তাবাসসুম আয়নার সামনে বসে আছে৷ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কপালে দুটো গোল গোল টিপের ন্যায় মাটির আবরণ টুকু দেখছে। কেমন বাজে দেখাচ্ছে তাকে। পুরো মুখ কাঁদা মাটিতে ভরা৷ কিন্তু পরক্ষণেই রুশানের কথা মনে পড়তে, তাবাসসুম আরেকটু তীক্ষ্ণ চোখে চাইল। তাকে সত্যি বাচ্চা বাচ্চা লাগছে নাকি? নাহ তো!
তাবাসসুম হাতের সাহায্যে কপালের মাটিটুকু মুছে ফেলতে চাইল৷ কিন্তু সহসা কপালে রুশানের মাটি ভরিয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা মনে পড়তে হাসল। লোকটা কি তার সাথে ঝগড়া করার জন্য তার কপালে মাটি লাগিয়ে দিয়েছিল? নাকি অন্যকিছু? ঝগড়া করার জন্য দিলেও, সে কেন ঝগড়া করল না? ওভাবে উঠে চলে এলো কেন?
“একা একা হাসছো কেন?”
সহসা তনুর গলা ভেসে আসতে তাবাসসুম মুখের হাসি গায়ের করে তাকালো তনুর পানে। ভ্রু উঁচিয়ে বলল—
“কই হাসছি?”
তনু বাঁকা হেসে বলল—
“আমি স্পষ্ট দেখেছি, তুমি হাসছো।”
তাবাসসুম বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ওয়াশরুমে যাওয়ার তাড়া দেখিয়ে বলল—
“এখন তোর জন্য কি হাসাও মানা?”
“মানা হবে কেন? তোমার হাসি তো আর আমার কাছে যে সে হাসি ঠেকছে না। কেমন প্রেম প্রেম মুড নিয়ে হাসছো। কার কথা ভেবে হাসছিলে গো?”
তাবাসসুম থতমত খেয়ে বলল—
“কার কথা ভেবে হাসবো? নিজেকে দেখেই হাসছিলাম। দেখছিস না আমার মুখের কি অবস্থা, এসব দেখেই হাসছিলাম।”
“তাই?”
“হ্যাঁ।”
“আমি কিন্তু ছাদে তেমাকে আর রুশান ভাইয়াকে দেখেছি আপু।”
তাবাসসুম চোখ বড় বড় করে বলল—
“কি দেখেছিস?”
তনু বাঁকা হেসে বলল—
“তোমাকে আর রুশান ভাইয়াকে। আরও দেখেছি তুমি আর রুশান ভাইয়া,,”
“কি?”
“কিছু না৷”
বলেই তনু ভাবলেশহীন ভাবে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। তাবাসসুম চেচিয়ে উঠে বলল—
“কি দেখেছিস তুই?”
উত্তর এলো না কোনো। তাবাসসুম ঠোঁট উল্টে রাগে বিরবির করে উঠল—
“অসভ্য পুরুষ।”
—————
রাতের খাবার শেষে তাবাসসুম কেবলই ঘরে এসে চেয়ারে বসেছিল। তনু তৎক্ষনাৎ ঘরে ঢুকল। বিছানায় বসে তাবাসসুমের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগল। তাবাসসুম খেয়াল করেছিল, খাওয়ার সময়ও বেয়াদব মেয়েটা হাসছিল তাকে দেখে। এখনও হাসছে। তাবাসসুম সহসা ধমকে উঠে বলল—
“বলদের মতো হাসছিস কেন?”
“বলদ কেন বলছো? মানুষের মতোই তো হাসছি।”
“হাসছিস টা কেন?”
“তুমি কি প্রেম করছো?”
তাবাসসুম ভুরু কুঁচকে বলল—
“সেটা আমি তোকে বলবো?”
“বলো। আমি কিন্তু খুব ভালো অ্যাডভাইস দিতে পারি। আর সেটা যদি হয় প্রেম সম্পর্কিত তাহলে তো কোনো কথাই নেই।”
তাবাসসুম বাঁকা চোখে তাকালো। কিছু বললো না। তনুই পুনরায় বলল—
“জানো আমি ভেবেছিলাম, রুশান ভাই লয়াল। এখন দেখি সে তার প্রেমিকাকে রেখে তোমার মতো গরুর সাথে লুতুপুতুতে লিপ্ত হয়েছে। তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। রুশান ভাই কিন্তু দুলাভাই হিসেবে বেস্ট হবেন।”
তাবাসসুম রেগে গেল এবার। দাঁতে দাঁত চেপে তনুকে উদ্দেশ্য করে বলল—
“তুই বের হবি ঘর থেকে। আরেকটা কথা বললে, আমিই কিন্তু তোকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।”
“তুমি তলে তলে টেম্পু চালাবা, আমি বললেই হরতাল লেগে গেল? এ কেমন বিচার?”
“তনুর বাচ্চা। তুই বের হবি?”
তনু তাবাসসুমের রাগকে পাত্তা দিলো না। চুপচাপ বিছানায় আরাম করে শুয়ে পড়ল। তাবাসসমু দম নিলো। কিন্তু স্বস্তির দম নিয়েও শান্তি পেল না। সহসা তনু ফের বলে উঠল—
“এবার একসাথে আমি দুটো বিয়ে খাবো।”
তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে বলল—
“কার কার?”
তনু দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল—
“শাফান ভাইয়ের, তোমার আর রুশান ভাইয়ের। দুটো না সরি তিনটে। যদিও ধরতে গেলে দুটোই হয়।”
তনুর কথা শেষ হতেই তাবাসসুম টেবিলে থাকা একটা খাতা ছুড়ে মারল তনুর দিকে। তনু সেটা ক্যাচ ধরে ফেলল। তাবাসসুম রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠল—
“বের হ তুই আমার রুম থেকে। খুব বিয়ে খাওয়ার শখ তোর? নিজে বিয়ে করে নিজের বিয়ে খা।”
“নিজের বিয়েই কি আর খাওয়া যায় বলো? তুমি টেনশন নিও না। রুশান ভাইয়া আর তোমার বিয়েই আমি কব্জি,,”
তনুর কথা সম্পূর্ণ কথার পূর্বেই তাবাসসুম তেড়ে আসল তনুর নিকটে। ফুসে উঠে বলল—
“তোর রুশান ভাইয়ের বিয়েতে তুই কব্জি ডুবিয়ে খা নাহয় পা ডুবিয়ে খা। তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ওই ঝগড়াটে কচু লোকটার সাথে আমাকে টানবি না। ছেঃ! আমি নাকি বিয়ে করবো ওই ঝগড়াটেকে। রুচির দুর্ভিক্ষ!”
·
·
·
চলবে……………………………………………………