তাহসিন কিছু স্ন্যাকস কিনতে বাংলাদেশি গ্রোসারি শপে এসেছে। এসে দেখে লগ্ন বাজার করছে। কার্টে চাল ডাল দেখে জিজ্ঞেস করল, খিচুড়ি হবে নাকি?’
লগ্ন বলল, ‘আরে আপনি। হ্যাঁ, একটু খিচুড়ি করব ভাবছি।’
‘দাওয়াত দেবেন? নর্থ ডাকোটা থেকে আসার পর একবারও খিচুড়ি খাইনি।’
লগ্ন হেসে বলল, ‘যদি না দিই?’
তাহসিন হেসে বলল, ‘দিবেন দিবেন জানি। খিচুড়ির সাথে আর কী হবে?’
‘বিফ ভুনা।’
‘আহ্ এক্ষুনি জিভে জল এসে যাচ্ছে।’
লগ্ন অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো নিচ্ছিল। হঠাৎ তাহসিন বলল, ‘যদি কিছু মনে না করেন আমি একটা ইলিশ মাছ নিই? আমি তো ভাজতে পারি না। আপনাকেই ভাজতে হবে। দুজন মিলে খেলাম। খিচুড়ির সাথে জমবে খুব।’
‘আপনি শিওর আমি আপনাকে দাওয়াত করব?’
তাহসিন আবার হেসে বলল, ‘আরে দাওয়াত তো করেই ফেলেছেন। বাঙালি বলে কথা। প্লিজ ইলিশটা নিতে মানা করবেন না।’
লগ্ন হেসে বলল, ‘আচ্ছা নিন। একটু মোটা পিস করতে বলবেন। ওরা বেশি চিকন করে ফেলে। ভাজলে শক্ত হয়ে যায়।’
সমর্থন পেয়ে তাহসিন দৌড়ে গেল মাছ কিনতে। এখন ইলিশের মৌসুম। গতদিন এসেই বড় বড় ইলিশ মাছ দেখেছিল। তখন থেকেই খাওয়ার জন্য অস্থির লাগছিল।
লগ্ন খিচুড়ি মাংস রান্না করে ইলিশ ভাজার আগমুহূর্তে তাহসিনকে ডাকল। তাহসিন আসার পর বলল, ‘দেখুন ইলিশ মাছ এতটা তো লাগবেনা। আজকে আমাদের দুজনের জন্য দুপিস করে রেখেছি। বাকিটা আপনি নিয়ে যাবেন।’
‘আরে না না। থাকুক এটা এখানেই।’
লগ্ন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, ‘আমার কথা শেষ করতে দিন। ‘আচ্ছা বলুন।’
‘আমি এখন মাছ ভাজব। কীভাবে ভাজব আপনি দেখবেন শিখবেন। মাছ ভাজা খুব সহজ। এরপর বাকিটা আপনি নিজে ভেজে খাবেন। যাতে ইচ্ছে হলে খেতে পারেন।’
তাহসিনের মাছ ভাজা শেখার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। কিন্তু না করতে পারল না। লগ্ন মসলা মেখে মাছ ভাজল। তাহসিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরোটা দেখল। ততক্ষণে দুজনের মাঝে টুকটাক অনেক গল্পই হলো।
অনেকদিন বাদে তাহসিন কবজি ডুবিয়ে বাঙালি খাবার খেলো। যাওয়ার সময় লগ্ন বক্সে করে আরেক বেলা খাওয়ার মতো খাবার দিয়ে দিলো। তাহসিন প্রথমে নিতে চাইল না।
তখন লগ্ন বলল, ‘নিন নিন। বেশি করেই করেছিলাম। আমার আরেকবার খাওয়ার মতো খাবার আছে। তাই আপনি এটা না নিলে নষ্ট হবে।’
এবার তাহসিন খাবারটা নিল। তারপর ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
—————
লগ্ন টেক্সাসে এত সুন্দর করে সব গুছিয়ে নিয়েছিল, মাঝে জল ঢেলে দিলো তার অফিস। ভালো পারফরমেন্সের কারণে তাকে প্রোমোশন দেয়া হয়েছে কিন্তু পোস্টিং হবে কানাডায়, মিসিসাগাতে। সিয়াটল এত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর তবুও সেখান থেকে আসার সময় মন খারাপ হয়নি। কিন্তু টেক্সাস ছাড়তে মন খারাপ হচ্ছে। তার পছন্দের বাসা, শখের ফার্নিচারগুলো কী করবে এখন? পরক্ষণেই আবার নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করল