প্ল্যা লিস্টের ভীষণ পছন্দের গানের সুরের মতন পাল্টে গেল সময়ের তাল—কেটে গেল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস…বছরের পর বছর। মনে হয়, এইতো সেদিনই শাহজাহান বাড়ির সবগুলো মানুষ হাসপাতালের করিডোরের সামনেই অপেক্ষা করছিলেন জনম-জনম ধরে। বুকের ভেতরে ভীত স্রোত, শরীর জুড়ে উত্তেজনা। টালমাটাল পরিস্থিতিতে সবাই কেমন আতঙ্কে বাকরুদ্ধ হয়ে ছিলেন। তারপর.. তারপর একটি জাদু হয়, সেই জাদুর ছোঁয়ায় চমকায়, থমকায়.. আনন্দে দিশেহারা হয় প্রত্যেকটি মানুষ। এলাকা জুড়ে মিষ্টি বিতরণ হয়, বাড়িঘর মেরামত হয়, একেকজনের পরিবর্তন ঘটে সাগরের স্রোতের মতন। সম্পর্কের আলাদাই মোড় নেয় নতুনভাবে।
শাহজাহান বাড়িটাতেই যোগ হয় অন্যরকম আনন্দের। অন্যরকম সুখের। সেই সুখ দু-জন ছোট্টো ছোট্টো প্রাণকে ঘিরেই। প্রাণ দুটো যখন কাঁদতো, কেঁদে উঠতো যেন সবাই। যখন নতুন নতুন হাঁটতে শিখে পড়ে হাপুসনয়নে চেয়ে রইতো, ব্যথা পেতো যেন শাহজাহান বাড়ির সবাই।
বছর খানেক পাঁচের এক ভরা বর্ষার সময়। কিন্ডারগার্টেনের দোরগোড়ার পাশেই দারোয়ানের বসবার ছোটো টিনের ঘরটির চালে রিমমঝিম সুর তুলছে বৃষ্টির ভারী, মোটা ফোঁটা গুলো। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের সু-বিস্তৃত বুকের খুব নিচ দিয়ে একটি প্ল্যান যাচ্ছে শব্দ করে। সেই শব্দের সঙ্গে মিশেছে গাছেদের বৃষ্টিতে ভেজার শব্দ। শব্দের তালে কিন্ডারগার্টেনের চতুর্দিক মুখরিত। খোলা মাঠের পশ্চিমের ছাউনির নিচে নাদুসনুদুস ছোটো ছোটো বাচ্চাদের সারি। সারিবদ্ধ বাচ্চাদের মধ্যিখানে দাঁড়ানো ছোটোখাটো দুর্দান্ত চঞ্চল দেহটি ছটফট করছে রীতিমতো। সারিতে নড়চড় বিহীন দাঁড়াতে বড্ড অপারগ সে। স্বাস্থ্যসম্মত, ধবধবে ফরসা বর্ণের বাচ্চাটির গায়ে কালো হাফপ্যান্টের সাথে শর্ট হাতার সাদা শার্ট ইন করে পরা। গলায় কালো রঙের টাই ঝোলানো। দু'কাঁধে ব্যাগ। হাতে পানির বোতল। কী ভীষণ সুন্দর, মিষ্টি একটা মুখ! বিধাতা যেন বড়ো আদরে নিজ হাতে তৈরি করেছে। আপাতত ওই আদুরে বাচ্চা মুখটি কাঙ্ক্ষিত দৃষ্টিতে বারংবার প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই চাইছে অদূরের দুয়ারের দিকে। দারোয়ান কালো রঙের রেইনকোট পরে দাঁড়িয়ে আছেন ওদিকটাতেই। গাড়ি ঢুকতে সাহায্য করছেন। বাচ্চাদের পরিবার একেক করে এসে ছাতা মেলে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ বাচ্চাদের।
বাম হাতের লেটেস্ট স্পাইডার ম্যানের ঘড়িটিতে নজর বুলোয় অত্যন্ত চঞ্চল, বাউন্ডুলে ফায়াজ৷ সময়তো সে বুঝল না তারপরও নজর বুলিয়ে গেল নিজের মতন। একপর্যায়ে নার্সারির প্রধান শিক্ষিকাকে প্রশ্নও করল বিনয়ী তবে অধৈর্য গলায়,
‘ম্যাম, কয়টা বাজছে?’
নীলা বেগম ফায়াজের সুন্দর মুখটার গাম্ভীর্যতা দেখে হেসে ফেলেন। নিজের হাত ঘড়িতে দৃষ্টি বুলিয়ে মিহি স্বরে জানান,
‘পাঁচটা বাজতে এখনো নয় মিনিট বাকি। ফায়াজ, তোমাদের ফ্যামিলি কার এসেছে তো। যাচ্ছো না কেনো? কারো জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি?’
ফায়াজ বড়োদের মতো মাথা দোলায়। পুনরায় দুয়ারের দিকটায় তাকায় অশান্ত ভঙ্গিতে। চেনাপরিচিত গাড়িটির আগমনের আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল ও মাথা দুলিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে,
‘পাপার জন্য। পাপা আসবে।’
এ-কথায় নীলা বেগম ভারী আশ্চর্য হলেন। তিনি যতটুকু জানেন ফায়াজ-ফাইজার বাবা আপাতত দেশে নেই। ভদ্রমহিলার কপালের চামড়া গুটিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ভাঁজ পড়ে কয়েক। অত্যন্ত চিন্তিত গলায় শুধান,
‘মিষ্টার শাহজাহান তো সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। আমি ভুল জানতাম কী?’
ফায়াজ বিরক্ত হয়। এতো কথা ওর ভালো লাগছে না। প্রত্যুত্তর না করে চেয়েই থাকে অদূরে— দোরগোড়ায়। ফায়াজের ঠিক পেছনেই দাঁড়ানো ভাবুক চোখমুখের মেয়েটির সাথে, ওর চেহারার অতুলনীয় মিল রয়েছে। দু’জনের উচ্চতাও প্রায় একইরকম। সাদা শর্ট হাতার শার্টের ওপরে কালো রঙের হাতা কাটা হাঁটু সমান গোল ফ্রক পরিহিত মেয়ে বাচ্চাটির গলায় কালো রঙের টাই ঝুলোনো। কাঁধ সমান সিল্কি, কালো চুলগুলোতে দুটি ঝুঁটি বাঁধা। মসৃণ, ফরসা আদুরে মুখটা স্বভাবত গম্ভীর। বাবা বলেছেন, কখনোই বড়োদের অসম্মান করতে না। বড়োদের প্রশ্নের জবাব না দেয়া মানে একপ্রকার তাদের অসম্মান করা। এবং এটাকে অভদ্রতা বলে। তাই ছোটো ভাইয়ের হয়ে ফাইজা নিজেই জবাবে বলে,
‘পাপা আজ আমাদের পিক করবেন বলেছেন।’
নীলা বেগমের চিন্তা আরও বাড়ে। তিনি আকাশের দিকে চান। সেই সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। এমন আবহাওয়ায় ফ্লাইট স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ঠিক সময় মতো পৌঁছানো অসম্ভব প্রায়। তিনি কোমর বেঁকিয়ে —মাথাটা বাচ্চা দুটোর সমান নুইয়ে নরম গলায় বলেন,
‘মিষ্টার শাহজাহান সম্ভবত সময়মতো পৌঁছাতে পারবেন না। ওয়েদার খারাপ। ফ্লাইট ডিলে হবে।’
ফাইজার বাচ্চা বাচ্চা আদুরে কণ্ঠে দৃঢ়তার স্পর্শ,
‘আমার পাপা কখনো ফলস প্রমিজেস করেন না। কখনো মিথ্যে বলেন না। হি ইজ ভেরি স্ট্রিক্ট এবাউট টাইমিং। যখন বলেছেন পাঁচটার মধ্যে আসবেন, তখন নিশ্চয়ই আসবেন।’
বাচ্চা মেয়েটির অটুট বিশ্বাস এবং বিজ্ঞের মতন কথাবার্তার ধরনে নীলা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বাবা ভক্ত এই দু'জনের সঙ্গে অনেকের তর্কবিতর্কের কাণ্ডকারখানার ইতিহাস ইতোপূর্বে ঘটেছে। তাই তিনি আর ওদের ঘাটান না। পুনরায় দৃষ্টি রাখেন চামড়ার হাত ঘড়িটায়। আর দু'মিনিট বাকি পাঁচটা বাজতে। তিনি একটিবার দুয়ারের দিকে চেয়ে হাত ব্যাগ থেকে ফোন বের করেন। এখন শাহজাহান বাড়িতে কল দেয়াটাই উত্তম হবে। অথচ নীলা বেগম কল লিস্টেও যেতে পারেননি এমন সময়তেই বাইকের উচ্চ দধ্বনি কর্ণগোচর হয়। কিন্ডারগার্টেনের ভেতরে উচ্চ শব্দ করার মোটেও অনুমতি নেই। দারোয়ান কীভাবে ঢুকতে দিয়েছে একটি বাইক? আশ্চর্য! ভদ্রমহিলা মাথা তুলে দেখলেন, একটি কালো রঙের বাইক হাই স্পিডে এসে থেমেছে মাঠে— ঠিক ছাউনির থেকে কিছুটা দূরে, খোলা আকাশের একদম নিচে। ঝুম বৃষ্টি তখনো নেমে যাচ্ছে নিজের মতন। আগন্তুক ভিজে নেয়ে একাকার। নেভীব্লু রঙের ফুলস্লিভসের শার্টটি বলিষ্ঠ দেহে আষ্ঠেপৃষ্ঠে মিশে আছে। হাত ঘড়ি থেকে টপটপ করে বৃষ্টির জল ফোঁটা হয়ে ঝরছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা ফায়াজ আগন্তুককে চিনে নিতে এক সেকেন্ডও দেরি করেনি। মুহূর্তেই লাফিয়ে ওঠে খুশিতে। স্পষ্ট কণ্ঠে ডেকে ওঠে,
‘পাপা!’
চকচক করে ওর ভারী সুন্দর আকৃতির চোখ দুটো। ফাইজার গম্ভীর চোখমুখেও আনন্দের ছিঁটেফোঁটা। হাস্যোজ্বল গুটিগুটি পায়ে দ্রুত এগুতে চায়। তখুনি বৃষ্টির শব্দ ভেদ করে গম্ভীর পুরুষালি কণ্ঠের আদেশ পড়ে,
‘স্টপ রাইট দেয়ার, সোনামণি। এসো না।’
ফাইজার মিষ্টি হাসিটা কেমন গাঢ় হয়। চোখে তারা ভাসে। আদেশ মোতাবেক ও হাসি হাসি মুখে থেমে যায়। অপেক্ষা করে। তবে বেশ ছটফট করতে থাকে। অন্যদিকে ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পাত্র ফায়াজ নয়। দূরন্ত কদমে ও ছুটেছে বাবার দিকে। ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই। নীলা বেগমের ঘোর কাটে ওই গভীর পুরুষালি কণ্ঠে। পরপর বিচলিত হয়ে পড়ে ফায়াজের কাণ্ডে। ছুটে গিয়েও ধরতে ব্যর্থ হয় ওকে। ছেলেটা বাঘের মতো বিচ্ছু। কী জোরসে ছুটল! দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে দ্রুত ফাইজার কাছে গিয়ে ওর নরমসরম হাতটি ধরে দাঁড়াল। যেন ছুটে বৃষ্টির মধ্যে যেতে না পারে।
বৃষ্টিতে ভিজে একাকার তন্ময়। হেলমেট খুলে বাইক থেকে নেমে দাঁড়াতেও পারেনি, এরমধ্যেই ফায়াজ ছুটে এসে জাপ্টে ধরে তার পা-জোড়া। গোঙায় আহ্লাদী স্বরে। বাচ্চাটা ইতোমধ্যে ভিজেনেয়ে একাকার। তন্ময় এক ঝটকায় কোলে তুলে নেয় ছেলেকে। কোলে রাখতে তার সুগঠিত ডান হাতের বাহুতে বসাতেই ফায়াজ বাবার গলাটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে অস্পষ্ট গলায় স্বীকারোক্তি করে,
‘পাপা, আই মিসড ইউ সো.. সোও, সোও মাচ।’
তন্ময়ের গম্ভীরমুখটা নরম হয়। ঠোঁট প্রসারিত হয়। ছেলের ভেজা চুলে ঠোঁট ছুঁইয়ে এগুতে শুরু করে ছাউনির দিকে। বলে,
‘উম, পাপাও তোমাকে ভীষণ মিস করেছে। পাপার অ্যাবসেন্সে তুমি গুড বয় হয়েছিলে তো?’
ফায়াজ দ্রুত মাথা দোলায় লাগাতার। ডান হাতের দুটো আঙুল দিয়ে গলায় চিমটি কেটে দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
‘ইয়েস। তুমি দাদুভাই, নানুভাইকে জিজ্ঞেস করতে পারো।’
তন্ময় হাসিটুকু গিলে নিয়ে ডান ভ্রু তুলে শুধায়, ‘হোয়াট এবাউট ইওর মাম্মাম? তার কথা কেনো বলছো না? তাকে জ্বালাওনি তো?’
ফায়াজ চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে আঙুলের সাহায্যে দেখিয়ে হালকা গলায় বলে, ‘একটুউখানি। এইযে এতটুকুউন।’
তন্ময় নিঃশব্দে হাসে। ছাউনির নিচে যেতেই ফাইজা ছুট লাগায়। তন্ময় দ্রুত ঝুঁকে মেয়েকে ডান হাতে কোলে তুলে নেয় বেশ আমোদেই।
ফাইজা দু’হাতে গলা জড়িয়ে বাবার ঘাড়ে মুখ গুঁজে রয়েছে। মুখে রা অবদি নেই। তন্ময় মুখ বাড়িয়ে মাথার ওপর ঠোঁট ছুঁইয়ে শুধায়,
‘মন খারাপ?’
ঘাড়েই মেয়েটা মাথা দোলায় দু'বার। বোঝায় তার মন খারাপ। তন্ময় নরম স্বরে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যায়,
‘কেনো? কে আপসেট করেছে আমার সোনামণিকে? কার এতো বড়ো স্পর্ধা? আমাকে বলো আই'ল সর্ট হিম আউট ফর ইউ।’
ফাইজা মাথা তুলে না। সেভাবেই তন্ময়ের ভেজা বুকে লেপ্টে থেকে আওড়ায়,
‘তুমি দেশের বাইরে গেলে আমার খুব আপসেট লাগে, পাপা। তোমার না গেলে হয় না?
ফায়াজও বোনের সুরে সুর মেলায় চটপট। ছেলেমেয়ের আবদারের সামনে তন্ময় অসহায়। এই বিষয়ে সে প্রতিজ্ঞাও করতে পারছে না। কাজের জন্য হঠাৎ করে দেশের বাইরে যাওয়াটা ভীষণ জরুরি হয়ে পড়ে মাঝেমধ্যে। সবকিছু তো আর অনলাইন ভিত্তিক হতে পারে না। সম্ভব না।
বাধ্য হয়েইতো যেতে হয়। এইতো এয়ারপোর্ট থেকে সে সোজা রওনা দিয়েছিল কিন্ডারগার্টেনের উদ্দ্যেশ্যে। এরমধ্যে আবার ঝুম বৃষ্টি! একেবারে বাজে আবহাওয়া। ঢাকাশহরের অঘোষিত জ্যাম নামক যুদ্ধে এমন বৃষ্টিতেও পড়তে হয়েছিল জনম-জনমের জন্য। বাচ্চাদের সঠিক সময়ে নিতে তাকে একপ্রকার বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে অন্য একজনের বাইক চড়ে আসতে হয়েছে। বাইক ওয়ালা ভদ্রলোককে তার গাড়িতে চড়িয়ে নিয়ে এখানেই আসবে ম্যানেজার সুমন।
নীলা বেগম কাছাকাছি এসে মিহি কণ্ঠে সালাম জানান। তন্ময় তাকে লক্ষ্য করে মাথা দুলিয়ে সালামের জবাব দিয়ে বলে,
‘থ্যাংকিউ, ম্যাডাম।’
নীলা বেগম মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে বলেন,
‘না না, আমাদের কাজইতো এটা।’
তখুনি একটি গাড়ি ঢোকে কিন্ডারগার্টেনের সদরদরজা দিয়ে। তন্ময় নিজের গাড়ি আসতে দেখে ছেলে-মেয়ের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘টিচারকে বাই বলো।’
ফায়াজ-ফাইজা সমানতালে বিদায় জানায়। ইতোমধ্যে সুমন সাহেব গাড়ি থেকে বেরিয়েছে ছাতা হাতে। তার পাশে একজন ভদ্রলোক। ভদ্রলোক তন্ময়ের সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের বাইকে চড়ে বেরিয়ে গেলেন। সুমন সাহেব এসে ছাতাটা ধরলেন তন্ময়ের মাথার ঠিক ওপর। তন্ময় হাতের ইশারায় সরিয়ে নিতে বলে। সে ইতোমধ্যে ভিজে জবজবে। ফায়াজও ভিজেছে। আর তার সাথে লেপ্টে ফাইজাও সামান্য ভিজে গিয়েছে। এখন আর ছাতার প্রয়োজন নেই। সে দ্বিতীয়বারের মতন নীলা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে এগোয় গাড়ির দিক। সুমন সাহেব গাড়ির ডোর খুলে দিয়েছে। তন্ময় দ্রুত ছেলে-মেয়েকে ভেতরে বসিয়ে দেয়। নিজেও উঠে বসে। সুমন ড্রাইভিং-এ বসে গাড়ি স্টার্ট করেন। ফায়াজ আলগোছে সিট থেকে উঠে তন্ময়ের ঊরুতে উঠে বসে। ফাইজা ছোটো ছোটো চোখে দেখে যায়। তন্ময় হেসে মেয়েকে ফের কোলে তুলে নেয়। অসহায় কণ্ঠে বলে,
‘পাপা, ভিজে আছিতো। কোলেই কেনো চড়তে হবে? সিটে বসো।’
ফায়াজ গম্ভীরমুখে বলে, ‘খুব মিস করেছিতো তাই কোলেই বসতে হবে।’
প্রত্যুত্তর শুনে শব্দ করে হেসে ফেলে সুমন। সেই হাসির শব্দে ফায়াজ অসন্তুষ্ট হয়ে প্রশ্ন করে,
‘কেনো হাসছেন আংকেল? আমি কি কিছু ফানি বললাম?’
সুমন হাসিটুকু গিলে নেয় মুহূর্তে। কাচুমাচু করে বলে, ‘মোটেওনা। আমি হাসলাম কারণ তোমার কথায় যুক্তি আছে, বাবা। তুমিই সঠিক বলেছো।’
ফায়াজ বিজ্ঞের মতো মাথা দোলায়। কাছ থেকে বাবার মুখে চেয়ে থেকে শুধায়,
‘পাপা, হোয়াট ডু ইউ থিংক? সঠিক বলেছিতো?’
তন্ময় চাপা হেসে মাথা বাড়িয়ে চুমু বসায় দু'জনের মাথাতেই। স্বীকারোক্তি দেবার মতন করে বলে,
‘সঠিক বলেছো। পাপাও, তোমাদের কোলেই রাখতে চায়। এখন বলো আমাকে, তোমার মাম্মাম কল ধরছিলো না কেনো? কী হয়েছে?’
ফায়াজ গলা নামিয়ে ছোটো করে বলে, ‘মাম্মার তোমার ওপর অভিমান করেছে। তুমি মাম্মামকে বকেছো যে। এইজন্যে।’
তন্ময় আশ্চর্য হলো। সে কখন বকলো? একটু ভাবতেই মনে পড়লো। সে গত পরশু, ঠিক রাতের দিকে ভিডিওকল দিয়েছিল। অরু কল রিসিভ করেছে লিভিংরুমে বসে। লিভিংরুম জুড়ে তখন বাড়ির সবাই আড্ডা দিচ্ছে। ফায়াজ-ফাইজাও ছিলো অরুর পাশেই। ওমন সময়ে ওর, ‘তন্ময় ভাই’ সম্বোধনটা কেমন শোনায়? একান্ত সময়ে তন্ময় শুধু শুধরে দেয়। তবে বাচ্চাদের সামনে এমন সম্বোধন কী ভালো বিষয়? তাইতো একটু কঠিন গলাতেই ধমকেছিল। তাই বলে এমন কথাবার্তা না বলে থাকবে? সেই পরশু রাত থেকে কল দিলে শুধু ফায়াজ-ফাইজা অথব বাড়ির লোকদের ধরিয়ে দিচ্ছে। এই পর্যন্ত কথা বলেনি একটাও! ও বোঝে তন্ময়ের মন? সে সেই সুদূর থেকে কতটা কাতর হয়েছিল জানে? তা জানবে কীভাবে! শুধু তন্ময়কে পোড়াতেই জানে। তন্ময় দাঁতে দাঁত পিষে হৃদয়ের জ্বালা দমন করে। একটা শক্তপোক্ত শাস্তি না দিলেই না। তন্ময়ও দেখবে ও কতক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারে।
.
.
.
চলবে.......................................................................