ফানুস - পর্ব ০২ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


          ‘ক্লিওপেট্রা’–ফেসবুক প্রোফাইল নাম এটুকুই শুধু। আগে-পিছে কিছু নেই। স্মরণ বেশ কিছুদিন আগেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছিল, পেট্রা অ্যাকসেপ্টও করেছে। কিন্তু পেট্রার অ্যাবাউটে কিছুই লেখা নেই, কোন স্কুল, কোন কলেজ এবং অন্য কোনো তথ্য নেই। তবে ছবি আছে অনেক। ছবিগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল স্মরণ এবং ভারী অবাক হলো। কয়েক বছর আগে পেট্রা দেখতে হুরপরির মতো ছিল। গায়ের রঙটা সুন্দর! এখনকার মতো ম্যাটমেটে ফরসা নয়, ধবধবে ফরসা ছিল। পেট্রার চোখ, হাসি–সবকিছু যেন কথা বলত। এখনো পেট্রার চোখগুলো খুব গভীর, হাসিটাও আকর্ষণীয়; কিন্তু এই পুরোনো ছবির মেয়েটার কাছে সব ম্লান। ছবি বলে এমন লাগছে তা কিন্তু নয়, কারণ এখনকার ছবিগুলো আগে দেখেছে স্মরণ। আকাশপাতাল তফাত। দুই সময়ের পেট্রাকে দেখলে মনে হয় বর্তমান পেট্রা বহু অবহেলায় পড়ে আছে। মেয়েটা কি কোনো ব্যাপারে ফ্রাস্টেটেড?

দিন দিন পেট্রার ব্যাপারে আকর্ষণ বেড়েই চলেছে। তার মধ্যে কী আছে, যা এত টানছে স্মরণকে! প্রতিদিন অফিসে যেতে-আসতে দেখা হয়, লাঞ্চের সময়। তার নাম পেট্রা, সে একজন আর্কিটেক্ট, বুয়েট থেকে পাস করা। ব্যস, এটুকুই শুধু জানে। অফিসে স্মরণকে নিজের ভাবমূর্তি বজায় রেখে চলতে হয়। কেউ এখনো অতটা বিশ্বস্ত হয় নি, যার কাছ থেকে পেট্রার ব্যাপারে জানা যায়।

দরজায় টোকা দিয়ে স্মরণের মা বললেন, ‘আসব বাৰু?

স্মরণের মাকে দেখলে কেউ বলবে না উনি স্মরণের মা। স্মরণের বন্ধুরা তো তার বড় বোন বলে ভুল করত। বয়সও খুব বেশি নয়, তার ওপর খুব স্মার্ট মহিলা তিনি। খুব সুন্দরী হওয়ায় অল্পবয়সে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। পরের বছরই স্মরণের জন্ম হয়। স্মরণ একটু বড় হলে উনি স্বামীর অনুপ্রেরণায় অনেক দূর পড়াশোনাও করেছেন। একমাত্র ছেলে স্মরণ তাঁর বন্ধুসম। স্মরণ বলল, ‘মাম্মা, এসো এসো।’

মা ঘরে ঢুকে একটা ছবি এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘দেখ তো মেয়েটা কেমন?

মা স্মরণের জন্য মেয়ে দেখছেন। দুদিন পরপরই একেকটা মেয়েকে দেখান। এবার স্মরণ মেয়েটাকে না দেখেই ল্যাপটপটা মায়ের দিকে ঘুরিয়ে বলল, ‘দেখো তো মাম্মা, এই মেয়েটা কেমন?

স্মরণ পেট্রার বর্তমান একটা ছবিই দেখাল। মা বললেন, ‘আমার ছেলের মনে ধরেছে নাকি? তাহলে তো অবশ্যই সে এক্সেপশনাল।

‘আহ্ মাম্মা, একটু ভালো করে দেখে বলল না?

মা দেখেশুনে বললেন, ‘ছবি দেখে কাউকে জাজ করাটা ঠিক না, বাবা। একদিন বাসায় নিয়ে আয় না, সামনাসামনি দেখেই না হয় বলব।’

‘মাম্মা, সে আমার গার্লফ্রেন্ড নয়।

মা চোখ কপালে তুলে বললেন, তাহলে? একতরফা?

‘না, মানে সে আমার কলিগ। দুমাস ধরে চিনি, খুব ভালো লাগে, মাম্মা! অদ্ভুতভাবে আকর্ষণ বোধ করি। তাকে কিছু বলি নি এখনো। বোঝাই তো, অফিসে তো অনেক বুঝেশুনে চলতে হয়। রেপুটেশনের ব্যাপার।’

মা মিষ্টি করে হেসে স্মরণের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, সময় নে। কিন্তু বাবু, বেশি সময় না, মাম্মার কিন্তু তাড়াতাড়ি বউ চাই।

স্মরণ বলল, ‘শিওর।’

‘নাম কী?

‘পেট্রা।

মা চোখ দুটো বড় বড় করে হেসে বলল, ক্লিওপেট্রা?

‘মে বি, মে বি নট।

‘ঠিকাছে, তাহলে এসব ছবি ফেরত দিয়ে দিই।

স্মরণ হেসে বলল, ‘দাও। এই প্রজেক্ট ক্যানসেল হলে না হয় আবার দুজন মিলে মেয়ে খুঁজব।

মা-ও হাসিতে হাসি মিলিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। স্মরণ পেছন থেকে বলল, ‘কিন্তু মাম্মা, একটা প্রবলেম আছে।

মা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কী প্রবলেম?

‘পেট্রা আমার চেয়ে বড়।

মা এবার অবাক হলেন, এটাও বড়! হা রে বাবু, বড় ছাড়া কি তোর কাউকে চোখে পড়ে না?

‘আমার কী দোষ? যদি বড়রা এত অ্যাট্রাকটিভ হয়? ছোট ছোট মেয়েগুলোকে আমার একটুও ভাল্লাগে না মাম্মা, সব ইমম্যাচিউর।’

মা মুচকি হাসছিলেন। স্মরণ বলল, ‘তবে পেট্রা বেশি বড় না, মাত্র এক বছর। তাও পড়াশোনার হিসেবে। বয়সে ছোটও হতে পারে। আমি ঠিক জানি না। অত কথা বলার সুযোগ হয় নি। তবে অফিসে আমি ওর সিনিয়র।

‘তুই তো ধরা খেয়ে গেছিস বাবু।

এ কথা বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলেন মা। স্মরণও হেসে ফেলল। স্মরণ জানে ওর মা আজও ইমম্যাচিউর। তার ধারণা, ইমম্যাচিওরিটি শুধু তার মাকেই মানায়।

—————

প্রিয় প্রতিদিন রাত আটটায় অফিস থেকে ফিরে নয়টায় জিমে যায়। জিম থেকে ফেরে রাত এগারোটায়। ততক্ষণে মা-বাবা, শুদ্ধ–সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। নিকিতা বহু কষ্টে জেগে থাকে। মাঝেমধ্যে অবশ্য যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু কাজের মেয়েকে শেখানো আছে প্রিয় এলে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে পরে দরজা খুলতে। সে চায় না প্রিয় এসে দেখুক সে অপেক্ষা না করে ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু এই কাজের জন্য গোপনে সে মেয়েটাকে আলাদা করে বেতন দেয়। আজও প্রিয় বেল বাজাতেই মেয়েটা নিকিতাকে উঠিয়ে দিল। নিকিতা দরজা খুলে দিল। প্রিয় ভেতরে ঢুকে জুতা খুলতে খুলতে বলল, ‘কেন জেগে থাকো, নিকিতা? শুদ্ধর সাথে শুয়ে পড়লেই তো পারো, কতবার বলেছি।’

‘তোমার গরম পানি লাগবে? গিজারে কী যেন সমস্যা হয়েছে। চুলায় পানি গরম করে দেই?

প্রিয় হেসে নিজের ভেজা চুলগুলোকে ইশারায় দেখিয়ে হাসল। তারপর বলল, ‘জিম থেকে শাওয়ার নিয়ে এসেছি। কিন্তু গিজার নষ্ট তো লোক ডাকো নি কেন ঠিক করতে?

‘আমি সন্ধ্যার পর টের পেয়েছি।’

‘ঠিক আছে, সকালে চুলায় পানি গরম করে দিয়ো তাহলে। এখন ভাত দাও।’

এ কথা বলে প্রিয় নিজের ঘরে গেল।

নিকিতা খুব অবাক হলো। প্রিয় অকারণেই হেসে কথা বলল। গিজারের লোক ডাকা হয় নি বলে বকা দেওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। এটাই প্রিয় করে, কিন্তু আজ হাসিমুখে মেনে নিল কেন? প্রিয়র কি আজ মুড ভালো? খেতে বসে ব্যাপারটা দেখতে হবে।

খেতে খেতে প্রিয় বলল, পাবদা মাছটা কে বেঁধেছে? নিকিতা বলল, ‘কে আর! মানিকের মা বেঁধেছে।’

‘ওহ, অসাধারণ হয়েছে। সে আসলেই খুব ভালো রাধে। সামনের মাস থেকে তার বেতন এক হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়ো।’

‘আচ্ছা দেব।’ নিকিতা সুযোগ বুঝে বলল, আমাকে কি মাফ করা যায় না?

‘কী বিষয়ে? আচ্ছা থাক, এখন না, ঘরে গিয়ে বোলো। নিকিতা চুপচাপ খেয়ে উঠল।

বারান্দায় চেয়ারে বসে সিগারেট খেতে খেতে প্রিয় ডাকল নিকিতাকে। নিকিতা শাল মুড়ি দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে গেল। ওদিকে প্রিয় শুধু ট্রাউজার আর টি-শার্ট পরা ছিল। প্রিয় বলল, ‘আরে, এত শীত লাগছে। তোমার!

নিকিতা প্রিয়র পাশের চেয়ারটাতে বসতে বসতে বলল, ‘সমস্যা নেই।

‘আচ্ছা এবার বলো, কী যেন বলছিলে তখন?

‘আমাকে কি এবারের মতো কোনোভাবে মাফ করা যায় না?

‘শুদ্ধর ব্যাপারে?

‘হুম।

‘দেখো, তোমাকে প্রথমেই তো বলেছিলাম শুদ্ধর ব্যাপারে কোনো অবহেলা আমি মানব না। তুমি শুদ্ধকে আদর করো ঠিকাছে, কিন্তু মন থেকে না, আমাকে খুশি করার জন্য, আমাকে দেওয়া কথা রাখার জন্য করো। তাই বারবার ভুল হয় তোমার। কিন্তু নিকিতা, ও একটা মা-হারা নিষ্পাপ শিশু, কেন তুমি ওকে নিজের ছেলে ভাবতে পারো না?

নিকিতা বলল, ‘শুদ্ধ যেদিন আমাকে মা ভাবতে পারবে, সেদিন আমি ওকে ছেলে ভাবতে পারব। ও আমাকে নিকিতা আন্টি বলে ডাকে, মা তো ডাকে না!”

‘ও মায়ের ব্যাপারে একটু সেনসিটিভ। বড় হতে হতে ঠিক হয়ে যাবে। ও ছোট মানুষ, ওর সাথে তোমার অভিমান মানায় না। ওর আন্টি ডাককে কীভাবে মা ডাক বানাতে হবে, সেটা একটা মেয়ে হিসেবে তোমার জানার কথা।

নিকিতা চুপ। প্রিয় বলল, ‘ঠিকাছে, কাল থেকে তুমিই আগের মতো শুদ্ধকে স্কুলে নিয়ে যাবে, নিয়ে আসবে এবং অন্য ব্যাপারগুলো দেখবে। তবে খেয়াল রাখবে, আর যেন ভুল না হয়। শুদ্ধ আমার প্রাণ।

‘আর ভুল হবে না।’

‘যাও, শুয়ে পড়ো।

‘তুমি?

‘আমি পরে শোব।

তাহলে আমিও এখানেই থাকি কিছুক্ষণ।

‘না, তুমি ঘরে যাও। আর আমাকে শালটা দিয়ে যাও।

নিকিতা শালটা দিয়ে ঘরে চলে গেল। প্রিয় তার শালটা চেয়ে নিয়ে পরেছে, এটাও তার জন্য অনেক। নিকিতা শুয়ে পড়ল কিন্তু ঘুম আসছে না। সে দেখে যাচ্ছে প্রিয় কীভাবে বারান্দায় বসে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে রাত পার করে দিচ্ছে।

—————

এমডি স্মরণকে ডেকে পাঠিয়েছে। যাওয়ার পথে কাঁচের দেয়ালের ওপারে পেট্রাকে দেখতে দেখতে গেল। স্মরণ এমডির চেম্বারে ঢুকতেই তিনি বললেন, ‘স্মরণ, তুমি বাসায় চলে যাও। লাগেজ গুছিয়ে নাও। নেক্সট ফ্লাইটে তুমি দুবাই যাচ্ছ।’

স্মরণ অবাক হয়ে চেয়ে রইল। এমডি সব সময় সিরিয়াস কথাগুলো এত হুটহাট বলেন যে ভিরমি খেতে হয়। এরপর এমডি বললেন, ‘দুবাইয়ের কাজটা আমাদেরই পেতে হবে। আমি জানি তুমি ওদের কনভিন্স করতে পারবে।’

‘কিন্তু স্যার, আপনার নিজের ডিল করার কথা ছিল যে!

‘আমার সন্তান দুনিয়াতে আসছে, স্মরণ। এমন সময় আমি আমার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকতে পারব না। আমার কোটি টাকার লোকসান হলেও আমি যাব না। আমার কাজটা তাই তুমি করবে।’

‘ওকে স্যার। কিন্তু আপনি কাল মিটিংয়েও তো কিছু বলেন নি এ ব্যাপারে।

‘ইচ্ছা করেই বলি নি। কিন্তু আমার প্ল্যান ছিল যে তুমিই যাবে। তোমার সাথে এই প্রজেক্টের আর্কিটেক্টও যাবে।’

স্মরণের বিশ্বাস হচ্ছিল না। পেট্রা যাবে তার সঙ্গে এই প্রজেক্টের আর্কিটেক্ট তো পেট্রাই। হার্টবিট বেড়ে গেল তার।

—————

দলের লোকজনদের সঙ্গে মিটিং করার জন্য বাবর খানের আলাদা বসার ঘর রয়েছে। সেখানেই তিনি ডেকে পাঠালেন নিকিতাকে। নিকিতা ঘরে ঢুকতেই তিনি বললেন, সকাল থেকে বেশ খুশি খুশি লাগছে আজ? কী হয়েছে?

নিকিতা হেসে বলল, আপনার ছেলে কাল আমার সাথে একটুও রাগারাগি করে নি, বাবা। শুদ্ধর সব দায়িত্ব আমাকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে।’

‘বাহ্! এভাবেই থাকো, মা। আজ না হোক কাল, একদিন বুঝবে– কোনো জল্লাদ না, ভালো একজন মানুষের সাথে তোমাকে করিয়ে দিয়ে নিয়ে এসেছি আমি। শুধু ওর মনটা জিতে নাও।

‘বাবা, আমি কখনো আপনার ছেলেকে জল্লাদ মনে করি না।’

‘মনে করাটাই স্বাভাবিক, সে রকমই ব্যবহার করে সে তোমার সাথে।

নিকিতা মাথা নিচু করে রইল। কী অদ্ভুত ব্যাপার! একটা মানুষ, যে কিনা তার সঙ্গে দিনের পর দিন খারাপ ব্যবহার করেছে, চরম নিষ্ঠুর হয়েছে; অথচ তার সম্পর্কেই এসব কথা শুনতে খারাপ লাগছে। তাও আবার তার বাবার কাছ থেকে। বাবর খান বললেন, তবে মা, প্রিয়র চক্ষুশূল কিন্তু তুমি নিজেই হয়েছ।

নিকিতা অবাক হয়ে তাকাল শ্বশুরের দিকে। তিনি বললেন, ‘শুদ্ধর গায়ে হাত তুলেছ তুমি!

‘বাবা, শুদ্ধ সেদিন অনেক বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল। ওকে থামানোর জন্য…তাও শুধু একটা চড় দিয়েছিলাম। না জানি ও ওর বাবাকে কী কী বাড়িয়ে বলেছে!’

‘চুপ করো, নিকিতা। খবরদার, এ ধরনের কথা প্রিয়র সামনে ভুলেও কখনো বলবে না। শুদ্ধ একটা সাত বছরের বাচ্চা, ও কখনো মিথ্যা বলে না। যা হয়েছিল, তা-ই বলেছে শুদ্ধ, তাতেই প্রিয় রেগে গিয়েছিল।

‘এত কিছু আমি ভাবি নি বাবা। মা হিসেবেই আমি শাসন করেছিলাম ওকে।

‘কিন্তু তুমি ওর নিজের মা নও! একটা চড় তো অনেক! ওর সাথে উঁচু গলায় কথা বললেও তোমার দোষ হবে। প্রিয় মারবে, বকবে–সব করবে। ওর দোষ হবে না। কারণ, শুদ্ধ ওর রক্ত, ওর ছেলে।

নিকিতা কিছু বলল না। শ্বশুর আবার বললেন, ‘শুদ্ধকে ধমকাধমকি বা মারধর কখনো করবে না। ও ওর বাবার মতো ঘাড়ত্যাড়া হয়েছে। কথা না শুনলে ওর মায়ের কথা বলবে। বলবে, এটা কোরো না, তোমার মা কষ্ট পাবে। এতেই কাজ হবে।

‘যে নেই, সে-ই রাজত্ব করছে আমার এই সংসারটাতে, আর আমি থেকেও কিছু করতে পারছি না।’

এ কথা বলতে বলতেই নিকিতার চোখে জল এল। বাবর খান হেসে বললেন, ‘কেঁদো না মা। ওকে হিংসা করাটা বোকামি! প্রিয়র মন পেলেই সব পেয়ে যাবে তুমি। আমার ছেলে পাগলের মতো ভালোবাসতে জানে।

‘আপনার ছেলের মন তো আপনার ছেলের কাছে নেই বাবা, আমি কী করে পাব?

‘শোনো নিকিতা, বাস্তব জীবনের ভালোবাসা সিনেমার মতো নয় যে একজনকে ভালোবেসে সারা জীবন কাটিয়ে দেবে। তোমাকে আমি প্রিয়র সব দুর্বলতা বলেছি। এখন কেন তুমি পারবে না? এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার। আর তোমারটা তো ভালোবাসা, যুদ্ধ–দুটোই।

‘আমার ভয় করে, বাবা।’

‘একদম ভয় পাবে না, আমি সারা জীবন যে-কোনো বিপদে তোমার সাথে থাকব।’

—————

স্মরণ এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে পেট্রাকে পিক করে নিল। গাড়িতে ওঠার পর থেকে স্মরণ বকবক করেই চলেছে। এটা-ওটা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছে। কথা যেন শেষ হয় না। এর মধ্যে তুমি করে বলাটাও আদায় করেছে। তার চোখে ভালোবাসা দেখছে পেট্রা! আজ নয়, কিছুদিন আগেই ব্যাপারটা খেয়াল করেছে। এটা না থাকলে হয়তো পেট্রার ভালো লাগত। ভালো-খারাপ যা-ই লাগুক না কেন, পেট্রা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে এটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে, স্মরণকে থামাতে হবে। কিন্তু তার ভালোবাসা হলো কী করে? অবাক লাগছে পেট্রার। হঠাৎ মনে হলো, স্মরণ কি তাহলে তার ব্যাপারে না জেনেই ভালোবাসছে? সেটা কী করে সম্ভব? একই অফিসে কাজ করে, এটুকু না জানার তো কথা নয়। আর না জানলে এক্ষুনি জানাতে হবে। সুযোগের অপেক্ষায় রইল পেট্রা এবং সুযোগ খুব তাড়াতাড়িই চলে এল। কথায় কথায় যখন স্মরণ জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, তার মানে তোমার ছোট বোনের আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। নাম কী ওর?

‘প্রিয়াঙ্কা লিংকি রোজারিও।

স্মরণ মাথা হেলিয়ে-দুলিয়ে কথা বলছিল। নামটা শুনে থমকে গেল। এমনকি হৃদয়ের একটা কম্পনও বুঝি মিস করল। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল, তোমার পুরো নাম কী?

‘ক্লিওপেট্রা জেনি রোজারিও।

‘তুমি খ্রিষ্টান!

পেট্রা মুখটা স্বাভাবিক রেখেই বলল, তুমি জানতে না?

‘না।

‘কেন, তুমি তো আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে আছ, দেখো নি আমার নাম যে ক্লিওপেট্রা? মুসলিমদের নাম কি ক্লিওপেট্রা হয় নাকি?’

স্মরণ স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল, ‘আজকাল সব ধর্মেই সব নাম রাখা হয়। তা ছাড়া তোমার প্রোফাইলে তো সারনেম দেওয়া নেই, আর অ্যাবাউটেও এটা বোঝার মতো কিছু ছিল না।’

ও হ্যাঁ।

স্মরণ স্বাভাবিক হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছে, সে পেট্রাকে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না তার ভেতরে কী ঘটে যাচ্ছে। হেসে বলল, ‘যা-ই হোক,

এটা জানা না-জানায় কী যায়-আসে? ইটস নট আ বিগ ডিল।

‘তা অবশ্য ঠিক।

পেট্রাও হাসল। স্মরণ কথা ঘোরানোর জন্য বলল, তোমার বোন বিয়ের পর সারনেম চেঞ্জ করে নি?

পেট্রা হেসে বলল, ‘ওর হাজব্যান্ডও রোজারিও।

‘আচ্ছা আচ্ছা!’

এসব টুকটাক কথাবার্তা বলে পরিবেশ হালকা করতে লাগল স্মরণ।
·
·
·
চলবে...................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp