নীলাম্বরে রৌদ্দুরের হাতছানি - পর্ব ০১ - বেলা শেখ - ধারাবাহিক গল্প


 সুরেলা সালেহের চোখে মুখ বিরক্তিতে ঠাসা। গায়ের মলিন ওড়না আঙুলে পেঁচিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বললো,

-" আব্বা আমি ওই চেয়ারম্যান বাড়ি যামু না। আপনেই বেশি কইরা গিলেন হেগের বাড়ির পোল্ট্রি মুরগির খিচুড়ি!"

 সালেহউদ্দিন রেগে মেগে গর্জে ওঠে। চোখ পাকিয়ে শাসনের ভঙ্গিতে বলে,

-" বেয়াদব মাইয়া তুই আমার কথা হুনবি না, না? ভদ্দর মাইয়ার লাহান চল? নইলে ইস্কুলের বেতন আমি দিমু না। পড়ালেহা বন্ধ কইরা দিমু। তহন জোলা বাড়ি হুতা তুইল্যা খাইস!"

সামান্য ব্যাপার নিয়ে বাবার এরকম বাড়াবাড়ি সুরেলার ভালো লাগে না। সে অসহায় চোখে মায়ের পানে চায়।‌শান্তি বেগম মেয়ের মাথায় হাত রেখে বোঝানোর সুরে বলে,

-" যা না গেদি! গেলে তাই কি হইবো? তোরে তো গিন্নী মা যাইতে কইছে। আর সিনানও আছে তো তাইলে এতো নাটক করিস ক্যান?"

সুরেলা রাগে ধচং বচং করতে করতে ঘরে যায়। সালেহউদ্দিন গলা চড়িয়ে ভালো সালোয়ার কামিজ পড়ে আসতে বলে। সুরেলা অতি অপ্রসন্ন মনে ঘরের টিনের বাক্স খুলে একসেট সালোয়ার কামিজ বের করে। গত ঈদে দাদা এই জলপাই রঙের সালোয়ার সুট কিনে দিয়েছিলো। তাঁর ভারি পছন্দের জামা এটা। সুরেলা গায়ের মলিন ময়লা কামিজ খুলে নতুন পোশাক মুড়িয়ে একটা ছোট্ট আয়নায় নিজেকে দেখে। শ্যাম কালো গরণের মুখটা ভালো লাগলো না তাঁর কাছে। অনিচ্ছা সত্বেও একটু কাজল স্নো পাউডার মেখে বড় ওড়নায় মাথা গা ভালোভাবে ঢেকে বেরিয়ে পড়ে বাবার সাথে। সালেহউদ্দিন মেয়েকে নরম সুরে বলেন,

-" ওরা দুই একটা কামে কইলে হাসি মুখে কইরা দিবি। কু*ত্তার লাহান মুখ বানাবি না। চটাং চটাং কথা যানি না শুনি আদ্দব মতো থাকবি!"

সুরেলার এতক্ষণে বুঝে আসে আব্বা কেন তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এতো নাছোড়বান্দা হয়ে পড়েছিল। চেয়ারম্যান বাড়ি কাজের লোকের অভাব পড়েছে যে!! সুরেলার ইচ্ছে করে ছুটে পালিয়ে যেতে। কিন্তু পারবে না ছুটে পালাতে। তাঁর ডানা যে কেটে ফেলা হয়েছে। সে টইটম্বুর ক্ষোভে ভরা চোখে মাথানত করে হাঁটে। চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে তাদের বাড়ির দূরত্ব খুব একটা দূরে নয়। ফসলি জমি বরাবর চললে পাঁচ মিনিটও লাগে না। তারা শিঘ্রই পৌঁছে যায় সেখানে। বিশাল অট্টালিকার একপাশে শান বাঁধানো বড় একটা পুকুর। পুকুরের বাম পাশে গরুর খামার। অট্টালিকার অপর পাশে বাগান আর খোলা আঙ্গন। খোলা জায়গায় নিত্য নতুন পুরুষ মানুষের ঢল। সালেহউদ্দিন মেয়েকে নিয়ে অন্দর মহলের প্রবেশদ্বারে গিয়ে সুরেলাকে রেখে আসে। সুরেলা বাইরে অসহায় নজরে ভাইকে খোঁজে কিন্তু পায় না। সুরেলা আটকে রাখা কারুকাজে খচিত কাঠের দরজা হালকা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। কয়েক পা এগিয়ে যেতেই নজরে আসে ব্যস্ত মানবীর ঢল। বিশাল এই অট্টালিকার মাঝে চারকোনা উঠোন রয়েছে। উঠোনের চারপাশে বারান্দায় চেয়ারম্যান বাড়ির গিন্নিরা বসে হুকুম চালাচ্ছে কাজের মেয়েদের উপর। কাঠের চেয়ারে বসা বাড়ির বড় গিন্নী রেবেকা বানু সুরেলাকে দেখে গম্ভীর গলায় বলে,

-" আসতে বলেছিলাম বলে ভাব বেড়ে গিয়েছিল নাকি? এতো দেড়ি করলি কেন? যা এঁটো প্লেট গুলো মেজে দে ভালোভাবে!"

সুরেলার শক্ত চোয়ালে চার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। এঁটো বাসন কোসন রাখা শানের পয়টায় বসে ট্যাপ ছেড়ে মাজতে শুরু করে প্লেট গুলো। উপস্থিত সকল কাজের মহিলারা যার যার কাজে ব্যস্ত। সুরেলা সবার পানে একবার তাকায়। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কাউকে খোঁজে। তবে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি নজরে আসে না। গোমড়া মুখে কাজ করতে থাকে। হঠাৎ রিনিঝিনি চুড়ি ও নুপুরের শব্দে সুরেলা ঘার বাঁকিয়ে তাকায়। উত্তরমুখী দরজা থেকে এক চঞ্চলা কিশোরী ছুটে আসে।মায়ের কাছে আবদার করে মিষ্টি সুরে। চোখে মুখে যেন তাঁর দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে। সুরেলা হা করে তাকিয়ে থাকে। সুন্দর মানুষ দেখতে কার না ভালো লাগে? কিশোরী মেয়েটি রূপসা। নামের সাথে তাঁর মিল শতভাগ। এ যেন রূপের রানী! যেমন দুধে আলতা গায়ের বরণ তেমনি তাঁর রূপের গড়ণ। দেখলে চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না। সুরেলা ওই ফর্সা মাখনের মতো হাতখানা দেখে নিজ হাতের দিকে তাকায়। কালো না হলেও ফর্সাও নয়। সুরেলা মনে মনে হাসে ; উপর ওয়ালা যাকে দেয় হাড়ি ভরেই দেয়! রূপসা মেয়েটা তাদের স্কুলেই তাঁর দুই ক্লাস নিচে পড়ছে। কি সুন্দর নিত্যনতুন জামা পড়ে স্কুলে যায়। হেডমাস্টারও কিছু বলে না। অথচ অন্যকেউ বিনা স্কুল ড্রেসে গেলে পাঁচটা বেত্রাঘাত সইতে হয়। সুরেলা রূপসার কথায় কান পেতে প্লেট মাজে। রূপসা মায়ের কাছে আবদার করে,

-" আম্মু যাই না? পলি আমার সেই ছোট্ট বেলার বান্ধবী। আজ ওর বিয়ে আমাকে কত্তো করে অনুরোধ করলো। ও আম্মু?

চেয়ারম্যান বাড়ির ছোট গিন্নী ছামিনা খাতুন সরাসরি নাকচ করে দেয়। রূপসা তবুও জেদ ধরে সে যাবেই। ছামিনা খাতুন ধমক দিলে রূপসার মুখখানি ছোট হয়ে যায়। রেবেকা বানু ভাতিজির শুকনো মুখ খানি দেখে কাছে ডাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে হাসতে হাসতে বলে,

-" বান্ধবীর বিয়ে হচ্ছে! তাহলে রূপসারও বিয়ের বয়স হয়ে এলো বুঝি? সবে তো জেএসসি দিবে। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলেই নিকাহনামা পড়িয়ে ফেলবো কি বলো ছামিনা?"

রূপসা অবুঝ চোখে চাচি ও মায়ের দিকে তাকায়। ছামিনা বেগম অল্প হাসলেন শুধু কিছু বলেন না। রেবেকা বানু রূপসার অবুঝ চাহনি দেখে হেসে বলে,

-" আরেকটু বড় হ বুঝতে পারবি। তোর বান্ধবীর বিয়েতে যাহ। আমি অনুমতি দিলাম তবে সন্ধ্যার আগেই ফিরবি কিন্তু? এখন লক্ষীটির মতো রিজকে ডেকে নিয়ে আয়। ও দিয়ে আসবে তোকে!"

রূপসার খুশি দেখে কে। সে দৌড়ে চলে যায় রিজ ভাইকে ডাকতে। রূপসা চলে গেলে ছামিনা খাতুন জা'য়ের উদ্দেশ্যে খানিক শক্ত সুরে বলে,

-" ভাবী? আমার মেয়েকে আমি পড়াতে চাই। ওকে বিয়ে দেওয়ার দেড়ি আছে। গ্র্যাজুয়েশন করাবো রওশনের মতো। তারপর বিয়ের কথা ভাববো। আপনি এখনি এসব ওর মাথায় ঢুকাবেন না।"

রেবেকা বানু হেসে ওঠে। কাজের মেয়ের বাড়িয়ে দেয়া চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ফু দিয়ে বলে,

-" গ্র্যাজুয়েশন করাবে? রমজান ভাই তো বলল এসএসসির পরেই শুভকাজ সম্পন্ন করবে। রিজ আর রূপসার চারহাত এক করে দেবে!"

ছামিনা খাতুন চুপচাপ শুনে যায় প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত করেন না। তাঁর পরিকল্পনা একটু না পুরোপুরিভাবে ভিন্ন। এখন আগে দেখা যাক। সুরেলা তাদের কথোপকথন মনোযোগ দিয়ে শোনে। মলিন হেসে সমস্ত ভাবনা ছুঁড়ে ফেলে নিজ কাজে মনোনিবেশ করে। একটু পরেই কারো ঠকঠক পায়ের শব্দে সুরেলা আড়চোখে সেদিকে তাকায়। সাদা কেডস নজরে আসে। চোখ উঁচিয়ে চাইতেই সুদর্শন সপুরুষ কায়া নজরে আসে। সুরেলার বুকটা ধ্বক করে ওঠে। চিত্ত টগবগিয়ে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে। তবে পুরুষ কায়ার পেছনে হুর পরী দেখে সুরেলা সেই যে মাথা নত করে নিলো! তবে সেই কাঙ্খিত মানবটার গমগমে আওয়াজ কর্ণ গহ্বরে ঢুকতেই সুরেলার গাঁয়ের কাঁটা শিউরে ওঠে। আবারও চোরা নজরে তাকায় মানবের দিকে। এলোমেলো চুল ফোলা ফোলা চোখে যেন মাদকতা ঢেলে দিয়েছে। শুভ্র গরণের মুখটা সুরেলাকে বারংবার থমকে দেয়। সুরেলা চোখ বুজে বিড়বিড় করে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে। সুরেলা মানবটার নজরে আসে তখনই। ঠোঁট বাঁকিয়ে অল্প হাসে নওরিজ মাহবুব। নজর সরিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

-" আম্মা আমি যেতে পারবো না। আমার কাজ আছে।রওশনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি রূপসার সাথে। আর আমার ঘরটা একটু গুছিয়ে দিতে বলুন কাউকে। আপার ছেলে মেয়ে গোয়ালঘর বানিয়ে রেখেছে!ফ্লোরে, বিছানায় খাবারের ছড়াছড়ি।"

রেবেকা বানু তাদের কাজের মেয়ে রূপবানকে বলে ঘর গুছিয়ে দিয়ে আসতে। রূপবান হাতের কাজ ফেলে উঠবে নওরিজ গম্ভীর গলায় বলে,

-" ওনার গোছানো পারফেক্ট হয় না। কোথায় কোন জিনিস রাখে খুঁজে পাওয়া যায় না!"

-" তাহলে আর কাকে পাঠাই? ওই সুরেলা তুই যা গুছিয়ে দিয়ে আয়। খবরদার কোনো জিনিস যেন এদিক সেদিক না হয়। রূপসা মা ওকে নিয়ে যা তো?"

রেবেকা বানুর হুকুম তামিলে সুরেলা নড়েচড়ে বসলো। সে কি কাজের লোক নাকি যে এসব করবে? নেহাতই বাবা চেয়ারম্যান চাচার কাজে হাত বাটায় সোজাসুজি বললে পাতি চামচা। কিন্তু সে তো নয়! সে বাসন ধুতে ধুতে বলে,

-" গিন্নী মা আমি পারমু না। আপনি অন্য কাউরে কন!"

রেবেকা বানু অবাক চোখে চায়। তাঁর মুখের উপর কথা বললো এই মেয়েটা? এতো সাহস! তিনি দাঁত কিড়মিড় করে বলেন,

-" তোরে যেতে বলেছি যাবি! তোর মাকে যা বলতাম চুপচাপ করতো টু শব্দ করতো না। তোর বাপের কাছে আবারও বলবো? মেয়েরে ভালোই চটাং চটাং কথা শিখিয়েছেন!"

সুরেলার চোয়াল শক্ত হয়। আঁখি যুগল ভরে ওঠে অতিরিক্ত রাগে। মহিলাকে তাঁর বিন্দুমাত্র সহ্য হয় না। বাবাকে বললে বাবা তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলবে। সে হাত ধুয়ে কল বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। রেবেকা বানু ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে অল্প। ফকিন্নীর ঝিয়ের আবার ভাব! সুরেলা নতমুখে রূপসার পিছু পিছু যায় ছোট ছোট পায়ে। গাম্ভীর্যে ঠাসা দুটি চোখ তীক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলে তাদের প্রস্থান দেখে। 

নওরিজ মাহবুবের ঘরে ঢুকে সুরেলা কণ্ঠ রোধ হয়ে আসে। একেবারে জগাখিচুড়ী অবস্থা ঘরের। বালিশ বিছানার চাদর ফ্লোরে পড়ে আছে। বিছানায় বিভিন্ন সদাইয়ে প্যাকেট, বাদামের খোসা, ছোলা বুট পড়ে আছে। ফ্লোরে কি সব বডি স্প্রে, পাউডার, স্নো সব সাজনা সরঞ্জাম গড়াগড়ি খাচ্ছে। সুরেলা রূপসার দিকে তাকিয়ে বলে,

-" রুমে ঘূর্ণিঝড় হইছিলো বুঝি?"

রূপসা মিষ্টি করে হেসে বলে,

-" রিজ ভাইয়ের বোন নওরিন আপুর জমজ ছেলে মেয়ে আছে। তাদেরই কাজ। ভিষণ দুষ্টু বুঝলে! এখন কাজে লেগে পড় জলদি?"

মিষ্টি করেই বলল তবে সুরেলার মনে হলো কেউ হুকুম দিচ্ছে। সে চুপচাপ কাজে লেগে পড়ে। সাথে মনে মনে পণ করে আর চেয়ারম্যান বাড়ির চৌকাঠে পা দিবে না। সে বাবা যতই হুমকি ধামকি দিক। সুরেলা বিছানা পরিষ্কার করে ফ্লোরে পড়ে থাকা চাদর বিছিয়ে দিবে রূপসা বাঁধা দেয়। আলমারি খুলে নতুন চাদর বের করে দেয়। সুরেলা সেটা বিছিয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা সরঞ্জাম ড্রেসিন টেবিলে গুছিয়ে রাখে। বড় ঝকঝকে আয়না তার। সুরেলা সেই আয়নায় নিজেকে দেখে একঝলক। ভালোই তো দেখতে লাগছে। প্রথমবার মনে হলো সে ওতটাও কুৎসিত নয়। কিন্তু তাঁর ছোট্ট আয়নায় তো তাকে এমন লাগে না! কেন? কমদামি ছোট আয়না তাই? অধর বেঁকে হাঁসি ফুটে উঠবে তখনই কারো কর্কশ গলা কর্ণ গহ্বরে বাড়ি খায়।

-" কাজ ফাঁকি দিয়ে আয়নায় নিজ সুরত দেখা হচ্ছে? বলি সেটা আমরা দেখে নিবো তুই তোর কাজ কর!"

নওরিজ মাহবুব বলতে বলতে ঘরে প্রবেশ করে। সুরেলা আড়চোখে তাকে দেখে আয়নাতে নিজেকে দেখে নেয় আবারও। ইশ্ আয়নাটা যদি সে চুরি করে নিতে পারতো!! সে ঘরের এককোনা থেকে ঝাড়ু নিয়ে ঘর ঝাড়ু দিতে শুরু করে। রূপসা এসে নওরিজের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

-" রওশন ভাই বোধহয় বাগানের দিকটায়! আমি যাই ভাইয়া আমাকে পৌঁছে দিবে। তুমি একটু এখানে খেয়াল রেখো রিজ ভাই!"

বলেই রূপসা পগারপার। সুরেলা নত মাথা তুলে তার প্রস্থান দেখে। ওহ্ তাকে পাহাড়া দিচ্ছিল অথচ সে বোকা ভেবেছে একা তাই সঙ্গ দিচ্ছে। সুরেলা ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে এখান থেকে। সে তড়িঘড়ি হাত চালায়। ঘর গুছিয়ে সে ভাইয়ের কাছে চলে যাবে। নওরিজ বুকে হাত গুঁজে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। গম্ভীর মুখাবয়বের তীক্ষ্ম দৃষ্টি সুরেলাতে নিবদ্ধ। সুরেলার রাগে টসটসে নত মুখ দেখে মুখ বাঁকিয়ে বলে,

-" মুখটা ওমন টমেটোর মতো বানিয়ে রেখেছিস কেন? টমেটো আমার পছন্দ ভারী। কখন কামড়ে দিই ঠিকঠিকানা নেই।"

সুরেলার হাত থেকে ফুলঝাড়ুটা পড়ে যায় তৎক্ষণাৎ। চোখ কপালে তুলে অবিশ্বাস্য চোখে চায়। নওরিজ প্যান্টের পকেটে অল্প হাত ঢুকিয়ে নেয়। দুই পা এগিয়ে এসে গম্ভীর মুখে বলে,

-" কাজ রেখে হা করে কি দেখিস? জলদি ঘর ঝাড়ু দিয়ে ফ্লোরটা মুছে নে।"

সুরেলা কেমন ঝাপসা ঝাপসা বোধকরে। একটু আগের কথা লোকটা বলেছে নাকি তাঁর ভ্রম! তাঁর কল্পনা বৈ কিছু না। তবে সে তর্কে না গিয়ে ঘরটা ঝাড়ু দিয়ে ময়লাগুলো ঝুড়িতে তুলে নেয়। নওরিজ আবারও প্রশ্ন করে,

-" তুই যেন কোন ক্লাসে পড়িস? উচ্চ মাধ্যমিক দিবি তাই না?"

