অনন্যা নিশ্চুপ হয়ে ভাবনায় ডুবে ছিল। কৌশিক কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, তারপর গভীর স্বরে বলল,
"তুমি কি চাও?"
কথাটা শুনে অনন্যা পিলে চমকে উঠলো, হঠাৎ বাস্তবে ফিরে এলো সে। এক মুহূর্ত কৌশিকের দিকে চেয়ে থেকে ধীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,
"জ্বি? কী বললেন?"
কক্ষে একমাত্র বাল্বটি ম্লান আলো ছড়াচ্ছে। সেই আলো অন্ধকারকে ভেদ করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। টেবিলের দিকটা অন্ধকারই বটে, শুধু মাঝের অংশে আলো পড়ে কৌশিকের মুখটাকে স্পষ্ট করে রেখেছে। কৌশিকের আকাশি চোখে মাদকতার এক অদ্ভুত ছোঁয়া। অনন্যা হঠাৎ অন্যরকম অনুভব করতে শুরু করলো। মনে হলো লোকটার চোখ অন্য কথা বলছে আজ যা এই পর্যন্ত একবার ও মনে হয়নি।
আচমকা কৌশিক তার দৃঢ় হাতে অনন্যার বসে থাকা স্লাইডিং চেয়ারটি একদম পায়ের কাছে টেনে আনলো। অনন্যা হতবাক হলো, অনবরত চোখের পলক ফেলছে সে। অন্ধকার ঘরে একমাত্র ম্লান আলোর আভা দুজনের মুখের উপর পড়ে অব্যক্ত অনুভূতির পসরা সাজিয়ে যাচ্ছে। কাছে আসতেই অনন্যার মনটা আনচান শুরু করে দিয়েছে। সারা শরীর জুড়ে শিহরণ খেলে যাচ্ছে।
দুজনের মাঝখানে মাত্র কয়েক ইঞ্চির ফাঁক। তবু সেই অল্প দূরত্বে এক উত্তেজনার ঢেউ খেলা করছে যার ফলে দুজনের শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুততর হয়ে উঠেছে। বুকের ধুকপুকানির আওয়াজ এত স্পষ্ট যে মনে হচ্ছে একে অপরের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ কাউকে বুঝতে দিতে চায় না। অনন্যা চেয়ারে হেলান দিয়ে কিছুটা দূরত্ব টেনে আনলো।
কৌশিক তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে নরম গলায় বললো,
" আমায় ছেড়ে চলে যেতে চাও?"
"এ কথা কখন বললাম! কিন্তু...."
কৌশিক অনন্যাকে শেষ করতে না দিয়ে উচ্চারণ করলো,
"আরণ্যকের কথা এতো মনে করছো কেনো?"
"খারাপ লাগছে।"
"খারাপ লাগছে এর মানে তুমি তাকে মনে করছো। মানে মিস করছো।"
"হুম!"
অনন্যা মাথা নাড়িয়ে বললো।
"ঠিক আছে যদি চলে যেতে চাও দরজা খোলা আছে। তবে আমি শুনেছিলাম.... বাঙালি মেয়েরা বিয়ের পর স্বামী ভক্ত হয়। তুমি চলে গেলে কথাটা ভুল প্রমাণিত হবে।"
অনন্যা কাছে এসে মুখ ফুলিয়ে বললো,
"আমি বলেছি চলে যাবো? তাহলে উল্টাপাল্টা বলছেন কেনো? তাছাড়া ওই ডাক্তারকে বিয়ে না করে আপনাকে করেছি। এখন যদি চলে যাই, আত্মীয় স্বজন যারা জানে তারা কী বলবে? আমাকে তো খারাপ মেয়ে বানিয়ে দেবে।"
কৌশিক মাথা নিচু করে হাসলো। সাদা রঙের ডিজাইন করা ভারী সোয়েটার জাতীয় পোশাক পড়েছিল সে। এই পোশাকে লোকটাকে একদম সুন্দর মানিয়েছে। অনন্যা মুগ্ধ হয়ে স্যারকে দেখতে লাগলো। কৌশিক মাথা তুলে বললো,
"ওকে,তাহলে এই কথাই রইলো।"
কৌশিক চেয়ার ঘুরিয়ে কাজে মনোযোগ দিলো। অনন্যা কিছুক্ষণ পর আবার বললো,
"আপনি কেমন জানি!"
কৌশিক আবারো টাইপিংয়ে ব্যস্ত, সে উত্তর দিল,
"কেমন?"
"প্রথমে বললেন, আপনি বিয়ে মানেন না। তারপর নিজেই বাড়িতে থাকতে দিলেন। শর্ত দিলেন তিনটা। একটাও মানতে পারিনি নাকি! তারপর বকাঝকা করে বললেন চলে যেতে। আমি চলে গেলাম। আবার নিজের হাতে উদ্ধার করে নিয়ে এলেন এখানে। রাতে যা করলেন, সেটাকে কী বলবো? এখন বলছেন ছেড়ে যেতে না! সবার সামনে এমন ভান করেন যেন চেনেনই না, অথচ হঠাৎ ডেকে কথা বলেন। আপনাকে আমি বুঝি না। কেমন রহস্য নিয়ে ঘোরেন। ঠিক করে বলুন কি চাইছেন আসলে?"
কৌশিকের ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। সে টেবিল হতে হাত নামিয়ে চেয়ার ঘোরালো, অনন্যার বরাবর একদম কাছাকাছি দেখা গেলো তাকে। কৌশিক অনন্যার সামনের চুলগুলো পাশে সরিয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে রইল, অতঃপর ফিসফিস করে নেশালো কণ্ঠে বললো,
"প্রিটি!"
অনন্যা চমকে উঠলো, বুকে ধ্বক করে আওয়াজ হলো। তারপর প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি নিয়ে স্যারের দিকে তাকালো। কৌশিক মেয়েটার ঘাড়ে হাত দিয়ে কাছে টেনে আনলো।তার স্পর্শে অনন্যার শরীরে এক অজানা শিহরণ জেগে উঠল। সন্তপর্ণে অনন্যার গালের উপর চুপটি করে বসে থাকা নিষ্পাপ তিলে ঠোঁট বসালো। ধীরে ধীরে সেখানে নাকের আগা স্পর্শ করে নিচে নেমে ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো অনন্যার। বোকা বনে গেলো অনন্যা। নিজেকে সামলে নিতে বেশ বেগ পেতে হলো তাকে। ধাক্কা দিলো স্যারের বুকে। কিন্তু কৌশিকের কোনো হেলদোল নেই।
ধীরে ধীরে, কৌশিকের নাকের আগা, ঠোঁট এবং গভীর চুম্বনে সবকিছু এক অদ্ভুত অনুভূতির মোড়কে মোড়া হয়ে গেল। বেকায়দায় পড়লো অনন্যা। কৌশিকের কাঁধে আপনাআপনিই অনন্যার হাত চলে গেলো। শক্ত করে খামচে ধরলো স্যারের কাঁধ। কৌশিক চেয়ার ছেড়ে একটু উঠে আরো গভীর চুম্বন করলো অনন্যার ঠোঁটে। অনন্যার হাতের নখ কৌশিকের ভারী পোশাকের উপরেই পিঠে আঁচড় বসালো নরমসরম করে। বেশ অনেকক্ষণ স্থায়ী হলো চুম্বন। দীর্ঘ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটলো কয়েকদিন পূর্বে বিয়ে হওয়া দম্পতির মাঝে। কিন্তু অনন্যার নখের আঁচড়, কৌশিকের পিঠের পুরনো ক্ষতগুলোর ওপর পড়ল, আর তা আবারো রক্তক্ষরণে পরিণত হল।
অনন্যা আসার পর কৌশিকের জীবনে যেন এক অদ্ভুত পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। যেই কৌশিক এতদিন ধরে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অন্য মানুষের শক্তি গ্রহণ করত, সে আচমকাই তা বন্ধ করে দিয়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে, তার শরীরে ক্ষত বাড়ছে, আঘাতের গভীরতা বাড়ছে। অথচ এসব নিয়ে কোনো উদ্বেগের ছাপ নেই তার চোখে-মুখে।
বদলে, তার সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ থাকছে অনন্যার দিকে। যেন মেয়েটির প্রতি এক অজানা আকর্ষণ তাকে প্রতিনিয়ত টেনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তে সে অনন্যাকে খেয়াল করে, অনন্যার হাসি, অনন্যার অভিব্যক্তি সবকিছুই।
প্রচণ্ড ব্যথায় কৌশিক অনন্যাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেল। শ্বাস আটকে, অস্থির হয়ে দ্রুত নিজের পিঠে হাত রাখল। তার হাতে কিছু ভেজা ভেজা অনুভূতি এলো, পোশাকের ওপর দিয়ে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারল। এক মুহূর্তের জন্য কিছুটা শ্বাস নিয়েই, তার মুখটা অল্প খুলে গেল। অনন্যাও কিছুটা মুক্তি পেল, শ্বাস নিতে অনেকটা কষ্ট হচ্ছিল তার, কিন্তু কৌশিকের কোমল চুম্বন, তবুও, তাকে খারাপ লাগায়নি। কেন? সে নিজেও পুরোপুরি বুঝতে পারছিল না।
অনন্যা চোখ তুলে কৌশিকের দিকে তাকাল, স্যারের চমকিত চোখ ও মুখ দেখে এক মুহূর্তের জন্য ভ্রু কুঁচকে গেল অনন্যার। অনন্যা সেখান থেকে উঠে এসে স্যারের হাত ধরল। কৌশিকের হাতে রক্ত দেখে সে আঁতকে উঠল, আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল,
"এটা কীভাবে হলো? কোথা থেকে এসেছে রক্ত?"
কৌশিক কোনো উত্তর দিল না, এক ঝটকায় অনন্যার হাত সরিয়ে দিয়ে বিছানার দিকে চলে গেল। কৌশিকের সাদা সোয়েটারের পেছন দিকে রক্তের দাগ দেখেই স্তব্ধ হয়ে গেলো অনন্যা। তার পিছু পিছু হেঁটে গেলো। কৌশিক শান্ত হয়ে বিছানায় বসলো। অনন্যা স্যারকে একবার দেখে রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলো। কিয়ৎক্ষণ পর আবারো ফিরে আসলো সে। হাতে তার ফার্স্ট এইড বক্স।
বিছানায় রাখা বক্সটা দেখিয়ে অনন্যা বলল,
"খুলুন।"
কৌশিক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
"কী?"
"পোশাক!"
"ছিঃ! কেনো?"
কৌশিক নিজের শরীর ঢেকে বললো।
"আরেহ! ব্যান্ডেজ করবো।"
"লাগবে না।"
কৌশিক হাত সরিয়ে ফেললো।
"হু, দেখতেই পাচ্ছি। খুলবেন, নাকি আমি খুলে দেবো?"
কৌশিক বিরক্ত স্বরে বলল,
"প্লিজ যাও।"
অনন্যা নিরুত্তর। এক ধাপে এগিয়ে এল। কৌশিকের পোশাকে হাত বাড়াতেই কৌশিক নিজেই উপরের জামাটা খুলে ফেলল। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেলো কৌশিকের। কিন্তু এভাবে এলোমেলো দেখতে খুব ভালো লাগছিল অনন্যার কাছে।
অনন্যা বিছানায় উঠে বসল। কৌশিকের পিঠে গভীর ক্ষতচিহ্ন দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ভেতরের কষ্ট গলায় লেপটে বলল,
"এত বড় ক্ষত কীভাবে হলো?"
কৌশিক প্রতিউত্তর দিলো না। কোনো উত্তর না পেয়ে, অনন্যা নিজেই বক্সটা খুলল। তুলো নিয়ে আলতো করে ক্ষতটা পরিষ্কার করতে লাগল। তুলোর ছোঁয়ায় কৌশিকের শরীর খানিকটা কেঁপে উঠল। অনন্যা থেমে গেল না। যত্নের এক অনুচ্চারিত সুরে কাজ চালিয়ে গেল।
পিঠে অনন্যার আলতো স্পর্শ আরাম দিচ্ছে কৌশিককে। মেয়েটার মুখের নিঃশ্বাস শরীরে পড়তেই মনে হলো শরীরটা ঠিক হয়ে যাচ্ছে। অনন্যা সুন্দরমতো ব্যান্ডেজ করে দিলো। বক্স গুছিয়ে কিছুক্ষণ কৌশিকের ফর্সা হলুদ চওড়া পিঠে তাকিয়ে রইল। নিজের হাত আস্তে করে পিঠে রেখে ক্ষতস্থানে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। বরাবরের মতোই স্যারের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা। কিন্তু অনন্যার ছোঁয়া পেতেই গায়ের ঠান্ডা বরফের মতো অনুভূতি ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে উঠছিল। অনন্যার নিজের মনেও একটা অদ্ভুত ভালো লাগার ঢেউ এসে লাগছিল। কতক্ষণ কেটে গেলো কেউ বলতে পারলো না। কৌশিক ও নিশ্চুপ হয়ে অনন্যার স্পর্শ অনুভব করছিল।
কিছুক্ষণ আগের চুম্বনের কথা মনে হতেই কৌশিক মৃদু হেসে ফেললো।
অনেকক্ষণ পর ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
"প্রিটি! ডু ইউ নো ইউ আর সো প্রিটি? ইউর লিপস....দে আর জাস্ট লাইক মাই পার্সোনাল স্ট্রবেরি। আই থিংক.... দে হ্যাভ বিকাম মাই অবশেসন। যখনি কোনো কারণ ছাড়া তোমার আশেপাশে যাই, এভাবে কাছে টেনে ফেলো তুমি। কেনো?"
অনন্যার কোনো উত্তর পাওয়া গেলো না। মেয়েটার হাত ও থেমে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। কৌশিক পিছু ফিরে দেখলো অনন্যা বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। হেসে ফেললো কৌশিক। এটা কোন ধরনের ঘুম? মেয়েটা সত্যিই ঘুমপাগল। কৌশিক আস্তেধীরে সরে আসলো তার ফলে অনন্যা বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো। মিনমিনিয়ে কিছু একটা বলতে লাগলো, কৌশিক নিচু হয়ে কান পেতে শুনলো। অনন্যা মিনমিনিয়ে কাঁপা গলায় বললো,
"স্যার... কে আ~পনি? আপনি কি ম্যাজিশিয়ান? নাকি বইয়ে লেখা রূপকথার কোনো চরিত্র? কোনটা আপনি? বাট যাই হন আই লাইক ইউ।"
কথাগুলো শুনে কৌশিক চমকে উঠল। চোখের দৃষ্টিতে যেন সামান্য কাঁপন লেগে গেল। সে এক ধাপ পিছিয়ে গিয়ে মাথার অগোছালো চুলে হাত চালাল। সামনের চুলগুলো ঠিক করল যেন নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। বড় করে শ্বাস ছেড়ে নিজের ভেতরের অস্থিরতাকে চাপা দিতে চাইল।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিজের উপর প্রবল বিরক্তি বাড়ছিল। এসব কী করছে সে? কেন এমনভাবে অনন্যার সাথে জড়িয়ে পড়ছে?মানুষ অনুভূতির ফাঁদে আটকে পড়ে, কিন্তু সে তো মানুষ নয়। তাহলে কেন এই অদ্ভুত টান? কেন এই অপরিচিত অনুভূতি তাকে গ্রাস করছে?
কৌশিকের মনের গভীরে এক তীক্ষ্ণ প্রশ্ন জেগে উঠল, যদি একদিন জানতে পারে যে অনন্যা তার শত্রু? তখন কী হবে? সবসময়ের মতো অনন্যার শরীরকে কি সে বিনষ্ট করে দিতে পারবে?
কৌশিক কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে রইল। চারপাশের নীরবতা তার মনের অশান্তিকে আরও প্রকট করে তুলল।
হঠাৎ কৌশিক থমকে দাঁড়াল। তার সামনে অন্ধকারের বুক চিরে এক অবয়ব ধীরে ধীরে ফুটে উঠল। চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল, আর কৌশিকের বুকের ধুকপুকানি যেন ক্রমশ বাড়তে লাগল। অবয়বটি অন্ধকারে ঢাকা ছিল, তার চেহারা স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছিল না। তবে তার উপস্থিতি কৌশিকের শরীরে এক অদ্ভুত শীতল স্রোত বইয়ে দিল।
দরাজ গলায় অবয়বটি বলল,
"তুমি ভুলে গেছো। তুমি একসময় মানুষ ছিলে। এখনো তোমার মনুষ্যত্ব পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। এখনো তোমার ভেতরে সেই মন আছে। এখনো তুমি অনুভব করতে পারো, যেমন আজ অনুভব করছ।"
কৌশিকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল।
অবয়বটি আবার বলল,
"তুমি মানুষের মতোই কিছু দিক এখনো ধরে রেখেছ। তোমার শুধু বয়সটা থেমে গেছে। ভালোবাসা, দ্বিধা এসব কোনো অযৌক্তিক ব্যাপার নয়। তুমিও ভালোবাসায় পড়বে। দ্বিধায় ভুগবে। সামনের দিনগুলো অনেক কঠিন, তোমাকে নিজেই চিন্তা করতে হবে তুমি কোন পথে হাঁটবে।"
অবয়বের কণ্ঠে ছিল এক ধরনের অমোঘ সত্যের ওজন। কৌশিক নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইল। তার ভেতরে একটা ঝড় উঠলেও মুখে তা প্রকাশ করতে দিল না। গভীর নিশ্বাস ফেলে সে জোর গলায় বলল,
"নাহ, এসব মিথ্যে। আমি কারো জন্য অনুভব করার ক্ষমতা রাখি না। ভুল বলছো তুমি। আমি কোনো সাধারণ মানুষ নই। আয়ু থেমে গেছে আমার। আমার শরীরে এমন শক্তি আছে যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। আর মানুষের মতো দেহে মন থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমার অস্তিত্বই ভিন্ন।"
অবয়বটি হালকা হেসে উঠল, যেন কৌশিকের কথা তেমন গুরুত্বই পেল না। তার দরাজ কণ্ঠ আবার বেজে উঠল,
"দেহ আছে তো মন ও আছে। মন আছে তো অনুভূতিও আছে। অনুভূতি আছে তো সবই আছে। যতই অস্বীকার করো না কেন, অনুভূতি ছাড়া কেউ সম্পূর্ণ হয় না। তোমার শক্তি যত অদ্ভুতই হোক, তা তোমার মনুষ্যত্বকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারেনি।"
কৌশিক অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ধুলিসাৎ হয়ে হাওয়ায় উড়ে গেলো সেই অবয়ব। কৌশিক ব্যথিত হয়ে অনন্যার দিকে তাকালো।
.
.
.
চলবে......................................................................