"ও সিনভাই ? সুর আপার তো বিয়া দিলাই। ওহন তুমিও শাপলারে ঘরে তুলো।"
লণ্ঠনের আলোয় হিসাবের খাতায় দাগ কাটছিলো সিনান সালেহ। শফির কথায় ভ্রু কুঁচকে চায়।
"আমি তোর বোনরে কি'হামে ঘরে তুলমু?"
শফি দাঁত কেলিয়ে বলে, "ওও তুমি জানো না? চাচি আম্মায় তো আম্মার কাছে প্রস্তাব দিছে বিয়ার। শাপলারে বিয়া দিলে ঘর ফাঁকা ফাঁকা লাগবো। তহন সুযোগ বুইঝা আম্মারে কমু রূপসা আপারে ঘরের বউ বানাই আনতে। "
সিনানের হাত থমকায়। অবাক চোখে চায় শফির দিকে। শফির মুখশ্রী দেখে ঠাহর করতে পারে কাহিনী সত্য। সে হিসাবের খাতা বন্ধ বলে,
"আমি তো ওই ননস্টপ ট্যান্ডেস্টার ঘরে তুলমু না শফি। ছেড়ি বহুত চোপা ফুটায়।"
শফির হৃদয় কোণে উদিত সকল স্বপ্ন ফুঁস করে ফেটে গেলো যেন। সে তো কত আশা নিয়ে বসেছিলো। শাপলারে বিদায় দেওনের পর মায়ে যহন মেয়ের শোকে কাতর হইবো তহন নিজের বিয়া কইরা বউ উপহার দিবো। সে গালে হাত দিয়ে গোমড়া মুখে বসে রয়। সিনান সমস্ত হিসাব খাতায় তুলে রাখুন। স্বেচ্ছাসেবক দলের তহবিলে হাজার বিশের মতো টাকা ছিলো সেখান থেকে পনেরো হাজার দিয়ে সুরের জন্য স্বর্ণের চুরি নিয়েছে।এখন নাই টাকার মধ্যে এই পনেরো হাজারের ভর্তুকি কিভাবে দেবে? চিন্তায় মাথা আউলা ঝাউলা হবার উপক্রম।
"তোর বোনরে বিয়া দিবি যৌতুক দিবি না? লাখ খানেক দিলে আমি ভাইবা দেখুম!"
সিনানের কথায় শফি ত্যাছড়া নজরে তাকায়। মুখটা ভেঙ্গিয়ে বলে ওঠে,
"উহ্ যেই না তাঁর যুগ্যতা তারে আবার যৌতুক! হুনো সিন ভাই? বোন দিতে চাইতেছি এই তোমার সাত কপালের ভাগ্য। বোনডা চোক্ষের সামনে থাকবো তাই আম্মায় মত দিছে। নইলে তোমার মতো তারছেড়ার লগে কেইবা দিবো মাইয়া?"
"ওখানেই বসে থাকবি বুজছু? তোরে তাল পিঠা খাওয়ামু!"
সিনান উঠতে উঠতে শান্ত গলায় বলে। শফির বুঝতে বাকি থাকে না তাল পিঠা কোথায় বসাবে। সে রসগোল্লার মতো চোখ বানিয়ে উঠে দৌড়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। সিনান তাকে হাতের নাগালে না পেয়ে গলা চড়িয়ে বলে,
"মাইয়া দিবো কি? হুর পরী নিজ পায়ে হাঁইটা আমার দোর গোঁড়ায় আইতো বুঝলি?"
শফিকে ধরা ছোঁয়া না গেলেও তার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে,
"তার ছেড়ার শখ কি! শাকচুন্নীই জুটতো না উনি হুর পরীর স্বপ্ন দেখে!"
সিনান মন খারাপির মাঝেও হাসে ক্ষণ। গ্যারেজের ধাপার নামাতে নামাতে বলে,
"সময় হউক শফি! টাস্কি খাইয়া জমিনে পড়বি। ওহন হাঁটে চল। গুড়ের জিলাপি নিমু সুরের জন্য।"
গরম গরম রসালো জিলাপির কথা শুনতেই শফি ভুতের মতো উদয় হয় সিনের সামনে। তেলা মাথায় হাত বুলিয়ে ময়লা দাঁত দেখিয়ে হেসে বলে,
"আমারেও দুইটা দিও সিন ভাই। এই রাইতের বেলায় তুমি জিলাপি নিয়া চেয়ারম্যান বাড়ি যাইবা? যদি ভুতে ধরে?"
সিনানের কুঁচকে যাওয়া কপাল শিথিল হয়ে আসে। চেয়ারম্যান বাড়ি হতে স্মরণে আসে তার সুর এখন সেই বিশাল অট্টালিকার বড় বউ।পকেট হাতরে মলিন হেসে বলে,
"ওহ্! শফিরে টাকা কম আছে অন্যদিন কিনমু নে জিলাপি। আজ বাড়ি চল?"
শফির মুখের হাসি নিভে যায়। গোমড়া মুখে সিন ভাইয়ের সাইকেলের পেছনে চড়ে হ্যারিকেন উঁচিয়ে ধরে। খানিকটা রাস্তা পেরুতেই অশান্ত ফোনটা শব্দ করে বেজে ওঠা। সিনানের মেজাজ চটে যায়। এহন ফোন দেওনের সময়? ফোন ধরে না সে। বেজে বেজে বন্ধ হয় দুইবার। তৃতীয় বারের বেলায় সিনান বিরক্ত হয়ে সাইকেল থামায় কাঁচা রাস্তার ধারে। গাছগাছালির জন্য বেশ অন্ধকার আর ভুতুড়ে পরিবেশ। শফি ভয়ে সিনানের হাত চেপে ধরে। সিনান ঝটকায় সরিয়ে ফোন কানে ধরে শুধায়,
"কেডায় বে? ফোন দেওনের সময় পাস না?"
"হ্যালো সিন ভাই? আমি সুর কইতাছি!"
সিনানের চটে যাওয়া মেজাজ শান্ত হয় নিমিত্তে। শান্ত গলাতেই বললো,
"ওহ্ সুর! কেমন আছিস?"
সুরেলার চোখ ভিজে ওঠে অভিমানে। তা গিলে হাসার চেষ্টা করে বলে,
"ভালো আছি। তুমি কেবা আছো? কনে তুমি?"
"ভালোই তো থাকার কথা। আছি কোনরকম। বাড়ি ফিরতেছি রাস্তায় দাঁড়ায় আছি।"
পরপর নীরাবতার আচ্ছাদনে নিবিষ্ট হয় আলাপন। সুরেলা বলতে তো চেয়েছিলো অনেক কিছুই। অথচ কণ্ঠস্বর যেন রোধ হয়ে আসে। কান্না পায় অচিরেই। বলতে ইচ্ছে করে এই অট্টালিকা, নতুন পরিবেশে ভালো লাগছে না তার। শ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হয়। দম আটকে মারা না যায়। তাঁর ক্ষণিকের দোচালা টিনের ঘরটার কথা বড্ড মনে পড়ে। এসে নিয়ে যাও না ভাই? কিন্তু বলতে পারে না সে। ঘন ঘন নাক টানার শব্দ কানে বাজে সিনানের। খ্যাক করে বলে,
"একদম নাকে কান্দবি না! কথা না কইলে ফোন রাখ! আমি বাড়ি ফিরমু।কারো আগলা নাটক দেহনের সময় নাই। রাস্তায় দাঁড়ায় মশার কামড় খাওয়ার শখ নাই।"
"আচ্ছা রাখিই তবে। ভলো থাইকো। চিন্তা কইরো না আমি ভালো আছি।"
টুট টুট টুট শব্দে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। অভিমানী চোখ টইটম্বুর হয়ে আসে। এতোটা পর করে দিলো তাঁকে?
সিনান বিরক্ত মুখে ফোন শার্টের পকেটে ফেলে সাইকেল চড়ে বসে। শফি পেছনের তক্তায় উঠে গোমড়া মুখে বলে,
"একটু ভালা কইরা কতা কইলে কি হয়? সুর আপা কানতেছিল ক্যান জিগাইলা না?"
"সুখে কান্দুক আর দুঃখে আমার কি? তার কপাল সে-ই খাইবো।"
সিনানের কাঠ খাট্টা জবাবে শফি মুখ লটকায়। এমন ভান করে যেন কিছুই যায় আসে না। অথচ তলে তলে মন মরা হয়ে থাকে। মেজাজ হারিয়ে অন্যজনের উপর খেকিয়ে ওঠে। সে কি বুঝে না ভেবেছে? তারছেড়ার বুক ফাটে তো মুখ ফোঁটে না।
°°°°°°°°
বর্ষপঞ্জিকা হতে আরো কিছুদিন গত হয়েছে। বদ্ধ কামরায় নতুন মুখের আগমণ। রূপসা ঘার কাত করে তাকায় দরজার দিকে। মানবীকে দেখে চোখ উজ্জ্বল নক্ষত্রের নেয় জ্বলে ওঠে। বিস্ময়ের সাথে শুধায়,
"সুর ভাবী? তুমি এখানে? কখন এসেছো?"
রূপসার ব্যাকুল নয়ন বোরখা পরিহিতা সুরেলার আজুবাজু ঘুরে বেড়ায়। আধখোলা দরজায় বারবার চায়। আর কেউ আসে নি? সুরেলা নেকাব মাথার উপর দিয়ে তুলে এগিয়ে আসে। মুচকি হেসে শুধায়,
"রূপসা কেমন আছো?"
রূপসা সুরেলার দিকে তাকায়। তবে কোণা চোখে দরজায় নজর রাখতে ভুলে না। কি জানি যদি হুট করে তাঁর উদয় হয়?
"কার সাথে এসেছো তুমি? সিন ভাই এসেছে?"
সুরেলার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে খানিকটা দ্বিধা নিয়েই রূপসা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে। সুরেলার কপাল কুঁচকায়।
"তোমার চাচাজানের সাথে এসেছি। তোমার শরীরের কি অবস্থা?"
সুরেলা হালচাল জিজ্ঞাসা করে। রূপসার মুখটা এইটুকুন হয়ে যায়। চাচাজানের সাথে আসতে হবে কেন? আর কেউ ছিলো না বুঝি? সে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে,
"ভালোই। ডাক্তার তো বললো দুই তিনদিনের মধ্যেই আমি বাড়ি ফিরতে পারবো।"
সুরেলা ঠোঁট চোখা করে 'ওহ্' বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। কি বলবে ভেবে পায় না আর। রূপসার সাথে তাঁর সখ্যতা নেই। মেয়েটাকে সে কিছুদিন আগে অবদি সহ্যই করতে পারতো না। রূপসা মন খারাপ করে শুয়ে থাকে। সে আজরাইলের দোর গোড়া হতে ফিরে এলো। সবাই দেখে কত দোয়া দিয়ে গেলো অথচ সেই এলো না। আসবেই বা কেন? লোকটা তো তাকে চোখেই দেখে না। তবুও এখন সম্পর্কে তাঁরা বেয়াই বেয়ান। সেই খাতিরেও আসা যেতো না? আচ্ছা লোকটা তাঁর আহত হওয়ার ঘটনায় একটুও কি ঘাবড়ায় নি? আজু বাজু চিন্তায় রূপসা উদাসী হয়ে পড়ে। সুরেলা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে হাঁসফাঁস করে। ব্যাকুল হৃদয় কারো খোঁজ বার্তা জানতে আকুল চোখে চায়। ভদ্রলোক কোথায়? এসেছে আধঘন্টা হবে অথচ জনাবের দেখা নেই। সে তো ভেবেছিল চমকে দিবে। ধ্যাত ভাল্লাগে না। আসাই ভুল হয়েছে। হালকা নাটকীয়তায় শ্বশুরালয় বেশ জমেই উঠেছিলো তার। আজ সকালে হুট করে বড় দুলাভাই মানে ইকরাম উল্লাহ এসে তৈরি হতে বলে। কেন তৈরি হবে শুধালে জানায় সে ঢাকায় যাচ্ছে। অবাক হলেও শ্বশুর মশাই হুকুম পাঠিয়েছে জানলে তাঁর আর কিছু বলার থাকে না। ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে চলে এসেছে। ভদ্রলোককে ফোন করতে নিয়েও করে নি চমকপ্রদ কিছু হবে ভেবে। অথচ জনাবের খবর বার্তাই নেই। সে ভাবে রূপসা কে জিজ্ঞাসা করবে।
"রূপসা তোমার ভাই কোথায়?"
সুরেলার প্রশ্নে রূপসা ঠোঁট ফুলিয়ে চায়। দরজার দিকে ইশারা করে বলে, "ওই তো!"
সুরেলা চমকপ্রদ ভঙ্গিতে ঘার বাঁকায়। ঘরে রওশন প্রবেশ করে। সুরেলা কে দেখে খানিকটা চমকালেও প্রকাশ করে না। অধর কোণে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
"সুর.. স্যরি ভাবী যে! কখন এসেছেন?"
সুরেলা বলতে নিয়েও থেমে কষ্ট দমিয়ে 'ভাবী' সম্বোধন করে রওশন। বুকটা ভারী হয়ে আসে তাঁর। দগ্ধ হৃদয়ে যেন ঘিয়ের বাটি ঢেলে দিলো কেউ। হাতের ঔষধের পলি এনে টেবিলের উপর রাখে। সুরেলা 'ভাবী' সম্বোধনে লজ্জা পায়। লাজুক হেসে বলে,
"রওশন ভাই কি যে বলেন না! সুরেলা ডাকলেই খুশি হবো!"
"আপনার খুশিতে তো হবে না ভাবী। বড় ভাইয়ের বউ আপনি। সম্মান প্রাপ্য।"
বলে আবারও মলিন হাসে। রূপসা খেয়াল করে তার ভাইকে। তাঁর মেঘ জমা অম্বরে আঁধার ঘনিয়ে আসে। ভাইয়ের জন্য কষ্ট হয় তাঁর। সুরেলা কঠোর বিরোধীতা করে বলে,
"রওশন ভাই দোহাই লাগে ভাবী ডেকে লজ্জা দিবেন না। আপনি সম্বোধন তো ওরে বাপরে!"
রওশন হেসে চেয়ার টেনে বলে, "বসো দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভাই জানে তুমি আসবে? সকাল থেকেই তো লাপাত্তা। সেলাই কাটা হয়েছে গত সন্ধ্যায়। ডাক্তার রেস্ট নিতে বলেছে অথচ তাঁর খবর পাওয়া যায় না। হুটহাট উধাও হয়ে যায়।"
সুরেলার কপালে চিন্তার রেখা। অচেনা জায়গায় কোথায় যায় বারবার? অসুস্থ ডাক্তার দেখানোর জন্যই তো পড়ে আছে তাহলে খোঁজ খবর থাকবে না কেন? সে চেয়ারে বসে বলে,
"জানেন না। বড় দুলাভাই সকালে বললো শ্বশুর মশাই আমাকে তৈরি হতে বলেছে ঢাকায় নিয়ে যাবে। আমি কখনো দূরের রাস্তা যাই নি। রাস্তায় কতবার বমি করে ভাসিয়েছি। ভয়ে ছিলাম শশুর মশাই বিরক্ত হয়ে ধমক না দেয়। তবে উনি কিছু বলেন নি। বরং ঘুমোতে বললো। তবেই না সুর ঢাকায় আসলো।"
রওশন প্রত্যুত্তরে হাসলো শুধু। রূপসা গোমড়াহ মুখ বানিয়ে বলে,
"তোমার বর মশাইকে বলিও না যে এতোবার বমি করেছো। নইলে গুনে গুনে ততবারই গোসল আর ব্রাশ করতে হবে।"
সুরেলা খুকখুক করে কেশে ওঠে। মন্দ বলে নি ননদিনী। সে ঠোঁট টিপে হেসে বলে,
"শ্বশুর মশাইও একই কথা বলেছেন।"
কামরায় নোমান মাহবুবের আগমণ ঘটে। হাতের ব্যাগ গুলো বিছানার পাশে রেখে গম্ভীর মুখে বলে,
"রিজ 'আব্বা' ডাকে আমাকে। তুমিও তাই ডাকবে। শ্বশুর মশাই কেমন ডাক? কেমন অসম্মানের হেতু পাওয়া যায়!"
সুরেলা একটু দমে যায়। কোনোমতে মাথা কাত করে সম্মতি প্রকাশ করে। নোমান মাহবুব আড়চোখে তাকে দেখে রূপসার সাথে টুকিটাকি কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সুরেলা অলস চিত্তে বসে রয়। রওশন খেয়াল করে বলে,
"পাশের কেবিন আমরাই বুক করেছি রিজ ভাইয়ের জন্য। সেখানে গিয়ে বোরখা হিজাব ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। ভালো লাগবে। এমনিতেই রোজা অবস্থায় জার্ণি করে এসেছো এই গরমে বোরখা পড়ে আরো খারাপ লাগবে।"
প্রস্তাব খানা মন্দ নয়। তাঁর মাথা এখনো ঘুরছে যেন সেই গাড়িতেই বসে আছে। সুরেলা আলগোছে পাশের কামরায় চলে যায়। রওশন তাঁর প্রস্থানের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। গল্পটা একটু ভিন্ন হলে খুব ক্ষতি হতো? দীর্ঘশ্বাস টা প্রসন্ন চিত্তের হলেও তো পারতো।
°°°°°°°°°
কালো উর্দিতে এক গম্ভীর মানব দাঁড়িয়ে। শক্ত চোয়ালে কঠোরতা বিরাজমান। কালো ব্যান্ডানা ও রোদচশমায় রহস্যময়ী মানবে পরিণত হয়েছে। কালো উর্দিতে বুকের বা পাশে হলুদ রঙে 'RAB' লেখা। ডান হাতে কোবরা লোগো যা বাহিনীর দ্রুততা , ভয়ডরহীনতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রতীক। হাতে মেশিন গান সমেত বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে নওরিজ মাহবুব। সম্মুখে বসা কর্ণেল তাহের মিয়াজী। ফাইল চোখ বুলিয়ে বলে,
"রিজ গুড জব।সব ইনফরমেশন হেল্পফুল। বাট বি কেয়ারফুল। ওরা সাংঘাতিক আর আমার ইনফর্মার যতটুকু তথ্য দিয়েছে তাতে মনে হয় ওদের পরিসরটা আরেকটু বড়। মাদকের সাথে মানব পাচারের লিঙ্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। ছোট বাচ্চাদের টার্গেট বানানো হয়। তোমাদের আশেপাশের থানায় মিসিং কেইস আসে না?"
"খোঁজ নিতে হবে স্যার। তবে আমাদের থানায় মিসিং কেইস খুব একটা পাওয়া যায় না। দুই একটা বৃদ্ধা হুঁশ কম লোকদের মাইকিং শোনা যায়!"
"হতে পারে তাদেরও টার্গেট করা হয়। অধিকংশ ক্ষেত্রে এমন মানুষকে পরিবারে বোঝা হিসেবে দেখা হয়। তারা নিখোঁজ হলে পরিবারের লোকজনের মাঝে খুব একটা ভাবান্তর দেখ যায় না। বরং খুশিই হয়। তুমি চোখকান খোলা রেখো। আর আঙুরকে পাঠিয়েছি আমি। গ্রামে হোটেলের ব্যবস্থা না থাকায় থাকা খাওয়ার কষ্টে আছে বেচারা। তোমার বাড়িতে ঠাই দিও!"
নওরিজের মুখাবয়ব সুবিধার না। বিরক্ত মুখে বলে,
"স্যার আমাদের বাড়িতে পসিবল না। বাড়িতে মেয়ে বউ আছে। এক পরপুরুষ রাখার প্রশ্নই আসে না। তবে আমার গরুর খামারে পর্যাপ্ত জায়গা হবে। ওর জন্য একদম পার্ফেক্ট।"
তাহের মিয়াজী হেসে ওঠেন। উঠে এসে নওরিজের পিঠ চাপড়ে বলে,
"ইয়াং ম্যান আঙুর তোমার বাড়ির বউ ঝিয়ের থেকেও লাজুক। মেয়েরা সামনে পড়লে সেই যে মাথা নত করলো তুফান বয়ে গেলেও ঘার তুলে তাকাবে না। আমি ওকে বলে দিবো তোমার বাড়িতে উঠতে! এবার তুমি যেতে পারো।"
নওরিজ বিরক্ত হয় বটে তবে ভদ্রলোকের কথার পৃষ্ঠে আর কিছু বলে না। কামরা থেকে বেরিয়ে আসে। পশ্চিম কোণে এক দরজায় টোকা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে নওরিজ। ঘরের এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে এক মুজলিম। তাকে ভোজন করাচ্ছে সাদমান সাদিক। ঘেমে নেয়ে একাকার। মুজলিমের চর্বি ধরা ফর্সা শরীরে রক্তিম আল্পনা আঁকা হচ্ছে। মুখ, হাত-পা বাঁধা থাকায় বেচারা ঠিকঠাক আনন্দ প্রকাশ করতে পারছে না। নওরিজ হাতের মেশিন গানটা অপরাধীর কপাল বরাবর তাক করে বলে,
"কেন অহেতুক পরিশ্রম? কপাল বরাবর ঠুকে সারে তিন হাত গোরস্থানে পাঠিয়ে দিন। মামলা ডিশমিশ।"
সাদমান বিরতি নেয়। মুখে পানির ছিটা দিয়ে বলে,
"আগে তো ওর চোদ্দ গুষ্টির খোঁজ নিই তারপর একসাথেই পাঠাবো। রাত বিরেতে ছিনতাই করে শালায় রাতারাতি সাহেব বনে গেছে। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে টাকার বস্তা সহ দেশীয় অস্ত্র জব্দ করেছি। টাকার পাওয়ারে গ্যাং বানিয়ে মানুষের বাড়িতে গিয়ে দিনে দুপুরে ডাকাতি করে আসে। তো কর ডাকাতি! যুবতি মেয়ে দেখে জিভে জল কেন এসেছিলো? শালা মা/দা/র/চো/দ!"
আবারও তেড়ে গিয়ে কয়েক ঘা লাগিয়ে আসে। নওরিজ ঘার ডলে। একে বাঁচিয়ে কেন রেখেছে! সে হলে তখনই খতমের দোয়া পড়ে দিতো।
"সাদমান ভাই? ওই আঙুরকে পাঠিয়েছে সরোজ পুরে। আমি না কখন আবার ওকে ঠুকে দিই। শা/লা এখানে এসেছি থেকে পেছনেই পড়ে আছে। ওকে কোনো ভাবে ফেরত আনা যায় না?"
নওরিজের কথায় সাদমান বাঁকা চোখে চায়।
"আঙুর ফল টক বাট উপকারি। ওকে রেখে দাও কাজে লাগবে। কর্ণেল তাহের মিয়াজী হাত ঢুকিয়েছে মানে আমি কিছু করতে পারবো না রিজ! সে যাক রওশন ফোন করেছিলো তোমাকে জলদি হসপিটালে যেতে বললো। গো ফাস্ট। সামওয়ান ওয়েটিং ফর ইয়ু!"
নওরিজ প্রশ্নাত্মক চাহনিতে চায়। তবে সাদমানের মাঝে জবাব দেওয়ার ভাব পরিলক্ষিত হয় না বিধায় নওরিজ উর্দি ছেড়ে প্রস্থান নেয়।
হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৩৪৫ ও ৩৪৬ নং কামরা বুক করা হয়েছে। নওরিজ চিন্তিত বদনে তৃতীয় তলায় কাঙ্ক্ষিত দরজায় কড়া নাড়ে। ভেতর থেকে চেনা পরিচিতদের কথোপকথন কানে বাজে বিধায় দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেল করে। চাচি আম্মা, রওশন, আব্বা আর বিছানায় ঘুমন্ত রূপসা। আর সব শেষে নজরে বিদ্ধ হয় এক কোণে ঘোমটা টানা তাঁর নববধূয়াকে। যাকে বাসর রাতে ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছিলো। সে নজর সরিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে শুধালো,
"কখন এসেছেন আপনারা?"
সুরেলা আড়ে আড়ে চায় নওরিজের দিকে। ভাব দেখো জনাবের? তাকাচ্ছেই না! ক'দিনে মুখের কি হাল হয়েছে! নোমান মাহবুব ছেলের প্রশ্নের জবাব দেন,
"এসেছি ভর দুপুরে। আপনি কোথায় থাকেন বলেন তো আব্বাজান? অসুস্থ শরীরটাকে একটু তো বিশ্রাম দিবেন না? কোথায় ছিলেন?"
"দরকার ছিলো আব্বা। একটু পরেই তো আজান হবে। ইফতারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে? নাকি আমি যাবো আনতে?"
নোমান মাহবুবের প্রশ্ন আলগোছে উপেক্ষা করে প্রসঙ্গ বদলায়। নোমান মাহবুব বুঝতে পারেন তবে ওদিকে আর না গিয়ে বলেন,
"আপনার আম্মা সবই পাঠিয়ে দিয়েছেন। ছামিনা ইফতারের ব্যবস্থা করো।"
ছামিনা বেগম উঠে আসবে সুরেলা আগ বাড়িয়ে ইফতারের জোগাড় করে। ব্যাগ হতে টিফিন বক্স সহ পলিথিনে ইফতারের সরঞ্জাম বের করে বড় থালে সাজায়। স্টিলের ক্যারিয়ার খুলতে অসুবিধায় পড়ে সুরেলা। খুলছেই না। কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ চোখে চায় তাঁর জনাবের পানে। নওরিজের থমথমে চাহনি সুরেলাতেই নিবদ্ধ। আটপৌরে শাড়ি গায়ে শালীন ভাবেই জড়িয়ে। মাথার ঘোমটাও হেরফের করছে না তবে তাঁর শক্ত চাহনি উজ্জ্বল শ্যামল বাহুতে নিবদ্ধ।
"দাও আমি খুলে দিই?"
রওশনের কথায় সুরেলার বাহু হতে দৃষ্টি সরিয়ে তাঁর দিকে তাকায় নওরিজ। সুরেলা মুচকি হেসে তাঁর দিকে বাড়িয়ে দেয়। রওশন খুলে দিলে হেসে ছোট্ট করে ধন্যবাদ জানাতে ভুলে না। প্রত্যুত্তরে রওশন মলিন হাসলো। নোমান মাহবুব ছেলের শক্ত চাহনি খেয়াল করেন। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
"আব্বাজান আপনি রোজা আছেন?"
নওরিজ না বোধক মাথা নেড়ে বলে,
"ক্ষত হতে ব্লিডিং হয় । আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি আপনারা ইফতার সারুন!"
বলেই উঠে পাশের কামরায় চলে গেলো নওরিজ। কামরার পরিবেশ হুট করেই বদলে গেলো। রওশনের মুখটা গম্ভীর হয়ে ওঠে। নোমান মাহবুব, ছামিনা বেগমের স্বাভাবিক মুখাবয়বও থমথমে।সবে অজ্ঞত সুরেলা হাসিমুখে ইফতার সাজিয়ে পরিবেশন করে। ছামিনা বেগম সুরেলার পাশে বসে বলে,
"সুরেলা রিজ কে সাহায্য করো গিয়ে। গত সন্ধ্যায় সেলাই কাঁটা হয়েছে। ঘা আবারও জেগে উঠেছে যেন। যাও যাও?"
সুরেলা ভারী ইতস্তত বোধ করে। লজ্জাও লাগছে যেতে। শ্বশুর মশাই, রওশন ভাই এখানেই যে বসে। আর সে বরের কাছে যাবে? তবে চাচি শাশুড়ির জোরাজুরিতে সুরেলা আস্তেধীরে উঠে চলে যায় অপর কামরায়। দরজা খোলা থাকায় অনায়াসেই প্রবেশ করে। ভদ্রলোক বিছানার পাশেই দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম খুলছে একে অপরকে। সুরেলা পা টিপে টিপে সম্মুখে দাঁড়ায়। মাথার ঘোমটা আরেকটু টেনে লাজুক হেসে ডাকে,
"সাইমুমের আব্বা?"
শার্টের বোতামে থাক হস্ত যুগল থমকায়। চলমান কাজ অর্ধপূর্ণ অবস্থায় স্থগিত রেখে হাত নামিয়ে নেয় গম্ভীর মুখে। সুরেলা ভ্রু নাচিয়ে হাসে। দু কদম এগিয়ে এসে শার্টের বোতামগুলো খুলতে শুরু করে। সরু নাকটা এগিয়ে এনে ব্যক্তিগত পুরুষের ঘর্মাক্ত শরীরের ঘ্রাণ শুঁষে নেয় সংগোপনে। চঞ্চলা গলায় বলে,
"আমি তো ভাবছিলাম হুট কইরা আপনার সামনে আইসা চমকায় দিবো। কিন্তু হায়! ভদ্রলোক তো লাপাত্তা! কোথায় গেছিলেন?"
নওরিজ তার কথার জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে,
"ব্লাউজের হাতা এতো ছোট কেন সুরেলা? আমার আলমারিতে সাতটা সেলাইকৃত ব্লাউজ আছে তাঁর একটাও এটা না।"
সুরেলা কেঁপে ওঠে ধারালো গম্ভীর গলার পৃষ্ঠে। ঘোরের মাঝেই জবাব দেয়,
"এটা মা বানাই দিছে। ওগুলা ফুলহাতার। গরমে ফুল হাতার ব্লাউজে অস্থির অস্থির লাগে। তাই..."
ডান বাহুতে আঁচড় কাটে নওরিজ। পরপর বাম বাহুতে। সুরেলা নিজ বাহুতে হাত বুলায়। লেগেছে ভালোই। তবে ওই গম্ভীর শান্ত চাহনির প্রেক্ষাপটে মাথাটা নত হয়ে আসে। চোখ ভরে ওঠে অভিমানে। তার অশ্রুতে নওরিজ গললো না। শক্ত গলায় বলে,
"খান বাড়ির বড় বউ তুমি। তোমার চলাফেরা আচার আচরণ থাকবে নিখুঁত। কেউ আঙুল না তুলতে পারে। শালীন পোশাক মানুষের শালীন ব্যবহারের একাংশ। আগে খেয়াল রাখবে।"
বলে নওরিজ ওয়াশ রুমে চলে যায়। সুরেলার নাকের পাটা ফুলে ওঠে। রাগ হয় আকাশচুম্বী! সে অশালীন পোশাক পড়ছে? এটা অশালীন? শুধু ব্লাউজের হাতাটা কনুইয়ের চার আঙ্গুল উপরে। তাও শাড়ির আঁচলে ঢেকেই থাকে। কাজের সময় দেখা যায় শুধু। আঁচলে বাঁধন ছাড়া চোখের পানি মুছতে থাকে অনবরত। আসার পথে কতই না স্বপ্ন বুনে এসেছিল সব এক নিমিষেই উবে গেলো।
°°°°°°°°°°°
কাঁদা মাখামাখি শরীরে বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে গফুর মিয়া। কাঁচিটা রোয়াকে রেখে মাটিতেই বসে হাঁক ছাড়ল,
"সোহাগের মা? কই গেলি? এক গেলাস পানি দে তো?"
ভেতর থেকে জবাব আসে আনছে পানি। গফুর মিয়া মাথার মুড়ি টুপি খুলে গামছায় ঘর্মাক্ত মুখ মুছতে থাকে। সোহাগের মা পানি এনে ঠাস করে রাখে মাটিতে। বিরক্ত সুরে বলে,
"রোজার দিনে হাঁক ছাইড়া পানি চান তাও রোজাদারের থাইক্যা নইজ্জা করে না? বুইড়া ব্যাডা ক'দিন পড়েই কবরে যাইবো তাও ইবাদত বন্দেগীর নাম নাই!"
"এই চড়া রোইদে সারাদিন ক্ষেতে নিড়ানি দিছি। রোজা রাখলে তো শরীর চলতো না।"
"আপনারে কইছে? রোজা রাখলে আল্লাই শক্তি দিতো হু!"
গফুর মিয়া হাসেন। সোহাগের মা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
"হাসেন দাঁত বাইর কইরা হাসেন। পরপারে আল্লাহ যহন হিসাব চাইবো তহন মাথায় হাত পাছায় হাত দিয়া আহাজারি কইরেন।"
"আহা রাগিস ক্যান সোহাগের মা? আইচ্ছা আজ শ্যাষ রাইতে ডাক দিস থাকমুনে রোজা!"
গফুর মিয়ার কথা শেষ হতে না হতেই সোহাগের আগমণ ঘটে। গফুর মিয়া ছেলেকে কাছে ডাকেন। পাশে বসিয়ে পিঠ দুইয়ে বলেন,
"কই ছিলিস রে গ্যাদা? বাপ ব্যাটা মিলা ক্ষেতে গেলে এক বেলায় কাজ ফুরাই যাইতো!"
সোহাগ নাক ডলে ঘন ঘন। কপাল কুঁচকে মাথা এদিক ওদিক নাড়িয়ে বলে,
"বন্ধুরা মিলা পড়তাছিলাম। বহুত কঠিন পড়া বুঝলা আব্বা? ওরা বেক্কেরে কোচিং এ ভর্তি হইবো। তিন হাজার ট্যাহা লাগবো।"
গফুর মিয়া স্ত্রীর পানে তাকায়। তিন হাজার টাকা তো অনেক তাদের কাছে। সে দ্বিধা নিয়েই শুধায়,
"আব্বা তিন হাজার তো মেলা ট্যাহা। ওত ট্যাহা পামু কই? না পড়লে হয় না? টানাটানির মধ্যে আছি। ঝড়ে সব ধান শুইয়া পড়ছে কেদোয়!চালানই উঠবো কিনা!"
"আব্বা পড়াশোনা কইরা অন্নেক বড় হমু। চাকরি করমু তহন কত ট্যাহা কামামু!"
ছেলের কথায় গফুর মিয়া উজ্জ্বল চোখে চায়। ছেলের পিঠ চাপড়ে বলে,
"এই না হলো কথার মতো কথা! আমি একটা ব্যবস্থা করমু নে। তুই খালি পড়ালেহায় মন দে বাপ।"
সোহাগ হাসি মুখে মাথা নাড়ে। আবারও নাক ডলে মাথার চুল টানে। তবে মুখে হাসি লেপ্টে। গফুর মিয়া ছেলের কপালে হাত রাখে।
"গেদার দেহি ঠান্ডা লাগছে। মাথা ধরছে বাপ? ও সোহাগের মা? গেদার মাথায় সরষ্যার ত্যাল ঘইষা দে। গরম গরম কয়েক নলা ভাত খাওয়াই ওষুধ দে চটজলদি।"
সোহাগের মাও ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। একটা মাত্র কলিজা তাদের। সাত রাজার ধন। ছেলেটার কিছু হইলে মনে হয় কইলজ্যা ছিড়া নিতাছে কেউ।
°°°°°°°°°
সন্ধ্যার পরপরই হাসপাতাল থেকে ছবির শশুর বাড়ির পথ ধরে সুরেলা। সঙ্গে তাঁর জনাব। শ্বশুর মশাই বাড়ি পথে রওনা দিয়েছেন। চাচি শাশুড়ি রওশন ভাই হাসপাতালেই আছে। তারাও সেখানেই থাকতো মাঝে বা হাত ঢুকায় সাদমান দুলাভাই। ফোন করে তাদের বাড়িতে যেতে বলে। ওনার মা নাকি রিজের বউ দেখবে অতিসত্বর। তাই তাদের পথচলা। বর্তমানে ঢাকায় যানজটে আটকে আছে। সে মোটর বাইকের পেছনের আসনে বসে। হাতটা জনাবের কাঁধে থাকলেও দূরত্ব রয়েছে দু'জনের মাঝে। শুধু কি দূরত্ব? দীর্ঘক্ষণ নীরাবতা আর মান অভিমান। সুরেলা হামি তুলে বারবার। ঘুমে চোখ বুজে আসছে তাঁর। চোখ খুলে রাখা দায়। ঢুলু ঢুলু চোখে হেলে পড়ে। বাইকের আয়নায় খেয়াল করে নওরিজ। গমগমে আওয়াজে বলে,
"ঘুম পাচ্ছে? পিঠে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাও। আমি আছি তো!"
সুরেলা সজাগ হয়। সিনা টান টান করে বসে রকসষহীন গলায় জবাব দেয়, "আগলা পিরিতি দেহনের দরকার নাই।"
"সামনে ডাস্টবিনের ময়লায় এক পাগলী শুয়ে থাকে। বেশি কথা বললে তার কাছে রেখে যাবো। ত্যাড়ামি করো না। "
বলে নওরিজ কাঁধে থাকা সুরেলার হাত সজোরে টেনে কাছে আনে। সুরেলা আঁছড়ে পড়ে বলিষ্ঠ বুকে। সাথে আঁতকে ওঠে। পিঠে আঘাত পেয়েছিলো জনাব।
"পিঠে ব্যাথা না?"
"না।"
সুরেলা গা ঘেঁষে বসে। এক হাতে বলিষ্ঠ মেদহীন পেট জড়িয়ে পিঠে মাথা রাখে। চোখ বুজে নেয়। একটু আগেও ঘুমে চোখ অন্ধকার দেখছিল অথচ এখন ঘুম উধাও। অসহ্যনীয় পুরুষালী গন্ধ ঘুমাতে দেয়?
·
·
·
চলবে.....................................................................................