অভিমানিনী - পর্ব ০৫ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


ডায়েরি খুলে আবার পড়তে শুরু করল দুজন…

          আমি আর সৌরভ দুই ভাই হলেও তার চেয়ে বেশি ছিলাম বন্ধু। আমার এক বছরের ছোট কিন্তু পড়াশোনা থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল একসাথে। ছোটবেলা থেকেই একই ক্লাসে পড়েছি, একই জামাকাপড় শেয়ার করেছি। একই মেয়ের পেছনে লাইন মেরেছি (মানসী তখন বাচ্চা মেয়ে ছিল, ভালোবাসার কথাও ভাবিনি)। আমরা দুই ভাই যেভাবে বড় হয়ে উঠেছি জানি না সেই জীবনের স্বাদ আর কয়জন পেয়েছে। বাবা-মা কখনো কোনো কিছুতে বাধা দেয়নি। মা যদিও একটু নরম মনের মানুষ আর কিছুটা ভীতু। ওই আরকি, সব মায়েরা যেমন হয় তেমনই। আমরা যতক্ষণ বাইরে থাকতাম মা প্রাণটা হাতে নিয়ে বসে থাকত। তবু বাবা সবসময় বলত আমার ছেলেরা বড় হবে বাঁধনছাড়া।

আমরা ছিলাম ভীষণ অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। শুধু আমরা দুজনই না, আমাদের সাথে এরকম আরো কয়েকজন পাগল বন্ধু ছিল। আমরা কত রকম অ্যাডভেঞ্চার যে করতাম! সাইকেল নিয়ে সারা বাংলাদেশ ঘোরার স্বপ্ন ছিল একসময়। স্বপ্নপূরণের নেশায় সাইকেল নিয়ে কোথায় কোথায় চলে যেতাম! সাঁতার কেটে পার হয়েছি বিশাল বিশাল কত নদী। আমাদের আরেকটা পছন্দের কাজ ছিল রাতের ঢাকায় সাইকেল চালানো। কী মজার যে ছিল ব্যাপারগুলো ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। মাঝরাত পর্যন্ত খালি রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে তারপর বাসায় ফিরতাম। আর আড্ডাবাজি তো ছিলই। মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর অবশ্য এসব পাগলামি একটু কমাতে হয়েছে। পড়াশোনা করেই কূল পেতাম না। তবে একেবারে ছেড়ে দিইনি কখনোই। বাসায় ফিরতে ফিরতে আমার বেশ রাত হয়ে যেত। সৌরভ অবশ্য বিয়ের পর আমাদের দলে আর ছিল না।

তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসার কারণে সবসময়ই বন্ধুদের ঠাট্টা টিটকিরির শিকার হতে হয়েছে ওকে। তবে সেটা আমাদের মতো সব বারমুখো পুরুষ মানুষকেই কোনো না কোনো কারণে হতে হয়, বিশেষ করে বউ-এর জন্য। মেয়েরা ওই বেশি রাত করে বাড়ি ফেরাটা যে কেন মানতে পারে না তা শুধু ওরাই জানে আর বিধাতা জানে।

আমার মানসী কিন্তু ওরকম ছিল না। সব ক্ষেত্রেই ও অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা ছিল। অনেকটা সাধারণের মধ্যে অসাধারণ। ঝগড়া করত, চিৎকার করত, অভিমান করত আবার মূর্তির মতো অনুভূতিহীন হওয়ার ভাণও করত কিন্তু রাগ করতে পারত না। আর আমার রাত করে বাসায় ফেরা নিয়েও ওর বলার কিছু ছিল না কখনো। হতে পারে ছোটবেলা থেকেই আমাকে এভাবে দেখে আসছে তাই কিংবা ও এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবার মতো মেয়েই না। কোথায় গেলাম কী করলাম কিছুই জিজ্ঞেস করত না কখনো। কিন্তু আমি নিজ থেকে যখন বলতাম খুব আগ্রহ নিয়ে শুনত।

আমার কাছে মেইন গেটের তালার ডুপ্লিকেট চাবি থাকত। তাই আমার বাসায় ঢুকতে কোনো সমস্যা হতো না। আর বাসায় ঢুকেই যে দৃশ্য দেখতাম তা দেখে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়। মানসী আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। কখনো খাওয়ার টেবিলে মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে, কখনো সোফায় হেলান দিয়ে টিভি দেখতে দেখতে, টিভি চলছে। আমি ওকে কত বলেছি,

“এসবের কোনো মানে হয়? তুই কেন আমার জন্য জেগে থাকিস? তুই ঘুমিয়ে পড়তে পারিস না?”

ও বলত,

“আমি ঘুমালে তোমাকে খেতে দেবে কে?”

“দেওয়ার কি আছে? টেবিলে সব ঢেকে রেখে দিবি। আমি এসে নিয়ে খাব।”

“বিড়াল মনে হয় তোমার বন্ধু লাগে? যে তোমার জন্য সব রেখে দেবে? তাছাড়া তুমি তো ঠাণ্ডা ভাত খেতে পারো না। আমি ঘুমালে গরম ভাতটা কোথায় পাবে? শুনি।”

“কে বলেছে পারি না। অবশ্যই পারি, এখন থেকে আমি ঠাণ্ডা ভাতই খাব।”

“না গো, এ কথা বলো না। আমি জানি, ঠাণ্ডা ভাত তোমার গলায় আটকে যায়। দুপুরে তো ক্যাম্পাসেই থাকো আর হাবিজাবি খাও। সারাদিন পর গরম ভাত দেখলেই তোমার চোখে মুখে যে একটা তৃপ্তি দেখতে পাই সেটা থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না।”

ওর এই না গো, হ্যাঁ গো বলাটার মধ্যেও অন্যরকম একটা ব্যাপার ছিল। নরমালি এসব যদি অন্য কারও মুখে শুনতাম হয়তো হেসে গড়াগড়ি খেতাম, ব্যাকডেটেড বলতাম। কিন্তু ওর মুখে কেমন যেন মানিয়ে যেত আর স্বাভাবিক লাগত। তারপর আমি বলতাম,

“আচ্ছা বুঝলাম, কিন্তু অন্তত ঘুমিয়ে তো থাকতে পারিস। আমি এসে না হয় ডেকে নিলাম।”

“ঘুমিয়েই তো থাকি!”

“সেটা তো ইচ্ছে করে না। চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে, সোফায় বসে থেকে অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে ঘুমিয়ে পড়া। ঘরে গিয়ে বিছানায় আরাম করে ঘুমিয়ে থাকা যায় না?

“ইশ, আমি যেন চিনি না তোমাকে! ওভাবে ঘুমালে তুমি জীবনেও আমাকে ডাকতে পারবে না, মায়া লাগবে।”

আমি অবাক হয়ে বলতাম,

“মায়া তোর জন্য! হাসালি।”

“হয়েছে হয়েছে, আর ঢং করতে হবে না। তোমার সবটাই আমার জানা।”

কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেছি! যাই হোক, একদিন আমাকেও ঘরমুখো হতে হলো। ঘটনাটা খুব মনে পড়ছে আজ। সাইকেল ট্রিপে গিয়েছিলাম গাজীপুর। ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ২টা বেজে গিয়েছিল। বাসায় ঢুকে খুব অবাক হলাম, সব অন্ধকার। প্রতিদিন বাইরের লাইট জ্বালানো থাকে, ড্রইং রুমের লাইট জ্বালানো থাকে। আজ কী হলো!

জুতা খুলতে খুলতে এসব ভাবছিলাম। হঠাৎ ডাইনিং রুমের লাইট জ্বলে উঠল আর আমি মানসীকে দেখতে পেলাম। এক পলকেই খেয়াল করলাম ওর চোখ ফোলা, কেঁদেছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তার মানে বাসায় কিছু হয়েছে। কিন্তু কী হয়েছে? আমি কিছু বলার আগেই ও বলল,

“ফ্রেশ হয়ে এসো। খেতে দিচ্ছি।”

আমি আর কোনো কথা না বলে তাই করলাম। খেতে বসে জিজ্ঞেস করলাম, “তুই নিচ্ছিস না কেন?”

“আমি খেয়েছি, তুমি খাও।”

“তুই যে আমাকে রেখে খাস না সেটা তো জানি। মিথ্যে বলছিস কেন?”

“কখনো খাইনি বলে যে কখনো খেতে পারব না এমন তো না।”

“তা ঠিক, কিন্তু তুই খাসনি তা আমি খুব ভালো করে জানি। আয় আমার কাছে, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না তো।”

“কেন?”

“এমনি।”

“কী হয়েছে বল তো।”

“কিছু হয়নি।”

“তাহলে কেঁদেছিস কেন?”

“কেঁদেছি তোমাকে কে বলল?”

“কারো বলা লাগবে কেন? তোর চোখ দেখেই তো বুঝতে পারছি।” মানসী কোনো কথা বলল না, অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম, “সব লাইট অফ ছিল কেন?”

“সেটা সকাল হলেই বুঝতে পারবে।”

কেন, এখন বলতে তোর অসুবিধা কী?”

“খালামণি লাইট অফ করে দিয়ে আমাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলেছে। আর তোমার জন্য প্রতিদিন এভাবে বসে থাকতে নিষেধ করেছে।”

“হুম, কিন্তু মা এত ক্ষেপলো কেন? আমার দেরি করে ফেরাটা তো নতুন কিছু না। রোজই তো দেরি করে ফিরি।”

“কখনো কিছু বলে না মানে কি তোমার এই কাজগুলো তার খুব পছন্দ?” আমি চুপ করে রইলাম। ও আবার বলতে শুরু করল,

“সকালে নাকি কাকে মেরেছো। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে এসে বিচার দিয়ে গেছে খালামণির কাছে।”

“শালার এত বড় সাহস আর বাড়িতে এসেছিল। কাপুরুষের বাচ্চা তাও এসেছে যখন আমি বাড়িতে নেই।”

“বাহ! মেরে খুব পুরুষত্ব দেখানো হয়েছিল না?”

“আরে বাবা ও কি ক্লাস টু এর বাচ্চা নাকি যে মার খেয়ে বিচার দেবে? পুরুষ হলে তো পাল্টা মার দিত। বিচার দিত না।

“তুমি কি আরো ঝামেলা চাচ্ছো?”

আমি চুপ করে রইলাম। ও আবার বলল,

“দেখো, ছেলের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য শুনতে কোনো মায়েরই ভালো লাগে না।”

“কী করব বল? আমি তো ছোটবেলা থেকেই এরকম।”

ও অন্যদিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছিল। আমি ভাত মেখে ওর মুখের সামনে ধরে বললাম,

“আচ্ছা যাই হোক, এখন খেয়ে নে।”

“তুমি খাও, আমার ইচ্ছে নেই।”

ওর এ কথায় আমার প্রচণ্ড রাগ হলো, তাই না খেয়েই উঠে যাচ্ছিলাম।

ও আমাকে থামিয়ে বলল,

“সরি, এসো আমাকে খাইয়ে দাও।”

আমি আবার বসলাম। ওকে খাইয়ে দিতে দিতে বললাম,

“সবই তোদের স্বভাবের দোষ। জল ঘোলা করে না খেলে ভালো লাগে না।

ও আর কিছু বলল না, চুপচাপ খেয়ে নিল। ওকে খাইয়ে দিতে দিতে আমিও খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষ হলে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,

“সবই তো বুঝলাম, মা রাগ করেছে কিন্তু তোর কান্নার রহস্যটা কি শুনি?”

“আমার কান্নার কোনো রহস্য নেই।”

“আমার কাছে মিথ্যে বলিস না। সত্যি কথাটা এক্ষুনি বল, না হলে এখানেই সারারাত দাঁড়িয়ে থাকব।”

“উফ তুমি এত পাগলামি কেন করো?”

আমি একটু ধমকের সুরে বললাম,

“আমি সত্যিটা বলতে বলেছি।”

ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“খালামনি চায় যেন আমি তোমাকে এসব করতে নিষেধ করি, শাসন করি। তার ধারণা আমি চাইলেই তোমাকে ঘরমুখো করতে পারি কিন্তু করি না। কিন্তু আমি তোমাকে কন্ট্রোল করার কোনো চেষ্টা করি না।”

“তো এটুকু কথায় কান্নার কী আছে?”

“তুমি বুঝবে না।”

“বুঝিয়ে বল, না হলে কী করে বুঝব?”

“কাল বুঝিয়ে বলব, এখন ঘুমাতে যাই।”

“আচ্ছা, আমার ঘরে চল।”

“কেন?”

“কেন আবার কি? আজকে আমার সাথে থাকবি, তাই।”

“না, আজ না।”

“না কেন? তুই আমার বিয়ে করা বউ। সবসময় মোনার সাথে কেন থাকতে হবে?”

“আজ আমাকে ছেড়ে দাও।

“নাহ, আজকে আমার ঘরেই তোকে থাকতে হবে আর তোর পেটের

সব কথা তোকে বলতেও হবে। কেঁদে একদম চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিস! এত কষ্টটা কিসের তোর?”

“উফ, চিৎকার করো না। খালামণি উঠে যাবে।”

“আমি জানতে চাই তুই আমার ঘরে যাবি কিনা?”

ও ভালো করেই জানত, কথা না শুনলে আমি আরো রেগে যাব তাই অবশেষে আমার রাগের কাছে হার মেনে আমার ঘরে চলে এল। ওর দুটো হাত দুহাতে ধরে ওকে মুখোমুখি বসিয়ে বললাম,

“সবটা খুলে বল আমাকে, না বললে যে বুঝতে পারি না।”

“কী বলব? খালামণির ধারনটাই বোধহয় ঠিক।”

“কোন ধারণাটা?”

ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“ওই যে, উনি মনে করেন আমি ইচ্ছে করলেই তোমার রাত করে বাসায় ফেরাটা বন্ধ করতে পারি, ইচ্ছে করলেই তোমার সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে পারি। ইচ্ছে করলেই তোমার সব বাউন্ডুলেপনা আমি ছাড়াতে পারি। কিন্তু আমি কিছুই বলি না তোমাকে। কারণ আমি তোমার ভালোবাসায় অন্ধ। এতটাই অন্ধ যে ঠিক-ভুল কিছু বুঝি না। তুমি যা করো তাই ঠিক মনে করি।”

“যে ছেলে মায়ের কথা শোনে না সে ছেলে বউ-এর কথা শুনবে? তাছাড়া মা তো জানেও না আমাদের বিয়ের কথা!”

মানসী আমার দিকে তাকিয়ে ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে বলল,

“বিয়ের কথা না জানলেও সম্পর্কের কথা তো জানে। সবাই পারে, শুধু আমিই পারি না। খালামণি আগেও অনেকবার বলেছে এসব, আর বলবেই বা না কেন? অনন্যা তো পেরেছে। সৌরভদা একসময় তোমারই মতো ছিল। এখনো কি আছে? নেই তো। অনন্যা তো ঠিক পেরেছে। আমি পারিনি এটা আমার ব্যর্থতা।”

কথাগুলো বলতে বলতেই কেঁদে ফেলল মানসী। এবার আমি বুঝতে পারলাম সমস্যাটা আসলে কোথায়! ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,

“কাঁদিস না, প্লিজ।”

সাথে সাথে ও আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগল। ব্যস, দিশেহারা লাগল আমার। এর চেয়ে বড় অস্ত্র আর কী লাগে? ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,

“এতদিন এসব ব্যাপারে বলিসনি কেন কিছু? সব নিজের মধ্যে চাপিয়ে রাখিস। জানিস তো না বললে কিছু বুঝতে পারি না। তবু কেন বলিস না?”

“আমার তো সেই ক্ষমতাটাই নেই।”

মানসী আমাকে আরো শক্ত করে ধরে কাঁদতে লাগল। কতদিনের জমানো কান্না ছিল কে জানে! আমি ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম,

“কাল থেকে তাড়াতাড়ি ফিরব, সিগারেটটা এখনি ছাড়তে পারব না। তবে কমিয়ে দেব প্রমিস! আর এখন থেকে সব কথা আমাকে বলবি I এবারের মতো মাফ করে দে। আমি বুঝতে পারিনি।”

সত্যিই আমি ওকে কখনো বুঝতে পারিনি। ও যে এত অভিমানী তা যদি আগে বুঝতাম তবে সব ছেড়েছুড়ে আমি শুধু ওকে বোঝার চেষ্টা করতাম!

কবে, কখন থেকে আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল তা আমরা নিজেরাও জানতাম না। প্রথমে কিন্তু কেউ কাউকে বলিওনি ভালোবাসার কথা তবু এই না বলা কথাটি আমরা দুজনেই হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। সেই ১৫ বছর বয়স থেকে ও মায়ের কাছ থেকে আমার পছন্দের সব রান্না শিখেছে। আমি অসুস্থ হলে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ঘরে এসে সারারাত আমার পাশে বসে কেঁদেছে, অদ্ভুত! এমন তো না যে ও কাঁদলেই আমি সুস্থ হয়ে যাব, তবু কেঁদেছে। অথচ ও অসুস্থ হলে আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত হইনি। কেন কে জানে!

আসলে ও আমার জন্য কী কী করেছে, কী রকম করে ভালোবেসেছে তা আমি লিখে শেষ করতে পারব না। সত্যি ওর মতো মেয়ে যার জীবনে আসবে তার মতো সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আর নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে পাগলিটা যতদিন আমার কাছে ছিল আমি বুঝতে পারিনি যে আমি কতটা সৌভাগ্যবান। যত্ন করিনি ওকে। যত্ন করব কী! ওকে যে কতটা ভালোবাসি তা তো ওকে হারিয়ে বুঝেছি। কিন্তু যে মানুষটা আমাকে ওইভাবে ভালোবেসেছে, একটা দিন চোখের আড়াল হলে পাগল হয়ে গেছে, আমার বাহুতে মাথা রেখে না ঘুমালে যার ঘুম হয়নি সে মানুষটা আমাকে ছেড়ে কীভাবে আছে এতগুলো বছর? মেয়েরা বোধহয় এমনই যখন যেখানে থাকে সেখানেই মানিয়ে নিতে পারে!

নীরব ইশতিয়াক
১৮ মার্চ, ২০১৬
·
·
·
চলবে..........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp