ঘড়ির কাঁটা নিজের অবস্থান গেড়েছে দশটার ঘরে। সূর্যি মামা ক্রমশ নিজের তেজ বাড়িয়ে চলেছে।তবে আজ অন্য দিনের তুলনায় আবহাওয়া বেশখানিকটা ঠাণ্ডা। প্রকৃতিতে বয়ে চলা বাতাসের সনে একধরণের শীতলতা বিরাজ করছে। হয়তো গতরাতের ঝুম বৃষ্টির দরুন এই সুমিষ্ট আবহাওয়া।
ক্লাসে পাশাপাশি বসে আছে তন্ময়ী এবং ক্লারা। আজ জানালা পাশ ঘেঁষে বসেছে তন্ময়ী। ক্লাস নিচ্ছে রৌহিশ। আজ সেকেণ্ড পিরিয়ডে'ই ওর ক্লাস। এসেছে মিনিট দশেক হতে চলল। এসেই সকলের অ্যাটেনডেন্স নিয়েছে। এখন ক্লাস জুড়ে হেঁটে হেঁটে লেকচার দিচ্ছে।
আজকের টপিক হচ্ছে 'শিক্ষা মনোবিজ্ঞান' বিষয়ের 'আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু- অভীক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করা।' রৌহিশ ওই টপিকের উপরেই লেকচার দিচ্ছে। পুরুষালী গম্ভীর কণ্ঠস্বর নিস্তব্ধ ক্লাসরুমের পরিবেশ আরও থমথমে করে তুলছে ক্ষণে ক্ষণে।
"শিখন- শিক্ষন প্রক্রিয়ায় আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু- অভীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক কৌশল। মনোবৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক অভীক্ষাগুলি হলো এমন এক ধরনের পরিমাপক কৌশল, যার সাহায্যে ব্যক্তির আচরণগত বৈশিষ্ট্যের পরিমাপ করা যায়। সাধারণত যে সকল শিক্ষামূলক ও মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষায় মনোবিজ্ঞান সম্মত গুন ও বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় তাকেই আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু- অভীক্ষা বলে। নাও উই উইল ডিসকাস দ্য ইম্পর্ট্যান্স অব স্ট্যান্ডারডাইজড টেস্ট।"
মুখের কথা শেষ করে উল্টো ঘুরে ক্লাসের পিছন সাইড থেকে সামনে আসতে নিলেই রৌহিশের নজর পড়ে তন্ময়ীর দিকে। মেয়েটা আজ প্রথম থেকেই ক্লাসে উদাসীন চিত্তে বসে আছে। ক্লাসে তো তিল পরিমাণ মনোযোগ নেই। মনের মাঝে শত প্রশ্ন, শত ভাবনার জটলা খিচুড়ি পাকাচ্ছে ওভাবেই বসে বসে। রৌহিশের অধরপল্লব একপাশে অল্পস্বল্প প্রসারিত হলো। হাসল কিঞ্চিত পরিমাণ। মনে মনে আওড়াল,
"স্টুপিড লেডি অপস সরি মিস।"
পরবর্তীতে আবারও বলতে শুরু করল,
"পয়েন্ট ওয়ান. শিক্ষা পরিকল্পনা: আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু- অভীক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীদের নূন্যতম যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা সম্ভব। এই ধারণার মধ্যে দিয়ে পরবর্তী পর্যায়ের শিক্ষা পরিকল্পনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এই শিক্ষা পরিকল্পনা চলাকালীন আদর্শায়িত অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।"
এই আলোচনা টুকু শেষ করেই তন্ময়ীদের বেঞ্চ বরাবর এসে নিজের পদযুগল থামিয়ে দিলো রৌহিশ। তন্ময়ী সেটাও খেয়াল করেনি। একদৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে। জানালার গ্লাস গলিয়ে দৃষ্টি গেছে দূরে, বহুদূরে। ক্লারা শুকনো ঢোক গিলে ওকে ধাক্কা দিতে নিলে রৌহিশ হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো। মিনিট পাঁচেক ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। তন্ময়ীর মাঝে কোনো হেলদোল নেই। এই পর্যায়ে কৌশিক আদেশ ছুঁড়ল,
"হেই লেডি? স্ট্যান্ড আপ।"
তীক্ষ্ম একটা গুরুগম্ভীর কণ্ঠ শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করতেই তন্ময়ীর তনু, মন ঈষৎ কেঁপে উঠল। তড়িৎ গতিতে দৃষ্টি ফিরিয়ে পাশে চাইল। স্যারকে নিজেদের বেঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই থতমত খেয়ে বসল। ক্লাস জুড়ে আড় দৃষ্টি ফেলতেই বুঝল ফেঁসে গেছে ও। ফেঁসে যখন গেছে তখন বাঁশ তো নিতে হবেই। কোনো প্রকার টালবাহানা ছাড়াই উঠে দাঁড়াল। মাথাটা একটু নুইয়ে বিড়বিড় করে বলল, "সরি, স্যার।"
"বাট হোয়াই?"
এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তন্ময়ী কিছুই বলল না কেবল একবার চোখ তুলে রৌহিশের দিকে তাকাল। অদৃশ্য কোনো টানে হয়তো সানগ্লাসের আড়ালে থাকা আঁখি জোড়ার চাহনি বুঝল। দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। রৌহিশ পুনরায় প্রশ্ন করল,
"আজকের লেকচারের টপিক কী ছিলো?"
"আদর্শায়িত অভীক্ষা।" সেভাবেই তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো তন্ময়ী।
"হোয়াট ইজ দ্য পয়েন্ট নাম্বার টু?"
"শিক্ষার্থী নির্বাচন।"
"এক্সপ্লেইন ইট।"
তন্ময়ী ভেতরে ভেতরে বিরক্তিতে ফেটে পড়ল। সব ভেঙ্গে ফেলার মতো রাগ উঠল মাথায়। রাগ কমাতে হাতে থাকা পেনটা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরল। মুহূর্তেই ঘটে গেল একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। পেনটা বাকা হয়ে ঘাড় ভেঙে হাতের মাঝেই পড়ে রইল। রৌহিশের শাণিত দৃষ্টি এড়াল না কিছুই। বেশ মজা পাচ্ছে ও। তন্ময়ীর এইসবে খেয়াল নেই। খুব কষ্টে নিজেকে শান্ত রাখল। একটু সময় নিয়ে মনে মনে প্রতিটা লাইন সাজিয়ে নির্লিপ্ত গলায় জবাব দিলো,
"বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পাঠক্রমের জন্য কোন ধরণের শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত সেটা জানতে আদর্শায়িত অভীক্ষা বা সু- অভীক্ষা বিশেষভাবে কার্যকারী। একটি আদর্শায়িত অভীক্ষার মাধ্যমে পাঠক্রমের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহজেই বেছে নেওয়া যায়।"
"শেষ?"
"জি, স্যার।"
"ওকে, ফাইন। লিসেন, আমার ক্লাসে অ্যাটেণ্ড করলে পুরোপুরি কনসেনট্রেশন আমার লেকচারের দিকেই থাকা লাগবে। অ্যাণ্ড ক্লাস ভালো না লাগলে আসার প্রয়োজন নেই।"
"ওকে, স্যার। নেক্সট টাইম এমন ভুল হবে না।" নম্রতা বজায় রেখে প্রত্যুত্তর করল তন্ময়ী।
"ছোট্ট একটা মাথা দ্যাটস মিন ছোট্ট একটা মস্তিষ্ক। সেখানে এতো বেশি প্রেসার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এভরিথিং উইল বি ফাইন। সিট ডাউন।"
কথাগুলো বলেই ওখান থেকে সরে গেল রৌহিশ। তন্ময়ীর ভ্রু জোড়া গুটিয়ে এলো। চোখ দুটো ছোট ছোট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বসে পড়ল। এতক্ষণে নজর পড়ল হাতে থাকা কলমটার দিকে। যেটা ভেঙে কালি ছড়িয়েছে ওর হাতের তালু জুড়ে। এমনকি পরিহিত ব্ল্যাক কালারের শার্টেও বেশখানিকটা লেগে গেছে। চোখে ধরা না গেলেও চ্যাট চ্যাটে ভেজা ভাবটা ঠিক অনুভব করতে পারছে। নিজের কাজে নিজেই ভড়কে গেল। পেনটা কি কোনোভাবে ও ভেঙেছে? কিন্তু কখন ভাঙল? এইসব কী হচ্ছে ওর সাথে? আর কেনই বা হচ্ছে? চিন্তারা মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরনে রক্তের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ল। হতবাক হয়ে হাতের দিকে তাকিয়েই রইল। কিছু তো একটা ঠিক হচ্ছে না ওর সাথে। কিন্তু সেটা কী?
—————
দিনের আলো নিভে যাওয়ার পথে। ওই দূর পশ্চিমাকাশে একটু আধটু লালাভ রেখার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে এই যা। রৌহিশ বাবার আদেশ রক্ষার্থেই নিজেদের বাসায় এসেছে। ডুপ্লেক্স বাড়িটার দক্ষিণ পাশে প্রকৃতির মাঝে গড়ে ওঠা রুমটার ব্যালকনিতে পাশাপাশিতে দাঁড়িয়ে আছে বাবা, ছেলে। রুমটার চারপাশ গাছপালা নিজেদের শাখা প্রশাখার চাদর বিছিয়ে রেখেছে। দৃষ্টি যতদূর যায় কেবল সবুজ আর সবুজের মেলা। এ যেন চোখের প্রশান্তি, মনের মুগ্ধতা। এই রুমটাই বাবা, ছেলের নিজস্ব আলোচনার জন্য নির্বাচিত করেছে রৌহিশ। একপলক ছেলের দিকে তাকিয়ে নিরবতায় আচ্ছন্ন পরিবেশ নিজের থমথমে কণ্ঠে ভেঙে দিলেন ডুবইস আর্থার,
"প্রিন্স আমি ফিল করছি কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না। কোথাও একটা গড়মিল হয়ে গেছে। যেটা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।"
কথাটা বলেই চুপ রইলেন উনি। কিন্তু অপরপক্ষ থেকে কোনো উত্তর এলো না। রৌহিশ একচিত্তে সামনে দৃশ্যমান গাছের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সেদিকে তাকালেন ডুবইস আর্থার। শ্যাওলা জমা গাছের বাকল ছাড়া কিছুই পরিলক্ষিত হলো না।
"আমরা যদি আগামীকাল অবধি বেঁচে না থাকি?"
সেভাবেই দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ল রৌহিশ। ছেলের করা প্রশ্নটা উনি ঠিক বুঝলেন না। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে চেয়ে রইলেন। রৌহিশ আবারও বলল। এবার কণ্ঠস্বরে একটু তাচ্ছিল্যের সুর উঁকি ঝুঁকি দিলো,
"সাপোজ আমি, আপনি আজকেই মারা গেলাম। তারপর কী হবে? আমাকে, আপনাকে কেউ মনে রাখবে? হ্যাঁ, হয়তোবা বিশেষ কিছু দিনগুলোতে রিচুয়াল পালন করে আমাদের স্মরণ করবে। কিন্তু সেই তো রেঁধে খেয়ে নিজেদের পেট ভরাবে। যেখানে আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা নেই সেখানে অদূর ভবিষ্যৎ ভেবে মস্তিষ্কে প্রেশার ক্রিয়েট করে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোনো অর্থ নেই পাপা। মানুষদের থেকে আমরা অনেকগুলো বছর বেশি বেঁচে থাকি। কিন্তু মৃত্যুর স্বাদ তো গ্রহণ করতেই হবে পাপা। এই জীবনের সবকিছুই আমার কাছে মূল্যহীন লাগে।"
ছেলের মুখনিঃসৃত কথাগুলোতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ডুবইস আর্থার। এরকম কথা ছেলের থেকে একদমই আশা করেননি উনি। কথাগুলো মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরনে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে চলেছে। ছেলের বলা কথাগুলোর গভীরতা খুব করে অনুভব করলেন। মুহূর্তেই ভেতর থেকে অস্থির হয়ে পড়লেন। পরক্ষণেই ছেলের এমন সুন্দর ভাবনায় উনি যেন একটু ইমোশনাল হয়ে গেলেন। নরম গলায় বললেন,
"তুমি পরিবর্তন হয়ে গেছ প্রিন্স।"
"এটা সম্ভব নয়।"
"প্রিন্স, তবে কি কয়েক শত বছর আগে করা ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে?"
"হলে কী খুব বেশি ক্ষতি হবে?"
"নিজ হাতে নিজের ভালোবাসার ইম্পায়ার ধ্বংস করতে বুক কাঁপবে না তোমার? কষ্ট অনুভব করবে না?"
"আমি সজ্ঞানে এমনটা কখনো করব না।"
"নারীর ভালোবাসা ভয়ংকর। তুমি সেই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারলে আল্লাহর পরে তার জীবনে সবচেয়ে উঁচু স্থানে তুমিই থাকবে। আর যদি তার ভালোবাসার অপব্যবহার করো তাহলে তোমাকে পায়ে পিষে মারতেও দু'বার ভাববে না।"
"ভালো অভিজ্ঞতা আছে মনে হচ্ছে?"
ছেলের কথায় এই পর্যায়ে হেসে ফেললেন ডুবইস আর্থার। সেভাবেই হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললেন,
"বলতে পারো আমি একজন ভুক্তভোগী।"
রৌহিশ এতক্ষণে ঘাড় ঘুরিয়ে বাবার দিকে তাকাল। ক্ষীণ হাসল, "
"চিইইল পাপা, আমি যতদিন বেঁচে আছি আপনি সহ আপনার ভ্লাডিমির ইম্পায়ারের গায়ে একটা ফুলের টোকা অবধি লাগতে দিবো না। আর আমার জন্য কখনো যদি ওরা বিপদের সম্মুখীন হয়, মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখে তাহলে আমার বুকে দাদুর তলোয়ারটা চালিয়ে দিবেন। হ্যাঁ, আরেকটা কথা আপনি এবং আপনার ইম্পায়ারের জন্য যদি কখনো আমাকে নিজের কিছু খোয়াতে হয় তাহলে আমি নিজ হাতে সবটা ধ্বংস করে দিবো।"
কথা শেষ করেই উল্টা ঘুরে গটগট পায়ে হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রৌহিশ। ছেলের প্রতিটা কদম উনি উপলব্ধি করলেন। অটল, দুর্বার প্রতিটা কদম। একদৃষ্টে চেয়ে ছেলের প্রস্থান দেখলেন। বুক থেকে বেরিয়ে এলো ক্লেশ পূর্ণ দীর্ঘশ্বাস।
—————
রাত এগারোটা বেজে পাঁচ মিনিট। একবুক অস্থিরতা নিয়ে বাবা, মায়ের চোখ এড়িয়ে বাইক নিয়ে বের হয়েছে তন্ময়ী। আজকাল ও যেন নিজের মাঝে থাকে না। কিছুতেই নিজের কাজে ফোকাস করতে পারছে না মেয়েটা। কেন যেন মনে হয় কেউ একজন অদৃশ্য শক্তিবলে ওর মধ মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই ভয়ঙ্কর রাতের পর থেকেই সবটা অদ্ভুতভাবে উল্টে গেছে। ও চাইলেও আর সাজাতে পারছে না। হয়তো কারোর পেতে রাখা জালে খুব বাজেভাবে ফেঁসে গেছে। নিজের ভাবনার মাঝেই আস্তে ধীরে বাইক চালাচ্ছে। প্রকৃতির বুকে রাজত্ব করা ঠাণ্ডা ঝিরিঝিরি প্রভঞ্জন কায়া জুড়ে ঢেউ খেয়ে চলেছে। বিক্ষিপ্ত মস্তিষ্কে একটুখানি প্রশান্তি মিলেছে। ঘণ্টা খানেক এভাবে কাটালেই অনেকটাই হালকা অনুভব করবে।
নিজের জল্পনা কল্পনার মাঝেই ঝড়ের গতিতে একটা বাইক এসে ওর পাশে জায়গা করে নিলো। একই গতিতে দুটো বাইক পাশাপাশি ছুটে চলেছে। হেলমেটের আড়ালে থাকা তন্ময়ীর ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল। থালার ন্যায় বড়ো গোল চাঁদের ভরা পূর্ণিমার আলোতে তন্ময়ী পাশের বাইকে থাকা মানুষটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলেছে। কয়েক সেকেণ্ডেই নজর আটকাল ঘাড়ের একপাশে দৃশ্যমান তিলের দিকে। ফর্সা পুরুষালী শরীরে ওটা যেন জ্বলজ্বল করছে। তন্ময়ী কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করল। এটা এর আগেও দেখেছে ও। কিন্তু কার শরীরে? কিছু সময়ের ব্যবধানেই ওর অধরপল্লবে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। তীক্ষ্ম কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়ল,
"স্টক করছিলেন?"
"প্রয়োজনবোধ করি না।"
কণ্ঠস্বরটা কর্ণে পৌঁছাতেই তন্ময়ীর মুখের হাসি বাড়ল। ওর ধারণাই তবে সঠিক। এবার বেশ কটাক্ষ করে বলল,
"আমি একা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।"
"কিছু সময় সঙ্গ প্রয়োজন হয়।"
"তন্ময়ীর কাউকে প্রয়োজন পড়ে না।"
"শিওর?"
"হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।"
এবার অপর বাইকে থাকা মানুষটা ঘাড় বাঁকিয়ে ওর দিকে তাকাল। অধরপল্লবে খেলা করছে বক্র হাসি। হেলমেটের জন্য সেটা দেখার সুযোগ হলো না তন্ময়ীর।
"ওকে।"
কথাটা শেষ হতেই চারপাশে আলোড়ন তুলল এক প্রকট শব্দ। মিনিটেই দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে গেল বাইক সহ তার মালিক। তন্ময়ী নিজের বাইক থামিয়ে থম মেরে বাইকের উপর বসে রইল। মন গহীনে থেকে আরও একটা প্রশ্ন ভেসে এলো। প্রশ্নের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে অথচ না আছে উত্তর আর না আছে সমাধান। হঠাৎ কিছু মানুষের কথা শুনে পিছু ফিরে তাকাতেই মেয়েটার অন্তরাত্মার পানি শুকিয়ে এলো। ভড়কাল, থমকাল। পরক্ষণেই অদ্ভুতভাবে চোখদুটোতে হিংস্রতার রেশ ছড়াল। হস্তজোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। মৃদু হাসল তন্ময়ী। নিজেকে রক্ষা করার মতো শক্তি, বুদ্ধি টুকু ওর আছে।
·
·
·
চলবে.........................................................................