান এর সাথে বাকি পরীক্ষা করতে গিয়ে জানতে পারি,তিশা সিক্স উইক পেগনেন্ট।
আই হোপ কোনও ক্ষতি ছাড়াই মা ও বাচ্চা দু'জনই ফিরে আসুক আমাদের মাঝে।"
---জিসান এটা শুনার সাথে সাথে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।এমন একটা খুশির খবর কি এই মুহুর্তে জানাটা খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো।
একসাথে দু'টো প্রাণ লড়াই করছে ভেতরে।একজনের মাঝে ওর অস্থিত্ব বিরাজ করছে, আরেকজনের মাঝে ওর প্রাণটা।আল্লাহ এ কেমন পরীক্ষায় ফেললে আমায়।
'-জিসান চোখ দু'টো বন্ধ করে হাসপাতালের করিডোরের ফ্লোরেই বসে দেয়ালে মাথাটা হেলান দিয়ে আছে।কোনও কিছু চিন্তা করার শক্তি এখন আর ওর মধ্যে নেই।নিজেকে আজ সব থেকে বেশি অসহায় লাগছে।মনের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
---তোকে ফিরে আসতেই হবে তিশা।তুই আমার সাথে এমন করতে পারিস না।আমার অস্থিত্বটাকেও সাথে নিয়ে যাওয়ার প্লানিং করছিস।আমি পারবো না এটা মেনে নিতে।
তোকে আসতেই হবে আমার কাছে।আমার জন্য,আমাদের সন্তানের জন্য।
চোখদু'টোও বন্ধ করেই মনে মনে এসব বলে যাচ্ছে জিসান।
মনটা যে আজ ভীষণ অশান্ত ওর,ভীষণ!
____________
"তিশাকে 'নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে 'রাখা হয়েছে।যেখানে সর্বক্ষণ দু'জন ডাক্তার ও নার্স তিশার খেয়াল রাখছে।বাহিরের কাউকে এখানে আসার এলাউ করা হয়নি।
কিন্তু তাওহিদের সাহায্যে শুধু জিসান কেবিনে প্রবেশ করার অনুমতি পেয়েছে।
তবে তিশাকে ডিস্টার্ব করা বা কোনও রকম কথা বলতে নিশেধ করে দিয়েছে ডাক্তার।"
----তিশার নিথর দেহটা পড়ে আছে বেডের উপর।বেঁচে তো আছে,তবুও যেনো বেঁচে নেই।জিসান তিশার হাতটা ধরে পাশের একটা চেয়ারে বসে আছে।
এখন শুধু অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই জিসানের।তিশার ঘুম থেকে উঠার অপেক্ষা, তিশার জাগার অপেক্ষা।
এই অপেক্ষা আবার না দীর্ঘ হয়ে পড়ে জিসানের জন্য।
-'তিশার হাতটা ধরে কয়েকটা চুমো দিলো জিসান।চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো তিশার হাতে।কলিজাটা ধুমড়ে মুচড়ে উঠছে জিসানের তিশাকে এ অবস্থায় দেখে আজ।'
---জানিস তিশা এমনি এক হাসপাতালে তোর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো।সেদিন তোকে দেখে মনে হয়েছিলো ছোট একটা পুতুল আমার সামনে রেখে দিয়েছে।তবে এই পুতুল নড়তে পারতো,কথা বলতে পারতো,হাসতে পারতো।তাইতো এই পুতুলটিকে নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম।
-ভালোবাসার মানে কি তখনতো বুঝতামও না,শুধু জানতাম এই পুতুল আমার।আর সারা জীবন আমার কাছেই রাখবো।
'-জানিস যে বয়সে ছেলেরা তাদের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুড়তে যেতো,লং ড্রাইভে যেতো।প্রিয়জনের কলে মাথা রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতে ব্যস্ত থাকতো তখন আমি তোর বড় হবার অপেক্ষা করেছি।'
'-এমন না আমার মন চাইতো না এসব।আমারও মন চাইতো তোর সাথে একটু গল্প করতে,তোকে মনের সব অনুভূতি গুলো বলতে,তোকে একটু কাছে পেতে,একবার ছুঁয়ে দিতে।
কিন্তু আমি পারতাম না।একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়া কিছুই করতে পারতাম না।'
'--বয়সের তুলনায় তখন তুই যে খুব ছোট ছিলি।তোকে দূর থেকে দেখেই নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটাতাম।
তোর কাছে কাছে থাকতে ভয় পেতাম,আবেগে বশিভূতো হয়ে আমি আবার এমন কিছুনা করে ফেলি,যার জন্য আমি তোকে হারিয়ে ফেলি।
তাই তোকে ভালোবাসার বদলে শুধু শাসন করতাম।কখনো তোকে না পাওয়ার ফাস্ট্রেশনে,কখনো বা তোকে ইচ্ছে করে নিজের থেকে দূরে রাখার জন্য।
আমার এই দীর্ঘ জীবনে তোকে পাওয়ার অপেক্ষাটাও দীর্ঘ ছিলো তিশা।
আর এটা যে আমার জন্য কতোটা যন্ত্রণাদায়ক ছিলো তোকে বুঝাতে পারবো না।
আমি আবার সেই যন্ত্রণা পেতে চাই না 'জান'।আমার মধ্যে আর ধৈর্য নেই তাই বলছি ফিরে আস আমার কাছে 'জান'।প্লিজ ফিরে আস।'
_____________
---ঝর্ণা ওর বাসায় ফোন করে জিসানের কথা আর তিশার বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে দিয়েছে।খবর পেয়ে জিসানের দু'মামাও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
হাসপাতালের করিডোরের একসাইডে দাঁড়িয়ে ঝর্না নিজেও কাঁদছে।নিজেকে অনেকটা দোষী মনে হচ্ছে ওর।কতোটা ভরসা করে ভাই তিশার দায়িত্ব দিয়েছিলো আমায়,বারবার বলেও গিয়েছিলো তিশার সাথে সাথে থাকিস।
কেনো কথা শুনলাম না।আজ আমার একটা অবহেলার কারণে তিশার এমন অবস্থা হলো।তিশার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কখনো মাপ করতে পাড়বো না আমি।কখনো না!
ডুকরে আবার কেঁদে উঠলো ঝর্ণা।
"কেউ খেয়াল না করলেও নিলয় ব্যাপারটা খেয়াল করলো,অনেকক্ষণ ধরে ঝর্ণাকে দেখছে না।তাই আশেপাশে খুঁজতে গিয়ে পেয়েও গেলো।দূর থেকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঝর্ণা যে কাঁদছে।"
'---হাসপাতালের কেন্টিনে বসে আছে ঝর্ণা।আর ঠিক অপজিট সাইডে নিলয়।
নিলয় ঝর্ণার দিকে একগ্লাশ পানি এগিয়ে দিলো।পানিটা খেয়ে নেও ঝর্ণা।দেখো এখন এভাবে যদি আমরা সবাই ভেঙ্গে পরি তাহলে জিসানকে আর তিশার পরিবারকে কে সামলাবে বলো।
এটা একটা পরীক্ষার সময়,তাই আল্লাহতা'লার উপর ভরসা করে ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কোনও পথ নেই আমাদের।
'একটা কথা জিঙ্গেস করি আপনাকে।'(ঝর্ণা)
--হুম বলো__
'-আপনি ভাবীকে ভালোবাসেন।'
---নিলয় মোটেও আশা করেনি ঝর্ণা এখন এই সময় এমন কোনও প্রশ্ন করবে।
তাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো-
'ভালোবাসি কিনা জানি না।তবে লাইফে প্রথম যে মেয়েটাকে দেখে আমি মনের ভেতর ফিলিংস অনুভোব করেছি সেটা তিশা ছিলো।তিশাকে আমি পারসোনাল ভাবে চিনতাম না।
প্রথম জিসানের মোবাইলেই ওর পিক দেখেছিলাম।বিশ্বাস করো দেখেই মনের ভেতর কেমন সুখ সুখ দোলা দিয়েছিলো।
তখনও এক মুহুর্তের জন্যও ভাবিনী তিশা জিসানের ওয়াইফ হতে পারে।
তবে পিকটা দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো মেয়েটার বয়স একদম কম।আমি জিসানের কাজিন বা সিস্টার ভেবেছিলাম।
-এরপর কিছুদিন পর ওর নতুন নতুন পিকগুলো জিসানের ফোনে দেখতে পেলাম।আমার কিছুটা সন্দেহ হলো,প্রতিদিন তিশার নতুন নতুন পিক জিসানের কাছে এসে পড়তো।কিন্তু কেনো?
তাই একদিন কৌতূহলে জিসানকে জিঙ্গেস করেই ফেললাম, তিশার সম্পর্কে।
-জিসানের মুখে তিশার কথা আর ওদের বিয়ের কথা শুনে সত্যিই সেদিন আমি অবাক হয়েছিলাম।আর এটাও জেনেছিলাম তিশার জন্য জিসান সব কিছু করতে পারে।
-'তবে সেদিন আমার অনুভূতির কথাগুলোও জিসানকে বলে দিয়েছিলাম।সাথে সরিও বলেছিলাম।কারণ এটা সম্পূর্ণ না যেনে হয়েছিলো।
আমি সেদিন ভেবেছিলাম জিসান রাগ করে হয়তো আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে নষ্ট করে দিবে।কিন্তু আমাকে অবাক করে জিসান সেদিন কিছুই বলেনি।
বরং আমাকে বিশ্বাস করেছে।আর নিজের অবর্তমানে তিশার সম্পূর্ণ দায়িত্বও আমাকে দিয়ে গিয়েছিলো।
_____________
"অর্ক নিজের বাড়ীর ড্রয়িংরুমে বসে শ্যাম্পেইনে চুমুক দিয়ে সেলিব্রেশন করছে।আজকে ওর শত্রুদের পরিনিতির কথা চিন্তা করেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে।"
---তিশা বাচুক বা মরুক এতে ওর কিছু যায় আসে না।কিন্তু অর্ক এতোটুকু জানে,তিশা বাঁচলেও জিসান লাবণিকে ছাড়বে না,আর মরলেও না।লাবণিকে তো এবার জিসান শেষ করেই দিবে।
আর কোনও ক্রমে যদি জিসান থেকে বেঁচেও যায় লাবণি, তাহলে তিশার পাগল প্রমিক থেকে কিভাবে নিজেকে বাঁচাবে।ভেবেই অর্কের হাসি পাচ্ছে।
'-আমার সাথে বেঈমানি করার চেষ্টা তোমাকে অনেক ভারী পড়বে বলেছিলাম না মিস লাবণি।আমার সাথে বন্ধুত্বের অভিনয় করে আবার আমার পিঠেই ছুড়ি মারার চেষ্টা করেছো।
সেদিন ওই রেকডিং এ রাজের সাথে তোমার সব কথা শুনে চিনতে আমার একটুও ভুল হয়নি।তুমি তিশাকে মেরে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিলে,তাইতো আমি জিসানকে ম্যাসেজ করে তিশার লোকেশন বলে দিয়েছি।
---আমি জানি জিসান খুব স্ম্যাট একটা ছেলে তিশার সাথে কে এমন করেছে খোঁজ নিতে বেশি সময় লাগতো না ওর।কিন্তু এতোদিনে জিসান ওর সব রাগ আমার উপর উঠাতো।তাই নিজেকে সেভ করতেই তোমার নামটা বলে দিতে হয়েছে।'
---আর যে এই খেলাটা শুরু করেছে,সেও তো সবার আগে আমার উপরি আক্রমণ করতো।
এর কারণেই তো এতো বছর পর এখানে আসা।তানা হলে খামাখা আমি জিসানের সাথে পাঙ্গা নিতে যাবো কেনো।
জিসানকে সরানোর জন্য, জিসানের শত্রুদের আবার ফিরিয়ে এনেছে এই কাহিনীতে।
কিন্তু ব্যাচারা আশিক এখন কি করছে।তিশার এ অবস্থা দেখে আবার পাগলটাগল না হয়ে গিয়েছে।
অর্কের এসব চিন্তার মাঝেই---
'হঠাৎ একজন লোক হন্তদন্ত হয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করে,
স্যার স্যার বলে চিৎকার করতে লাগলো।'
---বাড়ীতে এমন শোরগোল অর্কের মোটেও পছন্দ না, তাই কিছুটা বিরক্ত হয়ে,
কি হয়েছে এমন চিৎকার কেনো করছো।কেউ মরে গিয়েছে।
-'স্যার আপনি এখনো এখানে কি করছেন।'
---মানে!কি বলতে চাও।আর আমি কোথায় যাবো।
'-স্যার টিভি ছাড়েন,আপনার ভাণ্ডা সব ফাঁস হয়ে গিয়েছে।তারাতারি দেখেন।'
---লোকটির কথা শুনে,অর্ক টিভিটা অন করার পর পায়ের নিচের মাটি সরে গিয়েছে ওর।
ব্রেকিং নিউজ___
"বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জিসান আহমেদের ওয়াইফ তিশা আহমেদ এর উপর হামলার অপরাধে মিস লাবণি নামক এক বিদেশি নাগরিক কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।পুলিশের জবানবন্দিতে উনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে।সাথে নিজের সহযোগীতার নামও প্রকাশ করেছে।
জানা গিয়েছে তাকে প্রতিটি পদে সাহায্য করছে এ. কে গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রির মালিক অর্ক।
শুধু তাইনা উনারা মিলেই মিস্টার জিসান আহমেদকেও মার্ডারের প্লানিং করেছিলো,কিন্তু ভাগ্যক্রমে মিস্টার জিসান আহমেদ বেঁচে যায়।
এছাড়া লাবণি জানিয়েছে অর্কের অনেক অবৈধ ব্যবসাও নাকি আছে।আর তার সত্যতার প্রমাণ দিয়েছেন তারই পি এ রাজ।সেও পুলিশের কাছে সব স্বীকার করেছে।"
---অর্ক মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে শোফায়।এটা কিভাবে সম্ভব।আর এই রাজ বেঁচে আছে কিভাবে।লাবণিকে পুলিশ ধরলো কখন,ওতো প্যারিসের ফ্লাইটে থাকার কথা এখন।
সব প্লান শেষ।আমার সব শেষ।
এতো বছর ধরে যা অর্জন করেছি সব শেষ।কে বলেছিলো আমাকে এখানে আসতে।আমি একটা গাধা,আহম্মক।
না এখন আর এখানে থাকা যাবে না,পুলিশ আসার আগেই আমাকে পালাতে হবে এখান থেকে।
__________
"অন্ধকার একটা রুমে বসে আছে অর্ক।হাত পা বাধা,কিছুক্ষণ আগেই জ্ঞান ফিরলো।আর চোখ খুলেই নিজেকে এখানে পেলো।মাথায় চাপ দিয়ে মনে করার চেষ্টা করছে কি হয়েছিলো ওর সাথে।
তখন পালাবার জন্যই বাড়ী থেকে বের হয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ কয়েকজন মুখশধারী লোক এসে ওকে অঙ্গান করে এখানে নিয়ে আসে।আর কিছুই মনে নেই ওর। এখন দিন কি রাত তাও জানে না।"
---এমন সময় রুমের দরজাটা খুলে কেউ ভেতরে ডুকলো।অর্ক মাথাটা তুলে সামনে তাকিয়ে ভয়ে আতকে উঠলো,সামনের ব্যক্তিটি কে দেখে।
তুমি এখানে ডাক্তার!তুমি আমাকে তুলে এনেছো।,কেনো?
'-অর্কের কলার ধরে,
বলেছিলাম না তিশাকে কেউ জাতে টাচ না করে,তাহলে সাহস কি করে হলো,ওকে মারার প্লানিং করার।
আমি তোদের এখানে এনেছি,জিসানকে আমার আর তিশার মাঝ থেকে সরানোর জন্য।আর তোরা আমার উপরই বাটপারি শুরু করে দিয়েছিস।
পুলিশের কাস্টাডিতে আছে বলে ওই লাবণিতো বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু এ.কে তোমাকে কে বাঁচাবে।
আজ তোমাদের কারণে আমার তিশার এ অবস্থা,তাহলে তোমরা কেনো বেঁচে আছো এখনো।
---ডাক্তার আমার কথাটাতো শুনো....অর্ককে আর কিছু বলতে না দিয়েই ঠিক মাথার বরাবর একটা গুলি করলো অচেনা লোকটি।
সাথেসাথে অর্ক ওখানেই শেষ হয়ে গেলো।
"চব্বিশ ঘন্টা পর তিশার জ্ঞান ফিরলো।তিশা এখন আপাততো সুস্থ আছে,তবে নিউরো সার্জেনরা জিসানকে কিছু বিষয় সাবধান করে দিলো--
-দেখুন মিস্টার জিসান,আপনার ওয়াইফ এবং তার বেবিও আল্লাহর রহমতে এখন ভালোই আছে।এটা একটা চমৎকার বলতে পারেন।আমরা মিসেস আহমেদ এর ঠিক হওয়ার আসা করলেও ভেবেছিলাম বেবিটা হয়তো বাঁচবে না।এধরনের কেশ এ এমনই হয়।
কিন্তু একটা কথা আছে না,'রাখে আল্লাহ,তো মারে কে।'
এসবই উপরওয়ালার ইচ্ছে।কিন্তু এখন আপনার ওয়াইফকে সাবধানে রাখতে হবে।তার মাথার ইনজুরিটা সারতে সময় লাগবে।তাই তাকে এখন থেকে সব ধরণের চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।উনি টেনশন পড়ে যাবেন এমন কোনও কথাবর্তা বা কাজ থেকে উনাকে দূরে রাখবেন।
মনে রাখবেন মানসিক বা শারীরিক কোনও ভাবে যেনো উনি আঘাত না পায়।
উনি বেশি টেনশন করলে উনার মাথায় আঘাত লাগবে,আর এতে হয়তো উনি কিছু পাগলামি করবে,অদ্ভুট আচরণ করবে,আপনাকে ধৈর্য ধরে তার পাগলামো গুলো সহ্য করতে হবে।
"মনে রাখবেন আপনার ওয়াইফ পাগল না,তাই উনাকে ওভাবে কখনো ট্রিট করবেন না।আপনার ভালোবাসা আর কেয়ারই হচ্ছে এখন আপনার ওয়াইফের সবচেয়ে বড় মেডিসিন।
ভালোবাসার ডোজটা এখন থেকে একটু বাড়িয়ে দিন মিস্টার জিসান।"
---জিসান একটু মুচকি হেসে ডাক্তারকে বললো,ডোন্ট ওয়ারি ডাক্তার।আমি সামলিয়ে নেবো ওকে।যদি ও পাগলও হয়ে যেতো তখনোও ওকে ছাড়তাম না।আর এখনতো ও সুস্থ। আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি ওর পাগলামো গুলোও ভুলিয়ে দেবো।
'আমরা এটাই আশা করেছি আপনার কাছ থেকে মিস্টার জিসান।'
.
.
.
চলবে…..............................................................