আসলে মন খারাপটা কেন হচ্ছে? গোছানো সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে নাকি আমেরিকা ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে? আমেরিকা ছেড়ে চলে গেলে কি নাদভিকে পাওয়ার আশাও ছেড়ে যেতে হবে? এমন কেন মনে হচ্ছে তার? নাদভি তো সব ভুল তথ্যই দিয়েছিল। নাদভি যে আমেরিকায় আছে এমনটা না হওয়ার সম্ভাবনাই তো বেশি। হ্যাঁ, চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরি নেওয়া যায় কিন্তু আমেরিকার সবচেয়ে বড় তিনটি কোম্পানির মধ্যে ওয়ালমার্ট একটি। ওয়ালমার্টে এত ভালো পজিশনের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। নিজের ক্যারিয়ার সবকিছুর আগে। এসব আলতুফালতু ছেলেকে খোঁজার আশায় তা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। তার ওপর খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ১%।
লগ্ন তার সব ফার্নিচার বিক্রি করে দিলো। ফার্নিচার মুভ করার সময় তাহসিন দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার লগ্নজিতা, ফার্নিচার বিক্রি করে দিচ্ছেন নাকি?’
‘হ্যাঁ। আসলে আমার কানাডায় পোস্টিং হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে মুভ করব। তাই সব বিক্রি করে দিচ্ছি।’
তাহসিন অবাক হয়ে বলল, ‘মানে আপনি কানাডায় চলে যাচ্ছেন!’
‘জি।’
তাহসিন আর কিছু বলল না। লগ্ন বাকি ফার্নিচারগুলো বের করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
রাতে তাহসিন একটা পিৎজা নিয়ে হাজির হলো। দরজা খুলে লগ্ন অবাক হলো।
তাহসিন বলল, ‘আপনি চলে যাচ্ছেন তাই ভাবলাম আপনাকে কিছু বানিয়ে খাওয়াই। আমি আসলে পিৎজা, পাস্তা ছাড়া তেমন কিছু পারি না। পিৎজাটাই একটু ভালো হয় তাই এটাই করলাম। লগ্ন হেসে বলল, ‘থ্যাংক ইউ! আসুন।’
পিৎজা খেয়ে লগ্ন বলল, ‘আপনি কিন্তু দারুণ পিৎজা বানান।’
‘তাই নাকি?’
‘সত্যি।’
‘থ্যাংকস।’
খেতে খেতে অনেক গল্প হলো। একটা সময় তাহসিন বলল, ‘লগ্ন একটা কথা বলার ছিল।’
লগ্ন পিৎজায় কামড় দিতে দিতে বলল, ‘বলুন না।’
তাহসিন কিছুটা ইতস্তত করে বলল, ‘আমি আসলে আরেকটু সময় নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি সময় নেই।’
লগ্ন এইমাত্র বুঝতে পারল তাহসিন কী বলতে চায়। কিন্তু এখন তো আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাহসিন এবার বলল, ‘প্রতিদিন আসতে যেতে লিফটে দেখতাম আপনাকে। তখন থেকেই ভালো লাগত। কবে ভালোবাসতে শুরু করেছি জানি না।’
তাহসিন আর কিছু বলার আগেই লগ্ন বলল, ‘তাহসিন আমি বিবাহিত।’
চমকে উঠল তাহসিন। অবিশ্বাস্য গলায় বলল, ‘আপনি আমাকে অ্যাভয়েড করার জন্য বলছেন না তো?’
‘না। সত্যিই আমি বিবাহিত। আমাদের তো আসলে কখনো ফ্যামিলি নিয়ে কথা হয়নি তাই বলা হয়নি।’
লগ্ন মোবাইল থেকে তার বিয়ের ছবি বের করে দেখাল।
তাহসিন বলল, ‘সরি।’
‘ইটস ওকে।’
·
·
·
চলবে........................................................................