আরে মীরার এসএসসি রেজাল্ট দিয়েছে আজ। সারাবছর প্রেম করে এত ভালো রেজাল্ট করল কীভাবে মেয়েটা! অভিনন্দন শিকদার সাহেব, আপনি এক জাতে মাতাল তালে ঠিক প্রজাতির বউ পেতে চলেছেন।
রাফসান শিকদার
১৪ মে, ২০১০
সাভারে আমার খুব পছন্দের একটা জায়গা আছে। গ্রামের দিকে খুব সুন্দর বিল। সেই বিলে কত যে সাদা সাদা বক! চোখ জুড়িয়ে যায়, মন ভেসে বেড়ায় কোনো অলীক জগতে। মীরাকে সেখানে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু যখনই আমিনবাজারের সেই বিভত্স জ্যামের কথা মনে পড়ে তখন ইচ্ছেটা ভেতরেই মরে যায়।
যেভাবে কংক্রিটের প্রতিযোগিতা চলছে, যখন তোমাকে নিয়ে যেতে পারব ততদিন কি আর বকগুলো আসবে মীরা?
রাফসান শিকদার
১৯ মে, ২০১০।
মায়ের তুরস্ক থাকার সময়সীমা কেবল বাড়ছেই। আমার ভালো লাগছে না। একদম ভালো লাগছে না। কোনো কিছুতে মন বসাতে পারছি না। কী করলে মন ভালো হবে? এনি আইডিয়া?
রাফসান শিকদার
২৩ মে, ২০১০
শালার মামুইন্যারে আমি একদিন সুযোগ মতো এমন ঘঁাচা দেব যে ওর বাসার লোকজনও ওর চেহারা চিনতে পারবে না। এতবছর ধরে ওর সেলুনে যাই আমি, অথচ ছাগলটা আমার দাড়ির কি হাল করেছে! গত ৪ বছর ধরে আমি কখনোই ক্লিনশেভ করি না, সবসময় ট্রিম করি এবং মামুনের কাছেই করি। চুল কাটার সময় আমার একটু তন্দ্রামতো এলো। অমনি শালা আমার দাড়িতে খুর বসিয়ে দিল! এক পোচ দেয়ার পরই ঘুম ভেঙে গেল। কিন্তু তখন কি শেভ না করে উপায় আছে? শেভ করে এলাম। ছাগলের মতো দেখাচ্ছে এখন! কমসে কম আগামী ৬-৭ দিনে মীরার সঙ্গে দেখা করতে পারব না, ভাবা যায়! ক্যাম্পাসেও তো পোলাপান হাসবে! ধুর!
রাফসান শিকদার
০৪ জুন, ২০১০
মীরা দেখা করার জন্য খুব চাপ দিচ্ছিল। ওকে তো আর বলতে পারি না আমি দাড়ি কেটে ছাগলের রূপ ধারণ করেছি। তাই বিভিন্ন রকম অজুহাত দিয়ে দেখা করাটা পিছিয়ে দিচ্ছিলাম। যেহেতু এতদিনে ছোট ছোট দাড়ি গজিয়ে গেছে, এখন দেখা করাটা নিরাপদ বোধ করেছি। অবশেষে আজ দেখা করে এলাম। রিকশায় চড়ে ঢাকা শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়িয়েছি। মেয়ের সাহস আছে বটে রে বকুল! চলন্ত রিকশায় আমার ঘাড়ে মাথা রেখে অনেকক্ষণ ছিল। আরেকটু হলেই ত একটা চুমু খেয়ে ফেলতাম।
রাফসান শিকদার
১৩ জুন, ২০১০
বকুল,
একটা কেচালে পড়ে যাচ্ছি সম্ভবত। বাবা সকালবেলা অফিসে চলে যায়। রূপকে রাখি আমি আর রাহি। এতদিন দুজনের এক সময়ে ক্লাস পড়ে গেলে হয় ও মিস দিত না হয় আমি মিস দিতাম। কার কবের ক্লাস বেশি জরুরি সেই হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতাম। কিন্তু আজ দুজনের পরীক্ষা একসঙ্গে পড়ে গেল। আমার পরীক্ষা সকালে। রাহিরটা ১২টায় হলেও এর আগে আমি আসতে পারব না। রাহি বলল, কিছুক্ষণের তো ব্যাপার। পাশের বাসায় রূপকে রেখে যাবে আমি এসে নিয়ে আসব। ওই বাসায় নাকি রূপকে সবাই অনেক আদর করে। আমিও জানি অবশ্য। রূপ প্রায়ই ওই বাসায় যায়। তবে রাহি দিয়ে আসে আবার রাহিই নিয়ে আসে। কখনো কখনো রাহি যাওয়ার আগেই রূপ ফিরে আসতে চায় তখন ওই বাসার কেউ দিয়ে যায়। আমি রাজি হলাম। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দিয়ে আসার পর যখন রূপকে আনতে ওই বাসায় গেলাম তখন দেখি রূপ সেই মেয়েটার সঙ্গে খেলছে। সেই মেয়েটা মানে বুঝেছিস বকুল? সেই মেয়েটা যার সঙ্গে ছাদে দেখা হয়েছিল, আমার ফোন। নাম্বার চেয়েছিল। মেয়েটা আমাকে দেখে রূপকে নিয়ে এগিয়ে আসছিল। রূপ ওর হাত ছেড়ে ছুটে এসে আমার কোলে উঠল। মেয়েটা কাছাকাছি এসে হাসি হাসি মুখ করে মৃদু গলায় বলল,
আপনি আমাকে পছন্দ না করলেও আপনার বোন কিন্তু আমাকে খুব পছন্দ করে।
আমি একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। সেদিন ছাড়া আর কখনো তার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। এভাবে কথা বলে কীভাবে? আমি বললাম,
আমার মনে হয় না এরকম কোনো বিষয় আছে। আপনার সঙ্গে আমার পরিচয়ই নেই, পছন্দ অপছন্দ অনেক দূরের কথা।
পরিচিতই হতে চেয়েছিলাম।
সে হয়তো আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল। আমি সুযোগ না দিয়ে তার কথার মাঝেই বলে উঠলাম,
রূপকে দেখে রাখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি ভীষণ ক্লান্ত। আজ
তাহলে আসি?
মেয়েটি হেসে বলল,
নিশ্চয়ই।
চলে যাওয়ার সময় রূপ হাত নেড়ে বলল,
বাই বাই টগর আপু।
হোয়াট আ কো-ইন্সিডেন্স! আমি সেদিন টগর গাছ লাগিয়েছিলাম। মেয়েটা বলেছিল টগর ফুল চেনে না। নিজের নামে যদি কোনো ফুল থাকে তবে তা না চিনে পারে না কেউ। ভাব জমানোর জন্যই সেসব কথা।
প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসো না মা। এমন হলে তো কারো মুখাপেক্ষী হওয়া চলে না। দুই ভাইয়েরই পরীক্ষা কেবল শুরু। রাহির দুইটা গেছে, আর আমার শুধু আজকেরটাই। বাকি পরীক্ষাগুলো কীভাবে ম্যানেজ করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
রাফসান শিকদার,
২১ জুন, ২০১০
মীরার একটু মেজাজ খারাপ হলো। এই মেয়ের কথা রাফি বলেনি কেন তাকে? মেজাজ খারাপ নিয়েই সে পৃষ্ঠা ওল্টালো…
এই মুহূর্তে ওই বাসাতেই রূপকে রেখে যেতে হচ্ছে আমাদের। এ ছাড়া আর উপায় রইল না। মেয়েটাকে কি সরাসরি বলে দেব যে আমার মীরা আছে? না থাক। যদিও সবকিছু বুঝাই যাচ্ছে তবুও মেয়ে তো সরাসরি কিছু বলেনি আমাকে। এভাবে বলা যায় না। কিন্তু মেয়েটা এমন দৃষ্টিতে তাকায় আমার অস্বস্তি হয়। আরেকটা পরীক্ষা বাকি। এটা গেলে বাঁচি!
রাফসান শিকদার,
২৮ জুন, ২০১০
ফাইনালি একটা ম্যাচ জিততে পেরেছি। সিরিজ জিতব না জানি। তবু তো একটা ম্যাচ জিতেছি! এটাই আনন্দের।
অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম!
রাফসান শিকদার
১০ জুলাই, ২০১০
·
·
·
চলবে...................................................................................