নীলাম্বরে রৌদ্দুরের হাতছানি - পর্ব ০৩ - বেলা শেখ - ধারাবাহিক গল্প


-" মরার গরিবি দেইখা দেইখা অতিষ্ঠ হইয়া গেছি মারু! শখ আহ্লাদ তো দূর প্রয়োজনও আধুরা থাইকা যায়। আমার জীবনের একটাই আর একমাত্র লক্ষ্য বড়লোক হওয়া! এখন একটা জব্বর আইডিয়া দে কিভাবে বড়লোক হওয়া যায়!"

-" আইডিয়া তো একখান আছেই। একেবারে খাপের খাপ সাইমুমের বাপ! ধরে নি বড়লোক হয়ে গেছিস!"

সুরেলা আম গাছের ডাল থেকে লাফ দিয়ে নামে। রৌদ্রে মাখা লাল মুখশ্রী জুড়ে কৌতুহল। বুকে বাঁধা মলিন ওড়না খুলে গায়ে জড়িয়ে নিল। দু'টো কাঁচা আম প্রান প্রিয় সখির দিকে বাড়িয়ে বলে,

-" আচ্ছা ধরলাম আমি হেব্বি বড়লোক। তারপর?"

মারিয়া কাঁচা আম সুরেলার ওড়নায় মুছে কামড় বসায়। টকে মুখ বিকৃত করে জবাব দেয়,

-" তুই ফকিন্নীর ঝিয়ের বড়লোক হওয়ার একটা মাত্রই রাস্তা হলো একখান বুইড়া ধামড়া বড়লোক গেদারে খুঁইজা কলমা পড়া! তারপর তুই বড়লোক বাড়ির বউ! আঁচলে চাবি গিট্টু দিয়ে মুখে পান দিইয়ে হুকুম তামিল করবি!"

সুরেলা হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে। লালিমায় আচ্ছাদিত মুখটায় হাসির ঝলকটা যেন একদম গাছের নয়া পল্লব! অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে সুরেলা বলে,

-" আচ্ছা ঠিক আছে। বুইড়া গেদারে খুঁইজা কলমা পড়লাম। আমি এখন বড়লোক বাড়ির বড় বউ! কিন্তু কল্লা শাশুড়ি আম্মার কিতা করুম? নাটের গুরু ননশ্বাস? আর বাকি লোকদের কথা তো বাদই দিলাম!"

মারিয়া কোনা চোখে তাকায়। কিছু বুঝে উঠতেই চোখ কপালে উঠে গেল নিবিষ্টে। সে কিছু বলবে সুরেলা রহস্যময়ী হেসে ছুটে যায় বাগান বরাবর। মারিয়া কতক্ষন ভ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর গলা চড়িয়ে সুরেলার উদ্দেশ্যে বলে,

-" ফকিন্নীর ঝি তোর মুখে এক, মনে আরেক! শালী তুই দু মুখো সাপ!"

সুরেলা হাসতে হাসতে বাড়ির পথ ধরে। মারিয়া দৌড়ে এসে বান্ধবীর পিঠে ধুরুম করে একা কিল বসিয়ে দিল। সুরেলা হালকা পিঠ বাকায় তবে কিছু বলে না। মুখ মুচড়িয়ে টক আম মুখে নিয়ে 'চ্চা' শব্দ করে। মারিয়া নিজেও কাঁচা আমে কামড় বসিয়ে বলে,

-" সত্যিই আর প্রাইভেটে যাবি না? অংকে তো তাইলে ডাব্বা খাবি সুর!"

-" দুই একটা ডাব্বা খাইলে কিছুই হইবো না মারু! আমি তো আর জর্জ ব্যারিস্টার হমু না। আগে পরে মানষের বাড়ি হেঁসেল ঠেলতে হইবো! আব্বাও কয়েকদিন পর পর কোন থাইক্যা পাত্র ধইরা আনে। সিন ভাই এটা ওটা বাহানা দিয়া ভাইঙ্গা দেয়। তয় মনে হয় এই বাড়িতে আমার আয়ু ফুরাই গেছে!"

মারিয়া আর কিছু বলে না। শুধু সুরেলা কেন তাঁরও যে একই পরিস্থিতি। মেয়ের জাতই পরের বাড়ির যাওয়ার জন্য বাপের বাড়ি বড় হয়। মেয়ে পরিপক্ক হলেই বাপ মা তাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। অনেক পরিবারে তো ছোট ছোট মেয়েকেই ঘারে তাঁর থেকেও বেশি ভারের বোঝা তুলে দিয়ে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সেই হিসেবে তাঁরা বড়ই বলা চলে। পনেরো পেরিয়ে ষোলোর কোঠায় পা দিলো কি না! দুই বান্ধবী কথা বলতে বলতে সুরেলাদের বাড়ির রাস্তা ধরে। পথিমধ্যে দেখা হয় রওশন মাহবুবের সাথে। একা নয় কারও সাথে হাসতে হাসতে কথা বলছে আর এগোচ্ছে। সুরেলা তাদের কাছে যেতেই বুঝতে পারে রওশনের সাথে রূপসা। আরেকটু তীক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলতেই দেখতে পায় তাদের পেছনে নওরিজ মাহবুব। সুরেলা ঝটপট মাথা ঘুরিয়ে বান্ধবীর দিকে তাকায়। তাঁর প্রাণের সখীও তাঁর দিকেই তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। সুরেলা সখীকে বগলদাবা করে উল্টো পথে হাঁটা দেয়। ওড়নায় স্বীয় মাথা ভালোভাবে ঢেকে নেয়। তবে লাভের লাভ কিছুই হয় না। রওশনের ডাক ভেসে আসে,

-" সুরেলা না? এই সুরেলা? সুর? আরে বাবা পালাচ্ছো কেন?"

সুরেলা ও মারিয়া একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে। এখন উপায়? মারিয়া বান্ধবীকে আশ্বাস দিয়ে থেমে যায়। পেছন ফিরতেই দেখতে পায় মানবত্রয় তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। রওশন ও রূপসা সামনে হাস্যোজ্জ্বল মুখে। সুরেলার সবার আগে নজরকাড়ে রূপসার সাজসজ্জায়। সাদা রঙের ফতুয়া ও আকাশি রঙের পায়ের পাতা পর্যন্ত স্কার্ট; মাথায় ছোট্ট জর্জেটের ওড়না! ফর্সা লাবণ্যময় বদনে বেশ মানিয়েছে। সে বান্ধবীর উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে বলে,

-" দেখেছিস? দু'জন একই রঙের পোশাক পড়েছে।"

-" রওশন ভাইয়াও তো একই রঙের শার্ট পড়েছে ওটা চোখে বিঁধছে না তোর? এতো জ্বলিস কেন বান্ধবী?"

মারিয়া ভ্রু নাচিয়ে রসিকতার সাথে ব্যঙ্গ করে বলে। সুরেলা ভেংচি কাটলো। ততক্ষণে রওশন ও রূপসা তাদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে। কিশোরী চঞ্চলা রূপসা উৎসুক গলায় বলে,

-" সুর আপা আমাদের দেখে পালাচ্ছিলে কেন? আমি কিন্তু দেখেছি তুমি আমাদের দেখেই মারিয়া আপুকে নিয়ে রাস্তার উল্টো পথে হাঁটলে!"

সুরেলার ইচ্ছে করে রূপসার সুন্দর মুখে গোবর ঘষে দিতে। এই মেয়েটা এতো ফটর ফটর করবে কেন? সুরেলা কিছু না বলে বান্ধবীর দিকে তাকায় গোমড়া মুখে। মারিয়া হাসে বান্ধবীর গোমড়া মুখ দেখে। কথায় আছে না? যাকে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা! একদম মিলে যায় কথাটা। মারিয়া ভদ্রসুলভ হেসে বলে,

-" আসলে আমিই ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম আমাদের বাড়িতে।তোমরা নামি দামি মানুষ তাই একটু ভয়, একটু লজ্জা!"

সুরেলা নত মুখে সায় জানায়। রওশন ভ্রু কুঁচকে বলে,

-" মানুষ আবার নামিদামি হয়! আজ জানলাম। আমি তো জানি সবাই মানুষ। কিন্তু মানুষের আবার শ্রেণী বিভাগ করে রেখেছো তোমরা!"

সুরেলা আড়চোখে গম্ভীর মুখো মানবটার পানে একনজর ফেলে রওশনে দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

-" কোন যুগে থাকেন আপনি? শ্রেনী বিন্যাস তো সেই যুগ যুগ ধরেই। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত! বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেনীতে ভাগ করা আছে। একেক শ্রেণী অপর শ্রেনীর মানুষকে ভিন্ন চোখে দেখে। উচ্চাভিলাসী লোকেরা আমাদের মতো নিম্নবিত্তদের মানুষই মনে করে না।"

-" সবাই এক রকম নয় সুরেলা! তুমি কি আমাদের পর নাকি? প্রাণপ্রিয় বন্ধুর আদরের বোন তুমি। আর তুমি সুরেলার বান্ধবী মানে আমারও বান্ধবী হলে!"

রওশন মাহবুব সুরেলার প্রত্যুত্তরে বলে ওঠে। মারিয়া মুচকি হেসে বলে,

-" বন্ধুর বোন আপনার বোন। আর বোনের বান্ধবী আরেক বোন।"

-" এটা কেমন লজিক হলো? বন্ধুর বউ যেমন আমার বউ হবে না তেমনি বন্ধুর বোনও আমার বোন মোটেই না!"

রওশন মাহবুবের স্পষ্ট গলা। হাসি মুখেই বলে ওঠে। মারিয়া ত্যাছড়া নজরে তাকায় তাঁর দিকে। আগাগোড়া ভদ্রলোকই মনে হচ্ছে তো। নওরিজ মাহবুবের সাথে চেহারা আচরণ কোনটারই মিল খুঁজে পায় না। সুরেলা প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞাসা করে,

-" এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলা কেমন দেখায়! হেঁটে হেঁটে কথা বলি? আপনেরা কনে যাইবেন?"

শুরুতে শুদ্ধ ভাষায় বললেও শেষে আঞ্চলিক টোনটা এসেই যায়। আর এমনিতেও আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলায় দোষ কোথায়? বাংলা যেমন মাতৃভাষা ভাষা, আঞ্চলিক ভাষাও মায়ের ভাষা। মায়ের মুখে যে ভাষা শুনে রপ্ত করা হয়েছে সেই ভাষা ভোলা ওতই সহজ? সুরেলার কথায় রূপসা তার পাশে পাশে হেঁটে চঞ্চল গলায় বলে,

-" তোমাদের বাড়িই যাচ্ছি সুর আপা! আমার কিছু স্যুট সেলাই করার আছে! চাচি আছে তো বাড়িতে?"

-" হ্যাঁ বাড়িতেই!"

সুরেলার ছোট্ট জবাব। অজানা কারণে মেয়েটার সাথে তাঁর কথা বলতে ইচ্ছে করে না। অথচ মেয়েটার কোনো আচরণ এখন পর্যন্ত কটু ছিলো না। মারিয়া, রূপসা একে অপরের সাথে হাঁটতে হাঁটতে কথার ঝুড়ি খুলে বসে। ক্ষেতের মধ্যে সরু চাপা আলে তিনজন হাঁটা একটু কষ্টকর। তাই সুরেলা তাদের পেছনে হাঁটে। গ্রামীণ ধানক্ষেতের মাঝ বরাবর মেঠোপথ! চারপাশে বসন্তের হাওয়া বয়ে বেড়ায়। দূর হতে বসন্ত দূত প্রেম বাঁশী বাজায় ক্ষণে ক্ষণে। সেই বাঁশির তীক্ষ্ম ধারালো সুর খোঁচা দেয় চিত্ত বরাবর। পবণের জোয়ারে এলোমেলো বায়ুমন্ডল! নীলাম্বরে মিষ্টি রৌদ্দুরের হাতছানি খেলা করে বেড়ায়।

-" মাথায় ওড়না টান!"

গমগমে আওয়াজ কানে বাজতেই এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে যায় হৃদয় ঘেঁষে! বাতাসে সুরেলার মাথা থেকে সুতির ওড়না পড়ে গিয়েছিল । সুরেলা মাথায় ওড়না টেনে যান্ত্রিক মানবের মতো হাঁটতে থাকে। সে তো ভেবেছিল পেছনে রওশন ভাই। কিন্তু এতো স্বয়ং রাজা ধীরাজ। সুরেলা হাঁটায় গতি বাড়িয়ে মারিয়ার পাশে হাঁটার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। তবুও ইবির ভিতরে চিবির বাসা বুনার জন্য ছটফট করে। সাথে সাথেই চাপা স্বরে ধমক ধেয়ে আসে,

-" কৈ মাছের মতো ছটফট করছিস কেন? আর হাতে কি ওগুলো? ময়লা লেগে আছে!"

নওরিজ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে। সুরেলা থেমে দুই হাত বাড়িয়ে দেখায়। একহাত অক্ষত আম অপর হাতে আধ খাওয়া কাঁচা আমের টুকরো!

-" আম এগুলো! আর কোথায় ময়লা দেখতে পান?"

সুরেলার প্রশ্নে নওরিজও থেমে যায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,

-" নিশ্চয়ই গফুর কাকার বাগান থেকে চুরি করে আনলি! ধুয়েছিস এগুলো? না ধুয়েই সাবাড় করছিস!"

সুরেলা ছোট ছোট চোখে চায়। আম ধুয়ে তাঁরপর খাওয়ার ধৈর্যটুকু তাঁর নেই। এই কাঁচা মিঠা আমের স্বাদ এই নাবাব পুত্তুর কিভাবে বুঝবে? সে আমে আরেকটা কামড় বসায়। কচ কচ শব্দ করে চিবিয়ে খায়। হালকা টকে মুখ কুঁচকে যায়।

-" রিজ ভাই গফুর কাকার অনুমতি লইয়াই আম গাছে উঠছিলাম। আর গাছ থেকে পারা টসটসে আম। এটা ধুইয়া খাইলে স্বাদ কইমা যাইবো বুঝলেন? হাইজিনের জন্য ওড়নায় দুইটা ঘষা দিছি ব্যস হইয়া গেছে!"

নওরিজ মাহবুবের মুখাবয়ব সুবিধার না। সুরেলা কচ কচ শব্দে কাঁচা আম চিবোতে চিবোতে মিটমিটে হাসে। এসেছেন খুঁতখুঁতে লাট সাহেব! একে তো পঁচা ডোবায় ছুঁড়ে হাবুডুবু খাওয়ানো উচিত। রওশন এসে সুরেলার অপর হাতের আমটা ছিনিয়ে নিয়ে নিজেও কামড় বসিয়ে বলে,

-" ভাই এই তোমার অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে স্বভাবের চিকিৎসা করো রিজ ভাই! এরকম থাকলে কপালে বউ জুটবে না। জানো সুরেলা রিজের নানি একটা মেয়ে পছন্দ করেছিলো রিজ ভাইয়ের জন্য! মেয়েটা দেখতে ভালোই রূপে গুনে একদম রিজ ভাইয়ের যোগ্য। তবে ইনি মহাশয় নাক সিঁটকিয়ে বলে মেয়ের নাকি দাঁত হলদেটে। নিশ্চয়ই ব্রাশ করে না। কি উটকো বাহানা! বিয়ের কথা সেখানেই স্থগিত! তাহলে তুমিই বলো আমাদের ভবিষ্যত ভাবীর কপালটা ঝামা ঘষা দিতে হবে না?"

সুরেলার মুখটা হা হয়ে যায়। হলদেটে দাঁতেল জন্য বিয়েতে মানা করে দিলো? মেয়েটা মানা করার কারণ শুনে নিশ্চয়ই লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রেখেছিলো! সে হা করা মুখটা বন্ধ করে বলে,

-" আপনার রিজ ভাই বিয়ে করে ছাই দিয়ে ঘষে ঘষে হলুদ দাঁত ফকফকা করে দিতো পারতো। এতো গুনবতী রূপবতী মেয়ে হাত ছাড়া করা মোটেও ঠিক হয় নাই।"

নওরিজ চোখ পাকিয়ে তাকায়। রওশন হো হো করে হেসে বলে,

-" আইডিয়াটা মন্দ নয়! ভাইয়া মেয়েটার বিয়ে এখনও হয় নি। কথাবার্তা আগাতে পারো!"

-" মশকরা হচ্ছে আমার সাথে? সামনে হাঁট? যত্তসব ফালতু কথা নিয়ে রাস্তায় তামাশা হচ্ছে?"

ধমকে বলে ওঠে নওরিজ মাহবুব। সুরেলা কেঁপে উঠল যেন। কি গলারে বাবা! সে তড়িঘড়ি পা চালায়। রওশন মৃদু কেশে গুনগুন সুর তুলে হাঁটা দেয়। নওরিজ গম্ভীর মুখে বড় বড় পা ফেলে সবার পেছনে হাঁটে। মেজাজটা তুঙ্গে তার! 

•••••••••••

২ নং সরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলী অব্যহত। পরিষদে নানান গ্রামের নানান লোকজনের আনাগোনা। একেকজন একেক দরকারে নিজ সমস্যা সমাধানের জন্য উপস্থিত হয়। আজকে অত্র ইউনিয়ন পরিষদে বয়স্ক ভাতার টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। তাই তো ইউনিয়ন পরিষদে লোকে লোকারণ্য। বৃদ্ধা লোকজন লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লাইন ধরে। অনেকেই হাত পায়ের বদৌলতেই দাঁড়িয়ে। অনেকেই স্বীয় নাতি নাতনি সাথে নিয়ে এসেছে। সেই বাচ্চাগুলো রৌদ্রে পুরে পুরো মাঠে দোড়ে খেলছে। ইউনিয়ন পরিষদের বাম পাশের বহু কাল পুরনো কড়ি গাছ আছে। সেথায় শান বেঁধে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশেই এক মুদি দোকানি চায়ের কেতলী হাতে কাপে চা ঢালতে ব্যস্ত। আজ তার ব্যস্ততার অবকাশ নেই। তারই দোকানের কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছে অত্র এলাকার চেয়ারম্যান নোমান মাহমুব। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর উপস্থিত কিছু বুজুর্গদের সাথে টুকটাক কথা বলছে। তাদের স্বল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর সাথে আশা কিছু দলের লোকজন। তাদের ভিড়ে সালেহ উদ্দিনও উপস্থিত। সিগারেট ফুঁকে সহকর্মীদের সাথে যুক্তি তর্কে ব্যস্ত। আলাপচারিতার মাঝে কালাম নামক লোকটা বলে,

-" সুরুজ মিয়ারে দেখলাম হেইদিন! পাতি চামচাগোরে নিয়া সিনানের গ্যারেজে বইসা আড্ডা দিতাছে।"

সালেহউদ্দিনের টনক নড়ে আলাপে নিজ ছেলের নাম আসায়। সিগারেট ফেলে কৌতুহলের সাথে বলে,

-" কি কও মিয়া? সাদা সিধা ব্যাপার পেচাও ক্যান? আমার পোলা কাম কইরা খায়। দোকানে চোর চাট্টা সব ধরনের লোকই আসে। তাই বইলা সন্দেহ করবা?"

মহির নামক আরেক যুবক গোছের লোকটা কটাক্ষের সুরে বলে ওঠে,

-" চাচা মিয়া শাক দিয়া মাছ ঢাকার চেষ্টা করতাছো না তো? সিনানের হাব ভাব ভালো লাগে না আমার কাছে। কিছু দিন হলো শুনতেছি কি জানি দল বানাইবো! সুরুজ মিয়ার সাথেও কথাবার্তা কয়! বলি চাচা একটু খোঁজ খবর রাইখো! আমরা তো তোমারে সময় থাকতেই সাবধান করতে চাইলাম তাই বললাম!"

সালেহউদ্দিনের মুখশ্রী জুড়ে আঁধার নামে। থমথমে মুখে ভাবে কথা গুলো ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তারও কানে কিছু কিছু বাতাস আসে! এলাকার আরও কিছু যুবকদের সাথেও দেখা যায় ছেলেকে! না ছেলেরে একটু শাসনে রাখতে হবে! এমনিতেই একরোখা তার ছেঁড়া ছেলেটা কারও কথাই শুনে না। নিজের মনে যা আসবে তাই করবে! এরইমধ্যে নোমান মাহবুব চা শেষ করে এগিয়ে আসে। তার আগমন আলোচনা সেখানেই সমাপ্ত হয়। নোমান মাহবুব দুই হাত তুলে ঘারটা বাঁকিয়ে ব্যায়াম করে নেয়। হাসিমুখে বলে,

-" কি কথা হচ্ছিলো? আমাকে দেখে চুপ করে গেলে কেন সবাই? আমিও শুনি?"

সালেহউদ্দিন নতমুখে দাঁড়ায়। কালাম দাঁত কেলিয়ে বলে,

-" ভাই আসলে সালেহউদ্দিনের ছেলে সিনান আছে না? চেনেন কি?"

-" হ্যাঁ ওই খিটখিট মেজাজের চ্যাংড়া দেখতে ছেলে। মেজাজটা খুবই চড়া। কেন কি হয়েছে ওর? সালেহ ভাই কোনো সমস্যা?"

চেয়ারম্যানের কথায় সালেহউদ্দিন কিছু বলবে তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে কালাম বলে,

-" ওই সিনানের দোকানে প্রায়ই সুরুজ মিয়ারে দলবল নিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায়। তাছাড়া সিনানও বেশ কয়েকদিন হইলো গ্রামের চ্যাংড়া পোলাপাইনরে নিয়া কি যেন দল খুইলবো! সেই কথাই বলতে ছিলাম!"

নোমান মাহবুব নতমুখী সালেহউদ্দিনের পানে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

-" এসব কি শুনি সালেহ ভাই? তুমি সেই প্রথম থেকেই আমার জন্য কাজ করো। তোমার ছেলে আমার ছেলের মতোনই। সে আমার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করছে না তো?"

-" কি যে বলেন না ভাই!! আপনে আমাগোরে এলাকার স্বনামধন্য ব্যাক্তি। আপনেরে বড় ভাই মানি। আমার পোলাডা একটু তার ছেঁড়া। তবে দিলটা খুবই ভালো। কালামের হয়তোবা বোঝার ভুল হইছে। ওরে তো আপনেও চেনেন! তারপরও আমি ওর লগে কথা কমুনে! উল্টা পাল্টা কিছু পাইলে আমি নিজেই পিঠ ছিঁলা নিমু!"

নোমান মাহবুব প্রসন্ন হাসে। এরকম পাগলা গোছের অন্ধ ভক্ত গুলো মন্দ নয়। এদের যা হুকুম করা যাবে খুশি মনে করবে! সে সালেহউদ্দিনের সাথে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটা দেয় মাঠ বরাবর। হেসে বলল,

-" তুমি আমার পছন্দের লোক বুঝলে সালেহ! এই নাও বড় দেখে একটা মাছ কিনে তোমার গিন্নির হাতে দিও!"

বলেই শ দুয়েক টাকা পকেটে গুজে দিলো। সালেহউদ্দিন মানা করতে চাইলেও নোমান মাহবুব পাত্তা না দিয়ে রেখে দিতে বলে। একটু নির্জনে নিয়ে গিয়ে বলে,

-" তোমার মেয়েটা বড় হইছে তাই না? কোন ক্লাসে পড়ে যেন?"

সালেহউদ্দিন যেন বিপাকে পড়ে। মেয়ে তো বড় হয়েছে সে জানে। কিন্তু কোন ক্লাসে পড়ে তার মনে নেই। আসলে মেয়ের বিষয়ে সে খুব একটা বলতে পারবে না। সে মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

-" নাইনে কি টেনে পড়ে। খেয়াল নাই ভাই। আমি মুরুক্ষ মানুষ!"

নোমান মাহবুব হেসে বলে,

-" আরে এরকম মিনমিন করে বলছো কেন? পুরুষ মানুষ কথা বলবে যেন দশ গ্রামের মানুষ শুনতে পায়। সে যাক মেয়ে তো তাহলে বিয়ের উপযুক্তই। বিয়ে সাদি দেওয়ার কথা ভেবেছো কি? পুঁজি টুজি কিছু জমিয়েছো?"

সালেহউদ্দিন লজ্জা পায় খানিকটা। তবুও নিজ গড়িমা বজায় রাখতে বলে,

-" বিয়া তো দিবারই চাই। আমরা গরিব মানুষ ভাই। নুন আনতেই সান্তা ফুরাই যায়। আর পুঁজি জোগাড় করা! তয় পোলাডা মনে হয় কিছু জোগাইছে। আর বিয়ের প্রস্তাবও আইসে মেলা। তয় ভাগে মেলে না!"

-" আমার হাতে একটা পোলা আছে! তুমি বলো তো কথা আগাই? কোনো প্রকার পুঁজি টুজি লাগবে না। শুধু মেয়েটাকেই নিবে! "

সালেহউদ্দিনের মুখটা উজ্জ্বল দেখায়। যৌতুক ছাড়াই মেয়ে নিবে? এ তো অলীক স্বপ্ন বৈ কিছু না এই যুগে। সে অতি উৎসাহের সাথে বলে,

-" আপনে যা ভালো বোঝেন ভাই! আপনেগোরেই মাইয়া! বোঝাটা ঘার থেকে নামাইতে পারলে আমি স্বস্তির শ্বাস টানি!"

নোমান মাহবুব তার পিঠ চাপড়ে বলে,

-" আমাদের মহিরের কথা বলছিলাম। বাপ মা মরা এতিম ছেলেটা। তুমিও তো চেনো। স্বভাব সুলভ ভালোই। আমার কাছেই তো মানুষ হলো! ছেলেটারও বিয়ের বয়স হয়ে এসেছে। অনাথ ছেলেটার একজন সাহারা হবে। কোনো ঝুট ঝামেলা নেই শ্বশুর শাশুড়ি বিহীন শান্তির সংসার হবে।"

সালেহউদ্দিনের উজ্জ্বল মুখটা নিবিষ্টে কালো হয়ে আসে। ওই মহির? এক নম্বরের যোচ্চর ছেলেটা। না আছে পড়াশোনা না আদব কায়দা। তাদের সাথে বসেই মদ পানি খায়। মেয়ের প্রতি তাঁর খুব একটা টান না থাকলেও এরকম একটা ছেলের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবতেই পারে না। তবে চেয়ারম্যানের সামনে তা মুখ ফুটে বলতে পারে না। তাই বাহানা দেয়,

-" মাইয়ার বড় অভিভাবক ওর ভাই। আমি যাই বলি না কেন ওর কথাই আসল। আমি ওর লগে কথা কইয়া দেহি কি কয়! আপনেরে পরে জানামু নে!"

•••••••••••

অপরাহ্ন বেলায় গো'রপাড়ে বেঁধে রাখা বাছুর গরুটা 'হাম্বা হাম্বা' ধ্বনিতে ডেকে চলেছে অনবরত। তাঁর গলার ডাকটা বেশ চড়া। মালিকের মতোই হয়তোবা। গরুটা সিনান সালেহের সদ্য বিবাহিত বউ বলা চলে। সিনান সালেহ গতকাল হাঁট থেকে গরুটা কিনে এনে গলা বাজিয়ে বলেছে,

-" সবাই বিয়া কর বিয়া কর বইলা কানের কাছে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে ছিলা? তাদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য হাম্বা নিয়া আসলাম! এইডা আমার নতুন বউ! নাম তাঁর বিউটি। যত্ন আত্তিতে একটু খামতি হইলে সবকটারে বাড়ি ছাড়া করমু!"

তাঁর হুকুম ফরমানের পর সবাই মুখ টিপে হেসেও ছিলো। তবে কেউ কিছু বলার সাহস করে নি। সিনানের অনুপস্থিতিতে তারঁ মা শান্তি বেগম গরুটার দেখাশোনার কাছে নিয়োজিত। গরুটা নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না হয়তোবা।হাট থেকে আনার পর থেকেই অনবরত ডেকে চলেছে। চারি ভর্তি খুদ ভুষি কিচ্ছুটি মুখে নিচ্ছে না। সেই খুদ ভুষিতে ছোট্ট ছোট্ট বিহঙ্গের দল হামলা চালিয়েছে। চড়ুই, দোয়েল, শালিক, বুলবুলি সব এসে ঠোকরে ঠোকরে খাচ্ছে। পাশের বাড়ি শফিদের মুরগি গুলোও আসছে ক্ষণে ক্ষণে। শান্তি বেগম উঠোনে বসে 'হো হো' স্বরে তাড়িয়ে দিলেও আবার এসে হামলা চালায়। শেষমেষ তিনি সুরেলাকে বলে,

-" চাড়িটা টোপা দিইয়া ঢাইকা রাখ! কি এক যন্ত্রণা টাইনা আনলো! খালি হ্যা হ্যা করবো!"

সুরেলা ভদ্র মেয়ের মতো গরুর চাড়িটা ঢেকে আবারও ফিরে আসে।তাঁর বান্ধবী মারিয়া একটু আগেই বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেছে। উঠোনে পাতা কাঠের চেয়ারে স্বল্পক্ষণের কুটুম্ব বসে আছে। তাদের সামনে কাঠের টুলের উপর চানাচুর বিস্কুট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সাথে পানি ভর্তি তিনটে কাঁচের ঝকঝকে গ্লাস! রওশন, রূপসা বিস্কুট চানাচুর মুখে তুললেও নওরিজ মাহবুব চুপচাপ বসে বাটন ফোনে গুঁতোগুতি করছে। সুরেলা দাঁতে দাঁত পিষে দাঁড়িয়ে থাকে। অহংকারী লোক!! সুরেলার মা শান্তি বেগমও খানিকটা অপ্রসন্ন হয়। ভদ্রতার খাতিরেও একটা বিস্কুট নিতে পারতো! এগুলো তো দোকান থেকেই আনা। প্যাকেট জাত বেকারি দ্রব্য! সে মলিন সুরে নওরিজের উদ্দেশ্যে বলে,

-" বাবা আমরা গরিব বইলা কি আমাগোরে বাড়ির পানি পর্যন্ত খাওয়া যাইবো না? একটা বিস্কুট মুখে দেও? এর আগেও একবার আইসা খালি মুখে গেছিলা গা।"

নওরিজ মাহবুব ইতস্তত বোধ করে। বাটন ফোনটা পকেটে রেখে দেয়। কাঠের টুলে রাখা বিস্কুটের দিকে তাকায় তবে তাঁর দৃষ্টি আটকায় কয়েক ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘুরে উঠোনের একপাশে থাকা মুরগির বিষ্ঠার উপর। সাথে সাথেই নজর ফিরিয়ে নিলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাঁর এই ছোট খাট বিষয়েও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সে তবুও ভদ্রতা বজায় রাখতে হাত বাড়িয়ে দিবে রওশন হাতে চানাচুর তুলে মুখে পুরে বলে,

-" আরে চাচি ওর কথা ছাড়েন তো!ভাইয়া নতুন সাবান ব্যবহার করার আগেও দুই তিনবার ধুয়ে নেয়! ওসিডির সমস্যা আছে ওর! সব বিষয়ে বাড়াবাড়ি রকমের খুঁতখুঁতে স্বভাব!"

সুরেলাও সুযোগ লুফে নিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,

-" মা রাখ তোর সাধাসাধি! গরীবের ঘরে হাতির পাড়া পরছে এই অনেক। গরীবের বাড়ির কিছু মুখে দিলে তো হের মানসম্মান সব মাটিতে হাহাকার কইরবো! তুই আর সাধিস না তো!"

নওরিজ শাণিত চাহনি নিক্ষেপ করে সুরেলার উপর। একটা বিস্কুট নিয়ে পুরোটুকুই মুখে ঢুকিয়ে চিবোতে থাকে।সুরেলার মুখে চাপা হাসি। শান্তি বেগম যেন‌ শান্তি পেলো। সে প্রসন্ন হেসে বলে,

-" অনেক বড় হও বাবারা। আমি অনেক খুশি হইছি। রোশন বাবা তো প্রায়ই আইসে সিনের সাথে। তুমি তো আসো না। মাঝে মধ্যে আইসা এই অভাগী চাচিরে একটু দেইখা যাইও!"

-" আসবো চাচি! আপনিও তো আর চেয়ারম্যান বাড়ি যান না। আগে প্রায়সই যেতেন। এখন তো ভুলেও যেতে দেখি না। রাস্তা ভুলে গেছেন নিশ্চয়ই?"

নওরিজ মাহবুবের সহজ গলা। সুরেলা তীক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলে তাকায়। শান্তি বেগম খুশি হয় ঢের।

-" আসলে বাত্তেই থাকি। টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করি তাই যাওয়া হইয়া ওঠে না। তয় রাস্তা ভুলি নাই। যামু দুই এক দিনের মধ্যেই! তোমার বিয়ার দিন যামু দাওয়াত দিবা না?"

হাসতে হাসতেই বলে শান্তি বেগম। নওরিজ একটা পানির গ্লাস তুলে ছোট চুমুক বসিয়ে রেখে দেয়। আড়চোখে সুরেলাকে একপল দেখে নিয়ে মুচকি হেসে বলে,

-" কেন নয়? আমার বিয়েতে আপনি মুখ্য ভূমিকা রাখতে চলেছেন চাচি! আর আমিও আসবো শিঘ্রই। শুনেছি মেয়ে বিয়ে দিবেন। তখনই না হয় আসলাম!"

শান্তি বেগম খুশিতে বাকবাকুম হয়ে উঠলো যেন। তবে সুরেলার প্রসঙ্গ আসতেই গোমড়া মুখে বলে,

-" ওরে নিয়াই তো চিন্তায় শেষ নাই! যার আমানত তাঁর হাতে সইপা দিলে বাঁচি। কিন্তু ভাগে মেলে না। ওর আর সিনের এতো বাচ কোছ! যেন মাইয়া আমার আসমানের পরি! হেই তো ঘুইরা ফিইরা কাইল্লা!"

সুরেলার ভালো লাগে না কথা গুলো। অজান্তেই চোখ ভিজে আসে। এভাবে বলতে পারলো মা? সে কালো বলেই কি তাঁর কোনো ইচ্ছা-অনিচ্ছা, শখ-আহ্লাদ থাকতে নেই? একটূ শখের রাজকুমার থাকা নিষেধ? সে হনহন করে শফিদের বাড়ির দিকে চলে যায়। নওরিজ গম্ভীর মুখে তাঁর প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে রয়। মলিন আঁখি যুগল যে জলকণায় টইটুম্বুর! রওশন ডাকে সুরেলাকে। সুরেলা শোনে না। চলে যায় তার মতো। রওশন শান্তি বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,

-" চাচি সুরেলা মন খারাপ করলো তো? এভাবে কে বলে? ও তো কালো না! উজ্জ্বল শ্যাম গায়ের বরণ। মায়াবী মুখটা দেখলেই আপনার মেয়ের জামাই কুপোকাত!"

রূপসাও ভাইয়ের সাথে সুর মিলিয়ে বলে,

-" শুধু কি মায়াবী নাকি? সুর আপুর চোখ গুলো কত্ত সুন্দর। বড় বড় ডাগর ডাগর। চোখের পাপড়ি গুলো মিচমিচে কালো তবে চোখের মনি গুলো একেবারে ভিন্ন রকম। ওই চোখে তাকালেই তো ডুবে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই! তাই না রিজ ভাই?"

নওরিজ মাহবুব গমগমে সুরে ছোট্ট করে 'হুম' বলে স্বীকৃতি দেয়। সব দোষ তো ওই গভীর কান্তিমান নয়নযুগলের! শান্তি বেগম আঁচলে মুখ ঢেকে হাসে অল্প।

-" মন খারাপ করেনি। আর সবার এসব কথা শুইনা শুইনা সইয়া গেছে ওর! একটু পরেই ঠিক হয়ে যাইবো নে!
.
.
.
চলবে........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp