মাই মিস্টিরিয়াস প্রিন্স - পর্ব ১৫ - মৌমিতা মৌ - ধারাবাহিক গল্প


কৌশিক ধীরে ধীরে উঠে অনন্যার পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো। পিঠের ব্যথা তাকে ভারাক্রান্ত করলেও মেয়েটার অদ্ভুত আচরণ তাকে আরও বেশি ভাবিয়ে তুললো। অনন্যা হঠাৎ গলি থেকে বেরিয়ে ছুটতে শুরু করলো, যেন কোনো উদ্দেশ্যহীন খোঁজ চলছে। কখনো এক গলিতে ঢুকলো, তো কখনো আরেক গলিতে। তার ছুটোছুটি দেখে কৌশিকের কপালে ভাঁজ পড়লো।

মুহূর্ত পরে অনন্যা হঠাৎ একটি নির্জন গলির সামনে থেমে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে গলির ভেতর অন্ধকারে হারিয়ে গেলো।

কৌশিক পিঠে হাত দিয়ে নিজেকে সামলাতে সামলাতে সেই গলির সামনে পৌঁছাল। থেমে কিছুক্ষণ চারপাশে তাকিয়ে দেখলো। কেমন অন্ধকার সবকিছু! রাস্তায় এক লোকের কাছে শুনেছিলো এখানে প্রায়ই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি হয়ে থাকে। তাই মানুষেরা শব্দ শুনলেও বাসা থেকে বের হয় না। কিন্তু সবাই যদি এভাবে বাসায় বসে থাকে চুরি, ডাকাতির পরিমাণ আরো বাড়তে থাকবে। এই সামান্যতম জ্ঞান কী তাদের নেই!

গলির মধ্যে কিছু দূর যাওয়ার পর কৌশিক দেখলো, অনন্যা মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে নিজের ব্যাগের ভেতর কিছু খুঁজছে। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো।

অনন্যা ততক্ষণে ব্যাগের থেকে ল্যাপটপটা বের করে পরীক্ষা করছিল। চোখে একরাশ উদ্বেগ ফুটে উঠেছে। সে একবার ল্যাপটপ দেখে নিলো, তারপর ফোন। দুটো জিনিস ঠিকঠাক পেয়ে বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো। আজ ঈরা অনন্যার ল্যাপটপটা ওর কাছে দিয়ে গিয়েছিল। পাগল ভিখারিটি ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় মুহূর্তের জন্য অনন্যার মনে পড়েছিল ল্যাপটপটার কথা। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তখন কিছু করার উপায় ছিল না।

ল্যাপটপটি কেনার জন্য কত কষ্টই না করেছে অনন্যা। দিনের পর দিন নিজের ছোট ছোট ইচ্ছাগুলোকে দমিয়ে রেখেছিল, টাকা বাঁচিয়ে চলতে হয়েছিল অনেক মাস। ঈরার কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়ার জন্য কতবার সে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল। মামীর রাগ আর ঝগড়ার মুখে পড়েও নিজের অতি প্রয়োজনীয় ল্যাপটপটা কেনার জন্য অটল ছিল। অবশেষে হাতে পেয়েছিল তার পরিশ্রম আর জেদের ফল।

ব্যাগ খুলে যখন টাকার অংশটা দেখল, তখন হতাশ হলো অনন্যা। এক টাকাও নেই সেখানে, মনে হলো এই মাসের সব কষ্ট যমুনায় গেল। মাসের বেতনের পাঁচ হাজার টাকা এভাবেই হারিয়ে গেল! কপালে গভীর ভাঁজ পড়ল তার। রাগ আর হতাশার ঢেউ বয়ে যেতে লাগল মনে।

চোখ তুলে কৌশিক স্যারের দিকে তাকাতেই তার গাল ফোলানো রাগ স্পষ্ট দেখা গেল। গোলাপি ঠোঁট কাঁপছিল, আর চোখ দুটো যেন জ্বলন্ত লাভার মতো রাগে ফুটছিল।

কৌশিক পিঠের ব্যথা সামলে ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে শান্ত গলায় বলল,
"কী? সব ঠিক আছে তো?"

"টাকা নেই।"

"ব্যাপার না। ব্যাগ গোছান আর উঠুন।"

অনন্যা জেদ ধরে বসে রইলো, আক্রোশ মাখা কন্ঠে বলল,
"আপনার কাছে এসব ব্যাপার তুচ্ছ হতেই পারে, কিন্তু আমার কাছে অনেক বড় কিছু! (কিছুক্ষণ থেমে) 
চলে যান আপনি। আমাকে বাঁচানোর জন্য আরেকবার ধন্যবাদ দিলাম।"

কৌশিক গম্ভীর গলায় বলল,
"আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।"

"যাবো না।"
অনন্যার জেদি সুর। ব্যাগ গুছিয়ে কাঁধে তুলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে।

কৌশিক একটু ঝুঁকে সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বলল,
"আপনার জন্য আমি ব্যথা পেয়েছি। এর পরিবর্তে কিছু তো দিতে হবে, তাই না?"

অনন্যা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
"যা ভারী জামা-কাপড় পড়েছেন, তাতে শরীরে চাকুটা ঠিকমতো ঢুকেছে কিনা, তাই ভাবছি।"

কৌশিক পিঠের দিকে হাত রাখল, তারপর হাত সামনে এনে দেখিয়ে বলল,
"ধারালো ছিল, দেখুন, এখনো রক্ত পড়ছে।"

মুখে হালকা ভেংচি দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো অনন্যা।

কৌশিক এবার গলা চড়িয়ে বলল,
"যাবেন না?"

অনন্যা থামল না। কাঁধের উপর দিয়ে বলল,
"না। আমাদের সম্পর্ক শেষ। অনেকক্ষণ আগেই আপনাকে বলেছিলাম আমি নিজের রাস্তা নিজে খুঁজে নেব। সেই কথা ফেরাতে পারবো না।"

কৌশিক দ্রুত এগিয়ে এসে অনন্যার হাত ধরলো। অনন্যা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। কৌশিক হাত ছেড়ে দিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,
"ঠিক আছে। একটা খেলা হয়ে যাক! আমি একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো। উত্তর দিতে পারলে আপনি নিজের মতো চলে যেতে পারবেন। আর না পারলে আমার সাথে যেতে হবে। রাজি আছেন কিনা বলেন!"

অনন্যা সন্দেহভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে স্যারের দিকে তাকিয়ে রইল। হাত ভাঁজ করে ভাবতে লাগলো, স্যার বিদেশ থেকে পড়ে এসেছে, নিশ্চয়ই কোনো কঠিন প্রশ্ন করবে যেটার উত্তর অনন্যা জীবনেও দিতে পারবে না। এভাবেই তিনি জিতে যাবেন। এর অর্থ উনার এসব আলতু ফালতু কথায় রাজি হয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারা ভুল কাজ হবে।

অনন্যা দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বললো,
"না আমি খেলবো না।"

"ইজি কুয়েশ্চেন। মোস্ট ইম্পরট্যান্ট, বাংলা ভাষা নিয়েই কুয়েশ্চেন করবো। আপনি নিঃসন্দেহে পারবেন।"

অনন্যা বিস্ময়ের সাথে বললো,
"তাই?"

"হুম। রেডি?"

"ওকে, বলুন শুনি। কঠিন কিছু হলে খবর করে ছাড়বো।"

"আচ্ছা! প্রশ্নটা হচ্ছে,
ইংলিশে ইউ, বাংলায় আপনি 
ইংলিশে ইউ, বাংলায় তুমি 
ইংলিশে ইউ, বাংলায় তুই। 
কিন্তু কেনো? 
এক শব্দ দিয়ে বাংলায় তিনটা ওয়ার্ড,
কিন্তু ইংলিশে একটা। হোয়াই?"

অনন্যা মাথা চুলকে ভাবলো, ব্যাটা প্রশ্ন তো সহজই করেছে। কিন্তু আসলেই কেনো? 
কৌশিক হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
"আপনার সময় এক মিনিট। যা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। উত্তর দিয়ে নিজের রাস্তায় হাঁটা দিন। আমিও কিছু বলবো না।"

অনন্যা চিন্তা করতে করতে বললো,
"কারণ ইউ দিয়ে সামনের মানুষটিকে বোঝায়। ইংরেজি এক শব্দ দিয়ে তিনটা বাংলা শব্দ কারণ..... দুরত্ব অনুসারে সামনের মানুষটিকে ডাকার ধরন পরিবর্তন হতে পারে। অপরিচিত হলে আপনি, কিছুটা পরিচিত হলে তুমিতে যাওয়া যায়, আর বেশি কাছের হলে তুই বলা যায়।"

কৌশিক ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বললো,
"ওকে, ইউর টাইম ইজ ওভার। আর..... ভুল উত্তর দিয়েছো তুমিই।"
'তুমি' শব্দটায় বেশি জোর দিয়ে বলেছে কৌশিক।

অনন্যা কৌশিকের ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠা হাসি দেখে অস্বস্তিতে পড়লো। তবুও দৃঢ় ভঙ্গিতে বললো,
"ভুল কীভাবে হলো? আমি তো ঠিকই বলেছি!"

কৌশিক সামনে হাঁটা ধরলো। অনন্যা দ্রুত তার পাশে এগিয়ে গেলো, বললো,
"আচ্ছা, ঠিক আছে এখন সঠিক উত্তরটি দিন। শুনি কেনো ভুল হলো!"

কৌশিক শান্ত গলায় উত্তর দিলো,
"তোমার উত্তর আংশিক সঠিক। আপনি, তুমি আর তুই শুধুই দূরত্ব বা পরিচিতির উপর নির্ভর করে না। এগুলো আমাদের সংস্কৃতি এবং সম্পর্কের গভীরতাকেও নির্দেশ করে।

আপনি দিয়ে সম্মান জানানো হয় বয়োজ্যেষ্ঠ, শিক্ষক বা অপরিচিত ব্যক্তিদের।
তুমি বলা হয় বন্ধু, সহকর্মী বা কাছের পরিচিতদের, যেখানে একটু স্বাচ্ছন্দ্য থাকে।
আর তুই ব্যবহার করা হয় খুব ঘনিষ্ঠ মানুষদের জন্য যেখানে সম্পর্ক এতটাই গভীর যে সম্মানের আলাদা প্রকাশ প্রয়োজন হয় না।

ইংরেজি ‘You’ এসব দিক প্রকাশ করতে পারে না, একচুয়ালি তাদের দরকার হয় না। তাই ভাষায় সৌন্দর্য, সম্পর্ক আর সম্মানের দিক বিবেচনা করে বাংলায় তিনটি ভিন্ন শব্দ প্রয়োজন হয়, কিন্তু ইংরেজিতে প্রয়োজন হয় না।"

অনন্যা চিন্তিত হয়ে বললো,
"কিন্তু এসব তো একই কথা মনে হচ্ছে। আপনি শুধু ব্যাখ্যা করে বললেন, আমি অল্প কথায় বললাম।"

কৌশিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অনন্যার দিকে।গলা চড়িয়ে বললো,
"না এখন কোনো চালাকি চলবে না। তোমার উত্তর হয়নি এটাই আসল কথা।"

অনন্যা মাথা হেলিয়ে বললো,
"আচ্ছা!"

বিরবির করে উচ্চারণ করলো,
"লোকটা হঠাৎ তুমি করে বলছে! ব্যাপার কী?"

"নিক কল দিয়েছিল। জানালো, তোমার হাতের রান্না খেতে চায়। বিয়ের পর নাকি বাঙালি মেয়েরা প্রথম প্রথম শ্বশুরবাড়ির সবাইকে নিজের হাতের রান্না খাওয়ায়। তারও ইচ্ছা জাগলো, ঐ ট্র্যাডিশনটা তোমাকে দিয়ে করানোর।"

অনন্যা আগ্রহের সাথে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
"সত্যি? নিক ভাইয়া বলেছে আমার হাতের রান্না খাবে? এজন্যই নিতে এসেছিলেন?"

"হুম! কিন্তু এতো খুশি কেনো?"

"উনি অনেক ভালো। অন্তত আপনার মতো ত্যাড়াবেকা কথা বলে না।"

কৌশিক দাঁড়িয়ে পড়লো, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
"ত্যাড়াবেকা মানে? কোনো স্ল্যাং এটা?"

"আহা না! মানে এলোমেলো বা ঘুরিয়ে চুরিয়ে কথা বলা।"

কৌশিক মাথা নাড়িয়ে আবারো হাঁটা ধরলো। অনন্যা বললো,
"আপনার সাথে যাওয়ার একদম ইচ্ছে নেই আমার। এক ফোঁটাও না।"

"ইউ লস্ট দ্য গেইম সো ইউ হ্যাভ টু গো উইথ মি। নো চয়েস, শিকদার।"
কথাগুলো বলে মৃদু হাসলো কৌশিক।

অনন্যা ক্ষিপ্ত হলো, বুঝলো না তার উত্তরে কী এমন বিশেষ ভুল ছিল যে উত্তর হয়নি বলে দিলো। হাঁটতে হাঁটতে আবারো গাড়ির সামনে এসে পৌঁছুলো দুজনে।‌
অনন্যা গাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
"আমাকে....কীভাবে খুঁজে পেলেন?"

কৌশিক এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে উপরের দিকে তাকালো। চিন্তার গভীরে ডুব দিলো কিছুক্ষণ আগের ঘটনাগুলো মনে করতে।

একটি বিড়াল গলির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে কৌশিককে পথ দেখাচ্ছিল। তারপর আর কিছুই না, কৌশিক নিজে বাকিটুকু খুঁজে নেয়। অন্য এক গলিতে পা বাড়িয়ে কিছুটা এগোনোর পর, লোকজনের ভিড় চোখে পড়ে। হঠাৎ চোখ পড়ে অনন্যার দিকে, অনন্যাকে ভয়ার্ত অবস্থায় দেখে আচমকা বুকের ভেতর থেকে এক অদৃশ্য শক্তি যেন টান মেরে তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ঝড়ের গতিতে, সবাইকে পাশ কাটিয়ে এক নিঃশ্বাসে অনন্যার সামনে চলে আসে। এক মুহূর্তের জন্য সময় থেমে গিয়েছিল, কেবল কৌশিক আর অনন্যার মধ্যে ছিল এক চরম সংঘর্ষ।

কৌশিক অত কিছু বললো না, শুধু বললো,
"একটা বিড়াল পথ দেখিয়ে ছিল।"

অনন্যা খুশিতে আপ্লুত হয়ে বললো,
"সত্যি? আমি তো ভেবেছিলাম বিড়ালটা আমাকে বিপদে ফেলে চলে গেছে, আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। যাক তাহলে প্রাণীরা ও মানুষদের সাহায্য করে।"

কৌশিক নিশ্চুপ হয়ে অনন্যাকে গাড়িতে বসতে বললো।

•••••••••••

বাসায় পৌঁছুতেই গেইটের সামনে বাঘটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনন্যা। বাঘটি এক মুহূর্তের জন্য অনন্যাকে দেখলেও কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, নরমভাবে গর্জন করতে থাকে। অনন্যা কিছুটা অবাক হয়ে স্যারের দিকে তাকাল।

কৌশিক মৃদু হাসি দিয়ে বলল, "তোমাকে চিনতে পেরেছে!"

অনন্যা মিষ্টি হাসল এবং বাঘটির মাথায় এক আঙুল দিয়ে আদর করল। বাঘটি আরও নুইয়ে পড়ল, যেন শান্ত হয়ে গেল। কৌশিক অনন্যার সম্মতি পেয়ে বাঘটিকে ভিতরে নিয়ে গেল আর অনন্যা তাকে পেছন পেছন অনুসরণ করল।

সোফায় বসে নিক বালিশ কোলে নিয়ে টেলিভিশন দেখছিল, হরর মুভি চলছিল। পুরো ঘর অন্ধকারে ডুবে ছিল। কৌশিক লাইটের সুইচ টিপতেই ঘরটা আলোকিত হয়ে ওঠে, আর নিক হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে। তার চিৎকারে অনন্যাও ভয়ে শিউরে ওঠে চিৎকার করে দ্রুত কৌশিকের পেছনে দাঁড়িয়ে পড়ে। ঠিক তখনই বাঘটি গর্জন করে, ভয়ের মাত্রা আরো এক ধাপ বাড়িয়ে তোলে।

কৌশিক কানে হাত চাপা দিয়ে জোরেশোরে বলে উঠলো,
"এই সবাই চুপ!"

সবাই একে একে শান্ত হয়ে গেল। নিক দ্রুত টিভি অফ করে, অনন্যার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে ইংরেজিতে বললো,
"হাই, অ্যানা! তোমার অপেক্ষায়ই ছিলাম।"

অনন্যাও হাত নাড়িয়ে বললো,
"হাই, আরো অপেক্ষা করো। আমি ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি, সবার জন্য রান্না করবো।"

অনন্যা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। নিক কৌশিকের দিকে সন্দেহভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কৌশিক ধীর পায়ে এসে সোফায় বসলো, শরীরের ক্লান্তি তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সোফার পাশেই বাঘটি আরাম করে শুয়ে পড়েছে। কৌশিক বাঘটির মাথায় হাত বুলিয়ে কয়েক মুহূর্ত থেমে রইল, তারপর সোজা হয়ে বসলো।

চুপচাপ নিজের কোট খুলতেই তার সাদা শার্টে চোখে পড়লো গভীর ক্ষতচিহ্নের ছেঁড়া অংশ আর লাল রক্তের ছাপ।

নিক কৌশিকের পিঠের দিকে তাকিয়ে হতচকিত হয়ে গেলো, বিস্মিত হয়ে বললো,
"কীভাবে হলো এসব? অনেকখানি জখম হয়েছে। অনেক রক্ত ঝরেছে বোঝা যাচ্ছে।"

"হুম তা তো ঝরেছেই!"
কৌশিক নিজের মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে নিলো।

"কী হয়েছিল? অ্যানা, হসপিটালে নিয়ে যায়নি?"

"অনেক লম্বা গল্প! অ্যানা? হুম, বলেছিল! আমিই যায়নি। কোনো ডাক্তার আমার শরীর ঠিক করতে পারবে না।"

নিক কিছু বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় অনন্যা সিঁড়ি দিয়ে নেমে দ্রুত তাদের দিকে এগিয়ে এলো। তার পরনে ছিল পূর্বের গোলাপি ঢিলেঢালা সালোয়ার কামিজ, যা একটু ভারী দেখাচ্ছিল। কৌশিকের সামনে দাঁড়িয়ে অনন্যা বলল,
"স্যার! আমার বাসায় পড়ার জন্য কোনো হালকা পোশাক নেই। এসব ভারী পোশাকে আরাম পাচ্ছি না। আজকের দিনের জন্য কোনো পোশাক দিতে পারবেন? কাল ঈরাকে বলে বাসা থেকে আনিয়ে নেবো।"

কৌশিক চুলগুলো আঙুল দিয়ে পেছনে সরিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বলল,
"তার দরকার নেই।"

তারপর তিন নম্বর রুমের দিকে ইঙ্গিত করে বলল,
"সেখানে আমার অনেক পোশাক আছে। যেটা লাগে নিয়ে নাও। আর যদি দরকার হয়, নতুন কিনে দেবো।"

নিক এতক্ষণ নীরবে শুনছিল। কৌশিকের কথা শেষ হতেই নিক হেসে বলে উঠল,
"আমার পোশাক নিতে হলে বলো।"

কৌশিক নিকের বাহুতে হালকা চাপ দিয়ে বলল,
"তোমার বডি সাইজ যা, ওগুলো অনন্যার জন্য বেশ ঢিলা হবে।"

অনন্যা কথা না বাড়িয়ে খুশিমনে তিন নম্বর রুমের দিকে চলে গেল। তার খুশি লাগছে এই বাড়িতে একজন হলেও তার কাছে কিছু চাইছে। আর সেটা দেওয়ার জন্য অনন্যা অবশ্যই চেষ্টা করবে।

নিক একটু ফিসফিসিয়ে বলল,
"মেয়েটার মধ্যে এমন কী আছে যে তুমি এতটা যত্নশীল?"

কৌশিক এক মুহূর্ত থেমে চিন্তিত মুখে বলল,
"এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। তবে কিছু একটা তো আছে। ভেনোরা আসলে হয়তো সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।"

নিকোলাই উপর নিচ মাথা নাড়লো চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
"হু, ভেনোরা! তোমার মেডিসিন বানাতেই ওকে দূরের পাহাড়ে যেতে হয়েছে। চিন্তা করো না, কয়েক দিনের মধ্যেই ফিরে আসবে।"

কৌশিক কোনো কথা বলল না, চোখের গভীরে চিন্তার মেঘ জমতে লাগল। নিকোলাই ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে পেছনের বিশাল জানালার দিকে এগিয়ে গেল। চাঁদের আলোর নরম আভা ঘরে পড়ছিল, নিকোলাই স্থির দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল,
"হেই! আজকে ফুল মুন। ছাদে যাও, চাঁদ তোমার শরীরের দাগ দূর করে দিতে পারবে, আরো এনার্জি পাবে তুমি।"
.
.
.
চলবে...................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp