তুমি আমার বসন্ত - পর্ব ০৪ - আমেনা আক্তার আখি - ধারাবাহিক গল্প

          রুশান বাইকে বসেই তাবাসসুমের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটার জন্য আজকে তার মন-মেজাজ ঠিক ছিলনা। যার ফলস্বরূপ, আজকে তার ইন্টারভিউ খারাপ হয়েছে৷ কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তিতে রুশার আর মুখে ঝগড়া করার জোর কিংবা ইচ্ছা কোনোটাই করল না। দৃষ্টির মাধ্যমেই রাগ ঝাড়ল সে।

এদিকে, তাবাসসুম ও কম কিসে? সেও যতটা পারে ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে আছে রুশানের দিকে। আজ এই লোকটার জন্যই তার দিনটা খারাপ কেঁটেছে। সম্পূর্ণটাই খারাপ ঘটেছে তার সাথে। লোকটার মাথা ফাটাতে পারলে বোধহয় তাবাসসুমের শান্তি হতো। 

সহসা রুশান বাইক স্টার্ট দিয়ে তাবাসসুমকে দ্রুত পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল৷ চমকে পিছিয়ে গেল তাবাসসুম। এতক্ষণের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মূহুর্তেই বিস্ময়ে বড় বড় হলো তার। ভয়ে বুকে হাত চলে আসল৷ ঘাড় ঘুরিয়ে বাড়ির ভিতরে তাকাতে দেখল, রুশান নামের লোকটা বাইক পার্ক করে কেমন গা ছাড়া ভাব নিয়ে দো-তলায় উঠে যাচ্ছে। যেন এতক্ষণে কিছুই ঘটেনি।
তাবাসসুম রাগে কাঁধের ব্যাগ চেপে ধরল শক্ত করে। ব্যাগের উপর রুশানের রাগটা খাটালো৷ বিরবির করে বলে উঠল—

“বেয়াদব লোক একটা।”

—————

বাড়িতে এসেও অবাক হলো তাবাসসুম। তার ফুফু বসে আছে ড্রইংরুমের সোফায়। তাবাসসুম দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল মমতাকে। খুশি হয়ে বলল—

“তুমি কখন এলে ফুফু।”

মমতা বেগম তাবাসসুমকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলল—

“দুপুরে এসেছি। তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল৷ কিন্তু এসেই শুনলাম তুই নাকি ঘুরতে বের হয়েছিস?”

তাবাসসুম মাথা নাড়ল। মমতা বেগম সহসা তাবাসসুমকে পরখ করে বলে উঠলেন—

“তোর জামাতে এসব কি ভরেছে?”

জ্বিভে কামড় দিল তাবাসসুম। মমতা বেগমের থেকে সরে এসে বলল—

“এই দেখো। ফুচকা পড়েছিল জামায়। দাঁড়াও আমি চেঞ্জ করে আসছি।”

বলেই উঠে দাঁড়ালো তাবাসসুম। চরণ ফেলতেই পিছন থেকে মুনায়া বেগমের রাগী গলার স্বর শোনা গেল।

“শুধু কি ফুচকাই খেয়েছেন, নাকি আরও কিছু খাওয়া হয়েছে?”

তাবাসসুম থেমে গেল। ফুচকা বাদে তো আর কিছু মুখেই তোলেনি সে। খাওয়ার কথা তো মাথায় ছিলনা৷ সারাদিন তো ঘুরতে আর মন খারাপ করতে করতেই গেল৷ মুনায়া বেগম একই প্রশ্ন করে উঠলেন পুনরায়৷ তাবাসসুম এবার ঘুরে দাঁড়ালো। মায়ের নিকট এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী স্বরে বলল—

“এভাবে দজ্জাল মায়েদের মতো কন্ঠস্বর নিয়ে কথা কেন বলছো মা? তোমার কন্ঠে কি ওমন রাগী রাগী ভাব মানায়? তোমার কন্ঠে তো হাসি ঠাট্টার কথা, ভালোবাসার কথা মানায়। সবসময় হাসিখুশি আর ভালোবাসা মিশিয়ে কথা বলবে বুঝেছো? এখন একটা সত্যি কথা বলি?”

মুনায়া বেগম চোখ ছোট ছোট করলেন। মেয়ের এমন আহ্লাদী কন্ঠস্বর শুনে তিনি নরম কন্ঠেই বললেন—

“বল।”

“ওমা, সত্যি খেতে একদম ভুলে গেছিলাম। মনেই ছিলনা খাওয়ার কথা। সত্যি বলছি। যদি খাওয়ার কথা মনে পড়তো তাহলে খেয়ে নিতাম। মনেই তো পড়েনি।”

মুনায়া বেগম গলা ছাড়িয়ে নিলেন। মেয়ের দিকে ঘুরে রাগী স্বরে শক্ত মুখে বললেন—

“খাওয়ার কথা মনে থাকেনা তাইনা? চেহারা আয়নায় দেখেছিস? বানরের মতো হচ্ছিস দিনদিন। আর সব কথা মনে থাকে খাওয়ার কথা মাথায় থাকেনা,তাইনা?”

মমতা বেগম উঠে আসলেন৷ মুনায়া বেগমের পাশে এসে দাড়িয়ে বললেন—

“থাক আর বকো না ভাবি।”

তাবাসসুম মুখ ফুলিয়ে বলল—

“তোমার ভাইয়ের বউ সবসময় এরকম দজ্জালদের মতো ব্যবহার করে আমার সাথে।”

“তাই?”

তাবাসসুম মাথা নাড়ালো। মুনায়া বেগম রেগে গেলেন। রেগে মেয়ের কান টেনে ধরলেন। বললে—

“আমি তোর সাথে দজ্জালদের মতো ব্যবহার করি?”

“এইতো এখনই তো করছো। দেখছো ফুফি?”

মমতা বেগম হাসলেন। মুনায়া বেগমকে কান ছাড়তে বলে, বললেন—

“তোমরাও পারো বটে, ভাবি। আর তোহা তুইও কিন্তু দিনদিন ফাজিল হচ্ছিস। সকাল থেকে এখনো কিছু খাসনি? এবার আমি বকা দিবো কিন্তু। যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর আমি তোকে খাইয়ে দিবো ”

তাবাসসুম মুখ ফুলালো। ঘরে যেতে যেতে বলল—

“হ্যাঁ সবাই শুধু বকো। কেউ ভালোবাসোনা আমায়।”

“তোকে কে বললো তোকে কেউ ভালোবাসেনা?”

ঘরের মধ্যে সহসা কোনো পুরুষালী গলার গুরুগম্ভীর স্বর শুনে চমকালো তাবাসসুম। সামনে তাকাতে দেখল শাফান তার খাটের উপর বসে আছে৷ তাবাসসুম কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। পরমুহূর্তেই ঘরে ঢুকতে, শাফান ফোনে চোখ রেখে গম্ভীর স্বরে বলল—

“ভালো তো তোকে অনেকেই বাসে। কিন্তু তুই বুঝতে পারিস না। আশপাশ একটু খেয়াল করে দেখ অনেককেই পাবি।”

তাবাসসুম ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলল—

“কি যে বলেন না শাফান ভাই। আমাকে তো সবাই বকা আর শাষণের উপরেই রাখে। ভালোবাসার মধ্যে শুধু ফুফু আর বাবাই আমাকে ভালোবাসে।”

“বকা দেওয়া আর শাষণ করার মাঝেও ভালোবাসা থাকে?”

“জানি তো, যেমন আমার দুষ্টুমিষ্টি মা আমাকে বকে, আমাকে শাষণ করে ভালোবেসেই তো করে।”

শাফান ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে এবার তাবাসুমের দিকে তাকালো। মেয়েটাকে ও কি বোঝাতে চাচ্ছে আর মেয়েটা কি বুঝছে? মেয়েটা কি কোনোদিন বুঝবে না তার ভালোবাসা? ভেবেই লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলল শাফান। 
·
·
·
চলবে……………………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp