অমানিশার চাদরে মোড়ানো প্রকৃতি। রাতের সুনসান নীরবতা ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে স্নিগ্ধ প্রকৃতির উজ্জ্বলতা। নিজেকে বাঁচাতে গহীন অরণ্যের মধ্য দিয়ে দিক বেদিক ভুলে ছুটে চলেছে এক তরুণী। বয়স পঁচিশের কাছাকাছি হয়তো। পিছু ছুটেছে মনুষ্যত্ব বিলিয়ে দেওয়া একদল পশু। দুই পাশে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ বিটপী। তরুর শাখা প্রশাখায় বাসা বাঁধা পেঁচা গুলো নিজস্ব সুরে ডেকে চলেছে। ভয়ঙ্কর শোনায় সেই ডাক। গা ছমছম পরিবেশ।
তরুণীর পায়ের স্লিপার দুটো অনেক আগেই ছিঁড়ে গেছে। দৌড়ে ব্যাঘাত ঘটায় ফেলে রেখে এসেছে অরণ্যের মাঝে। যার ফলস্বরূপ পা জোড়া কাঁটাবিদ্ধ হয়ে ছিঁড়ে ছুঁড়ে রক্তাক্ত হয়ে গেছে। তবুও থামে না। জানোয়ার গুলোর হাতে কখনোই নিজেকে সঁপে দিতে পারে না। নিজ হাতে নিজের সতীত্ব শেষ করতে পারে না এভাবে। যতক্ষণ শক্তি আছে ততক্ষণ লড়বে। নিজেকে বাঁচাতে হবে। নিজের সতিত্ব শেষ হয়ে গেলে বেঁচে থাকতে পারবে না তরুণী। নারীর জীবনে এর ঊর্ধ্বে যে আর কিছুই নেই। আজ কোনো অঘটন ঘটে গেলে এই মুখ নিয়ে আর কখনোই বাবার সামনে দাঁড়াতে পারবে না। তরুণীর কান্না বাড়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে এক ঝলক পিছু ফিরে চায়। অন্ধকারের মাঝে কিচ্ছুটি দেখার উপায় নেই। তবে খুব নিকট থেকে কয়েকজোড়া পদযুগলের শব্দ ভেসে আসছে। শুকনো পাতাগুলো মড়মড় শব্দ তুলে তাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়। কাঁদতে কাঁদতেই পায়ের জোর বাড়ায়। তবে খুব একটা বেশি সক্ষম হয় না। শরীর নেতিয়ে এসেছে। তবুও নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দৌড় দেয়। মনে প্রাণে আল্লাহকে ডেকে চলেছে। কিছু একটা মিরাকেল হোক। তরুণী এই জানোয়ারগুলোর হাত থেকে মুক্তি পাক।
•••••••••••••
ফ্রান্সের রাজধানী শহর প্যারিস। শহরটি উত্তর ফ্রান্সে ইল-দ্য-ফ্রঁস অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র সেন নদীর তীরে অবস্থিত। প্রশাসনিক সীমানা ছাড়িয়ে প্যারিসকে কেন্দ্র করে অবিচ্ছিন্নভাবে একটা সু-বৃহৎ নগর এলকা গড়ে উঠেছে যা, প্যারিস 'নগর এলাকা' হিসেবে পরিচিত। এই নগর এলাকা ও তার আশেপাশের প্যারিস কেন্দ্রিক উপ শহরগুলি মিলে প্যারিস এয়ার উ্যর্বেন বা প্যারিস মেট্রোপলিটান এলাকা গঠন করেছে। ইউরোপের এ জাতীয় মেট্রোপলিটান এলাকা গুলির মধ্যে প্যারিস অন্যতম বৃহৎ একটি এলাকা।
প্যারিসের জঙ্গলের পাশ ঘেঁষে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে সাপের মতো পেঁচিয়ে ধেয়ে চলেছে বারোটা মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি। প্রথম গাড়িটা ব্ল্যাক রঙের, দ্বিতীয় গাড়িটা গাঢ় ধূসর রঙের এবং বাকি দশটা সাদা রঙের। রাতের রাস্তা একদম জনমানবহীন। প্রথমে অবস্থান করা গাড়িটা স্প্রিড আরও দ্বিগুন বাড়াতে নিবে অমনিই একটা মানব ছায়া কোথায় থেকে তড়িৎ বেগে ছুটে এসে গাড়ির সম্মুখে দৃশ্যমান হয়। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে থাকা বাম হাতটা দ্রুত হ্যাণ্ড ব্রেক ধরে। কিন্তু আফসোস ব্রেক কষার আগেই যা ঘটার ঘটে যায়। পাতলা শরীরটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে যেয়ে দূরে পড়ে। কয়েক সেকেণ্ডের ব্যাবধানে কী ঘটে গেল সেটা মস্তিষ্ক উপলব্ধি করতেই ড্রাইভিংয়ে থাকা রায়ানের মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে হয়ে আসলো। অন্তরাত্মার পানি শুকিয়ে গেল। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে গাড়ির ভিতরে থাকা মিররের দিকে তাকাল,
"স্যার অ্যাক্সিডেন্টলি গাড়ির সাথে বোধহয় কোনো মেয়ের ধাক্কা লেগে গেছে।"
গাড়ির ব্যাক সিটে আরামে রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে আছে এক তাগড়া জোয়ান যুবক। সান গ্লাসের আড়ালে থাকা হ্যাজেল রঙের মণিজোড়া নির্লিপ্ত। হাতের আঙ্গুলের ইশারায় গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলল রায়ানকে। ও মাথা নেড়ে দ্রুত নেমে দাঁড়াল। ততক্ষণে পিছনের সব কয়টা গাড়ি থেমেছে। গাড়ির ভেতরে থাকা যুবক কয়েক সেকেণ্ডের জন্য চোখ জোড়া বন্ধ করল। অমনিই অধর পল্লবে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। ব্ল্যাক শার্টের উপরে থাকা ব্ল্যাক স্যুট টা খুলে অবহেলায় সিটে ফেলে রেখে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। অমনিই প্রকৃতির সর্বকোণে এক অদ্ভুত শক্তিশালী কালো ছায়া ছড়িয়ে পড়ল। তারা চারপাশের প্রকৃতির জুড়ে ঘূর্ণির মতো ঘুরতে লাগল, নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করল। ওকে নেমে দাঁড়াতে দেখে পেছনের গাড়িগুলো থেকে ভেসে আসা গুঞ্জন তৎক্ষণাৎ থেমে গেল। কেউ আর গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ানোর সাহস পেলো না। দ্বিতীয় গাড়ি থেকে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ গাড়ির জানালা গলিয়ে মাথা বের করে প্রশ্ন ছুঁড়লেন, "
"ইজ এভ্রিথিং ওকে প্রিন্স?" জবাব স্বরুপ কেবল ঘাড়টা কটমট শব্দ তুলে ডানপাশে কিঞ্চিত কাত হলো। ভদ্রলোক নিজের প্রশ্নের উত্তর পেতেই মুচকি হেসে পুনরায় মাথাটা গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। রায়ান চিল্লাল,
"স্যার, এটা সত্যিই একজন মেয়ে। বয়স খুব বেশি না। বিশের আশেপাশে হবে হয়ত। অনেকখানি আঘাত পেয়েছে। তবে শ্বাস চলছে। দ্রুত হসপিটালে নেওয়ার প্রয়োজন।"
এতক্ষণে যুবকের ওষ্ঠজোড়া নড়ল। গভীর রাতের নিস্তব্ধতা গলিয়ে ভেসে এলো শান্ত অথচ গম্ভীর নিরেট গলার স্বর, "নো নিড টু বি হসপিটালাইসড। পুট হার ইন দ্য কার অ্যাণ্ড কল রিদাহ। শী উইল হ্যাণ্ডেল ইট।"
কথা শেষ করেই তরুণীর দিকে চাইল। মুখের উপরাংশ চুলে আবৃত থাকায় নারীমুখ দেখার সুযোগ মিলল না। তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো যুবক। রায়ান তরুণীকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। গাড়ির দিকে ছুটল। ততক্ষণে তরুণীর পিছু ছুটে আসা পোলাপান গুলা ওখানে পৌঁছেছে। দলবল নিয়ে দৌড়ে এসে বাধ সাধল। তরুণীকে নিয়ে যেতে দিবে না তারা। পিছনের গাড়ি গুলো তারা খেয়াল করেনি। প্রথম গাড়ি ব্যতীত সবগুলো গাড়ির হেডলাইট বন্ধ। নিগূঢ় আঁধারের বুকে হারানো প্রকৃতির মাঝে খেয়াল না হওয়াটাই স্বাভাবিক। যুবকের ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল। এক চ্যাংরা পোলা রায়ানের দিকে আদেশ ছুঁড়ল, "ওই মেয়েকে আমাদের হাতে তুলে দে। নাহলে কিন্তু প্রাণে বাঁচবি না। নিজের প্রাণের মায়া নিশ্চয় আছে?"
রায়ান মুচকি হেসে স্যারের দিকে তাকাল। যুবকের অধর পল্লব বাম পাশে কিঞ্চিত উঁচু হলো। বাঁকা হাসল, "ওহ রিয়েলি?"
সব কয়টা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে যুবকের দিকে দৃষ্টিপাত করল। এই সুযোগে রায়ান দৌড়ে গাড়ির দিকে চলে গেল। গাড়িতে মেয়েটাকে রেখে পরপর'ই চতুর্থ নম্বর গাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটল। রিদাহ ম্যামকে ডাকতে হবে। উনি হয়ত কিছু সময়ের ব্যাবধানেই এই মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন।
একজন পোলা ছুটে গেল যুবকের দিকে। জঘন্য ভাষায় গালি ছুঁড়ল, "শু য়ো র তোরে....." মুখের কথা শেষ করতে পারল না। সম্মুখে দুটো জ্বলন্ত নেত্র যুগল ভেসে উঠতেই কণ্ঠনালী বেয়ে আসা কথাগুলো গলায় আটকে গেল। শুকনো ঢোক গিলল। শিরদাঁড়া বেয়ে এক খণ্ড বরফ কুচি নেমে গেল। এতদিন যেইসব ঘটনা মুভিতে দেখে এসেছে আজ সেইসব যেন নিজেদের চোখের সামনে ঘটছে। ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না এই ঘটনা। দলের বাকিদের একই অবস্থা। থরথরিয়ে কাঁপছে শরীর। তন্মধ্যে একজন কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুধাল, "কে আপনি?"
"তোদের মৃত্যু।"
কেউ আর কিছু বলতে পারল না। ভয়ঙ্কর গর্জন কর্ণগোচর হতেই পেছন ফিরে তাকাল। আরও দুই জোড়া জলন্ত দৃষ্টির সাক্ষী হলো। জীবন বাঁচাতে ওদের পাশ কাটিয়ে ছুটে পালাল। উপস্থিত তিন জন সেদিকে একপলক চাইল। রিদাহ মুচকি হাসল, "ভাইয়া এই মেয়েকে এখানে রেখে যাবি?"
"এই জায়গা একজন মেয়ের জন্য সেইফ না।" পরপরই রিদাহ এর পাশে দাঁড়ানো রায়ানের উদ্দেশ্য বলল, "আমার প্যালেসে নিয়ে যাও। আমি আসছি।" রায়ান বাধ্যের মতো মাথা নাড়ল। যুবকের হাতে থাকা সানগ্লাসটা পুনরায় হ্যাজেল মণির আঁখি জোড়া আড়াল করে নিলো।
পোলাপান গুলো প্রাণ হাতে ছুটে চলেছে। যতই দৌড়াচ্ছে রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ঘুরে ফিরে সেই একই জায়গায় ফিরে আসছে। কোনো এক গোলাক ধাঁধায় আটকে গেছে। অকস্মাৎ একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল ওদের উপর দিয়ে। পরক্ষণেই নিজেদের সামনে অতিপরিচিত একটা মুখ দেখতেই চলন্ত পদ যুগল থেমে গেল সকলের। ভয়ে অন্তআত্মা কেঁপে উঠলো। হিংস্র গর্জনে কাপ ধরল প্রকৃতিতে। করুণ আর্তনাদে মুখরিত হলো পরিবেশ। লোমহর্ষক মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে রইল রাস্তায় ধার ঘেঁষে অযত্নে বেড়ে ওঠা সুউচ্চ গাছগুলো। তারা যেন ভয়ে ডালপালার নড়াচড়া বন্ধ করে স্থির হয়ে রইল। পরিবেশ জুড়ে তাজা র ক্তে র বিভৎস গন্ধ ছড়াল। প্রাণভরে শ্বাস নিলো যুবক। তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল ওষ্ঠপুটে। হায়রে নিরীহ মানবজাতি!
••••••••••••
পূর্ব আকাশে আলোর রেখা ফুটে উঠেছে। ধরনীর বুকে নতুন আরও একটা দিনের সূচনা ঘটেছে। সকালের সতেজ হাওয়া বয়ে চলেছে মৃদুমন্দ গতিতে। প্যালেসের দক্ষিণ পাশের দোতলার একটা রুমে গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন তরুণী। ঠাণ্ডা ঝিরিঝিরি পবন শীর্ণ কায়া ছুঁয়ে দিতেই বার কয়েক কেঁপে উঠল। পাশ হাতড়িয়ে কম্ফোর্টার খুঁজল কিন্তু পেলো না। অমনিই ঠাণ্ডায় ঘুমের রেশ ধিরে ধিরে হালকা হয়ে এলো।
সময় নিয়ে পিটপিট করে আঁখি জোড়া মেলে তাকাল। শরীর ভীষণ ব্যথা, মাথাটা ভার হয়ে আছে। মাথাটা ধরেই কোনোমতে উঠে বসল। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে ঘর জুড়ে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলল। মুহূর্তেই ভড়কাল। ও কোথায় আছে? আর এখানেই বা কীভাবে এলো? এই বাড়ি দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো রাজপ্রাসাদ। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে নাকি? নিজের ভ্রম ভেবে হাতে চিমটি কাটল। ব্যথা অনুভূত হলো। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। তার মানে এটা সত্য। কোনো জল্পনা কল্পনা নয়? কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভাবল। একে একে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া রাতের সবটা মনে পড়ল। নিজেকে বাঁচাতে দৌড়ে পালাচ্ছিল, তারপর রাস্তায় একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছিল। তারপর? তারপর আর কিছুই মনে নেই ওর। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। নিজের ক্ষতের কথা ভুলতে বসল। হন্তদন্ত পায়ে দরজার দিকে ছুটল। কয়েক বার ধাক্কা দিতেই দরজাটা নিজে থেকেই খুলে গেল। বাইরে বেরোতেই তরুণীর লোচনদ্বয় বড়ো বড়ো হয়ে এলো। তা অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। এ যেন রুপকথার এক জগৎ। ডিজনি ওয়ার্ল্ডের থেকে কোনো অংশে কম নয়। ওভাবেই অবিশ্বাস্য, বিস্মিত আঁখি যুগল নিয়ে সবকিছু দেখতে থাকল। এক সময় সিঁড়ির নিকট পৌঁছাল। রাজকীয় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই থমকাল, চমকাল। চোখ দুটো আরও বৃহদাকার ধারণ করল।
চোখের সামনে ভয়ঙ্কর এক দৃশ্য দেখল। সতেরো কিংবা আঠারো বছরের একজন নিরীহ পাতলা করে ছেলে নিজের প্রাণ ভিক্ষা চাইছে। রিতিমত সামনে উপস্থিত একজনের পা ধরে কাঁদছে ছেলেটা। অথচ সামনে দাঁড়ানো মানুষটার একটুও মায়া হলো না। তার অবশ্য মুখ দেখা যাচ্ছে না। পিছন সাইড দৃশ্যমান। চোখের পলকে অপরিচিত ওই মানুষটা একটা নাইফের সাহায্যে ছেলেটার গলা বরাবর একটা রেখা এঁকে দিলো। দুই আঙ্গুলের সাহায্যে চোয়ালে চাপ প্রয়োগ করে মুখগহ্বরের ভেতরে রিভলবার নিয়ে পরপর তিনটা শুট করল। প্রাণহীন শরীরটা ফ্লোরে ঢলে পড়ল। মুখ দিয়ে গলাগলিয়ে র ক্ত উঠে এলো। মাথাটা দেহ থেকে আলাদা হয়ে অবলীলায় পড়ে রইল। কেমন যেন এক নিমিষেই সবটা ঘটে গেল। এমন মর্মান্তিক মৃ ত্যু র সাক্ষী হতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল তরুণীর। শেষ বারের মতো শুনতে পেলো কোনো এক যুবকের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসা একটাই নাম,
"ডুবইস রৌহিশ রৌনক....."
তারপর ধরিত্রীর বুকে ক্রমশ অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল জীর্ণ দেহখানা। কিছু পড়ে যাওয়ার উচ্চ শব্দ শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাতেই তিয়াশের মুখের কথা আটকে গেল। শেষ করতে পারল না। সবাই পিছু ফিরে চাইল। চক্ষুগোচর হলো এক নারীর অস্তিত্ব। এই প্যালেসে নারী? তাও যুবতী? সবাই বিষ্ফারিত দৃষ্টিতে একবার রৌহিশের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার ওই মেয়ের দিকে। তরুণীর মুখটা সুদীর্ঘ কেশের নিচে ঢাকা পড়ে আছে। চাইলেও আনন দেখার উপায় নেই। এইসময় এমন ঘটনায় রৌহিশ ভীষণ ক্ষিপ্ত হলো। শাণিত চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। মুখমণ্ডল জুড়ে হিংস্রতার রেশ ছড়াল। না চাইতেও কেন যে এইসব আপদ ওর ঘাড়েই এসে পড়ে। হাতজোড়া মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় বিড়বিড় করে আওড়াল, "ফা ক দ্য....." কী যেন ভেবে মুখের কথা শেষ করল না। নিজেকে সামলিয়ে নিলো। পরক্ষণেই রায়ানকে ইশারা করল।
স্যারের ইশারায় রায়ান ছুটে গেল সেদিকে। একটু নেড়ে চেড়ে দেখতেই বুঝল জ্ঞান হারিয়েছে এই মেয়ে। পুনরায় পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে দোতলার উদ্দেশ্যে ছুটল। এই মেয়ের কপালে নির্ঘাত শনি ঘুরছে। দ্রুত এই প্যালেস থেকে বিতাড়িত করতে হবে।
·
·
·
চলবে.....................................................................