সুরেলা ত্যাছড়া নজরে চায় নওরিজের দিকে। লোকটা এই কথা এর আগেও অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছে। সুরেলা মিনমিনে সুরে জবাব দিল,

-" এবার দশম শ্রেণিতে উঠলাম। সামনে বছর মানে বারো সালে এসএসসি দিবো।"

নওরিজ বিরক্ত মুখে ওয়াশ রুম থেকে এক বালতি পানি এনে সুরেলার পায়ের কাছে রাখে। আলমারি খুলে একটা টি শার্ট বের করে সুরেলার দিকে বাড়িয়ে বলে,

-" বড় কবে হবি তুই? থোবড়া দেখে ঊনত্রিশ বছরের মহিলা লাগে।সে বাদ দে রুমটা মুছে দে এটা দিয়ে। ভালোভাবে করিস।"

অপমানে সুরেলার আঁখি জোড়া ভরে ওঠে। তাকে সত্যিই মহিলা মহিলা লাগে? সে ঢোক গিলে বাড়ন্ত টি শার্ট হাতে নেয়। দেখে তো নতুনই মনে হচ্ছে।এর চেয়ে মলিন শার্ট তাঁর ভাই এখনো গায়ে দিয়ে দাওয়াত খেতে যায়। সে টি শার্টটা পানিতে চুবিয়ে পুরো ফ্লোর মুছে নেয় দু'বার!

••••••••••••••

-" আমার তো ভাই তিন চারটে বিয়ে করবার অন্নেক শখ। একজন পা টিইপা দিবো, একজন মাথা টিইপা দিবো, আরেকজন...."

-" আরেকজন গলা টিপে দিবে তাই না সিন ভাই?"

সিনান সালেহের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে কিশোরী রূপসা খিলখিলিয়ে হেসে বলে ওঠে। সিনান সালেহ সহ গোল বৈঠকের সবাই তাঁর দিকে তাকায়। রূপসা মিটমিটে হেসে এগিয়ে আসে। গোলাপি স্কার্ট ফতুয়ায় মেয়েটা যেন নিপুণ হাতে আঁকা কোন পুতুল। উপস্থিত সকল ছেলেদের নজর রূপসাতে নিবদ্ধ। সিনান সালেহও ব্যাতিক্রম নয়। সৌন্দর্যে কার না আকর্ষণ থাকে? দুনিয়াটা যে সৌন্দর্যের পূজারী। রূপসা সিনানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-" ভাইয়া কোথায়? একটু ডেকে দিন তো?"

সিনান এদিকে ওদিকে তাকিয়ে রওশনকে খোঁজে। আজ চেয়ারম্যান নোমান মাহবুবের বাবার মৃত্যু বার্ষিকী। সেই উপলক্ষে গ্রামবাসীদের দাওয়াত করা হয়েছে। বাদ যোহর মানুষ খাওয়ানো হবে অথচ এখন বেলা এগারোটার দিকেই মানুষের ঢল নেমেছে। সিনান ভিড়ের মাঝে রওশনকে ডেকে আনে। রওশন হাসি মুখে বন্ধুর কাছে এগিয়ে আসলেও বোনকে দেখে রেগে যায়। এতো ছেলেদের ভেতর বাইরে বেরিয়ে এসেছে বেক্কল মেয়েটা। সে এসেই চাপা স্বরে ধমক দেয়। রূপসার মিষ্টি হাস্যোজ্জ্বল মুখে আঁধার নামে। চোখের কোনায় চিকচিকে জল বলে দেয় এ বাপ ভাইয়ের আদরের রাজকন্যা। রাজকন্যা গোলাপী রাঙা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

-" চাচিমার থেকে অনুমতি নিয়েছি। রিজ ভাই বললো তুমি যেন আমাকে পলিদের বাড়ি রেখে আসো। আজ ওর বিয়ে। আমিও যাবো!"

রওশন ভ্রু কুঁচকে চায় বোনের দিকে। ফর্সা মুখশ্রীতে টকটকে নাক যেন এখনি গড়াগড়ি খেয়ে কাঁদবে। সে বোনের নাকে টোকা দিয়ে বলে,

-" যা বোরকা পড়ে আয়। এভাবে নিয়ে যাবো না।"

নিমিষেই ক্রন্দনরত মুখটায় হাসি ফুটে ওঠে। গেঁজ দাঁতের সেই মিষ্টি হাসি সকল পুরুষের কাজেই নজরকাড়া। রূপসা দুই হাতে পায়ের পাতা সমান স্কার্ট একটু উপরে তুলে দৌড়ে ভেতরে চলে যায়। তাঁর রিনিঝিনি নুপুর ও চুড়ির শব্দ যেন চিত্ত নাড়িয়ে দিলো। সে চলে যেতেই রওশন কাঁধ উঁচিয়ে বলে,

-" আমাকে যেতে হবে। তোরা একটু ম্যানেজ করে নিস। রিজ ভাইকে বললে দেখিয়ে দিবে। আর সিন আমি রিজকে তোর পরিকল্পনার কথা বলবো। তোর কাজে পুরোপুরি সাপোর্ট দিবো চিন্তা করিস না।"

বলেই রওশন বন্ধুর বাহু চাপড়ে চলে যায়। সিনান সালেহ হাসে ক্ষীণ। চোখে মুখে আশার আলো। সে হাসিমুখে বাকি লোকের সাথে হাতে হাতে সব কাজ করে দেয়। প্যান্ডেল সাজিয়ে নেয়। সাধারণ মানুষের বসার জন্য আঙিনায় পাটের চট পেতে দেয়। আর সম্মানীয়, প্রভাবশালী লোকদের জন্য আলাদাভাবে চেয়ার টেবিলের ব্যাবস্থা করা হয়। সিনান টুকটাক কাজ করে হাঁপিয়ে ওঠে। ভিড়ের মাঝে বাবাকে খোঁজে। পেয়েও যায় সে। ওই তো বাগানের দিকটায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে আর সিগারেট টানছে সুখী মনে। যেন তাঁর চেয়ে সুখী ব্যক্তি দুটো নেই। সে এগিয়ে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

-" আব্বা সব কাজ কইরা দিছি। আমি যাই? দোকানে শফি একলা আছে!"

সালেহউদ্দিন সিগারেট ফেলে বলে,

-" এহনি যাবি? সুর আছে অন্দরমহলে। খাওয়া দাওয়া শেষ করা ওরে সাথে নিয়ে যাইস নে!"

সিনানের কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে। সুর এখানে কিভাবে এলো? তার জিজ্ঞেস করতে হয় না ; সালেহউদ্দিন নিজেই জানায় সে এনেছে। সিনানের চোয়াল শক্ত হয়। 

-" আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেছে তোমার। ওরে এখানে কেন আনছো? ছোট আছে ও?"

-" গিন্নী ভাবী আনতে কইছিলো কাজে হাত বাটাইলে উপকার হয়তো!"

-" সুর কাজের লোক? নাকি তোমার মতোই চেয়ারম্যান বাড়ির চামচা!"

সিনান খ্যাক করে ওঠে উপস্থিত লোকজনকে তোয়াক্কা না করেই। সালেহউদ্দিন সহকর্মীদের সামনে অপমানিত বোধ করে। ছেলেকে চোখে শাসিয়ে বলে,

-" যা তুই এখান থাইকা!"

সিনান ক্ষিপ্ত মেজাজে সরে আসে সেখানে। চেয়ারম্যান বাড়ির সামনের ফটকে দাঁড়িয়ে থাকে দাঁত কটমট করতে করতে।রূপসাকে নিয়ে রওশনকে বেড়িয়ে আসতে দেখে এগিয়ে আসে। রওশন কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলেই সিনান ভনিতা হীন গলায় বলে,

-" সুর তোদের বাড়ির কাজের মেয়ে নয় যে যখন কাজের তাগিদ হবে তাকে তলব করবি। ওকে পাঠিয়ে দে, যা এখনি?"

রওশন ভ্রু কুঁচকে চায়। সুরেলা তাদের বাড়িতে? কই তাঁর নজরে তো পড়ে নি। সে রূপসার দিকে চাইলে রূপসা মাথা নেড়ে বোঝায় কথা সত্য। রওশন সিনান কে আশ্বস্ত করে ভেতরে চলে যায়।

••••••••
সুরেলা ব্যাস্ত হাতে পুরো রুম মুছে ফেলে। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বেরোতে হবে। লোকটা বুকে হাত গুটিয়ে দরজার বাইরে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন চোখের পলক ফেললেই সে কোন দামি জিনিস লুকিয়ে ফেলবে। সুরেলার রাগ ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে। ঘর মোছা শেষ হলে সুরেলা ময়লা পানি ওয়াশরুমে ফেলে দেয়। টি শার্টটা পানিতে ধুয়ে বেলকনিতে নেড়ে নিজ ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে বলে,

-" হয়ে গেছে আমি আসছি!"

বলেই বেরিয়ে যাবে নওরিজ মাহবুব হুট করে তাঁর সম্মুখে এসে পরে। সুরেলার কপাল ঠুকে যায় প্রসস্থ বুকে। নাকটাও সেখানেই ঠুকরে দেয় তবে সুযোগে শুষে নেয় পুরুষালি কড়া ঘ্রাণ। মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো বুঝি! সুরেলা তৎক্ষণাৎ ছিটকে সরে দাঁড়ায়। কড়া গলায় বলে,

-" এ কেমন অসভ্যতামি রিজ ভাই? পথ ছাড়েন?"

নওরিজ পকেটে হাত গুটিয়ে ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে। সুক্ষ্ম দৃষ্টি সুরেলার আপাদমস্তকে আটকে। সুরেলা দাঁত দাঁত চেপে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে নওরিজ আবারও সামনে এসে দাঁড়ায়। সুরেলার রাগে কান্না চলে আসে। ভয়ে বুকটা কেঁপে কেঁপে ওঠে। কম্পমান গলায় প্রত্যুত্তর করলো,

-" রিজ ভাই আল্লাহর দোহাই রাস্তা ছাড়েন?"

নওরিজ তবুও ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে। সুরেলার ইচ্ছে করে ওই ভারী কাঠের সোফা তুলে এই লোকটার মাথা ফাটিয়ে দিতে।শা*লা হুতুম পেঁচা। নওরিজ পকেট থেকে কিছু একটা বের করে মুঠোয় ভরে বাড়িয়ে দেয় সুরেলার দিকে। গম্ভীর কন্ঠে বলে,

-" ফাস্ট ওফ ওল আ'ম নট ইয়ুর ভাই! আমার বোন হওয়ার কোন গুন তোর মধ্যে নেই। না তুই আমার কোনপ্রকার তো তো বোন। হ্যাঁ তবে দুঃসম্পর্কের পাড়াতো বোন বলা চললেও বলা যায় বাট আ'ম নট ইনট্রেস্ট! টেইক ইট?"

সুরেলা প্রশ্নাত্মক চাহনি নিক্ষেপ করে বলে,

-" আমারও কোন শখ নাই কারো বোন হওয়ার! সরেন আমি যামু?"

বলেই আবারও পাশ কেটে চলে যাবে রিজ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। হাতের মুঠ ইশারায় দেখিয়ে বলে,

-" আমি কারও কাছে ঋণী থাকতে চাই না। কাজ করেছিস পারিশ্রমিক নিয়ে যা!"

অপমান বোধ করে সুরেলা। ভরা চোখে চোখ রেখে জবাব দেয়,

-" আমি কোন কাজের লোক নই। গিন্নী মা বলছে তাই করছি!"

-" সে তুই কাজের লোক হস আর ঘরের লোক আমার কি! এটা নিই আর কেটে পর। না নিলে যেতে দেবো না!"

নওরিজের এক রোখা জবাব। সুরেলা ভারী অসহায় বোধ করে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে চোখ হুট করেই ছুটে যায় দরজার দিকে। কিন্তু লাভ হয় না ‌; বাঘের খাঁচায় ঢুকে বাঘের চোখ ফাঁকি দেওয়া ওতই সোজা? সুরেলা হাত মোচড়ামুচকি করে ছাড়া পাবার জন্য। নওরিজ মাহবুব অধর বাঁকিয়ে দরজার আড়ালে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় তাঁর বাহু ধরে। সুরেলার অন্তরাত্মা কেঁপে কেঁপে ওঠে অজানা ভয়ে। পালানোর চেষ্টা করবে, নওরিজ দেয়ালে এক হাত রেখে আঁটকে দেয় সুরেলাকে। বেরোনোর রাস্তা বন্ধ।একে অপরের থেকে দূরত্ব খুব কম না হলেও বেশিও নয়; শরীর স্পর্শ না করলেও দূর হতে মনে হবে একে অন্যের সাথে মিশে একাকার। সুরেলা ভয়ে কান্নাটাও ভুলে যায়। যদি উল্টোপাল্টা কিছু করে? তাঁর চোখে মুখে বিরাজমান ভয় ও প্রশ্ন গুলো বুঝতে নওরিজ মাহবুব সময় নেয় না। অল্প হেঁসে মুঠোয় ভরা হাত সুরেলার মুখের সামনে ধরলো। মুঠ খুলতেই দৃশ্যমান হয় চকচকে একজোড়া নুপুর। সুরেলা অবাক চোখে তাকায় ওই গম্ভীর মুখাবয়বের পানে। এ যে রুপোর নুপুর! নওরিজ ছোট্ট করে আওড়ায়,

-" তোর পারিশ্রমিক!"

সুরেলার অধর জোড়ায় হাসি দেখা দিলো,

-" গাধা নই আমি। ঘর গুছাই দেওয়ার জন্য রুপোর নুপুর!! সামনের থেন সরেন রিজ ভাই?"

শেষের দিকে কন্ঠ কঠোর শোনায়। নওরিজ খানিকটা ঝুঁকে শান্ত সুরে ফিসফিসিয়ে বলে,

-" তো কি তোকে সোনার নুপুর দিবো নাকি? ধর, এটা না নিলে যেতে দিচ্ছি না। আমার এক কথা হাজার কথার সমান!"

সুরেলা চোখ মুখ খিচে দেয়ালের সাথে লেপ্টে। ওই গম্ভীর মানবটার মুখ গহ্বর থেকে নিঃসৃত উষ্ণ শ্বাস বাড়ি খায় তনু মনে। সুরেলা পারে না মিশে যেতে।‌ হাটু কাঁপছে ক্ষণ। ভয়ে বুকের হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বেড়ে শতগুণে ঠেকেছে। সামনের মানবটির কানেও ঠেকছে কি? সুরেলা এক চোখ খুলে দেখে। ওই তো গম্ভীর মুখো মানবটা গরুর মতো তাকিয়ে আছে! তার ইচ্ছে করে চোখ দুটোয় আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিতে। লুচ্চা কোথাকার! এক অবলা মেয়েকে একা পেয়ে ভয় দেখাচ্ছে! কিন্তু সুরেলা পারে না। নওরিজ ভ্রু কুঁচকে ধমকে বলে,

-" নিচ্ছিস না কেন সুর? থাপ্পড় খাবি?"

সুরেলার রূহ টাও যেন কেঁপে উঠলো। টলটলে চোখ বাঁধন হারা হয়ে গড়িয়ে পড়ে জলকণা! শক্ত পোক্ত বুকটায় দুই হাত ঠেকিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয়। নওরিজ খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে চার কদম পিছিয়ে যায়। সুরেলা সুযোগে এক ছুটে পালিয়ে গেল। নওরিজ সেখানেই দাঁড়িয়ে পলকহীন তাকিয়ে রয় ছুটে চলা রমনীর পানে। মুঠোয় থাকা নুপুর জোড়া আবারও পকেটে স্থান পায়!

সুরেলা এক দৌড়ে চলে আসে অন্দরমহলের আটকানো উঠোনে। এসে হাঁপাতে থাকে। রেবেকা বানু পান চিবোতে চিবোতে তাঁর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

-" ওমনি ভাবে ছুটে এলি যে? বাঘ তাড়া করেছে নাকি?"

-" বাঘই তো! হাতির মতো দেখতে মানুষ রূপি বাঘ"

-" কি বিড়বিড় করছিস? রওশন খুঁজলো তোকে!"

-" কিছু না গিন্নী মা! কোথায় রওশন ভাই? কেন ডাকলো?'

সুরেলা শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে। সাথে এও পণ করে চেয়ারম্যান বাড়ি আজকেই তাঁর শেষ দিন। ভুলেও পা মাড়বে না। এরই মাঝে রওশন এগিয়ে আসে সুরেলাকে দেখে। মিষ্টি হেসে বলে,

-" সিন যেতে বললো তোকে! চল আমার সাথে। খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত আমি। কোথায় ছিলি?"

পুরো চেয়ারম্যান বাড়িতে এই একটা মানুষকে সুরেলার নিরহংকার মনে হয়। যার সাথে কথা বলা যায়। সুরেলা আড়চোখে ছামিনা বেগমের দিকে তাকায়। কেমন শকুনী দৃষ্টি ফেলেছে যেন সে তাঁর ছেলের সাথে লুকোচুরি প্রেম নামক খেলায় মেতেছে। সুরেলার হাসি পায় কোথায় সে অমানিশার ঘোর অন্ধকার আর কোথায় পূর্ণিমার জোৎস্নার আলো! সে সায় জানিয়ে রওশনের সাথে যায়। অন্দর মহল থেকে বেরোতেই ছাদনা তলায় ভাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে ভাইয়ের পাশে দাঁড়ায় কাঁচুমাচু মুখে। রূপসা বরাবরের মতো হাস্যোজ্জ্বল মুখে প্রশ্ন করে,

-" এতো জলদি হয়ে গেল ঘর মোছা? রিজ ভাই কিন্তু খুবই খুঁতখুঁতে স্বভাবের!"

সুরেলা আড়চোখে ভাইয়ের দিকে চায়। গম্ভীর মুখ খানা ভয়ংকর। চোয়াল দ্বয় শক্ত করে রেখেছে। সুরেলার বুঝতে বাকি থাকে না আজ তাঁর কপালে রাম ধমক নাচছে! সিনান কিছু না বলে বোনের হাতটা শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যায়। সুরেলা ভাইয়ের সাথে পা মেলালেও পিছু ফিরে রূপসার সৌন্দর্যে ঘেরা মুখখানি দেখে নেয়। কেন জানি মেয়েটাকে তাঁর একটুও সহ্য হয় না‌। খুব বেশি অহংকারী মনে হয়।
.
.
.
চলবে.........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp