গগনের কালো নীরধরের ঘনঘটা সরে যেয়ে প্রকৃতি এখন স্বচ্ছ। সুবিশাল অম্বর বর্ষণ থামিয়েছে ঘণ্টা দুয়েক হতে চলল। চারপাশ থেকে ভেসে আসছে ভেজা মাটির ঘ্রাণ, শোনা যাচ্ছে পাখিদের গুঞ্জন। ভোর পাঁচটা বেজে বিশ মিনিট। তন্ময়ী পিট পিট করে আঁখি জোড়া মেলে ধরল। কিছুক্ষণ থম মেরে শুয়েই রইল। মধ্য নিশীথের কথা স্মরণ হতেই তড়িৎ গতিতে উঠে বসল। চারপাশে ভালোভাবে নজর বুলিয়ে নিলো। অদ্ভুতভাবে নিজেকে নিজের রুমেই আবিষ্কার করল। অমনিই বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলে গেল। সবকিছুই ওর কাছে কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছে। কীভাবে সম্ভব? গতবারের মতোই প্রতিটা ঘটনা আবছা মনে পড়ছে। কিন্তু ওর সাথে আদৌতে কী ঘটেছে সেটাই মনে পড়ছে না। ছিলো তো জঙ্গলের ওই রাস্তায় তাহলে ঘরে কীভাবে আসলো? তবে কি আমাদের চোখের দেখার বাইরেও পৃথিবীতে কোনো অপশক্তি রয়ে গেছে? যেই শক্তি মানুষের স্মৃতিশক্তি থেকে কিছু ঘটনা খুব সহজেই মুছে দিতে সক্ষম। কিন্তু সেই শক্তি আসলে কী? কীভাবে তার সন্ধান পাওয়া যাবে?
মেয়েটা আর ভাবল না। দ্রুত উঠে ওয়াশ রুমের উদ্দেশ্যে ছুটল। আগে নিজেকে একটু শান্ত করার প্রয়োজন। মন, মস্তিষ্ক এভাবে অস্থির হয়ে থাকলে কাজের কাজ কিছুই হবে না উল্টো সবটা ঘেঁটে ঘ করে ফেলবে। সময় নিয়ে একেবারে শাওয়ার নিয়েই বের হলো। শরীরে প্লাজু প্যান্ট এবং একটা টি-শার্ট জড়ানো। শুভ্র রঙা তোয়ালেতে শাপের মতো পেঁচিয়ে আছে সুদীর্ঘ কৃশলা। কিচেনের দিকে হাঁটা ধরল তন্ময়ী। কিছু সময়ের ব্যবধানে এক কাপ কফি হাতে নিয়ে ফিরল। টেবিলের উপর থেকে ল্যাপটপ উঠিয়ে চলে গেল ব্যালকনিতে। ল্যাপটপ অন করে কিছুক্ষণ থমকে ঠাঁয় বসে রইল। কফির কাপে এক সিপ দিয়ে কিছু একটা ভাবল অত্যল্প সময়। জঙ্গলের নাম সার্চ দিয়ে পাক্কা এক ঘণ্টা ঘাঁটাঘাঁটি করল। কিন্তু তেমন কিছুই সুবিধার করতে পারল না। এতেই যেন মস্তিষ্কে চাপ ধরল। দ্বিগুণ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল। ভাবনার অথৈ সায়রে ডুবে গেল মেয়েটা।
বাবার ডাকে ধ্যান চ্যুত হলো তন্ময়ী। কতক্ষণ ওভাবে ভেবেছে ওর খেয়াল নেই। বাবার পদযুগলের শব্দ কর্ণগোচর হতেই দ্রুত ল্যাপটপ বন্ধ করে ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ বসে রইল। শেখ সাদমান আবারও ডাকলেন, "আম্মা কোথায় আপনি?"
তন্ময়ী ব্যালকনি থেকেই চিল্লাল, "বাবা ব্যালকনিতে এসো। এখানেই আছি আমি।"
মেয়ের জবাব পেতেই ওদিকে অগ্রসর হলেন শেখ সাদমান। তন্ময়ীর পাশে ডিভানে বসলেন। নিঃশব্দে হাসলেন। আদর মিশিয়ে তন্ময়ীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ওনার আদুরে বিড়ালছানা বুকের সাথে লেপ্টে গেল। সকাল, সকাল বাবার গায়ের সুগন্ধ না নিলে তন্ময়ীর ভালো লাগে না। দিনটাই ভালো কাটে না একদম। কপালে আদর দিয়ে শেখ সাদমান শুধালেন, "আম্মা মন ভালো আছে?"
"আছে বাবা।"
"একটা সমস্যায় ফেঁসে গেছি যে আম্মা।" বাবার কথায় তন্ময়ী ভ্রু কুঁচকে বাবার মুখের দিকে তাকাল। তবে বুক থেকে মাথা তুলল না। সেভাবেই জিজ্ঞাসা করল, "কী সমস্যা বাবা?"
"আপনার আম্মা ভীষণ রেগে আমার উপরে। রাগ ভাঙানোর সুযোগটুকু অবধি দিচ্ছে না। গতকাল সকালেই রাগের পারদ অনুমান করতে পেরেছিলাম। ভেবেছিলাম রাতে এসে রাগ ভাঙিয়ে নেবো। কিন্তু না আম্মা। সে এবার ফায়ার হয়ে আছে। তার সংস্পর্শে গেলেই আমি ঝলসে যাচ্ছি।"
বাবার অসহায় মুখভঙ্গি দেখে তন্ময়ী ফিক্ করে হেসে ফেলল। হাসির দাপটে শরীর কাঁপছে। শেখ সাদমান মেয়ের উপর মিছে অভিমান করার ভান ধরলেন, "আমার কষ্টে আপনি হাসছেন আম্মা? এ তো ভারি অন্যায়!"
"আরে চিইইইল বাবা। তোমার তন্ময়ী তো আছে নাকি? ডোন্ট ওরি। চলো আজ সবাই মিলে ঘুরতে যাই। তোমাকে আর মা'কে আলাদা স্পেস দিবো পাক্কা প্রমিস। তন্ময়ের দায়িত্ব আমার। দেখবে তোমার ট্যুর প্রিয় বউ একদম গলে ক্ষীর হয়ে যাবে।"
একটু আশার আলো দেখতে পেলেন শেখ সাদমান। হেসে বললেন, "আইডিয়া মন্দ বলেননি আম্মা। আজকে কিন্তু আরও স্পেশাল একটা ডে। ভুলে গেছেন কি?"
তন্ময়ী বাবার কথা বুঝল না। মোটকথা ও ভুলে গেছে। নয়তো স্মরণেই নেই। প্রত্যুত্তর স্বরুপ দু'দিকে মাথা নাড়াল যার অর্থ ওর মনে নেই।
"আজ বাংলা নববর্ষ আম্মা। আমার ডিউটি ও ডে শিফটে। সন্ধ্যার পরে টোটালি ফ্রি আমি। কিন্তু আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে আম্মা। রাখবেন?"
আগেপিছে কিছুই না ভেবে চঞ্চল কণ্ঠে তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো তন্ময়ী, "এভাবে বলছ কেন বাবা? বলে ফেলো তো। তোমার তন্ময়ী কখনো তোমার কথা অমান্য করেছে? হু?"
এই পর্যায়ে মেয়ের কথায় প্রাণোচ্ছল হাসলেন শেখ সাদমান, "আজ আপনাকে বাঙালি মেয়ে রুপে দেখতে চাই আম্মা। শাড়ি পড়বেন আপনার মায়ের মতো। পড়বেন তো? আমার কথা রাখবেন না?"
তন্ময়ী অসহায় চোখে বাবার দিকে তাকাল। এই একটা কাজ ওর জন্য সবথেকে কঠিন। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত শাড়ি ও শরীরে জড়ায়নি। ওই সাত, আট হাত লম্বা কাপড়কে ও ভীষণ ভয় পায়। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, "বাবা প্লিজ! ওটা খুব কষ্টের কাজ।"
মেয়ের কথায় গললেন না শেখ সাদমান। উনি নিজের কথায় অনড়। যেটা ওনার চোখে মুখে স্পষ্ট। তন্ময়ী আবারও কিছু বলার উদ্দেশ্যে অধরপল্লব নাড়াতেই শুনতে পেল বাবার কণ্ঠস্বর, "আপনি কথা দিয়েছেন আম্মা। আর কোনো টালবাহানা নয়। আমি শাড়ি কিনে এনেছি। আমার আলমিরার ডান সাইডে ফার্স্টের দিকেই আছে।"
মুখের কথা শেষ করেই উঠে দাঁড়ালেন। তন্ময়ীর মাথায় চুমু বসিয়ে দিলেন। মুচকি হেসে ঘরের ভেতরে চলে গেলেন। তন্ময়ী বাবার উদ্দেশ্য বুঝল বোধহয়। গলার আওয়াজ উঁচিয়ে শুধাল, "বাবা তুমি কি কোনোভাবে এক ঢিলে দুই পাখি মারলে?"
শেখ সাদমান শব্দ করে হেসে ফেললেন। সেভাবেই বললেন, "যেটা মনে করবেন সেটাই আম্মা। লাভ বৈ ক্ষতি হয়নি আমার।"
বাবার চালাকিতে হতাশ হলো তন্ময়ী। এই কোন জ্বালায় ফেঁসে গেল। এখন কীভাবে ওই কাপড় পেঁচিয়ে হাঁটবে, ঘুরবে? খুব কান্না পেলো তন্ময়ীর। রাগে, দুঃখে মাথার চুল খামচে ধরল। মেয়েটার বাচ্চামিতে হাসল একজোড়া নেত্র, অধরপল্লব বাম দিকে কিঞ্চিত উঁচু হলো। পরপরই দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে বিড়বিড় করে আওড়াল, "আ ক্রেজি লেডি। উঁহু, মাই ব্ল্যাক টিউলিপ।"
•••••••••••••••
নিজের প্যালেসের পূর্ব দিকের জিমের একপাশে পুশ আপ করছে রৌহিশ। শরীরে কেবল একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট জড়ানো। ঘর্মাক্ত দেহের উপরের অংশ উম্মুক্ত। ধবধবে ফর্সা সিক্স প্যাক বডি দৃশ্যমান। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টটা নাভির বেশ খানিকটা নিচে নেমেছে। অদূরে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বুকের উপর হাতজোড়া ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে রায়ান। দৃষ্টি নিবদ্ধ রৌহিশের শরীরে। হয়তো ভাবছে একটা ছেলে এতোটা হ্যাণ্ডসাম, পার্ফেক্ট কীভাবে হতে পারে? রায়ানের ভাবনাতে রৌহিশ ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে চাইল, "কিছু মিছুর ফিল পাচ্ছ?"
রায়ান স্যারের কথাটা ঠিক বুঝল না। হ্যাবলার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই রইল। রৌহিশ এবার দাঁতে দাঁত চাপল,
"মেয়েদের মতো চোখ দিয় গিলে খাচ্ছ কেন? আমার ফিটনেস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তোমার নজরে। দেখি মাম্মাকে বলে একটু ঝাড়ফুঁক করে নিতে হবে। তোমাদের নজর ভালো না।"
রায়ান হতভম্বের শীর্ষে! স্যারের থেকে এমন ব্যবহার সে মোটেও আশা করেনি। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে নাকি? বার কয়েক মাথা ঝাকাল। পুনরায় সামনে তাকাল। রৌহিশের পুশ আপের দৃশ্য মানসপটে ভাসল। তার মানে এটা সত্য। স্যার কি কোনোভাবে ওর সাথে ফ্লার্ট করল? মুচকি হাসল ছেলেটা। নিজেও কিছু বলতে নিবে অমনিই আশেপাশে অন্য কারোর উপস্থিতি অনুভব করল। রৌহিশ ও ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। দু'জন দেখল জানালার কার্নিশ ঘেঁষে বেড়ে ওঠা একটা গাছের ডালে রোজ দাঁড়িয়ে আছে। আননে মুচকি হাসি লেপ্টানো। রৌহিশ কিছুক্ষণ চোখজোড়া ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে খানিকটা উঁচু কণ্ঠে ডাকল,
"হেই রোজ? ডু ইউ লাইক মি?"
তৎক্ষণাৎ ভেসে এলো রোজের মিষ্টি রিনরিনে স্বর, "ইয়াপ, আই ডু।"
"আই নো ইউ আর ব্যাডলি অবসেসড উইদ মি। ওকে দেন গিভ মি আ প্যাশোনেট কিস। ক্যান ইউ?"
এই প্রস্তাবে রোজ একটু অবাক হলো বৈকি! যেন নিজের কান দুটোকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বক্ষস্থলে খুশির সুনামি বয়ে গেল। সুখ সুখ দোলায় মনটা নেচে উঠল। ও যেন বহু প্রতীক্ষিত কিছু পেতে চলেছে। মাত্রাতিরিক্ত আনন্দে চোখে মুখে অন্যরকম উজ্জ্বলতা প্রস্ফুটিত হলো। রায়ান তো কিংকর্তব্যবিমূঢ়। লোচন দ্বয় অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। দুই ঠোঁটের মাঝে একহাত মতো ব্যবধানের সৃষ্টি হয়েছে। একদিনে এতো চমক ও হজম করতে ব্যর্থ। একবার স্যারের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার রোজের দিকে। ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে এক্ষুনি এখানে অপ্রত্যাশিত কিছু একটা ঘটবে।
রোজ নিজেকে সামলিয়ে নিলো। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ। ঝড়ের গতিতে উড়ে এসে রৌহিসের সামনে উপস্থিত হতেই চোখের পলকে নিজেকে দেওয়ালের উপর ভাসমান অনুভব করল। পরপরই একটা টেবিল জাতীয় কিছুর উপরে পদযুগলের ঠাঁই মিলল। ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। ছাড়া পেতে ছটফটিয়ে উঠল। চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। রৌহিসের ওষ্ঠপুটে বাঁকা হাসির রেশ ছড়িয়েছে ইতোমধ্যে। পৈশাচিক খুশিতে হ্যাজেল রঙের মণিজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠল। রোজের চিকন গলাটা রৌহিশের পুরুষালী ডান হাতের থাবায় আটকেছে। মেয়েটা কথা অবধি বলতে পারছেনা। মুখটা ওর কান বরাবর এগিয়ে হিসহিসিয়ে উঠল রৌহিশ,
"ফা ক ইউর ফিলিংস। এভ্রিওয়ান ডিজার্ব লাভ বাট আই ডোন্ট। আই ডিজার্ব আ লট অব মানি অ্যাণ্ড পাওয়ার। ইউ নো আ'ম দ্য ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স অফ দ্য ভ্লাডিমির ইম্পায়ার। আ'ম দ্য ডার্কনেস দ্যাট লার্কস ইন দ্য হার্টস অব ম্যান। আই ডোন্ট নিড অল দিস সো-কলড লাভ। "
রৌহিশের উষ্ণ নিঃশ্বাসের সংস্পর্শ পেতেই রোজের শরীরের প্রতিটা লোমকূপ শিউরে উঠল। অদ্ভুত অনুভূতির দোলাচালে পিষ্ট হলো অন্তর। ব্যথায় জর্জরিত হয়েও ক্রন্দনরত নয়নেই হাসল মেয়েটা। রৌহিশের নজর এড়াল না কিছুই। পর মুহূর্তেই ঠোঁট নাড়িয়ে চুক, চুক শব্দ তুলে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলতে শুরু করল,
"বেইবি আর ইউ ক্রায়িং? আহারে! আহারে! এতটুকু ভালোবাসা টলারেট করতে পারছ না? বাট ইউ নো বেইবি আই ডোন্ট লাইক সফট রোম্যান্স। আচ্ছা শোনো একটা আইডিয়া দেই? আগে আমাকে সহ্য করার ক্ষমতা গেইন করো দেন তোমাকে আমার বেডরুমে ইনভাইট দিবো কেমন?"
পরপরই রোজের ক্ষীণ গাত্রে নজর বুলালো, "এভ্রিথিং অ্যাবাউট ইউ ইজ স্টিল ভেরি স্মল। ইউ স্টিল হ্যাভ টু গ্রো আপ বেইবি।"
শব্দকরে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রোজকে ছেড়ে এক নিমিষেই হাওয়ায় মিশে নিচে নেমে দাঁড়াল রৌহিশ। মেয়েটাও ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল। গলায় হাত দিয়ে কাশতে কাশতে নাজেহাল দশা। রায়ানের ভীষণ মায়া হলো। ইশশ! গলাটা কীভাবে লাল হয়ে ফুলে গেছে। তাড়াহুড়ো করে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। এই ক্ষত সারিয়ে তোলার মতো ক্ষমতা এখনো অর্জন করেনি রোজ।তবে শিঘ্রই অপশক্তির আধার হবে। 'আলড্রিক ইম্পায়ারের' প্রিন্সেস সে। খুব কষ্টে ব্যথিত গলায় পানিটুকু খেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করল। রৌহিশ টাওয়াল উঠিয়ে মুখমণ্ডল মুছতে ব্যস্ত। সেভাবেই দরজার দিকে এগিয়ে গেল। পিছু না ফিরেই রায়ানের উদ্দেশ্য বলল, "তুমি চাইলে আজ রোজের সঙ্গ দিতে পারো। সবগুলো বেডরুম আজকের জন্য তোমার।"
রোজের রাগ ক্রমশ বাড়ল। অতিরিক্ত রাগে রিতিমত শীর্ণ কায়া থরথরিয়ে কাঁপছে। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে রক্তচক্ষু দিয়ে একদৃষ্টিতে রৌহিশের প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে থাকল। কণ্ঠ গলার খাদে নামিয়ে আওড়াল, "দ্য রেজাল্ট অব দিস উইল নট বি গুড, রৌহিশ। হোয়াট ইজ রোজে'স ইজ অনলি রোজে'স। নো ওয়ান হ্যাস দ্য পাওয়ার টু টেক ইউ এওয়ে ফ্রম মি। ইউ আর অনলি মাইন রৌহিশ।"
রায়ান একটু এগিয়ে এসে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল, "স্যারকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখবেন না ম্যাম। স্যার অলরেডি বুকড। বাই দ্য ওয়ে আমি কিন্তু স্টিল সিঙ্গেল আছি। আপনি চাইলে..." মুখের কথা শেষ করার আগেই এক দমকা বাতাসে মিলিয়ে গেল রোজের অস্তিত্ব। ছেলেটা বুঝলোও না নিজের অজান্তেই কাউকে বিপদের দিকে ঠেলে দিলো। একটা নিরপরাধ জীবন সংকটে পড়ে গেল শুধুই ওর জন্য। বুঝলে হয়তোবা এমন বোকামি কখনোই করত না।
••••••••••••••
সূর্যের তীব্র তাপদাহ মাথায় নিয়ে ভার্সিটির প্রাঙ্গণে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তন্ময়ী। কথাটাও বলতে ভুলে গেছে মেয়েটা। মাত্রই জানতে পেরেছে ওই রেস্টুরেন্টের সেই ম্যানেজারের বিভৎস লা শ মিলেছে নিজ বাসভবনে। শুধু কী তাই! সেই দিনের জানোয়ার গুলোর পঁচা গলা দুর্গন্ধযুক্ত লা শ ও একইসাথে উদ্ধার করা হয়েছে। তন্ময়ীর নিকট হঠাৎ করেই সবটা ধোঁয়াশা ঠেকছে। সবকিছু কেমন যেন একসূত্রে গাঁথা মনে হচ্ছে। নিজের অজান্তেই কোনো ম র ণ ফাঁ দে আটকে পড়ল কি? এই ধ্বংশলীলার শেষ কোথায়? কীভাবে কী করবে? এই রহস্যের বেড়াজাল থেকে কে মুক্তি দিবে? সবকিছুর পিছনে কার হাত আছে? কোনো মানুষের নাকি মানুষরুপি অন্যকিছুর?
তন্ময়ী অকস্মাৎ শুনতে পেল একটা উদ্ভট শীতল কণ্ঠস্বর। কেঁপে উঠল অন্তরাত্মা।
"জয়েন মি অন দ্য ডার্কসাইড, ফর অ্যান আনফরগেটেবল জার্নি। ইউ উইল নেভার বি ফ্রি ফ্রম মি। নেভার। "
তৎক্ষণাৎ তন্ময়ীর তীক্ষ্ম দৃষ্টি চারপাশে ভাসমান হলো। কিন্তু না কোথাও কেউ নেই। কণ্ঠস্বরটাও যেন বেনামি বাতাসের সহিত মিশে গেল। কোনোকিছুর'ই আর অস্তিত্ব মিলল না। দরদরিয়ে ঘেমে উঠল মেয়েটা। ভার্সিটির প্রাঙ্গণে আর এক সেকেণ্ড ও দাঁড়াল না। আজ ক্লাস করবে না ও। দ্রুত পায়ে বাইক পার্কিং এরিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। কিছু সময়ের ব্যবধানেই ঝড়ের গতিতে ভার্সিটি প্রাঙ্গণ ত্যাগ করল।
.
.
.
চলবে....................................................................