"শেরাজ ভাই আমার কাছে এসো না তুমি। আমার ভয় লাগছে তোমাকে প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকো তুমি। তোমার হাতে রক্ত লেগে আছে অনেক।"
শেরাজ মেহুলের কথা শোনা মাত্রই পাগলের ন্যায় এলোমেলো হয়ে থাকা সাদা শার্টে রক্তমাখা হাতটা মুছতে মুছতে বলল, "রক্ত ভয় পাচ্ছিস তো, দেখ মুছে নিয়েছি আর রক্ত নেই দেখ।"
শেরাজ মেহুলের দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের হাতটা দেখাতে দেখাতে এগিয়ে আসছে মেহুলের দিকে। মেহুল ভয়ে নিজের ছোটখাটো দেহটা দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে, সে দেয়ালের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে। কিন্তু তার প্রতিটি স্নায়ু যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে, পা চলছে না। কিন্তু তাও যেন মেহুল পিছিয়ে যাওয়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে শেরাজের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে। কিন্তু মেহুল ব্যর্থ। শেরাজ মেহুলের কাছে এসে হাঁটু ভেঙ্গে বসে। মেহুল ভয়ে চোখ-মুখ খিঁচে রেখেছে অন্য দিকে ফিরে। তার সামনে যেন এক ভয়ংকর শেরাজ ভাই বসে আছে, যে তার কাছে সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষ।
শেরাজ যখনই তার রক্তমাখা হাতটা মেহুলের কাঁধে রাখতে নিবে তৎক্ষণাৎ মেহুল চেঁচিয়ে উঠে বসে। মেহুলের সারা শরীর ভয় আর আতঙ্কে কাঁপছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে, কিন্তু তাও যেন আরাম করে শ্বাস নিতে পারছে না, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মেহুল তড়িঘড়ি করে বালিশের পাশ থেকে শুভ্র রঙের একটা ইনহেলার বের করে তার সাহায্যে ঘন ঘন শ্বাস টানছে। ইনহেলার টানার পর যেন মেয়েটা এবার স্বস্তি পেলো। ধীরে ধীরে নিজেকে স্বাভাবিক করছে মেহুল। গায়ে মাথায় জমে থাকা ঘামটা হাত দ্বারা মুছে নেয়। এই স্বপ্নটা তার পিছু ছাড়চ্ছে না গত সাড়ে চার বছর ধরে। সপ্তাহে এক বার হলেও এই স্বপ্নটা সে দেখবেই দেখবে। এই স্বপ্নটা যেন তার জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে। স্বপ্নে দেখা মানুষটা নেই তার আশেপাশে, হাজার হাজার মাইল দূরে মানুষটা। কিন্তু দূরে থেকেও যেন তার আশেপাশে রয়ে গেছে কোনো না কোনো ভাবে। মেহুল দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাজে। তার ক্লাস সাড়ে নয়টা। তাকে এক্ষুণি ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ভার্সিটি যেতে হবে, না হলে ক্লাস মিস করবে।
মেহুল বিছানা-পত্র গুছিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। মেহুল সাদা রঙের একটা গাউন পড়েছে তার উপরে নীল রঙের কটি পড়েছে তাতে কারচুপির কাজ করা। মেহুল কোমর সমান চুলগুলো পনিটেল করে বেঁধে পরিপাটি হয়ে রেডি হয়ে নেয়। শেষে তার জীবনের অতিব জরুরি কালো ফ্রেমের চশমাটা চোখে পড়ে নেয়। চশমা ছাড়া সে রাত কানা। যদিও বা অল্প অল্প দেখে সে, কিন্তু বলতে গেলে মেহুল কানা। মেহুল ব্যাগ নিয়ে নিচে নামলো। কেমন জানি থমথমে পরিবেশ। আশেপাশে কেউ নেই। বিগত পাঁচ বছর যাবত এমনটাই হয়ে আসছে মির্জা বাড়িতে। মির্জা বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য তার আপন। কিন্তু আপন হয়েও যেন পর। শুধু নানাভাই ছাড়া। নানাভাই যেই সোফাটাতে বসে এমন সময় খবরের কাগজ পড়ত সেখানটায় তাকালো মেহুল। নানাভাই তার গতকাল বিকালে এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন। আর আজকে বিকালে ফিরে আসবেন। মেহুল তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে কিচেনে গিয়ে দেখে আকলিমা কাজ করছে। মেহুলকে দেখার সাথে সাথে আকলিমা বলল।
"একটু দাঁড়াও, আমি হাতের কাজটা শেষ করে তোমার খাওনটা দিতাছি।"
মেহুল বলল, "না না, আমি নিয়ে নিচ্ছি, তুমি কাজ করো।"
মেহুল খাবার প্লেটটা নিতে নিতে বলল, "কে কে নাস্তা করেছে?"
"শুধু খালুজান করছে আর কেউ না। আর শাজ আপায় তো এহনও ঘুমায়।"
মেহুল কিছু না বলে নিজের জন্য পরিমাণ মতো খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে। আস্তে ধীরে পরোটা ছিঁড়ে সবজি মাখিয়ে তা মুখে নিতে যাবে। তৎক্ষণাৎ মুখের সামনে থেকে কেউ খাবার প্লেটটা ছিনিয়ে নিয়ে ফেলে দেয় ফ্লোরে। আর মুহূর্তের মধ্যে কাঁচের প্লেটটা বিকট এক শব্দ করে ভেঙে যায়।
কাঁচ ভাঙার শব্দ শুনে হন্তদন্ত হয়ে আকলিমা এলো রান্না ঘর থেকে। কিন্তু সামনে আর এগুনোর সাহস পেলো না।
মেহুল হতবিহ্বল হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ পানিতে টইটম্বুর। চোখের পলক ফেললেই গড়িয়ে পড়বে নোনা জল। আর ঠিক তাই হলো। গাল বেয়ে অশ্রুধারা বয়ে গেলো।
মেহুলের সামনে দাঁড়ানো মানুষটা অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহুল মানুষটার দিক থেকে নজর সরিয়ে নিয়ে চশমার ফাঁক দিয়ে বেহায়া চোখের পানিটা মুছে নেয়।
মেহুলের সামনে দাঁড়ানো মানুষটা রাগে গর্জে উঠলো, "খুব আরাম করে খাওয়া হচ্ছে না। শুধু তোর জন্য আমার ছেলেটা আজ পাঁচ বছর ধরে আমার থেকে দূরে। তোর জন্য এক মায়ের বুক খালি হয়েছে। তোকে আমার সহ্য হয় না মেহুল। ইচ্ছে করে তোকে এই বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই। কিন্তু আমার শশুড় আর স্বামীর জন্য পারি না। কিন্তু আমি তোকে তাড়াবো। দরকার পড়লে তোকে বিয়ে দিয়ে এই বাড়ি থেকে তাড়াবো।"
মেহুল শেষ কথাটা শুনে চমকে অশ্রুসিক্ত নয়নে মামির দিকে তাকায়। শাহানা বেগম চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, "তোর এই সাধাসিধে মুখটা দেখলে না আমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। এই সাধাসিধে মুখটার আড়ালে যে ভয়ংকর এক চেহারা লুকিয়ে আছে, সেটা কেউ বুঝতে পারে না।"
মেহুল নজর সরিয়ে নেয়। ভেতরের কান্নাটা বহু কষ্টে দাঁত কামড়ে আটকে নেয়। শাহানা বেগম মেহুলকে তিক্ততায় ভরা আরো কতো গুলা কথা শুনিয়ে হনহনিয়ে চলে যান নিজের ঘরে।
মেহুল চোখের পাতা বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো। নানা ভাই কিংবা মামা যখন বাড়িতে না থাকে তখনই মামি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু আজকের ঘটনাটা মেহুলের কল্পনার বাহিরে। একটা মানুষ কি করে আরেকটা মানুষের মুখের খাবার এভাবে কেড়ে নিতে পারে?
মেহুল উঠে দাঁড়ায়। যেন প্রাণহীন একটা জড় বস্তু সে। মেহুলের জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। মা-বাবাহীন একটা মেয়ের জীবনে আর কিবাই আশা করা যায়। মেহুল কলেজ ব্যাগটা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
এই সবটা দৃশ্য ইফা উপর থেকে দেখে গেছে। কিন্তু প্রতিবাদ করলো না। আর প্রতিবাদ করলেও তার মা তাকে মানবে না। ইফা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কবে আসবে তার ভাই? কবে ঠিক হবে এই বাড়ির দম বন্ধকর পরিস্থিতি? ইফা এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে চলে যায়।
—————
মেহুল রিকশা করে ভার্সিটিতে আসলো। সে আর্নাস ফাস্ট ইয়ারে পড়ে ইংরেজি বিভাগে। মেহুল রিকশা ভাড়া মিটিয়ে হাত ঘড়িতে দেখে নেয় ক’টা বাজে? সাড়ে নয়’টা বাজতে আর দশ মিনিট বাকি। ভেবেছিলো ক্লাসে যাওয়ার আগে ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিবে। কিন্তু খাওয়ার মতো হাতে সেই সময়টা নেই। মেহুল দ্রুত পায়ে ভার্সিটিতে ঢোকে। তার ক্লাস রুম ছয় তলায়। মেহুল সিঁড়ি বেয়ে ক্লাস রুমের সামনে আসলো। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে। খালি পেট বিদায়, খিদায় পাক দিয়ে উঠলো পেট। মেহুল সেটা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলো। ক্লাস রুমে প্রবেশ করতেই তিনটা মেয়ে মেহুল বলে চেঁচিয়ে উঠে। মেহুল ধীর পায়ে হেঁটে তাদের কাছে গেলো। মেহুলের তিন জন বান্ধবী, না বান্ধবী বললে ভুল হবে এগুলা সব বান্দরনী। একটা শান্ত শিষ্ট মেয়ের কপালে তিনটা বান্দর জুটেছে। এই চার বান্ধবীর জুটির একটা নাম আছে সেটা “তিন বান্দর এক কচ্ছপ” কচ্ছপটা মেহুল। মেহুল বসতেই লামিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে বলল।
"মেহু মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে?"
মেহুল কিয়ৎক্ষণ চুপ রইলো পরক্ষণে লামিয়ার কথাটা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল, "কই শুকনো লাগছে আমি একদম ঠিক আছি।"
ইকরা সন্দিহান গলায় বলল, "তুই কি কিছু লুকাছিস আমাদের কাছে থেকে?"
মেহুল ঠোঁটে হাসি রেখে বলল, "আরে আজব কিছু হলে তো লুকাবো? তোরা একটু বেশি বেশি ভাবছিস আমাকে নিয়ে!"
এমন সময় ক্লাস টিচার এসে প্রবেশ করেন। পুরো রুম জুড়ে নিরবতা। সবাই পড়ায় মনোযোগ দিলো কিন্তু মেহুল পারছে না মনোযোগ দিতে বার বার মামির বলা কথাগুলা কানে বাজচ্ছে। তাকে কি সত্যি বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে মামি? কিন্তু মেহুল এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায় না। বিয়ে নামক বেড়াজালে নিজের জীবনটা এতো তাড়াতাড়ি বন্দি করতে চায় না।
ক্লাস চালাকালীন হঠাৎ করে একটা ছেলে ক্লাস রুমে এসে প্রবেশ করে। ছেলেটা তাদের ভার্সিটির প্রাক্তন সিনিয়র ভাই তাহির। এখন রাজনীতি করে। তাহির স্যারের সাথে কিছুটা সময় কথা বলে উচ্চস্বরে স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলল।
"এখানে মেহুল মর্তুজা কে আছেন?"
মেহুল তাহিরের মুখে নিজের নাম শুনে ভড়কালো। হঠাৎ তাকে খুঁজছে কেন এই তাহির? মেহুলের ছোট্ট হৃদয়টা ভয়ে দ্রুত বেগে লাফাচ্ছে। একে তো না খাওয়া, তার উপর টেনশনে শরীর মৃদু কাপছে। কলি, ইকরা, লামিয়া অবাক হলো। তাহির কেন তাদের বান্ধবীর খোঁজ করছে? তাহির পুনরায় মেহুলকে ডাক দিলো। মেহুল এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তাহির মেহুলকে দেখে বলল।
"আপনি মেহুল?"
মেহুল মাথা নাড়ায়। তাহির বলল, "ঠিক আছে চলুন আমার সাথে।"
সবাই তাহিরের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তাহির ভার্সিটির সব স্টুডেন্টকে তুই-তোকারি করে ডাকে। তাহলে মেহুলকে আপনি বলে ডাকছে কেন? মেহুল ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে স্যার বলেন, "মেহুল তুমি যাও তাহিরের সাথে।"
মেহুল যেতে চাইছে না। তাহির মেহুলের অভিব্যক্তি বুঝতে পেরে বলল, "আপনি চাইলে আপনার সাথে আপনার বান্ধবীদের নিতে পারেন।"
মেহুল তাহিরের কথাটা শুনে যেন বল পেলো। চার বান্ধবী মিলে তাহিরের পেছন পেছন চলল। তাহির এসে ক্যান্টিনের সামনে দাঁড়ালো। মেহুল অবাক হলো। তাদের ক্যান্টিনে নিয়ে এসেছে কেন? তাহির ক্যান্টিনের দরজা খুলে আদেশ করলো।
"ভেতরে ঢোকেন।"
মেহুল আর তার বান্ধবীরা মিলে ভেতরে ঢোকলো। পুরো ক্যান্টিন ফাঁকা, কোনো স্টুডেন্ট নেই। তাদের কি কোনো ভাবে তাহির রেগিং দিবে নাকি। কিন্তু না মেহুলের ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে তাহির বলল।
"বসুন।"
চার বান্ধবী চুপচাপ বসলো। তাহির করতে কি চাইছে? কিয়ৎক্ষণ পরেই ক্যান্টিনে থাকা কর্মচারীরা খাবার নিয়ে এসে হাজির, খাবারগুলা টেবিলের উপর রাখে। পুরো টেবিল ভর্তি খাবার। ক্যান্টিনে যত রকমের খাবার আছে আপাতত সব খাবার তাদের সামনে। চার বান্ধবী একে অন্যের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। তাহির হঠাৎ তাদের এভাবে খাওয়াচ্ছে কেন? তাহির মেহুলের সামনে এসে বলল।
"কি হলো খাচ্ছেন না কেন?"
মেহুল ইতিউতি করে বলল, "এতো খাবার।"
"হুম এতো খাবার সবগুলা আপনাদের জন্য।"
"কিন্তু কেন, মানে কি উপলক্ষে খাওয়ানো হচ্ছে আমাদের?"
"এতো প্রশ্ন না করে আপনি খাওয়া শুরু করেন। আপনি তো সকালে কিছু খেয়ে আসেন নি।"
মেহুল চমকালো। সে খেয়ে আসে নি এই কথাটা তাহির জানলো কি করে? তাহিরের তো জানার কথা না। কলি, ইকরা, লামিয়া এক সঙ্গে অবিশ্বাস্য গলায় বলে উঠল, "তুই খেয়ে আসিস নি মেহুল সকালে?"
মেহুল বান্ধবীদের কথা পাত্তা না দিয়ে তাহিরকে প্রশ্ন করলো, "আপনি জানলেন কি করে তাহির ভাই আমি যে খেয়ে আসে নি?"
তাহির মুচকি হেসে বলল, "সেটা আপনার না জানলেও চলবে আপনি খাওয়া শুরু করেন। বেশিক্ষণ না খাওয়া থাকলে শরীর খারাপ করবে।"
কথাটা বলে ক্যান্টিনের কর্মচারীকে বলল, "যা যা খেতে চাইবে ওরা ওদের তাই তাই দিবি। টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না সময় মতো টাকা পেয়ে যাবি।"
তাহির চলে যায়। ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে কাউকে কল করলো। ওপর প্রান্তের মানুষটা কল ধরতেই তাহির বলল, "ভাই তোমার কথা মতো কাজটা করে দিয়েছি।"
ফোনের ওপর প্রান্তের মানুষটা কি বলল শোনা গেলো না। তাহির শুধু আচ্ছা বলে কল কেটে দিলো।
মেহুল স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। তাহির জানলো কি করে সে না খেয়ে এসেছে? আর তাহিরের সাথে এতোটাও ভালো সম্পর্ক না তার, যে সে না খেয়ে আসলে তাকে এভাবে খাতির যত্ন করে খেতে দিবে। এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কেউ আছে। কিন্তু কে আছে? এমন অনেক ঘটনা আছে যেগুলা মেহুল দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে পারে নি। কোনো ভাবে কি শেরাজ ভাই এর পেছনে আছে? মেহুল নিজের ভাবনায় নিজেই চমকে উঠে। এসবের মধ্যে শেরাজ ভাই থাকবে কি করে? শেরাজ ভাই তো বাংলাদেশে নেই সে তো বহু দূরে। এতো দূর থেকে বাংলাদেশে কি হচ্ছে সেগুলা জানারও কথা নয়। আর জানলেও শেরাজ ভাই নিশ্চয়ই এই কাজ করবে না। শেরাজ তো আর তাকে আপনজন বলে গণ্যই করে না। অবশ্য গণ্য না করার কারণটা একমাত্র সেই।
যবে থেকে শেরাজ বাংলাদেশ ছেড়েছে তখন থেকেই শেরাজ মেহুলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। পাঁচ বছর আগেও একটা সুন্দর স্বাভাবিক বন্ধন ছিলো দুজনের মধ্যে কিন্তু একটা দুর্ঘটনা যেন সবটা লন্ডভন্ড করে দিলো। শেরাজ বাংলাদেশ ছাড়ার পর প্রায় ছ'মাস কোনো যোগাযোগ রাখে নি মির্জা বাড়ির সাথে। ছ'মাস পর বাড়ির সবার সাথে শেরাজ কথা বললেও মেহুলের সাথে কথা বলতে চাইলে মেহুল শেরাজকে এড়িয়ে গেছে। বার বার মেহুল শেরাজকে এড়িয়ে গেছে। এই এড়িয়ে যাওয়াটা যেন আরো দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে দুজনের মধ্যে। মূলত মেহুল শেরাজের সাথে ভয়ে কথা বলতে চাইতো না ওই ভয়ংকর ঘটনাটার পর থেকে কিন্তু সময় যতো বইতে শুরু করলো তত যেন শেরাজের প্রতি ভয়টা একটু একটু করে কমতে লাগলো মেহুলের। কিন্তু তাতে শেরাজ অনেকটাই দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছে মেহুলের থেকে রাগে অভিমানে। এই রাগ, অভিমানের পারদ কতটা গভীর সেটা মেহুলের অজানা।
·
·
·
চলবে...................................................................................