তুমি আমার বসন্ত - পর্ব ১৪ - আমেনা আক্তার আখি - ধারাবাহিক গল্প

          তাবাসসুম মেসেজ করা সেই নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা আবারও তাকে ব্লক মেরেছে। কেন? যদি ভালোবাসিস তাহলে সামনে আয়। কথা বল। হুটহাট একটা মেসেজ দিয়ে ব্লক করার মানে কি? তাবাসসুমের একবার মনে হয় কেউ ফাজলামি করছে তার সাথে। হয়ত তার কোনো বান্ধবী। পরক্ষণেই মনে হয়, হঠাৎ এরকম ফাজলামি কেন করবে ওরা।

তাবাসসুম মন আর মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা ঝেড়ে ফেলতে চাইল। কে না কে তাকে মেসেজ করে ফাজলামি করছে সেটা নিয়ে ভেবে চলেছে সে। তাবাসসুম মাথা দুদিকে ঝাড়া মেরে ফোন রেখে দিল। আপাতত পড়াশোনায় কনসেনট্রেশান করতে হবে তার। 

—————

রাতের খাবার খেয়ে তাবাসসুম ঘরে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল। এক কাপ গরম চা তার হাতে। তাবাসসুমের একটা বদ অভ্যাস আছে। সে চা ঠান্ডা ছাড়া খেতে পারেনা। এতে মায়ের প্রচন্ড বকা খাওয়া সত্বেও তাবাসসুম চা খাওয়া ছাড়তে পারেনা। মুনায়া বেগম সবসময় বলেন, ‘চা যদি ঠান্ডা করেই খাস তাহলে চা খাওয়ার মজা বুঝলি কি তুই? তার থেকে খাওয়াই ছেড়ে দে।’ তাবাসসুম ছাড়ে না খাওয়া। একেক জনের অভ্যাস একেক রকম। তাবাসসুমেরও অভ্যাস এটা। রাতে খাওয়ার পর ঠান্ডা চা খাওয়া। 

তাবাসসুম চোখ বন্ধ করে চায়ের কাপে চুমুক দিলো৷ মিনিট দশেক সময় নিয়ে চা শেষ করে, ঘরে আসল তাবাসসুম। চায়ের কাপ টেবিলে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ফোনটা হাতে নিলো। আধঘন্টা যাবৎ ফোন চালালো তাবাসসুম, যখন রেখে দিবে তখন সেই আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো। তাবাসসুম মেসেজ না দেখেই তড়িঘড়ি করে রিপ্লাই দিলো।

“খবরদার ব্লক করবেন না। ফাজলামি করছেন আমার সাথে?”

ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ পরই রিপ্লাই এলো,

“ব্লক করবো না।”

“সত্যি?”

“হ্যাঁ।”

তাবাসসুম তবুও বিশ্বাস করলো না। হুটকাট ব্লক করে দেওয়া লোককে তার বিশ্বাস নেই। ব্লক করবে না বলে কখন না জানি আবার টুক করে ব্লক করে দিলো। তাবাসসুম উপরের মেসেজ না পরেই লিখলো,

“আপনি কে বলুন তো?”

“পরিচয় জানা খুব জরুরি?”

“অবশ্যই জরুরি। আপনি আমাকে মেসেজ করে কেন জ্বালাচ্ছেন?”

“বিরক্ত হচ্ছো তুমি?”

তাবাসসুম বিরক্ত হচ্ছে নাকি জানেনা। তবুও বলল,

“হ্যাঁ হচ্ছি। চেনা নেই জানা নেই একটা মেয়েকে মেসেজ করছেন। আর সেই মেয়ে বিরক্ত হবে না?”

“আমি একবারও বলেছি, আমি তোমাকে চিনি না?”

তাবাসসুম বিস্ময় নিয়ে লিখলো,

“চিনেন আপনি আমাকে?”

“হয়ত হ্যাঁ হয়ত না। বুঝে নাও।”

“অস্পষ্ট কথা আমার পছন্দ নয়। যদি নিজের পরিচয় দেওয়ার সাহসই না থাকে। তাহলে মেসেজ দিয়ে আর জ্বালাবেন না।”

লোকটা কিছুক্ষণ সময় নিয়ে লিখলো,

“আমার জ্বালায় তোমায় সারাজীবন জ্বলতে হবে বসন্ত কন্যা। রক্ষা নেই তোমার।”

তাবাসসুম মেসেজটা পরে কিছু রিপ্লাই দিতে যাবে তার পূর্বেই লোকটা পুনরায় লিখে পাঠালো,

“আমাকে নিয়ে এত চিন্তা ভাবনা করতে হবেনা তোমায়। তোমার ছোট ঘিলুহীন মাথা আমাকে খুজে বের করতে পারবে না। সঠিক সময় হলেই আমি নিজেকে তোমার সামনে প্রদর্শন করবো।”

মেসেজ দেওয়ার পর দশ সেকেন্ড অতিবাহিত হলো না বোধহয়, ততক্ষণাৎ লোকটা তাবাসসুমকে ব্লক মেরে দিলো। তাবাসসুমের রাগ হলো। লোকটা তাকে ঘিলুহীন বলে অপমান করে মুখের উপর ব্লক করে দিলো। পরপর দু'বার অপমান করলো লোকটা। আর সে কি ঘিলুহীন নাকি? আজব লোক! ফালতু লোক! কোনোদিন লোকটাকে সামনে পেলে গলা টিপে ধরার মতো ইচ্ছে পোষণ করলো তাবাসসুম। 
তার ঘিলুহীন মাথা নিয়েই তাবাসসুম লোকটাকে খুঁজে বের করবে। দেখিয়ে দিবে লোকটাকে তার ঘিলুহীন মাথাও ওই ঘিলুযুক্ত লোকের মাথার থেকে ঢের ভালো। 

—————

প্রতিদিনেন সকালটা স্নিগ্ধভাবে শুরু হলেও, আজকের সকালটা কেমন নির্জীব ছিলো। সকাল থেকেই তাবাসসুমের মনটা কেমন খচখচ করছিলো। ভার্সিটি যাবে কি যাবে না এই দেনামনায় অনেকক্ষণ ভুগে তারপর ভার্সিটি এসেছে। কিন্তু ভার্সিটি আসার দশ মিনিট অতিক্রম হয়নি ফুফুর ফোন আসে তাবাসসুমের ফোনে। 

মুনায়া বেগমের মিনি স্টোক হয়েছে। হসপিটালে ভর্তি আছেন এখন। খবরটা শোনা মাত্রই তাবাসসুম বাড়ির পথে রওনা হয়েছে। মমতা বেগম বলেছিলেন তার সাথে যেতে। কিন্তু তাবাসসুমের মস্তিষ্ক সেই মূহুর্তে সেটা চায়নি। পাগলের মতো সে ভার্সিটি থেকেই হটপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। 

হসপিটালে পৌঁছাতে তাবাসসুমের দেড় ঘন্টার মতো সময় লাগলো। দোতালায় যেতে দেখল তনু করিডোরে পাতা চেয়ারে বসে কাঁদছে। তাবাসসুম এগিয়ে গেল তনুর দিকে। তনুর পাশে বসে পড়তে, তনু পাশ ঘুরিয়ে তাকালো। এতক্ষণে ভরসার একজন মানুষ পেয়ে তনু বোনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল শব্দ করেই। তাবাসসুমও তনুকে জড়িয়ে ধরল। চোখে পানি নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

“কিভাবে হলো?”

তনু উত্তর দিতে পারলো না কান্নার বেগে। তখন সহসা পাশ থেকে কেউ তাবাসসুমের কাঁধে হাত রেখে বলল,

“আন্টি ঠিক হয়ে যাবেন।”
·
·
·
চলবে……………………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp