শাহজাহান তন্ময় - পর্ব ৮৫ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


অক্টোবর। আজ তেরো তারিখ। সময় —ঠিক ভোর চারটা। এখনো ফজরের আজান পড়েনি। সম্ভবত কিছুক্ষণ বাদ পড়বে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে ঘণ্টাখানেক যাবত। প্রথম দিকে ঝুম বৃষ্টি মিনিট পাঁচেকের জন্য নেমেছিল বটে। তা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বাইরেটা অন্ধকারে ডুবেছে। মেঘলা, গুমোট আকাশের খুব কাছ দিয়ে একটা প্লেন যাচ্ছে। প্লেনটি রীতিমতো নেমে আসছে ধরণীর খুব কাছে— আকাশের বুক থেকে যতটা দূরে আসা সম্ভব ততটা দূরে। ছমছমে বাতাসের স্রোতে উড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা, বেয়ারা গাছের পাতারা। হাসপাতালের সামনে একটি কালো রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। হাসপাতালের সদরদরজার সামনে লাঠি হাতে দাঁড়ানো দারোয়ান দু'বার সন্দেহের চোখে গাড়িটি আপদমস্তক দেখে নিয়েছে। এইতো এসে জানালার কালো কাঁচে টোকা দিলো বলে! 

ওদিকে বাইরে থেকে স্তব্ধ দেখতে গাড়িটির ভেতরে তর্কবিতর্ক চলছে একনাগাড়ে। এসময়ে মাহিন হুলস্থুল বাদিয়ে গাড়ি থেকে বেরুতে চাইলে রিয়ান ওর শার্টের কলার টেনে ধরে ফের সিটে বসিয়ে দেয়, একরকম জোরপূর্বক। মাহিন মহাবিরক্ত হয়। তিরিক্ষি মেজাজ দেখিয়ে বলে, 

‘তোদের যাওয়া লাগবে না। তোরা ঘুমা, তোদের তো আটকাচ্ছি না। আমারে তো যেতে দে-রে বাপ।’

শুহানির মাথা ধরেছে ভীষণ। চোখ দুটো ছোটো হয়ে আছে। সে রীতিমতো কাচা ঘুম ফেলে এমন ভোর সকালে দিকবিদিক ভুলে বাড়ি থেকে একই পোশাকে বেরিয়ে এসেছে। এপর্যায়ে বিরক্তিতে 'চ' শব্দ উচ্চারণ করে ধমক দেয়,

 ‘ভাই, মাথাটা একটু কাজে লাগিয়ে, ভাব। ভাব, প্লিজ লাগে। গাধার মতো কর্মকাণ্ড করিস না। এখন তন্ময়ের ফ্যামিলি টাইমিং। ক্রিটিকাল, ইমোশনাল সিচুয়েশন। এসময়ে আমরা আউটসাইডার্স গিয়ে উপস্থিত হলে তারা ডিস্টার্ব ফিল করতে পারে। তারওপর ইতোমধ্যে শাহজাহান বাড়ির সব ঢুকেছে হাসপাতালের ভেতর। ওটির বাইরে ফাঁকা জায়গা আছে না-কি সন্দেহের ব্যাপার।’

মাহিনের গুরুগম্ভীর, গোমড়া মুখ খানা বড্ড সরল দেখায়। সে খুব করে ভেতরে যেতে চায়। বন্ধুর কী অবস্থা নিজ চোখে দেখতে চায়! অরুকে সেই কখন ওটি-তে নেয়া হয়েছে! এখনো কোনো খবরাখবর শোনা যায়নি। মাহিন বিরবির করে বলে, 

‘আরেকজন, মাত্র একজন গেলে কিচ্ছুটিইই হবে না। তোরা বস, আমি গিয়ে তোদের আপডেট করব।’

রিয়ান ভূতের মতন চমৎকার ভঙ্গিতে হেসে চোখমুখ বড়ো করে বলে, 

‘তুই বোস তাহলে। আমি গিয়ে তোরে আপডেট করব।’

সৈয়দ বন্ধুদের কর্মকাণ্ডে আশ্চর্য না হয়ে পারে না। বদমাশ গুলোর সব বিষয়ে, সবখানে ঝগড়া করা লাগবে? এমন একটা ব্যাপারেও? সে অসন্তুষ্ট গলায় এবারে চিৎকার করে ওঠে, 

‘তোরা এসব পরে করবি, প্লিজ? প্লিজ? একটু দোয়াদরুদ পড়লেও তো পারিস। অরুর ডিফিকাল্ট ডেলিভারি হচ্ছে। বুঝছিস না? 
দুটো বেবি তো এভাবেই আকাশ থেকে টপ করে পড়বে না। আমিতো ভেতরে না গিয়ে, তন্ময়কে না দেখেও বলতে পারবো, ও লিটারেলি পাগল হয়ে যাচ্ছে বোধহয়।’

কথাগুলো তার মুখ থেকে বেরুতেই গাড়ির ভেতরটা নিশ্চুপ হয়ে গেল একমুহূর্তে। থমথমে পরিবেশে হালকা কেশে মাহিন আলগোছে দু’হাত তুলে মোনাজাত ধরল। বিরবির করে দোয়াদরুদও পড়তে শুরু করল। ভদ্রসভ্য ভাবে বসে রিয়ানও একই কাণ্ড করাতে— সৈয়দের মুখের ভেতরটা তেতো হয়ে এলো। নীল হলো মুখ। আশ্চর্য হয়ে নিঃশব্দে চোখ দুটো ঘুরিয়ে জানালা গলিয়ে বাইরে চাইল। আকাশ মেসেজের রিপ্লাই করেছিল চারমিনিট আগে। অরুর নর্মাল ডেলিভারি হবার সম্ভাবনা একদমই নেই। অবস্থা বেগতিক। জমজ দুটো বাচ্চার একটি বাচ্চার অবস্থান উলটো। বাধ্যতামূলক সিজার করতে হবে। এইমুহূর্তে তন্ময়ের মানসিক অবস্থা খুব একটা অবশ্যই ভালো হওয়ার কথা নয়। তার বন্ধুর দুর্বলতাই দুর্বল হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। তার ওপর ক্রিটিকাল সিচুয়েশন! এসময়ে চেয়েও তারা —বন্ধুরা পাশে থাকতে পারবে না। দূর থেকেই অনুসরণ করতে হবে। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা তো আছে।
তবে প্রয়োজনে সেই সীমাবদ্ধ ভেঙে ফেলতেও তাদের দ্বিধা নেই। আর একটু ধৈর্যসহকারে বসে থাকলেই হবে।

———

ওটির সামনে —করিডোরে শাহজাহান বাড়ির প্রত্যেকে বিদ্যমান। ছোট্টো দীপ্ত অবধি বাড়িতে থাকতে রাজি নয়। কান্নাকাটি করে আকাশের সঙ্গে চলে এসেছে প্রায় নিঃশব্দে। আকাশ অবশ্য বারংবার বলেকয়ে এনেছে, কোনোপ্রকার হৈ-হুল্লোড়, প্রশ্নাবলী করা যাবে না। দীপ্তও বেশ বুঝদার বাচ্চামানুষ। আজ একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি, ওর মধ্যে চঞ্চলতা নেই বললেই চলছে। পুতুলের মতন চুপচাপ দু’হাত একত্রিত করে মুখের সামনে ধরে রেখেছে —মোনাজাত ধরেছে ঠিকই তবে ওর ছোটো ছোটো চোখদুটো শোকাহত ভঙ্গিতে ঘুরেফিরে সকলের চিন্তায় মগ্ন মুখখানি দেখতে ব্যস্ত। 

পরিস্থিতি থমথমে, বাইরের আবহাওয়ার মতো গুমোট, শীতল। মোস্তফা সাহেবের বয়স হয়েছে। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। তারপরও ভদ্রলোক চিন্তিত মুখে কঠোরভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘন্টাখানেক ধরে। এই পর্যায়ে একমাত্র ছেলের নারাজি দেখে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বসেছেন। আনোয়ার সাহেব পায়চারি করছেন অস্থির ভঙ্গিতে। বারবার করে চাইছেন ওটির দিকটায়। সুমিতা বেগম এককোণে বসে আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছেন। সেই কান্নায় জবেদা বেগমের চোখ দুটোও ছলছল করছে। মুফতি বেগম সামলে নেবার চেষ্টা করছেন কান্নারত সুমিতা বেগমকে। ওহী সাহেবের ইশারায় আকাশ এযাত্রায়য় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তন্ময়ের পিছু। 

তন্ময় বসেনি— বসছেও না। আরাম করে বসার মতো বোধগম্যতাই বুঝি তার আর নেই। সে হাসপাতালে ঢুকেছে অবধি এখনো দু'পায়ের ওপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিষ্ঠুরভাবে কাঁপছে হাত জোড়া। তার এলোমেলো ঘন কালো চুলগুলো কপাল জুড়ে অবিন্যস্ত হয়ে পড়ে আছে। রক্তিম চোখজোড়ার দৃষ্টি নিবদ্ধ ওই বন্ধ ওটিতেই। আকাশ কাঁধে হাত রাখলেও তার হেলদোল হলো না। মস্তিষ্ক জুড়ে বারবার করে ডাক্তারের কথাগুলোই পুনরাবৃত্তি হয়ে চলেছে। 

‘ক্রিটিকাল সিচুয়েশন। একটি বাচ্চার পজিশন উলটো। সার্জারি বাধ্যতামূলক।’

সেই বাক্যের ওজন যেন অতিমাত্রায় বেশি। তন্ময় এই ওজন নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ভাঙছে, পুড়ছে তার ভেতরের সব। এইমুহূর্তেই অনেক কিছু নিয়ে তার ভয় হচ্ছে, ভীষণভাবে হচ্ছে। নিজ অজান্তেই সেই ভয় থেকে জন্ম নিচ্ছে অনুশোচনার। কোনোভাবেই এই বাজে, বিশ্রী চিন্তাভাবনা গুলো সরিয়ে ফেলা যাচ্ছে না। বারবার করে মনে হচ্ছে, অরুকে গভীর ভাবে নিজের খুব কাছে টেনে নেয়াটাই বোধহয় সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিলো তার। নাহলে কী আর এমন পরিস্থিতি দাঁড়াতো? অরুর জীবন, তার বাচ্চাদের জীবন আজ ঝুঁকিতে পড়তো? তার নিজেকেই যে দোষী লাগছে। নিজের ওপর এতটা ক্রোধ, এতটা অসহনীয় অনুভূতি এর আগে কখনো হয়নি। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া হৃৎপিণ্ডের ব্যথা সহ্য করা যেন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে রক্তিম হয়ে আসা চোখদুটো এবেলায় তন্ময় বুজে নেয়। চোয়াল শক্ত হয়। আকাশ ভড়কে যায় তন্ময়ের এরূপে। স্তব্ধ, মিহি স্বরে আওড়ায়,

 ‘শান্ত হো, ভাই! এভাবে ভেঙে পড়িস না। কিচ্ছু হবে না আমাদের অরুর, বাবুদের! একটু শক্ত হো।’

ছেলের অবস্থা বুঝে, মোস্তফা সাহেব উঠে এগিয়ে আসছেন এদিকেই। আকাশ পিছিয়ে যায় চাচ্চুকে দেখে। আশ্বস্ত করতে যান আনোয়ার সাহেবকে। মোস্তফা সাহেব এসে দাঁড়ান ছেলের পাশে। ডান হাতটা আলতোভাবে রাখেন চওড়া কাঁধে। তন্ময় চোখ খোলে ঠিকই তবে রক্তিম চোখদুটো আড়াল করতে মাথা নত করেই রাখে। ছেলের মুখ স্বচক্ষে না দেখেও যেন দেখে নিয়েছেন মোস্তফা সাহেব। ছেলের কাধ চাপড়ে দিয়ে আহ্লাদী ভঙ্গিমায় বলেন,

‘এখুনি এমন ভেঙে পড়লে হবে, বাবা? এখনো তো স্ত্রী, দুই দুটো সন্তানকে সামলানোর বাকি তোমার।’

সারামাসের ভয়, আতঙ্কের এক তাণ্ডব যেন ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছে। তন্ময় আশ্চর্যজনক ভাবে ডুকরে ওঠে। ঠোঁটে ঠোঁট শক্ত করে টিপে উগলে আসা কান্না দমিয়ে রাখে। চোখ তুলে চায় বাবার চোখে। মুহূর্তেই বাম চোখ দিয়ে এক ফোঁটা অশ্রুজল গাল বেয়ে গড়াতেই সে আওড়ায়,

‘আমিওতো তাই চাই, বাবা।’

মোস্তফা সাহেবের চোখজোড়াও ছলছল করে ওঠে। ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ছেলের বাম গালের চোখের জলটুকু মুছে দেন। আহত গলায় বলেন,

‘যা চাও, তাই হবে, ইনশাআল্লাহ্।’

তন্ময় সময় নিয়ে বাবার সাথে বিরবির করে, 

‘ইনশাআল্লাহ্।’

আনোয়ার সাহেবও এসে দাঁড়িয়েছেন বড়ো ভাই, ভাইপোর পাশে। তিনজনই চেয়ে আছেন ওটির দিকে। লাল বাতিটা জ্বলে যাচ্ছে। সেটি নেভার যেন নামমাত্র নেই। তা নেভার অপেক্ষাতেই আছে সবাই। তখুনি জ্বলতে থাকা লাল বাতিটা নিভে যায়। পরপরই দরজাটা হুট করে খুলে ভেতর থেকে। মোস্তফা সাহেব, আনোয়ার সাহেব দ্রুত বেগে এগুলেও, তন্ময়ের পা-দুটো যেন ফ্লোরের সাথে চুম্বকের মতো আটকে আছে। নাড়ানো যাচ্ছে না। পুরো তার সত্তা স্তব্ধ, বিমূঢ়। ভয়ে আঁটসাঁট হয় ভেতরটা। সামলানো সম্ভব হচ্ছে ভীত, তটস্থ হৃদয়কে। তার পৃথিবী যেন ধ্বসে পড়বে একমুহূর্তেই। সেমুহূর্তেই দুটো সাদা ইউনিফর্ম পরিহিত নার্সদের বেরুতে দেখা গেল। দু'জনের কোলেতেই শুভ্র রঙের তোয়ালেতে প্যাঁচানো শিশু। তন্ময় ভেজা চোখে দেখে সেই শিশু দুটোকে। এযাত্রায় পাজোড়াও চালাল দ্রুত বেগে। শ্বাসপ্রশ্বাস অস্বাভাবিক হওয়া স্বত্তেও দ্রুত পায়ে ওটির ভেতরে যেতে চাইল। ডাক্তার ঠিক সেসময় বেরিয়ে আসলে মুখোমুখি হয়ে পড়ে। তন্ময়ের চোখমুখ দেখে ভদ্রমহিলা বিনয়ের সাথে হেসে বললেন,

‘শান্ত হোন, মিস্টার। আপনার স্ত্রী এবং বাচ্চারা আলহামদুলিল্লাহ্ সুস্থ আছেন। এখনো চেতনা ফেরেনি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চেতনা ফিরবে বলে আমরা আশাবাদী। চেতনা এলেই আপনি দেখা করতে পারবেন আপনার স্ত্রীর সাথে।’

নার্স দু’জনকে ঘিরে ধরেছে শাহজাহান বাড়ির সব সদস্য। নার্স একজন মিহি স্বরে জিজ্ঞেস করে, 

‘বাচ্চাদের বাবা কে?’

মোস্তফা সাহেব টলমলে চোখে ছেলের দিক চাইলেন। তন্ময়ের হাত কাঁপে, কাঁপে কণ্ঠস্বর। কোনোরকমে অস্পষ্ট গলায় প্রত্যুত্তরে বলে,

‘আমি।’

নার্স দু'জন সর্বপ্রথম সন্তানদের পিতা অর্থাৎ তন্ময়ের দিকে বাচ্চা একটি এগিয়ে ধরে কোলে নেবার জন্য। তন্ময় বিষ্ময় নিয়ে চেয়ে আছে পুতুলের মতো চোখ বুজে থাকা বাচ্চার মুখে। তার সন্তান, তার আর অরুর সন্তান, তাদের সন্তান। এই অনুভূতি একমুহূর্তেই নির্বিকার ভাবে অনুভব করার মতন নয়। রীতিমতো তার হৃৎপিণ্ড লাফাচ্ছে, সর্বাঙ্গ উত্তেজনায় কাঁপছে। চোখ দুটো জলে থৈথৈ করছে। আনোয়ার সাহেব কান্নার সাথে হাসছেনও। তন্ময়ের দিকে চেয়ে উচ্চ কণ্ঠে বলেন,

‘দ্রুত কোলে না নিলে কিন্তু আমি নিয়ে নেব।’

তন্ময়ের টনক নড়ে। সে দ্রুত দু'হাত বাড়ায় বাচ্চাদের মতো। হেসে নার্স একজন প্রথম বাচ্চাটি তন্ময়ের কোলে তুলে দেয়। এতো ছোটো, এতো আদুরে প্রাণটি কম্পিত হাতে কোলে নিতেই তন্ময় ভেঙে গুড়িয়ে যায়। দু'চোখ বেয়েই ঝরে কয়েক ফোঁটা অশ্রুজল। নরমভাবে আগলে নেয় বুকের মধ্যে। ডান হাতে ছুঁয়ে দেয় ছোট্ট হাত দুটো। আলতোভাবে মাথা ঝুঁকিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ায় লাল, বোঁচা নাকে। অস্পষ্ট গলায় আওড়ায়,

‘বাবা, আমার বাবা।’

আনোয়ার সাহেব ছুটে কাছে গেলেন এবেলায়। তাড়া দিয়ে বলেন,

‘দে, এবার আমাকে দে তন্ময়।’

তন্ময় অনিচ্ছুক হওয়া স্বত্তেও সচেতনতার সাথে আনোয়ার সাহেবের কোলে তুলে দেয়। আনোয়ার সাহেব কোলে নিয়েই ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে ওঠেন। তার পাশে মোস্তফা সাহেবও কোলে নিতে ব্যাকুল। নার্সের বাড়িয়ে দেয়া দ্বিতীয় বাচ্চাটি এবারে তন্ময় দু’হাতে আলতোভাবে কোলে নেয়। এইজন চেয়ে আছে ছোটো ছোটো চোখে। ছোটো হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। নড়চড় করছে। অস্পষ্ট গলা কাঁদতেও চাচ্ছে। নার্সটি হেসে বলেন,

‘এটিই আপনার ছেলে, স্যার। ছোটোজন, এইজনই উল্টে ছিলো। খুব দুষ্টু, চঞ্চল হবে। একবারও চোখ বোজেনি। আপনার মেয়েটা সে তুলনায় খুব শান্ত। একটুও কান্নাকাটি করেনি। চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে এখন পর্যন্ত।’

নার্সের কথাগুলো শুনতে শুনতে, সন্তানকে বুকের মধ্যে আগলে নিয়ে তন্ময় নির্নিমেষ বাচ্চা, বাচ্চা মুখপানে চেয়ে মুগ্ধ হয়, বাকরুদ্ধ হয়। চঞ্চল মুষ্টিবদ্ধ হাতটা তুলে ঠোঁটের সামনে ধরে ঠোঁট ছোঁয়ায়। ডাকে, 

‘ফায়াজ! আমার আব্বাজান!’
.
.
.
চলবে.....................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp