লাঞ্চের পরপরই বেড়িয়ে পড়ল ওরা। কলরব ড্রাইভ করছে, পাশের সিটে নিহিন। কলরব বলল,
“আসার সময় কল্প কী বলছিল তোমার কানে কানে?”
নিহিনের মনে পড়ল, কল্প কানে কানে বলছিল, “মিষ্টি, তুমি আবার আসবে আর আমাকে আবার খাইয়ে দেবে। এ কথা পাপ্পাকে বোলো না কিন্তু, ঠিক আছে?” নিহিন আদর করে বলেছিল, ঠিক আছে। কলরবকে বলল না কল্প কী বলেছে, বলল
“সেটাও তোমার জানা লাগবে?”
“তুমি না বলতে চাইলে বোলো না। কল্পকে জিজ্ঞেস করলেই পাওয়া যাবে।”
“সব কথাই তোমার জানা লাগবে কেন, শুনি?”
“কৌতূহল।”
“এত কৌতূহল ভালো না।”
“ও, আচ্ছা তুমি কি সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারবে?”
“বাসায় বলে এসেছি বিকালে ফিরবো।
“ও।”
“কেন?”
“না, মানে তোমার সময় থাকলে একটু আশুলিয়ার দিকে যেতাম। নদীর হাওয়া গায়ে লাগাতে।”
“ঠিক আছে দাঁড়াও, আমি বাসায় একটা কল করে জানিয়ে দেই যে ফিরতে দেরি হবে।”
“আচ্ছা।”
কল করতে গিয়ে নিহিন দেখল ফোন খুঁজে পাচ্ছে না। পরে মনে পড়ল রান্না করার সময় ফোন বেজেছিল, তখন ফোন নিয়ে গিয়েছিল রান্নাঘরে, এরপর আর আনতে মনে নেই হয়তো। ওখানেই রয়ে গেছে। কলরব গাড়ি ঘুরালো। বলল,
“এখন মাত্র সাড়ে তিনটা বাজে। বাসা থেকে ফোনটা নিয়ে তারপর ওদিক দিয়ে আশুলিয়া চলে যাই। তোমাকে ৭ টার মধ্যে বাসায় পৌঁছে দিলে হবে?”
“দেরি হবে জানালে ৯/১০ টা বাজলেও সমস্যা নেই। একটা কিছু বলে দিলেই হবে।”
বাসায় গিয়ে বেল বাজালো কলরব। পরপর তিনবার বাজাবার পরেও দরজা না খোলায় অবাক হয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল, ভেতরে ঢুকে আরও অবাক হলো। বাসায় কেউ নেই। ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে কলরব বাবাকে কল করল, নিহিন পাশেই দাঁড়িয়ে।
“হ্যালো…”
“হ্যাঁ কলরব বল।”
“বাবা তোমরা কোথায়?”
“কল্প বোর হচ্ছিল তাই নিয়ে একটু বেড়িয়েছিলাম, এই লেকের ধারে হাঁটছিলাম। এখন তোর বড় চাচার বাসায়।”
“অতদূর গেলে কীভাবে?”
“তোর চাচার সাথে দেখা হয়েছিল রাস্তায়, ওর গাড়িতে এলাম।”
“পারোও তোমরা, আমাকে জানাবে না?”
“তুই তো বললি নিহিনের সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে ওকে বাসায় দিয়ে তারপর ফিরবি। তাই ভাবলাম এখন ডিস্টার্ব না করি। সন্ধ্যায় ফোন করে বলতাম এসে নিয়ে যেতে।”
“বাবা মজা নিও না তো।”
“রাগ করছিস কেন? তোর আসতে আসতে রাত হবে, আমরা কি ততক্ষণ বোর হব?”
“বাবা তোমাদেরকে কেউ যেতে না করেছে? বলে যাবে তো।”
“ওইযে বললাম ডিস্টার্ব করতে চাইনি।”
“ধুর তুমি না! মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয় না তুমি আমার বাবা।”
শওকত সাহেব, হাসতে লাগাল। কলরব বলল,
“রাখলাম।”
ফোন কাটতেই নিহিন বলল,
“কী হয়েছে? এত মেজাজ দেখালে?”
“আর বোলো না, বাবা না বলে কল্পকে নিয়ে বাইরে গিয়েছিল। আমাকে বললে তো আমি পৌঁছে দিয়ে তারপর তোমাকে দিতে যেতে পারতাম।”
“কোথায় গেছে?”
‘বড় চাচার বাসায়।”
“তো এত রাগ করার কী আছে?”
“তুমি জানো না, কল্প মারাত্মক দুষ্টু। বাবাকে দশবার কিনে বিশবার বেচে দিলেও সে টের পাবে না। বাইরে গেলে ওর দুষ্টুমি আরও বেড়ে যায়, ১ বছর আগে ওর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল, তারপর থেকে আমি খুব টেনশানে থাকি। বাবা এখন আর ওকে সামলাতে পারে না।”
“কী এক্সিডেন্ট?”
“রাস্তা পার হতে গিয়ে বাবার হাত ছেড়ে দৌড় দিয়েছিল। হঠাৎ একটা বাইক এসে পড়ল। কল্পর গায়ে ধাক্কা লাগল, বাইকটা তো পড়ল, কল্পর গায়ের ওপরেই পড়ল।”
ভয়ার্ত কণ্ঠে নিহিনের মুখ দিয়ে বের হয়ে এল,
“ইস! এইটুকু বাচ্চা।”
“এখানেই শেষ না, এ দৃশ্য দেখে বাবা স্ট্রোক করল।”
“ওমা!”
আঁতকে উঠল নিহিন। কলরব বলল,
“একসাথে দুজন হসপিটালে। কল্পর একটা হাত আর একটা পা ভেঙে গিয়েছিল। সারতে অনেক সময় লেগেছিল, বাবার অবস্থাও খারাপ ছিল। বোঝে আমার অবস্থাটা। মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অফিস থেকে দুমাস ছুটি নিয়ে এদের সেবা করেছি।”
“দুমাস!”
“হ্যাঁ, বাবা সুস্থ হয়ে গিয়েছিল, কল্পর মোটামুটিভাবে সারতে দুমাস লেগেছিল। তারপর থেকে খুব ভয়ে থাকি। ওদের একা একা বাইরে যেতে দেই না।”
“দিও না, যা শোনালে! ভাবলেই বুকটা কেঁপে ওঠে।”
“যাই হোক, ফোনটা নিয়ে চলো বের হই। সোয়া চারটা বেজে গেছে।”
“ও হ্যাঁ।”
রান্নাঘরে গিয়ে দেখল সেখানে ফোনটা নেই। বের হয়ে এসে দেখল কলরব ড্রইং রুমে নেই। ওর রুমে যায়নি তো?
নিহিন ফোন আনতে যাওয়ার পর কলরব দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল, হঠাৎ চোখটা জ্বলে উঠল, চোখে কি কিছু গেল? তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে চোখে পানি দিলো। তারপর বারান্দায় গিয়ে টাওয়ালে মুখ মুছতেই মিষ্টি একটা ঘ্রাণ পেল, মেয়েদের পারফিউমের ঘ্রাণ বলে মনে হচ্ছে। মেয়েদের পারফিউমের ঘ্রাণ ওর টাওয়ালে! তখন খেয়াল হলো নিহিন গোসল করেছে ওর বাথরুমে। কিন্তু কল্প যে বলল ওকে এক্সট্রা আরেকটা টাওয়াল দিয়েছে। তখনই পাশে আরেকটা টাওয়াল চোখে পড়ল। দুইটাই কেন ব্যবহার করবে? তার মানে কি ইচ্ছে করে ওর টাওয়াল ব্যবহার করে এটা ভিজিয়ে রেখেছে, কল্প দিয়েছে বলে? পাগলিটা ওর প্রতি এখনো দুর্বল তা বুঝতো কিন্তু এ অবস্থা সেটা ভাবতেও পারেনি। মুখে হাসি ফুটে উঠল। খুব ভালো লাগছে, এতটা ভালো ও কাছে থাকতেই শুধু লাগত। টাওয়ালটা ধরেই এসব ভাবছিল কলরব। এমন সময় বারান্দার দরজায় শব্দ হলো।
“আমার ফোনটা পাওয়া যাচ্ছে না, একটা কল দেবে?”
টাওয়ালটা আবার মেলে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই নিহিন বলল, “একি! তোমার চোখ এত লাল কেন?”
“কিছু ঢুকেছিল।”
“কি?”
“জানি না, চোখ ধুয়ে ফেলেছি, এখন আর সমস্যা নেই। কী যেন বলছিলে?”
“ফোন রান্নাঘরে নেই। অন্যকোথাও রেখেছি বোধহয়। একটা কল দাও।”
কলরব কল করতেই ফোন বেজে উঠল ওর ঘরে। ঘরে গিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই চোখ পড়ল দেওয়ালে ছবিটার দিকে, তাকাতেই মনে পড়ল, তখন বাবা আর কল্প থাকায় কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনি নিহিন। সুযোগ পেয়ে আর তাই হাতছাড়া করল না। বলল,
“আমার ছবি তোমার ঘরের দেয়ালে টাঙানোর মানে কী?”
“এটা তো আমার বউয়ের ছবি। তোমার ছবি হবে কেন? খবরদার নজর দেবে না।”
দুষ্টুমির হাসি হাসল কলরব। নিহিনির বুকে ধাক্কা লাগল ‘বউ’ শব্দটা। প্রথম দিন একটু রয়েসয়ে কথা বলেছে, আজ আর কিছু মানছেই না, একদম নিজের চরিত্রে ফিরে গেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“দেখো আমি সিরিয়াস, আমার ছবি কেন লাগিয়েছ? আর কোথায় পেয়েছ এই ছবিটা?”
“তোমার ছোটভাই এলাকার স্টুডিওতে ছবি ওয়াশ করতে দিয়েছিল। ও বের হওয়ার সময় রাস্তা থেকে ওকে দেখেছি, দেখে মনে হলো এমন তো হতে পারে যে তোমার ছবিও থাকতে পারে, কারণ তার কিছুদিন আগেই তোমার বোনের বিয়ে ছিল। বিয়েতে অনেক ছবি তুলেছো সেটা বলেছিলে।”
“স্টুডিওতে গিয়ে চাইতেই দিয়ে দিলো? বাহ তাহলে তো…”
নিহিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই কলরব বলল,
“না সেরকমভাবে চাইলে কেউ দেয় নাকি? সে স্টুডিওতে কাজ করত আমাদের বাসার দারোয়ানের ছেলে, ওই ছেলেটার সাথে আমার তো খুব খাতির ছিল, ওকে বলতেই ম্যানেজ করে দিলো। তাছাড়া আমাদের ব্যাপারটা ও আগে থেকেই জানত। তা নাহলে এতটা সহজ হতো না।”
“এভাবে না নিয়ে আমার কাছে চাইলে কি দিতাম না?”
“এটা তোমার বাবার সাথে ডিল হওয়ার দুই তিনদিন পরের ঘটনা, তখনও বাসা পালটাইনি। তোমার বাবা তোমার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেছে, তোমার ছবি দেখতে তো নিষেধ করেনি।”
বলেই হাসল কলরব।
“নিষেধ করলেই শুনতে হবে কেন?”
“সেকথা বলে আর কী হবে। ভেবেছিলাম তোমার বাবা কথা রাখবে। বাদ দাও এসব কথা।”
“আচ্ছা দিলাম বাদ, এবার এটা বলো দেওয়ালে কেন লাগিয়েছ ছবিটা? আবার কল্প বলছে এটা ওর মায়ের ছবি। এসবের মানে কী?”
কলরব জিজ্ঞেস করল,
“রাগ করেছ?”
নিহিননের গলার স্বর নরম হলো। বলল,
“রাগ করিনি। কিন্তু বাচ্চাটাকে মিথ্যের ওপরে রাখছো কেন?” কলরব এবার সিরিয়াস হলো। বিছানার একপাশে বসে নিহিনের দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল,
“দেখো, কল্প যখন একটু বড় হয়েছে, মা কী বুঝতে শিখেছে তখন থেকে ওর মাকে দেখতে চাইত। আমি কোত্থেকে দেখাব বলো? আর আমার কাছে তোমার এই ছবিটা ছিল, আমি ওকে এটা দেখিয়ে বলেছিলাম এটাই ওর মা। কখনো ভাবিনি তোমার সাথে আবার দেখা হবে, আমি জানতাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। তাই তোমার ছবি দেখিয়ে কল্পকে ঠাণ্ডা করেছি। আর কাকে দেখাতাম বলো তো? তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে মনেপ্রাণে তোমাকেই নিজের বউ বলে জেনেছি। অন্য কাউকে এ জায়গায় বসাতে পারব না, সেরকম কোনো সিনেমার ডায়লগ আমি দেবো না। কিন্তু এটা ঠিক, তোমাকে ভুলতে পারছিলাম না। সে অবস্থায় যদি বিয়ে করতাম তাহলে সে মেয়েটাকে কষ্ট দেয়া হতো। ভালোবাসতে পারতাম না, নিজেকে কখনো দিতে পারতাম না। তাই অনেকভাবে চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলতে, নতুন সম্পর্কেও জড়িয়েছি, প্রেম হয়েছিল কিন্তু ভালোবাসা হয়নি। তার মুখের দিকে তাকালে আমি তোমাকে দেখতে পেতাম, তাকে ডাকতে গিয়ে তোমার নাম ধরে ডেকে ফেলতাম। এরকম আরো অনেক কিছু। কোনো অনুভূতিই আসত না। কীভাবে আসবে বলো? চারটা বছর অপেক্ষা করেছি, ভাবতে পার কতটা সময়? কীভাবে কেটেছে সেই দিনগুলো? সারাজীবন কোনোমতে টেনেটুনে পাশ করা আমি কিনা সেকেন্ড ইয়ার থেকে ক্লাসের সেরা স্টুডেন্ট হয়ে উঠলাম। কেন? শুধু একজনকে পাওয়ার লোভে। তখন মাথায় শুধু ওই একটা চিন্তাই ছিল। নিহিনের বাবা বলেছে যোগ্য হতে, আমাকে যোগ্য হতে হবে, এমন যোগ্য যে আমাকে ফিরিয়ে দিতে না পারে। যখনই তার জন্য মন খারাপ করত, ভাবতাম সেও তো দূরে থাকলেও অপেক্ষা করছে আমার জন্যই, তাহলে আর দূরে কই? আমার চিন্তাই তো করছে। এভাবেই দূরে থাকাটায় অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল আমার। সঙ্গী ছিল এক বুক স্বপ্ন। দুজন মিলে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন। ভালো চাকরি হয়েছে নিজের ফ্ল্যাট, গাড়ি সব করেছি নিজের টাকায়, স্বপ্নের সংসারটাও সাজিয়েছি ঠিক যেমনটি সে চেয়েছিল। নীল দেওয়াল, সিলিঙে অসংখ্য তারা, বেড রুমের একটা দেওয়াল জুড়ে আয়না, বারান্দায় বেলি ফুলের গাছ সবই করেছি, সবই আছে, শুধু সে নেই।
কথাগুলো বলে কলরব কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল, নিহিনও একটা কথাও বলল না। তারপর আবার শুরু করল কলরব,
“অন্য একটা মেয়েকে কষ্ট দেয়ার কোনো মানে হয় না। তাই অন্য কোনো মেয়ে না, কল্পকে নিয়ে আসলাম আমার জীবনে। আমার জীবনের সব না পাওয়াকে পূরণ করে দিয়েছিল ও। ওকে আমি এডপ্ট করেছি ওর জন্মের দুই ঘণ্টা পর। সেদিন থেকে ও আমার ছেলে। তোমার বাবা ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকে খুব ডিপ্রেশনে ছিলাম, ও আসার পর জীবনটাই অন্যরকম হয়ে গেছে। ও এখন আমার সবথেকে প্রিয়জন। আর কল্পও ঠিক তাই, আমার প্রত্যেকটা কথা ওর কাছে বাণী। আমাকে ভয় পায় বলেই না, ভালোবাসে প্রচণ্ড তাই। সেই ছেলেটা যদি তার মাকে একটু দেখতে চায় তাহলে তখন কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক তা চিন্তা করা আমার পক্ষে কি সম্ভব তুমি বলো?”
কলরব কথাগুলো বলে যখন নিহিনের দিকে উত্তরের জন্য তাকাল তখন দেখল নিহিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে। বুকটা কেঁপে উঠল, সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গেল,
“এই কাঁদছো কেন?”
নিহিন কিছু বলল না। কলরব নিহিনের মুখটা দুহাতে তুলে ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই পাগলি, কী হচ্ছে এসব? তুমি কাঁদলে আমার ভালো লাগে? থামো বলছি।”
নিহিন ধুম করে ঝাঁপিয়ে পড়ল কলরবের বুকে, কান্নার বেগ আরোও বাড়লো। কলরব প্রায় পড়েই যাচ্ছিল, কোনোমতে টাল সামলালো। কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে রইল, এত বছরের জ্বলন্ত আগুনে যেন পানি পড়ল। কোনোরকমে কাঁপা কাঁপা হাতে জড়িয়ে ধরল নিহিনকে। আর কোনো কথা বলতে পারল না, ওর সারা শরীর কাঁপছে।
·
·
·
চলবে..................................................................................