মাই মিস্টিরিয়াস প্রিন্স - পর্ব ২৬ - মৌমিতা মৌ - ধারাবাহিক গল্প


এডিকশন! আসক্তি! কৌশিকের জীবনটা চিরকাল একটা হিসেবি ছকে বাঁধা ছিল, কিন্তু এতো বছর পর সব যেন বদলে যাচ্ছে। কয়েকদিনের মাঝে সে বুঝতে পারছে তার মন, প্রাণ, অস্তিত্ব এক শ্যামবর্ণ মেয়ের দিকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিষয়টা সে মানতে পারছে না। কৌশিকের জীবনে সুন্দরীদের অভাব কখনোই ছিল না। কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করতে গিয়ে কখনো তাদের মিষ্টি হাসির প্রশংসা করতে হয়েছে, কখনো তাদের রূপে মুগ্ধ হওয়ার অভিনয়ও করতে হয়েছে। কিন্তু সেইসব সুন্দরী মুখ আর চকচকে চোখ কখনো কৌশিকের মনে কোনো দাগ কাটতে পারেনি। এই সুদীর্ঘ জীবনে‌ একটা মেয়ের প্রতি না কোনো অনুভূতি জন্মেছে আর না কোনো আসক্তি। তাহলে এই শ্যামবর্ণের মেয়েটি তার জীবনে প্রবেশ করে কি চমক দেখিয়ে দিলো যে কৌশিক মেয়েটার সামনে গেলে নিজেকে আর সামলাতে পারে না?

কৌশিক হঠাৎ অনন্যাকে ডাকতে লাগলো।‌ অনন্যা এখনো স্যারের রুমেই দাঁড়িয়ে ছিল, চিন্তা করছিল কীভাবে স্যারের সামনে আসল কথা তুলবে! হঠাৎ নিজের নাম শুনে কিছুটা বিস্মিত হলেও ছুটে গেলো নিচে। কৌশিক দাঁড়িয়ে ছিলো বিশাল বড় বাথরুমটির সামনে।

অনন্যা আসতেই ঝটপট করে বললো,
"বাথরুমে এসব কি রেখেছো?"

চিন্তিত হয়ে বাথরুমে গেলো অনন্যা। চারপাশে চোখ বুলিয়ে তেমন কিছু চোখে তো পড়লো না। কিসের কথা বলছে এই লোক?

কৌশিক পিছন থেকে কঠোর গলায় বললো, জানালার ধারে তাকাও। অনন্যা জানালার ধারে এগিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। কৌশিক বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে ধীর পায়ে জানালার দিকে এগোল। জানালার ধারে একটা চিকন দঁড়িতে অনন্যার ভিতরের পোশাক মেলে দেওয়া ছিল। কৌশিক ঠোঁট চেপে দুই আঙুলে একটি পোশাক তুলে নিয়ে অনন্যার সামনে ধরল।

অনন্যা দ্রুত পোশাকটা তার হাত থেকে নিয়ে ফেলল, মুখে ক্ষুব্ধতা ফুটে উঠল।
"এগুলো ধরছেন কেনো?"

"এই বাথরুমটা তোমার একার না, বুঝেছো? এখানে নিক যায়, মাঝে মাঝে লারা, তামং, এমনকি আমিও। এটা এই বাড়ির প্রধান বাথরুম। আর তুমি এসব... এসব অদেখানো পোশাক এখানে ঝুলিয়ে রেখেছো কেনো?"

"আমি তো শুকাতে দিয়েছিলাম। আপনার সমস্যা হলে চোখ বন্ধ রাখুন।"

"শাট আপ! নিয়ে যাও এসব। তোমাকে রুম দেওয়া হয়েছে, সেখানে গিয়ে শুকাতে দাও," কৌশিকের গলায় ধমকের সুর। "সবার চোখের সামনে রেখে দিয়েছো কেন? ইচ্ছে করেই রেখেছো, তাই না? নিক বয়সে বড়। এসব দেখলে কী ভাববে? তাছাড়া ও ছেলে ভালো না! ওর থেকে দূরে থাকবে। ভাগ্যিস আমি আগে দেখে ফেলেছি!"

অনন্যা চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিল, কিন্তু তার চুপ থাকা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। মাথা তুলে ধীর এবং তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল, "আগেও তো রেখেছি। কেউ তো কিছু বললো না!"

কৌশিক বিরক্তি চেপে নিজের মাথা চেপে ধরল। "লিসেন, শিকদার! তুমি বড় হচ্ছো। ছোট নও। এটা অন্তত বোঝার কথা যে এগুলো সবার চোখের সামনে রাখার পোশাক না।"

"তাহলে কোথায় রাখবো? রুমের মধ্যে রাখলেও কেমন দেখা যায়। আর আমি সবসময় রাখি না শুকিয়ে গেলে নিয়ে যাই। আর হ্যাঁ পরেরবার থেকে আমার জিনিসে নজর দিবেন না।"

অনন্যা বিরক্ত মুখে দ্রুত পা চালিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তার কাঁধের ঝটকায় দরজাটা হালকা আওয়াজ করে বন্ধ হলো। কৌশিক চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ।

একটু পরে আবারো অনন্যার ডাক পড়লো। এবার অনন্যাকে গ্যারেজের দিকে ছুটে যেতে হলো। কৌশিক গ্যারেজের এক গাড়ির সামনে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে কঠোর ভঙ্গি। অনন্যা নিচু হয়ে গাড়ির দিকে ঠিকমতো খেয়াল করলো। মনে পড়লো এই গাড়িটা দিয়েই প্রতিদিন তামং তাকে নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে। অনন্যা কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
"কী হয়েছে? গাড়িতে কী আমি স্ক্র্যাচ ফালিয়ে দিয়েছি? স্ক্যাচ ফেললেও আমার কোনো দোষ নেই। গাড়িতে শুধু আমি বসে থাকি আর কিছু করি না। একটা টু শব্দটিও করি না কখনো।"

কৌশিক তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো। অনন্যার দিকে ফিরে বললো,
"হ্যাঁ গাড়িতে যে তুমি শুধুই বসেছো তা আমি ভালোমতোই খেয়াল করেছি।"

অনন্যা হেসে বললো,
"দেখেছেন, আপনি শুধু শুধুই আমার সাথে বকাঝকা করতে চান!"

"গাড়ির কোন জায়গায় বসো তুমি?"

"ফ্রন্ট সিটে! কেনো জিজ্ঞেস করছেন?"

"ইউ মিন তামংয়ের সাথে?"

"হুম!"

"কেনো?"

অনন্যা চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
"কেন আবার? তামং তো আমাদের ফ্যামিলির মতো। উনাকে ড্রাইভার ভাবতে বলছেন? আপনার থেকে দশগুণ ভালো আছে উনি। আপনি বললেও ভাববো না," অনন্যার গলায় স্পষ্ট বিরক্তি।

কৌশিক ঠান্ডা গলায় বলল,
"ড্রাইভার ভাবতে বলিনি। কিন্তু পরে থেকে পেছনের সিটে বসবে। তামং নিজের স্ত্রী ছাড়া আশেপাশে কাউকে পছন্দ করে না।"

অনন্যা চোখ বড় বড় করে বলল,
"হ্যাঁএ? কি যে বলেন! উনি আমার সাথে খুব ভালোভাবে কথা বলেন। লজ্জা লজ্জা ভাব থাকে মুখের মধ্যে। গালগুলো একদম লাল লাল হয়ে যায়। আমার মনে হয় আপনার সাথেও এভাবে কথা বলে না উনি।"

কৌশিকের ধৈর্য্য যেন ফুরিয়ে গেল। সে প্রচন্ড রেগে গেছে। অনন্যাকে টেনে নিয়ে গাড়ির বাম পাশের দরজার সামনে দাঁড় করাল। গাড়ির নীল দরজার উপরে অনেকগুলো স্টিকার লাগানো চোখে পড়লো। কৌশিক আঙুল তুলে স্টিকারগুলোর দিকে ইশারা করে বলল,
"এন্ড হোয়াট ইজ দিস?"

অনন্যা একটু নিচু হয়ে স্টিকারগুলো দেখে হেসে বলল,
"এটা তো সিন্ড্রেলা আর তার জামাই!"

কৌশিক কঠোর গলায় বললো,
"তো ওরা এখানে কী করছে?"

"ওহ আসলে সিন্ড্রেলার জামাই সিন্ড্রেলাকে বিয়ে করার পর পরিবার মেনে নিতে পারেনি। তাই বাসা থেকে দুজনকে বের করে দিয়েছে। সাহায্য চাইতে আমার কাছে এসেছে। আমার খুব খারাপ লেগেছে। তাই ওদেরকে এখানে জায়গা দিয়েছি। ভুল কিছু করেছি বলেন?"

"স্টুপিড! সবগুলো স্টিকার উঠাও এক্ষুনি। ফাস্ট!"
ধমকে উঠলো কৌশিক।

অনন্যা থতমত খেলো। পরক্ষণে নিজেকে সামলে বললো,
"না স্যার! এগুলো গ্লু দিয়ে লাগাতে হয়েছে। উঠাতে গেলে আপনার গাড়ির রং উঠে যাবে!"

কৌশিক চেঁচিয়ে উঠলো,
"ইউ আর ঠু মাচ! আমার সুন্দর গাড়িটাকে কার্টুন বানিয়ে দিয়েছো।"

কথাটা বলে গটগট করে গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে গেলো কৌশিক। অনন্যা মাথা চুলকে দাঁড়িয়ে বললো,
"আপনিও ঠু মাচ!"

••••••••••••

লারার ঘুম ভেঙ্গেছে। সে স্বামী সমেত বাহিরটা পরিষ্কার করতে গিয়েছে। কৌশিক রান্নাঘরে নিজের স্পেশাল কফি বানাচ্ছে। বাঘটা রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়াচ্ছে। অনন্যা সামনের ডাইনিং টেবিলে গালে হাত দিয়ে বসে বসে সবটা দেখছে। এখন বাঘটাকে দেখলে সত্যিই বিড়াল মনে হয় অনন্যার কাছে। নিশ্চয়ই এই লোকটার কারণে। কৌশিকের কথায় সবাই যেন আপনাআপনিই চুপ হয়ে যায়। এমনকি বাঘটাও। কেউ দরকার ছাড়া তার কাছাকাছি আসে না। কিন্তু অনন্যা একেবারে আলাদা। সে কৌশিকের কথার তোয়াক্কা করে না, বরং যা তার মন চায়, সেটাই করে। যেতে বললেও যায় না। 

কৌশিক পিছমুখী ঘুরে থাকা অবস্থাতেই উচ্চারণ করলো,
"পড়তে বসেন। কাল পরীক্ষা!"

অনন্যা মুখে হাই তোলার ভান করার বললো,
"সারা রাত একজনকে নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে অন্য কিছু পড়ার ইচ্ছে চলে গেছে।"

"তাহলে খেয়ে বসেন। মনোযোগ আসবে।"

"আপনি সকাল সকাল যা খাইয়েছেন এরপর আর কিছু খাওয়ার মুড নেই।"

বিরক্ত চোখে তাকালো কৌশিক। অনন্যা সাথে সাথেই বিস্তৃত হাসি হাসলো।

"আচ্ছা! সবার সামনে আমাকে বকাঝকা করে কী মজা পান?"
অনন্যা হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো।

"প্রয়োজন ছাড়া তো বকি না।"
কিছুক্ষণ পর উত্তর করলো কৌশিক।

"প্রয়োজন? নাকি মনের আঁশ মেটানোর জন্য!"

কৌশিক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ইতিমধ্যে কফির তীব্র সুগন্ধ পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। অনন্যা নিজেকে সামলে নিয়ে পরিকল্পনামাফিক চিন্তা করলো। আড়ষ্ট গলায় নিচু হয়ে উচ্চারণ করলো,
"প্রিন্স..."

কৌশিক মুহূর্তেই ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল। চোখে এক অদ্ভুত সতর্কতা। কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থেকে আবার নিজের কাজে মন দিল।

অনন্যা শব্দটা আরো কয়েকবার আওড়ালো। কিন্তু পরের মুহূর্তে কিছু ঘটলো না বলে শান্ত হয়ে বসলো অনন্যা। নিজেকে বোঝালো, এটা দিয়ে হয়তো কাজ হবে না।

কিন্তু অনন্যাকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ, রান্নাঘর থেকে একটা সরু ছুরি শোঁ করে উড়ে এসে তার দিকে ছুটে এলো। অনন্যা আতঙ্কে স্থির হয়ে গেল। চোখ বড় বড় হয়ে উঠল তার। সেকেন্ডের ভেতর ছুরিটা তার গলার কাছে এসে থেমে গেল। এত কাছাকাছি, যেন একটুখানি নড়াচড়াতেই সেটা তার ত্বক ভেদ করবে।

শ্বাস কাঁপতে লাগল অনন্যার। গলা শুকিয়ে গেল। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। কয়েক সেকেন্ড কেটে গেল। ব্যথা লাগার কোনো অনুভূতি নেই। শরীর এখনো অক্ষত।

অনন্যা ধীরে ধীরে চোখ খুলল। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কৌশিক। হাতে সেই ছুরিটা। তার চক্ষুযুগল গভীর আর ঠান্ডা।কিছুটা ভীত হয়ে পড়লো অনন্যা। কৌশিক এক চিলতে হাসি দিল। ছুরির ধারটা একবার আঙুলের উপর দিয়ে পরীক্ষা করল। তারপর ফলের ঝুড়ি থেকে একটা কমলা তুলে নিল। এক নিঃশব্দ, তরতাজা শব্দে ছুরিটা ফলের মধ্যে প্রবেশ করল।

ফলটা টেবিলের উপর রেখে কৌশিক অনন্যার দিকে তাকালো। অনন্যা কিছু বলতে গিয়েও কথা গিলল। পুরো ঘরটাতে কেবল ছুরির হালকা ঝকঝকে আওয়াজটাই কানে বাজল।

কৌশিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কয়েক মিনিট ধরে, দেখে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলেই ফেলবে অনন্যাকে। অনন্যা বড় করে শ্বাস নিয়ে মনের কোণে রেখে দেওয়া প্রশ্নটা করেই বসলো,
"প্রিন্সেস আরিসা কে?"

হতচকিত হলো কৌশিক। কঠোর গলায় বললো,
"তোমার কিভাবে মনে আছে এসব? আমি তো.... আমি তোমার সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিয়েছিলাম!"

"ওহ! তো আপনি মানুষের স্মৃতিও মুছতে পারেন।"
তাচ্ছিল্যের সাথে বললো অনন্যা।

"হাউ ডেয়ার ইউ!"

"প্রিন্স..."

শব্দটি কৌশিকের কানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে যেন আগুনের শিখা তার ভেতর ছড়িয়ে পড়ল। মুহূর্তের মধ্যে তার সত্তা যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। হাতের ছুরি মেঝেতে পড়ে গেল। কৌশিক তীব্র গর্জনে অনন্যার দিকে এগিয়ে এল।

মুহূর্তেই তার হাত অনন্যার গলার চারপাশে শক্ত করে চেপে ধরল। চোখের মণি নীল হয়ে জ্বলন্ত আগুনের শিখার মতো জ্বলজ্বল করছিলো। কৌশিক চিৎকার করে বলল,
"হু আর ইউ? হাউ ডেয়ার ইউ কন্ট্রোল মি?"

তার গর্জন দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছিল। অনন্যা হতবাক হয়ে গেল। কখনো ভাবতে পারেনি কৌশিক স্যার তাকে এভাবে মেরে ফেলার চেষ্টা করবে। একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার সুবাদে এতো বড় শাস্তি?হাতের চাপ এতটাই বেশি হয়ে পড়েছে যে অনন্যা শ্বাস নিতে পারছিল না। নিজের হাত দিয়ে কৌশিকের হাত সরানোর চেষ্টা করছিল, বারবার আঘাত করছিল, কিন্তু কৌশিক থামছিল না, তার শক্তি এতটাই প্রবল যে অনন্যা হিলতে চিলতে পারছিল না।

অনন্যার চোখ ভিজে উঠল, চোখের কোণা থেকে উষ্ণ অশ্রু কণা ঝরে পড়লো। কিন্তু চোখ দুটো কৌশিক স্যারের দিকে নিবদ্ধ হয়ে আছে, মুখে অল্প হাসি ফুটে উঠেছে। অনন্যার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসলো, শ্বাস আটকে আসতে লাগল। 

কৌশিকের আওয়াজ শুনে নিক দরজার কাছে দৌড়ে হাজির হলো। চোখের সামনে এই অবস্থা দেখে ওর মাথায় যেন বজ্রপাত ঘটলো।

নিক ওদের দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে লাগলো, আতঙ্কে চিৎকার করল,
"ব্রো! কী করছো এসব? মেয়েটা মরে যাবে! ছেড়ে দাও ওকে!"

কৌশিক তার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে হুংকার দিল,
"শাট আপ, নিক! আর এক পাও এগোবে না। আমাদের মাঝে আসার সাহস করবে না। নাহলে পরিণাম আরও ভয়ানক হবে। নাউ আউট!"

নিক গলা শুকিয়ে ঢোক গিলল। নরম গলায় বলল,
"কাম ডাউন! নিজেকে শান্ত করো। মেয়েটাকে ছেড়ে দাও। পরে পস্তাতে হবে।"

কৌশিকের কোনো হেলদোল নেই, নিক বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে প্রস্থান করলো, বুকটা ভারী হয়ে আসছে তার। কৌশিক মাঝেমধ্যে রাগে জিদে কি করে ফেলে সে নিজেও বুঝতে পারে না। পরে খেয়াল হয় আর খুব বেশি করে পস্তায়। 

কৌশিকের হাতের চাপে অনন্যার শরীর ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল, শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল, চোখ বন্ধ হলে আর খোলা যাবে না। গলার হাড় যেন মচমচ শব্দ করে ভেঙে যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সে মৃদু গলায় ফিসফিস করল,
"স্যার... আপনার পিঠের ব্যথা... ঠিক আছে তো? আমি... আমি।"

অনন্যা আর কিছু বলতে পারলো না, নিস্তেজ হয়ে পড়লো সে। অনন্যার শেষ কথা শুনে কৌশিকের চোখে একধরনের ঝাঁকুনি এলো। মুহূর্তেই সে অনন্যাকে ছেড়ে দিল। অনন্যা টলতে টলতে চেয়ার থেকে নিচে পড়ে গেল। ফ্লোরে মাথা ঠেকল তার।

কৌশিক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার শ্বাস ভারী হয়ে এল। চোখ ধীরে ধীরে হাতের দিকে নামল। কী করল সে? নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে যেন নিজেকেই চিনতে পারছিল না। তাহলে কৌশিকের ভয়ের সমাপ্তি কী এদিকেই ঘটলো?
.
.
.
চলবে........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp