স্টে উইথ মি - পর্ব ০৩ - নুসরাত জাহান বৃষ্টি - ধারাবাহিক গল্প


          বড়ো বড়ো অট্টালিকা পেছনে ফেলে একটি কালো রঙের গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে ফ্রান্সের পিচঢালা রাস্তা ধরে। প্রথম দিকে গাড়ির গতি স্বাভাবিক থাকলেও এখন অস্বাভাবিক। গাড়ির চালক একে পর এক ওভারটেক করে বেশ কয়েকটা গাড়ি পেরিয়ে নিজস্ব গন্তব্যে এসে পৌঁছালো। 

গাড়িটি একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে এসে থামে। যুবকটি গাড়ির কাঁচ নামিয়ে রিমোট দ্বারা গেট খুলে গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢোকে। বাড়ির পরিবেশটা যেন একটু অন্যরকম, কেমন নিস্তব্ধতা। পুরো বাড়ির চারপাশ ইট পাথরের দেয়াল দ্বারা ঘেরা। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সাজানো। দেয়ালে ঝুলে আছে নানা ধরনের গাছগাছালি। যেমন, পোটাস, ক্লিভিয়ার মতো সবুজ পাতার গাছ। বাড়ির এক কোণে একটি ছোট স্যুইমিং পুল। পুরো বাড়ির ভেতর কৃত্রিম আলোর ঝলকানি যার আলো গিয়ে‌ পড়ছে সবুজ ঘাসের ওপর। 

বাড়ির ভেতরে গাড়ি প্রবেশ করার পর, গাড়ি এসে থামে ঠিক বাড়ির সদর দরজার সামনে। গাড়ি থেকে নামল শেরাজ মির্জা। তার হাতে গুনেগুনে বিশটা লাল গোলাপ‌ দিয়ে বানাবো একটা বুকে। বিশটা লাল গোলাপ রাখার অর্থ হলো আজ মেহুলের বিশতম জন্মদিন। রাস্তায় যখন জ্যামে পড়ে তখন কি মনে করে একটা গোলাপের তোড়া কিনলো আর আজকের দিনটাও তার জন্য স্পেশাল। শেরাজ বাড়ির দরজা খোলার জন্য চাবি বের করে দরজা খোলে ভেতরে প্রবেশ করলো। পুরো বাড়ি ফাঁকা। একা একমাত্র সে এখানে থাকে, পুরো বাড়িটাকে যেন একটা নির্জনতা ঘিরে রেখেছে। তবে মাঝে মাঝে শেরাজের বন্ধুরা আসে তাও ক্ষণিকের জন্য। তার একাকীত্ব জীবন প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলে এসেছে তবে এবার হয়তো‌ এই একাকীত্বের জীবন শেষের পথে। 

শেরাজ কোট খুলতে খুলতে একটি রুমে এসে প্রবেশ করলো। এই রুমটাতে সে ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারে না। পুরো রুমটা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে। সে হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপে আলো জ্বালালো। মুহূর্তের মাঝে আলোয় ভরে উঠলো পুরো রুম। শেরাজ ধীর পায়ে হেঁটে রুমের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালো। তার চোখের সামনে বিশাল আকারের একটা ছবি, যা ফ্রেমে বন্দি করে সাদা দেয়ালে ঝুলানো। ছবিটি দেখেই শেরাজ মৃদু হাসলো। ছবিতে থাকা চশমা পরা হাস্যজ্জ্বল মেয়েটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। চশমাতে মেয়েটাকে দারুণ লাগে। যেন চশমাটা বাড়িয়ে দিয়েছে তার সৌন্দর্য। পাঁচ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে মেয়েটা। পাঁচ বছর! অনেকটা সময়ের ব্যবধান, তাই না। এই পাঁচ বছরে মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে কিন্তু এখনও প্রতিবাদ করা শিখলো না। যেখানে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন, সেখানে চুপ করে মাথা নিচু করে থাকে। কেন এমন করে মেয়েটা কেন নিজের জন্য লড়ে না কেন? আজ বিশে পা দিলো মেয়েটা। শেরাজ ছবিটার পাশে থাকা ডেস্কের উপরে লাল গোলাপ ফুলের বুকেটা রেখে কণ্ঠে আবেগ মিশিয়ে বলল।

"শুভ জন্মদিন জান।"

কথা বলার সময় শেরাজের চোখে মুখে গভীর এক অনুভূতি ভেসে উঠলো। শেরাজ মৃদু হেসে বললো, "বিশ তম জন্মদিনে, কী উপহার চাস তুই আমার তরফ থেকে?"

একটু থামে, মনে মনে কিছু একটা ভাবল, এরপর ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা রেখে বলল, "ভাবছি তোকে এই বার একটা দামি উপহার দিবো। কিন্তু কি দিবো বলতো?"

শেরাজ কিয়ৎক্ষণ চুপ রইলো, ''তোর বিশ তম জন্মদিনে নিজেকে উপহার দিবো আমি সেটাও নিরবে নিভৃতে।"

শেরাজ ছবিটার দিকে আরও এগিয়ে এসে কঠিন গলায় বলল, "এই পাঁচটা বছর অনেক যন্ত্রণায় কাটিয়েছি আমি প্রতিটা মুহূর্তে। এবার তোকে এই পাঁচ বছরের সকল যন্ত্রণা সুদে-আসলে পুষিয়ে দেবো। তোর জীবনে নায়ক হয়ে নয়, বরং ভিলেন হয়ে আসবো আমি।"

শেরাজ ছবিটার উপরে হাত বুলিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল, "সব মেয়েদের জীবনে তো রাজপুত্র আসে, আমি না হয় তোর জীবনে এক ভয়ংকর অধ্যায় হয়ে আসবো।"

শেরাজ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে আবারো বলল, "মা তোকে বিয়ে দিতে চায় না। এতোটাই সহজ তোকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া।"

শেরাজ নিঃশব্দে হাসলো কথাটা বলে। যেন মায়ের বলা এই কথাটা সে আমলে নিলো না। মায়ের কথাটা গায়ে না লাগিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল।

"তোর ওপর অধিকার শুধু আমার থাকবে মেহুল। তোকে ছুঁয়ে দেখার অধিকার, তোকে অনুভব করার অধিকার—সবটাই আমার। তোকে ভালোবাসলেও তুই আমার, ঘৃণা করলেও তুই আমার। কেউ তোকে স্পর্শ করার সাহস দেখালে, তার সেই হাত আমি অক্ষত রাখব না।"

—————

সকাল থেকেই মেহুলের ফোন লাগাতার বেজে চলেছে। একবার কলি, একবার লামিয়া, আরেকবার ইকরা—তিন বান্ধবী পালা করে তাকে কল দিয়ে যাচ্ছে যেন। বছরে এই দিনটাতেই তিন বান্ধবী এমন করে মেহুলকে লাগাতার কল দেয়‌ এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস। ফোনে বান্ধবীকে জন্মদিনের উইশ না করলেও যখনই মেহুল তাদের কাছেপিঠে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তেই তিনজন মিলে তাকে জড়িয়ে ধরে চমকে দেয়। মেহুল জানে, এবারও হয়তো এর ব্যতিক্রম হবে না।

সকালের নাস্তা সেরে মেহুল রেডি হয়ে বাড়ির গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আজকে যেহেতু বাড়িতে নানা ভাই আছে তাই বাড়ির গাড়ি নিয়েই ভার্সিটি গেছে মেহুল। ভার্সিটির গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢোকলো। কিন্তু কোথায় তিন বান্দরনী? তাদের দেখা নেই কেন? মেহুল ভ্রু কুঁচকে নেয় মাঠের মাঝখানে বিশ থেকে পঁচিশজন শিক্ষার্থীকে জড়ো হয়ে থাকতে দেখে। ভিড়টা দেখে তার কৌতূহল হলো—হচ্ছে কি এখানে? মেহুল কাঁধে থাকা ব্যাগটা আরেকটু ঠিক করে সে এগিয়ে গেলো। ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই আচমকাই বুম করে পার্টি পপার ফাটার শব্দ শুনে মেহুল চমকে উঠলো। তৎক্ষণাৎ সবাই একসঙ্গে চিৎকার করে উঠলো, "হ্যাপি বার্থডে, মেহুল!"

উপর থেকে রঙিন কাগজের টুকরো বৃষ্টি হয়ে যেন তার গায়ে-মাথায় পড়তে লাগলো। বিস্ময়ে মেহুলের মুখখানা অবাক হয়ে গেল। এমন অপ্রত্যাশিত সারপ্রাইজ সে আশা করে নি! তার তিন বান্ধবী আর ক্লাসমেটরা মিলে এমন একটা পরিকল্পনা করবে, সেটা সে কল্পনাও করতে পারে নি। লামিয়া দু'ভ্রু নাচিয়ে মজা করে বলল, "কি, কেমন দিলাম?" 

মেহুল প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসলো। তার ক্লাসমেট রনক তখন ছোট একটা টেবিল এনে রাখলো মেহুলের সামনে। ইকরা তাতে একটা কেক রেখে তাড়াতাড়ি বলল, "নে, জলদি জলদি কেক কাট। সকাল থেকেই কেক খাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি, কিন্তু তুই কেক না কাটা পর্যন্ত খেতে পারবো না।" 

ইকরার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো। কলি বিড়বিড় করলো, "পেটুক কোথাকার!"

ইকরা সেটা শুনে কলির দিকে তেড়ে গিয়ে বলল, "কী বললি তুই?" 

মেহুল পরিস্থিতি সামাল দিতে বলল, "ওকে‌ ওকে, শান্ত হো দুজনে! আমি কেক কাটছি পরে যে যতো পারিস খাবি।"

কেক কেটে মেহুল সবার মুখে তুলে দিলো, বিশেষ করে তার তিন বান্ধবীর মুখে। ছোট্ট এই আয়োজন যেন মুহূর্তেই একটা সুন্দর স্মৃতিতে পরিণত হলো। একে একে সবাই মেহুলকে উপহার দিতে শুরু করলো। আপাতত মেহুলের দুই হাত ভর্তি ফুল, চকলেট, ডায়েরি দিয়ে। এই প্রথমবারের মতো তার জন্মদিনটা সে এতটা উপভোগ করেছে।

মেহুলের হাতে থাকা উপহারগুলো আপাতত ইকরা, লামিয়া আর কলির দায়িত্বে। তারা এগিয়ে যাচ্ছিল ক্লাস রুমের উদ্দেশ্যে, এমন সময় হঠাৎ ভারী, গভীর একটা পুরুষালি কণ্ঠে মেহুলের নাম ভেসে এলো। মেহুল পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে, জাফির হাসিমুখে এগিয়ে আসছে। জাফির এই ভার্সিটির সিনিয়র, আর তার অতি পরিচিতির মূল কারণ হলো তার "লুইচ্চা" স্বভাব। ভার্সিটির সবাই জানে, যদি মেয়েদের বিষয়ে কারো রেকর্ড তৈরি হয়, তবে শীর্ষে থাকবে জাফিরের নাম আগে। অবাক করা বিষয় হলো, তার এই বদনাম সত্ত্বেও মেয়েরা তার সঙ্গ পেতে আগ্রহী। কারণ? টাকার জোর। জাফির বাপের টাকায় ফুটানি মারে। আর মেয়েরাও টাকার লোভে পড়ে জাফির লুইচ্চাটার সাথে সম্পর্কে জড়ায়। তবে তার সম্পর্কগুলো বেশিদিন টেকে না। কিছুদিনের মধ্যে ভেঙে যায়। আজ সেই লুইচ্চা প্লে বয় জাফির, হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে, মেহুলের দিকে এগিয়ে আসছে। এই দৃশ্য দেখে ইকরা, লামিয়া আর কলি হতবাক। চোখ মুখের আকার বিকৃতি করে জাফিরের দিকে তাকিয়ে আছে তারা। জাফির মেহুলের সামনে এসে গোলাপের তোড়াটা এগিয়ে দিয়ে‌ প্রেমময় কণ্ঠে বলল, "শুভ জন্মদিন, মেহুল।"

মেহুল সৌজন্য স্বরূপ মুচকি হাসলো, কিন্তু কিছু বলার আগেই ইকরা এগিয়ে এসে তোড়াটা নিয়ে বলল, "ধন্যবাদ ভাইয়া। তাহলে আসি, আমরা।" 

তিনজনই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নিবে, ঠিক তখনই জাফির চেঁচিয়ে উঠল, "আরে দাঁড়াও! এত তাড়া কিসের?"

চারজনই থমকে দাঁড়ালো। ইকরা বিরক্ত স্বরে বলল, "বলুন ভাইয়া, কী বলবেন?"

জাফির মুচকি হেসে বলল, "বলব, কিন্তু তোমাকে নয়।"

ইকরা ভ্রু তুলে জিজ্ঞেস করল, "তাহলে কাকে বলবেন শুনি?"

জাফির এবার সরাসরি মেহুলের দিকে তাকিয়ে বলল, "মেহুলকে।"

মেহুল ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে বলল, "আমাকে? কী বলবেন ভাইয়া?"

জাফির ভাইয়া ডাকটা শুনে বিরক্তির সুরে বলল, "ধুর! সব ঠিক ছিল, কিন্তু ভাইয়া কেন ডাকলে তুমি মেহুল?"

কলি ঠোঁট বাঁকিয়ে খোঁচা মেরে বলল, "তাহলে কী বলে ডাকবে আপনাকে শুনি আব্বা?"

কলির কথা শুনে বাকি সবাই হেসে উঠল। এমন কি মেহুলও হেসে ফেলল। কিন্তু জাফির পুরোপুরি তব্দা খেয়ে যায়। কিছুটা লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়ে বলল, "আশ্চর্য! মেহুলের আব্বা হতে যাবো কেন আমি?"

কলি তখন তীর্যক ভঙ্গিতে সুরে সুরে বলল, "তাহলে কী হতে চান আপনি, জাফির ভাইয়া?"

জাফির বুক ফুলিয়ে চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ব্রাশ করে একদম হিরো হিরো ভাব নিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই ইকরা হাত বাড়িয়ে তাকে থামিয়ে বলল, "থাক, আপনাকে কিছু বলতে হবে না। আমাদের ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।"

জাফিরের ঠোঁটের আগায় যে কথাটা ছিল, তা আর বলা হলো না। ইকরা পুরো ব্যাপারটাই পন্ড করে দিল। মেহুল আর তার বান্ধবীরা চলে যেতে উদ্যত হবে। ঠিক তখনই জাফির মেহুলের কবজি ধরে ফেলল। মেহুল থমকে দাঁড়ায়। বিস্মিত চোখে একবার নিজের হাতের দিকে, আরেকবার জাফিরের দিকে তাকাল। এদিকে জাফির কোনো ভণিতা না করেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। মেহুল চোখে বড়ো বড়ো করে নেয়। তার হাত এখনও জাফিরে হাতের মুঠোও।

জাফির নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল, "আমার সঙ্গে রিলেশনে যাবে? অনেক দিন ধরে কথাটা জমিয়ে রেখেছিলাম‌ মনের ভেতর। ভাবলাম আজ, তোমার জন্মদিনে, তোমাকে কথাটা বলেই দিই।"

ইকরা যা ভেবেছিলো তাই হলো। সে আগেই আন্দাজ করেছিল, লুইচ্চা জাফির হয়তো মেহুলকে টার্গেট করেছে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।

জাফির বলল, "আজ থেকে কোনো মেয়ের সঙ্গে আর ফ্লার্ট করব না। প্রমিজ! শুধু তোমার সঙ্গে রিলেশনে থাকব। তোমাকে খুব ভালোবাসব।"

মেহুল তড়াক করে জাফিরের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল। আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল, "আপনি কী করছেন, জাফির ভাইয়া?"

জাফির দৃঢ়স্বরে বলল, "কী করছি মানে? তোমাকে প্রেম নিবেদন করলাম।"

মেহুল চারপাশে তাকিয়ে দেখল, আশেপাশে অনেকেই তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে সেই মেয়েগুলো, যারা আগে জাফিরের সঙ্গে সম্পর্কে ছিল। তাদের তীক্ষ্ণ চোখে মেহুলের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহুল শান্ত কণ্ঠে বলল, "জাফির ভাইয়া, দেখুন আমি এসব প্রেম-ভালোবাসার ধারে কাছে যেতে চাই না। আমি এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি। আপনার রিলেশন করার যদি এতই ইচ্ছে থাকে, ভার্সিটিতে অনেক মেয়ে আছে তাদের সাথে করুন। এমনিতেই আপনি কোনো মেয়েকে বাদ রাখেন নি। তাই দয়া করে আমার থেকে দূরে থাকবেন।"

বলে মেহুল দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে গেল। লামিয়াও তার পেছন পেছন পেছন গেল। জাফির ধীরগতিতে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পোশাক ঝেড়ে চেঁচিয়ে বলল, "মেহুল, তুমি যাই বলো না কেন? আমি তোমার উত্তরের জন্য অপেক্ষায় থাকব।"

ইকরা তখন বিরক্তিকর গলায় বলল, "আচ্ছা, জাফির ভাইয়া! আপনি কি কানে কম শুনেন?"

জাফির অবাক হয়ে বলল, "মানে?"

ইকরা ঠান্ডা গলায় বলল, "মেহুল তো স্পষ্ট করেই বলে গেল যে তার থেকে‌ দূরে থাকবেন। এরপরও বলছেন উত্তরের অপেক্ষায় থাকবেন?"

জাফির ইকরার দিকে এক পা এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল, "আরে, মেয়েদের একটা স্বভাব আছে। প্রথম প্রথম না বলবে, পরে ঠিকই না থেকে হ্যাঁ হয়ে যাবে। এটা তাদের জেনেটিক সমস্যা।"

কলি বিরস কন্ঠে বলল, "ওহ, আপনি তো মেয়েদের নিয়ে পিএইচডি করেছেন! তাই মেয়েদেে জেনেটিক সমস্যার কথাও জানেন।"

জাফির গর্ব নিয়ে বলল, "তা তো জানিই।"

ইকরা নাক মুখ কুঁচকে বলল, "জানবে নেই তো? এত মেয়ের সঙ্গে ওঠা বসা আপনার! আপনি জানবেন না তো কে জানবে বলুন?"

ইকরা কলিকে টেনে নিয়ে চলে যায়। বেশি কথা বললে শুধু কথাই বাড়বে তার চেয়ে বলো চলে‌ যাওয়া। জাফির দু'হাত পকেটে গুঁজে শিস বাজাতে বাজাতে হাঁটা দিল।

সবকিছু দূর থেকে একজন কালো মাস্ক আর মাথায় ক্যাপ পরিহিত একটা লোক সরু চোখে দেখছিল। আপাতত লোকটি এখন‌ ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা লোকটি এই সমস্ত কথা শুনা মাত্রই রাগে তার চোয়াল শক্ত করে নেয়। ডান হাতটা রেগে মুষ্টিবদ্ধ করে, যার ফলে হাতের নীল রগগুলো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। লোকটি নিরবে সব শুনে গেলো কিন্তু কোনো কথা বলল না। এই নিরবতা যেন ঝড় আসার পূর্ব লক্ষণ।
·
·
·
চলবে...................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp