সবার প্লেটে খাবার তুলে দিলো নিহিন। কল্প ওর ছোট্ট হাতে যখন খাওয়া শুরু করল, বড্ড মায়া হলো নিহিনের।
“কল্প আমি খাইয়ে দেই তোমাকে? খাবে আমার হাতে?”
“সত্যি আমাকে খাইয়ে দেবে?”
আনন্দে নেচে উঠল কল্পর চোখমুখ। কলরব বলল,
“এই না না, ও একা নিজ হাতে খায় আরো অনেক আগে থেকে।”
“তাই বলে আমি একবেলা ওকে খাইয়ে দিতে পারব না?”
কল্প আর শওকত সাহেব চুপ করে আছে, কলরব নিহিনকে বলল, “দরকার নেই, তুমি খাও তো। আজ তুমি খাইয়ে দেবে, কাল কে থেকে তো আবার ওর নিজ হাতেই খেতে হবে, তাই অভ্যাস নষ্ট করার দরকার নেই।”
“এটা কেমন কথা বলছ তুমি? বাচ্চা মানুষ তো।”
এবার শওকত সাহেব বললেন,
“একবেলা খাইয়ে দিক না। ও তো আর তোর আমার হাত ছাড়া কারো হাতে খায়নি কখনো।”
“না বাবা, আজ খাইয়ে দিলে পরে আবার আবদার করবে। কয়দিন নিহিন খাইয়ে দিতে পারবে বলো?”
কল্প বলে উঠল,
“আমি আর কখনো আবদার করবো না পাপ্পা, আই প্রমিস!”
কলরব কিছু বলার আগেই নিহিন বলল,
“ও তো আজও আবদার করেনি, আমিই তো চাইলাম। অযথা শাসন করছো কেন? আমি ওকে খাইয়ে দেবোই। তোমার কোনো কথা আমি শুনছি না।”
কলরব মনে মনে বলল, “কেন যে না করছি তা তোমারা কেউ বুঝলে না। এ বাচ্চাটাকে আমি মা দিতে পারব না, শুধু শুধু একদিন ওকে মায়ের জাত চিনিয়ে লাভ কী! পরে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদে যখন বালিশ ভেজাবে, তোমরা কেউ তো টের পাবে না।”
কিন্তু নিহিনের এ কথায় খুশি হলো শওকত সাহেব, সবসময় শুধু শাসন তার ভালো লাগে না। নিহিন খাইয়ে দিতে গেল। কল্প বলল,
“মিষ্টি আন্টি থাক আমি একাই খেয়ে নিচ্ছি। দেখো আমি কী সুন্দর করে খাই, একটুও প্লেটের বাইরে পড়বে না। নিহিন তাকালো কলরবের দিকে। বাবার পারমিশন ছাড়া ছেলে খাবে না সেটা বুঝে গেছে নিহিন।” কলরব হেসে বলল,
“আচ্ছা খাও, কিন্তু এরপর আন্টিকে বিরক্ত করা চলবে না।”
কল্পর মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠল। তারপর হা করল, নিহিন খাইয়ে দিলো।
কলরবের বাবা বলল,
“মা এত সুন্দর রান্না বহুদিন খাইনি। আর ভর্তাগুলো তো অসাধারণ, দেখতেও কী চমৎকার হয়েছে। আজকালকার মেয়েরা এত যত্ন করে রান্না করতে পারে জানা ছিল না। তোমার আন্টি চলে যাবার পর এত ভালো রান্না কখনো খাইনি।”
কলরব বলল,
“বাবা ওর রান্না কিন্তু মায়ের মতো না।”
“একেক জনের রান্না একেক রকম হয় সেটাই স্বাভাবিক। রান্না ভালো হয়েছে এটাই বড় কথা।”
কল্প খেতে খেতে বলল,
“আমি এত মজা জীবনে খাইনি। আমি তোমাকে আর মিষ্টি আন্টি ডাকবো না।”
কলরব বলল,
“তাহলে কি রাঁধুনি আন্টি ডাকবি?”
কল্প নিহিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“রাঁধুনি কী?”
নিহিন হেসে বলল,
“কুক।”
তারপর কল্প কলরবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কখনোই না, আমি ওকে মিষ্টি বলে ডাকব। আন্টি বলব না। আন্টিরা তো পচা হয়, শুধু গাল ধরে টানে। মিষ্টি তো ভালো।”
কল্পর এ কথায় সবাই এক সঙ্গে হেসে উঠল।
কলরব বলল,
“কিন্তু ইলিশ পোলাওটা আগের বারের মত অত ভালো লাগছে না।”
কথাটা বলেই কলরব নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করা ভঙিতে আবার খাওয়া শুরু করল। কলরব কী মিন করছে তা নিহিনের বুঝতে বাকি রইল না। শওকত সাহেব বললেন,
“এর থেকে মজা আবার হয় কীভাবে। মা তুমি ভেবো না, পোলাও টাও খুব মজা হয়েছে। কলরব হয়তো কোনো কারণে ভাব নিচ্ছে।”
নিহিন বলল,
“না আংকেল আমি ভাবছি না। ওর কাছে কেমন লাগল তা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। আপনার আর কল্পর কাছে ভালো লাগলেই আমি খুশি।”
কলরব হেসে ফেলল। শওকত সাহেব জিজ্ঞেস করল ‘হাসছিস কেন?’
“এমনি বাবা।”
নিহিনের গা জ্বলছে, এ ছেলেটা নিশ্চিত কোনো দুষ্টুমির কথা ভেবে হাসছে।
·
·
·
চলবে....................................................................................