অপরাহ্নের নিষিদ্ধ অনুভূতি - পর্ব ০৩ - ইসরাত তন্বী - ধারাবাহিক গল্প


নব দিনের সূচনা। ঘড়ির কাঁটার দখলদারিত্ব আটটার ঘরে। শেখ পরিবারের সকলে ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত শুধু তন্ময়ী ব্যতীত। আরাধ্যা শেখ ছোট্ট তন্ময়কে খাইয়ে দিচ্ছেন। শেখ সাদমান ও সকালের নাস্তা করছেন। খাওয়া শেষ করেই হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। আজ নয়টায় ওনার একটা ওটি আছে। 

ওনাদের খাওয়ার মাঝামাঝি পর্যায়ে তন্ময়ীকে ঘর থেকে বেরোতে দেখা গেল। শরীরে জড়ানো ব্ল্যাক লেডিস প্যান্ট এবং হোয়াইট শার্ট। কাঁধে ব্যাগ, মুখে সবসময়ের মতো মাস্ক লাগানো এবং বাম হাতে ওয়াচ পরা যেটা ও লাস্ট বার্থডেতে বাবার থেকে গিফট পেয়েছে। হাঁটুর একটু নিচে নেমে যাওয়া দীর্ঘ কেশ উঁচু করে হেয়ার ব্যাণ্ড দিয়ে বাঁধা। ড্রেস আপেই বলে দিচ্ছে একেবারে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরোচ্ছে ও। মেয়েকে দেখতেই মুচকি হাসলেন শেখ সাদমান, "গুড মর্নিং আম্মা।"

"গুড মর্নিং বাবা।" ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে প্রত্যুত্তর করেই একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল তন্ময়ী। আরাধ্যা শেখ কোনো কথা ছাড়াই নাস্তা এগিয়ে দিলেন। তন্ময়ী বিষয়টা ততটা খেয়াল না করলেও ওর বাবা ঠিক খেয়াল করল। গতকাল রাত থেকেই চুপচাপ হয়ে আছেন আরাধ্যা শেখ। প্রয়োজন ছাড়া একটা শব্দ ও উচ্চারণ করছেন না। উনি কিছুক্ষণ একদৃষ্টে প্রিয়তমা স্ত্রীর দিকে চেয়ে রইলেন। সহজেই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেললেন। ভালোবাসার মানুষটাকে বোঝা কী আর এমন কঠিন কাজ! নিশ্চয় গতরাতের ঘটনায় বাবা, মেয়ের উপর অভিমান করে আছেন? বাসায় ফিরেই ঠিক অভিমান ভাঙিয়ে নিবেন। তন্ময়ীর উদ্দেশ্যে বললেন, "পড়াশোনার কী অবস্থা আম্মা?"

"চলছে বাবা।" মাস্ক গলায় নামিয়ে কফিতে এক সিপ দিয়ে জবাব দিলো তন্ময়ী। মেয়ের উদাসীনতায় অমনিই খেপে গেলেন আরাধ্যা শেখ। খ্যাক খ্যাক করে উঠলেন, "নিজের ভবিষ্যৎ জলে ভাসিয়ে এভাবেই থাকো তুমি। ওইসব ফালতু জিনিস নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার করে কী পাবে? তুমি কি অতীত ভুলে গেছ তনু? তোমার বাবা, মায়ের সেই দুর্বিষহ দিন এতো সহজেই ভুলে গেলে?"

"দ্য ফিউচার আর'ন্ট সামথিং উই ওয়েট ফর। ইটস্ সামথিং উই ক্রিয়েট মা।" 

মেয়ের শক্ত কথার তোপে পড়ে মুহূর্তেই যেন একটু দমলেন আরাধ্যা শেখ। কথাটা একদম ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আমরা মানুষ, আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম। এই হচ্ছে এক সমস্যা। মেয়ে হয়েছে বাবার মতো যুক্তিবাদী। তাই তো ওনাদের সাথে সহজে পেরে ওঠেন না। শেখ সাদমান মেয়ের কথায় হাসলেন, " ইয়েস আম্মু। ইউ আর হান্ড্রেড পার্সেন্ট রাইট। স্টপ কম্পেয়ারিং ইউর জার্নি টু আদারস। গ্রথ ইজ পার্সোনাল। টেক ইউর টাইম। ফিল এভ্রি মোমেন্ট। আ'ম অলওয়েজ হেয়ার ফর ইউ।"

তন্ময়ীর খাওয়া শেষ ততক্ষণে। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। বাবার কপালে চুমু বসিয়ে দিলো, "টেক লাভ বাবা।" পরপরই ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকা মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। দুই গালে টপাটপ চুমু খেল। আরাধ্যা শেখ মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন। তবে প্রকাশ করলেন না। এতে ওনার বাদড় মেয়ে মাথায় উঠে নাচবে। তন্ময়ী সামনে অগ্রসর হতে নিলেই ছোট্ট তন্ময় চিল্লাল, "আপুউউউ তুমি আমায় চুমু দিলে না? তোমার সাথে আড়ি।"

পিছু ফিরে চাইল তন্ময়ী। ইশশ! তাড়াহুড়োতে এটা ভুলে গেছে। বিচ্ছু মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে। দৌড়ে এসে পুঁচকুর দুই গালে গুনে গুনে চারটা চুমু দিয়ে দরজার দিকে ছুটল। এমনিতেই অনেক লেইট হয়ে গেছে। পিছন থেকে শোনা গেল তন্ময়ীর চঞ্চলতা মিশ্রিত কণ্ঠস্বর, "আসার সময় তোর ফেভারিট চকলেট নিয়ে আসব বিচ্ছু। আড়ি ভেঙে দিস কেমন?" চকলেটের কথা শুনতেই তন্ময়ের চোখে মুখ খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠল। চেয়ার থেকে নেমে দৌড়ে গেল দরজার দিকে। ঘরের সামনে রেলিং ধরে দাঁড়াল, "আপু আড়ি কাট্টা।" 

তন্ময়ী হেলমেট বাঁধা অবস্থায় দোতলার দিকে দৃষ্টিপাত করল। মুচকি হেসে মাথা নাড়াল। হাতের ইশারায় বাই জানাল। পরক্ষণেই বাইক স্টার্ট দিয়ে ধুলোবালিছাই উড়িয়ে ছুটে চলল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

•••••••••••••

সুবিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। শুভ্র রঙা প্রলেপ লেপ্টে আছে সবটা জুড়ে। গাছ গাছালির মেল বন্ধনে তৈরি বাগান চারপাশ থেকে বাড়িটাকে ঘিরে রেখেছে। মধ্যজামিনী হলেই শোনা যায় নাম না জানা পক্ষীদের কলরব এবং সুপ্রভাতেও ভেসে আসে ওদের মিষ্টি গুঞ্জন। এছাড়াও সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, গোধূলি লগ্ন উপভোগের দারুণ একটা পরিবেশ। সবমিলিয়ে প্রকৃতির নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের বাহার। 

পূর্ব দিকের একদম শেষ কক্ষে তন্দ্রাচ্ছন্ন রৌহিশ। গতরাতে রিদাহ এর কল কাটার পরে মাম্মা, পাপার ফোনকল পেয়েছিল। ওনাদের আবদার রক্ষার্থেই মধ্যরাতে এই বাসাতে এসেছে। ঠাণ্ডা ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে চলেছে জানালার গ্লাস ঘেঁষে। সাথে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ তো আছেই। বদ্ধ ঘরে এসির ঠাণ্ডা হাওয়াতেও শুধুই কোমর অবধি একটা কম্ফোর্টার টেনে রাখা রৌহিশের। ফর্সা উন্মুক্ত পিঠ দৃশ্যমান। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ছেলেটা। 

হঠাৎ দরজা নকের জোড়াল শব্দে গভীর নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটল। ধীরে ধীরে সেই শব্দের বেগ ক্রমশ বাড়তেই কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই ঘুমের রেশ কেটে গেল ছেলেটার। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় চোখজোড়া রক্তিম হয়ে আছে। হ্যাজেল রঙের মণিজোড়া ঝাঁপসা দেখাচ্ছে। রৌহিশ সেভাবেই উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। পরনে শুধু একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। আলগোছে লক খুলতেই মাম্মার হাস্যোজ্জ্বল মুখটা চক্ষুগোচর হলো। মৃদু হাসল রৌহিশ। এক মুহূর্তেই গগনচুম্বী রাগ ধূলিসাৎ হয়ে গেল। দরজার ওপরপাশে থাকা মানুষটার কপাল ভালো বলতে হয়। এখানে মাম্মা না হয়ে অন্য কেউ হলে এতক্ষণে তার উপরে যাওয়ার টিকিট কাটা হয়ে যেত। অবশ্য মাম্মা, পাপা ব্যতীত এই দুঃসাহস কেউ করবে না। ছেলের মুখমণ্ডলের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন ডুবইস এলিয়ানা,

"প্রিন্স, ঘুম হয়নি ঠিকমতো? ডিস্টার্ব করলাম বাবা? আ'ম এক্সট্রেমলি সরি ফর দ্যাট।" 

"উঁহু, আ'ম ওকে মাম্মা।" 

ছেলের কথায় গলায় আটকে রাখা শ্বাস টুকু ফেললেন এলিয়ানা। এতক্ষণে বদনের সবটুকু মলিনতা কেটে হাসির রেশ ছড়াল সবটা জুড়ে, "তোমার ভার্সিটির সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। গতরাতে বলেছিলে আজ ভার্সিটিতে ফার্স্ট জয়েনিং তোমার। ইভেন সেই নিউজ শুনে রোজ এসেছে এখানে। অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।"

রোজ নামটা কর্ণগোচর হতেই রৌহিশের ভ্রু জোড়া অধিকতর কুঁচকে গেল। চোখ, মুখ কঠিন হয়ে উঠল। রাগের পারদ ক্রমশ বাড়ল। তবুও নিজেকে শান্ত রাখার সবটুকু প্রয়াস চালাল, "পা নেই?"

ছেলের কথা এলিয়ানা ঠিক বুঝতে পারলেন না। কপাল কুঁচকে শুধালেন, "বুঝলাম না বাবা?"

"আপনার রোজের পা নেই? একা ভার্সিটি যেতে পারে না সে? আফটার অল আ'ম হার টিচার। নূন্যতম রেসপেক্ট টুকু থাকা উচিত নয় কি? আমার গাড়িতে কারোর জায়গা হবে না মাম্মা।" 

"কিন্তু মেয়েটা অনেক্ষণ ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে তো বাবা। এমন কথা শুনলে কষ্ট পাবে।"

"গোল্লায় যাক। হু কেয়ারস?" 

শব্দ করে মায়ের মুখের উপরেই দরজা বন্ধ করে দিলো রৌহিশ। পর মুহূর্তেই ঘরের ভেতর থেকে তীব্র গর্জন সহ কাঁচ ভাঙার আওয়াজ ভেসে এলো। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এলিয়ানা। না এই ছেলেকে নিয়ে আর পারলেন না। এতো রাগ যদি একজন ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সের থেকে থাকে। তাহলে ভবিষ্যতে সুবিশাল রাজ্য সামলাবে কী করে? উনি আর ভাবতে পারলেন না কিছুই। সবকিছু কেমন যেন জটিল হয়ে উঠছে। শতবছর আগের সেই ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি না হয়ে বসে। তাহলে যে বড়ো অঘটন ঘটে যাবে। উল্টো ঘুরে সম্মুখে পা বাড়াতেই রোজের মলিন মুখটা চোখের পর্দায় ভেসে উঠল। উনি কোনোরকমে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো রিনরিনে গলার ম্লান আওয়াজ, "ইটস্ ওকে আন্টি। আমি একাই চলে যেতে পারব।" কথা শেষ করেই ওনাকে কিছু বলার সুযোগটুকু না দিয়েই পায়ে পায়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল মেয়েটা। বারকয়েক পিছু ডাকলেন এলিয়ানা। কিন্তু শুনলে তো!

•••••••••••••

আজ ভার্সিটি প্রাঙ্গণে পদ যুগল রাখতেই একটু অন্যরকম পরিবেশ অনুভব করল তন্ময়ী। নিজের ডিপার্টমেন্টের সামনে সচরাচর অন্য কোনো ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট, টিচারদের দেখা যায় না। অথচ আজ প্রায় সব ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট সহ টিচার উপস্থিত। সবার মধ্যে কিসের যেন আকুলতা, ব্যাকুলতা প্রস্ফুটিত হচ্ছে। প্রত্যেকের আননজুড়ে খুশির ঝিলিক ছড়িয়েছে। ভার্সিটির পরিবেশ রমরমা। সবাই যেন অধীর হয়ে কারোর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনে চলেছে। 

ডিপার্টমেন্টের সামনে পা রাখার জায়গা অবধি নেই। আশেপাশের সবকিছু নজরে রেখে ঠেলেঠুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই কোথা থেকে দৌড়ে আসলো মিরা। তন্ময়ী মুখ খোলার আগেই মেয়েটা হাঁপাতে হাঁপাতেই প্রাণোচ্ছল কণ্ঠে বলে উঠল, "তনু জানিস আজ ভার্সিটিতে কে আসছে?" 

মিরার কথায় বিষয়টা জানার আগ্রহ একটু বাড়ল তন্ময়ীর। জিজ্ঞাসা করল, "কে আসছে?"

"দ্য গ্রেটেস্ট বাইক রাইডার অব প্যারিস, ডুবইস রৌহিশ রৌনক। সন অব দ্য বিলিওনিয়ার ডুবইস আর্থার। আমাদের ডিপার্টমেন্টে লেকচারার পদে উনি যোগ দিচ্ছেন। আমার তো বিশ্বাস'ই হচ্ছে না ওনার মতো স্বনামধন্য একজন মানুষ সামান্য এই ভার্সিটিতে জব করবে। আল্লাহ! ওনাকে নিজের চোখে দেখার কতদিনের স্বপ্ন আমার। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। খুশিতে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে রে তনু।"

"তাহলে মরে যা। পৃথিবী থেকে একটা মাথামোটা কমবে।" 

কথাটা বলেই সামনে পা বাড়াল তন্ময়ী। এইসবে ওর কোনো ইন্টারেস্ট নেই। ভেবেছিল অন্যকিছু হবে হয়তো। মিরা চোখ দুটো ছোট ছোট চেয়ে রইল। গলা উঁচিয়ে শুধাল, "তুই স্যারকে দেখবি না? সংবর্ধনা জানাবি না? কোথায় যাচ্ছিস?"

"এতো দেখার কী আছে? নিশ্চয় আমাদের মতো একজন মানুষ'ই তিনি? ডিপার্টমেন্টের লেকচারার যখন আই মিন স্যার, তখন এমনিতেই দেখা হবে। এতো ড্রামা করার কিছু নেই। ক্লাসে যাচ্ছি গেলে আয়।" পদ যুগল না থামিয়েই কথাগুলো বলতে বলতেই সামনে অগ্রসর হচ্ছিল তন্ময়ী। অকস্মাৎ পরিচিত এক মেয়েলি কণ্ঠে পা জোড়া থেমে গেল,

"আর যদি মানুষ না হয় তাহলে?" তন্ময়ী ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু চাইল। ক্লারা দাঁড়িয়ে আছে। হাসল ও। 

"তবে নিশ্চয় কোনো রাক্ষস হবে? ঠিক না ক্লারা বেইবি?"

"হতেও পারে।" ক্লারা শব্দ করে হেসে ফেলল। ওর সাথে তাল মেলাল তন্ময়ী। মিরা মুখটা একটুখানি করে কেবল ওদের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর ক্রাশকে নিয়ে এভাবে হাসাহাসি করতে পারছে ওরা? বন্ধুকে কষ্ট দিতে একটুও খারাপ লাগছে না ওদের? মনটা ভার করে ওখান থেকে চলে যেতে নিলেই ক্লারা বলল, "কোথায় যাচ্ছিস জান?"

"তোরা কেউ কথা বলবি না আমার সাথে। তোরা পঁচা।" গেইটের ওদিক থেকে উচ্চ শব্দে চেঁচামেচি ভেসে আসতেই সেদিকে দৌড়াল মিরা। নিশ্চয় ওর ক্রাশ এসে গেছে। হতাশ হলো ক্লারা এবং তন্ময়ী। কপাল চাপড়ে নিজেদের ক্লাসে দিকে হাঁটা ধরল।

•••••••••••••

সুনশান, নিস্তব্ধতায় মোড়ানো করিডোরে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে তন্ময়ী এবং ক্লারা। ক্লারার জেদের কাছে একপ্রকার হার মেনে এখান থেকেই সকলের পাগলামী দেখছে দু'জনে। আর মিটিমিটি হাসছে। মানুষ পারেও বটে। আল্লাহর সৃষ্টি জীব সবাই সমান। সেখানে একজন মানুষকে নিয়ে এতো মাতামাতির কী আছে? আজব! তন্ময়ী বেশ বিরক্ত ও হলো। 

ভাবনার মাঝেই ব্ল্যাক রঙের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো একজন তাগড়া জোয়ান যুবক। সম্পূর্ণ ব্ল্যাক রঙে আচ্ছাদিত করেছে নিজেকে। ব্ল্যাক স্যুট, বুট এমনকি চোখে থাকা সানগ্লাসটাও। ভেইনি হ্যাণ্ডে জ্বলজ্বল করছে রোলেক্স ব্র্যাণ্ডের ঘড়ি। চুলগুলো জেল দিয়ে খাড়া করে রাখা। যাকে বলে একদম ফর্মাল গেট আপ।কিছু সময়ের জন্য তন্ময়ী থমকাল। অদূরে দাঁড়ানো মানুষটার পাতলা ঠোঁট দুটোর দিকে দৃষ্টি স্থির হতেই কেমন একটা অদ্ভুত অনুভুতি ছড়িয়ে পড়ল প্রতিটা শিরা উপশিরায়। পূর্বপরিচিত মনে হলো।মনে হচ্ছে এর আগেও খুব কাছে থেকে দেখেছে মানুষটাকে। কিন্তু না এমন কিছুই না। আজকেই প্রথমবারের মতো দেখছে। তাছাড়া ওরকম নামীদামী মানুষদের সাক্ষাৎ ও কীভাবে পাবে?তন্ময়ী নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হয়ে হনহনিয়ে ওখান থেকে সরে গেল। ক্লারা একটু অবাক হলো। পিছন থেকে ডাকল, "আবার কী হলো তোর?"

"কিছু না। পড়া বাকি আছে। শেষ করতে হবে।" ব্যস ক্লাসরুম থেকে আর কোনো কথা শোনা গেল না। সবটা আগের মতোই শান্ত, নীরব। কিছু একটা ভাবতেই ক্লারা না চাইতেও হেসে ফেলল। মাস্কের আড়ালে থাকা তন্ময়ীর বিরক্ত মিশ্রিত আননে ফুটে উঠেছিল সদ্য ফোটা একঝাঁক পুষ্পের সৌন্দর্য। বড়ো স্নিগ্ধ, পবিত্র রুপ। যার রেশ ছড়িয়েছিল দৃশ্যমান কালো কুচকুচে মণির লোচনদ্বয়ে। এই অতিসাধারণ টানা হরিণী নেত্র যুগল ও কারোর হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেওয়ার কারণ। সবার দৃষ্টির আড়ালেই হেসেছিল দুটো হিংস্র আঁখি। এ যেন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি!
.
.
.
চলবে......................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp