-- ব্লক নেই।সিএএস হয়েছে,সাইলেন্ট হার্ট এ্যটাক।মোস্ট প্রোবেবলি স্ট্রেস থেকেই হয়েছে।
-- এখন?
-- সিএএস যদিও এসটিএমই থেকে কম গুরুতর,কিন্তু এটা পরবর্তীতে হার্ট এ্যটাকের পসিবিলিটি হাইলি ইনক্রিজ করে।এসটিএমই কে আমরা মেজর হার্ট এ্যটাক হিসেবে কাউন্ট করি।ইউ হ্যাভ টু টেক কেয়ার অফ হিম।বাকীটা প্রেসকিপশনে লেখা হয়েছে।সকালে প্রফেসর আসবেন।হি উইল টেক এ ওয়াইজ ডিসিশান।
ভিনা মাথা নাড়িয়ে ডাক্তারকে বিদায় দেয়ার পরই ধপ করেই থ্রি সিটার ওয়েটিং চেয়ারে বসলো,প্রচন্ড মানসিক চাপ গিয়েছে।শরীর ছেড়ে দিয়েছে একদম।এক সিট বাদ দিয়ে পাশেই মুনা কপালে হাত দিয়ে বসা,চোখ মুখ ফুলে আছে।কান্না করে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে,মাথা প্রচন্ড ব্যাথা।বাসায় মাহভিনের সাথে চুমকি এবং মোমেনা রয়েছে।ভিনা মোবাইলের স্ক্রিনে তাকালো,রাত দুইটা পঁয়ত্রিশ বাজে।গত আড়াই ঘন্টার বিভীষিকাময় সময়ের কথা মনে পরলো।
-- একটু কফি খাবেন আন্টি?
-- না মা,তুমি বাসায় চলে যাও ভিনাকে নিয়ে।আমি আছি এখানে।
-- আপনি ভালোমতো জানেন ভিনা যাবে না।তাই আমিও এখানে আছি।কিছু লাগলে বলবেন অবশ্যই।
নওমি হাতে কফির কাপ নিয়ে ভিনার সামনে এসে দাঁড়ালো।কী বলবে বুঝতে পারছে না।ভিনা নিষ্পলক তাকিয়ে আছে ফ্লোরের দিকে।দৃষ্টি হারানো কোনো এক ভাবনায়।
-- কফি?
ভিনা নওমির হাত থেকে গরম কাপ নিলো ঠিকি,কিন্তু চুমুক দিতেই ভুলে গেলো।নওমি ভিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ভিনার হালকা হওয়া দরকার।অমানসিক চাপ ভেতরে পুষে রাখতে থাকলে কখন যেন নিজেও অসুস্থ হয়ে যায়।
-- আমার জীবন কি আর সহজ হবে না রে নওমি?
-- হবে তো।হয়ে যাবে।
-- মা মরে নিজের সাথে আমার সুখগুলোও নিয়ে গেছে।স্বার্থপর!
-- ভিনা প্লিজ...
মুনা আহত দৃষ্টিতে ভিনার দিকে তাকালেন।এরপর উঠে করিডোরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অন্য জায়গায় বসলেন।ইচ্ছে করেই এমন করলেন যেন ভিনা এবং নওমি একটু কথা বলতে পারে।এছাড়াও নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।কম তো কষ্ট দেননি।
ভিনার চোখ লাল হয়ে আছে আক্রোশে।আক্রোশ কার উপর সে নিজেও জানে না।নিজের ভাগ্য নাকি কর্ম,কোনটাকে দোষারোপ করলে বুকের ভার কমবে?কর্মকে দোষারোপ করা মানে নিজেকে দোষারোপ করা।অনুতাপের তাপে এখনো ভেতরে দহন হয়। আরো বাড়লে ছাই হয়ে যেতে হবে।নওমি বুঝতে পারছে ভিনা এখন নিজের মধ্যে নেই।আবোল তাবোল বলুক,তাও কথা বলুক।
-- একটু ঘুমাবি?হেলান দিয়ে ঘুমা?
-- আজকে আমি ছেলে হলে সব কেমন গোছালো হয়ে যেত তাই না?কতজনের ফ্ল্যাটে ধাক্কালাম,সবার গাড়ি আছে কিন্তু।কেউ তো রেস্পন্স করলোই না,উল্টা ইন্টারকমে দাঁড়োয়ান কম্পলিন দিলো!এই অমানুষের বাচ্চাগুলা কীভাবে এত ভালো লাইফ লিড করে?এদের কি খোদা দেখে না?
-- ভিনা প্লিজ....লক্ষ্মী...
-- ড্রাইভারের ও ফোন বন্ধ!বাহ্!আজকে আমি নিজে ড্রাইভিং জানলে লেট হতো?তাও শেষ মুহূর্তে রুদমিলা ম্যাম তার ড্রাইভার পাঠিয়েছে।নাহলে কী হতো?রাস্তায় কিছু নেই।এম্বুলেন্সের জন্য হেল্পলাইনে কল দিলাম,মশকরা শুরু করেছে!কেন কেন কেন!আমার সাথেই কেন!
-- তাতে কী!?তুই ঠিকি আঙ্কেল কে হাসপাতালে নিয়ে আসতে পেরেছিস।যত দ্রুত সম্ভব তুই সব করেছিস।দিনশেষে তো জিতে গেলি।
-- রুদমিলা ম্যামের শরীর ভালো ছিলো না।অনুষ্ঠান শেষে যাওয়ার পরই উনার জ্বর।এই রাতবিরাতে তাকে কল করে ডাকতে হলো।আর আমার চাচাগুলাকে দেখ,একজন ফোন রিসিভ করে সব শুনলো কিন্তু আসলো না।আরেকজন ফোন অফ।সবদিক কীভাবে বিপদ আসে দেখলি?
-- থাক না ভিনা।শেষ ভালো যার সব ভালো তার।
-- শেষ এখনো হয়নি। শুরু হচ্ছে কেবল।
-- টাকা পয়সা নিয়ে কিছু....
-- আপাতত না।আলমারিতে বিয়ের খরচের জন্য বড় এমাউন্টের টাকা ছিলো।সব ধরে নিয়ে এসেছি।আপাতত দুইদিন চলবে,কিন্তু এরপর ব্যাংকে যাওয়া লাগবে।
-- আঙ্কেল উনার নমিনি কাকে করেছে জানিস কিছু?
-- না,ফিনানশিয়াল কোনো ব্যাপারে কখনো কথা হয়নি।
-- যদি আন্টিকে করে থাকেন,তাহলে ভালো হলো না।ভবিষ্যতে ঝামেলা হবে।
-- মা কে করে থাকলেও আমার কোনো কিছু বলার নেই।আমার বাবা নির্বোধ না।মা আগে ব্যাংকে চাকরি করতেন,টাকা পয়সার ব্যাপার উনার হাতে থাকলে ক্ষতি নেই।বাবার অনুপস্থিতিতে উনিই বাড়ির কর্ত্রী।
-- তুই ভালো ভিনা।তবুও,আন্টি তোর সৎমা।তার নিজের ও একটা মেয়ে আছে,তুই তো বুঝতে পারছিস আমি কী বলতে চাই।
-- আমার বাবা হস্পিটালের বেডে মরার মতো শুয়ে আছে,এখন এসব টাকা পয়সার ব্যাপার আমার মাথায় ঢুকবে না।বাপ না থাকলে টাকা পয়সা দিয়ে কী করবো?
নওমি একদম চুপ হয়ে গেলো।ভালোর জন্য বললেও এখন অবশ্যই উচিৎ সময় না।কিছু কথা ভালো হলেও বলতে হয় না,পরিস্থিতি ভেদে মৌনতাই উত্তম।ভিনা মা হারিয়েছে,বাবা মৃত্যুশয্যায়।টাকা পয়সার এখন কোনো মূল্য নেই ওর কাছে।এই বাবার কিছু হলে ভিনা এমনিই সর্বহারা হয়ে যাবে।
_________________________________
সকালবেলা সবার আগে রুদমিলা আসলেন।গতকাল ভিনার বাসা থেকে ফেরৎ যাওয়ার পরেই হটাৎ অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন।রাতে ভিনার আচমকা ফোন পেয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সাথে সাথেই। তার ড্রাইভার নিচেই থাকে দাঁড়োয়ানদের সাথে।নিজে রেডি হয়ে বের হতে গেলে আরো সময় লাগতো।তাই তখন আসেননি।এখন ঔষধপত্র খেয়ে কিছুটা ঠিক হয়ে এসেছেন।আসা মাত্রই ভিনা তাকে জড়িয়ে ধরলো।রুদমিলাও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন মেয়েটাকে।সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই তার কাছে।একের পর এক ঝড় যাচ্ছেই।ভিনাকে দেখে নিজের কথা মনে পরে যায় রুদমিলার।এরকম কত ঝড়ঝাপ্টা একা সামাল দিয়ে আজকের তিনি।ভিনার পিঠ চাপড়ে দিয়ে সোজা করে ভিনাকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করালেন।
-- বি স্ট্রংগেস্ট ইয়াং লেডি।ইউ আর অলরেডি স্ট্রং।
এই একটা কথায় ভিনার বুকে সাহস ফিরে এলো।পারবে,পারতেই হবে।নিজের বাবাকে সুস্থ করতেই হবে।
সোহেল আইসিইউতে ছিলেন দেড়দিন।এরপর তাকে কেবিনে নেয়া হলো।খোদার মেহেরবানিই বলতে হবে।কারণ এই ধরনের হার্ট এ্যটাকের সিম্পটম ভিন্ন থাকে।সত্যি বলতে এটা পুরোপুরি হার্ট এ্যটাক ও না।করোনারি আর্টেরি স্প্যাসম।তাই বুঝে উঠতেও সময় লেগেছে।মোটামুটি সবাই হার্ট এ্যটাকের সিম্পটম সম্পর্কে অবগত।তেমন হলে কি মুনা দেরি করতেন?রাত নয়টা থেকেই নাকি পেটের আশেপাশে ব্যাথা করছিলো।এরপর পিঠে থেকে ধীরে ধীরে হাতে এসেছে।তাও তীব্র ব্যাথা ছিলো না।মুনা মনে করেছিলেন পরিশ্রমের কারণে এমনি গা ব্যাথা।কিন্তু রাত সাড়ে এগারোটার ব্যাথা হুট করেই বেড়ে গেলো।সাথে অতিরিক্ত ঘাম।তখনই তিনি চিৎকার দিয়ে ভিনাকে ডাকেন।এমন ভয়ানক অবস্থায় মুনা বুঝতেই পারছিলেন না কী করবেন।ভয়ে অসাড় হয়ে গিয়েছিলেন।ভিনা আর নওমি মিলেই সব ব্যবস্থা করেছিলো।ভিনার ধকল প্রথমে বুঝতে পারেননি,পরে টের পেয়েছেন।এখন মুনা বাসায় যাচ্ছেন,মাহভিন একা সেখানে।ভিনার সাথে নওমি এবং রুদমিলা আছে।এদিকে হাতে টাকাও প্রায় শেষ,ব্যাংকেও যেতে হবে।অবশ্য এখনো নিশ্চিত না টাকা তুলতে পারবেন কি না।পুরো রাস্তায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে অসহায় লাগলো।একমাত্র অপেক্ষা করা ছাড়া এখন কোনো উপায় নেই।
রুদমিলা নওমিকে লাঞ্চ করানোর জন্য ক্যান্টিনে নিয়ে গেলেন।ভিনা নিজের বাবার পাশে কেবিনেই থাকলো।সোহেল বেঘোরে ঘুমাচ্ছেন।ভিনা শক্ত করে তার হাত ধরে রেখেছে,যেন এই হাত ছুটে গেলেই হারিয়ে যাবে।দিন দুইয়েকের অসুস্থতায়ই সোহেলকে কাবু করে ফেলেছে।ভিনা জানে,সোহেল সুস্থ হলেও সবকিছু স্বাভাবিক হবে না।ব্যবসা এবং সংসারের চিন্তা মাথায় নেয়ার মতো জীবনীশক্তি আর অবশিষ্ট নেই তার মাঝে।ভিনাকেই হাল ধরতে হবে।ছেলে না হওয়ার আফসোস করতে দেয়া যাবে না।সৃষ্টিকর্তা হাত,পা,চোখ,মাথা সবই দিয়েছে।এগুলো থাকলেই হবে।কিন্তু পরক্ষণেই ভিনার এই উৎসাহ দমে গেলো।সোহেলের আজকে এই অবস্থা ভিনার ভুল বিয়ের ধাক্কার জন্য হয়েছে।একইসাথে দুশ্চিন্তা এবং অপরাধবোধ জেঁকে বসায় আর কুলিয়ে উঠতে পারেননি।যতদিন না ভিনার একজন ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে,ততদিন এই বোঝা সোহেলের মাঝে থাকবেই।
ভিনা ভেজা চোখে চেয়ারে বসে সোহেলের বালিশের পাশে মাথা রাখলো।ভেবে দেখলো একজন মানুষের ভাগ্য সবদিকে নিশ্চয়ই খারাপ হতে পারে না।কোনো না কোনো উপায় হয়ে যাবেই।ভুল বিয়ে হয়ে গেলে সোহেলকে আর বাঁচানোই যেতো না বোধহয়। খোদা যখন এতবড় অন্যায় হতে দেননি,তার মানে ভালো কিছুই রেখেছেন।এসব ভাবতে ভাবতে ভিনার চোখ ভারি হয়ে এলো।আধো ঘুম আধো জাগ্রত অবস্থায় টের পেলো সুঘ্রাণে পুরো কেবিন ম ম করছে।ধীরে ধীরে ভিনার আশেপাশে আরো তীব্র হচ্ছে সেই ঘ্রাণ,যেন করে আলতো করে ভিনাকে জড়িয়ে ধরেছে পৃথিবীর সব কঠোরতাকে উপেক্ষা করে।
_________________________________
-- ভিনা আমাকে জানালো না?
-- রাগ করছেন আপু?কীভাবে জানাবে?আপনি একে রাগ হয়ে আছেন,আপনার সংসার ও আছে।তারচেয়ে বড় কথা ও সুযোগ কোথায় পেলো।সব দৌড়াদৌড়ি তো ঐ করছে।
-- অজুহাত দিলেই দেয়া যায়।ঐ আমাকে দূরে সড়িয়ে দিয়েছে।
-- আপনি দূরে না সড়লে কি ও একা সড়াতে পারতো?
প্রিতি কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।
-- কোন হস্পিটালে আছে?
-- আমি ঠিকানা,কেবিন নাম্বার সব মেসেজ করে দিয়ে দিচ্ছি।শুধু একটাই রিকোয়েস্ট,ওর প্রতি আর রাগ করে থাকবেন না।আমার চেয়েও ভালো আপনি ভিনাকে চিনেন।
-- তোমার কথা রাখলাম,আমি কিছুক্ষণ পরই রওনা দিচ্ছি।
-- থ্যাঙ্কিউ আপু।আপনার সাথে মনে হয় আর দেখা হবে না।আমার বাস আছে,বাড়ি চলে যাচ্ছি।তবে একদিন অবশ্যই দেখা করবো।
-- আরে!এটা কীভাবে হয়,তুমি থাকবে না?
-- না আপু।আমার মা অনেকদিন ধরে একা আছে কিছু সমস্যার কারণে।ফোন করেও পাচ্ছিনা।যাওয়া খুব জরুরি।
-- খারাপ লাগছে নওমি।তুমি ভালো থেকো।যোগাযোগ রেখো।
-- অবশ্যই আপু।রাখি এখন,ভালো থাকবেন।
নওমি ফোন রেখে দেয়ালে টানানো বড় ঘড়ির দিকে তাকালো।সকাল থেকে ফোন দিয়ে নানির বাড়ির কাউকে পাচ্ছে না।এদের স্বভাব আছে ঘরে হাফসা কে একা রেখে দাওয়াত খেতে চলে যাওয়ার।এমন হয়ে থাকলে মুশকিল।নানা নানির বয়স হয়েছে,এরা মোবাইল চালাতে পারেন না।তাই এখনই যেতে হবে নওমিকে।বেশি দেরি করলে আজকে আর বাস পাবে না।ভিনা নওমির সব খারাপ পরিস্থিতিতে সাথে ছিলো।কিন্তু নওমি থাকতে পারলো না।এরজন্যই ভিনার ফোন থেকে প্রিতিকে ফোন দিয়েছে আসার জন্য।ভিনার মুখে প্রিতির কথা অনেক শুনেছে। সবচেয়ে অবাক হয়েছে যখন শুনেছে রুশান এখন প্রিতির দেবর।রুশানের বিষয়ে নওমি এখনো কিছু জানে না,কিন্তু প্রিতির আসা জরুরি।ভিনা অনেক খানি ভরসা পাবে।নওমি কেবিনে ঢুকে ভিনার ব্যাগে ফোন এবং চিরকুট রেখে দরজা লক করে চলে গেলো।বুকে ভেঙে কান্না আসছে,কিন্তু ভিনা আর ওর নিজের যুদ্ধে খুব একটা পার্থক্য নেই।বিশ্বাস আছে ভিনা বুঝবে।
___________________________________
রেহান অফিস থেকে জলদিই ফিরে এসেছে।হাতভর্তি ব্যাগে রয়েছে ফল।প্রিতি ছোটাছুটি করছে রান্নাঘর থেকে বেডরুমে।রেহান চাবি দিয়ে গেট খুলে ঢুকেছে তাই এখনো টের পায়নি।রেহান নিজেও বুঝতে পারছে না কী করবে,কারণ ওর সাথে রুশান ও এসেছে।প্রিতি রুশানকে দেখলে অনেক রিয়েক্ট করবে।একে রুশানের শরীর ভালো না,এর উপর বিষয়টা ভিনার সাথে সম্পর্কিত। আশেপাশে কেউ না থাকলে প্রিতি এখনি রেহানের উপর চড়াও হতো নিশ্চিত।রেহানকে গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুশান ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
-- কী হয়েছে?এখানে এমন করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
-- এমনি আরকি।তোর শরীর ভালো না তো..
-- ভাবী রিয়েক্ট করবে না।তুমি ভেতরে আসো।
রেহান দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকলো।প্রিতি তখন স্যুপ বাটিতে ভরছে।রুশানের দিকে চোখ পরতেই চমকে উঠলো প্রিতি,সাথেসাথে তাকালো রেহানের দিকে।রেহান মাথা চুলকে বুঝিয়ে দিলো এ বিষয়ে ওর কোনো হাত নেই।ঘটনা হলো,রেহান অফিসের পরে রুশানকে নিয়েই বের হয়েছিলো আশেপাশে ঘুরতে।তখনি প্রিতির ফোন আসে এবং জানায় যে ভিনার বিয়ে ভেঙে গেছে,সেই সাথে সোহেল হস্পিটালে ভর্তি।সেই সময়ে রুশান পাশে থাকায় কোনোকিছু লুকানো সম্ভব হয়নি।আর রুশান ও এমন ছেলে না যে এসব শোনার পর ও চুপচাপ বসে থাকবে।
প্রিতি শান্ত থাকলো।রুশানকে বললো বসে স্যুপ খেতে,দুই মিনিটে রেডি হয়ে আসছে।রেহান প্রিতির সাথেই ভেতরে গেলো।
-- পুরোই আনইন্টেনশনাল ছিলো।
-- বুঝতে পেরেছি।একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে।
-- কীভাবে?
-- ধুর,এত ব্যখ্যা দিতে পারবো না।
রেহান ড্রেসিং টেবিল থেকে প্রিতির জন্য পারফিউম এবং ওড়না পিন আপ করার জন্য পিন বের করে রাখলো।দশমিনিটের মধ্যেই তিনজন বের হলো হস্পিটালের উদ্দেশ্যে।রুশান বহুদিন অসুস্থ ছিলো,মানসিক অবসাদেও ভুগছিলো।আজকে সবকিছু ছাপিয়ে গিয়ে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।ভিনার বিয়ে ভেঙে গেছে.....ভিনার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো এটাই তো জানতো না।কী হতো সেই বিয়ে হয়ে গেলে?এই ভিনাকে আর ফিরে পেতো?সৃষ্টিকর্তা কি বড় একটা ধাক্কা দিয়ে বুঝিয়ে দিলো দ্বিতীয় এবং শেষ সুযোগের ব্যাপারে।ভিনা ছাড়াও কি জীবন খুব ভালো যাচ্ছে?না না না।অনেকগুলো না।
প্রিতি যখন রেহান এবং রুশানকে নিয়ে হস্পিটালে পৌঁছালো তখন কেবিনে শুধু ভিনাই ছিলো।প্রফেসর রুদমিলা আগেই চলে গেছেন,মুনা তখন ও ফেরেননি।একজন নার্স এসে সোহেলের প্রেশার চেক করছিলো আর ভিনা রুমের এপাশ থেকে ওপাশ পায়চারি করছিলো ফোন কানে দিয়ে।নওমিকে ফোন দিয়ে দিয়ে অস্থির হয়ে গেছে ভিনা।তখনই প্রিতিকে দেখে সামনে এগিয়ে আসলো।কিন্তু জড়িয়ে ধরলো না।ভিনা জানতো প্রিতি আসবে।তবু অভিমান কাজ করছে।অধিকারের অভিমান...
প্রিতি অভিমানের আঁচ পেলো দূর থেকে।তাই এগিয়ে এসে গালে আলতো করে চড় দিলো।
-- আস্ত ফাযিল হয়েছিস।আমার বিয়ে দিয়ে এক্কেবারে বুড়ি হয়ে গেছিস না?আবার রাগ ও দেখায়,সাহস কত!
ভিনা মাথা নিচু করে রাখলো।এসবের মাঝে খেয়ালই করেনি যে রেহান এবং রুশান দাঁড়ানো।একটু দূরে দাঁড়ানো তে মনোযোগ সেখানে যায়নি।রুশানের দিকে চোখ পড়তেই ভিনা হার্টবিট মিস করলো।রুশানকে এখানে কল্পনা করতে পারেনি।কেমন মলিন চেহারা ওর।প্রিয় সব মানুষগুলোর চেহারা মলিন হয়ে যাচ্ছে ভেবে ভিনার মন ভীষণ ভার হয়ে উঠলো।ভারাক্রান্ত মন নিয়েই সবাইকে বসার ব্যাবস্থা করে দিলো।রুশান চুপ করে বসে আছে।রেহান এবং প্রিতি দুইজনই পালা করে কথা বলছে ভিনার সাথে।বিয়ে ভাঙা,সোহেলের অসুস্থতা সবকিছু নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।রুশানের কানে কিছুই যাচ্ছে না। মুগ্ধ হয়ে শুধু ভিনাকে দেখছে।
হটাৎ করেই সোহেল জেগে উঠলেন।আগেও জেগে উঠেছিলেন,কিন্তু কোনো কথা বলেননি।এবার জেগে ওঠার পর খুব ধীর গলায় ভিনার নাম ধরে ডাকলেন।ভিনা ছুটে গেলো তার কাছে।সোহেল অক্সিজেন মাস্ক খুলে ভিনার দিকে ছল ছল চোখে তাকালেন।হাতে ক্যানোলা থাকায় ঠিকভাবে নাড়াতে পারছেন না,তবু চেষ্টা করছেন মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার।
-- কী করলাম রে ভিনা।নিজের হাতে তোর জীবন নষ্ট করতে গেলাম!
-- জীবন কি নষ্ট হয়ে গেছে?কেন এসব বলছো তুমি?
-- বাবা হিসেবে কোনো দায়িত্বই পালন করতে পারলাম না আমি।আমি ব্যর্থ একজন মানুষ।
-- বাবা প্লিজ,থামো না।তোমার এসব কথায় আমার আরো বেশি কষ্ট হয় কেন বুঝো না?তুমি ছাড়া কে আমার ভালো খেয়াল রাখবে বলো।তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও না বাবা।আগের মতো হয়ে যাও,আমি নিশ্চিন্তে তোমার বুকে মাথা রাখি।আমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
-- আমি কি সারাজীবন থাকবো রে মা...
-- থাকবে বাবা।তুমি শতবর্ষ আমার জন্য বাঁচবে।আমার কাউকে লাগবে না।
-- এভাবে হয় না মা।আমার কারণে তোর জীবনে দাগ পরে গেলো।
-- আমি আর কথাই বলবো না।
ভিনা কৃত্রিম অভিমান নিয়ে দূরে সরে গেলো।ঠিক তখনই সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে রুশান চেয়ার টেনে সোহেলের সামনে বসলো।তার হাত নিজের হাতে নিয়ে ভরাট গলায় বললো-
-- আঙ্কেল,আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।দুই - তিন বছর লাগবে আমার সেটেল হতে।কিন্তু কখনো কষ্ট দিবো না।দিবেন ভিনাকে আমার কাছে?
.
.
.
চলবে.........................................................................